মিলি
:- ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী
কিছুদিন আগে খবরের কাগজে একটি নারী
নির্যাতনের খবর পডে বিস্মৄত হলাম । আর বেশি অবাক হলাম এটা যেনে যে ,
যিনি কিনা আইনের রক্ষাকর্তা , ন্যায়দাতা, মহামান্য বিচারপতি তিনিই কিনা
সুপারি কিলার দিয়ে এক অবলা নারীর প্রাণ নাশ এর ছক এঁটেছিলেন । কিন্তু ওই যে বলে,” রাখে হরি মারে কে?” ঘটনাটা
সম্পূর্ণ সত্যি কেবল নাম এবং ঘটনার স্থান কাল পাত্র বদলান হয়েছে ।
মিলি এবং জলি দুই বোন । বাবা মা’র আদরের মেয়ে । মিলি +২ পাস করেছে জলি ক্লাস ১০ । পড়াশুনোর চেয়ে
টিভি দেখা, আড্ডা দেওয়া বন্ধুদের সঙ্গে বেড়ান, ঘোরা এই সবই বেশি
করে। বাবা একটা কেরানির চাকরি
করতেন । হঠাৎ হার্ট ফেল্ হওয়াতে মারা যান
। প্রথম স্ট্রোকেই মারা যান । ঘরে আর কেউ রোজগারক্ষম ছিলেন না তাই মিলি জলি কে
নিয়ে সহরে মামার কাছে এসে ওঠেন ওদের মা । মামার ইলেক্ট্রিকের সরঞ্জামের দোকান ।
ভালই চলে । এরা আসাতে মামি বিরক্ত হলেও মামা ওদের ঠাইঁদেন। বাবার পেনসনের কাগজ এল
আই সি র পলিসি এসবের জন্য মামার প্রয়োজন ।তাই মা এবং মামা অফিস কাচারি ঘুরে ঘুরে
অনেক কষ্টে এক উকিলের পরামর্ষে কিছু কাজ এগুতে থাকেন। এরমধ্যে মামা জানতে পারেন
উকিল বাবুর অনেক যানা শোনা আছে । অফিসে একটু যানা শোনা না থাকলে কিছুই কাজ হয়না ।
তার ওপর ফাইল এগুতে ছোট গান্ধী র প্রয়োজন । উকিল বাবু অনেক সাহায্য করলেন । মামা
টাকা পয়সা দিয়ে সামলালেন । আস্তে আস্তে সব পাওনা মা পেলেন । মায়ের পেনসন এর
কাগজ থিক করতে সময় লাগলো । বাবার ডেথ সার্টিফিকেট , লিগাল হায়ার , রেসিডেন্সিয়াল
সার্টিফিকেট ইত্যাদি সব উকিল বাবু করেছেন
। এই সুবাদে মা এত মুগ্ধ হয়ে যান যে ওনাকে ছেলে বানিয়ে ফেলেন । উকিল বাবুর নাম
জয়ন্ত মিশ্র ।
মিলি পড়া ছেড়ে কাজ খুঁজতে লাগলো ।ও কম্প্যুটার
এর কোর্স করেছিল এবং ওকে দেখতে ও ভাল ছিল তাই একটা কাজ ও জোগাড় হয়ে গেল। ভারত
গ্যাসের দোকানে এল পি জি বুকিং এর কাজ
পেল । সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটা । জয়ন্ত বাবু ওই কাজটা করিয়ে দেন । মামা
অবিশ্যি ওদের দোকানে সব ইলেকট্রিকাল ফিটিং সাপ্লাই করেছিলেন । সে সূত্রেও চেনা
শোনা ছিল । মিলি কাজে জয়েন করল । মাস গেলে চার হাজার মাইনে ।
২
বাবার গ্রে-চুইটি কম্যুটমেন্ট্ এবং জিপিএফ্ এর
সব টাকা ফিক্সড ডিপোসিট্ করে দেন মামা; মা’র নামে । তা ছাড়া মা পেনসেন্ পান । পরে এল আই সি র টাকা দু লক্ষ পান সেটা
বড মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছেন তার নামে ।বাবার কিছু ফিক্সড ডিপ-সিট ছিল সেটা
উঠিয়ে ছোট মেয়ের নামে করে দেন । সমস্ত পাওনা টাকা পেয়ে মামাকে সব টাকা পাই পাই শোধ করে দেন মা । এখন
আর কোন অসুবিধে নেই । কিন্তু যে মানুষটার জন্য সব হল সেই থাক-লোনা । মামির মুখে
