##এঞ্জেল##
##এঞ্জেল##
##নবম পর্ব##
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
বালিগঞ্জের গোল পার্কের কাছে ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী
দের বনেদি বাড়ি l তিন পুরুষের মস্ত বড় বাড়ি l সামনে গেট তাতে দারোয়ান সারাক্ষণ পাহারায়
থাকে l গাড়ি বারান্দা ফুলের বাগান l খুব সাজানো গোছানো বাড়ি l ঢুকতেই ডানদিকে ডাক্তার
এর চেম্বার l আজ বন্ধ আছে l
বরের আশীর্বাদের দিন ডঃ অভিষেক ব্যানার্জীর
একটা অপারেশন ছিল উনি তাই তাড়া তাড়ি চলেযান আশীর্বাদ সেরেই l কোনের বাড়ি থেকে সোনার
চেন আর আংটি দিয়ে বরকে আশীর্বাদ করেন ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী এবং তাঁর সহধর্মিণী মৃণালিনী
দেবী l বরের বাড়ি থেকে আগে থেকেই বলেছিল ওনারা কিছুই আয়োজন করতে পারবেন না কারণ সেদিন
অভিষেক কে একটা বড় অপারেশন করতে যেতে হবে l তাই তাড়া তাড়ি চলেযান আশীর্বাদ সেরেই ।
মৃণালিনী
দেবীর খুব একটা পছন্দ হয়নি বরের বাড়ির লোকেদের l সেরকম কোন আপ্যায়ন এর ব্যবস্থা নেই
l দায় সারাগ্রস্ত সামান্য চা জলখাবার এর ব্যবস্থা তাও বাড়ির কাজের লোক কে দিয়ে l অভিষেক
এর বাবা মা ঠাকুমা ছিলেন l ঠাকুমা খুব ভালো মনে হল l খুব অমায়িক ব্যবহার l মৃণালিনী
দেবী ওনার সঙ্গেই মেয়ের কথা বলছিলেন l কিছুক্ষণ বাদেই বিপাশা র মা বাবা ফিরে আসেন
l
- বাড়ি খানা কেমন দেখলে কমলেশ বাবু জিজ্ঞাসা
করেন বিপাশার মা'কে
- তুমিতো সব দেখে ঠিক করেছ l আমি আর নতুন
করে কি বলবো?
-কেন তোমার বাড়ি পছন্দ হয়নি?
- বাড়ির সঙ্গে কি মেয়েকে বিয়ে দেবে? ছেলেতো
তার অপারেশন নিয়েই ব্যস্ত l আমার মেয়েটার কি হবে কে জানে !
- সব সময় তুমি ঐরকম কথা বলোনাতো l এত বড় বাড়ির
বৌ হবে সেটা তোমার ধারণা ছিল !
- আমার দরকার নেই বাড়ি নিয়ে l সামান্য আপ্যায়ন
টুকু দেখলামনা l
- ওসব আপ্যায়ন ওদের করার সময় নেই ওনারা ব্যস্ত
লোক l দেখলেনা জামাই কেমন সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো অপারেশন করতে নার্সিং হোম এ l কোলকাতার
নামকরা ডাক্তারের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে l ওই হা ঘরে জগদীশ ব্যানার্জী দের কি
আছে?
- সুনীতি বৌদি বিপাশা কে নিজের মেয়ের মতন
দেখেন l উনি নিজে এসেছিলেন ওনার ছেলের সঙ্গে বিপাশার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে l আমি কিছুই
বলতে পারিনি সেদিন l
ওদের হয়তো টাকা পয়সা নেই কিন্তু মন আছে l
এখানে এনারা টাকার গর্বে গর্বিত l
- হবেনা? ওরা কি ভিখারি জগদীশ ব্যানার্জি
l ছেলের পয়সা এলে তবে হাঁড়ি চড়ে ! কি আছে ওদের?
