Sunday, April 26, 2020

####তৃতীয়পর্ব#### ####এঞ্জেল#### ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 25.04.2020. সকাল 7 টা


####তৃতীয়পর্ব####
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
25.04.2020. সকাল 7 টা
ধ্রুবর , মনিকার সানিধ্য ভালো লাগছিলো l ওর মিষ্টি ব্যবহার আর যত্ন ওর প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছিল l অজান্তে ওকে ভালো বেসে ফেলেনিতো ! কে জানে হয়তো তাই l এই বিদেশে কোন মহিলার কাছ থেকে এতো সেবা যত্ন সত্যি অবিশ্বাসনীয় l কোম্পানি থেকে ওদের ডিপার্টমেন্টের বস ওকে দেখে গেলেন l সম্পূর্ণ আরোগ্য কামনা করে উইশ করলেন l কাল ই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে l মনিকা রাউণ্ডে এসে বলে, কেমন ফিল করছেন?
- ধ্রুব একটু অন্যমনস্ক ছিলো ওকে দেখার পর.. বলে হ্যাঁ হ্যাঁ.. ভালো আছি l আপনি?
- মনিকা ওর শিশু সুলভ আচরণে হেঁসে ফেলে l কি ভাবছেন,? মায়ের কথা মনে পড়ছে?
- কোই নাতো l না না এমনি আপনার কথাই ভাবছিলাম l আপনি কত যত্ন করে আমার সেবা শুশ্রূষা করলেন l আমাকে খাইয়ে দেওয়া, ওষুধ টাইমে টাইমে খাওয়ানো...
- ওটাই তো আমাদের ডিউটি l
- হ্যাঁ তা ঠিক l ডিউটি... ডিউটি
- মনিকা ধ্রুবর আচরণে একটু আশ্চর্য হয় l আপনি ঠিক আছেন তো l
- হ্যাঁ হ্যাঁ একদম l আচ্ছা আপনার বাড়িতে আপনার মা আছেন বললেন না !
- হ্যাঁ কেন? না মানে একবার কি ওনার সঙ্গে দেখা করা যাবে?
- মনিকা একটু আশ্চর্য হোল l বললো হ্যাঁ কেন যাবেনা নিশ্চই যাবে l মায়ের বাড়ি তো আপনাদের বাড়ির কাছেই মধ্যম গ্রামে l তবে বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর ওনার বাড়ির সঙ্গে কোন সম্পর্কে নেই l ওনার বাড়ির লোক ও কোন খোঁজ নেন না l মা আপনাকে পেয়ে খুশি হবেন l ঠিক আছে আগামী রবিবার আমি আপনাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো l
- অশেষ ধন্যবাদ l আসলে এখানে নিজের বলে কেউ নেইতো তাই বললাম কিছু মনে করবেন না l
- ঠিক আছে ঠিক আছে.. মনে করার কি আছে? আপনি তৈরি থাকবেন আমি এসে নিয়ে যাবো আপনাকে আপনার কোয়ার্টার থেকে l ঠিক আছে এখন আসি l
মনিকার চলে যাওয়ার পথের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো ধ্রুব l এটা তার কি হচ্ছে? নিজেকে প্রশ্ন করে l কেন মনিকার প্রতি এই দুর্বলতা ! সে কি চায় ওর কাছ থেকে? নানান প্রশ্ন আচ্ছন্ন করে l তবে কি সে প্রেমে পড়লো মনিকার ! অনেক সময় ও ভাবে মা বাবা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হবে l
হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হয়ে ধ্রুব বাড়ি ফেরে l ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় l ইশ দাড়ি কামানো হয়নি l খোঁচা খোঁচা দাড়ি বিচ্ছিরি লাগে ধ্রুবর l শেভিং মিরারটা নিয়ে আগে শেভিং করে l আফটার সেভ লোশন নিয়ে গালে ভালো করে লাগায় l মুখটা কদিনে বেশ কালো হয়ে গিয়েছে l কপালে ভাঁজ l একি হোল ধ্রুবর? ব্রাশ সেরে টয়লেটে যায় l নিত্যকর্ম সেরে সম্পূর্ণ স্নান সারে l টোস্টারে দু পিস ব্রেড নিয়ে টোস্ট করে পরে বাটার জ্যাম লাগিয়ে রাখে l এরমধ্যে ডিম সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে l ফ্রিজে আরো ছটা ডিম এক প্যাকেট দুধ আছে l দুধটা কেটে যাবে নাতো গরম করলে !
