**আজ এই গল্পটা বসে লিখলাম । এটা লেখার সময় আমার হাঁসি পাচ্ছিল আবার
রাগ হচ্ছিল। পৃথিবিতে কত রকমের লোক দেখলাম চাকরি করার সময় । তার ই এক উদাহরন
দিয়ে লিখলাম গল্প টা ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৯.২০১৩/বেলা ৪ টে ।
ডেথ সার্টিফিকেট
আমার এক বিচিত্র লোকের সঙ্গে পরিচয় হয় । নাম
ধিরেন মল্লিক । ধিরেন বাবু আমাদের গ্রামের সরকারী ডাক্তার খানায় কেরানি র কাজ
করতেন । মাস মাহিনা জাই পান না কেন কিছু উপরি না পেলে ভদ্রলোক অস্থির হতেন। এ হেন
লোক সরকারী চাকরি কি করে করেন আমার কৌতূহল
হত। আমার সঙ্গে ওই ডাক্তার খানার ডাক্তার
বাবুর আলাপ প্রায় দু বছর হবে! উনি আমাদের
গ্রামে পোস্টিং পাওয়ার সময় আমি দেখা করি ওনার সঙ্গে , তারপর থেকে কথায় কথায় আলাপ হয়ে যায়। আলাপ থেকে হৃদ্যতা । আমি
যেদিন গ্রামে আস্তাম ওনার কাছে না গিয়ে পারতাম না। একদিন ডাক্তার বাবুকে জিঙ্গাসা না করে থাক্তে পারলামনা ।
ডাক্তার বাবুকে , আমি , পরিতোষ বাবু বলেই ডাকতাম । ওনার নাম ডাক্তার
পরিতোষ সমাদ্দার। উনি আসলে হার্ট স্পেসিয়ালিষ্ট । সরকারী নিয়ম মাফিক দু বছর গ্রামে
না থাকলে স্পেসিয়ালিষ্টের স্কেল পাবেন না তাই উনি দু বছর আমাদের গ্রামের ডাক্তার
খানাতে ডাক্তার । খুব অমায়িক
লোক এবং নিরহংকার মানুষ । আমার সঙ্গে এক্টু
বেশি মেশেন কারন আমার সঙ্গে ওনার রসায়ন টা ভালো মেশে।
পরিতোষ বাবুকে ওনার বাডিতে কথার ছলে জিঙ্গাসা করি , “আচ্ছা ওই ধিরেন বাবু
কেন এরকম করেন বলুন তো”! গ্রাম সুদ্ধু লোক আমাকে বলে ওনার কথা । আমি এডিয়ে যাই ।
তাও ওরা বলে । বারে বারে শুনে একদিন ভাবলাম আপনাকে কথাটা বলা উচিৎ । আপনি আবার
কিছু মনে করবেন না যেন !
আরে না না । আপনি বলুন না ।
না মানে , ওনার ওই টাকা পয়সার ব্যাপারে
গ্রামের লোকেরা একটু অ খুশি ।
টাকা পয়সা ? খুলে বলুন ।
না আমি খুলে বোলতে পারবোনা । ওটা অসুন্দর
দেখায় ।
তবে কথাটা তুললেন কেন?
সেটাই তো ভাবছি , কেন বললাম ! তবে ও কথা থাক
। আপনি পরে যেনে যাবেন । আমার বলার প্রয়োজন হবে না।
আমি আমার ব্লাড প্রেসার চেক করাই ডাক্তার
বাবুর কাছে । কাল রক্ত পরিক্ষার রিপোর্ট দেখে একটু চিন্তিত । আজ ডাক্তার বাবু ওষুধ
লিখে দিয়েছেন । ওটা রেগুলার খেতে বলেছেন । তা ছাডা রেগুলার ব্যায়াম এবং প্রাণায়াম
করতে বললেন। ডায়াট কন্ট্রোল এর বিশেষ
প্রয়জন।
কথা হচ্ছিল হঠাৎ ধিরেন বাবু এসে হাজির ।
আমি উঠে পডি । ডাক্তার বাবুর উদ্যেশে বলি , “চলি” ডাক্তার বাবু।
আচ্ছা আসুন।
ধিরেন বাবু যে ফাইলটা আনেন সেটা আমার আন্দাজ
করতে কষ্ট হোলনা । ওই বিষয়তেই কথা বলতাম কিন্তু
ওটা ওনাদের অফিসিয়াল ব্যাপার তাই মাথা না
ঘামানোটাই উচিৎ মনে করলাম । আবার ডাক্তার বাবু অহেতুক বদনাম হতে পারেন তাই সেটা
জানানো উচিৎ বলে মনে করলাম যার জন্য ডাক্তার বাবুর কাছে যাওয়া ।
ব্যাপারটা হল ,
না থাক ! ওটা এখন না বলাই শ্রেয় ।
আমি বাইরে পা রেখেছি দেখি ধিরেন বাবু আমার
দিকে হন হন করে আসছেন।
ও দাদা শুনুন না !
আমি কর্ণপাত না করে এগোই ।
ও দাদা আপনাকেই বলছি ,
শুনুন না!
কি মুস্কিল । কি বলুন তো ?
