©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
ধ্রুবর , মনিকার সানিধ্য ভালো
লাগছিলো l ওর মিষ্টি ব্যবহার আর যত্ন ওর প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছিল l অজান্তে
ওকে ভালো বেসে ফেলেনিতো ! কে জানে হয়তো তাই l এই বিদেশে কোন মহিলার কাছ থেকে এতো সেবা
যত্ন সত্যি অবিশ্বাসনীয় l কোম্পানি থেকে ওদের ডিপার্টমেন্টের বস ওকে দেখে গেলেন l সম্পূর্ণ
আরোগ্য কামনা করে উইশ করলেন l কাল ই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে l মনিকা রাউণ্ডে এসে বলে,
কেমন ফিল করছেন?
- ধ্রুব একটু অন্যমনস্ক ছিলো
ওকে দেখার পর.. বলে হ্যাঁ হ্যাঁ.. ভালো আছি l আপনি?
- মনিকা ওর শিশু সুলভ আচরণে
হেঁসে ফেলে l কি ভাবছেন,? মায়ের কথা মনে পড়ছে?
- কোই নাতো l না না এমনি আপনার
কথাই ভাবছিলাম l আপনি কত যত্ন করে আমার সেবা শুশ্রূষা করলেন l আমাকে খাইয়ে দেওয়া, ওষুধ
টাইমে টাইমে খাওয়ানো...
- ওটাই তো আমাদের ডিউটি l
- হ্যাঁ তা ঠিক l ডিউটি...
ডিউটি
- মনিকা ধ্রুবর আচরণে একটু
আশ্চর্য হয় l আপনি ঠিক আছেন তো l
- হ্যাঁ হ্যাঁ একদম l আচ্ছা
আপনার বাড়িতে আপনার মা আছেন বললেন না !
- হ্যাঁ কেন? না মানে একবার
কি ওনার সঙ্গে দেখা করা যাবে?
- মনিকা একটু আশ্চর্য হোল
l বললো হ্যাঁ কেন যাবেনা নিশ্চই যাবে l মায়ের বাড়ি তো আপনাদের বাড়ির কাছেই মধ্যম গ্রামে
l তবে বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর ওনার বাড়ির সঙ্গে কোন সম্পর্কে নেই l ওনার বাড়ির লোক
ও কোন খোঁজ নেন না l মা আপনাকে পেয়ে খুশি হবেন l ঠিক আছে আগামী রবিবার আমি আপনাকে আমাদের
বাড়ি নিয়ে যাবো l
- অশেষ ধন্যবাদ l আসলে এখানে
নিজের বলে কেউ নেইতো তাই বললাম কিছু মনে করবেন না l
- ঠিক আছে ঠিক আছে.. মনে করার
কি আছে? আপনি তৈরি থাকবেন আমি এসে নিয়ে যাবো আপনাকে আপনার কোয়ার্টার থেকে l ঠিক আছে
এখন আসি l
মনিকার চলে যাওয়ার পথের দিকে
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো ধ্রুব l এটা তার কি হচ্ছে? নিজেকে প্রশ্ন করে l কেন মনিকার
প্রতি এই দুর্বলতা ! সে কি চায় ওর কাছ থেকে? নানান প্রশ্ন আচ্ছন্ন করে l তবে কি সে
প্রেমে পড়লো মনিকার ! অনেক সময় ও ভাবে মা বাবা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হবে l
হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হয়ে
ধ্রুব বাড়ি ফেরে l ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় l ইশ দাড়ি কামানো হয়নি l খোঁচা খোঁচা দাড়ি
বিচ্ছিরি লাগে ধ্রুবর l শেভিং মিরারটা নিয়ে আগে শেভিং করে l আফটার সেভ লোশন নিয়ে গালে
ভালো করে লাগায় l মুখটা কদিনে বেশ কালো হয়ে গিয়েছে l কপালে ভাঁজ l একি হোল ধ্রুবর?
ব্রাশ সেরে টয়লেটে যায় l নিত্যকর্ম সেরে সম্পূর্ণ স্নান সারে l টোস্টারে দু পিস ব্রেড
নিয়ে টোস্ট করে পরে বাটার জ্যাম লাগিয়ে রাখে l এরমধ্যে ডিম সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে l ফ্রিজে
আরো ছটা ডিম এক প্যাকেট দুধ আছে l দুধটা কেটে যাবে নাতো গরম করলে !
