শাহানা / ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৯.২০১৪ / রাত ১০.২৮
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক এই গল্পের সঙ্গে কারুর কোন সামঞ্জস্য নেই)
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক এই গল্পের সঙ্গে কারুর কোন সামঞ্জস্য নেই)
বাড়ী সুধু সকলে কাঁদতে লাগলো । মেয়েটাকে বাঁচান গেলনা । চিকিৎসার অভাবে মেয়েটা ছটপট করে মারা গেল । অসুখ ধরা পড়ার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো । আঠারো বছরের মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া এই প্রথম ঘটনা না । এরকম অনেক বাচ্চা , বুড়ো , বুড়ী , যুবতিকে প্রাণ হারাতে দেখা গিয়েছে এই এলাকায় । এলাকায় কোন ডাক্তারখানা নেই কিম্বা কোন ডাক্তার এই গ্রামে থাকতে চান না । গমনা গমনের অসুবিধা । রাস্তা মেরামত হয়না । প্রশাসন নিষ্ক্রিয় । অভিযোগ শোনার কেউ নেই। ভোটের সময় এম এল এ আসেন প্রতিশ্রুতি দেন তারপর পাঁচ বছর নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমন।
যে মেয়েটি মারা গেল তার নাম ‘শাহানা’ । এই পরের বছর 'নিকার' ঠিক হয়েছিল পাসের গ্রামের ছেলে সাকিল আহাম্মদের সঙ্গে । ছেলেটি পড়াশুনো করেছে । স্কুল ফাইনালের পর কম্প্যুটার শিখে নিজেই একটা চাকরি যোগাড় করেছে কোলকাতায় । ওখানে থেকেই বি.কম পড়ছে আবার চাকরি ও করছে । খুব ভালো ছেলে । তাই শাহানার বড় ভাই ‘মীর আলী’ , বোনের জন্য যোগ্য পাত্র হিসেবে ‘সাকিল’ কে পছন্দ করে। সাকিলের বাবা মা এসে ‘শাহানা’ কে দেখে যান । ওনারা পরের বছর ওদের নিকার দিন স্থির করেন। রক্ষণশীল পরিবার তাই বিয়ের আগে কেউই কাউকে দেখে নি ।
শাহানা , বান্ধবীদের মাধ্যমে ‘সাকিলের’ কথা জানত কারন ওর স্কুলের বান্ধবীরা ওই গ্রাম থেকে আসে স্কুলে পড়তে । সাকিলের মামাতো বোন ‘নুর’ আবার শাহানার বান্ধবী । ওরা একই ক্লাসে পড়ত । শাহানা স্কুল ফাইনালের পর আর পড়াশুনো করার সুযোগ পায়নি। গ্রামের কাছে কলেজ নেই তাই পড়ায় ফুল স্টপ ।
এই হচ্ছে এই গল্পের পূর্বাভাষ ঃ
শাহানা সাকিলের ‘নিকা’ ঠিক হয়েও আল্লা তাদের সহায় হলেন না । শাহানা র অকাল মৃত্যু , তার ভাই মীর আলীর মনে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দেয়। সে মনে মনে স্থির করে এই গ্রামে একটা ছোট হাঁসপাতাল করবে । তাই সে ট্যাক্সি চালিয়ে যা রোজগার করত তা ছাড়াও প্যাসেঞ্জারদের কাছথেকে রসিদের বই হাতে কিছু সাহায্য চাইতো তাদের গ্রামের হাঁসপাতাল তৈরির জন্য। কেউ দিত কেউ দিত-না । ৫ টাকা ১০ টাকা করে দিন দিন কঠোর পরিশ্রমে এবং গ্রামের কিছু সহৃদয় ব্যক্তির উদ্যমে প্রথমে একটি ঘর করে । যে জায়গাটার ওপর হাঁসপাতালের জন্য ঘর হয় সেটা ওদের বাপ ঠাকুরদা আমলের জায়গা । সেই জায়গা “শাহানা মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল হসপিটাল” এর নামে রেজিস্ট্রি করে এবং একটা ট্রাষ্ট বানায় । ট্রাষ্টি মেম্বার হিসেবে কিছু গ্রামের সহৃদয় ব্যক্তি বিশেষ কে করে , যারা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছে । তাদের নেয় এবং সেই মেম্বার দের দ্বারা নিজে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সাকিল ও তাতে থাকে ।