আপনি ডাক্তার বাবুকে একটু বলুন না !
কেন বলুন-তো ?
আহা আপনার বন্ধু না !
না উনি কোন দুঃখে আমার বন্ধু হবেন ?
এটা জনতার স্বার্থে আপনাকে অনুরোধ করছি।
দেখুন আমি রাজনীতি করিনা। আপনি যেমন ছা পোষা
মানুষ আমিও ঠিক তাই । আমাকে কেন ও সব বিষয় জডাচ্ছেন বলুন তো ?
দেখুন দাদা মানুষের উপকার ছাডা আমি অপকার
করি না । আর তার জন্য যদি কেউ দু পয়সা দেয় না তো করতে পারিনা । আমাকেও ত খাটতে হয়
বলুন!
আমার ও সব কথা শোনার প্রয়োজন নেই । আপনি যা
আপনার মন চায় করুন না আমাকে কেন ও সব কথা শোনাচ্ছেন?
সাধে কি শোনাচ্ছি দাদা । আপনি হলেন ডাক্তার
বাবুর খাস লোক । আপনি বললে ডাক্তার বাবু না শুনে পারবে না । আমাকে এইটুকু সাহায্য
করবেন না?
দেখুন আপনি বাডা বাডি করছেন এবং আমার সরলতার
সুজোগ নিচ্ছেন। আপনি কি ভাবেন মোশাই , লোকগুলো কি বোকা না হাঁদা । যান আমি আপনার
কোন কথা শুনতে প্রস্তুত নই । এই বলে চলে গেলাম ওখান থেকে ।
বিকেলে আমার ঘরে ধিরেন বাবু এসে হাজির।
আমাকে অনুনয় করে বলেন দাদা আপনি বললে সার্টিফিকেট গুলো সই করবেন নাহলে নয় ।
কিসের সার্টিফিকেট ? আমি বললেই বা সই করবেন
কেন ? আপনি আমাকে কেন বিরক্ত করছেন । গ্রামের লোক আপনাকে কেউ পছন্দ করেন না তা
জানেন ? আপনি আসুন ।
বাজ পডে মৃত্যু হলে আসে পাসের গ্রামের লোক
যে টাকা পায় তার সার্টিফিকেট টা কে লেখে শুনি? আমার লেখাতে ডাক্তার সই করেন
মেডিক্যাল রেপর্টে । ওটা কি আপনি না গ্রামের লোক করে দেবেন । বাজ পডে মৃত্যু হলে সরকার ৫০০০ টাকা আপাৎ কালিন সাহায্য দেন । সেটা
তো নাও পেতে পারে গ্রামের লোক । আমি একটা সার্টিফিকেট লিখে দি ; যে যা দেয় খুশি
মনে তাই নি । এতে দোষের কি হল? আমি ত জোর জুলুম করি না! তবে !
আপনার বলতে লজ্যা করে না? যান মশাই আপনি
যান। আমার মাথা খাবেন না দয়া করে।
এ বছর আগস্ট সেপ্টেম্বরে ঘন ঘন
বাজ পডাতে আনেক লোক মারা গিয়েছেন এবং আঘাৎ পেয়ে শয্যাশায়ী । আর সেই বাজ
পডাটা ধিরেন বাবুর মত লোকের জন্য এক রোজগারের সহজ উপায় । লোকে বলে ধিরেন বাবু নাকি
বাজ পডলে আনন্দে ঘরে নাচেন। একটা সার্টিফিকেট পিছু ৫০০ টাকা রোজগার । একে
চিত্রগুপ্ত বলবনা তো কি বলব বলুন ?
একটা ডাক্তারের সার্টিফিকেট এর জন্য সাধারন
লোকেদের অপেখ্যা করে থাকতে হয়। ডাক্তার বাবু এসবের কিছুই জানেন না হয়ত । উনি রোগীদের নিয়ে এবং
অপারেসন ক্যাম্পে এতো ব্যাস্ত থাকেন যে ফিরেই সব সার্টিফিকেটে
সই করে দেন শুধু মাত্র বিশ্বাসে । তার
মধ্যে কিছু মিথ্যে সার্টিফিকেট থাকলে ওনার
চাকরি নিয়ে টানা টানি হতে পারে ।
আজ শুনলাম ডাক্তার সবকটা কেস নিজে জাচাই করে
তবেই সই করবেন সার্টিফিকেটে । প্রায় ৫০ টা সার্টিফিকেট আছে ওই ফাইলে । ডেথ সার্টিফিকেট
।
ধিরেন মল্লিক আর বাজ পডলে নাচবেনা ! ওর
রোজগারের রাস্তা বন্ধ । ডাক্তার বাবু ওনাকে সাস্পেন্ডের জন্য সুপারিশ করতে পারেন ।
তাই ধিরেন বাবু এখন চুপ ।
বি দ্রঃ-
** আমার দেখা এক অন্য নামের ধিরেন মল্লিক।
এই গল্পের স্থান কাল পাত্র আলাদা কিন্তু ঘটনা সম্পুর্ণ সত্যি
***
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /
২৯.০৯.২০১৩ /
No comments:
Post a Comment