- বললাম তো মন আছে, হৃদয় আছে l
*****
আজ ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী র বাড়িতে বিরাট আয়োজন
l মৃণালিনী দেবী, বিপাশার মা রান্নার ঠাকুরকে সব একে একে বোঝাচ্ছেন কি কি রান্না হবে
l আজ বিপাশার আশীর্বাদ l কমলেশ বাবু তাঁর ই ছাত্র ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী নামকরা গাইনোকোলজিস্ট
এর সঙ্গে তাঁর একমাত্র কন্যা বিপাশার বিবাহ ঠিক করেছেন l আজ পাকা দেখা এবং আশীর্বাদ
l
জগা ননা, উড়িষ্যার, ভদ্রকের ব্রাহ্মণ l গলায়
মোটা পৈতে l রান্নাটা, ননা ভালোই করেন l তার হেলপার দের আনাজ পাতি কিরকম করে কাটা হবে
সব বুঝিয়ে দিলেন l মাছ অনেকরকমের এসেছে l পাবদা, ইলিশ, তোপসে, ভেটকি, গলদা চিংড়ি l
আঠারো পদের রান্নার ফিরিস্তি :
ইলিশের পাতুরি, তোপসে ফ্রাই, ভেটকি র বাটার
ফ্রাই, পাবদা ফ্রাই, গলদা চিংড়ির মালাই কারি এছাড়া খাসির মাংস র মটন কোর্মা আর দো পিয়াজা
l এবং ডিমের ডেভিল l ফ্রায়েড রাইস, রুমাল রুটি, পাঁপড় ভাজা, আনারসের প্লাস্টিক চাটনি,
গোবিন্দ ভোগ চালের পায়েস, রাজভোগ, কৃষ্ণ নগরের সর পুরিয়া, নব দ্বীপের দই, বর্ধমানের
সীতা ভোগ, শক্তিগড়ের ল্যাংচা ।
দুজন ঠাকুর বড় বড় কড়ায় কয়লার উনোনে রান্না
আরম্ভ করলেন l দুটো কয়লার জাল দিয়ে উনুন আবার একটা কাঠের উনুন প্রায় একশো জন খাবেন
l একমাত্র মেয়ের আশীর্বাদ বলে কথা l
আত্মীয় স্বজনে ঘর ভর্তি l বিপাশার মামার বাড়ির
সবাই, মামা মামী, দুই কাকা কাকিমা l একজন বোম্বে থেকে আরেকজন বেনারস থেকে l ওদের কথায়
বিশেষ করে বাচ্চাদের একটু প্রবাসী টান এসে গিয়েছে l প্রায় হিন্দি মেশানো বাংলা l
যেমন দিদি জামাই বাবুকে দেখে ফিদা হয়েযাবে
l কথাটার আক্ষরিক অর্থ বিপাশার বোধগম্য নয় l জানার ও ইচ্ছে নেই l ও খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল
l ওকে সাজানোর জন্য বোম্বের কাকিমা আর তার মেয়ে বান্টি লেগে পড়ছে l
আমার এইসব সাজ গোজ ভালো লাগেনা l আমি এইসব
আধুনিক সাজে অভ্যস্ত নই l
বান্টি বলে একদিন ই তো সাজবে দিদি l দেখো
জামাই বাবু প্রথম দেখাতেই বেহোশ হয়ে যাবে l
ক্রমে আশীর্বাদের মুহূর্ত র বেশ কিছুক্ষণ
আগেই বরের বাড়ির লোক জন দুটো কারে এসে পৌঁছলেন l দুটোই ইমপোর্টেড কার l একটা ইম্পালা
আরেকটা ক্যাডিলাক l তখনকার দিনে ইম্পর্টেড কার একটা আভিজাত্যের লক্ষণ ছিল । মধ্যম গ্রামে