কুলুপ আঁটা রইল। আর গজ গজ করতেন না মামি। খাওয়া থাকার খরচ সব মা মাস গেলে তুলে
দিতেন মামার হাতে যদিও মামা কিন্তু কিন্তু করতেন । আমরা এখানে থাকতাম কারন
জায়গাটা নিরাপদ এবং সহরের মধ্যেখানে কাজেই সব জায়গাতে যাওয়ার সুবিধে । তাছাড়া
জলির স্কুল কাছে ।
যাই হোক ভালই
চলছিল । বলে না সুখে থাকতে ভূতে কিলোয় ঠিক তাই আরম্ভ হল । মিলি র সঙ্গে জয়ন্ত র
প্রেম সুরু হল। মা কিছুই টের পেলেন না । কাজ সেরে শপিং মল, সিনেমা দেখা সব চলল। রাত করে বাডী ফেরা
। দামি প্রসাধন ব্যাবহার , দামি ড্রেস সব জয়ন্ত কিনে দিত ।মা পূজো আচ্ছা নিয়ে থাকতেন । এরকম ই
কিছুদিন চলছিল হঠাৎ মিলি একদিন সিঁদুর পরে ঘরে হাজির জয়ন্ত কে নিয়ে । মাকে ধড়াস
করে দুজনের সাষ্টাঙ্গ প্রণাম কিছু বলার আগেই মিলি বলল বিয়েটা মন্দিরে সেরে ফেললাম
। মা মামি সবাই হতবাক মেয়ের কান্ড দেখে । মামি বলেন আমি বলেছিলাম এই রকমই একটা
কিছু ঘটতে যাচ্ছে তখন গা করনি এখন নাও ঠেলা সামলাও। মুখে কালি মেখে রাস্তায় ধী ধী
করে নাচো । আমাদের আর মুখটা পুড়িও না উনি এলেই পত্রপাঠ বিদেই করব । আমার যত্ত
জ্বালা ।তা তুমি কেমন ভদ্র লক হে আমাদের মেয়েটাকে ভুলিয়ে বিয়ে করেছ
তোমার বাবা মা জানেন এ কথা ? জয়ন্ত বলে আমার বাবা জেলা জজ আমি নিজে ওকালতি করি । আপনাদের মেয়ের বয়েস
২০ অ এখন সাবালিকা । আপনাদের মত থাকবেনা জেনেই ও আর আমি আর্য্যসমাজমন্দিরে বিয়ে সেরে-ফেলি ।
আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছি । মা নিথর হয়ে বসেছিলেন ওদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে
তাকিয়ে । দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা মানতে চাই-ছিলনা । চোখ পুঁছে সুধু বললেন, মিলি তুই ছোট বোনটার কথা একবারও
ভাবলি-না মা ? বাবার বাৎসরিক কাজ শেষ না হতেই বিয়ে করে
ফেললি । মামা,মামি,মাকে জানানর কোন
প্রয়োজন বোধ করলিনা ! আমি কি তোর বিয়ে দিতাম না ? এতো
তাড়া! মার দুখ: বুঝলি-না? মুখে চুন কালি দিলি। জয়ন্ত বলল
অপরাধ নেবেন না মা ! মা’ কথা থামিয়ে, আমি হাত জোড় করে তোমাকে বলছি
তুমি আমাদের কথায় থেকনা। তোমার পেটে এই ছিল বাবা ? মিলি তখন
ঘোরে আছে ।
3
প্রেমে হাবুডুবু। তার এসব শোনার অবকাশ ছিলনা। সে বলে , ঠিক
আছে , তোমাদের যখন অপছন্দ আমি আর কি বলব? আমি তাহলে আজ এই ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছি ! তাই যাও মহারানী কে তোমাকে আটকাচ্ছে ? মামি
চেঁচিয়ে বলেন। এই সময় মামা ঘরে ঢোকেন । কি হল এতো চেঁচামিচি? ঘরে কি ডাকাত ঢুকেছে ? জয়ন্ত কে দেখে মামা ঘাবড়ে যান । একি আপনি ? তারপর ব্যাপার টা আঁচ করেন মিলি র কপাল দেখে । ও ! তাহলে সব সেরেই
