©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
ধ্রুব , মনিকার সঙ্গে ওদের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি করছে ঠিক এই সময় ফোন এলো
। ফোন রিসিভ করাতেই ওপার থেকে ওর মায়ের কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো । ওর মা র গলা শুনে ধ্রুব
অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে কিছু ঘটলো নাতো !
- হ্যাঁ মা বল
- কেমন আছিস বাবা ?
- ভালোই আছি । ভাবছি আজকে একটু বাইরে বেরুবো ।
- কারুর সঙ্গে না একা !
- মানে ?
- না মানে তুই বলছিলিসনা কি নাম যেন …..
- মনিকা । হ্যাঁ ওর সঙ্গেই ওদের বাড়িতেই যাবো । ওর মাকে দেখা করতে ।
- তাই তা যা বাবা । তোর মনটাও একটু ভালো থাকবে । বিদেশ ভুঁই তে কেই বা আছে
তোর নিজের লোক !
- হ্যাঁ মা তবে রাখি । আমি রাতে ফোন করবো ।
- আজ তো রবিবার তাই ভাবলাম তোর সঙ্গে একটু কথা বলে নি ।
- হ্যাঁ তা ভালো করেছ । তবে তোমাদের ফোন করতে হবে না ট্রাঙ্ক কলের বিল বেশি
উঠবে । আমি তোমাদের ফোন করে সব খবর নেব । এখন রাখি ..।
- হ্যাঁ বাবা রাখ । ফিরে আমায় বলিস কেমন !
- নিশ্চই বলবো ।
মায়ের মন কি আর মানে । তিনি জানেন এই সময় ওকে কিছু বললে ফল উল্টো হবে ।
বিপাশাদের বাড়িতে ওর মা তো কিছুই বললেন না । ওর বাবা ফিরলে বিপাশার মা কথাটা বলবেন
কিনা কে জানে ?
ধ্রুব মনিকা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । মনিকা একটা ট্যাক্সি ডাকে । ওরা মারগাওঁ
যায় ট্যাক্সিতে । রাস্তায় দুজনের কিছু কথা হয় ।
মনিকা বলে , তোমার মা কি বললেন ?
- মা জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় যাচ্ছি ?
- তুমি কি বললে “
- শুনলেই তো আমি কি বললাম । তোমাদের বাড়ি । আমি কখন মিথ্যে বলিনা । মাকে
তো নয় ই ।
- আমাকে ?
- ভারি মুস্কিল । তোমাকে মিথ্যে বলতে যাবো কেন ? কি প্রয়োজন আমার মিথ্যে
বলে সম্পর্ক নষ্ট করা ।
- তাই !
- হ্যাঁ তাই ।
- গুড বয় । আই লাইক ইট ।
- ধ্রুব ভণিতা পছন্দ করেনা । মনে রাখবে ।
- ইয়েস বস
দুজনেই হেঁসে ওঠে …..
- মনিকা বলে আমার মাকে কি বলবে ?
- পরিষ্কার বলব আমাই আপনার মেয়েকে পছন্দ করি বিয়ে করতে চাই ..আপত্তি আছে
?
- উরে বাবা এতো সাংঘাতিক লোক । প্রথম দেখাতেই একেবারে বিয়ে !
- হ্যাঁ । আমিতো বললাম ভণিতা আমি পছন্দ করিনা । আমার ভালো লাগেনা ।
- আমিও পছন্দ করিনা তাই তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম ।
- আমাকে কি পরীক্ষা করছ ?
- ছি ! আমি কে তোমাকে পরীক্ষা করার । তুমি তো হীরের টুকরো ছেলে ।
- মস্করা করো নাকি আমার লইগ্যা ।
- এটা আবার কি ভাষা ?
- ও কিছুনা । তোমাদের বাড়ি আর কত দূর ?
- এসে গেলো ।
- মিটারে ৫o টাকা হল । ধ্রুব পেমেন্ট করতে যাচ্ছিল… মনিকা বাধা দিয়ে বলে
না না ।। তুমি আমাদের বাড়ির গেস্ট ।
- না পেমেন্ট আমি করবো ।
মনিকা বলে , ভাড়ে কায় আহে (भाडे काय आहे) মানে কতো টাকা
ভাড়া হল ?
