Atperilde 2h4 Sapoootla 9gn:nn3eusdo5rel mnAmednM
 · Members of লাল পলাশের পথে..
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
(ধারাবাহিক গল্প) :-
1967 সালে ডঃ কে. কে. বিড়লা জুয়ারি কেমিক্যালস এবং ফার্টিলাইজার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন জয় কিষান ভবন, জুয়ারি নগর, গোয়া তে l এখানে বাৎসরিক 14, 00, 000 লক্ষ মেট্রিক টন রাসায়নিক সার উৎপাদন হয় l জয় কিষান ব্র্যান্ডে l ডাই এমোনিয়াম ফসফেট ( ডি.এ. পি.),
এন. পি. কে, পটাস তৈরি করেন l প্রধানত: মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরালা ইত্যাদি বিভিন্ন রাজ্যে চাষের জন্য রাসায়নিক সার উৎপাদন এবং বিতরণ হয় l তখন কেন্দ্র সরকারের গ্রো মোর ফুড ক্যাম্পেইনে রাসায়নিক সারের প্রচলন বহুল ভাবে চাষিদের দ্বারা আদৃত হয় কারণ ওই সার ধান, গম, বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদির ফলন দ্বিগুণ করে এবং সারা দেশে সবুজ বিপ্লব আরম্ভ হয় l
বলা বাহুল্য এক বাঙালি রসায়ন ইঞ্জিনিয়ার ওই কোম্পানিতে প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পোষ্টে চাকরি তে এপয়েন্টমেন্ট পান l ব্যাচেলার জীবন ওনার গোয়াতেই শুরু হয় l নাম ধ্রুব জ্যোতি ব্যানার্জী l বাড়ির ডাক নাম ধ্রুব l ভালো মাস মাহিনা l সঙ্গে অফুরন্ত কাজের চাপ l সারা দিনের খাটা খাটুনির পর এই বিদেশ ভুঁই তে আপন বলে কেউ নেই ধ্রুবর l নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মাত্র পুত্র সন্তান l বাবা মায়ের চোখের মনি l মাস মাইনের প্রায় অর্ধেক পাঠিয়ে দেয় বাবাকে মানি অর্ডার করে l তখন কার দিনে না ছিল ব্যাংকের আধুনিক ই. সি. এস ( ইলেক্ট্রনিক ক্লিয়ারিং সিস্টেম ) না ছিল ফান্ড ট্রান্সফার l ছেলের টাকার মানি অর্ডারের জন্য হাঁ করে বসে থাকতেন ধ্রুবর বাবা মা l যেদিন টাকা পেতেন সেদিন বাজার থেকে গোটা পোনা কিনে আনতেন ধ্রুবর বাবা l বাজারের থলে আর
মাছের থলে নামিয়ে বলতেন, গিন্নী আজ রগ রগে কাঁচা লঙ্কা সর্ষে বাটা দিয়ে রুই মাছের ঝাল কর দেখি l বেশ চুটিয়ে খাওয়া যাক l
- ছেলেটা কেমন আছে তার খবর রাখো? এখানে আমি মরছি খেটে আর বিদেশ ভুঁই তে ছেলেটা মরছে খেটে ! বাপের নোলার শেষ নেই l
- কেন আমি কি কিছুই করি নি ওর জন্য l
- তা বাপ হয়েছ.. ছেলে কে মানুষ করার জন্য কিছু খরচ করেছ... কিন্তু সে টাকা তো সে পাই পাই চুকিয়ে দিচ্ছে l
- আমি কি ওর জন্য চিন্তা করিনা?
- হ্যাঁ কর ওই মাছের কালিয়া খেতে খেতে বিশেষ করে মুড়ো টা খাওয়ার সময়..... যতসব ! মরণ হয় না আমার l
- ধ্রুবর মা আঁচল দিয়ে চোখ পুঁছতে পুঁছতে আঁশ বঁটি তে মাছ কাটতে লাগেন ছাই লাগিয়ে l ধ্রুবর কথা মনে পড়ে l কি খাচ্ছে ছেলেটা কোথায় আছে কিছুই জানেননা l
কিছুক্ষণের মধ্যে বিপাশা চলে আসে l ও পাশের বাড়িতেই থাকে l দেখতে শুনতে বেশ মেয়েটা l মাঝারি গড়ন, চোখ মুখ খুব সুন্দর l এক কথায় ডানা কাটা পরী l ধ্রুবর মা মনে মনে ওকেই ধ্রুবর বৌ করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন l
- কিগো মাসি দাওনা আমি করে দি l তুমি আর এই বয়েসে এইসব কাজ কি করতে পারো?
- করতে তো হবেই মা l সংসারের সব কাজ মেয়েছেলেরাই করে ওদের রিটায়ারমেন্ট নেই l দেখনা এতো বড় মাছ আমি কি আর পারি l ছেলেটা দূরে আছে.. একবার যে তার কাছে যাবো তার উপায় নেই l সক্কাল সক্কাল এই দেড় কেজি ওজনের মাছ l কে খাবে বল? কিছু বলার উপায় নেই l গণ্ডে পিণ্ডে গিলে তাস খেলতে বেরুবেন বৈঠক খানায় l
- আহা ওরকম করে বোলো না মাসি l তুমি-তো আমায় ডাকতে পারো.. আমিতো কাছেই আছি l
- হ্যাঁ মা তাতো আছো.. কিন্তু... !!