এসেছ তোমরা । আর কি বাকি রাখলি মা ? একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে। সব ই আমার বোনটার কপাল ? অসময়ে স্বামী হারাল দুটো মেয়ের মুখ চেয়ে ছিল তাও তোরা দুঃখ দিলি
। আমি কি করলাম ? জলি ফোড়ন কাটে । এক ধমক দেয় মামি
। চুপ ! আমি কি করলাম !! যা ওঘরে যা । মা চোখ পুঁছতে পুঁছতে বলেন, দাদা
আমার বালা দুটো আর হার টা দিয়ে দাও। ওদের যেতে
বল । আমি আর পারছিনা ! আমার অদৃষ্ট ! আঁচলে মুখ ঢেকে ঘর থেকে চলে-যান। মামা
মায়ের কথামত ঘর থেকে মামির আলমারি খুলে বোনের গয়না গুল মিলিকে দিয়ে পরতে বলেন ।
নিজে ৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলেন শাড়ি কিনে পরে-নিবি। আমাদের একটু সময় দিলিনা
মা ? মিলি কিছু না বলে মামাকে নমস্কার
করে জয়ন্তর সঙ্গে চলেযায় । ওরা ঘরে না ফিরে একটা বাসা নিয়ে থাকে । মিলিকে বাসা
তে রাখার কারন জয়ন্তর মা বাবা জানেন না ছেলের গুন কীর্তির কথা। বাডিতে সবাই যানে
জয়ন্ত বেড়াতে গিয়েছে । অবশ্য জয়ন্ত মিলি কে নিয়ে তারপর দিন কারে কলকাতা তারপর
মুম্বাই হয়ে ফ্লাইটে গোয়া হনিমুনে যায় কলকাতা নেতাজী সুভাষ বিমান বন্দর থেকে ।
নাম পরিবর্তন করে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সো করে জয়ন্ত মিলি কে নিয়ে ফ্লাইট এ
যায় । মিলির নাম পরিবর্তন করে মিতালি নামে । গোয়াতে খুব ফুর্তি করে । কোলবা,কালাঙ্গুট্,ডোনাপাওলা,এরকম সব সীবিচ্ দেখে উত্তর গোয়া দক্ষিণ গোয়া ঘুরে হোটেল এ দু রাত
তিন দিন থেকে ফিরে আসে ।
এরমধ্যে জজ সাহেবের কানে মিলি র
মামার ইলেকট্রিক দোকানের মিস্ত্রি ‘মুনা’ সব বলে দেয় । মুনা, জজ সাহেবের নতুন বাড়ীর সব কন্সিল্ড্ ও্যারিং করেছিল তাই ওদের বাড়ীতে
যাতায়াত আছে । জজ সাহেব তাঁর অপদার্থ ছেলেকে জানেন তাই তডিঘডি ছেলের বিয়ের
আয়োজন করে ফেললেন । ওনারই সহ পাঠির মেয়ের সঙ্গে ।মেয়েটি এম এ সাইকোলজি নিয়ে এই
বছর পাস করেছে । দেখতে মন্দ না । সব ঠিক ঠাক । জয়ন্ত এলেই পাকা দ্যাখা। আশীর্বাদ সেরে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলবেন ।
4
জয়ন্ত আসার পর কেউ কিছু না যানার
ভান করে । সহজ ভাবেই জয়ন্তর মা ‘জয়শ্রী’ দেবী বলেন হ্যাঁরে কোথায় কোথায় বেড়ালি ? জয়ন্ত
সব বর্ণনা করল । তারপর মাকে মিলি র বিষয় বলল । মা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন । তোর
বাবা শুনলে আমাকে রক্ষা রাখবেন না । তুই কি তোর বাবাকে চিনি-সনা? কি করে সাহস করলি রে ? একেবারে গোয়া ঘুরিয়ে আনলি? প্লেন এর টিকিট? আমি
জানি বাবা রাগারাগি করবেন তাই ফলস ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে কলকাতা থেকে জাই ।
আসলে এখান থেকে গেলে এয়ারপোর্ট এ ধরাপড়ার
ভয় থাকতো । কলকাতা অবধি বন্ধুর কারে যাই ওখান-থেকে মুম্বাই হয়ে গোয়া ।আর
মেয়েটা ? ওর কথা ভেবনা । ওকে ভাডা ঘরে রেখে