বোধ হয় এই প্রথম এতো বড় গাড়ি এলো l
নিমন্ত্রিত দের মধ্যে অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন
আর পাড়ার কিছু পরিবার যারা ডাক্তার বাবুদের পরিচিত l তা ছাড়া বর পক্ষের দশ বারো জন
l
কমলেশ বাবু, বরের বাড়ির সকলকে বৈঠক খানায়
বসালেন l দফায় দফায় শরবত, কোল্ড ড্রিঙ্কস, চা কফি, পান, সিগারেট সব রকম ব্যবস্থা করেছেন
যাতে কোন ত্রুটি না থাকে l পাড়ার কিছু গণ্য মান্য ব্যক্তি একটু পরে পৌঁছলেন l তাদের
জন্য বাড়ির সামনে মাঠে প্যান্ডেল করে বসার ব্যবস্থা হয়েছে l
বর পক্ষ আশীর্বাদ করার পর ডাইনিং হলে আগে
থেকে ব্যবস্থা হয়ে ছিল খাওয়ার জন্য ।
আশীর্বাদ এ বর এর বাড়ি থেকে তিন ভরির সুন্দর
একটা হার, হাতে বাউটি , কানের দুল আর বেনারসি শাড়ি l আত্মীয় স্বজন রা যে যার সোনা দানা
দিয়ে আশীর্বাদ করেন l বিপাশা র হাতে গলায় কানে সোনা ভর্তি কিন্তু তবুও ও এতো উদাস দেখাচ্ছিল
কেন l বেশ অন্যমনস্ক লাগছিলো যেন কাকে খুঁজছে মনে মনে l
মা নিজে গিয়েছিলেন ধ্রুব দাদার বাড়ি নিমন্ত্রণ
করতে কিন্তু কোই ওদের বাড়ির কেউ তো এলোনা....
হঠাৎ ওদের ঘরে সুনীতি দেবী, ধ্রুবর মা হাতে
একটা কৌটো নিয়ে ঢোকেনা l একেই বলে বোধ হয় টেলিপ্যাথি !
বিপাশা বলে এত দের করলে মাসি !
আমি কখন থেকে তুমি আসবে বলে বসে আছি l
- ওরে আমার মেয়ের কথা শোন l আমার কি কাজ নেই
l ওনাকে খেতে দিয়ে তবে এলাম l আজ আবার আমার উপোষ l আমি কিছুই খাবো না l তোকে দেখে চোলে
যাবো রে মা l আর কদিন ই বা থাকবি ! এই হোল মেয়েদের জীবন , জন্ম থেকে প্রথম যৌবন বাপের
বাড়ি তারপর স্বামীর বাড়ি l একটা মেয়ের ওপর দিয়ে কি যায় সে তারাই বোঝে রে মা l তবে তোর
বাবা তো একেবারে রাজ পুত্র র সঙ্গে তোর সম্বন্ধ করেছেন ! তুই এতো উদাস কেন মা ?
- হ্যাঁ রাজপুত্র ই বটে l বিরাট অট্টালিকা,
গাড়ি, চাকর, ফুলের বাগান.... মৃণালিনী দেবী বলতে বলতে ঘরে ঢোকেন l ওদের ব্যাপার ই আলাদা
- ও !
- তা জামাইকে আশীর্বাদ কবে করলেন?
- গত সোমবার l ব্যস্ত মানুষ l সে তার অপারেশন
এর জন্য তাড়া তাড়ি চলে গেল l আমরা আশীর্বাদ সেরে ফিরে এলাম ।
- তুমি বসনা মাসি , বিপাশা বলে l
- এই নে যার জন্য আসা l কিছুই সেরকম আনতে
পারিনি রে l একটা জোড়া দুল l এই নে মা l এটাই আমার তরফ থেকে তোর জন্য আশীর্বাদ এর উপহার
l
- বিপাশা প্রণাম সারে সুনীতি দেবীকে l
- আশীর্বাদ কর মাসি যেন...
