###এঞ্জেল ###
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
*****দ্বিতীয় পর্ব*****
ধ্রুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করে এক কাপ ব্ল্যাক কফি বানায় l কফির মগ টা নিয়েই সকালের টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজটায় চোখ বুলোয় l দেশ বিদেশের খবর ছাড়াও কলকাতার খবর পড়ে l সে যুগে ইন্টারনেট ছিলোনা কাজেই প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর বেশি নির্ভরশীল হতেই হোত l টিভি ছিলোনা তাই রেডিও একমাত্র ইলেকট্রনিক মাধ্যম l টুকরো টুকরো খবর পড়ে টয়লেট এ ঢোকে কাগজ নিয়ে l কাগজ পড়ার সময় খুব কম তাই l কোনমতে স্নান সেরে ঠাকুরের কাছে দাঁড়িয়ে গায়ত্রী জপ সেরে নেয় l হ্যাঁ ওটা বাবা বলেছিলেন প্রত্যেক দিন যেন করে l টোস্টারে দুটো পাঁউরুটির টোষ্ট বানায়,একটা ডিম সিদ্ধ হিটারে করে l একটু মাখন আর জ্যাম লাগিয়ে পাউরুটির টোষ্ট টাতে কামড় দিয়ে আরেকটু কফি বানিয়ে খায় l সঙ্গে ডিম সিদ্ধ একটু গোল মরিচ আর ব্ল্যাক সল্ট দিয়ে খেয়ে নেয় l এরমধ্যে 7 টা বেজে যায় l ফেক্টরীর গাড়ি চলে আসে ঠিক সকাল 7.30 এ l একদম বাঁধা ধরা রুটিন l
সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ওর প্রোডাকশন ইউনিটের দায়িত্ব বেশি l ওর দায়িত্ব ইউরিয়া প্রোডাকশন ইউনিটে l এখানে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের বেশি প্রয়োজন হয় l একটা টিম কে লিড করা তাদের দিয়ে সুচারু রূপে প্ল্যান্টের প্রোডাকশন বাড়ানো l স্বঠিক মাপ দণ্ডে ইউরিয়া প্রোডাকশন করা l ইউরিয়া গ্রেনুলের সাইজ প্যারামিটার অনুযায়ী প্রোডাকশন ইউনিট থেকে তৈরি হয় l এরপর কোয়ালিটি কন্ট্রোল আছে তার যাচাই করে l ফার্টিলাইজার টেস্টিং ল্যাবরেটারী তে প্রত্যেক লট এর স্যাম্পেল নিয়ে তার এনালিটিকাল টেস্ট হয় l ফার্টিলাইজার কন্ট্রোল অর্ডার এর নির্ধারিত মান অনুযায়ী সেই পরীক্ষা করে তবেই ওই রাসায়নিক সার ফ্যাক্টরির বাইরে যায় রেক পয়েন্টে এ ট্রান্সপোর্টের জন্য l
সারাদিন মেশিনের আওয়াজ আর লেবারারদের পেছনে লেগে তাদের থেকে কাজ আদায় করা এক দুরূহ ব্যাপার l ধ্রুব ঠাণ্ডা ছেলে তাই তার ওটা একরকম নিত্য দিনের কাজে পড়ে গিয়েছে l
এরমধ্যে ধ্রুব, বাবাকে চিঠি লেখে বাড়িতে ল্যান্ড ফোন নেওয়ার জন্য l কারণ ফেক্টরি থেকে ওর কোয়ার্টারে ফোন আছে কিন্তু সেটা ওই কাজের জন্য বেশি ব্যবহার হয় l বাড়িতে ল্যাণ্ড ফোন থাকলে মায়ের সঙ্গে দুটো কথা হতে পারে l মা ছেলের অনেক দিন কোন কথা হয়নি l
ধ্রুবর বাবা, জগদীশ বাবু ল্যাণ্ড লাইন এর জন্য এপ্লাই করেন l পনেরো দিনের মাথায় ঘরে ফোন কানেকশন হয় l ধ্রুবর মায়ের কি আনন্দ সে দিনটাতে l তখনকার দিনে ঘরে ফোন নেওয়াটা এক রকম বিলাসিতা l ধ্রুবর বাবার কথাটা মাথায় এসে ছিলোনা l তিনি মনে মনে দুঃখ করলেন, আহা সত্যি ছেলেটার খবর পাওয়া যেত l
ধ্রুবর নাম্বারথেকে কল এলো রাত নয়টায় l
ধ্রুব ওপার থেকে বলে মা কেমন আছো তোমরা?
