Sunday, September 14, 2014

আবিষ্কারের নেশা / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ১৩শ পর্ব / 15.09.2014 /


আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

১৩শ পর্ব 
শালিনী মন স্থির করতে পারছেনা বিয়ের ব্যাপারে। অথচ বয়েস থাকতে , বিশেষ করে মায়ের মণ  রাখতে বিয়েটা সেরে ফেলতেই হবে। এত দিন এড়িয়ে চলেছে এখন না করে উপায় নেই। মায়ের বয়েস হচ্ছে। ওনার দিকটাও ভাবা প্রয়োজন।
আজ রবিবার। সারাদিন বিশ্রাম। ঘর গুছতে গুছতে মায়ের কথা ভাবছিল। আজ মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলবে সে। সেদিন মা নিশ্চয় খারাপ কিছু ভেবেছেন। ওর ব্যাবহার টা অনেক সময় রুক্ষ হয়েযায়। ও নিজেও বোঝেনা সে কথা। লোকে খারাপ ভাবে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো ....... কে?
আমি ডঃ ভট্টাচার্য।
ও! হ্যাঁ সার .... দরজা খুলে গুড মর্নিং সার। আপনি কষ্ট করে এলেন কেন? আমাকে ডাকলেই আমি চলে যেতাম পার্কে! আসুন আসুন সার বসুন। 
ভেরি গুড মর্নিং। আজ আপনি মর্নিং ওয়াকে যান নি? আসলে  আপনি ঘর দোর কেমন সাজিয়েছেন দেখতে এলাম। আপনার অসুবিধে হবে না ত!
না না অসুবিধের কি আছে সার?  আপনি বসুন আমি চা করে আনি।
ডঃ ভট্টাচার্য শালিনীর ঘর গোছানোর সুখ্যাতি না করে থাকতে পারলেন না ... (শালিনী চা বিস্কুট হাতে ঢ়ুকছিল ঘরে) ... আপনি সুন্দর গুছিয়েছেন ঘরটা। আপনার ‘টেস্ট’ এর  প্রশংসা না করে থাকতে   পারছিনা। 
(চা দিতে দিতে) ... এটা বাড়িয়ে বললেন সার।  কি এমন গুছিয়েছি। কিছুই ত নেই গোছানর মত।  কিছু বই, রবীন্দ্র রচনাবলী, শরৎ রচনাবলী, মাদার টেরেসার ছবি, পরম পুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা মায়ের যুগল ছবি। এ ছাড়া একটা এলসিডি-টিভি আর পাশে একটা ল্যাপ্ টপ।  পাসের ঘরে একটা  সিঙ্গিল বেডের খাট। ওটা গেস্ট রুম থেকে এনেছে। নতুন খাট এলে ফিরিয়ে দেবে।
চা খেতে খেতে সার চায়ের সুখ্যাতি করলেন। এটা ত বাগানের চা (দার্জিলিং টি)। বাঃ কি ফ্লেভার! একটা কবিতা মনে পড়ছে।

সকালের চা
ভরা পেয়ালায় তৃপ্ত মনে শেষ চুমুকেই মহা শূন্যতা
ধূমায়িত উষ্ণ শিহরন ক্ষণে মনের কাটায় বিষণ্ণতা।  
উদ্বুদ্ধ হলাম খানিক ক্ষণে কাটিয়ে দিলাম নীরবতা,
যত আলস্য নেই অবশ্য সকালের এই স্তব্ধতা।
এক পেয়ালা চা অবশ্য পুলক অনুভবের পূর্ণতা,
এর অন্যথা জীবন ব্যর্থ নেই তাতে কোন পূর্ণতা।
বাঃ। খুব সুন্দর। এটা কি আপনার লেখা।
না না। এটা যিনি লিখেছেন তিনি নেপথ্যে থাকেন। মানে থাকতে ভাল বাসেন। 
ও তাই।  হ্যাঁ আমার মামা এনেছেন এই চা। উনি ডুয়ার্ষে চা বাগানের ম্যানেজার। উনি মাঝে মাঝে   নিয়ে আসেন আসার সময়। আমাদের বাড়ীতে তাই ওই দার্জিলিং এর চায়ের চলন। বাবা ওই চা খেতে খুব ভাল বাসতেন ... চুপ করে যায় শালিনী।
কি হল? চুপ করে গেলেন যে!