- পান্নাস রুপয়ে মাদাম (पन्नास रुपये मॅडम) মানে ৫o টাকা ভাড়া
মাদাম ।
- ধ্রুব ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলে লিজিয়ে ভাই ।
- মাদাম মালা দেইল (मॅडम मला देईल ) মাদাম দেবেন ।
- আপ রখ লিজিয়ে ভাই সাব । বলে ড্রাইভারের পকেটে গুঁজে দেয় ১০০ টাকার নোট
খানা
- ড্রাইভার মনিকার দিকে তাকিয়ে ….
- অগত্যা ভাড়াটা ধ্রুব ই দেয় ।
- তুমি মারাঠি ভালোই বল দেখছি
- হোয় মি মারাঠি পরসঙ্গি বোলতো (होय मी मराठी प्रसंगी बोलतो) হ্যাঁ আমি মারাঠি
মাঝে মধ্যে বলি
- ক্যা বাত । তোমার কাছ থেকে ভাষাটা শিখতে হয় তবে l
- তা পারো । খুব সোজা ।
দুজনে বাড়ির দিকে এগোয় । কলিং বেল টিপতেই এক ভদ্র মহিলা দরজা খোলেন ।
- মনিকা পরিচয় করিয়ে দেয় …মা ইনি ধ্রুব … আমার মা ।
- নমস্কার আনটি ।আমি ধ্রুব জ্যোতি ব্যানার্জী । নিবাস মধ্যম গ্রাম , পশ্চিম
বংগ । কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যাদবপুর থেকে । জুয়ারি কেমিকালস এ শিফট ইঞ্জিনিয়ার , প্রোডাকশন
ইউনিট । গত দু বছর এখানে আছি । আমার হটাত জ্বর হয় ১০৩°F। কোম্পানির হাঁসপাতালে
ভর্তি হই । আপনার মেয়ে আমাকে সুস্থ করে তোলেন তার আদর যত্নে । সেই থেকে আলাপ । আপনাকে
দেখার আমি ইচ্ছা প্রকাশ করি আপনার মেয়ে মনিকার কাছে। শুনি আপনার বাড়িও মধ্যম গ্রামে
তাই সেই সূত্রে এখানে আসা । কথাগুলো বলে একটা জোরে নিঃশ্বাস নেয় ।
- প্রতি নমস্কার করে আনটি বলেন … জল খাবে বাবা … একটু মুচকি হেঁসে কথাটা
বলেন ।
- হ্যাঁ দিলে ভালো হয় । তবে এখানে ত জল চাইলে বিয়ার দেয় আনটি । একবার আমি
আর আরেক বন্ধুর মারগাওঁ বিচে জল তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে । ঝাঁকায় করে কাজু ফেনি আর
বিয়ার নিয়ে ঘুরছে । আমি সামনে একটা হটেলে জল চাই । বড় কষ্টে জল পাই ।
- আমার বাড়িতে কি তুমি তাই আশা করো ? তোমার গোয়ার ব্যাপারে একটা খারাপ ধারনা
আছে । বাঙালি তো তাই । হ্যাঁ এখানে ওটাকে জল বলেই ভাবে সবাই ।যারা টুরিস্ট তারাও তাই
ভাবে । জল পাওয়া যায়না কথাটা ঠিক না । ঠিক আছে বাবা তুমি ভেতরে এসো সব কথা শুনবো ।
- চলুন । কতো দিন পরে নিজের দেশের ভাষা শুনছি । সত্যি কি যে ভালো লাগছে
।
- সোফায় বসার পর মনিকা সিলিং ফ্যানটা ফুল স্পীডে চালিয়ে দিয়ে বলে একটু বস
আমি আসছি ভেতর থেকে ।
- থালা ভর্তি নানান খাবার নিয়ে ঢোকে মনিকা । হাতে জলের গ্লাস ।
- এসব কি করেছ তুমি ? আমি খাইনা এতো । সকালে ত সুজির হালুয়া খেয়ে এসেছি
তোমার সঙ্গে । এখন কি করে খাই বল ?