- তুই কেমন আছিস বাবা? কতো দিন তোর কোন খবর পাইনা l খুব চিন্তা হয়রে l বলে কেঁদে ফেলেন l আমার গলা দিয়ে ভাত নাবেনা রে বাবা l কেবল তোর মুখটা ভাসে l
- জানি জানি অত চিন্তা কর কেন? আমি ঠিক আছি l এইতো বেশ আছি l লোকে গোয়া পয়সা খরচ করে আসে আমি দিব্বি কোম্পানির পয়সায় গাড়ি নিয়ে ঘুরি l এবারে তোমাদের নিয়ে আসবো ভাবছি l
- বাবা কেমন আছেন? আমার প্রণাম দাও l তুমি আমার প্রণাম নিও l
- হ্যাঁ বাবা সকলে আমরা ভালো আছি l তুই আমাদের স্নেহাশীষ নিস l
- কেমন আছিস বাবা?
- ভালো l আপনি?
- খুব ভালো l তুই শরীরের যত্ন নিস বাবা l খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করিস l দিনের বেলায় ফ্যাক্টরিতে লাঞ্চ খাস !
- হ্যাঁ l
- রাতে?
- ওই স্যান্ডুইচ আর গরম দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ি l
- সেকি? রুটি তরকারি খাসনা?
- কে করে দেবে বাবা !
-হ্যাঁ তা ঠিক বলে মাকে দেন l
এতো দিনে মনে পড়লো মায়ের গর্জন শুনলো ধ্রুব l
- মা রাগ কোরোনা l আমি ঠিক আছি l আবার তোমাদের ফোন করবো l এখন রাখি কেমন l
- রিসিভার রেখে মা চোখ পোঁছেন l
পেটের দায়ে ছেলেটা বিদেশে পড়ে আছে l এই হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ির ছেলেদের অবস্থা l
এরমধ্যে ধ্রবর জ্বর হোল l বেশ জ্বর 103°F l ফ্যাক্টারীর ডাক্তার খানায় যায় l ম্যালেরিয়া ভেবে ব্লাড টেষ্ট হয় l টেষ্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে lসেরকম কিছু সমস্যা হয়নি l ধ্রুবর কেবিনে যে নার্স ছিলো ডিউটিতে তিনি অত্যন্ত কেয়ারিং লেডি l বয়েস বেশ কম l অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা l ধ্রুবকে খুব যত্ন করে সুস্থ করেন l ডাক্তার রাউণ্ডে এসে বলেন সেরকম কিছু নয় l আমি ওষুধ দিচ্ছি খেয়ে নেবেন l
ধ্রুবর ওই মহিলার প্রতি কেমন যেন একটা আকর্ষণ জন্মায় l ওকে মহিলা নিজে হাতে ওষুধ খাইয়ে দেন l খাবার খাইয়ে মুখ পুঁছিয়ে দেন সাদা তোয়ালে দিয়ে l ধ্রুবর ইচ্ছে হচ্ছিলোনা কেবিন থেকে যেতে l তবে না ফ্যাক্টরিতে অনেক কাজ l
- মহিলার নাম জিজ্ঞাসা করে ধ্রুব l
- My name is on my dress.
- Sorry. Yes it is Monica Gomes. Nice name.
- thank you. Your name please !
- Dhrubo Jyoti Banerjee, site engineer.
- বাঙালি l
- হ্যাঁ আমি বাঙালি l কিন্তু আপনি এতো সুন্দর বাংলা বলছেন l
- আমরা মা বাঙালি l
- তাই ! তবেতো বিদেশে আমি একটু নিজের দেশের ভাষা শুনতে পারবো l আপত্তি আছে?
- No no. আপত্তি থাকবে কেন l আমার বরং ভালোই লাগে শুনতে l Infact আমি রবীন্দ্র সংগীতের ভক্ত l প্রত্যেকটা গানে যেন প্রাণ আছে মনে হয় l বলুন l
- আমিও l তবে সময় পাইনা l
- সময় বার করতে হয় l সকালে কি করেন? কেউ আছে বাড়িতে দ্যাখা শোনা করার?
- না নেই l মা বাবা সবাই কোলকাতার কাছে এক ছোট শহরে থাকেন l
- নাম কি?
- মধ্যমগ্রাম
- ওমা ওখানে তো আমার মায়ের বাড়ি l আমার বাবা গোয়ানিস l ক্যাপ্টেন রবার্ট গোমস l উনি জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন l মা বাঙালি l
- ছিলেন মানে?
- উনি চার বছর আগে হার্ট এটাকে মারা জান l আমার মা গোয়া রেলওয়ে সরকারি হাসপাতালে নার্স l এখন রিটায়ারমেন্টের সময় এসে গিয়েছে l আমরা বাড়িতে বাংলা বলি l বাইরে ইংলিশ নয় হিন্দী l
No comments:
Post a Comment