Wednesday, June 3, 2015

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


  

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



     
শুরু হল নতুন ধারাবাহিক

                                               “আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
একতারা তার দেয় কি সাড়া আমার গানে কে জানে..."
এই আর্তির মধ্যেই ব্যক্তি জীবনের পথ চলা! স্বপ্ন সাধ সাধনায়, ভাব ভাবনা ভালোবাসাকে বিশেষ একজনের সাথে মিলিয়ে নিতে! কারণ কালের মন্দিরায় জীবনের বোল ফোটাতে পরস্পরের সঙ্গ লাগে! তখন সেই সঙ্গতে মন বলে "সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমারই দুখানি নয়নে-" এই যে পরস্পরের মধ্যে জীবনের পথ খুঁজে পাওয়া,পরস্পরের মধ্যে বেঁচে ওঠা, পরস্পরের মধ্যে সত্য হওয়া; এখানেই প্রেমের সার্থকতা! এখানেই মানুষ চলেছে তার দোসরের খোঁজে, "কবে আমি বাহির হলেম তোমারই গান গেয়ে"! আসলে দোসর খুঁজে পাওয়ার সাধনায় দোসর হয়ে উঠতে পারার শক্তিটাই গুরুত্বপূর্ণ! সেখানেই মুক্তি!”

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 


ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আমার গল্পের নায়ক এক  মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে “সুদীপ্ত”। মেধাবী ছাত্র। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নায়িকা “সুদীপ্তা” সে’ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেধাবী, বাবা মা আই.এ.এস অফিসার। অভাব কি জানে না। দুজনেই ইনফোসিস, বেঙ্গালুরুতে চাকরীতে সবে ঢুকেছে। এরপর...
 

সুদীপ্ত বি.টেক. (কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং) এরপর ইনফোসিস্, বেঙ্গালুরুতে সফট্ওয়ের ইঞ্জিনিয়ার এর চাকরিতে জয়েন করে। এখানে বলে রাখা ভালো সুদীপ্ত, আই.আই.টি ,মুম্বাই থেকে ফার্স্ট ক্লাস ৯০% মার্কস পেয়ে  পাস করার পর চাকরীতে জয়েন করতে বাধ্য হয়। অন্য কোম্পানিতে ভালো চাকরি পেয়েছিল কিন্তু জয়েন করেনি। ওর বাবা অনেক কম বয়েসে  হার্ট অ্যাটাকে হটাত মারা যান। ছোটভাইয়ের পড়ার দায়িত্ব  সামলানোর জন্য ও বাধ্য হয় চাকরি করতে। বাড়ীতে মা এবং ছোটভাই ছাড়া আর কেউ নেই । অনেক ইচ্ছে ছিল এম.টেক্. এর পর ডক্টরেট করবে বলে, কারণ ওর টিচিং জব পছন্দ। সে ইচ্ছেটা ওকে সর্বদা পড়াশোনার দিকে টানত। আড্ডা দিতে মোটেই ভালোবাসে না সুদীপ্ত। ওর প্রজেক্টের প্রোজেক্ট্ ম্যানেজার (পি.এম.)ওকে খুব স্নেহ করেন । ওর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সঙ্গে ও কাজও খুব নিখুঁত ভাবে করে । সুদীপ্তা ওই একি প্রোজেক্টে, ওর সঙ্গে জয়েন করে একই দিনে। মাইসুরে তিন মাসের ট্রেনিং সেরে দুজনে বেঙ্গালুরুতে জয়েন করে । তাই সুদীপ্তার সঙ্গে আলাপ প্রায় তিন  মাসের ওপর । সুদীপ্তর চেহারার আকর্ষণের সঙ্গে ওর প্রখর বুদ্ধি সহজেই নারীর মন আকর্ষণ করে। এটাই স্বাভাবিক। সুদীপ্তা এন.আই.টি., রাউরকেল্লা থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে  বি.টেক্.ফার্স্ট ক্লাস  কাজেই ও খুব ফেলনা নয়। দেখতে খুব সুন্দরী। বাবা মা দুজনেই আই.এ.এস অফিসার তাই টাকার অভাব নেই। তবে আই.আই.টি. পাস আউটদের ইনফোসিসে বেশি টাকা মাইনে দেয় । বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা সন্ধ্যে ছটার পর অফিসে  থাকা মানা ছিল। এসব আমি ২০০৫ সালের কথা  বলছি ।
সুদীপ্ত কাজের মধ্যে মসগুল থেকে এক রকমের যন্ত্রমানবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অফিস আর কাজ ছাড়া কিছুই জানত না। প্রায় দিন বেলা ১.৩০ টার সময় সুদীপ্তা ক্যান্টিনে লাঞ্চ খেত সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা করে। সুদীপ্তার ওখানে গল্প করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই কারণ সুদীপ্ত  বিশেষ পাত্তা দিত না  ওসব ব্যাপারে। সর্বদা কাজে মসগুল থাকতো  কি করে অন্ সাইটে যাবে। তারই  চিন্তায় থাকত। একদিনের কথা, সুদীপ্তা ওর নিজের  জন্মদিন সেলিব্রেট্ করার জন্য সব বন্ধু-বান্ধবদের ডেকেছিল পার্টিতে। সুদীপ্তকেও ডেকেছিল। 
কিন্তু ফর্মালিটির জন্য পার্টিতে গিয়ে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে  গিফট দিয়ে চলে যায়। এটা সুদীপ্তার  মনে লাগে । এমনিতেই  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা পার্টি, আড্ডা, শুক্রবার রাতে এবং শনিবারদিন সাধারনতঃ করে থাকে। ওদের মতে স্যাটারডে নাইট মাস্ট বি ডিলাইট। সুদীপ্তা মনে দুঃখ পেলেও প্রকাশ করেনি কারণ ও সুদীপ্তকে মনে মনে ভালবাসত কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি।
এই অপ্রকাশিত প্রেম এবং বলতে গেলে এক তরফা প্রেম যেন অসহ্য লাগে সুদীপ্তার ।
একদিন সুদীপ্তকে বলে বসে, “তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করছ কেন ? আমি লাঞ্চের সময় ডাকলে তুমি এসে খেয়ে বিল মিটিয়ে চলে যাও। কোনও কথা কি তোমার মুখে আসে না? আমি তোমার প্রজেক্টে কাজ করছি ! তোমার সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং নিলাম ।  অন্য কলিগরা ত এরকম নয় ! তুমি এরকম ডিফারেন্ট এটিচ্যুড দেখাও কেন?” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সুদীপ্তর  দিকে তাকাল উত্তরের অপেক্ষায় ।  
সুদীপ্ত বলে, “আমাকে ভুল বুঝো না । আমার মাথায় অনেক চিন্তা । আমার মা বিধবা, ভাইয়ের পড়া আমার ওপর নির্ভর করছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ওপর সংসারের সব দায়িত্ব  ও তুমি বুঝবে না !” তুমি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছ। তুমি কি করে জানবে নিম্নমধ্যবিত্তের জ্বালা যন্ত্রণা ? তোমার বাবা মা দুজনেই  আই এ এস অফিসার ! কি অভাব দেখেছ জীবনে? বাবা অসময়ে চলে গেলেন । মা আমার ওপর ভরসা  করে আছেন । আমি আমার ছোটভাইয়ের দায়িত্ব নেব বলে। আমি আমার মা'কে প্রতারণা করতে পারি না । তিনি এমনিতেই দুঃখ পেয়েছেন আর নতুন করে দুঃখ দিতে পারি না।
ক্রমশ 


যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 


ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

দ্বিতীয় পর্ব

সুদীপ্তা :  “এটা কিরকম কথা হল ?” আমি তো সে কথা বলিনি যে, তুমি তোমার মা'কে দুঃখ দাও ! আবার এটাও ঠিক নয়  বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে না খেয়ে গিফট দিয়ে চলে যাওয়া । এটা কিরকম ভদ্রতা ?
সুদীপ্ত : আমি দুঃখিত কিন্তু নিরুপায়। আমি এখন শয়নে স্বপনে একটাই কথা ভাবি; কি করে অনসাইটে যাব? সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমার টাকার প্রয়োজন তাও সৎ উপায়ে উপার্জন করে। আমাকে ভুল বুঝ না।
সুদীপ্তা : সে তো আমিও ভাবি, তুমি একা নও। আমার কি ইচ্ছে করে না প্রোজেক্টের কাজে ইউ.এস.এ যাই! আমরা হয়তো একসঙ্গেই যেতে পারি। পি.এম. একা তোমাকে নয় আমাকেও রেকমেন্ড করেছেন। সে খেয়াল রাখো মিস্টার সুদীপ্ত রায় !
সুদীপ্ত : আমি জানি। কংগ্র্যাচুলেসন মিস সুদীপ্তা বোস। হেঁসে ফেলে দুজনে ।
সুদীপ্তা : আমি কিন্তু বাবা মাকে তোমার কথা বলেছি ।  
সুদীপ্ত : মানে !! কি কথা ?  
সুদীপ্তা : মানে আবার কি? আমি তোমাকে পছন্দ করি এর বেশি কিছু নয়। বুঝলে !  
সুদীপ্ত : কিন্তু তুমি আমার মতামত নাও নি ! আমার মা, আমার ভাই এদের ছেড়ে আমি কিছুই করতে পারি না, আমরা একই সুতোয় বাঁধা। ওদের অমতে আমি ....... অসম্ভব !!!
সুদীপ্তা : এই তো তোমার মতামত  নিলাম, আজকে,এখন ! আমি তোমাকে প্রপোস্ করছি! যেটা কিনা ছেলেরা করে সেটা আমি করছি বেহায়ার মত !!  ইয়েস্ আই এডমায়ার ইউ। কেঁদে ফেললো সুদীপ্তা। তুমি ভালো ছেলে বলে তোমার খুব গর্ব না ? কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি ...আই! আই লাভ্ ইউ !! ফর হেভেন সেক্ ডোন্ট্ লিভ মি। তুমি আমাকে অনেক অপমান করেছ! আর না !! এই বলে সুদীপ্তা  কেঁদে ফেলল ।
সুদীপ্তার মাথায় হাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে সুদীপ্ত । কুল ডাউন বেবি কুল ডাউন। এতো কনফিডেন্স ভালো না। আমার মা' কে না জিজ্ঞাসা করে আমি এ বিষয় কিছুই বলতে পারব না। আমার এখন কেরিয়ার আছে। কিছুই হতে পারলাম না। বাবার অনেক আশা ছিল আমি ডক্টরেট করি। বাবা গত হয়েছেন মোটে এক বছর, তার ধকল এখনও মা সামলে  উঠতে পারেননি। তুমি যান আমার ভাই এখন সবে ঢুকল বি.টেক্.এ। ও আই.আই.টি., খড়গপুরে অ্যাডিমশন নিল। আরও ভালো রেসাল্ট্ করতে পারতো। আমি ওকে ভালো  করে গাইড করতে পারিনি । জানি না কি করবে ভবিষ্যতে! ওর পড়াশুনোর জন্য আমাকে ফিনান্স্ করতে হবে। আমার ওপর সারা সংসারের সব দায়িত্ব। আমার এখন প্রেম করা সাজে না। আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর।
   
