Monday, September 30, 2013

সানির প্রেম কাহিনী ::. Soncita L Nova


:: সানির প্রেম কাহিনী ::.

সানির প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে খুব সকালে , যদিও ঘুম ভেঙ্গে দেখে সকাল ১১ টা বেজে গেছে  । ফ্রেশ হবার পর এক গ্লাস আমের জুশ আর এক কাপ দুধের সাথে কাচা মটর বুট মিশিয়ে খাওয়া , এতে নাকি তার চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় । এর পর প্রতিদিন এর মত তার '' ডি এস আর এল '' ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে বের হয় । প্রকৃতির ছবি তাকে খুব একটা টানে না , তার পর অ সে যায় পার্কের, বাগানের ছবি তুলতে । তার ক্যামেরায় সব চেয়ে বেশি স্থান পায় প্রেমিক-প্রেমিকার যুগল বন্ধী হাত , কখনো কখনো আবার একসাথে মিশে থাকা চারটি ঠোট । এভাবেই দিন চলে যায় সানির । সানির ডি এস আর এল ক্যামেরা থাকলেও তার কোন প্রেমিকা নেই 

একদিন পার্কে সানি ছবি তুলছিল পার্কে খেলতে আসা ছেলে-মেয়েদের । তখন তার চোখে পড়লো গাছের ডালে সুন্দর একটি পাখি কিচির মিচির করছে । সানি ছবি তুলতে গেল , কিছু দুষ্ট পাখি কিছুতেই স্থির থাকে না । পাখিটি উরে গেল আরেকটি গাছে , সানি সেখানেও তাক করলো তার ক্যামেরা । হঠাত তার চোখ গেল সেই গাছটির গোরায় একটি বেঞ্চে , বেঞ্চে বসে আছে সুন্দরি একটি মেয়ে , খাতায় কিছু একটা করছে । সানি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভুলে গেল পাখিটির কথা , ক্যামেরার লেঞ্চ তাক করলো মেয়েটির দিকে , তুলে নিল একটা ছবি । মেয়েটি সেটা বুঝতে পেরে তাকালো সানির দিকে , সানি ভ্যাবাচেকা হয়ে তরিঘরি করে ক্যামেরার লেঞ্চ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে । যখন আবার ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকাবে ততক্ষণে মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্থান করেছে । বেচারা সানি আবার একটি মেয়ের উপর ক্রাশ , কিন্তু খুজে পাবে তাকে কিভাবে , কিভাবে ভাব জমাবে মেয়েটির ভাবতে ভাবতে তার দিন শেষ ।

সন্ধায় বাসায় ফিরে এক বাটি লুডুস খাবে আর সারাদিন কি করলো সেটা নিয়ে প্রতিদিন এর মত ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দেবে এর পর বসবে সারাদিন তোলা ছবি গুলো এডিটিং করতে । ছবি গুলো দেখতে দেখতে সামনে এলো পার্কের ওই মেয়েটির । কি অপূর্ব , কি মহিমা , আহা কি সৌন্দর্য এগুলো ভাবতে ভাবতে বার বার দেখতে লাগলো সানি ।

পরদিন সকালে আবার প্রতিদিন এর মত এক গ্লাস আমের জুশ আর এক কাপ দুধের সাথে কাচা মটর বুট মিশিয়ে খেয়ে আবার দৌড় দিল ওই পার্কের দিকে এই ভেবে যে মেয়েটা যদি আবার আজ ও আসে । পার্কে গিয়ে সানি ওবাক , মেয়েটি সেদিন ও এসেছে । চুপি চুপি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না , তখন মেয়েটি -

- কিছু বলবেন ?
- না কিছু না , না মানে হাই !! ( ঘাবড়ে গিয়ে সানি বলল )
- হুম , হাই । আর কিছু ?

এটা শুনেই সানি ভয়ে আর কিছু বলল না , ঘুরে অন্য দিক ফিরে ছবি তুলতে লাগলো । সানি মনে মনে ভাবলো কি বলে কথা বলা শুরু করা যায় ! কেমন আছেন এটা বলে ?? না না এটা হবে না ! তাহলে ?? মেয়েটি খাতায় কি করছে ! হুম সে কি আকাচ্ছে এটা বলেই শুরু করি । সানি ঘুরে মেয়েটিকে বলতে যাবে আপনি কি আঁকাচ্ছেন , কিন্তু ঘুরেই দেখে মেয়েটি নেই । কিন্তু বেঞ্ছের উপর পরে রয়েছে মেয়েটির খাতাটি । সানি খাতাটি হাতে তুলে ছুটলো মেয়েটি যে দিকে গেছে সে দিকে , দৌড়াতে গিয়ে বাধা খেল সাইক্লিন করতে আসা একটি লোকের সাথে , পরে গেল দুজনেই , খাতাটি ছিটকে গেল অনেক দূরে । সানি উঠে আবার খাতাটি নিয়ে দৌড় , কিন্তু মেয়েটিকে আর পেলো না , নিজের কাছেই রেখে দিল । বাসায় ফিরে গেল সানি ।