কাল রবিবার l মনিকা আসবে বলেছে
l রাতে মাকে ফোন করবে l হিটারে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এক মগ কফি, দুটো টোস্ট একটা ডিম
সিদ্ধ খেয়ে ব্যালকনিতে গেলো সিগারেট নিয়ে l হ্যাঁ ইদানিং ও খুব সিগারেট খায় l ছেলেদের
একাকিত্ব কাটানোর এই এক সাথী সিগারেট l ব্যালকনিতে গেলে বাইরেটা বেশ সুন্দর দেখায়
l চারিদিকে গাছ পালা, বগুনভিলা, ক্রোটন, ইকসোরা গুলমোহর নানান গাছ l বেশ মনোরম লাগছিলো
পরিবেশটা l রেডিওতে হেমন্তর গান.. " মোর বীনা ওঠে কোন সুরে বাজে... কোন নব চঞ্চল
ছন্দে... "
রাত প্রায় নটার সময় মা বাবাকে
ফোন করে l
- হ্যালো তোমরা কেমন আছো? আমি
ভালো আছি তবে মাঝে একটু জ্বর হয়েছিল l এখানকার কোম্পনির হাসপাতাল খুব সুন্দর l এক সিস্টার
নাম মনিকা আমার খুব যত্ন করেছেন l আমি সম্পূর্ণ সুস্থ.. একসঙ্গে কথাগুলো বলে একটু দম
নেয় ধ্রুব, মায়ের উত্তরের অপেক্ষায়..
- জ্বর কেন বাবা? কি হয়েছিল?
খাটা খাটুনি বেশি হচ্ছে বোধ হয় l খাওয়া দাওয়া ঠিক করছিস !
- হ্যাঁ মা ও তুমি কিছু ভেবো
না l মনিকা সব ঠিক করে দেবে.. হ্যাঁ.. তুমি দেখে নিও l ও আমার খুব যত্ন করে ! কেমন
উদাস মনে কথা গুলোর বলে মা কে l
- ধ্রুবর কথা কিছুই বুঝলেন
না সুনীতি দেবী l মনিকা আবার কে? সেই বা যত্ন নেবে কেন? মনে খটকা লাগে l কিছু হোল নাতো
l ধ্রুবর বাবাকে কিছুই বললেন না l কিন্তু মায়ের মন তো ঠিক কিছু একটা সন্দেহ করলেন
l তিনি তাঁর ছেলেকে চেনেন l আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে যে ছেলে চোখ উঠিয়ে তাকায় নি
সে হঠাৎ মনিকা মনিকা করছে কেন? মনিকা তো খ্রিশ্চান দের নাম হয় l তবে কি কিছু ঘটলো?
আমি বার বার বলছি ছেলেটার এবার বিয়ে দাও l এনার গেলার শেষ নেই আর তাস খেলার শেষ নেই
l
- কি হোল মা চুপ করে গেলে যে?
কিছু বল l হ্যাঁ বাবা ওই মনিকাটা কে রে?
- ও খুব ভালো মেয়ে l আমাদের
হাসপাতালের নার্স
- হাসপাতালের নার্স ! সেকি
!! তোর তার সঙ্গে কি সম্পর্ক?
- ওই তো আমার দেখা শুনো করল
আমি অসুস্থ থাকার সময় l ঠিক তুমি যেমন আমার যত্ন নাও ঠিক সেই রকম l
- সেতো বুঝলাম তবে ও কি খ্রিষ্টান?
- হ্যাঁ l ওর বাবা জাহাজের
ক্যাপ্টেন ছিলেন l খুব বড়লোক l ওর মা গভমেন্ট হাঁসপাতালে নার্স l মা বাঙালি l আমাদের
ই বাড়ির কাছে ওর মা'র বাড়ি
- ও ! কথা এতদূর গড়িয়েছে
!! ঠিক আছে রাখো তোমার বাবাকে বলোনা l
- কি হোল মা তুমি কি রাগ করলে?
- না রাগ কেন করবো বাবা l চাকরি
করছো বিদেশ ভুইঁ তে l আমাদের ই বোঝা উচিৎ l ঠিক আছে এখন রাখো l
ফোনটা রেখে কর্তা কে বলেন,
কবে থেকে তোমায় বলছি ধ্রুবর বিয়ের কথা বিপাসাদের বাড়ি গিয়ে বলো l কথা কানেই নেওনা
l
- কি হয়েছে?
