তির্যক
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ১৪.০৮.২০১৪
আমার গল্পের নায়িকা উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের এক মহিলা। তিনি সর্ব গুণসম্পন্না এক ভারতীয় নারী। শিক্ষিতা, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও ওড়িশি নৃত্যেও পারদর্শী । বলতে গেলে প্রতিভাসম্পন্না নারী । তা সেই মেয়েটিকে নিয়ে আমার গল্প লেখা কেন ? তার মনে , আচরণে প্রেম-প্রীতির যে ছবি আমি দেখেছিলাম সেটাই আমার গল্প লেখার অনুপ্রেরণা । মেয়েটির নাম ‘পায়েল’ ।
ঘটনাটা এইরকম ..... পায়েল তখন ইংলিশ অনার্স নিয়ে স্কটিশে পড়ছে । এমনিতে পায়েল ভাল ছাত্রী ছিল তাই ওর অনার্স পেতে অসুবিধে হলনা। একজন স্কচ্ লেডী হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট নাম ম্যাডাম এডিনা । ম্যাডাম এডিনা সেদিন উইলিয়াম্ সেক্সপিয়ারের ‘ওথেলোর‘ ক্লাস্ নিচ্ছিলেন । সুস্পষ্ট উচ্চারণ। ভদ্রমহিলা সেক্সপিয়ারের ড্রামা গুলে খেয়েছেন পড়ানোর ধরন থেকেই সহজে অনুমেয় ।
সকলে মন্ত্রমুগ্ধর মতন শুনছিল । পায়েল , ম্যাডাম এর ট্যুটোরিয়াল ক্লাসে কিছু প্রশ্ন করে, “কবে এবং কোথায় প্রথম ওথেলো ষ্টেজে দেখান হয় ইত্যাদি” । হঠাৎ কলেজের ঘণ্টা বাজে । ছেলে মেয়েরা ক্লাস থেকে বেরোয় । পায়েল তখন ঘোরে রয়েছে , শুধু ডেসডেমনার কথা ভাবছে । এই সময় ও’র প্রতীকের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসেই দেখা হয় ।
প্রতীক খুব সাধারণ ছেলে । কিছুটা ভাবুক ভাবুক কবি কবি ভাব । পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী কাঁধে ব্যাগ । প্রতীক এপ্লায়েড ইকনমিক্স নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে এম.এ. ফাইনাল ইয়ারে । নিজের পড়ার খরচ টিউশনি করে মেটায় । বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন । যৎ সামান্য রোজগারে সংসার খুব কষ্টেই চলে । নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে প্রতীক। এসব ছেলেদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করে বড় হতে হয় । এরা খুব একটা মেয়েদের সঙ্গে মেলা মেশা করে না। যদিও করে খুব মেপে জুপে কারন ওদের পকেট প্রায় ‘গড়ের মাঠ’ । একটিভ পার্টি পলিটিক্সে থাকে কিন্তু নিজেকে সে ভাবে জড়িয়ে রাখে না । প্রখর বুদ্ধি এবং বিচার শক্তি থাকে। কচু পাতার ওপর জল ভাসার মতন এদের প্রেম । নিজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া অবধি এদের কাছে প্রেম-প্রীতি- ভালোবাসা এক বিলাসিতা ! তবে নারী সঙ্গতে আপত্তি থাকে না !!
এবার প্রসঙ্গে আসিঃ
- আজ কোথায় যাবে ? পায়েলের প্রশ্ন তে প্রতীক বিব্রত হয়ে পডে !
- ও ! হ্যাঁ তুমি ? না কোথাও নয় । সন্ধ্যে বেলায় টিউশন আছে । লোকালে যেতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট । কথাগুলো অন্যমনস্ক ভাবে প্রতীক বলে ।
- আজ ভিক্টোরিয়া যাবে ?
- না । আমার অন্য কাজ আছে । কলেজ ষ্ট্রীটে কিছু পুরনো বই কিনতে যাব।
- চল না আমিও যাই সঙ্গে, আমার তো ওই দিকেই বাড়ী ।
প্রতীক পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখল কিছু খুচরো টাকা আছে । একটা সিগারেট - খেলে বাকি থাকছে ৫৫ টাকার মতন। ...। বইটার দাম টা৫০কা তো হবেই ...! হাতে কিছুই থাকছে না ....!!
- কি ভাবছ অত । চল তো । বাস এসে গেল।
- ওটাতো কলেজ স্ট্রীট যাবে ।
- হ্যাঁ আমিও ওই দিকেই যাব । নাও উঠে পড় ।
মন্ত্র মুগ্ধের মতন উঠে পড়লো প্রতীক । বাস ভাড়াটা প্রতীক দিতে যাচ্ছিল কন্ডাক্টর পেছনে ঈশারা করে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করল। বাস ভাড়াটা কেন ও দিল ? আত্মসম্মানে বাধে । খুব বাজে লাগলো । কলেজ স্ট্রীট বাটার কাছে নেমে দুজনে হাঁটা দিল ।
- তুমি কিন্তু এটা ভারি অন্যায় করলে ! প্রতীক খুব অপ্রস্তুতে পড়ার মতন বলল !
- ছাড় তো ! ও আমাকে পরে পুষিয়ে দেবেখন , তুমি কি যেন বই এর কথা বলছিলে না ?
