© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আজ ধ্রুব আর মনিকা
দুজনে অফিস ফেরত মনিকাদের বাড়িতে গেল l মনিকার মা কোনোদিন ধ্রুবর আদর যত্নর অভাব
রাখেন না l এলেই নানা রকমের আইটেম রান্না করে খাওয়ান l আজ উনি ধ্রুবর পছন্দের
খাবার করেছেন l আলু পোস্ত, বিউলির ডাল, বাঁধাকপির তরকারি l ধ্রুব নিরামিষ তরকারি
বেশি পছন্দ করে l তবে রাতে ভাত খাওয়াটা মনিকা একদম পছন্দ করেনা l কিন্তু বিউলির
ডাল হিং দিয়ে রান্না করলে অসম্ভব সুস্বাদু হয় তা সে জানেনা l বিউলির ডাল আলু পোস্ত
দিয়ে ভাত খাওয়া যায় l ওটার সঙ্গে রুটি চলেনা l এই জন্যেই বলে বাঙালিরা রকমারি
ব্যঞ্জন তৈরি করে খেতে খাওয়াতে জানে l খুব সাধারণ কিন্তু সুস্বাদু l আজ মনিকার
একদম বাজে লাগছিলো l
-এ কি রান্না করেছ মা?
মনিকা বলে
- খেয়েই দেখো না , মা
বলেন
- আমি আগে জানলে কিছু
খাবার নিয়ে আসতাম l
- একদিন ছা পোষা
বাঙ্গালী ঘরের রান্না খেয়ে দেখোই না
- কি বললে, ছা পোষা !
সেটা আবার কি?
- ছা মানে আমি l বলে
হেঁসে ফেলে l ঠিক বলেছি না আন্টি !
- একদম l আন্টি বলেন
মুচকি হেঁসে l
- ও তোমরা এখন দুজনে এক
হয়ে আমাকে....
- নারে বাবা, ছা মানে
ছেলে l বুঝেছ l
- ও এই কথা l আমি বাঁধা
কপি আর রুটি খাবো l
- তাই খাও মা l
রাতে ভাত খাওয়া একদম
পছন্দ করেনা মনিকা l
খুব সাধারণ ডিনার খেয়ে
উঠলো সকলে l
ধ্রুব বাড়িতে ফোন করে
আজ ধ্রুব এখান থেকেই ওর
মা বাবা কে ফোন করবে l আর দেরি করা যাবেনা l
বাড়িতে ফোন করলো l মা
ধরলেন
- হ্যালো কে ধ্রুব বাবা
!
- হ্যাঁ মা কেমন আছো?
বাবা কেমন আছেন? অনেক দিন তোমাদের কোন খবর নেই l ওদিকের খবর সব কি বল l
- বিপাশার আশীর্বাদ হয়ে
গেলো কাল l ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী র সঙ্গে ওর বিয়ে l মস্ত গাইনোকোলজিস্ট l কোলকাতার
নাম করা ডাক্তার l
- তারপর ! তুমি গিয়ে কি
দিলে?
- এক জোড়া দুল দিয়ে
আশীর্বাদ করে এলাম l মেয়েটা মন মরা হয়ে আছে বুঝেছিস l আমি জানিত ও এই বিয়েতে মোটেই
খুশি নয় l
- কেন খুশি না হওয়ার কি
আছে?
-কেন আর? মেয়েটা আমাকে
বড় ভালোবাসে l ওর জন্য চিন্তা হয় l
- তুমি চিন্তা করে কি
করবে? ওর বাবা মা আছেন নিশ্চই ওনারা ভালো জায়গাতেই বিয়ের ঠিক করেছেন l
- তুই বুঝবিনা বাবা l
তোকে বলাও যাবেনা l তুই কেমন আছিস বাবা? শরীর ঠিক আছে? খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করছিস
l
- হ্যাঁ । মনিকা আমার
ঘরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ঘর টাকে মন্দির বানিয়ে দিয়েছে l ঘর একদম পরিষ্কার ঝক ঝক
করছে ঠিক তুমি যেমন আমাদের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখো l রান্না ওই করে l আমার
ড্রেস কাচা আয়রন করা সব ও l আমাকে কিচ্ছু করতে দেয়না l আমি খুব ভালো আছি মা l আমার
কোন কষ্ট নেই l
- ও ! খুব গম্ভীর হয়ে
গেলেন সুনীতি দেবী l
- আমাকে তুমি কিছুই
বললে না l আমি আর কতো দিন হয়রান হব ? আমাকে ত এখানেই থাকতে হবে আরো ৩৬ বছর ।
- হুঁ l এখন কি করবি?