- খেতেই হবে । আমি বানিয়েছি কেক । মা বানিয়েছে পুডিং । সঙ্গে প্যাস্ট্রি
।
- মা বলেন তুমি এইসব খেয়ে দেখ । সব দিন তো শুনি মনিকা বলে ব্রেড বাটার জ্যাম
আর ডিম সিদ্ধ খাও । আজ একটু এইসব খেয়ে দেখ । দুপুরে আমি রান্না করে রেখেছি তুমি আসবে
বলে । সব বাঙালি খাবার । পম্প্রেট ফ্রাই , শুক্তো বাটার চিকেন , বিরিয়ানি ।
-
- আমি কি রাক্ষস ? এতো সব খেলে কাল ফ্যাক্টরি ডিউটিতে তে যেতে পারবোনা আনটি
।
- ঠিক আছে যতোটা পারবে খাবে । আমি জোর করবোনা ।
- এইতো আমার মায়ের মতন কথা ।
- আমি তোমার মায়ের ই মতন ।
ধ্রুব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় আনটির দিকে । ও ভালোবাসার কাঙ্গাল । অনেকদিন
এইরকম কথা কারুর কাছথেকে শোনেনি । বড্ড ইমোশনাল হয়ে পড়ে । চোখ ছল ছল করে ওঠে । মায়ের
কথা মনে পড়ে সর্বক্ষণ । তাই বোধ হয় ঈশ্বর নিজেই ওকে মায়ের সন্ধান দিয়েছেন ।
- মনিকা বলে , কি হোল ? অমনি মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো । তুমি বড্ড ইমোশনাল
। কি করে ফ্যাক্টরি তে কাজ কর ওই লেবারারদের নিয়ে ?
- না না ও কিছু নয় । তুমি মায়ের কাছে আছো কি করে বুঝবে আমার দুঃখ কোথায়
!
আনটি বলেন তোমার যখন ইচ্ছে হবে আমাদের বাড়ি চলে আসবে বাবা । আমাদের খুব
ভালো লাগবে । আমরা মা মেয়ে ছাড়া তো কেউ নেই আমাদের
- হ্যাঁ নিশ্চই আনটি । আমারও একটু চেঞ্জ হবে । গল্প করার তো একটা পরিবেশ
পাবো । তবে আপনারা যেমন এই খাওয়ার আয়োজন করেছেন এ তো আমাদের ওখানে জামাই ষষ্ঠীতে শাশুড়ি
মাতারা করেন । এতো কি আমরা খেতে পারি । মেদ বেড়ে গেলে কাজ করবো কি করে ? তাই আপনাকে
প্রমিস করতে হবে নো খাওয়া দাওয়া খালি গল্প আড্ডা আর গান ,কবিতা ।
- ঠিক আছে ঠিক আছে । এবার সুরু করো ।
- আপনারা ?
- হ্যাঁ আমরাও সংগ দিচ্ছি । এই বলে সকলে ডাইনিং টেবিলে বসে ।
- ধ্রুব সামনের আয়নায় ভেতরের ঘরে এক প্রমাণ সাইজের মা ভবতারিণীর ফটোর ছবি
টাঙ্গানো আছে দেখতে পায় । দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে ওর মা প্রতি মঙ্গল বার যান পুজো দিতে
। মায়ের ফটো দেখে বলে , আনটি আপনি কি মা কালির পুজো করেন ?
- পুজো করিনা তবে ওই ধুপ ধুনো দিয়ে প্রণাম করি । কেন বলত ?
- ওই যে ফটো টা দেখতে পেলাম আয়নায় , তাই বললাম ।
- ও হ্যাঁ । আমি খৃষ্টান ধর্ম নিয়ে তোমার আঙ্কল কে বিয়ে করি ওনাদের মতে
। তাই মা’কি আমার পুজো নেবেন ?
- আশ্চর্য মা কি মানুষের গায়ের স্ট্যাম্প দেখে পুজো নেন নাকি ? উনিতো ভবতারিণী
মা । সকলের মা । আপনি তা থেকে বাদ যাবেন কেন ?