- প্রডাকশন ইকনমিক্সের বই ।
- আজকাল ইন্টারনেট থেকে অনেকে বই ডাউন-লোড করে পড়ে ।
- হ্যাঁ তা করে তবে আমার কিছু অন্য প্রয়োজন আছে ।
- কাউকে কি গিফট দেবে ?
- হ্যাঁ !
- কাকে ?
- আমার এক ছাত্রী কে ।
মুখটা লাল হয়ে গেল পায়েলের । খুব অপমান বোধ হল। আসলে প্রায় মেয়েরাই ওই এক ই কপ্লেক্সে ভোগে । মোটেই অন্য মেয়ের সংস্পর্শে তার প্রিয়তম কে আসতে দেয় না । সে ছাত্রী ই হোক কিম্বা অন্য কেউ হোক... নিছক সন্দেহ বাতিক থেকেই যায় । মনে জাগে অনেক প্রশ্ন...।
ঘটনা চক্রে প্রতীক খুব গম্ভীর ভাবে বলে বসে,“ও কিন্তু আমার মামাতো বোন পিয়ালী। ওর বইটা দরকার । আমাকে আসার সময় বলেছিল আনতে । আসলে ও আমার জন্যই ইকনমিক্স অনার্স নিয়েছে তাই ওর আবদার আমাকে রাখতেই হবে”।
কথাগুলো শোনার পর পায়েলের গালে যেন কেউ ঠাস করে একটা চড় মারল বলে তার মনে হল। প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো, “না না আমি এমনি জিজ্ঞাসা করছিলাম”।
ব্যাপারটা ঠাওরাতে প্রতীকের খুব একটা অসুবিধে হল না !
ও আসলে জানতো এই কথায় পায়েল একটু রাগ অভিমান করবে আর মিথ্যে সন্দেহ করবে যেটার মজা ও নেবে।
- তোমার কিন্তু এটা ভারি অন্যায় । আমাকে বলবে ত !
- কি বলব ? ...ও ওহ... !! হেঁসে ফেলে প্রতীক ।
- খুব না ! চোখে জল আসে পায়েলের। “আমাকে রাগাতে আর অপমান করতে তোমার এতটুকু খারাপ লাগে না” ?
- এতে অপমানের কি হল ? পিয়ালী আমার ছোট বোন ।
- কই আমাকে তো কোনদিন বলনি ওর কথা ।
- কি মুস্কিল । সব কথা কি বলা যায় ! না প্রয়োজন আছে বলার !
মিথ্যে অভিমানে পায়েল আলতো করে চাঁটি মারে প্রতীকের বাঁ হাতে । দুজনের কথোপকথনে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে । প্রতীক অপ্রস্তুত হয়ে বলে , “এখন থেকেই শাসন করবে তুমি”। হ্যাঁ কারণ তুমি শুধু আমার .. আর কারুর নয় ..’
- ওকে বস। ..... আমার বাস এসে গেছে বাই । এরকম অপ্রস্তুত মুহূর্তে পায়েল পড়বে ভাবতেও পারেনি।
কয়েকদিন পরে ...
কফি হাউসে কফির পেয়ালায় মুখ দিয়ে বসে আছে প্রতীক সঙ্গে বন্ধু রনবীর আরও দুজন। পার্টি আর খেলার কথাই বেশি হয় এখানে । হঠাৎ পায়েলের নাম্বার থেকে কল এলো প্রতীকের মোবাইলে ।
-কোথায় আছো ?
কেন?
- এখুনি এস আউট-রাম ঘাটে । খুব দরকার ।
- আমার হাতে সময় নেই একদম। প্রতীক কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ফোন কেটে গেল। বাসে যেতে হলে এক ঘণ্টা লেগে যাবে, তাও বেরিয়ে পড়ল । কি হতে পারে ভেবে কূলকিনারা পেল না। মধ্যেখানে আবার ফোন ।
- কি তুমি বেরিয়েছ ?
- হ্যাঁ রে বাবা । কি হয়েছে বল-বেতো !
- এলেই জানবে ।
আউট-রাম ঘাট আস্তেই বাস থেকে নেমে পূর্ব পরিচিত স্থানে পৌঁছে দেখে পায়েল একটা বেঞ্চে বসে গঙ্গা দেখছে । জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতীর ভীড় । সকলে মসগুল নিজের প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে গল্প করতে । প্রতীক কে দেখে হাতে স্বর্গ পাওয়ার মত লাগলো পায়েলর । দৌড়ে এসে প্রতীক কে জডিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ।
- একি ছেলেমানুষি ! ছাড় । কি হয়েছে বল ? একটু অপ্রস্তুত বোধ করে ।
- কি না হয়েছে বল ! বাপী আমার বিয়ের ঠিক করেছেন এক সফট্ ওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ।
- কংগ্রাচুলেসন।
- তোমার বলতে লজ্জা করেনা ? শালা বাঁদর আমাকে নিয়ে ছেলে খেলা ! মহিলার মুখে ‘শালা’ শব্দ টা শুনে চমকে গেলেও আশ্চর্য হলনা কারণ এর আগেও একবার শুনেছে । কথাটার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলল ঃ
- রিল্যাক্স্ বেবি রিল্যাক্স্ !