আপনার কথা শুনব বলে। হেঁসে জবাব দেয় শালিনী ।
আমার কথা! ও না শোনাই ভাল!!  ছোট বেলায় বাবাকে হারাই। মা স্কুলের টিচারই করতেন। অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছি। কঠিন অর্থের অভাবে দিন কাটিয়েছি। টিউশনি করে লেখা পড়া করেছি। ধার দেনা করে এক বোনের বিয়ে দিয়েছি। এখন মা একা। রিটায়ার করেছেন। একাই থাকেন। আমি মাসে একবার যেতে চেষ্টা করি। নানান কাজে হয়ে ওঠে না। ওই ফোনে যা কথা হয়।
শালিনীকে একটু অন্য মনস্ক দেখাচ্ছিল। কি এক চিন্তায় মসগুল মনে হচ্ছিল। হঠাৎ বলে ,হ্যাঁ সার তারপর?
বোনের বিয়ের জন্য নিজের কথা ভাববার সময় পাইনি। 
এই সময় মায়ের ফোন এল। সাইলেন্ট মোডে ছিল তাই আওয়াজ হয়নি।  সরি সার কিছু মনে করবেন না। মায়ের ফোন। একটু কথা বলি!
 হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। আমি আসি তাহলে।
হ্যাঁ সার আপনি আসুন। (আসলে শালিনী এটাই চাইছিল। এর মধ্যে সারের অজান্তে মাকে একটা মিস কল দেয় সাইলেন্ট মোডে , তাই মা কল ব্যাক করেন)। 
ওপার থেকে .... শালু মা তোর শাশুড়ি একা এসেছিলেন।
শাশুড়ি! আকাশ থেকে  পড়ে!! কি বলছ তুমি? আমার আবার  শাশুড়ি??
হবু শাশুড়ি ... মেয়ের আমার সব কথায় খুঁত ধরা! পারিনা!! শোন মা।
বল। তা কি বলেছেন? এখানে তোমার আরেক জামাই আমার পেছনে লেগেছেন। ভাবছি তোমায় নিয়ে আসবো।
কে শুনি? ভাল ছেলে? অয়নের চেয়ে ভাল??
তোমার কি মনে হয় মা! তুমি বড্ড লোভী!!  ভাল ছেলে হলেই অয়নকে ছেড়ে তাকে ধরতে হবে? অয়নকে আমি কথা দিয়েছি মা।  আমি আমার কথার মূল্য হারাতে পারি না।
তা ঠিক বলেছিস মা। হ্যাঁরে ওরা ত কিছুই দাবি দাবা করছে না। ওদের শুধু ১০০ জন বরযাত্রী আসবে। তাদের আদর যত্ন করতে হবে।
ও বাবা! এত দুর কথা গড়িয়েছে! ‘মা’ আমার করিত কর্মা। তা তুমি কি বললে? 
কি আবার বলব। তোর দিদি জামাই বাবু ছিলেন। ওরা দফা করেছেন ৫০ জনের জন্য। আজকালকার বাজারে ১০০ জনের আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা! তা ছাড়া আমাদের আত্মীয় স্বজন আছেন না!!
তারপর। এত বিশাল আয়োজন! তা তুমি আমায় ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার জন্য আর কি কি আয়োজন করেছ বল-দেখি!! 
তোর সবেতে ঠেস দিয়ে কথা বলা। এই স্বভাব টা ছাড় শালু। শ্বশুর বাড়ী গেলে কি করবি শুনি?