আস্তে আস্তে হাঁসপাতাল আরম্ভ হয় ১০ টি শয্যা বিশিষ্ট এবং একজন রিটায়ার্ড আর্মি ডাক্তারকে নিয়ে , যার নাম “মেজর শেখ নুরুল হাসান, এম.ডি ” । উনি কোন টাকা পয়সা না নিয়ে ওই ডাক্তার খানায় সকাল ৮ টা থেকে ১২ টা অবধি পেসেন্ট দেখতেন। নিজে রুগীদের ফিজি-সিয়ান স্যাম্পল থেকে ওষুধ দিতেন । কিছু পেসেন্ট যারা টাকা দেওয়ার সামর্থ্য রাখতো তারা ওষুধ কিনে নিত । ওই এলাকায় এন্সেফালাইটিশ (মস্তিষ্ক জ্বর) দেখা দিয়েছিল এবং তাতেই সম্ভবত শাহানার মৃত্যু হয় বলে অনুমান করেন ডাক্তার হাসান । বেশ ভালো কাটছিল । “শাহানা মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল হসপিটাল” এ ডোনেসন দিলে যাতে আয়কর থেকে রেহাতি পাওয়া যায় তার জন্য মীর , আয়কর দপ্তর থেকে এবং কেন্দ্র সরকার থেকে অনুমোদন আনে । এর জন্য দিল্লী দৌড়য় বারে বারে । অনেক খড় কুটো পুড়িয়ে আজ হাঁসপাতাল ৫০ বেডের হাঁসপাতালে উন্নীত হয়। বেচারা মীর রাত দিন এক করে ওই হাঁসপাতালের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য । তার সর্বস্ব দিয়ে হাঁসপাতাল তিন তালা নার্সিং হোমে পরিণত হয়। এখন চার জন ডাক্তার এবং ১২ জন নার্স । দুজন স্পেশালিষ্ট মেডিসিন এবং গাইনিকের । তারা সব্বাই সপ্তাহে তিন দিন আসেন । একটা মেডিসিন ষ্টোর করেছে । প্যাথলজিষ্ট এবং স্যাম্পেল কালেক্টার মিলে ১২ জন । কিছু স্বেচ্ছাসেবী আছে তাদের মধ্যে যারা টাকা পয়সা না নিয়ে শ্রম দান করে ।
ব্যাস এবার ওই হাঁসপাতালের ওপর শ্যেন দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় বিধায়ক মহাশয়ের। উনি নিজে ওর চেয়ারম্যান হওয়র জন্য উঠে পড়ে লেগে পড়েন । এরপর আরম্ভ হয় রাজনীতি । কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী র মাধ্যমে স্থানীয় বিধায়ক ওই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হতে চান। বলা বাহুল্য এতে মেম্বার রা কেউ রাজি না হওয়াতে আরম্ভ হয় পুলিসের জুলুম । মিথ্যা কেস দিয়ে মীরকে ফাঁসানোর চেষ্টা । কিছু চেলা চামুণ্ডাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয় , “মীর লোকদের কাছ থেকে হাঁসপাতালের নাম করে টাকা ঠকিয়ে নিয়েছে বিনা রসিদে”। থানা বাবুরা সক্রিয় হয়ে পড়েন বিধায়ক মহাশয়ের নির্দেশে মীরের বিরুধ্যে । থানা থেকে মীরকে ডাকা হয় থানায় একলা আস্তে ।
মীর ওই অভিযোগ মিথ্যা এবং ও কেন থানাতে একলা যাবে তার পালটা অভিযোগ করে । বিনা ওয়ারেন্টে থানায় যাবে না সাফ জানিয়ে দেয় , কারা কত টাকা কবে দিয়েছে তার প্রমাণ দিতে বলে। এ বিষয় তার উকিলের মাধ্যমে কোর্টের দ্বারস্থ হয় । ওর নিজের গ্রাম এবং আসে পাসের সব গ্রামের লোকেরা বিধায়কের ওই বদ উদ্দেশ্য প্রশাসনকে লিখিত জানায় । এ ছাড়া কোর্টকেও জানায় । ওই সব কাগজ পত্র এবং হাঁসপাতালের আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত কাগজের সার্টিফায়েড নকল কোর্টে উকিলের মাধ্যমে দিয়ে হলফ-নামা দায়ের করে। এতে বিধায়ক ফ্যাসাদে পড়েযান ।