- চল আমরা বিয়ে সেরে ফেলি কোথাও । আমরা দুজনেই এডাল্ট্ । আইনের দিক থেকে কোন অসুবিধে নেই।
- খেপেছ ! আমি একটা বেকার ছেলে , আমার মা বাবা আমাকে তেজ্য পুত্র করে দেবেন এসব শুনলে । তাছাড়া আমার নিচে বোন আছে ওর ভবিষ্যৎ কি হবে ? মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে আমাকে। এত উতলা হলে চলবে না আমার। তোমাকে জীবন সঙ্গিনী করার কোন বাধা নেই কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করা কে আমি কাপুরুষতার পর্য্যায়ে ফেলি । ওটা ভীরুতার লক্ষণ । খুব বাজে ব্যাপার । আমি তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমিত কিছু অন্যায় করিনি.......!
....... ওরে আমার বীরপুরুষ রে ! হুঁ ! আমার বাপীকে ত চেনোনা ! উনি বাপীর সঙ্গে দেখা করবেন ! তার আগে বাপী তোমাকে লক আপে ভরে দিন আর আমি ওই ভোঁদাইয়ের সঙ্গে ...... । ফটো টা দেখেছি । কি বিচ্ছিরি ম্যাগো । আমি পারবোনা ওই ভোঁদাইয়ের সঙ্গে থাকতে । তুমি এক্ষুনি কিছু কর । তুমি না পুরুষ মানুষ ?
এই ! এটাই মহিলাদের প্রধান অস্ত্র ! প্রতীক জানে মহিলারা পুরুষদের পৌরুষত্বে আঘাৎ দিয়ে কথা বলে , যখন কিনা , তারা কোন কাজ সহজে তাদের দিয়ে হাসিল করাতে চায় , কিংবা যখন বিপাকে পড়ে । এখন ও কোন কথা শোনার মুডে নেই । কারন ওকে ডক্টরেট করতেগেলে এসব ছেঁদ কথায় মন দিলে ওর লক্ষ্য পুরন হবে না ।
কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একটা সাদা রঙের স্করপিও এসে থামল । পায়েল গাড়ীটা দেখেই আঁতকে ওঠে । ও সঙ্গে সঙ্গে প্রতীকের হাথ ধরে এক হ্যাঁচকা টান দেয় । প্রতীক কিছু বোঝার আগেই এক বলিষ্ঠ ব্যাক্তিত্বের সুটেড বুটেড মাঝ বয়েসি ভদ্রলোক এসে ওকে বলে , ‘আপনি কি প্রতীক চৌধুরী’ ?
- আজ্ঞে হ্যাঁ । কিছু প্রয়োজন আছে ?
- প্রয়োজন না থাকলে কি এখানে আপনার কাছে আসি । আপনি কি করেন ?
- আমি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটীর ছাত্র ; এই বছর এপ্পলায়েড ইকনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রীর ফাইনাল দেব ।
- ও বেকার ! ইন্টেরেস্টিং । বাবা কি করেন?
প্রতিকের পাল্টা প্রশ্নঃ আপনার পরিচয় ? আপনি আমাকে এত সব প্রশ্ন করছেন কেন?
- আমি ! আমি পায়েলের বাবা , নৃসিংহ চক্রবর্তী , আই.পি.এস্ । তুমি আমার নাম শোননি ? আমি কমিশনার, ইন্টেলিজেন্স্ , কোলকাতা পুলিস্ । শোন নি আমার নাম ? স্ট্রেঞ্জ্ । একটা বিদ্রূপের হাঁসি মুখে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন । তোমার জানা উচিৎ ছিল ।
- আমি অর্থনীতির ছাত্র পুলিসের খবর রেখে কি হবে আমার ? আপনি আমাকে বেকার কেন বলছেন ? আমার তো পড়া শেষ হয়নি এখনও । পড়া শেষ করে ডক্টরেট্ করবো । আমি ইউনিভারসিটিতে ফার্স্ট হয়ে ছিলাম অনার্সে । তাছাড়া আপনি আমার বাবাকে টানছেন কেন এর মধ্যে ! নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অবধি আমি আমার কোন ব্যাপারে সিধ্যান্ত নব না ।
- ইয়ং ম্যান প্রেম করার আগে আপনার যাচাই করা উচিৎ ছিল আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে কিনা ! আমার মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন , কিন্তু বিয়ে ? ইম্পসিবল্ । আপনি ত অর্থনীতির ছাত্র এটুকু আপনার কাছ থেকে আশা করেছিলাম। ওয়েল্ মাই বয় মাইন্ড ইওর স্টাডিস্ । ফার্স্ট এস্টাব্লিস্ ইয়োরসেলফ্ ইন দি সোসাইটি দেন থিংক অফ্ ম্যারেজ্। ওকে । ফরগেট্ হার সি ইস এ বেবি । স্টিল এ বেবি মাই বয় । গুড লাক্ । পায়েল থর থর করে কাঁপছিল ওর বাবা ওকে কাছে ডেকে বললেন, “আয় মা আমার কাছে আয়। শুনলিতো সব” ।
পায়েলের মুখ দিয়ে একটা কথাই বেরুল প্রতীকের উদেশ্যে .... কাওয়ার্ড.... কাপুরুষ... আমার সঙ্গে প্রতারণা । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পায়েল। বাবার সঙ্গে গাডিতে গিয়ে ওঠে ।
প্রতীক একটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করে উদাস মনে আকাশের দিকে তাকায় আর এক রাশ ধোঁয়া মুখে নিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নেয় । তার পর প্রতীকের সঙ্গে আর পায়েলের দেখা হয় নি ।
পনের বছর পর ......