ওটা তোমার কথা বাবা । সমাজ সেটা মানেনা । আমি যে সময় তোমার আঙ্কল কে বিয়ে
করি ১৯৫০ সাল। তখন আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সবে স্বাধীন হয়েছে । কিন্তু গোয়াতে পর্তুগিজ
দের আধিপত্য তখন ও ছিল । ১৯ শে ডিসেম্বর ১৯৬১ তে গোয়াকে পর্তুগিজদের কবল থেকে ভারত
সরকার টেক ওভার করেন অফিসিয়ালি। গোয়া স্বাধীন হয় । ভারতের সঙ্গে মিসে যায় । সেই দিনগুলি
ভুলিনা আমি । হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতো পর্তুগীজরা । এখানকার চলতি ভাষা কঙ্কণী কে চাপিয়ে
রেখেছিলো মিলিটারি শাসকরা । সে অনেক দুর্দিন গিয়েছে বাবা । আমরা পরাধীন ভারতে যা অত্যাচার
আর দুর্ভোগ সহ্য করেছি তা কি আর বলি । আমি মধ্যম গ্রামের এক কুমারী কম বয়েসি মেয়ে ।
কিন্তু আমি চলে আসি কাকার কাছে গোয়া তে । বাবা পাঠিয়ে দেন আমার উচ্চ শিক্ষার জন্য গোয়া
তে কাকার সঙ্গে । তখন আমার মাত্র ১২ বছর বয়েস । বাংলা মিডিয়ামে ক্লাস সিক্স পাস করে
আসি । আমাকে আবার ইংলিশে পরীক্ষা দিয়ে ক্লাস সেভেন এ ভর্তি হতে হয় । আমি মা বাবাকে
ছেড়ে থাকি কাকা কাকিমার কাছে । কাকা ভাস্কোডাগামায় পোর্টে কাজ করতেন । উনি নিঃসন্তান
ছিলেন তাই কাকা কাকিমা আমাকে অনেক যত্নে মানুষ করেন ।আমি কখন মা বাবার অভাব অনুভব করিনি
। কিন্তু মনে মনে যে মা বাবাকে খুঁজতামনা তা নয়। আমি এখানেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ি
এবং সিনিয়র কেম্ব্রিজ পরীক্ষাতে ভালো নম্বর নিয়ে পাস করি ১৬ বছর বয়েসে ।কেম্ব্রিজ ইউনিভারসিটি
থেকে ওই সার্টিফিকেট আসে । তারপর নার্সিং স্কুলে নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে সরকারি চাকরি
সুরু করি ১৮ বছর বয়েসে । ব্যাস সেই যে আমার জীবন সুরু এই গোয়াতে আর ফিরিনি দেশে। তারপর
তোমার আঙ্কল এর সঙ্গে দেখা । উনি আমাকে দেখে প্রপোজ করেন ।পর্তুগিজ হলেও মানুষটা ভাল
ছিলেন । আমার কোন কিছু অভাব রাখেন নি । আমি হয়ে যাই রবার্ট গোমসের ধর্ম পত্নী এলিনা
গোমস । জাহাজের চাকরিতে নানান দেশের সুন্দর সুন্দর উপহার আনতেন আমার জন্য ।
###আঞ্জ্যেল###
###ষষ্ঠ পর্ব### ‘A’
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আনটি ব্রেক ফাস্ট দিয়ে ভেতরে চলেযান । মনিকা আর ধ্রুব গল্পে মত্ত ।
ধ্রুব কেকটায় কামড় দিয়ে বলে কে বানালো কেক
?
- কেন
আমি বানিয়েছি । ভাল হয়েছে !
- সবে
তো খেতে সুর করেছি দাঁড়াও । খেয়ে সারি তারপর ত বলবো ভালো না খারাপ
- ওকে
। আমায় বোলো কিন্তু কেমন হয়েছে । নাহলে ….. বলে ধ্রুব কে ওর ঠোঁটে কিস করে ।
-
- এটা
কি হল ? ওই যে কেকটা টেস্ট করলাম তোমাকে কিস করে । তুমিতো বলবেনা কেমন হয়েছে !