এরপর আরম্ভ হয় লেঠেলদের দিয়ে মীরকে আক্রমণ । ওকে আক্রমণ করা হয় সুপরিকল্পিত ভাবে এবং ওকে রক্তাক্ত করে ওরই তৈরি হাঁসপাতালের সামনে ফেলে পালায় লেঠেল বাহিনী ।
ভাগ্য বশত: মীরের জ্ঞান ফেরে । মেজর হাসান মীরের চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করেন । গ্রামের লোকেরা রাস্তা বন্ধ করে । বিধায়কের বাড়ীর সামনে পিকেটিং করে । থানা ঘেরাও করে । কোলকাতা থেকে ওদের গ্রামে টিভির লোকেরা আসেন। মীরের এবং গ্রামের লোকদের সমস্ত কথা ভিডিও রেকর্ডিং করেন। প্রায় প্রত্যেক চ্যানেলে ওই ভিডিও রেকর্ডিং দেখান হয় । মীরের সাহসিকতা এবং কাজের প্রশংসা করে দল নির্বিশেষে এবং বিধায়কের কাজের ঘোর নিন্দা হয় । গ্রাম বাসিরা মীরের স্বার্থ ত্যাগ এবং হাঁসপাতাল নির্মাণে কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে ওকে পরে নির্বাচনে প্রার্থী করার সুপারিস দেন।
এতে প্রশাসনের নিদ্রা ভাঙ্গে । থানার ওসিকে ট্রান্সফার করা হয় । বিধায়ক কে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করা হয় । মন্ত্রী জন সাধারণের কাছে ক্ষমা চান । সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগে বিধায়কের বিরুধ্যে মামলা চলে ।
মীর কিন্তু তার ট্যাক্সি চালান অব্যাহত রাখে । ওই টাকাতেই তার সংসার চলে । আজ শাবানর কথা খুব মনে পড়ছে । চোখের জল থামাতে পাচ্ছেনা । আজ ওর বোন বেঁচে থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতনা । মীরের সারা জীবনের আক্ষেপ ওর বোনকে বাঁচাতে পারলোনা । হায় আল্লা আজ শাহানা যদি বেঁচে থাকতো কত খুশী হত ।
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৯.২০১৪ / রাত ১০.২৮
যে মেয়েটি মারা গেল তার নাম ‘শাহানা’ । এই পরের বছর 'নিকার' ঠিক হয়েছিল পাসের গ্রামের ছেলে সাকিল আহাম্মদের সঙ্গে । ছেলেটি পড়াশুনো করেছে । স্কুল ফাইনালের পর কম্প্যুটার শিখে নিজেই একটা চাকরি যোগাড় করেছে কোলকাতায় । ওখানে থেকেই বি.কম পড়ছে আবার চাকরি ও করছে । খুব ভালো ছেলে । তাই শাহানার বড় ভাই ‘মীর আলী’ , বোনের জন্য যোগ্য পাত্র হিসেবে ‘সাকিল’ কে পছন্দ করে। সাকিলের বাবা মা এসে ‘শাহানা’ কে দেখে যান । ওনারা পরের বছর ওদের নিকার দিন স্থির করেন। রক্ষণশীল পরিবার তাই বিয়ের আগে কেউই কাউকে দেখে নি ।
শাহানা , বান্ধবীদের মাধ্যমে ‘সাকিলের’ কথা জানত কারন ওর স্কুলের বান্ধবীরা ওই গ্রাম থেকে আসে স্কুলে পড়তে । সাকিলের মামাতো বোন ‘নুর’ আবার শাহানার বান্ধবী । ওরা একই ক্লাসে পড়ত । শাহানা স্কুল ফাইনালের পর আর পড়াশুনো করার সুযোগ পায়নি। গ্রামের কাছে কলেজ নেই তাই পড়ায় ফুল স্টপ ।