আমি ওখানে যাব বলে কি করে জানলে? আমি আমার কাজের যায়গায় ফিরে আসবো। ওই সব বৌ সেজে আদিখ্যেতা আমার পোষাবে না। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে চলে আসবো। ও সব আয়োজন বন্দ কর। আমার সময় নেই টাকাও নেই। তাতে বিয়ে হয় ত হবে নাহলে নাই। টাকার শ্রাধ্য আমি করতে পারবোনা । কে দেবে অত টাকা শুনি? বাবা গত হওয়ার  পর যা টাকা আছে সে তোমার কিছু ভাল মন্দ হলে তখন! কে দেখবে? আমি তোমায় নিয়ে আসবো আমার কাছে। যত সব বুজরুকি ..১০০ জন বরযাত্রী .. মগের মুলুক!! দেশের লোক খেতে পাচ্ছেনা ওদের ১০০ জনের খাওয়ানোর জন্য আয়োজন দরকার। কি সব সেকেলে চিন্তা ধারা।
ঠিক আছে আমি সব শুনলাম। তুমি এখানে আমার কাছে আসার জন্য তৈরি হও। আমি গিয়ে তোমায় নিয়ে আসবো। এখানে একা থাকতে অসুবিধে আছে।
রক্ষে কর মা।  তোমার রাত দিন কট কটানি কে শুনবে?
তবে যে বল আমার জন্য তোমার চিন্তায় ঘুম হয়না!
সেতো হয় না। আমি ‘মা’। তুমি ত ‘মা’ হও নি কি করে বুঝবে মা?
তাহলে তুমি আসবে না! আমার এখানে অসুবিধে হচ্ছে। আমার প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে।
প্রাইভেসি! কেন কে আবার তোর ‘প্রাইভেসি’ নষ্ট করছে শুনি। 
তুমি চিনবে না। তুমি আসবে কিনা বল? আমি তোমাকে শনিবার আনতে যাব। দু দিনের ছুটি আছে। তা ছাড়া আমার কাছে কিছু দিন থেকেই দেখ না।
ঠিক আছে তাই হবে। শনিবার কখন আসবি?
এখান-থেকে জন শতাব্দী তে যাব। পরের দিন ফিরে আসব। ওখানে ওই ট্রেনটা দেড়টা নাগাদ পৌঁছয়। মানে বাড়ীতে ঢ়ুকতে ৩ টে ত বটেই। গিয়ে ভাত খাব। তোমার হাতের রান্না অনেক দিন খাইনি।
মেয়ের আদিখ্যেতা দেখ! আজ বাদে কাল বিয়ে হলে তোর মা থাকবে? তখন কি করবি শুনি?
হোটেল থেকে আনিয়ে খাব। এখন ত তাই করছি মা। রান্নার সময় কোথায়?
অয়নের ফোন এল বোধ হয় ; এখন রাখি মা। ভাল থেক। ওইসব বিয়ের আয়োজন করতে হবে না। অয়নের সঙ্গে আমি কথা বলব তারপর ও যা বলবে তাই হবে। রাখি।
আচ্ছা। তাই হবে। আমি জানি সবেতেই তোমার খবরদারি। সে ছেলেটাকে তুমি ই বলবে সে কি আমার জানতে বাকি আছে! গোবিন্দের ইচ্ছা মা আমি কে!!
আবার কে কলিং বেল বাজায়? দরজার কাছে গিয়ে আই পিসে দ্যাখে অয়ন সঙ্গে সিকুরিটি !
দরজা খুলে অয়নকে দেখে হচ কচিয়ে যায়  ... ওমা তুমি! কিছু না জানিয়ে এলে যে!!  সিকুরিটির দিকে তাকিয়ে বলে তুমি এস।  উনি আমার পরিচিত।
কেন আমার ত আজ ই  আশার কথা। তুমি যান না? সেদিন ই ত কথা হল। তুমি আমাকে হোটেলে উঠতে বললে। মনে নেই।
ও হ্যাঁ হ্যাঁ!! তা কোন হোটেলে উঠেছ শুনি?