দিয়েছি। মা বলেন আর ওর কাছে যেতে হবেনা ।আমার দিব্বি রইল । বাবা তোর বিয়ের ঠিক করেছেন । ভাল মেয়ে । অনেক
পণ দেবে । ভাল ছেলের মতন চুপটি করে যা বলব তাই করবি । হ্যাঁ মা তোমার কখনো অবাধ্য
হয়েছি ? বল ? না হও নি ! এটা কি করে এলি খেয়াল রাখিস ? ভুল হয়ে গেছে । ক্ষমা করে দাও । মা ছেলের মাথার চুল ঠিক করতে করতে
বলেন , আর কত জ্বালাবি বুড়ো বাপ টাকে ? রিটায়ারমেন্ট ত মাত্র এক মাস । তার পর কি হবে খেয়াল রাখিস ? সব ঠিক হয়ে যাবে কিচ্ছু চিন্তা করনা।তাই যেন হয়।
মিলির কাছে আর যেতনা জয়ন্ত । মিলি
কে ফোনে বলতো একটু এদিকটা সামলে নিয়ে পরে তোমার কাছে যাব । মিলি র সন্দেহ হয় ।
জয়ন্ত অন্য নামে তাকে ফ্লাইটে কেন নিলো ? নিজের নাম কেন পালটাল ? এখন হঠাৎ মাতৄভক্ত ছেলের ভূমিকা ! কি ব্যাপার !! ১০-১৫ দিন পর মিলি
জয়ন্ত র বাড়ীর অ্যাড্রেসে যায় কারন ওদের বাড়ীর এল পি জী সিলিন্ডার ,মিলিদের ডিস্ট্রিব্যুটার ই পাঠায় তাই জয়ন্ত র অ্যাড্রেস পেতে
অসুবিধে ছিলনা
মিলিকে ওর মা দেখেই বুঝতে পারেন ।
বাডিতে ও আসাতে যাতে সিন ক্রিয়েট না হয় তাই ভেতরে ডাকেন।মিলি প্রণাম করে । ওকে
ডেকে একটা ঘরে বসতে বলেন। ।মিলি ওখানেই জয়ন্ত দের বাডিতে কিছুক্ষণ থাকে । জয়ন্ত
র মা কিন্তু কোন কথা না বলে চাকরকে দিয়ে চা জলখাবার সব পরিবেশন করান । চাকর বলে
মা বসতে বলেছেন । মা এখন পূজো করবেন ।মিলি কিছু খায় না। ও বাসাতে ফিরে যায়। মনে
মনে ভাবে কাল কোর্ট বন্ধ , কালকে যা করার করবে ।মিলি যাওয়ার
পর মা, ‘রবি’ (এ বাড়ির চাকর) কে ডাকেন।
জয়ন্ত র মা রবি
কে বলেন, ল্যান্ড ফোন থেকে দাদাকে, মানে জয়ন্ত কে আসতে বল । অসময়ে জয়ন্ত চাকরের ফোন পেয়ে বিগড়ে
যায় । রবি কিন্তু খুব চালাক মনিবের মনের
কথা বুঝে সব ফোন বাইরে এস টি ডি বুথ থেকে বার এসোসিয়েশন এর ল্যান্ডফোনে ফোন করে
5
। ওখান থেকে কোর্ট এর আর্দালি জয়ন্ত
কে খবর দেয় ।কারুর মোবাইল থেকে কোন ফোন হয়নি । এমন ছকে সব চলছিল কেউ টুঁ শব্দ
পাওয়ার উপায় নেই কি বোঝার উপায় নেই।
কিছুক্ষণের
মধ্যেই জয়ন্ত বাডি ফিরে আসে । তার ঘন্টাখানেকের ব্যবধানে জজ সাহেব চলে আসেন । এর
মধ্যে বলে রাখি মুনা এসে জয়ন্তর মাকে বলে আমাকে কিছু টাকা দিলে আমি মিলি কে
সরিয়ে ফেলব । কিন্তু মা ওতে রাজি হলেন না। পরে মুনা বলে মা এখানে সুপারি কিলার
এমন ভাবে কাজ করে কেউ টুঁ শব্দ পাবেনা খালাস হয়ে যাবে । এ সব কথা তিন তলার ঘরে হচ্ছিল যেখানে এখনো ওয়ারিং বাকি। মা দু লক্ষ লাগবে । প্রথমে ওরা ১ নেবে কাজ শেষ
হলে বাকি টাকা। মা গর রাজি হলেন । এর মধ্যে জয়ন্ত বলল তোমাদের কিছু ভাবতে হবেনা
আমি ব্যবস্থা করছি । এই বলে জয়ন্ত একটা ব্যাগে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পডে
। এক বন্ধু র বাডি যায় । মা পই পই করে