- কি আবার হবে ! আমার যত জ্বালা
l
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
### চতুর্থ পর্ব###
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আজ রবিবার l ধ্রুব সকালে উঠে সমস্ত নিত্য কর্ম সেরে সকালের ব্রেক ফাস্ট
এর জন্য প্রস্তুত l প্রত্যেক দিন ব্রেড বাটার জ্যাম, ডিম সিদ্ধ আর ব্ল্যাক কফি কি ভালো
লাগে? নাঃ অন্য কিছু করতে হবে l তবে কি করবে?
হ্যাঁ সুজির হালুয়া বানালে কেমন হয় l স্কুল থেকে ফিরলে মা ওকে ওই সুজির
হালুয়া বানিয়ে খাওয়াতেন l কিন্তু ও কি পারবে মায়ের মতন রান্না করতে? পারতে হবে l আজ
মনিকা এলে ওকে নিজের হাতের তৈরি সুজির হালুয়া খাওয়াবে l কিন্তু ও যদি সুজি না খায়
! হয়তো নাক সিঁটকে বলবে না না আমি সুজি র হালুয়া খাইনা l দেখা যাক কি হয় l
হিটার অন করে একটা কড়া হিটারে বসাল l কড়াটা একটু গরম হওয়ার পর প্রায় দেড়
কাপের মতন সুজি নেয় l একটা খুন্তি তে কাগজ জড়িয়ে সুজিটা ভাজতে লাগলো l হিটারে রান্না
করলে সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন নয়তো শক খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই কাগজ জড়ানো প্রয়োজন
l কিছুক্ষণ পর যখন সুজিটা সামান্য লালচে ভাব আসে সেটাকে একটা পাত্রে ঢেলে রেখেদিতে
হবে l এবার ওই কড়াতে বড় চামচের দেড় চামচ ভালো ঘি দিয়ে একটা তেজপাতা, কাজু, এবং কিসমিস
সামান্য ভেজে অন্য পাত্রে রাখা ভাজা সুজি ঢেলে নেড়ে নিতে হবে l এরপর দু কাপ জল ঢেলে
নাড়তে হবে যাতে ডেলা না হয় l জল ঢালার পর চিনি পরিমাণ মত দিয়ে নাড়তে হবে l একটু পরেই
সুজি জল টেনে মাখ মাখ হলেই নামিয়ে নিতে হবে l নামানোর আগে আর এক চা চামচ ঘী দিয়ে নামিয়ে
নিতে হবে l
সুজি তৈরির পদ্ধতি ঠিক আছে তো ! এতখানি লেখার দরকার ছিলোনা তবুও লিখলাম
l আমার বোনেরা, পিসিরা বলে ধ্রুব অতো দূরে যাচ্ছে কি খাবে? ওত কিছুই রান্না করতে জানে
না l সকালে ডিউটিতে যাওয়ার আগে কি খেয়ে যাবে? তাই ওর মা, ব্রেড বাটার টোষ্ট কি করে
বানাতে হয় টোস্টার ব্যবহার করে ওকে শিখিয়ে দেন l সেই ব্রেড বাটার আজ অবধি চলেছে l ওই
এক ঘেয়ে খেয়ে খেয়ে আর ভালো লাগেনা l তাই আজ সুজির হালুয়া র আইডিয়া টা মাথায় এলো l
#ধ্রুবর কোয়ার্টারে মণিকার আগমন##:-
হটাত কলিং বেল বেজে ওঠে l ধ্রুব দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোলে l কি আশ্চর্য সামনে
যাকে দেখবে ভেবে ছিল সেই এসে হাজির.... মনিকা !
গুডমর্নিং মনিকা l
ভেরি গুডমর্নিং ধ্রুব l
ওয়েলকাম, ওয়েলকাম
ঘরটা কেমন অবস্থা দেখি l একি এতো অগোছালো কেন তোমার ঘর?
ব্যাচেলার এর ঘর কি করে গোছালো হবে বল?
- কেন? সেরকম তো কথা নেই যে ব্যাচেলার হলেই অগোছালো হতে হবে l
- না তা নয় কিন্তু সময় কোথায় বল ?
-এটাও মানতে পারলামনা l
- আজ রবিবার l আজকে তো ঘর গোছাতে পারো ! নয়কি?
- ওকে বস তাই হবে l
- প্রমিস
- চেষ্টা করবো.. কথা দিতে পারবোনা l একটা কথা বলবো তুমি আসবে বলে আমি সুজির
হালুয়া বানিয়েছি l খাবে?
