রাজার বুদ্ধি
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৭.০৬.২০১৫ / বেলা ১১.১৪
এক রাজ্যে রাজার সু শাসনের জন্য প্রজারা সুখে শান্তিতে ছিল । সেই রাজ্যে এক
প্রজা , নাম গঙ্গাধরের প্রথম পত্নী মালতী নিঃসন্তান ছিলেন। গঙ্গাধর মনের দুঃখে নিজের
কাজে ব্যস্ত থাকত । চাষ আবাদ করেই দিন কাটাত। ঘরে এলেই বিষণ্ণ মুখে আকাশের পানে
চেয়ে থাকতো আর গান গাইত । গঙ্গাধরের দুঃখ দেখে তার স্ত্রী মালতী আরও দুঃখ পেত । স্বামী কে সন্তান দিতে না পারার
গ্লানিতে একদিন গঙ্গাধরকে বলে বসে,” তুমি দ্বিতীয় বিবাহ কর
আমার কোন আপত্তি নেই” ।
কিন্তু গঙ্গাধর মালতীকে খুব ভালবাসত । তাই সে
মালতীর প্রস্তাব খণ্ডন করে। গঙ্গাধর বলে,“আমরা যা আছি তাই
ভালো । ঠাকুর আমাদের সন্তান দেন নি ত কি হয়েছে , পৃথিবীতে
অনেক নিঃসন্তান দম্পতি আছে তারা কি সবাই কেবল সন্তানের জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করছে ।
আমি যেনে শুনে আমার সুখের সংসারে আগুন লাগা-বোনা। তুমি জানো তোমার সতিন এলে ঘরে
কুরুক্ষেত্র লাগবে । তাই আমাকে ও বিষয়ে কোন কথা বোলোনা।“
মালতী বলে, “আমি তোমার
বিষণ্ণ মুখ আর দেখতে পারিনা । আগে আমরা কত শান্তিতে ছিলাম এখন তুমি কেমন ম্লান হয়ে
গিয়েছ । ভাল করে কথা কও না । আকাশ পানে তাকিয়ে গান কর আর চোখের জল ফেল । আমি কি
বুঝিনা তোমার দুঃখ ! আমার মাথা খাও তুমি আবার ঘরে একটা ফুট ফুটে সুন্দর বৌ আনো ।
আমি ঘর সামলাবো সে তোমায় সামলাবে এই বলে গঙ্গাধরকে বোঝায়।”
গঙ্গাধর তাও গর রাজি হয় অগত্যা গঙ্গাধরের বৃদ্ধা
পিসিমাকে মালতী বলে তার স্বামীকে রাজি করাতে ।
পিসী মালতীর কথা শুনে অবাক হয় । বলেন ওরে
লক্ষ্মী ছাড়ি ঘরে কেউ সতীন আনে? তোর কি মাথা খারাপ হল ।মালতী
বলে সে ঘরে ঝগড়া হতে দেবেনা । গঙ্গাধরকে একমাত্র তার পিসী দ্বিতীয় বিবাহের জন্য
রাজি করাতে পারেন ।
অগত্যা পিসী , কূল রক্ষার
জন্য গঙ্গাধরকে দ্বিতীয় বিবাহ করাতে রাজি করান ।
খুব ধুম ধাম করে গঙ্গাধরের বিবাহ সম্পন্ন হল।
মালতী নতুন বৌকে বরন করে ঘরে তুললও । নতুন বৌ গরিবের ঘরের মেয়ে তাই বিশেষ কিছু
গয়না ছিলনা তার । মালতী তার নিজের গয়না পরিয়ে বৌভাতে নতুন বৌকে সাজায়। গঙ্গাধর তার মালতীকে এতই ভালবাসত যে বৌভাতের
রাতে মালতীর ঘরে চুপি চুপি চলে আসে।
মালতীর শত বাধা স্বত্বেও তাদের মিলন হয় এবং
মালতী অন্তঃসত্ত্বা হয় এর পরে ।
কুসুম , গঙ্গাধরের দ্বিতীয়
স্ত্রী । সে খুব ই হিংসে করত মালতীকে মনে মনে। কিন্তু মালতী কুসুমকে নিজের ছোট
বোনের মত ভালবাসত ।
মালতীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা শুনে গঙ্গাধর খুশিতে
গান গায় আর মালতীকে আরও ভালবাসে ।
