Thursday, April 2, 2020

***শেওড়াপুলি*** ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি

গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক :-

***শেওড়াপুলি***

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি
01.04.2020
বুধবার বেলা 12 টা

প্রায় সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হতে চললো l ঘড়িতে রাত সাড়ে সাতটা বাজে l দূর থেকে বাস স্ট্যান্ড টা খাঁ খাঁ করছে l কেউ নেই l কিন্তু কাছে আসতেই দেখি এক মহিলা কংক্রিটের বেঞ্চে একা একা বসে আছে l পরনে একটা সুতির শাড়ি খুব ই সাধারণ ঘরের বৌ মনে হচ্ছে l মুখটা ঘোমটায় ঢাকা l....

আমার এই মফঃস্বল শহরে কিছু কাজ ছিলো l সেই সূত্রে এখানে আসা l বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস নেই l ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে l অনেকটা পথ বাসে যেতে হবে l
মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি কোথাও যাবেন?
- হ্যাঁ l
- কোথায়?
- শেওড়াপল্লি
- সেকি এই রাতে অতো দূরে যাবেন?
- হ্যাঁ যেতেই হবে l
- কিছু মনে করবেন না, এতো রাতে বাসে যাবেন? আপনার সঙ্গে ত কেউ নেই দেখছি l
- না নেই l আমার কেউ নেই বলে কাঁদতে লাগলেন l
মহিলাটি খুব অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিলো...
(নেপথ্যে )
বৌমা তোর রান্না হোল?
- হ্যাঁ মা হয়ে গিয়েছে
- তবে আমায় খেতে দিতে দেরি করছিস কেন?
- দিচ্ছি মা.. এখুনি দিচ্ছি এই বলে হাঁড়ি থেকে ভাত একটা কাঁসায় ঢেলে তাতে কিছু জল ঢেলে দিল এবং সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা আর একটা গোটা পিঁয়াজ l পাশে কুমড়ো শাক ভাজা l
- আজ গরম ভাত করিসনি?
- গরম ভাত কি দিয়ে খাবেন মা, ঘরে ত কিছু নেই ডাল কিম্বা তরকারি করার মতন l
- কি করে থাকবে মা l একটা ছেলের ওপর পুরো সংসার সে ত সকাল থেকে রাত অবধি খেটে মরছে.... তুই তোর বাড়ি থেকে তো কিছুই আনিসনি.. ছেলেটা কতো রোজগার করে তোকে আমাকে পুষবে বল l
- আমিও কাজ করতে চাই মা l কিন্তু আপনি , আপনার ব্যাটা তো বারুন করেন l মেয়েছেলে বাইরে কাজে যাবেনা l
আমার কি দোষ মা ! বলুন !!
- না সব দোষ আমাদের মা.. তোর কেন হবে.. তোর বাপের বাড়ি থেকে তো কিছুই দেয়নি !
- প্রতিদিন এই বাপের বাড়ির খোঁটা খেয়ে দুটো ভাত আর রাত্তিরে স্বামীর অকথ্য শারীরিক অত্যাচারের কথা ভেবে ঠিক করলাম ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো l তাই একলাই আজ বেরিয়ে পড়লাম l উনি আসতে সেই রাত 9 টা তার আগে আমি পৌঁছে যাবো l
- আপনি কাউকে কিছু না বলে এইরকম রাত দুপুরে ঘর ছেড়ে চলে গেলে আপনাকে আপনার স্বামী খোঁজা খুঁজি করবেনা?
আমার কথায় মহিলাটি যেন কি ভাবছিলেন সেই ভাবনায় পূর্ণচ্ছেদ পড়লো ! একটু যেন চমকে উঠলেন.....