- সুজির হালুয়া ! তুমি বানিয়েছো ইন্টারেস্টিং l কে শেখাল?
- কেন আমার মা, কোন সন্দেহ আছে?
এখানে কে আছে বল আমি ছাড়া !
- তা ঠিক l দেখি কেমন বানিয়েছো?
- ধ্রুব কিন্তু কিন্তু করে সুজির হালুয়া আনে l খারাপ হলে কিন্তু পরিষ্কার
বলবে ভালো হয়নি l
- না না খারাপ কেন হবে? তুমি এতো কষ্ট করে আমার জন্য বানিয়েছো আমি খাবোনা
.... নিশ্চই খাবো l
- দুজনে সুজির হালুয়া খেতে শুরু করে l গরম ছিল l তারপর দুজনে এক কাপ করে
কফি খায় l কফিটা মনিকা বানায় l
দুজনের এই সান্নিধ্যতা দেখলে কেউ বলবেনা এরা দুই ধর্মের পুরুষ এবং মহিলা
! ধ্রুবর মুখে এই মনিকা হাঁসি ফোটাতে পেরেছে l মনিকা অজান্তে ধ্রুবর সান্নিধ্য পছন্দ
করছে কারণ ও সত্যি খুব সরল সোজা ছেলে l ও বোধ হয় এই রকম জীবনসঙ্গী চেয়েছিল l তাইতো
ওর এক ডাকে চলে আসে l কৃষ্ণর বাঁশির সুরে রাধা যেমন ঘরে থাকতে পারেনা ছুটে চলে আসে
l ঠিক মনিকা চলে আসে তার প্ৰিয় বন্ধুর ডাকে l কথাগুলো বলছি এই জন্য ওদের রসায়নটা ঠিক
মিলেছে l এটাই বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে l
ধ্রুব আর মনিকা যেন একই বৃন্তের দুই কুসুম l নজরুল ঠিক ই বলেছিলেন হিন্দু
মুসলমান একই বৃন্তের দুই কুসুম l এখানে হিন্দু খ্রিস্টান একই বৃন্তের দুই কুসুম l ঈশ্বর
মানুষ কে সৃষ্টি করেছেন রক্ত মাংস অস্থি মজ্জা দিয়ে l তিনি মানুষের মধ্যে আরেকটি সুন্দর
বস্তু সেই রক্ত মাংস দিয়ে তৈরি করেছেন যার নাম হৃৎপিণ্ড l হৃৎপিণ্ড সব মানুষের ই থাকে
কিন্তু হৃদয় কি সকলের থাকে??
দুটি হৃদয়ের যখন মিলন হয় তাকেই বলে ভালোবাসা l সেটা কোন জাতি ধর্ম বর্ণ
নিয়ে সৃষ্টি হয়না l সৃষ্টি হয় দুজনের অন্তরঙ্গতা, মনের মিল নিয়ে l যখন একে অপরের চোখের
ভাষা, মনের ভাষা, হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পারে তখন ই তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রেমের আদান
প্রদান l ধ্রুব আর মণিকার মধ্যে তার কোন অভাব ছিলোনা l ওরা জন্মেছে একে অপরের জন্য,
ভিন্ন ধর্মে কিন্তু এই পৃথিবীতে তাদের মিলন কি সম্ভব ভুয়ো সামাজিক প্রথার জন্য !
