রীতার ভাগ্য পরিবর্তন
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৮.০৫.২০১৫ / ০৬.৩৫
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
বিয়ের সানাই বাজছে । পাড়ার ছেলেদের হো হল্লা । রীতাদির বিয়ে। এই বছর মেয়েটি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিলাপ করেছিল। মেয়েটি স্কুলে ভালোই পড়ে । গ্রামের স্কুলের মালতী দিদিমণি , হেড মিস্ট্রেস , উনি অঙ্কের দিদিমণি । রীতাকে খুব ভালোবাসেন। রীতাকে ভাল ভাবে সব অঙ্ক বুঝিয়ে দেন। ওনার ধারনা এবারে স্কুলের রীতাই প্রথম হয়তো ৯০ শতাংশ মার্ক পেয়ে স্কুলের নাম রাখবে । অন্য দিদিমণিরাও মালতী দিদির অনুরোধে রীতাকে সমস্ত বিষয়গুলি ভালো ভাবে পড়াচ্ছিলেন। অঙ্ক, বিজ্ঞান , বাংলা , ইতিহাস , ভূগোল ,সংস্কৃত ....।
কিন্তু রীতার কপাল ! ওর বাবা কোথা থেকে এক পাঁড় মাতাল বর জুটিয়েছে । সে নাকি বিনা পণে রীতাকে বিয়ে করবে । রীতার বাবাকে আগাম দু হাজার টাকা দিয়েছে শাড়ী গয়না কেনার জন্য । রীতার বাবা নাছোড় বান্দা ওই বিয়ে দেবেই।
রীতা তার বাবাকে অনুনয় করে বিয়ে বন্দ করার জন্য । সারা দিন কাঁদে ।
বাবা বলেন , “বিয়ে না করে ওই পড়া করে কি দিগগজ হবি। কোথা থেকে টাকা পাবো পড়ানোর ?”
মা বলেন , “আমরা গরীব । বিনা পণে তোর বাবা পাত্র দেখেছেন । কাঁদিস না মা । বাবা মা’র কথা শুনে ঘর সংসার কর দেখবি সব দুঃখ দূর হবে”
চোদ্দ বছরের মেয়ে রীতা । ঘর সংসারের কি বোঝে ? তার এই অপরিপক্ব বয়েসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ বাল্য বিবাহ আইনের চোখে অপরাধ সে সেটা জানে । তবুও প্রতিবাদের উপায় নেই । দারিদ্র এমন ই সাংঘাতিক সামাজিক রোগ । এর কোন প্রতিকার কি নেই?
গ্রামের কিছু লোকদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা মেয়েটার বয়েস মোটে চোদ্দ পেরিয়ে পনেরো ।
“আজকাল কি এই বয়েসে মেয়ের বিয়ে দেয় !” প্রথম ব্যক্তি
“কি জানি বাপু !” দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে ।
সকলে বলে দুখী-রামের ভীমরতি হয়েছে । অমন সুন্দর মেয়ে । পড়া শুনোয় ভালো । তাকে কিনা জগু মাতালের হাতে তুলে দেবে? দিদিমণিরা বলছিলেন রীতা এবারে মাধ্যমিকে স্কুলের নাম রাখবে ।
এই সময় কোথা-থেকে এক মহিলা স্বেচ্ছা সেবী দল একটি গাড়ি নিয়ে হাজির ।ওনারা সঙ্গে পুলিশ এনেছেন । নিয়ম অনুযায়ী আঠারো বছরের কম বয়েসের মেয়ে নাবালিকা । নাবালিকার বিবাহ আইন সম্মত নয়। তাই পুলিশ রীতার বাবাকে বিয়ে বন্দ করতে বলে । ওই পাঁড় মাতাল জামাই বাবাজী এবং রীতার বাবাকে পুলিশের গাড়ীতে উঠতে বলে।
রীতা হতভম্ব হয় সব ব্যাপার দেখে । তার চোখের জল শুকিয়ে যায় । কান্না থামে। তবে সেত চায়না তার জন্য তার বাবাকে পুলিশে নিয়ে যাগ ।
ভাবার আগেই পুলিশের গাড়ী চলে যায়।
রীতার কাছে মহিলা স্বেচ্ছা সেবী , লিঙ্কন সুবুদ্ধি গিয়ে বলেন ,“ভয় পাওয়ার কিছু নেই মা । আমি লিঙ্কন সুবুদ্ধি । তোমার মতন আমার ও একদিন ওই সম দশা হয়েছিল । তুমি আমাদের সঙ্গে আমাদের হস্টেলে চল। তোমার সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করবেন। এখানে থাকলে আবার ওই লোকটি এসে তোমায় হয়রান করবে। তুমি জাননা তোমার গ্রামের স্কুলের মালতী দিদিমণি , হেড মিস্ট্রেস আমাদের ফোন করে সব জানান । উনি এও বলেন তোমাকে এখানে রাখলে বিপদ আছে।”
রীতা বলে , “কিন্তু আমার বাবা?”
..ও কিছু না । তুমি চলে গেলেই ওনাকে পুলিশ ছেড়ে দেবে। ওনার কাছ থেকে জবান বন্দী লিখিয়ে সই করিয়ে রাখা হবে।
রীতার মা গর রাজি হলেন । আবার পুলিশের ভয়ে রাজি হলেন।
রীতা চলে যায় লিঙ্কন সুবুদ্ধির সঙ্গে তাঁদের হস্টেলে। ওখানে অনেক কম বয়েসই মেয়ে আছে। সকলে পড়া শোনায় ব্যস্ত । রীতা এক নতুন জীবন সুরু করে।
আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে । চারটে বিষয়ে লেটার মার্ক্স পেয়ে রীতা পাস করেছে । লিঙ্কন তাকে নিজে গাইড করেছে । আজ রীতার চোখে আনন্দাশ্রু। তার মা’কে মনে পড়ছে । কিন্তু এখান থেকে ওদের গ্রাম যাওয়া মানা। এখানেই রীতার উচ্চ শিক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে। লিঙ্কনের ইচ্ছা সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক। ফিনান্সের অসুবিধা নেই। মিস লিঙ্কন সুবুদ্ধির মতন মহিলারা এগিয়ে এলেই এই দেশ থেকে বাল্য বিবাহর মূলোৎপাটন সম্ভব।
** মিস লিঙ্কন সুবুদ্ধি , দিল্লীতে “বাল্য বিবাহ” বন্ধকরার জন্য কিছু লোকের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছিলেন। পরে ভুবনেশ্বর ফিরে আসেন । এখানে এসে একটি মেয়েদের হস্টেল করে সেখানে গরীব মেধাবী মেয়েদের সম্পূর্ণ বিনা খরচায় ভালো হস্টেলে রেখে পড়ান। সরকারি সাহায্য ছাড়া অন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফান্ড যোগাড় করেন এবং ওই হস্টেলটি চালান।
No comments:
Post a Comment