শুরু হলো তার সন্ধার পরের নিয়মিত রুটিন , সব শেষে দেখতে লাগলো মেয়েটির খাতাটি । দারুন সব পেন্সিল দিয়ে স্কেস করে আঁকানো ছবি । বাহ ! মেয়েটির ট্যালেন্ট আছে । আমি যেসব ছবি লাখ টাকার ক্যামেরায় তুলতে পারিনা তার থেকেও ভালো ছবি আঁকিয়েছে অল্প দামের পেন্সিল দিয়ে - ভাবতে লাগলো সানি ।সানি ওবাক হলো এর মধ্যে সানির ও একটি ছবি আঁকিয়েছে । অসাধারণ হয়েছে ছবিটি , ঠিক যেন জীবন্ত সানি খাতার মধ্যে । কিন্তু সানি তাকে খাতাটা ফেরত দেবে কিভাবে !! মেয়েটি কি প্রতিদিন আসে পার্কে !! খাতার ছবি গুলো তো দেখে মনে হচ্ছে সব গুলো ঐ পার্কের ই ছবি । তাহলে সে প্রতিদিন আসে পার্কে । কিন্তু মেয়েটির মুখে হাসি নেই কেন ! সে কি হাসে না !! তাকে চমক দেওয়া যায় , তাহলে সে হাসবে । কিন্তু কিভাবে চমক দেওয়া যায় !! সানির মাথায় বুদ্ধি আসলো সে লেবুর রস দিয়ে খাতায় তার মনের একটা লাইন লিখে দিল । লেবুর রস দিয়ে লেখার কারন , খাতায় পেন্সিল দিয়ে স্কেস করলেই লেখা গুলো ভেসে উঠবে । অমনি চিন্তা , অমনি কাজ ।

পরদিন আবার ঘুম থেকে উঠে ছুটল পার্কে , কিন্তু মেয়েটি সেদিন পার্কে নেই , মন খারাপ হলো সানির । এভাবে ৫-৬ দিন সানি পার্কে গেল , রোদ বৃষ্টি মাথায় করে বসে থাকলো সানি কিন্তু মেয়েটি আসেনা । সত্তম দিন এর মত আবার সানি গেল পার্কে । সারাদিন বসে থাকলো পার্কে । বিকেলে যখন সানি উঠে চলে আসবে তখন দেখলো মেয়েটি আসছে । সানি খুশি হলো , খাতাটি বেঞ্চের উপর রেখে কিছু দূরে গিয়ে নিজেকে আড়াল করলো ।

মেয়েটি বেঞ্চের কাছে আসতেই দেখলো তার খাতাটি বেঞ্চের উপর , খাতা পেয়ে মেয়েটিও খুসি হলো , মনে মনে এদিক সেদিক তাকালো আর খুজতে লাগলো ক্যা রেখে গেল খাতাটি । কাউকে না পেয়ে খাতাটি খুলে দেখলো সব ঠিক আছে কিনা । ব্যাগ থেকে পেন্সিল বের করে আবার স্কেস শুরু করলো । কিছুক্ষন স্কেস করতেই দেখলো একটি অক্ষর ভেসে উঠছে , সে তারাতারি করে পুরো খাতাটি স্কেস করলো আর দেখলো লেখা আছে -

'' Hello Stranger !! ''

ওবাক হলো মেয়েটি , সে পরের পাতা স্কেস করতে শুরু করলো । পরের পাতায় ও লেখা আছে -

'' You Have An Amazing Talent ''

পরের পাতায় ...

'' You Should More Smile ''

পরের পাতায় ...

Because You're Beautiful ... 

মেয়েটি এই লেখা গুলো দেখে খিল খিল করে হেসে ফেললো ...
ঠিক তখন ই সানি তার সামনে গিয়ে মেয়েটির হাসি মাখা ছবি তুলে নিল , মেয়েটি সানির দিকে তাকিয়ে -



- তুমি তাহলে ?
- হুম 
- এই পুচকা দারিয়ে কেন ? পাশে এসে বসো 

No comments:

Post a Comment