এরপর প্রায় ১৫ বছর কেটে গিয়েছে । প্রতীক এখন ইউনিভারসিটির এপ্লায়েড ইকনমিক্সের প্রফেসার । ডক্টর প্রতীক চৌধুরী । ওর ছাত্র ছাত্রীরা ওকে সম্মান করে । ওর কিন্তু ওই এক সাদা মাটা মাষ্টারী পোশাক , পায়জামা পাঞ্জাবী,ফ্রেঞ্চ কাট দাডী ,ঠোঁটে সিগারেট্ আর ভাবুক ভাবুক চেহারা । ওর বিয়ে হয় ওরই এক ছাত্রীর সঙ্গে নাম মধুমিতা সান্যাল ।
পায়েল জীবনে সুখি হল কিনা জানিনা । ওর বিয়ে হয়ে যায় সেই সফট্ওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। ওই বিয়েতে পায়েলের কোন মতা মতের ধার ধারেনি ওর বাবোর। পায়েলের মা অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেন , কিন্তু কিছু ফল হয়নি । পায়েলের কথায় সেই ভোঁদাইয়ের সঙ্গেই োর বিয়ে হয়ে যায় । পায়েল একদমই পছন্দ করে না ওকে স্বামী হিসেবে। রাত দিন খটা খটি লেগেই থাকে । এর মধ্যে ওর মা মারা যান । বাবার রিটায়ারমেন্টের পর দুটো স্ট্রোক্ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন । পায়েল দেখা শোনা করে । বাবা বুঝতে পারেন মেয়ের মনের ব্যাথা । দু চোখ বেয়ে জল গডায় । পুরান দিনের স্মৃতি রোমন্থনে আর কোন লাভ নেই । একমাত্র মেয়ে, এতো টাকা পয়সা থেকেও শান্তিতে নেই তার কারণ তার মনের মতন বর পায়নি । যাকে পেল সে গ্রহণ যোগ্য নয় । পাঁড় মাতাল এক উচ্ছৃঙ্খল যুবক তার আরেকটি মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক যেনে স্বামীকে ঘৃণা করে পায়েল। কিছু উপায় নেই। নিয়তির নিয়ম। মেনে নেয় সব কিছু । আজও প্রতীকের কথা মনে পড়ে । সেই রোগা লম্বা চেহারার ভাবুক ভাবুক লোকটি কাঁধে ব্যাগ আর ঠোঁটে সিগারেট্ । সব সময় অন্যমনস্ক কি যেন ভাবে ? এখন প্রতীক কি করছে ? ও কেমন আছে জানতে ইচ্ছে হয় পায়েলের । ওকে কি মনে রেখেছে ? মনটা ডুকরে কেঁদে ওঠে । কি হবে ওর কথা ভেবে ?
ঘটনাটা এইরকম ..... পায়েল তখন ইংলিশ অনার্স নিয়ে স্কটিশে পড়ছে । এমনিতে পায়েল ভাল ছাত্রী ছিল তাই ওর অনার্স পেতে অসুবিধে হলনা। একজন স্কচ্ লেডী হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট নাম ম্যাডাম এডিনা । ম্যাডাম এডিনা সেদিন উইলিয়াম্ সেক্সপিয়ারের ‘ওথেলোর‘ ক্লাস্ নিচ্ছিলেন । সুস্পষ্ট উচ্চারণ। ভদ্রমহিলা সেক্সপিয়ারের ড্রামা গুলে খেয়েছেন পড়ানোর ধরন থেকেই সহজে অনুমেয় ।
সকলে মন্ত্রমুগ্ধর মতন শুনছিল । পায়েল , ম্যাডাম এর ট্যুটোরিয়াল ক্লাসে কিছু প্রশ্ন করে, “কবে এবং কোথায় প্রথম ওথেলো ষ্টেজে দেখান হয় ইত্যাদি” । হঠাৎ কলেজের ঘণ্টা বাজে । ছেলে মেয়েরা ক্লাস থেকে বেরোয় । পায়েল তখন ঘোরে রয়েছে , শুধু ডেসডেমনার কথা ভাবছে । এই সময় ও’র প্রতীকের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসেই দেখা হয় ।
প্রতীক খুব সাধারণ ছেলে । কিছুটা ভাবুক ভাবুক কবি কবি ভাব । পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী কাঁধে ব্যাগ । প্রতীক এপ্লায়েড ইকনমিক্স নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে এম.এ. ফাইনাল ইয়ারে । নিজের পড়ার খরচ টিউশনি করে মেটায় । বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন । যৎ সামান্য রোজগারে সংসার খুব কষ্টেই চলে । নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে প্রতীক। এসব ছেলেদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করে বড় হতে হয় । এরা খুব একটা মেয়েদের সঙ্গে মেলা মেশা করে না। যদিও করে খুব মেপে জুপে কারন ওদের পকেট প্রায় ‘গড়ের মাঠ’ । একটিভ পার্টি পলিটিক্সে থাকে কিন্তু নিজেকে সে ভাবে জড়িয়ে রাখে না । প্রখর বুদ্ধি এবং বিচার শক্তি থাকে। কচু পাতার ওপর জল ভাসার মতন এদের প্রেম । নিজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া অবধি এদের কাছে প্রেম-প্রীতি- ভালোবাসা এক বিলাসিতা ! তবে নারী সঙ্গতে আপত্তি থাকে না !!
এবার প্রসঙ্গে আসিঃ
- আজ কোথায় যাবে ? পায়েলের প্রশ্ন তে প্রতীক বিব্রত হয়ে পডে !