- সুখী হও মা l স্বামীর মন জয় কর l শশুর শাশুড়ি
র যত্ন কর l সকলের মন জয় করে সুখে শান্তিতে থেকো l এবার যাই রে l
- যা বললে কে যেতে দিচ্ছে l মৃণালিনী দেবী
বলেন l কিছু তো মুখে দিয়ে যান l
- না বোন আজ নয় l আজ আমার উপোষ l ছেলেটা বাইরে
আছে l আজ উঠি বলে চলে আসেন l
- বিপাশা দুলটা নিজেই পরে নেয় কানে l এটা
ওর কাছে অনেক বড় উপহার l
মাসির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে মাসির কথা
গুলো ভাবছিল ll
©ত্রিভুবনজিৎ
মুখার্জী
চলবে....
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি
বিপাশার আশীর্বাদ সেরে সুনীতি
দেবী ঘরে ফেরেন । ঘরে ফিরেই জগদীশ বাবুর প্রশ্নের মুখে পড়েন ।
- কেমন খাওয়া দাওয়া হল ?
- আমিতো ওখানে খেতে যাইনি ।
মেয়েটাকে জন্মথেকে দেখলাম । আমার চোখের সামনে বড় হল । সে ত আমার সন্তানের ই মতন । তা
ছাড়া আমাকে যথেষ্ট ভালো বাসে মেয়েটা । মাসি মাসি বলে সব সময় আমায় কত সাহায্য করে ।
আজ তার আশীর্বাদ আমি না গিয়ে কি করে থাকি । আমি মেয়েটার মনের ভাষা বুঝি । ও ধ্রুবকেই
পছন্দ করত কিন্তু বাবার জন্য ওকে বলিদান দিতে হল নিজের সমস্ত ইচ্ছা । ওর মা’র ও ধ্রুবকে
মন থেকে পছন্দ ছিল । ভেবেছিলেন কাছেই তাঁর মেয়ে থাকত । কিন্তু সব ভেস্তে গেল ওর বাবার
জন্য । উনি মেয়েকে সেই বলির পাঁঠার মতন পাঠাবেন তাঁর ছাত্রের অর্ধাঙ্গিনী করে । এই
সমাজে মেয়েদের কিছু বলার জো আছে না তাদের কথার কেউ পাত্তা দেয় । তোমার কথার ওপর আমার
কোন কথা খাটে না কোন দিন আমার কথা শুনেছ ? ছেলেটা পড়ে আছে অতো দূরে । একবার খোঁজ নিয়েছ
সে কেমন আছে ? সে টেলিফোনের টাকা দিল তাই আমি দু বছর পর তার সঙ্গে দুটো কথা বলি । তাও
সপ্তাহে একবার ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে ।
ওখানে যাওয়ার বন্দবস্ত করতে হবে । ওর বিয়ের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকাতে পাত্র পাত্রী
কলমে একটা বিজ্ঞাপন দেব । দেখি কেমন পাত্রীর সন্ধান আসে । তারপর না হয় একেবারে সম্বন্ধ
নিয়েই যাবো ওখানে । কি বল ?
- সে গুড়ে বালি । তোমার ছেলে
পাত্রী নিজেই পছন্দ করে রেখেছে । আমাকে বলেছে কিন্তু আমি তোমায় বলিনি ।
- সে কি আমায় বলনি কেন ?
- বলার মতন হলে ত বলব । তুমি
ত শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে । ওর মনের দিক কিম্বা ওর সুবিধে অসুবিধে কিছুই বুঝবে
না ।
- কি হল একটু খুলে বল ।
- এখন আমার ঘরের কাজ অনেক আছে
।পরে বলব ।
- যা বাবা তবে বললে কেন ?
- ঘাট হয়েছে আমায় মাফ কর ।
এখন পুজো হয়নি । আমি জাই ঠাকুর ঘরে ।
………
এই বলে সুনীতি দেবী ঠাকুর ঘরে
চলে জান ।
হটাত বৈঠক খানার ঘরে ফোনটা
বেজে ওঠে । জগদীশ বাবু প্রায় দৌড়ে জান ফোন রিসিভ করতে ।
- হ্যালো কে বলছেন ?
- কে বলছেন কিগো দাদা ..আমি
সন্ধ্যা । বরানগর থেকে বলছি ।
- ও সন্ধ্যা ! কি খবর তোদের
? সুধীর কেমন আছে ? কাকিমা কেমন আছে রে । অনেক দিন তোদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি । সব ভালো
ত !