- আনটি
যদি দেখে ফেলেন কি হবে ? আমাকে আর তোমাদের বাড়ি ঢুকতেই দেবেন না ।
- না
না সে ভয় নেই মা আমাকে খুব বিশ্বাস করেন । জানেন ওনার মেয়ে ভুল লোকের সঙ্গে সম্পর্ক
রাখবেনা ।
- তুমি
আনটির বিশ্বাসকে তুচ্ছ করে এইসব বিয়ের আগে করতে পারো না । আমি কিন্তু এসব একদম পছন্দ
করিনা ।
-
একদম পারফেক্ট ভার্জিন ছেলে মাইরি । চিবিয়ে খাবো তোমাকে দাঁড়াও । আমি তোমাকে এমন সিডিউস
করবো আমাকে তখন ছাড়তেই চাইবে না ।
- এসব
কি বলছ মনিকা ! আমি তোমাকে ভালো বাসি তার মানে এই নয় তোমাকে …. নো নো ইটস ইম্পসিবল
ফর মি ।এটা পাপ ।আমি কি জবাব দেব আমার মা’কে ?
- ঠিক
আছে চ্যালেঞ্জ … এই বলে দরজা টা ভেতর থেকে বন্দ করে আসে ।মনিকার মা এখন রান্নায় ব্যস্ত
। ফিরে এসে টপ খুলে দেয় । তারপরে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে নিজেকে ।
- ধ্রুব
অবাক নয়নে মনিকার কীর্তি কলাপ দেখে আশ্চর্য হয় আবার ওর নিখুঁত গড়ন দেখে মাথা ঝিম ঝিম
করে ! এই প্রথম ও কোন মহিলাকে এরকম নির্লজ্জ ভাবে কোন পর পুরুষের সামনে উলগ্ন হতে দেখল
! একি করছ মনিকা …. উম উম ছাড়ো … মনিকা ধ্রুবকে
শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে গভীর ভাবে চুমু খায় । বিছানায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে ফেলে দেয় তারপর
ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । শার্ট খুলে বুকে নাক
ঘসতে সুরু করে । গভীর ভাবে কিস করে । একপ্রকার সিডিউস করে যায় । মুখে বলে আমার ভাণ্ডারে
শুধু মধু আছে । সেটা এতদিন তোমার জন্যেই যত্ন করে রাখা । কি হোল তুমি
চাখবে না ?
- ধ্রুব
এবার বলে… ওকে আই মাস্ট সেটিসফাই ইউ ।মনে হচ্ছে তুমি এই সবের জন্য মরিয়া । দুজনে এক
রকম হিংস্র সিংহ সিংহী তে রূপান্তরিত হয় । গলদ ঘর্ম হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে দুপাশে হাঁপিয়ে পড়ে জোরে
জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগে । ওপরে ফ্যানের আওয়াজটা ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই ঘরে ।
- খুব
অপরাধী মনে হচ্ছিল ধ্রুবকে । মাকে এইসব কি বলা যায় ! কিন্তু মা যদি জিজ্ঞাসা করেন ।।
কি উত্তর দেবে সে ?
- মনিকা
বলে কিরকম মনে হোল ? ইট ইস এ নাইস এক্সপিরিয়েন্স মাই বয় । ইয়েস ইউ হেভ পটেন্সিয়ালিটি
টু স্যটিসফাই মি । নাও হাগ মি ডিয়ার ।
ধ্রুব শার্ট পরে নিল । একটা দুঃস্বপ্নর মতন
মনে হল । যে ধ্রুব কোনদিন কোন মহিলার দিকে চোখ তুলে তাকায় নি সে আজ এ কি করলো ?? মনে
মনে ধিক্কার দেয় নিজেকে ।এক তুচ্ছ আবেগের বসে নিজেকে বিলিয়ে দিলো এক অপরিচিত মহিলার
কাছে । নিজেকে অপরাধী মনে হল ।
- খুব
লজ্জা পেয়ে বলল , মনিকা আমি খুব অন্যায় করেছি । ফরগিভ মি ।
- নো
নো আই শ্যাল লজ এ রেপ কেস এগেন্সট ইউ । বলে ফিক করে হেঁসে ফেলে ।
- মেয়েরা
বিয়ের আগে পার্টনারকে যাচাই করা উচিত সে পারফেক্ট ম্যান কিনা । তাই আমি তোমাকে টেস্ট
করলাম তোমার পুরুষত্বের । কিছু ভেবো না । ইউ হেভ পোটেন্সিয়ালিটি কিন্তু বড় দেরিতে তোমার
সেক্স আসে যেটা সাধারণত মেয়েদের হয়ে থাকে । তুমিতো পুরুষ তোমার তো এরকম হওয়ার কথা নয়
