Sunday, April 26, 2020

###এঞ্জেল### ### চতুর্থ পর্ব### ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 26.04.2020, রবিবার, রাত 9 টা


 ###এঞ্জেল###
### চতুর্থ পর্ব###
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
26.04.2020, রবিবার, রাত 9 টা
আজ রবিবার l ধ্রুব সকালে উঠে সমস্ত নিত্য কর্ম সেরে সকালের ব্রেক ফাস্ট এর জন্য প্রস্তুত l প্রত্যেক দিন ব্রেড বাটার জ্যাম, ডিম সিদ্ধ আর ব্ল্যাক কফি কি ভালো লাগে? নাঃ অন্য কিছু করতে হবে l তবে কি করবে?
হ্যাঁ সুজির হালুয়া বানালে কেমন হয় l স্কুল থেকে ফিরলে মা ওকে ওই সুজির হালুয়া বানিয়ে খাওয়াতেন l কিন্তু ও কি পারবে মায়ের মতন রান্না করতে? পারতে হবে l আজ মনিকা এলে ওকে নিজের হাতের তৈরি সুজির হালুয়া খাওয়াবে l কিন্তু ও যদি সুজি না খায় ! হয়তো নাক সিঁটকে বলবে না না আমি সুজি র হালুয়া খাইনা l দেখা যাক কি হয় l
হিটার অন করে একটা কড়া হিটারে বসাল l কড়াটা একটু গরম হওয়ার পর প্রায় দেড় কাপের মতন সুজি নেয় l একটা খুন্তি তে কাগজ জড়িয়ে সুজিটা ভাজতে লাগলো l হিটারে রান্না করলে সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন নয়তো শক খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই কাগজ জড়ানো প্রয়োজন l কিছুক্ষণ পর যখন সুজিটা সামান্য লালচে ভাব আসে সেটাকে একটা পাত্রে ঢেলে রেখেদিতে হবে l এবার ওই কড়াতে চা চামচের দেড় চামচ ভালো ঘি দিয়ে একটা তেজপাতা, কাজু, এবং কিসমিস সামান্য ভেজে অন্য পাত্রে রাখা ভাজা সুজি ঢেলে নেড়ে নিতে হবে l এরপর দেড়কাপ জল ঢেলে নাড়তে হবে যাতে ডেলা না হয় l জল ঢালার পর চিনি পরিমাণ মত দিয়ে নাড়তে হবে l একটু পরেই সুজি জল টেনে মাখ মাখ হলেই নামিয়ে নিতে হবে l
সুজি তৈরির পদ্ধতি ঠিক আছে তো ! এতখানি লেখার দরকার ছিলোনা তবুও লিখলাম l আমার বোনেরা, পিসিরা বলে ধ্রুব অতো দূরে যাচ্ছে কি খাবে? ওত কিছুই রান্না করতে জানে না l সকালে ডিউটিতে যাওয়ার আগে কি খেয়ে যাবে? তাই ওর মা, ব্রেড বাটার টোষ্ট কি করে বানাতে হয় টোস্টার ব্যবহার করে ওকে শিখিয়ে দেন l সেই ব্রেড বাটার আজ অবধি চলেছে l ওই এক ঘেয়ে খেয়ে খেয়ে আর ভালো লাগেনা l তাই আজ সুজির হালুয়া র আইডিয়া টা মাথায় এলো l
ধ্রুবর কোয়ার্টারে মণিকার আগমন :-
হটাত কলিং বেল বেজে ওঠে l ধ্রুব দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোলে l কি আশ্চর্য সামনে যাকে দেখবে ভেবে ছিল সেই এসে হাজির.... মনিকা !
গুডমর্নিং মনিকা l
‌ভেরি গুডমর্নিং ধ্রুব l
ওয়েলকাম, ওয়েলকাম
ঘরটা কেমন অবস্থা দেখি l একি এতো অগোছালো কেন তোমার ঘর?
ব্যাচেলার এর ঘর কি করে গোছালো হবে বল?
- কেন? সেরকম তো কথা নেই যে ব্যাচেলার হলেই অগোছালো হতে হবে l
- না তা নয় কিন্তু সময় কোথায় বল ?
-এটাও মানতে পারলামনা l
- আজ রবিবার l আজকে তো ঘর গোছাতে পারো ! নয়কি?
- ওকে বস তাই হবে l
- প্রমিস