- হ্যাঁ সবাই ভাল আছেন । মায়ের
ত ৮৮ বছর বয়েস হল । ওই আছেন এক রকম আরকি । আসল কথা তোমায় বলি । জানো ধ্রুবর বিষয় কিছু
?
- কেন কি হয়েছে ? ধ্রুব ত ভালোই
আছে । আমাদের সঙ্গে ত সপ্তাহে একবার কথা হয় । প্রতি রবিবার সে ফোন করে আমাদের । কি
এমন হল ?
- ধ্রুব এক মহিলার প্রেমে পড়েছে
। তাকে বিয়েও করবে । সে ওখানকার মেয়ে । দেখতে নাকি অপরূপ সুন্দরী কিন্তু খ্রিষ্টান
।
- তোকে এই সব কথা কে বলল ?
আমি জানিনা তুই এই সব উটকো কথা আমার ছেলের নামে বলে আমায় বিব্রত করছিস কেন ? আমি রাখছি
। বলে ফোন রেখে দিলেন বিরক্ত হয়ে ।
এদের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই
খালি পরের সংসারে ঢুকে তাদের হাঁড়ির খবর রাখা আর মানুষকে বিব্রত করা । তবুও মনে খটকা
লাগল । এখুনি ধ্রুবর মা কি জেন বলছিল । দূর যাই এক হাত তাস খেলতে সুমন বাবুর বাড়িতে
। ওখানেই হয়ত আজ আড্ডা জমেছে সকলের । ওইসব বাজে কথায় কান দিয়ে কাজ নেই । বলে চলে গেলেন
।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ধ্রুব
দেখল সামনে টি পয়ে বেড টি রাখা আছে । সুন্দর দার্জিলিং চায়ের সুবাসে ধ্রুবর ঘুম ভেঙ্গে
যায় । এক লাফে উঠে দ্যাখে সকাল ৬.১৫ । এলার্ম টা বাজেনি বোধ হয় । ব্রাশ সেরে চায়ের
কাপে মুখ দেওয়ার সময় চা জুড়িয়ে গিয়েছে । মনিকা কে ডাকে চা গরম করার জন্য ।
- কি হল চা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে
ত । আমি ইচ্ছে করে ডাকিনি তোমায় । দেখছিলাম চায়ের সুবাস তোমায় ওঠাতে পারে কিনা !
- এটা কি ধরনের রসিকতা । আমায়
ডাকবে ত ! আমার ফ্যাক্টরির বাস এসে যাবে এখুনি । ওই ঠাণ্ডা চা খেতে যাচ্ছিল ।
- উঁহু আমি আবার চা বানিয়েছি
তোমার জন্য । এই নাও ।
- কিন্তু ওটা ?