- তোমাদের আশীর্বাদ এর
অপেক্ষা l তোমরা তোমাদের এক ছেলের বিয়েতে আসবে না মা ?
- তুই কি তোর বাবাকে
চিনিস না l উনি কখনোই মত দেবেন না l
- তুমি আসতে পারবে না l
বাবা মত দেবেন না l আমার দিকটা একটু ভেবে দেখেছো l আমি কি করবো? আমি এখানে মরে
গেলেও তোমরা কিচ্ছু টের পাবেনা l তবে সেটার জন্যই অপেক্ষা কর l
- এ কি কথা শোনালি বাবা
l তার আগে আমার মরণ হোক l
- কার আবার মরণ হোল?
জগদীশ বাবু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন l
- ওই তাস খেলে এলেন l
এবার পরিপাটি করে খেয়ে নাক ডেকে ঘুমোবেন l মা বলেন l
- কার সঙ্গে আবার হবে?
ধ্রুব মনিকা বলে একটি গোয়ানিস মেয়ে কে বিয়ে করছে l তার মা বাঙ্গালী , বাবা গোয়ানিস
l এখন কি হবে কি করবে বল ! আমার হয়েছে যত জ্বালা l আমার মরণ ও হয়না l বাপ ছেলের
মধ্যে পিষে মরছি না ফেলতে পারছি না গিলতে পারছি l ওদিকে ছেলেটার কি হাল হল স্বয়ং
ঈশ্বর ই জানেন ।
- আঃ কি হচ্ছে? আমাকে
দাও l
- এই সব কি শুনছি ধ্রুব
!
- ঠিক ই শুনেছেন বাবা l
হ্যাঁ আমি কোনোদিন মিথ্যে বলিনা তাই আপনাকে বলতে দ্বিধা নেই l আমি অপনাদের
আশীর্বাদের অপেক্ষায় আছি l মা কে সব বলেছি l
- তোমার এতো অধঃপতন
হয়েছে !
-কেন বাবা আমার কি
নিজের মতন বাঁচার অধিকার নেই? আমার কথা এক দিনের জন্য চিন্তা করেছেন আপনি l
- তুমি কাকে কি বলছ?
তুমি এতো বড় হয়ে গিয়েছ বাবার মুখের ওপর কথা বলছ? এতো অধঃপতন তোমার !
- ঠিক আছে আমি যা জানার
জেনে নিলাম l আপনাদের মত নেই তাহলে l
মাকে একটু ডাকবেন?
- কেন মা কি করবে? মা
কি তোমার বিয়ে দেবে?
-তবুও মায়ের মত টা দেখি
উনি কি বলেন?
- মায়ের কণ্ঠ স্বরের
চেয়ে কান্নার আওয়াজ বেশি এলো l এ কি করলি বাবা? আমি যে বেঁচে থাকতে মরে যাবো বাবা
l সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা l চারিদিকে ছি ছি করবে সকলে । আত্মীয় স্বজনের কাছে কি বলে
মুখ দেখাব ? কোন জন্মের পাপ আমাকে ভুগতে হবে কে জানে !
- কেন মা সমাজ কি
মানুষে মানুষে প্রভেদ শিখিয়েছে l যীশু খৃষ্ট আর কৃষ্ণ তো এক l তুমি তো বল যিনি
খৃষ্ট তিনি কৃষ্ণ l ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম.. রঘুপতি রাঘব রাজা রাম... এটাও তো
স্কুলে মাস্টারমশাই রা শেখালেন l তবে এখন আমাকে কেন তোমরা অন্য মন্ত্রে দীক্ষিত
করছ l বিভেদ আর প্রভেদ এর মন্ত্র l আমার কি এটুকু স্বাধীনতা নেই মা ?