- ও ! হ্যাঁ তুমি ? না কোথাও নয় । সন্ধ্যে বেলায় টিউশন আছে । লোকালে যেতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট । কথাগুলো অন্যমনস্ক ভাবে প্রতীক বলে ।
- আজ ভিক্টোরিয়া যাবে ?
- না । আমার অন্য কাজ আছে । কলেজ ষ্ট্রীটে কিছু পুরনো বই কিনতে যাব।
- চল না আমিও যাই সঙ্গে, আমার তো ওই দিকেই বাড়ী ।
প্রতীক পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখল কিছু খুচরো টাকা আছে । একটা সিগারেট - খেলে বাকি থাকছে ৫৫ টাকার মতন। ...। বইটার দাম টা৫০কা তো হবেই ...! হাতে কিছুই থাকছে না ....!!
- কি ভাবছ অত । চল তো । বাস এসে গেল।
- ওটাতো কলেজ স্ট্রীট যাবে ।
- হ্যাঁ আমিও ওই দিকেই যাব । নাও উঠে পড় ।
মন্ত্র মুগ্ধের মতন উঠে পড়লো প্রতীক । বাস ভাড়াটা প্রতীক দিতে যাচ্ছিল কন্ডাক্টর পেছনে ঈশারা করে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করল। বাস ভাড়াটা কেন ও দিল ? আত্মসম্মানে বাধে । খুব বাজে লাগলো । কলেজ স্ট্রীট বাটার কাছে নেমে দুজনে হাঁটা দিল ।
- তুমি কিন্তু এটা ভারি অন্যায় করলে ! প্রতীক খুব অপ্রস্তুতে পড়ার মতন বলল !
- ছাড় তো ! ও আমাকে পরে পুষিয়ে দেবেখন , তুমি কি যেন বই এর কথা বলছিলে না ?
- প্রডাকশন ইকনমিক্সের বই ।
- আজকাল ইন্টারনেট থেকে অনেকে বই ডাউন-লোড করে পড়ে ।
- হ্যাঁ তা করে তবে আমার কিছু অন্য প্রয়োজন আছে ।
- কাউকে কি গিফট দেবে ?
- হ্যাঁ !
- কাকে ?
- আমার এক ছাত্রী কে ।
মুখটা লাল হয়ে গেল পায়েলের । খুব অপমান বোধ হল। আসলে প্রায় মেয়েরাই ওই এক ই কপ্লেক্সে ভোগে । মোটেই অন্য মেয়ের সংস্পর্শে তার প্রিয়তম কে আসতে দেয় না । সে ছাত্রী ই হোক কিম্বা অন্য কেউ হোক... নিছক সন্দেহ বাতিক থেকেই যায় । মনে জাগে অনেক প্রশ্ন...।
ঘটনা চক্রে প্রতীক খুব গম্ভীর ভাবে বলে বসে,“ও কিন্তু আমার মামাতো বোন পিয়ালী। ওর বইটা দরকার । আমাকে আসার সময় বলেছিল আনতে । আসলে ও আমার জন্যই ইকনমিক্স অনার্স নিয়েছে তাই ওর আবদার আমাকে রাখতেই হবে”।
কথাগুলো শোনার পর পায়েলের গালে যেন কেউ ঠাস করে একটা চড় মারল বলে তার মনে হল। প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো, “না না আমি এমনি জিজ্ঞাসা করছিলাম”।
ব্যাপারটা ঠাওরাতে প্রতীকের খুব একটা অসুবিধে হল না !
ও আসলে জানতো এই কথায় পায়েল একটু রাগ অভিমান করবে আর মিথ্যে সন্দেহ করবে যেটার মজা ও নেবে।
- তোমার কিন্তু এটা ভারি অন্যায় । আমাকে বলবে ত !
- কি বলব ? ...ও ওহ... !! হেঁসে ফেলে প্রতীক ।
- খুব না ! চোখে জল আসে পায়েলের। “আমাকে রাগাতে আর অপমান করতে তোমার এতটুকু খারাপ লাগে না” ?
- এতে অপমানের কি হল ? পিয়ালী আমার ছোট বোন ।
- কই আমাকে তো কোনদিন বলনি ওর কথা ।
- কি মুস্কিল । সব কথা কি বলা যায় ! না প্রয়োজন আছে বলার !
মিথ্যে অভিমানে পায়েল আলতো করে চাঁটি মারে প্রতীকের বাঁ হাতে । দুজনের কথোপকথনে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে । প্রতীক অপ্রস্তুত হয়ে বলে , “এখন থেকেই শাসন করবে তুমি”। হ্যাঁ কারণ তুমি শুধু আমার .. আর কারুর নয় ..’
- ওকে বস। ..... আমার বাস এসে গেছে বাই । এরকম অপ্রস্তুত মুহূর্তে পায়েল পড়বে ভাবতেও পারেনি।
কয়েকদিন পরে ...
কফি হাউসে কফির পেয়ালায় মুখ দিয়ে বসে আছে প্রতীক সঙ্গে বন্ধু রনবীর আরও দুজন। পার্টি আর খেলার কথাই বেশি হয় এখানে । হঠাৎ পায়েলের নাম্বার থেকে কল এলো প্রতীকের মোবাইলে ।
-কোথায় আছো ?
কেন?