মানা করেন এ বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামাতে। বন্ধু বান্ধবদের এ বিষয় জানান উচিৎ কি ? কে কার কথা শোনে ? জয়ন্ত সোজা ওই বন্ধুকে নিয়ে একটা বলেরো গাডি নিয় সোজা মুনাকে কি সব
বলেদেয় । মুনার হাতে টাকার বান্ডিল গুঞ্জে দেয় । তারপর ওখান থেকে বন্ধুকে নিয়ে
চলে যায়। মুনা যখন যায় তখন রাত ১১টা হবে ।
মুনা, মিলির ঘরে নক্ করে । মিনি ভেতর থেকে বলে কে? আমি আর
জয়ন্ত বাবু এসেছি । তোমাকে মা ডাকছেন । মিলি বিশ্বাস করে দরজা খুলতেই দুজন অজানা
লোক মিলি কে মুখে হাত চাপা দিয়ে কাবু করে ফ্যালে । মুখে গঁ গঁ শব্দ হলেও
বিশেষ কেউ জানতে পারেনা । সটান ওকে তুলে
ফেলে গাড়িতে বসিয়ে দেয় । মুখে লুকো প্লাস্ট দিয়ে মুখ বন্দ করা । চোখ রুমাল
দিয়ে বাঁধা । কোন শব্দ বেরুনর উপায় নেই । কোথায় যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে কিছুই
বোঝার উপায় নেই । গাডি চলে নন্দন কানন এর রাস্তা দিয়ে বারং হয়ে আঠগড় এর রাস্তা।
তারপর খুন্টুণি । ওখানে কিছু সুবিধে হলনা কারন মোবাইল পেট্রলিং চলছে । গাডি ঘুরিয়ে আবার ফিরে আসে মহানদীর ওপর ।
মহানদীর ওপর জোব্রা অনিকট । ব্রিজের ওপর
থেকে মিলি র পেছনে হাত বেঁধে দেয় এবং পা দুটো বেঁধে ওপর থেকেই ফেলে দেয় ।
একটা শব্দ হয় ওটা শুনেই ওরা চম্পট দেয় গাড়িনিয়ে ।
ভোর তখন প্রায় ৫ টা । জোব্রা
ব্যারেজের ওপর প্রায় সকলেই মর্নিং ওয়াকে বেরন । হঠাৎ দুজন লোক , একটা গঁ গঁ শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ায় ! নিচে লক্ষ করেন একটা নারী র দেহ পেছন করা
অবস্থায় পডে আছে । সঙ্গে সঙ্গে পুলিস কে ফোন করা হয় ।
৬
মোবাইল পেট্রলিং ভ্যান চলে আসে । বডি কে অনেক
কষ্টে ওঠান হয় । ভগবানের দয়া তখন নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চলছে । মানে জীবনে বেঁচে আছে
। যন্ত্রণাতে মহিলাটি কাৎরাচ্ছে আর বয়ান লিখতে বলছে ইশারায় । অস্পষ্ট স্বরে বলে; জয়ন্ত মিশ্র, ভবতোশ মিশ্র জজের ছেলে তাকে গুণ্ডা দিয়ে এখানে ফেলে দেয় মেরে-ফেলার জন্য
। ওকে সঙ্গে সঙ্গে কটক মেডিকাল এ ভরতি করা হয় । ততক্ষণে সব মিডিয়া, নারী জাগরণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা , চলে আসেন । মিলি র
প্রায় মৄত্যুকালিন বয়ান রেকর্ড করা হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে জয়ন্ত কে এরেস্ট করা
হয় । মিলি এও বলে তার শাশুড়ী এবং শ্বশুর
তাকে সুপারি কিলার দিয়ে খুন করার জন্য মন্টুকে বলে । মন্টু ফেরার হলেও পরে ধরা
পডে পুলিসের হাতে । জজ সাহেব, তাঁর স্ত্রী এবং জয়ন্ত সকলকে
পুলিস এক ঘণ্টার মধ্যে এরেস্ট করে । কেউ জামিন পায় না। পরে সুপারি কিলার দুটো ধরা
পডে । কেস চলছে ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
No comments:
Post a Comment