- আমি জানিনা আমায় কিছু
বলিস না l তুই দূরে থাকিস কিন্তু আমাদের ত এই সমাজ আর আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে থাকতে
হবে । তাদের কি জবাব দেবো ? তারা কিছুই বুঝবে না ।
- বলবে তোমাদের ছেলে
মরে গিয়েছে । ঠিক আছে । আমি রাখছি l ধ্রুবর চোখ ছল ছল করতে লাগলো l ও পাথরের মতন
হয়ে গেল l এ কি ধর্ম সংকটে পড়লো সে l
- মনিকার মা এবং মনিকা
দুজনেই চুপ করে বসে আছেন l কারুর মুখে কিছু কথা নেই l
এক গভীর নিস্তব্ধতার
মধ্যে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ধর্মের শৃঙ্খলে বাঁধা l তারা হতবাক এই সমাজের
অদ্ভুত অলিখিত নিয়মে l মানুষের তৈরি নিয়মে তাদের চলতে হবে l তাদের ব্যক্তি
স্বাধীনতা থাকবে না l তাদের সমাজের নিয়মেই চলতে হবে নাহলে তাদের সমাজ ত্যাগ করবে l
এই নিয়ম চলে আসছে আবহ মান কাল থেকে l কোথায় গেলেন রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র
বিদ্যাসাগর ? কোথায় গেলেন সব সমাজ সুধারক রা ?
এখনো ওই এক ই প্রথা চলে
আসছে গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারে কতো ছেলে মেয়েকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে
হচ্ছে কেবল মা বাবা আর সমাজকে খুশি রাখতে l এখনো ও এই বিষয়ে ছেলে মেয়েদের ব্যক্তি
স্বাধীনতা নেই l এই আমাদের অলিখিত সমাজ ব্যবস্থা আর তার নিয়মাবলী ! আশ্চর্য !!
মনিকার মা কে মনিকা
জিজ্ঞাসা করে , তোমার কি মতামত মা ?
- আমি কি আর বলবো মা ?
তোমরা ত সব ঠিক করে রেখেছ । তোমাদের ইচ্ছা ই আমার ইচ্ছা । আমার কিছু নতুন করে বলার
নেই । তবে ছেলেটা আর মা বাবার মুখ দেখতে পারবে বলে মনে হয় না । বড় কঠিন আমাদের
সমাজ ব্যবস্থা । ওই বলেনা ভালো করবো না মন্দ করবো কি দিবি তাই বল । ওখানে ওইটাই
সমাজ ব্যবস্থার মূল মন্ত্র ।
- ধ্রুব বলে আমরা
রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করব মা । কোন আত্মীয় স্বজনের দরকার নেই কিছু বন্ধু বান্ধব আর
আমরা কজন । বাবা মাকে দিন স্থির করে জানাবো । যদি আসেন সব ব্যবস্থা করব । না এলে
আমার করার কিছু নেই । এই বিষয় আর দেরি করা চলবে না ।
- মনিকা ওই একই কথা বলে
। তবে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি আজ আমার মা’কে মা বলে সম্বোধন করলে । এতদিন
আন্টি বলছিলে । থ্যাংক ইউ । আই লাভ ইউ ।
- হুম । আমার মা এখন
নিরুপায় । উনি পরাধীন এক নারী । তাঁর মনের কষ্ট আমি বুঝি । আজ তাঁকেই আমি অনেক কটু
কথা বললাম নিজের স্বার্থে । আমি মায়ের কাছে অপরাধী । সে তোমরা বুঝবেনা ।
রেজিস্ট্রি হবে কিন্তু আমি চার্চে যেতে পারবোনা মা । আমি আমার ধর্ম কে সত্যি মন
থেকে পুঁছে ফেলতে পারবো না ।
- হ্যাঁ তাই হবে বাবা ,
মনিকার মা বলেন । কিন্তু উনি থাকলে সেটা হতে দিতেন না ।
- মনিকা বলে , আমি
কিন্তু মা আমাদের ওয়েডিং কস্টিউমে থাকব । ধ্রুব তুমি ?