কাল রবিবার l মনিকা আসবে বলেছে l রাতে মাকে ফোন করবে l হিটারে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এক মগ কফি, দুটো টোস্ট একটা ডিম সিদ্ধ খেয়ে ব্যালকনিতে গেলো সিগারেট নিয়ে l হ্যাঁ ইদানিং ও খুব সিগারেট খায় l ছেলেদের একাকিত্ব কাটানোর এই এক সাথী সিগারেট l ব্যালকনিতে গেলে বাইরেটা বেশ সুন্দর দেখায় l চারিদিকে গাছ পালা, বগুনভিলা, ক্রোটন, ইকসোরা গুলমোহর নানান গাছ l বেশ মনোরম লাগছিলো পরিবেশটা l রেডিওতে হেমন্তর গান.. " মোর বীনা ওঠে কোন সুরে বাজে... কোন নব চঞ্চল ছন্দে... "
রাত প্রায় নটার সময় মা বাবাকে ফোন করে l
- হ্যালো তোমরা কেমন আছো? আমি ভালো আছি তবে মাঝে একটু জ্বর হয়েছিল l এখানকার কোম্পনির হাসপাতাল খুব সুন্দর l এক সিস্টার নাম মনিকা আমার খুব যত্ন করেছেন l আমি সম্পূর্ণ সুস্থ.. একসঙ্গে কথাগুলো বলে একটু দম নেয় ধ্রুব, মায়ের উত্তরের অপেক্ষায়..
- জ্বর কেন বাবা? কি হয়েছিল? খাটা খাটুনি বেশি হচ্ছে বোধ হয় l খাওয়া দাওয়া ঠিক করছিস !
- হ্যাঁ মা ও তুমি কিছু ভেবো না l মনিকা সব ঠিক করে দেবে.. হ্যাঁ.. তুমি দেখে নিও l ও আমার খুব যত্ন করে ! কেমন উদাস মনে কথা গুলোর বলে মা কে l
- ধ্রুবর কথা কিছুই বুঝলেন না সুনীতি দেবী l মনিকা আবার কে? সেই বা যত্ন নেবে কেন? মনে খটকা লাগে l কিছু হোল নাতো l ধ্রুবর বাবাকে কিছুই বললেন না l কিন্তু মায়ের মন তো ঠিক কিছু একটা সন্দেহ করলেন l তিনি তাঁর ছেলেকে চেনেন l আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে যে ছেলে চোখ উঠিয়ে তাকায় নি সে হঠাৎ মনিকা মনিকা করছে কেন? মনিকা তো খ্রিশ্চান দের নাম হয় l তবে কি কিছু ঘটলো? আমি বার বার বলছি ছেলেটার এবার বিয়ে দাও l এনার গেলার শেষ নেই আর তাস খেলার শেষ নেই l
- কি হোল মা চুপ করে গেলে যে? কিছু বল l হ্যাঁ বাবা ওই মনিকাটা কে রে?
- ও খুব ভালো মেয়ে l আমাদের হাসপাতালের নার্স
- হাসপাতালের নার্স ! সেকি !! তোর তার সঙ্গে কি সম্পর্ক?
- ওই তো আমার দেখা শুনো করল আমি অসুস্থ থাকার সময় l ঠিক তুমি যেমন আমার যত্ন নাও ঠিক সেই রকম l
- সেতো বুঝলাম তবে ও কি খ্রিষ্টান?
- হ্যাঁ l ওর বাবা জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন l খুব বড়লোক l ওর মা গভমেন্ট হাঁসপাতালে নার্স l মা বাঙালি l আমাদের ই বাড়ির কাছে ওর মা'র বাড়ি
- ও ! কথা এতদূর গড়িয়েছে !! ঠিক আছে রাখো তোমার বাবাকে বলোনা l
- কি হোল মা তুমি কি রাগ করলে?
- না রাগ কেন করবো বাবা l চাকরি করছো বিদেশ ভুইঁ তে l আমাদের ই বোঝা উচিৎ l ঠিক আছে এখন রাখো l
ফোনটা রেখে কর্তা কে বলেন, কবে থেকে তোমায় বলছি ধ্রুবর বিয়ের কথা বিপাসাদের বাড়ি গিয়ে বলো l কথা কানেই নেওনা l
- কি হয়েছে?
- কি আবার হবে ! আমার যত জ্বালা l
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
25.04.2020 সকাল 7 টা.
***চলবে***

No comments:

Post a Comment