- এখুনি এস আউট-রাম ঘাটে । খুব দরকার ।
- আমার হাতে সময় নেই একদম। প্রতীক কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ফোন কেটে গেল। বাসে যেতে হলে এক ঘণ্টা লেগে যাবে, তাও বেরিয়ে পড়ল । কি হতে পারে ভেবে কূলকিনারা পেল না। মধ্যেখানে আবার ফোন ।
- কি তুমি বেরিয়েছ ?
- হ্যাঁ রে বাবা । কি হয়েছে বল-বেতো !
- এলেই জানবে ।
আউট-রাম ঘাট আস্তেই বাস থেকে নেমে পূর্ব পরিচিত স্থানে পৌঁছে দেখে পায়েল একটা বেঞ্চে বসে গঙ্গা দেখছে । জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতীর ভীড় । সকলে মসগুল নিজের প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে গল্প করতে । প্রতীক কে দেখে হাতে স্বর্গ পাওয়ার মত লাগলো পায়েলর । দৌড়ে এসে প্রতীক কে জডিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ।
- একি ছেলেমানুষি ! ছাড় । কি হয়েছে বল ? একটু অপ্রস্তুত বোধ করে ।
- কি না হয়েছে বল ! বাপী আমার বিয়ের ঠিক করেছেন এক সফট্ ওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ।
- কংগ্রাচুলেসন।
- তোমার বলতে লজ্জা করেনা ? শালা বাঁদর আমাকে নিয়ে ছেলে খেলা ! মহিলার মুখে ‘শালা’ শব্দ টা শুনে চমকে গেলেও আশ্চর্য হলনা কারণ এর আগেও একবার শুনেছে । কথাটার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলল ঃ
- রিল্যাক্স্ বেবি রিল্যাক্স্ !
- চল আমরা বিয়ে সেরে ফেলি কোথাও । আমরা দুজনেই এডাল্ট্ । আইনের দিক থেকে কোন অসুবিধে নেই।
- খেপেছ ! আমি একটা বেকার ছেলে , আমার মা বাবা আমাকে তেজ্য পুত্র করে দেবেন এসব শুনলে । তাছাড়া আমার নিচে বোন আছে ওর ভবিষ্যৎ কি হবে ? মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে আমাকে। এত উতলা হলে চলবে না আমার। তোমাকে জীবন সঙ্গিনী করার কোন বাধা নেই কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করা কে আমি কাপুরুষতার পর্য্যায়ে ফেলি । ওটা ভীরুতার লক্ষণ । খুব বাজে ব্যাপার । আমি তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমিত কিছু অন্যায় করিনি.......!
....... ওরে আমার বীরপুরুষ রে ! হুঁ ! আমার বাপীকে ত চেনোনা ! উনি বাপীর সঙ্গে দেখা করবেন ! তার আগে বাপী তোমাকে লক আপে ভরে দিন আর আমি ওই ভোঁদাইয়ের সঙ্গে ...... । ফটো টা দেখেছি । কি বিচ্ছিরি ম্যাগো । আমি পারবোনা ওই ভোঁদাইয়ের সঙ্গে থাকতে । তুমি এক্ষুনি কিছু কর । তুমি না পুরুষ মানুষ ?
এই ! এটাই মহিলাদের প্রধান অস্ত্র ! প্রতীক জানে মহিলারা পুরুষদের পৌরুষত্বে আঘাৎ দিয়ে কথা বলে , যখন কিনা , তারা কোন কাজ সহজে তাদের দিয়ে হাসিল করাতে চায় , কিংবা যখন বিপাকে পড়ে । এখন ও কোন কথা শোনার মুডে নেই । কারন ওকে ডক্টরেট করতেগেলে এসব ছেঁদ কথায় মন দিলে ওর লক্ষ্য পুরন হবে না ।
কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একটা সাদা রঙের স্করপিও এসে থামল । পায়েল গাড়ীটা দেখেই আঁতকে ওঠে । ও সঙ্গে সঙ্গে প্রতীকের হাথ ধরে এক হ্যাঁচকা টান দেয় । প্রতীক কিছু বোঝার আগেই এক বলিষ্ঠ ব্যাক্তিত্বের সুটেড বুটেড মাঝ বয়েসি ভদ্রলোক এসে ওকে বলে , ‘আপনি কি প্রতীক চৌধুরী’ ?
- আজ্ঞে হ্যাঁ । কিছু প্রয়োজন আছে ?
- প্রয়োজন না থাকলে কি এখানে আপনার কাছে আসি । আপনি কি করেন ?
- আমি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটীর ছাত্র ; এই বছর এপ্পলায়েড ইকনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রীর ফাইনাল দেব ।
- ও বেকার ! ইন্টেরেস্টিং । বাবা কি করেন?
প্রতিকের পাল্টা প্রশ্নঃ আপনার পরিচয় ? আপনি আমাকে এত সব প্রশ্ন করছেন কেন?