। বড্ড মা নেওটা ছেলে তুমি ।
- আমার
মা আমাকে অন্য আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছেন । মা আমার কাছে সব তিনি আমার কাছে সাক্ষাৎ
দেবী । তাঁকে অবজ্ঞা করা মানে স্বয়ং ভগবানকে অভক্তি করা ।
-তাই ! মা তো আমার ও আছেন । কিন্তু আমার মা
আমাকে নিজের মতন বাঁচতে শিখিয়েছেন । নিজের ডিসিশন নিজেই নেবো । আমার লাইফ পার্টনার
আমি নিজে সিলেক্ট করবো । তাতে মা নাক গলাবেন না । এটাই আমাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা
।
- মানতে
পারলামনা তোমার কথা । সামাজিক পরিকাঠামোতে মানুষের কিছু উত্তর দায়িত্ব থাকে । তাকে তার পরিবারের কাছে , সমাজের কাছে জবাব দিতে হয় ।
সেটাকে আমি উড়িয়ে দিতে পারিনা । মানুষ সামাজিক প্রাণী তাকে সমাজকে নিয়ে চলতে হয় ।
- তুমি
না ছেলে ! তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই !! তুমি কি এখন ও তোতা পাখির মতন যা মা শেখাবে
সেটাই করবে । এটা কেমন কথা ?
- আমার
মা আমকে কখনো খারাপ কিছু শিক্ষা দেন নি । উনি খালি একটাই কথা বারে বারে আমায় বলেছেন
বিদেশে সংযত হয়ে থাকিস বাবা । আমি সেটাই মনে করি সৎ শিক্ষা ।
- হতে
পারে । তবে কি বলছ আমার মা আমায় অসৎ শিক্ষা দিয়েছেন ?
- না
একদম তা বলছি না । তোমার মা তোমায় স্বাধীনতা দিয়েছেন সেটা তাঁর উচ্চমনার পরিচয় । তুমি
তাকে যদি অসৎ উপায়ে ব্যাবহার কর সেটা এই বলে যে তুমি তোমার মাকে ঠকালে তাঁর বিশ্বাসের সুযোগ নিলে ।
- তবে
তাই যাও । আমি তোমার সঙ্গে যুক্তি করবোনা ।
- আমি
আজই তোমার মাকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে বলবো ডাইনিং টেবিলে । আমি ওনাকে কোন মতেই আঘাত
দিতে চাইনা । উনি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন শুনলাম । আমার দিক থেকে ওনাকে অনুরোধ করবো
ওনার মেয়েটিকে আমায় সম্প্রদান করতে ।
- কি
বললে ? সম্প্রদান ! সেটা আবার কি ?
- হিন্দু
মতে বিবাহের সময় কন্যা কে সম্প্রদান করা হয় কন্যা পক্ষর দ্বারা । সেটা তোমার বাবা বেঁচে
থাকলে তিনি করতেন তবে তাঁর অবর্তমানে কন্যা সম্প্রদান কে করবে সেটা তোমার মা ঠিক করবেন
।
- ওরে
আমার গুড বয় রে । একেবারে বিয়ে অবধি পৌঁছে গেলে । তুমিতো আমার বিষয় কিছুই জানো না ।
তবে আমাদের বিয়ে চার্চে হয় ।
- তোমার বিষয় যা জানার তা জানা হয়ে গিয়েছে । ইউ আর এ নটি গার্ল ।
আমি চার্চে যেতে পারবো না । কারন আমি ধর্ম পরিবর্তন করতে রাজি নই ।যা হবে হিন্দু মতে
।
- দেখি
মা কি বলেন ! এই বলে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে ।
- ও
ফেরার পর ধ্রুব টয়লেটে যায় ।
মনিকার
বাড়িতে দুপুরের খাবার
- মনিকার
মা এলাহি ব্যবস্থা করেছেন ধ্রুবকে খাওয়ানর জন্য । পম্প্রেট ফ্রাই , চিকেন বিরিয়ানি
, বাটার চিকেন , আনারসের চাটনি , গোবিন্দ ভোগ চালের পায়েস , ভেজিটেবল কোপ্তা , ফ্রুট সালাদ সঙ্গে ডেসার্ট । ডাইনিং হলে সমস্ত খাবার আইটেম গুলো নিয়ে আসেন ।
মনিকা যায় রান্না ঘরে বাকি কিছু জিনিস আনতে ।
- একি
করেছেন আনটি ? এতো খাবার কে খাবে ?