-কিন্তুর কি আছে মাসি l আমি তো তোমার মেয়ের মতন l আমি কি ঐটুকু কাজ করতে পারি না l
- হ্যাঁ তা পারো মা.. তবে...
- তবে কি বল l ও আমি বুঝি তোমার পর l ঠিক আছে..
- ও মা তা বলেছি নাকি ! দেখো মেয়ের রাগ l আয় আয় নে মাছগুলো ধুয়ে দে দেখি l
- দাও l
বিপাশা সুন্দর করে মাছগুলি ধুয়ে, তেল হলুদ নুন মাখিয়ে কয়লার উনুনে তেলের কড়া বসাল l
ধ্রুবর মা, ওর পরিচ্ছন্ন কাজ আর পরিপাটি করে মাছগুলো সুন্দর করে ভাজার বহর দেখছিলেন l মেয়েটাকে ভারি পছন্দ l এই বৈশাখেই ওদের বাড়িতে কর্তা কে পাঠাবেন প্রস্তাব নিয়ে l পাল্টা ঘর l ওরা চক্রবর্তী কুলীন শ্রেণীর ব্রাহ্মণ পরিবার l মেয়েটা অনার্স গ্র্যাজুয়েট l তবে ওর বাবা আর পড়ান নি l ইউনিভার্সিটিতে এম. এ. পড়ার ইচ্ছা ছিল l ওর নাকি বাংলা অনার্স ছিল l
হটাত ভাবনায় পূর্ণচ্ছেদ পড়লো..
- মাসি সাদা সর্ষের ঝাল করবো?
- হ্যাঁ তাই কর.. অন্যমনস্ক ভাবে বলেন সুনীতি দেবী ধ্রুবর মা l
- কেমন তর তর করে দিনগুলো চোলে গেলো l সুনীতি দেবী সেই ধ্রুবর ছোট বেলার কথা ভাবছিলেন l
স্কুল থেকে এসে হাত পা ধুয়ে পিঁড়ে পেতে বসে বলতো মা বড্ড খিধে পেয়েছে কিছু দাও l
- হ্যাঁ বাবা এখুনি দিচ্ছি l হয় সুজির হালুয়া নয় চিঁড়ের হালুয়া তৈরি থাকতো l
তখনকার দিনে তো গ্যাস ছিলোনা মা'রা খাবার তৈরি করে জাল আলমারিতে রেখে দিতেন l পায়া চারটে আবার জল যন্ত্র করা যাতে পিঁপড়ে না ওঠে খাবারে l
ধ্রুবর বাবা অফিস ফেরত বাজার নিয়ে আসতেন l প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে যাওয়া সেই শিয়ালদা তারপর কলেজ স্ট্রীট বাসে l কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে কাজ করতেন ধ্রুবর বাবা জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী l
ধুতি পাঞ্জাবী আর পাম সু পরে ফুল বাবুটি সেজে যেতেন l ছেলের পড়ার ব্যাপারে খোঁজ রাখতেন l কি পড়লে চাকরি পাবে l ইত্যাদি l সব প্রফেসর রা বলতেন ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান l ছেলেটার যখন মেধা আছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে ভালো হবে l
তখন জয়েন্ট এন্ট্রান্স হয়নি l মার্ক বেসিসে সিলেকশন হত l
ধ্রুব বরা বোর ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে এসেছে স্কুল ফাইনাল, হাইয়ার সেকেন্ডারি বিজ্ঞান নিয়ে লেটার মার্কস পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলো l ব্রিলিয়ান্ট ছেলে ছিল l
বিপাশা ছোট বেলা থেকেই ধ্রুব কে খুব পছন্দ করতো কিন্তু কোনদিন ওদের ঘরে যেত না l বাড়ির বারণ ছিল l তাই নিজের পড়া শুনো ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতো না l ওর মা হ্যা হ্যা করা একদম পছন্দ করেন না l বিপাশার বাবা ডাক্তার l উনি নামকরা মেডিসিন স্পেশালিষ্ট l কলকাতায় নিজের চেম্বার আছে l রিটায়ারমেন্টের পর প্র্যাকটিস করেন কলকাতা তে l মেয়ের জন্য ডাক্তার পাত্র তাঁর পছন্দ l নিজের প্রফেশনে জামাই করার ইচ্ছা l কিন্তু ওনার স্ত্রীর ধ্রুবকেই পছন্দ জামাই হিসেবে l ছোট বেলা থেকে দেখছেন ছেলেটিকে l এমন শান্ত ধীর ছেলে এ যুগে পাওয়া মুস্কিল l
....চলবে ***
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
24.04.2020
শুক্রবার, সকাল 7.45