- আমি ! আমি পায়েলের বাবা , নৃসিংহ চক্রবর্তী , আই.পি.এস্ । তুমি আমার নাম শোননি ? আমি কমিশনার, ইন্টেলিজেন্স্ , কোলকাতা পুলিস্ । শোন নি আমার নাম ? স্ট্রেঞ্জ্ । একটা বিদ্রূপের হাঁসি মুখে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন । তোমার জানা উচিৎ ছিল ।
- আমি অর্থনীতির ছাত্র পুলিসের খবর রেখে কি হবে আমার ? আপনি আমাকে বেকার কেন বলছেন ? আমার তো পড়া শেষ হয়নি এখনও । পড়া শেষ করে ডক্টরেট্ করবো । আমি ইউনিভারসিটিতে ফার্স্ট হয়ে ছিলাম অনার্সে । তাছাড়া আপনি আমার বাবাকে টানছেন কেন এর মধ্যে ! নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অবধি আমি আমার কোন ব্যাপারে সিধ্যান্ত নব না ।
- ইয়ং ম্যান প্রেম করার আগে আপনার যাচাই করা উচিৎ ছিল আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে কিনা ! আমার মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন , কিন্তু বিয়ে ? ইম্পসিবল্ । আপনি ত অর্থনীতির ছাত্র এটুকু আপনার কাছ থেকে আশা করেছিলাম। ওয়েল্ মাই বয় মাইন্ড ইওর স্টাডিস্ । ফার্স্ট এস্টাব্লিস্ ইয়োরসেলফ্ ইন দি সোসাইটি দেন থিংক অফ্ ম্যারেজ্। ওকে । ফরগেট্ হার সি ইস এ বেবি । স্টিল এ বেবি মাই বয় । গুড লাক্ । পায়েল থর থর করে কাঁপছিল ওর বাবা ওকে কাছে ডেকে বললেন, “আয় মা আমার কাছে আয়। শুনলিতো সব” ।
পায়েলের মুখ দিয়ে একটা কথাই বেরুল প্রতীকের উদেশ্যে .... কাওয়ার্ড.... কাপুরুষ... আমার সঙ্গে প্রতারণা । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পায়েল। বাবার সঙ্গে গাডিতে গিয়ে ওঠে ।
প্রতীক একটা সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করে উদাস মনে আকাশের দিকে তাকায় আর এক রাশ ধোঁয়া মুখে নিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নেয় । তার পর প্রতীকের সঙ্গে আর পায়েলের দেখা হয় নি ।
পনের বছর পর ......
এরপর প্রায় ১৫ বছর কেটে গিয়েছে । প্রতীক এখন ইউনিভারসিটির এপ্লায়েড ইকনমিক্সের প্রফেসার । ডক্টর প্রতীক চৌধুরী । ওর ছাত্র ছাত্রীরা ওকে সম্মান করে । ওর কিন্তু ওই এক সাদা মাটা মাষ্টারী পোশাক , পায়জামা পাঞ্জাবী,ফ্রেঞ্চ কাট দাডী ,ঠোঁটে সিগারেট্ আর ভাবুক ভাবুক চেহারা । ওর বিয়ে হয় ওরই এক ছাত্রীর সঙ্গে নাম মধুমিতা সান্যাল ।
পায়েল জীবনে সুখি হল কিনা জানিনা । ওর বিয়ে হয়ে যায় সেই সফট্ওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। ওই বিয়েতে পায়েলের কোন মতা মতের ধার ধারেনি ওর বাবোর। পায়েলের মা অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেন , কিন্তু কিছু ফল হয়নি । পায়েলের কথায় সেই ভোঁদাইয়ের সঙ্গেই োর বিয়ে হয়ে যায় । পায়েল একদমই পছন্দ করে না ওকে স্বামী হিসেবে। রাত দিন খটা খটি লেগেই থাকে । এর মধ্যে ওর মা মারা যান । বাবার রিটায়ারমেন্টের পর দুটো স্ট্রোক্ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন । পায়েল দেখা শোনা করে । বাবা বুঝতে পারেন মেয়ের মনের ব্যাথা । দু চোখ বেয়ে জল গডায় । পুরান দিনের স্মৃতি রোমন্থনে আর কোন লাভ নেই । একমাত্র মেয়ে, এতো টাকা পয়সা থেকেও শান্তিতে নেই তার কারণ তার মনের মতন বর পায়নি । যাকে পেল সে গ্রহণ যোগ্য নয় । পাঁড় মাতাল এক উচ্ছৃঙ্খল যুবক তার আরেকটি মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক যেনে স্বামীকে ঘৃণা করে পায়েল। কিছু উপায় নেই। নিয়তির নিয়ম। মেনে নেয় সব কিছু । আজও প্রতীকের কথা মনে পড়ে । সেই রোগা লম্বা চেহারার ভাবুক ভাবুক লোকটি কাঁধে ব্যাগ আর ঠোঁটে সিগারেট্ । সব সময় অন্যমনস্ক কি যেন ভাবে ? এখন প্রতীক কি করছে ? ও কেমন আছে জানতে ইচ্ছে হয় পায়েলের । ওকে কি মনে রেখেছে ? মনটা ডুকরে কেঁদে ওঠে । কি হবে ওর কথা ভেবে ?