এই হচ্ছে এই গল্পের পূর্বাভাষ ঃ
শাহানা সাকিলের ‘নিকা’ ঠিক হয়েও আল্লা তাদের সহায় হলেন না । শাহানা র অকাল মৃত্যু , তার ভাই মীর আলীর মনে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দেয়। সে মনে মনে স্থির করে এই গ্রামে একটা ছোট হাঁসপাতাল করবে । তাই সে ট্যাক্সি চালিয়ে যা রোজগার করত তা ছাড়াও প্যাসেঞ্জারদের কাছথেকে রসিদের বই হাতে কিছু সাহায্য চাইতো তাদের গ্রামের হাঁসপাতাল তৈরির জন্য। কেউ দিত কেউ দিত-না । ৫ টাকা ১০ টাকা করে দিন দিন কঠোর পরিশ্রমে এবং গ্রামের কিছু সহৃদয় ব্যক্তির উদ্যমে প্রথমে একটি ঘর করে । যে জায়গাটার ওপর হাঁসপাতালের জন্য ঘর হয় সেটা ওদের বাপ ঠাকুরদা আমলের জায়গা । সেই জায়গা “শাহানা মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল হসপিটাল” এর নামে রেজিস্ট্রি করে এবং একটা ট্রাষ্ট বানায় । ট্রাষ্টি মেম্বার হিসেবে কিছু গ্রামের সহৃদয় ব্যক্তি বিশেষ কে করে , যারা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছে । তাদের নেয় এবং সেই মেম্বার দের দ্বারা নিজে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সাকিল ও তাতে থাকে ।
আস্তে আস্তে হাঁসপাতাল আরম্ভ হয় ১০ টি শয্যা বিশিষ্ট এবং একজন রিটায়ার্ড আর্মি ডাক্তারকে নিয়ে , যার নাম “মেজর শেখ নুরুল হাসান, এম.ডি ” । উনি কোন টাকা পয়সা না নিয়ে ওই ডাক্তার খানায় সকাল ৮ টা থেকে ১২ টা অবধি পেসেন্ট দেখতেন। নিজে রুগীদের ফিজি-সিয়ান স্যাম্পল থেকে ওষুধ দিতেন । কিছু পেসেন্ট যারা টাকা দেওয়ার সামর্থ্য রাখতো তারা ওষুধ কিনে নিত । ওই এলাকায় এন্সেফালাইটিশ (মস্তিষ্ক জ্বর) দেখা দিয়েছিল এবং তাতেই সম্ভবত শাহানার মৃত্যু হয় বলে অনুমান করেন ডাক্তার হাসান । বেশ ভালো কাটছিল । “শাহানা মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল হসপিটাল” এ ডোনেসন দিলে যাতে আয়কর থেকে রেহাতি পাওয়া যায় তার জন্য মীর , আয়কর দপ্তর থেকে এবং কেন্দ্র সরকার থেকে অনুমোদন আনে । এর জন্য দিল্লী দৌড়য় বারে বারে । অনেক খড় কুটো পুড়িয়ে আজ হাঁসপাতাল ৫০ বেডের হাঁসপাতালে উন্নীত হয়। বেচারা মীর রাত দিন এক করে ওই হাঁসপাতালের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য । তার সর্বস্ব দিয়ে হাঁসপাতাল তিন তালা নার্সিং হোমে পরিণত হয়। এখন চার জন ডাক্তার এবং ১২ জন নার্স । দুজন স্পেশালিষ্ট মেডিসিন এবং গাইনিকের । তারা সব্বাই সপ্তাহে তিন দিন আসেন । একটা মেডিসিন ষ্টোর করেছে । প্যাথলজিষ্ট এবং স্যাম্পেল কালেক্টার মিলে ১২ জন । কিছু স্বেচ্ছাসেবী আছে তাদের মধ্যে যারা টাকা পয়সা না নিয়ে শ্রম দান করে ।