- কেন
বাবা কিছুই তো করিনি । তুমি খাবে আবার কে ?
- উঁহু
আমি এতো সব খেতে পারবোনা। আমাদের পেটে এইসব দামি খাবার যাবে না ।
- ঠিক
আছে বাবা তুমি যতটুকু পারবে খাবে । আমি জোর করবো না ।আর এগুলো দামি খাবার কে বলল ।
আমি নিজে হাতে বানিয়েছি তোমার জন্য ।
- এই
তো আমার মায়ের মতন কথা ।
- কোন
কথা আবার তোমার মায়ের মতন হোল .. মনিকা ঘরে
ঢুকতে ঢুকতে বলল ।
- ওসব
তোমার বোঝার প্রয়োজন নেই । ওটা আমার আর আনটির মধ্যে । তুমি কেন নাক গলাচ্ছ ?
- ওরে
আমার রে । এর মধ্যে তুমি আমার মায়ের এতো কাছের হয়ে গেলে ? এরপর তুমি আমাকে আউট করে
আমার মাকে নিজের করে নেবে তখন আমি কোথায় যাবো ?
- আঃ
মনিকা কি হচ্ছে ? তোমার যায়গা কেউ নিতে পারবে না ।
- আমি
জানি মামা । তবে ওকে ওইরকম করে বলতে মানা কর ।
- ঠিক
আছে ঠিক আছে । এবার খেতে বস । বেলা অনেক হল ।
- সবাই
ডাইনিং টেবিলে যে যার যায়গায় বসতে লাগল । টেবিলের মধ্যে খানে সব খাবার সাজান হয়ে রাখা
হল । যে যার প্লেটে একে একে আইটেম নিতে লাগল ।
- ধ্রুব
একে একে বিরিয়ানি , বাটার চিকেন , আনারসের চাটনি , গোবিন্দ ভোগ চালের পায়েস নিয়ে খেতে
সুরু করে ।
- মনিকা
বলে কি হল তুমি আর কিছু নিলে না যে ।
- আমি
যা খেতে পারবো তাই নিয়েছি । আমি খাওয়াতে লজ্জা করিনা । তবে বেশি খাওয়া আমার দ্বারা
হয়না ।
মনিকার
বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন ঃ
খেতে খেতে ধ্রুব আনটির উদ্দেশ্যে একটা কথা
বলে … আনটি আমি আপনাকে একটা কথা বলতে পারি
কি ?
- কি
কথা বাবা ।
- আমি
আপনার মেয়েকে নিজের জীবন সঙ্গিনী করতে চাই । আপনার কি কোন আপত্তি আছে ?
- এরকম অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন ধ্রুব করবে বলে
মনিকার মা আশা করেন নি । তুমি তোমার মা বাবাকে এই বিষয় জিজ্ঞাসা করেছ !
- না
তা করিনি । তবে আমি আপনার মতা মত জানতে চাই । এই বলে মনিকার দিকে তাকাল ।
- মনিকা
মাথা নিচু করে খেতে লাগল ।
- না
বাবা আমি আর অপদস্থ হতে চাইনা । ওনারা যদি না বলেন তবে আমার মেয়ের অবস্থা কি হবে বুঝতে
পারছ ।
- কিচ্ছু
হবে না । ওনারা না বললেও আমি মনিকা কে বিয়ে করতে রাজি । কারন আমাকে আমার মতন এখানে
এই বিদেশ ভুঁইতে থাকতে হবে । কে দেখবে আমাকে
আমার সময়ে অসময়ে ।
- আনটি
আপনি আমাকে হ্যাঁ কি না সেটুকু বলুন । আমি
কিন্তু এক কথার মানুষ ।
- দেখো
কাণ্ড ছেলের । ওরকম বলতে আছে বাবা ? ওনারা তোমার মা বাবা । ওনাদের তোমার ওপর আগে অধিকার
তারপর অন্য কেউ ।
- আনটি
আমি সেটা বুঝবো । আপনি রাজি কিনা বলুন ।
- মনিকার
দিকে তাকিয়ে ওর মা বলে কি বলছে ধ্রুব এইসব । কি হয়েছে ?