- আমি ধুতি পাঞ্জাবী আর
মাথায় টোপর পরব ! আমি কেন তোমাদের কস্টিউম পরব?
- ওকে এজ ইউ লাইক ।
কিন্তু কোথায় পাবে ওই কস্টিউম ?
- আমার কলিগ আছে ওরা
আমাকে বলেছে আনিয়ে দেবে কোলকাতা থেকে ।
- ঠিক আছে । এ এক
অদ্ভুত কম্বিনেশন হবে যাকে বলে কনট্রাস্ট । এরকম কোন দিন হয়নি এখানে ।
©ত্রিভুবনজিৎ
মুখার্জী
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
ধ্রুব মনিকাদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে একা l আজ
আবার তার নিঃসঙ্গ জীবন মনে হচ্ছে l রাতের খাবার ওখানেই খেয়েছে l মায়ের হাতের
রান্না আজ ওর খুব মনে পড়ছে l ও কিছুতেই সে দিনগুলোকে হাত দিয়ে সরাতে পাচ্ছেনা
স্মৃতি থেকে l এ সে কি করলো? নিজের সুখ সুবিধের জন্য মায়ের মনে আঘাত দিলো ! এ কি
হোল তার l এই পরিবর্তনের জন্য সে একা দায়ী l ছিঃ একি করলো ! মায়ের কথা মনে করে দু
চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বয়ে চলে তার l স্কুল থেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরলে মা মুখের
সামনে তুলে ধরতেন তার পছন্দের খাবার l তার জ্বর হলে মা রাতের পর রাত মাথায় জল
পট্টি দিয়ে বসে থাকতেন l ওষুধ খাইয়ে দিতেন পরম স্নেহে l জ্বর আপনা হতে চলে যেত
মায়ের সেবা শুশ্রূষায় l সেই মাকে সে কি বলল ! কেন বলল? ধিক্কার দেয় নিজের মনকে l
মনে হয় সে স্বার্থপর
হয়ে গিয়েছে l মানিকের জন্য সে তার মা বাবাকে যা
নয় তাই বলেছে l সত্যি সে অধঃপতনে গিয়েছে l বাবার কথাগুলো কানে বাজছে শত লাউড
স্পিকারের কণ্ঠে l এ কি পরিণতি হোল তার?
বাবা তার কলেজের এডমিশিনের সময় একবার টাকা ধার
করে আনেন l সেটা মা জানতেন কিন্তু তাকে বলেন নি l ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যথেষ্ট খরচা
ছিল l কিন্তু উনি হাঁসি মুখে বলতেন কিছু চিন্তা করিসনা বাবা আমি আছি তো l তোর কোন
অসুবিধে আমি রাখবোনা l তুই শুধু মন দিয়ে পড়ে যা l তাকেও সে যা নয় তাই মনিকাদের সামনে
ই বলেছে l এই পাপের সে অবশ্যই সাজা পাবে l আত্মগ্লানিতে জর্জরিত হয়ে কখন ঘুমিয়ে
পড়েছিল জানেনা l সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খুঁজল l কিন্তু কোথায় চা ? মনিকা ওদের
বাড়িতে l
অগত্যা নিজেই চা বানাতে কিচেনে গেলো l ফিরে এলো
সোফাতে চায়ের কাপ নিয়ে l সঙ্গে সেই গতকালের স্মৃতি l মনে মনে গাইল :
ইচ্ছেরা সব পালিয়ে গেছে
ইচ্ছে নদীতে
ইচ্ছেরা আর নেই যে মনে
বিনা কারণে
ইচ্ছেরা সব রোজ সকালে
চায়ের কাপে বাষ্প হয়ে
ডানা মেলে নাচত
চায়ের শেষে ক্লান্ত হয়ে
মনের কোণে থাকতো।
আমায় শুধু ডাকতো
আমায় ভালোবাসতো। 2
এখন শুধু আঁধার রাতে
চোখের কোনে বাষ্প হয়ে
মনের ব্যথা কাঁদছে
ইচ্ছে গুলো আসেনা ফিরে
বালিশ শুধুই ভিজছে