ব্যাস এবার ওই হাঁসপাতালের ওপর শ্যেন দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় বিধায়ক মহাশয়ের। উনি নিজে ওর চেয়ারম্যান হওয়র জন্য উঠে পড়ে লেগে পড়েন । এরপর আরম্ভ হয় রাজনীতি । কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী র মাধ্যমে স্থানীয় বিধায়ক ওই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হতে চান। বলা বাহুল্য এতে মেম্বার রা কেউ রাজি না হওয়াতে আরম্ভ হয় পুলিসের জুলুম । মিথ্যা কেস দিয়ে মীরকে ফাঁসানোর চেষ্টা । কিছু চেলা চামুণ্ডাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয় , “মীর লোকদের কাছ থেকে হাঁসপাতালের নাম করে টাকা ঠকিয়ে নিয়েছে বিনা রসিদে”। থানা বাবুরা সক্রিয় হয়ে পড়েন বিধায়ক মহাশয়ের নির্দেশে মীরের বিরুধ্যে । থানা থেকে মীরকে ডাকা হয় থানায় একলা আস্তে ।
মীর ওই অভিযোগ মিথ্যা এবং ও কেন থানাতে একলা যাবে তার পালটা অভিযোগ করে । বিনা ওয়ারেন্টে থানায় যাবে না সাফ জানিয়ে দেয় , কারা কত টাকা কবে দিয়েছে তার প্রমাণ দিতে বলে। এ বিষয় তার উকিলের মাধ্যমে কোর্টের দ্বারস্থ হয় । ওর নিজের গ্রাম এবং আসে পাসের সব গ্রামের লোকেরা বিধায়কের ওই বদ উদ্দেশ্য প্রশাসনকে লিখিত জানায় । এ ছাড়া কোর্টকেও জানায় । ওই সব কাগজ পত্র এবং হাঁসপাতালের আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত কাগজের সার্টিফায়েড নকল কোর্টে উকিলের মাধ্যমে দিয়ে হলফ-নামা দায়ের করে। এতে বিধায়ক ফ্যাসাদে পড়েযান ।
এরপর আরম্ভ হয় লেঠেলদের দিয়ে মীরকে আক্রমণ । ওকে আক্রমণ করা হয় সুপরিকল্পিত ভাবে এবং ওকে রক্তাক্ত করে ওরই তৈরি হাঁসপাতালের সামনে ফেলে পালায় লেঠেল বাহিনী ।
ভাগ্য বশত: মীরের জ্ঞান ফেরে । মেজর হাসান মীরের চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করেন । গ্রামের লোকেরা রাস্তা বন্ধ করে । বিধায়কের বাড়ীর সামনে পিকেটিং করে । থানা ঘেরাও করে । কোলকাতা থেকে ওদের গ্রামে টিভির লোকেরা আসেন। মীরের এবং গ্রামের লোকদের সমস্ত কথা ভিডিও রেকর্ডিং করেন। প্রায় প্রত্যেক চ্যানেলে ওই ভিডিও রেকর্ডিং দেখান হয় । মীরের সাহসিকতা এবং কাজের প্রশংসা করে দল নির্বিশেষে এবং বিধায়কের কাজের ঘোর নিন্দা হয় । গ্রাম বাসিরা মীরের স্বার্থ ত্যাগ এবং হাঁসপাতাল নির্মাণে কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে ওকে পরে নির্বাচনে প্রার্থী করার সুপারিস দেন।
এতে প্রশাসনের নিদ্রা ভাঙ্গে । থানার ওসিকে ট্রান্সফার করা হয় । বিধায়ক কে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করা হয় । মন্ত্রী জন সাধারণের কাছে ক্ষমা চান । সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগে বিধায়কের বিরুধ্যে মামলা চলে ।
মীর কিন্তু তার ট্যাক্সি চালান অব্যাহত রাখে । ওই টাকাতেই তার সংসার চলে । আজ শাবানর কথা খুব মনে পড়ছে । চোখের জল থামাতে পাচ্ছেনা । আজ ওর বোন বেঁচে থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতনা । মীরের সারা জীবনের আক্ষেপ ওর বোনকে বাঁচাতে পারলোনা । হায় আল্লা আজ শাহানা যদি বেঁচে থাকতো কত খুশী হত ।
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৯.২০১৪ / রাত ১০.২৮
No comments:
Post a Comment