এতে কুসুম হিংসেতে জ্বলে পুড়ে মরে এবং সে বাপের
বাড়ি যাওয়ার জিদ ধরে । গঙ্গাধর কুসুমকে তার বাপের বাড়ি দিয়ে আসে ।
কিছুদিন বাদেই কুসুম ফিরে আসে গঙ্গাধরের বাড়িতে
তার বাবার সঙ্গে । ওখানেই কুসুমের মাথায় এক বদ বুদ্ধি আসে । সে পেটে কাপড়ের পুঁটলি বেঁধে চলা ফেরা
করে । এমন ভান করে জেন সেও অন্তঃসত্ত্বা । কারুর সঙ্গে কথা বলেনা । স্বামীর ঘরে
ফিরে কুসুম , মালতীর
কাছে আর গঙ্গাধরকে ছাড়েনা । কান্না কাটি করে । অগত্যা গঙ্গাধর কুসুমের ঘরেই থাকে।
কিন্তু কুসুম গঙ্গাধরকে তার কাছ ঘেঁসতে
দেয়না ।
মালতী ঘরের সমস্ত কাজ কর্ম করে । কুসুম শুধু সাজ
গোজ করে আর পান খায় । গঙ্গাধরকেও কাছে
আসতে দেয়না।
গঙ্গাধর ভাবে তার এমন ই সু দিন এলো যে একসঙ্গে
দুই বৌ আসন্ন প্রসবা ।
এরপর গঙ্গাধরের প্রাণের বৌ মালতীর একটি পুত্র
সন্তান হয় । কিন্তু আঁতুড় ঘর থেকেই কুসুম সেই পুত্রকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে এবং বলে
সেটা তার সন্তান ।
মালতী নিজের কাছে তার ছেলেকে না পেয়ে ব্যাকুল হয়
। গঙ্গাধর কুসুমকে তার ছেলেকে মালতীর কাছে দিয়ে আসতে বলে কিন্তু কুসুম বলে ওটা ওর
ছেলে মালতীর নয়। মালতী কুসুমের ব্যাবহারে ক্রোধিত হয় এবং তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে
বলে । কোন ফল হয়না । কুসুম ঘরে খিল দিয়ে ছেলেকে নিয়ে থাকে। ছেলেটি খিদের জ্বালায়
কাঁদে । তখন গঙ্গাধর কুসুমের ঘরে খিল ভেঙ্গে ঢ়ুকে ছেলেকে মালতীর কাছে দেয়। কুসুম
ছাড়ার পাত্রী নয় । সে পাড়া পড়সিকে বলে তার ছেলেকে মালতী জবরদস্তি নিয়ে গিয়েছে ।
মালতীর মরা সন্তান হয়ে ছিল তাই মালতী হিংসেতে তার কোল থেকে তার ছেলে নিয়ে গিয়েছে
।
এই নিয়ে
ঘরে প্রচণ্ড অশান্তি দেখে গঙ্গাধর স্থির করে রাজার কাছে এর নিষ্পত্তি করবে।
রাজবাটীতে রাজা সমস্ত শুনে মালতী এবং কুসুমকে এর
সমাধান এর এক উপায় বার করেন ।
রাজা
বলেন এই রাজ দরবারে এর সমাধান এখুনি হবে । রাজা
কোতোয়ালকে বলেন এই পুত্রকে সকলের
সামনে দু টুকরো করে দুজনকে দু টুকরো দিয়ে দাও সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে
।
এই কথা শুনে মালতী দৌড়ে রাজার পায়ে ধরে কেঁদে
গড়িয়ে যায় এবং বলে তার ছেলের দরকার নেই রাজা কুসুমকেই ওই ছেলে দিয়ে দিতে বলে ।
রাজা স্মিত হাস্যে মালতীকে বলেন, “তুমি ছেলের মা কুসুম নয়।
কুসুম তার বদ বুদ্ধির সাজা পাবে।” কোতোয়ালকে বলেন কুসুমকে
কারাগারে নিয়ে যেতে ।
রাজদরবারের সকলে রাজার বুদ্ধির প্রশংসা করেন।
এবং কুসুমকে ধিক্কার দেন।
গঙ্গাধর স্বগৃহে স্বপুত্র পত্নী প্রত্যাবর্তন
করে।
No comments:
Post a Comment