ওদের মনে পড়ছে
শুধু মনে পড়ছে।।
কথা ও সুর :-
© অভিক চক্রবর্তী
@avik chokroborty
না আর দেরি করা চলবেনা l তাড়া তাড়ি রেডি হতে হবে
l নিত্য কর্ম সেরে স্নান সারে l ঠাকুরের কাছে গায়ত্রী জপ করে l এই কদিনে মনিকা ওর
অভ্যাস টা বাজে করে দিয়েছে l ওর ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছে l কাল ব্রেড
এনেছিল আসার সময় ওটাই টোস্টারে টোস্ট করে চিরকালের অভ্যাস মতন ব্রেড বাটার জ্যাম
আর ডিম সিদ্ধ সঙ্গে এক মগ ব্ল্যাক কফি l
মনিকা আমার অফিসে যাওয়ার যে ড্রেসটা আয়রন করে
রেখেছ ওটা দাও... দেরি হয়ে যাচ্ছে.... হঠাত মনে পড়লো মনিকা নেই বলে !! এ কি তার
হচ্ছে কাল থেকে l বেশ তো ছিল একা একা ! মনিকা তার
জীবনে কেন এলো ! তাকে বড্ড নির্ভরশীল করে দিচ্ছে
l এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয় l
আজ অফিস থেকে ফিরে আবার মাকে ফোন করবে l মাকে
ক্ষমা চাইবে কালকের ব্যাপারে l বাবার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নেবে l কিন্তু মনিকা
তার কি হবে? তাকে তো সে ফেলতে পারবে না !
.....
এদিকে মনিকা সকালে খেতে গিয়েই বমি করে ওয়াস
বেসিন এ l ওর মা ব্যাপারটা লক্ষ করেন l
মনিকা ইদানীং ওর মাকে একটু এভোয়েড করে l ও বুঝতে
পারে ওর শরীরে একটি প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে l কদিন খুব লুকিয়ে আচার খাচ্ছে l কিন্তু
ওর মা অভিজ্ঞ matron মেট্রন l এইসব ব্যাপার ওনার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয় l
মনিকা তোমার কি হয়েছে ? কদিন তোমাকে অসুস্থ
লাগছে l আমাকে কিছু লুকচ্ছ মনে হচ্ছে l
- কি আবার হবে মা? গা বমি বমি করছিলো l কাল
বাঁধা কপি খেয়ে গ্যাস হয়েছে বোধ হয় l
- আমার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া অতো সোজা নয় l কিচেনে
আচারের শিশি অর্ধেক হয়ে গিয়েছে l
- হ্যাঁ আচার খেয়েছি l I am carrying a new
life.
- সেটাই বল l কতো মাস?
- দু মাস হতে চলেছে l
- তুমি আমাকে বলোনি কেন? আমি ব্যবস্থা করছি MTP
র জন্য l
- নো নেভার l আমি ওকে পৃথিবীতে আনবো l ধ্রুব সেই
জন্য বিয়ের তাড়া দিচ্ছে আমাকে l শুনলেত ওর মা বাবাকে পর্যন্ত ত্যাগ করতে ও রাজি
আমার জন্য l তোমরা সব স্বার্থপর l ছেলে মেয়ের সুখ সুবিধে বুঝতে চাওনা l তুমিও ঠিক
ওই সেকেলে বাঙালিদের মতন l ওখানকার ই তো মেয়ে তুমি l তুমি কি করে আলাদা হবে বল ?
- আমি তোমার সুখ শান্তি চাই না !
- না চাওনা l তুমি স্বার্থপর l আমাকেও ভালো
বাসনা আমার বাবাকেও ভালো বাসতেনা l
You are too much selfish. You have grabbed the
entire property from my father. I have not seen a single drop of tears when my
father died. As if it was a boon for you.