সুদীপ্তা : আমি সব জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি। এখন তো বলছি না! আর কি বললে তুমি!, “বেবি!” আমি “বেবি!!” তুমি নিজেকে কি মনে কর ? এ্যাঁ !! দেখাচ্ছি তোমার মজা। এই বলে চট করে জড়িয়ে ধরে চকাস করে চুমু খায় সুদীপ্তর ঠোঁটে। আমি তোমার কাছ থেকে এইটুকু কি আশা করি না, “আই লাভ্ ইউ টু সুদীপ্তা” শুনতে!! ছেলেদের চোখ দেখলেই মেয়েরা বুঝতে পারে মোসাই। তুমি জতোই আমাকে শুরু থেকে এভোয়েড্ কর আমি জানি তুমি আমাকেই মনে মনে পছন্দ কর। আই এম মাচ কনফিডেন্ট্ অ্যাবাউট দ্যাট্। তাই আজ সারপ্রাইজ্ দিলাম। কিরম লাগলো ?বলবে না ?

সুদীপ্ত :  এতো কনফিডেন্স ভালো না । তবে হ্যাঁ,  যদি কোন দিন বিয়ে করি তবে আই প্রমিস্ , “I Sudipto Ray do herby testify, and give public notice of the covenant of marriage which we have entered into with each other in the presence of God and witnesses: based solely on the authority of God as found in His Holy word, The Bible  in the name of GOD accept Mis Sudipta Bose as my wife" এই বলে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে জড়িয়ে ধরে  গভির ভাবে চুমু খায়। সকলের হাত তালিতে ওদের ঘোর ভাঙ্গে ।
সুদীপ্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে। অাদিত্য,সুকন্যা,প্রিয়াঙ্কা, গুলশন,আবীর,ভেঙ্কাটেশ্ সকলে খুশিতে গান গাইতে আরম্ভ করে। ৫ পএন্ট্ স্পিকার লাগিয়ে ডিজিটাল হোম থিয়েটারে গান বাজিয়ে নাচ শুরু হয় অডিটোরিয়ামে ওদের মাঝখানে রেখে। এরপর সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই নাচতে শুরু করে গানের তালে তালে। আদিত্য-সুকন্যা সালসা ড্যান্স্ আরম্ভ করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে প্রিয়ঙ্কা-গুলশন ব্রাজিলিয়ান সাম্বা ড্যান্স্ দেখায়। সকলে সারাক্ষণ এনজয় করে ।
সেদিন ছিল খৃষ্টমাস, তাই পার্টি হয় রাত ৯.০০ টা তে শেষ হয় ১২ টাতে। আজ সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনে হোষ্ট আর প্রজেক্টের সব কোলিগ্রা খোশ্ মেজাজে মুর্গা মসাল্লাম্,কোপ্তা,বাটার তন্দুর,প্রন্ পকোড়া,বাটার স্কচ্ আইস্ ক্রিম্ পরে কিছু হট্ ড্রিঙ্ক নিয়ে একটু বেসামাল হয়। ওটা আই.টি. প্রফেসেন চলে। কিছু বলার নেই।  মেনে নিতেই হয় ।
ক্রমশ



No comments:

Post a Comment