- চেষ্টা করবো.. কথা দিতে পারবোনা l একটা কথা বলবো তুমি আসবে বলে আমি সুজির হালুয়া বানিয়েছি l খাবে?
- সুজির হালুয়া ! তুমি বানিয়েছো ইন্টারেস্টিং l কে শেখাল?
- কেন আমার মা, কোন সন্দেহ আছে?
এখানে কে আছে বল আমি ছাড়া !
- তা ঠিক l দেখি কেমন বানিয়েছো?
- ধ্রুব কিন্তু কিন্তু করে সুজির হালুয়া আনে l খারাপ হলে কিন্তু পরিষ্কার বলবে ভালো হয়নি l
- না না খারাপ কেন হবে? তুমি এতো কষ্ট করে আমার জন্য বানিয়েছো আমি খাবোনা .... নিশ্চই খাবো l
- দুজনে সুজির হালুয়া খেতে শুরু করে l গরম ছিল l তারপর দুজনে এক কাপ করে কফি খায় l কফিটা মনিকা বানায় l
দুজনের এই সান্নিধ্যতা দেখলে কেউ বলবেনা এরা দুই ধর্মের পুরুষ এবং মহিলা ! ধ্রুবর মুখে এই মনিকা হাঁসি ফোটাতে পেরেছে l মনিকা অজান্তে ধ্রুবর সান্নিধ্য পছন্দ করছে কারণ ও সত্যি খুব সরল সোজা ছেলে l ও বোধ হয় এই রকম জীবনসঙ্গী চেয়েছিল l তাইতো ওর এক ডাকে চলে আসে l কৃষ্ণর বাঁশির সুরে রাধা যেমন ঘরে থাকতে পারেনা ছুটে চলে আসে l ঠিক মনিকা চলে আসে তার প্ৰিয় বন্ধুর ডাকে l কথাগুলো বলছি এই জন্য ওদের রসায়নটা ঠিক মিলেছে l এটাই বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে l
ধ্রুব আর মনিকা যেন একই বৃন্তের দুই কুসুম l নজরুল ঠিক ই বলেছিলেন হিন্দু মুসলমান একই বৃন্তের দুই কুসুম l এখানে হিন্দু খ্রিস্টান একই বৃন্তের দুই কুসুম l ঈশ্বর মানুষ কে সৃষ্টি করেছেন রক্ত মাংস অস্থি মজ্জা দিয়ে l তিনি মানুষের মধ্যে আরেকটি সুন্দর বস্তু সেই রক্ত মাংস দিয়ে তৈরি করেছেন যার নাম হৃৎপিণ্ড l হৃৎপিণ্ড সব মানুষের ই থাকে কিন্তু হৃদয় কি সকলের থাকে??
দুটি হৃদয়ের যখন মিলন হয় তাকেই বলে ভালোবাসা l সেটা কোন জাতি ধর্ম বর্ণ নিয়ে সৃষ্টি হয়না l সৃষ্টি হয় দুজনের অন্তরঙ্গতা, মনের মিল নিয়ে l যখন একে অপরের চোখের ভাষা, মনের ভাষা, হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পারে তখন ই তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রেমের আদান প্রদান l ধ্রুব আর মণিকার মধ্যে তার কোন অভাব ছিলোনা l ওরা জন্মেছে একে ওপরের জন্য, ভিন্ন ধর্মে কিন্তু এই পৃথিবীতে তাদের মিলন কি সম্ভব ভুয়ো সামাজিক প্রথার জন্য !
ধ্রুবর সম্বন্ধ নিয়ে বিপাশার বাড়িতে :-
ধ্রুবর সম্বন্ধ নিয়ে বিপাশার বাড়িতে অন্তরা আর মালা পিসি জান ধ্রুবর মায়ের সঙ্গে l অন্তরা আর মালা পিসির কথা পরে আসছি ওরা ধ্রুবর বাবার কিরকম সম্পর্কে বোন হন l ধ্রুবর বাবা ছিলেন না l কলকাতা গিয়েছিলেন l অগত্যা অন্তরা আর মালা পিসি কে নিয়েই ধ্রুবর মা সুনীতি দেবীকে বিপাশার বাড়িতে যেতে হয় l
বেল বাজাতে ই বিপাশার মা আসেন দরজাটা খুলতে l বিপাশার বাবা ছিলেন না বোধ হয় l