- কি
আবার হবে ! ওর আমাকে পছন্দ । আমার ও ওকে পছন্দ । মিটেগেল ।ও তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে তুমি উত্তর দাও । আমাকে কেন
জিজ্ঞাসা করছ ।
- তোরা
কি মা বাবাকে উপেক্ষা করে সব করবি ।
- তুমি
বাবা কে বিয়ে করার সময় তোমার মা বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে ?
- মনিকা
মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুএজ । তুমি জানো আমার পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল । আমি সর্বদা অসহায়
বোধ করতাম । তাই আমার একটা শক্ত ঘাঁটির প্রয়োজন ছিল চাকরি স্থলে মাই খুব অসহায়
মনে করতাম নিজেকে । আমার কাকা কাকিমা আমাদের বিয়েতে মত দিয়ে ছিলেন । এমন না আমি হুট
করে সব করে ফেলি ।
- আমিও
তোমার মতন অসহায় বোধ করছি মা । দেখো তুমি কি মতা মত দিচ্ছ সেটা আমাদের কাছে গুরুত্ব
দেয় । ধর ওনারা মত দিলেন না এটাত হতেই পারে তখন কি বিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে । তুমি তোমার
মেয়ের অনিচ্ছায় অন্য কারুর সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেবে ?
- জল
এতোটা গড়িয়েছে বলে ত আমি জানিনা । আমার আর কি বলার আছে মা তুমি বড় হয়েছ চাকরি করছ ।
আমাকে কি আর তোমার প্রয়োজন বল । আমি আমার কথা বলছিনা । ধ্রুব ওর বাবা মায়ের অমতে কি
তোমাকে গ্রহণ করতে পারবে ? তাহলে আমার কোন আপত্তি থাকবে না । আমি জানি রক্ষণশীল বাঙ্গালিদের
বাড়িতে ছেলে মেয়ের বিবাহ তাদের বাবা মা’ ই ঠিক করেন ।
- এ
সব কি বলছ মা । আমি তোমাকে ছাড়া কোন কাজ কোনদিন করেছি ! তুমি কি আমায় বিশ্বাস করনা । তুমি ধ্রুবর সামনে আমায় অপমান করছ মা । আমি কি নিয়ে
বাঁচব মা বলে কেঁদে ফেলে ।
- আমার
কথার কি এই মানে বুঝলি মা । এতদিনে আমাকে এই বুঝলি তুই।
- চোখ পুঁছতে পুঁছতে মনিকা বলে , এটা আমার
জীবনের ব্যাপার মা । আমি সেটেল হতে চাই মা
।
- ঠিক
আছে তোমরা আগে জিজ্ঞাসা কর ধ্রুবর মা বাবাকে ওনার কি বলছেন দেখ তারপর না হয় সব ঠিক
হবে ।
-ধ্রুব বলে কিন্তু আপনি না বললেত আমি এগুতে পারবোনা আনটি । আপনার মতা মত বিশেষ প্রয়োজন
।
- বুঝেছি
। আমি বলব বাবা , আগে ওনারা কি বলছেন শুনি
।তারপর আমি আমার মতা মত দেব ।
- আমি
কিন্তু ধ্রুবর সঙ্গে থাকব ওর মা বাবা কথা বলার সময় ।
- ঠিক
আছে মা তুমি যা ভালো বোঝ তাই কর । খাওয়া সেরে ওরা দুজনে উঠে পড়ে ধ্রুবর কোয়ার্টারে
ফেরার জন্য ।
ধ্রুবর
কোয়ার্টারে ফিরে যায় মনিকা এবং ধ্রুব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
No comments:
Post a Comment