- আমি আবার গরম করে খেয়ে নেব
। তোমায় চিন্তা করতে হবে না ।
- এখন কথা বলার সময় নেই । চা
খেয়ে দৌড়য় টয়লেটে ।
মনিকার মুখ দিয়ে বেরোয়… পাগল
ছেলেটা । বড্ড ভাল । একটু মুখে হাঁসি ফোটে ।
আজই ওরা মায়ের কাছে যাবে মায়ের
ফাইনাল ডিসিশন শুনতে । ধ্রুবর মা ত কিছুই বললেন না । ব্যাপারটা আর চেপে রাখা যাবেনা
।
ধ্রুবর ঘর একদম সুন্দর পরিপাটি
করে সাজানো । ঘর পরিষ্কার , ঘর মোছা , আসবাব পত্র গুছিয়ে রাখা , বিছানা , বিছানার চাদর
পরিপাটি করে সাজানো । টেবিলে ফুল দানি তাতে ধ্রুবর পছন্দর রজনীগন্ধা , গোলাপ । রান্না ঘর একদম পরিষ্কার
। কোথাও কোন খুঁত নেই । এমনকি বাথ রুম , টয়লেট সব পরিষ্কার করে মনিকা নিজে হাতে । ঘরের
শ্রী ফিরেছে । ধ্রুবকে কিচ্ছুটি করতে দেয়না । নিজে বাজার আনে । রেশন আনে । রান্না বান্না
করা । সত্যি এত যত্ন ধ্রুবর কপালে ছিল ও নিজেও কোন দিন আশা করেনি এই বিদেশ ভুঁই তে
। সব মনিকা আসার পর হয়েছে । ধ্রুব তাই ওর কাছে কৃতজ্ঞ । বলে তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী
।
স্নান সেরে ধ্রুব আসার সময়
ব্রেক ফাস্ট রেডি । ওর পছন্দর পরটা আলু চচ্চড়ি আর সঙ্গে ডিমের অমলেট । এরপর এক কাপ
কফি । ব্যাস আর কিচ্ছু চাইনা ।
শার্ট প্যান্ট সব মনিকা কেচে
আয়রন করে রাখে । ফ্যাক্টরি যাওয়ার সময় হাতে হাতে সব গুছিয়ে দেওয়া । টাইটার নাট পর্যন্ত
এঁটে দেওয়া । ধ্রুব প্রমোশন পেয়ে ম্যানেজার প্রডাকশন হয়েছে । এখন ও পার্টি দেয়নি কলিগ
দের । মনিকা বলেছে আগে বিয়েটা হোক এক সঙ্গে পার্টি দেবে সকলকে ।
ধ্রুব তাড়া তাড়ি ব্রেকফাস্ট
খেয়ে মুখ ধুয়ে এলো বেসিন থেকে । মনিকা সব একে একে এগিয়ে দেয় । টাই বাঁধতে শেখায় ধ্রুবকে
। বলে এক্সিকুটিভ র্যাঙ্কে গেলে এখানে টাইটা পরা নেহাত
প্রয়োজন । ওটাই স্ট্যাটাস সিম্বল । এখন আর তুমি লেবারারদের নিয়ে কাজ করনা । তোমার চেম্বার
তোমার স্বতন্ত্র ফোন সব কোম্পানি দিয়েছে । তাকে কাজে লাগাও । নিজেকে প্রতিষ্ঠা কর ।
পরে আরও প্রমোশন পাবে । ধাপে ধাপে যখন ফ্যাক্টরির টপ এক্সিক্যুটিভ হবে তখন আরো স্ট্যাটাস
বাড়বে ।
এরমধ্যে বাস এসে গেলো । বাই
করে চলে গেল ।
মনিকাকে হসপিটালে যেতে হবে
। ও ফ্রেশ হয়ে নেয় । স্নান সেরে ব্রেক ফাস্ট করে । নার্সিং এর ড্রেস পরে বেরিয়ে পড়ে
ডিউটিতে হাতে এপ্রন ।
এদিকে মনিকার মা , মেয়ের কাণ্ড
কারখানা দেখে খুব অশান্তিতে আছেন । রিটায়ারমেন্ট এর এক মাস বাকি । এই সময় মেয়েটা বাঁধন
ছাড়া হয়ে গেলো । কি যে হবে চিন্তায় থাকেন । আজ ওরা আসবে বলেছে। ধ্রুবর বাড়ি থেকেও ত
কোন খবর এলো না । এখন যা পরিস্থিতি ওরা বিয়ে করবেই কারুর সম্মতির অপেক্ষা না নিয়ে ।
ধ্রুব পড়বে ফাঁপরে । রক্ষণশীল বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ পরিবারে কিছুতেই এই যুগে খৃস্টান মেয়ে
কে বৌ করে ঘরে তুলবে না । ওনার যেমন পরিবারে সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ হয়ে গেল ধ্রুবর
কপালেও তাই হবে । এটা নিশ্চিত । কিন্তু ওদের বোঝাবে কে ? আর আমার মেয়েটা হয়েছে ঠিক
বাপের মতন ।
© ত্রিভুবন
জিৎ মুখার্জী
।
No comments:
Post a Comment