মৃণালিনী দেবী, বিপাশার মা সকলকে স্বাগত করেন l কিছুক্ষণ কথা বার্তার পর ধ্রুবর মা আগমনের উদ্দেশ্যর বিষয় জানান l বেশ কিছুক্ষণ কথা হোল কিন্তু কিছুই যেন বলা হলনা l বিপাশার বাবার অনুপস্থিতিতে ওর মা কিছুই বললেন না l তারমানে সিদ্ধান্ত টা বিপাশার বাবাই নেবেন l মালা পিসি অন্তরা পিসি ধ্রুবর ব্যাপারে বলার আগেই মৃণালিনী দেবী বলেন ওকে তো আমি জন্ম থেকে দেখছি মা l ওর মতন ভালো ছেলে এই অঞ্চলে কেউ নেই l সুনীতি দেবী বলেন, আজ উঠি দিদি l
মৃণালিনী দেবী বলেন, ও মা সেকি? একটু কিছু মুখে দিয়ে জান l
- নাগো দিদি আজ ঘরে প্রচুর কাজ আছে l পরে একদিন এসে খাবো l
বিপাশার বাবা এলে কথাটা বলবেন l আপনি যেমন ধ্রুব কে জানেন আমিও সেইরকম বিপাশা কে জানি l
ঠিক সেই সময় চা জলখাবার নিয়ে বিপাশা আসে l
কেউ কোথাও যাবেন না l আমি নিজে শিঙাড়া বানিয়ে এনেছি আমার মাসি খাবেন বলে l যাবো বললেই যেতে দেবে কেগো মাসি l আমার হাতের বানানো শিঙ্গাড়া না খাইয়ে ছাড়বনা
- দেখো মেয়ের কাণ্ড l সবেতে তোর জোর জুলুম l ধ্রুবর মা হেঁসে বিপাশা কে আদর করে বলেন l কতকাল আমাদের বাড়ি যাসনি l মাসি কেমন আছে একটু জানতে ইচ্ছে করেনা?
- ইচ্ছে তো করে তবে নানা কাজে যেতে পারি নাগো l
- হুঁ নানা কাজ l আমাকে আর কাজ দেখাসনি বাপু l তুই ইচ্ছে করেই যাসনা - তা তুমি যা বল মাসি !
- মাসি বোন ঝির কথা শুনে সকলে মজা পায় l অন্তরা মাসি, মালা মাসি বিপাশা মেয়েটিকে দেখছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে l নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কথা হয় l এই সময় ধুস করে বিপাশা ওদের দুজনকে প্রণাম সারে সঙ্গে সুনীতি দেবী কেও l
- ওমা এই প্রণাম করার কি আছে?
- আপনারা আমাদের বাড়ি প্রথম এলেন প্রণাম করবোনা?
- আজকাল ও সব কেউ মানে নাকি l
- আমি মানি l বড়দের প্রণাম করলে তারা আশীর্বাদ দেন l সেটা কি কম পাওয়া l
- হুঁ তা বেশ বলেছ l এখন কি করছ? অন্তরা পিসি বলেন
- আমি ! কিছুই না মাকে হেল্প করছি রান্না বান্না তে l ব্যাস আর কি? ইচ্ছে ছিল বাংলায় মাস্টার্স করার l ওই অতো দূরে ইউনিভার্সিটি তে বাবা মানা করেন l ব্যাস পড়া শুনোয় ইতি l
- মৃণালিনী দেবী বলেন ওর বাবা খুব রক্ষণশীল মানুষ l মেয়েকে দূরে ছাড়বেন না l
- ও মা সে কি? এটা ওর প্রতি অন্যায় হলনা l মেয়েটা পড়তে চাইছিল ওকে পড়ালেই তো ভালো হত l নয় কি ! আমরাও তো মাস্টার্স ডিগ্রি করেছি l
- কথাটা শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন মৃণালিনী দেবী l কোন উত্তর দিলেন না l
-প্রসঙ্গ বদলে মালা মাসি বলে, তুমি গান বাজনা করো নিশ্চই l
- নিন আপনারা শুরু করুন বিপাশার মা বলেন সকলের উদ্দেশ্যে l
- সকলে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন বাগানের চা না l বাঃ কি সুন্দর ফ্লেভার চায়ের l খুব সুন্দর হয়েছে চা টা l
কথা কিছুই হলনা l সবাই ফিরে এলো l সুনীতি দেবী বলেন, দিদি আজ উঠি l ওনার ফেরার সময় হোল l আপনি বিপাশা কে নিয়ে একদিন আসুন আমাদের বাড়িতে l বিপাশা আসি রে l যাওয়ার আগে প্রণাম সেরে অন্তরা আর মালা পিসি বলেন চল বৌদি যাই l.
Comments

Comments


No comments:

Post a Comment