Friday, May 15, 2015

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার /


   

     
      যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 
 ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার /

আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
একতারা তার দেয় কি সাড়া আমার গানে কে জানে..."
এই আর্তির মধ্যেই ব্যক্তি জীবনের পথ চলা! স্বপ্ন সাধ সাধনায়, ভাব ভাবনা ভালোবাসাকে বিশেষ একজনের সাথে মিলিয়ে নিতে! কারণ কালের মন্দিরায় জীবনের বোল ফোটাতে পরস্পরের সঙ্গ লাগে! তখন সেই সঙ্গতে মন বলে "সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমারই দুখানি নয়নে-" এই যে পরস্পরের মধ্যে জীবনের পথ খুঁজে পাওয়া, পরস্পরের মধ্যে বেঁচে ওঠা, পরস্পরের মধ্যে সত্য হওয়া; এখানেই প্রেমের সার্থকতা! এখানেই মানুষ চলেছে তার দোসরের খোঁজে, "কবে আমি বাহির হলেম তোমারই গান গেয়ে"! আসলে দোসর খুঁজে পাওয়ার সাধনায় দোসর হয়ে উঠতে পারার শক্তিটাই গুরুত্বপূর্ণ! সেখানেই মুক্তি!” .............
 “আমিও ত মানুষ কিন্তু তোমার মত যন্ত্র-মানুষ নই।
আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসহীনতার চোরাবালির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারছিনা! অথচ যতবার এসব  বলতে গিয়েছি তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছি , ভেসে গিয়েছি তোমার ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, মাদকতায়,সমর্পণে।
    
প্রথম পর্ব


 আমার গল্পের নায়ক এক  মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সুদীপ্ত”  মেধাবী ছাত্র । কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ার । নায়িকা সুদীপ্তাসেও কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেধাবী , বাবা মা আই.এ.এস অফিসার ।   অভাব কি জানেনা । দুজনেই ইনফোসিস , বেঙ্গালুরুতে চাকরীতে সবে ঢ়ুকেছে। এর পর...........