ধ্রুবর সম্বন্ধ নিয়ে বিপাশার বাড়িতে অন্তরা আর মালা পিসি জান ধ্রুবর মায়ের
সঙ্গে l অন্তরা আর মালা পিসির কথা পরে আসছি ওরা ধ্রুবর বাবার কিরকম সম্পর্কে বোন হন
l ধ্রুবর বাবা ছিলেন না l কলকাতা গিয়েছিলেন l অগত্যা অন্তরা আর মালা পিসি কে নিয়েই
ধ্রুবর মা সুনীতি দেবীকে বিপাশার বাড়িতে যেতে হয় l
বেল বাজাতে ই বিপাশার মা আসেন দরজাটা খুলতে l বিপাশার বাবা ছিলেন না বোধ
হয় l
মৃণালিনী দেবী, বিপাশার মা সকলকে স্বাগত করেন l কিছুক্ষণ কথা বার্তার পর
ধ্রুবর মা আগমনের উদ্দেশ্যর বিষয় জানান l বেশ কিছুক্ষণ কথা হোল কিন্তু কিছুই যেন বলা
হলনা l বিপাশার বাবার অনুপস্থিতিতে ওর মা কিছুই বললেন না l তারমানে সিদ্ধান্ত টা বিপাশার
বাবাই নেবেন l মালা পিসি অন্তরা পিসি ধ্রুবর ব্যাপারে বলার আগেই মৃণালিনী দেবী বলেন
ওকে তো আমি জন্ম থেকে দেখছি মা l ওর মতন ভালো ছেলে এই অঞ্চলে কেউ নেই l সুনীতি দেবী
বলেন, আজ উঠি দিদি l
মৃণালিনী দেবী বলেন, ও মা সেকি? একটু কিছু মুখে দিয়ে জান l
- নাগো দিদি আজ ঘরে প্রচুর কাজ আছে l পরে একদিন এসে খাবো l
বিপাশার বাবা এলে কথাটা বলবেন l আপনি যেমন ধ্রুব কে জানেন আমিও সেইরকম বিপাশা
কে জানি l
ঠিক সেই সময় চা জলখাবার নিয়ে বিপাশা আসে l
কেউ কোথাও যাবেন না l আমি নিজে সিঙ্গাড়া বানিয়ে এনেছি আমার মাসি খাবেন বলে
l যাবো বললেই যেতে দেবে কেগো মাসি l আমার হাতের বানানো সিঙ্গাড়া না খাইয়ে ছাড়বনা
- দেখো মেয়ের কাণ্ড l সবেতে তোর জোর জুলুম l ধ্রুবর মা হেঁসে বিপাশা কে
আদর করে বলেন l কতকাল আমাদের বাড়ি যাসনি l মাসি কেমন আছে একটু জানতে ইচ্ছে করেনা?
- ইচ্ছে তো করে তবে নানা কাজে যেতে পারি নাগো l
- হুঁ নানা কাজ l আমাকে আর কাজ দেখাসনি বাপু l তুই ইচ্ছে করেই যাসনা - তা
তুমি যা বল মাসি !
- মাসি বোন ঝির কথা শুনে সকলে মজা পায় l অন্তরা মাসি, মালা মাসি বিপাশা
মেয়েটিকে দেখছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে l নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কথা হয় l এই সময় ধুস
করে বিপাশা ওদের দুজনকে প্রণাম সারে সঙ্গে সুনীতি দেবী কেও l
- ওমা এই প্রণাম করার কি আছে?
- আপনারা আমাদের বাড়ি প্রথম এলেন প্রণাম করবোনা?
- আজকাল ও সব কেউ মানে নাকি l
- আমি মানি l বড়দের প্রণাম করলে তারা আশীর্বাদ দেন l সেটা কি কম পাওয়া
l
- হুঁ তা বেশ বলেছ l এখন কি করছ? অন্তরা পিসি বলেন
- আমি ! কিছুই না মাকে হেল্প করছি রান্না বান্না তে l ব্যাস আর কি? ইচ্ছে
ছিল বাংলায় মাস্টার্স করার l ওই অতো দূরে ইউনিভার্সিটি তে বাবা মানা করেন l ব্যাস পড়া
শুনোয় ইতি l
- মৃণালিনী দেবী বলেন ওর বাবা খুব রক্ষণশীল মানুষ l মেয়েকে দূরে ছাড়বেন
না l
- ও মা সে কি? এটা ওর প্রতি অন্যায় হলনা l মেয়েটা পড়তে চাইছিল ওকে পড়ালেই
তো ভালো হত l নয় কি ! আমরাও তো মাস্টার্স ডিগ্রি করেছি l
- কথাটা শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন মৃণালিনী দেবী l কোন উত্তর দিলেন না l
-প্রসঙ্গ বদলে মালা মাসি বলে, তুমি গান বাজনা করো নিশ্চই l
- নিন আপনারা শুরু করুন বিপাশার মা বলেন সকলের উদ্দেশ্যে l
- সকলে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন বাগানের চা না l বাঃ কি সুন্দর ফ্লেভার
চায়ের l খুব সুন্দর হয়েছে চা টা l
কথা কিছুই হলনা l সবাই ফিরে এলো l সুনীতি দেবী বলেন, দিদি আজ উঠি l ওনার
ফেরার সময় হোল l আপনি বিপাশা কে নিয়ে একদিন আসুন আমাদের বাড়িতে l বিপাশা আসি রে l যাওয়ার
আগে প্রণাম সেরে অন্তরা আর মালা পিসি বলেন চল বৌদি যাই l
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
No comments:
Post a Comment