- হ্যাঁ হ্যাঁ.. না না.. কেউ খুঁজবেনা বরং ওদের হাড় জুড়বে l ওরা চায় আমি ওদের ঘর থেকে চলে যাই l তাহলে উনি আবার বিয়ে করবেন l
- সেকি !
-হ্যাঁ ওরা আমার বাপের বাড়ির থেকে অনেক টাকা আশা করে যাতে আমার স্বামী নিজে একটা ব্যবসা করতে পারেন l কিন্তু আমার ছোট ভাই সে মাকে দেখছে তার ওপর কতো টাকা রোজগার করবে যে আমাকে পুষবে আবার আমার মাকে তার বুড়ো বয়েসে দেখবে l আমার বাবা তো কিছুই রেখে যাননি l তবুও আমার ছোট ভাই অনেক দেখা সোনা করে আমার l আর পারছেনা সে l এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁফ ছাড়লো মহিলাটি l
- আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনি কি আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি অবধি যাবেন?
- কেন বলুন তো?
- আমার স্ত্রী শয্যাশায়ী l তাঁকে দেখা সোনা করার কেউ নেই l আমার টুরিং সার্ভিস l আমাকে প্রায় বাইরে থাকতে হয় l স্ত্রী কে দেখার জন্য দুজোন আয়া এবং একজন নার্স আছেন l তাঁরা সকাল বিকেল এবং রাতে থাকেন কিন্তু 24 ঘণ্টার লোক নেই l পাওয়া যাচ্ছেনা তাই আমিও বলি আপনি যদি সম্মতি জানান তবে আমার বাড়িতে আমার স্ত্রীর দেখা সোনা করার জন্য থাকতে পারেন কিন্তু তার জন্য আমিও মাসহারা দেব এবং আপনার বাড়ির লোকের অনুমতি নেব l
- কে আপনাকে অনুমতি দেবে? আমার স্বামী জানলে পুলিশে খবর দিয়ে আপনাকে হেনস্তা করবে l
- হ্যাঁ তা ঠিক l তবে থাক l
- শুনুন আপনি কি সত্যি বলছেন না অবলা মহিলা দেখে টোপ ফেলছেন l
- আমায় দেখে কি মনে হয় আপনার? আমিও কি খুব বাজে লোক?
- কি করে জানবো বলুন ! অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না l
- ক্ষমা করবেন আমার বলাটাই ভুল বলে পিছন ফিরে সিগারেট ধরাতে চেষ্টা করলাম l অন্ধকারে দেশলাইয়ের আগুনে পেছন ঘুরতেই দেখি মহিলাটা গায়েব l কি হল? কোথায় গেলেন উনি? আমার কথায় কি ভয় পেয়ে চলে গেলেন ! খটকা লাগলো মনে !! অনেক ক্ষণ একটা সিগারেটে খাওয়া হয়নি l ঠিক সিগারেট টা টানছি সেই সময় একটা বাস এলো l আমি হাত দেখাতে থামল l
- কন্ডাক্টর বললেন এখানে কেন দাঁড়িয়ে ছিলেন?
- কেন বলুন তো !
- না এখানে কেউ দাঁড়ায় না. আপনি নিশ্চই বাইরে থেকে এসেছেন !
- হ্যাঁ l
- এক মহিলা আপনার সঙ্গে কথা বলছিলেন l
- হ্যাঁ l
- কোথায় যাবেন?
- ঘাটাল l
- টাকাটা দিন l এই নিন টিকিট l
- আপনার কিছু মনে হয়নি?
- নাতো, কি আবার মনে হবে?
- ওই মহিলাটি এক বছর আগে আত্মহত্যা করেছিলেন l ওই যে একটা শেওড়া গাছ আছে বাস স্টপের পেছনে ওই গাছে ! উনি সন্ধ্যা হলেই বেঞ্চে বসেন আর কাঁদেন l কেউ ওই সময় ওখানে থাকেনা l ভাগ্য ভালো আপনার কিছু হয়নি l
- কিন্তু উনি তো আমার সঙ্গে দিব্বি কত কথা বলছিলেন l
- হ্যাঁ আপনি ভালো লোক তাই কিছু হয়নি l একটু বেগতিক দেখলে টুঁটি টিপে দিতেন !
- কি বলেন দাদা, আমি স্পষ্ট দেখলাম জ্যান্ত মানুষ l
- ওনার মুখ দেখেছেন?
- না
- এ যাত্রায় খুব বেঁচে গিয়েছেন l আমি দুর থেকেই বাসের হেড লাইটে আপনাকে দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়েছি l আর কখনো ওখানে দাঁড়াবেন না l
- আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা কারণ আমি ভূতে বিশ্বাস করিনা l
- দেখুন আমার বলার কথা আমি বলে দিলাম l এবার আপনি কি করবেন সেটা আপনার কথা l
- একটা সিট ফাঁকা হওয়াতে সিটে গিয়ে বসলাম l খুব ক্লান্ত লাগছিলো l চোখ বুজিয়ে ঘটনাটা ভাবতে লাগলাম l বাড়িতে গিন্নিকে বলবো l এখন একটু ঘুমোই l
ভূত কি সত্যি আছে.......?

© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি
01.04.2020 বুধবার

No comments:

Post a Comment