সুদীপ্ত বি.টেক.(কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ারিং ) এর পর ইনফোসিস্ , বেঙ্গালুরুতে সফট্ওয়ের ইঞ্জিনিয়ার এর চাকরিতে জয়েন করে । এখানে বলে রাখা ভালো সুদীপ্ত , আই.আই.টি ,মুম্বাই থেকে ফার্স্ট ক্লাস ৯০% মার্ক্স পেয়ে  পাস করার পর চাকরীতে জয়েন করতে বাধ্য হয় । অন্য কোম্পানি তে   ভালো চাকরি পেয়েছিল কিন্তু জয়েন করে নি। ওর বাবা অনেক কম বয়েসে  হার্ট এটাকে হটাত মারা জান । ছোট ভাইয়ের পড়ার দায়িত্ব  সামলানোর জন্য ও বাধ্য হয় চাকরি করতে  । বাড়ীতে মা এবং ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ নেই । অনেক ইচ্ছে ছিল এম.টেক্. এর পর ডক্টরেট করবে বলে, কারন ওর টিচিং জব পছন্দ ।  সে ইচ্ছেটা ওকে সর্বদা পড়াশোনার দিকে টানতো । আড্ডা দিতে মোটেই ভালোবাসেনা সুদীপ্ত । ওর প্রজেক্ট এর প্রোজেক্ট্ ম্যানেজার (পি.এম.)ওকে খুব স্নেহ করেন । ওর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সঙ্গে ও কাজ ও খুব নিখুঁত ভাবে করে । সুদীপ্তা ওই একি প্রোজেক্ট্ এ , ওর সঙ্গে জয়েন করে একি দিনে। মাইসুরে তিন মাসের ট্রেনিং সেরে দুজনে বেঙ্গালুরুতে জয়েন করে । তাই সুদীপ্তার সঙ্গে আলাপ প্রায় তিন  মাসের ওপর । সুদীপ্ত র চেহারার আকর্ষণের সঙ্গে ওর প্রখর বুদ্ধি সহজেই নারীর মন আকর্ষণ করে ।  এটাই স্বাভাবিক সুদীপ্তা এন.আই.টী., রাউরকেল্লা থেকে কম্প্যুটার ইঞ্জীনিয়ারিং এ  বি.টেক্.ফার্স্ট ক্লাস  কাজেই ও খুব ফেলনা নয়। দেখতে খুব সুন্দরী । বাবা মা দুজনেই আই.এ.এস অফিসার তাই টাকার অভাব নেই ।  তবে আই.আই.টি. পাস আউট দের ইনফোসিসে বেশি টাকা মাইনে দেয় । বেঙ্গালুরের ইনফোসিস্ এর নিয়ম অনুজাই মেয়েরা সন্ধ্যে ছটার পর অফিসে  থাকা মানা ছিল। এসব আমি ২০০৫ সালের কথা  বলছি ।
সুদীপ্ত কাজের মধ্যে মসগুল থেকে এক রকমের যন্ত্রমানবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল । অফিস আর কাজ ছাডা কিছুই জানতোনা । প্রায় দিন বেলা ১.৩০ টার সময় সুদীপ্তা ক্যান্টিনে লাঞ্চ খেত সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা করে। সুদীপ্তার ওখানে গল্প করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই কারন সুদীপ্ত  বিশেষ পাত্তা দিত না  ওসব ব্যাপারে । সর্বদা কাজে মসগুল থাকতো  কি করে অন্ সাইটে যাবে  । তারই  চিন্তায় থাকতো । একদিনের কথা, সুদীপ্তা , ওর নিজের  জন্মদিন সেলিব্রেট্ করার জন্য সব বন্ধু বান্ধবদের ডেকেছিল পার্টি তে  । সুদীপ্তকেও ডেকেছিল  । 
কিন্তু ফরমালিটি র জন্য পার্টি তে গিয়ে সুদীপ্ত , সুদীপ্তাকে  গিফট দিয়ে চলে যায়। এটা সুদীপ্তার  মনে লাগে । এমনিতেই  সফট ওয়ের ইঞ্জিনিয়ার রা পার্টি  , আড্ডা  , শুক্রবার রাতে এবং শনিবার দিন সাধারনতঃ করেথাকে । ওদের মতে সেটারডে নাইট মাস্ট বি ডিলাইট্ । সুদীপ্তা মনে দুঃখ পেলেও প্রকাশ করেনি কারন ও সুদীপ্ত কে মনে মনে ভালবাসত কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি।
এই অপ্রকাশিত প্রেম এবং বলতে গেলে এক তরফা প্রেম যেন অসহ্য লাগে সুদীপ্তার ।


একদিন সুদীপ্তকে বলে বসে, “তুমি আমাকে এভয়েড্ করছ কেন ? আমি লাঞ্চের সময় ডাকলে তুমি এসে খেয়ে বিল মিটিয়ে চলে যাও ।  কোন কথা কি তোমার মুখে আসেনা ?আমি তোমার প্রজেক্টে কাজ করছি ! তোমার সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং নিলাম ।  অন্য কলিগ্ রা ত এরকম নয় ! তুমি এরকম ডিফারেন্ট এটিচ্যুড দেখাও কেন?” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সুদীপ্ত র  দিকে তাকাল     উত্তরের অপেক্ষায় ।  
সুদীপ্ত বলে, “আমাকে ভুল বুঝোনা । আমার মাথায় অনেক চিন্তা । আমার মা বিধবা, ভাইয়ের পড়া আমার ওপর নির্ভর করছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ওপর সংসারের সব দায়িত্ব , ও তুমি বুঝবেনা !”   তুমি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছ । তুমি কি করে জানবে নিম্নমধ্যবিত্তের জ্বালা যন্ত্রণা ? তোমার বাবা মা দুজনেই  আই এ এস অফিসার ! কি অভাব দেখেছ জীবনে ? বাবা অসময়ে চলে গেলেন । মা আমার ওপর ভরসা  করে আছেন । আমি আমার ছোট ভাই এর দায়িত্ব নব বলে । আমি আমার মা'কে প্রতারণা করতে পারিনা । তিনি এমনিতেই দুঃখ পেয়েছেন আর নতুন করে দুঃখ দিতে পারিনা।

ক্রমশঃ- 

No comments:

Post a Comment