(তুমি অত্যন্ত স্বার্থপর l আমার বাবার সমস্ত
সম্পত্তি অধিকার করেছ l বাবার মৃত্যুর সময় তোমার চোখে এক ফোঁটা জল দেখিনি lতুমি
মনেকরেছিলে এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ! )
- মনিকা ! Just stop it. Control your tongue.
Enough is enough (মনিকা তোমার জিবে লাগাম দাও। অনেক বলেছ) যেমন বাবা তেমনি মেয়ে l
তোমার সাহস দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে l মায়ের সঙ্গে এইরকম ভাবে কথা বলছ তুমি ! আমি
তোমাকে ছোট থেকে বড় করলাম এই কথা শোনার জন্য l আমি স্বার্থপর ! তোমার বাবার অসুখের
সময় কে দেখা শোনা করতো? আমি আয়া রাখতে পারতাম কিন্তু আমি নিজে হাতে সব করেছি ওনার
রোগ শয্যায় l তুমি তখন কলেজে পড়তে l তোমাকে আমি একদম কোন কষ্ট দি নি l এই তার
প্রতিদান l আমার ইচ্ছে ছিল তুমি মেডিক্যাল পড় l বড় ডাক্তার হও কিন্তু তুমি নার্সিং
স্কুলে নিজে নিজে ভর্তি হলে l তার জন্য আমি দায়ী? How could you accuse me my
child. এই বয়েসে আমার নিজের সন্তানের মুখ থেকে এই শুনতে হোল?
- তুমি কেন MTP র কথা বললে? ধ্রুব যখন বিয়ে করতে
চাইছে l ও যদি অস্বীকার করতো তবে আমি সেটা চিন্তা করতাম l কিন্তু ও তো আমাকে বিয়ে
করতে চায় l
- তুমি জানোনা মা, এদের মা বাবারা কি করে এদের
দিয়ে শপথ করিয়ে নিতে পারেন l আমি বাঙ্গালী আমি জানি l ধ্রুবর মা যদি ওর হাত নিজের
মাথায় রেখে শপথ করিয়ে নিয়ে বলেন তুই মনিকা কে বিয়ে করলে আমার মরা মুখ দেখবি l তখন
কি করবে তুমি ! ও তখন বেঁকে বসতে পারে l অসম্ভব নয় l Be practical (কাজের কথা বল )
যা ভুল করেছ তাকে মিটিয়ে ফেলাই ভালো l আমার কথা শোন l আমি তোমার মা আমি তোমার গর্ভ
ধারিণী l আমি তোমার ভালোই চাই l আমাকে ভুল বুঝলে নিজে পস্তাবে l
- না ... না... no its impossible. He loves me.
He is not a traitor.I can't destroy the fruit of our love. I will bring the
Anjel yes Anjel to this universe. (না সেটা সম্ভব নয় । ও আমাকে ভালো বাসে । ও
প্রতারক নয় । আমি আমাদের প্রেমের সম্পদ কে নষ্ট করতে পারিনা । আমি এই পৃথিবীতে
স্বর্গের পরী হ্যাঁ স্বরগের পরী কে আনবো l) সে আমাদের চোখের মনি হবে l সে ধ্রুব আর
আমার প্রেমের প্রতীক l আমি তাকে নষ্ট করতে পারিনা l সেটা পাপ l আমি কি জবাব দেবো
ধ্রুবকে? ভেবে দেখেছো l
- Dont be emotional my child. These are the
words of a true lover but it is the feeling of the sentiment of a immature girl
like you. Trust me. Dont get emotional. That pays nothing. You have not seen
the cruel world. You can't resist. Believe me my child.
(আবেগের বসে অধীর হয়না মা l এক সত্যিকারের
প্রেমিকার কথা তুমি তুলে ধরছ কিন্তু এটা তোমার অপরিপক্বতার পরিচয় l আমাকে বিশ্বাস
কর l আবেগপ্রবণ হয়ো না l ওতে কোন ফল হয়না l তুমি পৃথিবীর ক্রুর লোকেদের এখনো
চেনোনি l তুমি সহ্য করতে পারবে না l আমাকে বিশ্বাস কর আমি তোমার মা l আমি তোমার
ভাল চাই । )
... .......
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
No comments:
Post a Comment