কলেজ স্ট্রীট বইয়ের দোকানের সামনেঃ-
কলেজ স্ট্রীটে বইয়ের দোকানে নতুন মারুতি ডিজায়ার গাড়ী থেকে নেমে হঠাৎ এক পায়জামা পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক কে দেখে চিনে ফেলে পায়েল । বেশ কদিন আমেরিকার ডালাসে ছিল ওর স্বামীর সঙ্গে । অনেক দিন কলেজ স্ট্রীটে আসা হয় নি । কিন্তু ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি , চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর মন দিয়ে দেখছে কিছু পুরনো বই যে ভদ্রলোক ; সে যে প্রতীক তা ঠাওরাতে অসুবিধে হলনা । কাছে যাওয়ার সাহস হলনা । আবার মনে মনে লোকটার প্রতি আবেগ এলেও সেটা চেপে রাখল । মনের ভেতরটা ডুকরে উঠলো । মনে হল ঠাস করে গিয়ে গালে একটা চাঁটি মারি । অপদার্থ কাপুরুষ !! আবার নিজেকে সামলে নিল এ কি ভাবছে সে ? এঁর জন্যে-ইতো বসে আছে পথ চেয়ে কবে হবে তার সঙ্গে দেখা? ইনি তো তার মনের মানুষ !! আজ সেই ভ্যালেন্টাইন ডে । কিন্তু প্রতীক ওই সব একদম পছন্দ করতনা ! সে কি যাবে ওর কাছে ? ও কি চিনবে? যদি না চেনে ? চিনেও না চেনার ভান করে তাহলে লজ্জা ঘেন্নায় নিজেকে ছোট করবে ওর কাছে ? ওর প্রেম প্রীতি ভালবাসা তার কি কোন দাম নেই? রাবণের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছে পায়েল । সে যখন পশুর মতন তার শরীরটাকে ছিঁড়ে খায় মনে হয় যেন ড্রাকুলা তার ধারল দাঁত দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করছে তার শরীরটাকে । কি নিয়ে দাঁড়াবে প্রতীকের কাছে ?বলবে প্রতীক আমি তোমাকে এখনো ভালবাসি । বলে কি লাভ ? ওকি মূল্য দেবে সেই ভালবাসার । ওকি জানে নারীর মনে যে প্রথম পুরুষ আসে সেই তার মনে আঁচড় দিয়ে যায়, যার ক্ষত ; ক্ষত বিক্ষত করলেও সে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে । স্মৃতি টুকু তার মনে সান্ত্বনা দেয় । তাই সেই স্মৃতি নিয়ে ফিরে এল নিজের ঘরে ।
ভারতীয় রমণীর এটাই বৈচিত্র্য সে বহ্নি শিখায় জ্বলে পুড়ে মরে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়না তার মনের ব্যথা । মনের ব্যথা মনেই থাক নাইবা তুমি জানলে ......। ভগবান তির্যক দৃষ্টিতে দেখেও দেখেন না । ওরা মেনে নেয় অদৃষ্ট বলে । আমরা পুরুষরা ওদের পুড়তে দেখেও না দেখার ভান করি ।
কলেজ স্ট্রীটে বইয়ের দোকানে নতুন মারুতি ডিজায়ার গাড়ী থেকে নেমে হঠাৎ এক পায়জামা পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক কে দেখে চিনে ফেলে পায়েল । বেশ কদিন আমেরিকার ডালাসে ছিল ওর স্বামীর সঙ্গে । অনেক দিন কলেজ স্ট্রীটে আসা হয় নি । কিন্তু ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি , চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর মন দিয়ে দেখছে কিছু পুরনো বই যে ভদ্রলোক ; সে যে প্রতীক তা ঠাওরাতে অসুবিধে হলনা । কাছে যাওয়ার সাহস হলনা । আবার মনে মনে লোকটার প্রতি আবেগ এলেও সেটা চেপে রাখল । মনের ভেতরটা ডুকরে উঠলো । মনে হল ঠাস করে গিয়ে গালে একটা চাঁটি মারি । অপদার্থ কাপুরুষ !! আবার নিজেকে সামলে নিল এ কি ভাবছে সে ? এঁর জন্যে-ইতো বসে আছে পথ চেয়ে কবে হবে তার সঙ্গে দেখা? ইনি তো তার মনের মানুষ !! আজ সেই ভ্যালেন্টাইন ডে । কিন্তু প্রতীক ওই সব একদম পছন্দ করতনা ! সে কি যাবে ওর কাছে ? ও কি চিনবে? যদি না চেনে ? চিনেও না চেনার ভান করে তাহলে লজ্জা ঘেন্নায় নিজেকে ছোট করবে ওর কাছে ? ওর প্রেম প্রীতি ভালবাসা তার কি কোন দাম নেই? রাবণের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছে পায়েল । সে যখন পশুর মতন তার শরীরটাকে ছিঁড়ে খায় মনে হয় যেন ড্রাকুলা তার ধারল দাঁত দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করছে তার শরীরটাকে । কি নিয়ে দাঁড়াবে প্রতীকের কাছে ?বলবে প্রতীক আমি তোমাকে এখনো ভালবাসি । বলে কি লাভ ? ওকি মূল্য দেবে সেই ভালবাসার । ওকি জানে নারীর মনে যে প্রথম পুরুষ আসে সেই তার মনে আঁচড় দিয়ে যায়, যার ক্ষত ; ক্ষত বিক্ষত করলেও সে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে । স্মৃতি টুকু তার মনে সান্ত্বনা দেয় । তাই সেই স্মৃতি নিয়ে ফিরে এল নিজের ঘরে ।
ভারতীয় রমণীর এটাই বৈচিত্র্য সে বহ্নি শিখায় জ্বলে পুড়ে মরে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়না তার মনের ব্যথা । মনের ব্যথা মনেই থাক নাইবা তুমি জানলে ......। ভগবান তির্যক দৃষ্টিতে দেখেও দেখেন না । ওরা মেনে নেয় অদৃষ্ট বলে । আমরা পুরুষরা ওদের পুড়তে দেখেও না দেখার ভান করি ।
No comments:
Post a Comment