 খুব নামজাদা হোটেল “হটেল মে ফেয়ার লাগুন” ৩ স্টার হোটেল। একটা সুট নিয়েছি ।  আমাকে বসতে বলবে না।  ফ্লাইটে কিছু খাইনি। চল বাইরে খেয়ে আসি।
৩ষ্টার হোটেলে সুট নিয়েছে শুনে শালিনীর মনে খটকা লাগে। কিন্তু কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বলে ,  “ওমা সেকি? আমি আনিয়ে দিচ্ছি। তবে তোমার ওই হোটেলে আমি জেতে পারবোনা। একদিন ছুটি পাই সেটা বাড়ীতেই থেকে কাটাই। তাছাড়া এখানে আমি কোথায় বেরোই না। খুব প্রয়োজন হলে সিকুরিটি কিম্বা অন্য কাউকে দিয়ে আনিয়ে নি।”
কিন্তু আমি যে তোমার জন্য সুট বুক করলাম।  ঠিক আছে। আমার সময় কম। নেক্সট ফ্লাইট ৫ টায়। এই ক ঘণ্টা একটু তোমার সঙ্গে কাটাব। 
অসভ্যতা-মি করবে না কিন্তু। লক্ষ্মী ছেলের মত যা বলব তাই করবে। এখানে দেওয়ালের ও চোখ কান  আছে। আমি একা মহিলা বুঝতেই পারছ। এখন ও আমাদের বিয়ে হয়নি। 
হ্যাঁ তাই করব। বলে ত দেখ। আগে বাথ রুমে যাব। বাথ রুমটা কোথায়?
শালিনী, অয়ন কে  বাথ রুম দেখিয়ে সিকুরিটির কাছে গেল হোটেল থেকে ওদের দুজনের জন্য খাবার আনাতে।  তারপর মিসেস নায়ারের বাড়ী গিয়ে ওনার সঙ্গে কিছু কথা বলে  কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে  মিনিট কুড়ি ত্রিশ সময় লেগেছে । কোয়ার্টারে এসে দ্যাখে দরজা হাট করে খোলা। ভেতরে কেউ নেই। অয়নের একটা চিরকুট দ্যাখে কম্পুটার টেবিলে ওপর,  তাতে লেখা- “সরি ডিয়ার আমি এসেছিলাম   তোমার সান্নিধ্য পেতে , তোমার হোটেল থেকে আনান খাবার খেতে নয়। আমাকে তুমি এভাবে অপমান করতে পার না। আমি তোমার জন্য দামি হোটেলের স্যুট বুক করেছিলাম। আমরা দুজনে সময় কাটাব বলে কিন্তু তুমি শুনলে না।  তুমি নিজেকে কি মনে কর? আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য কি এতই পাগল? আমার বাবা মায়ের কাছে আমি অনেক স্নেহ পেয়ে বড় হয়েছি। তোমার আমাকে এতই সন্দেহ যে তুমি আমাকে একা ফেলে চলে গেলে বাইরে! এটা কি ধরনের ভদ্রতা! ফর ইওর ইনফরমেশন আমি আর কোন দিন কোন সম্পর্ক রাখবো না তোমার সঙ্গে। গুডবাই!”
শালিনী থর থর করে কাঁপে চিঠিটা হাতে ধরে। দু চোখ বেয়ে জল বোয়ে যায়। অয়নকে ও সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে। এখন তার মূল্য ওকে দিতে হবে। ওর বিষয় ভ্রান্ত ধারনা অয়নের। সেটা ওকে বোঝাতে হবে। কোন পর পুরুষের সঙ্গে হোটেলে সময় কাটান ওর মতন মেয়ের রুচিতে বাধে। কিন্তু কি করে বোঝাবে ও ...!
চলবে
গল্প বিভাগটি কেমন লাগছে, অনলাইনে মতামত লিখে জানান

No comments:

Post a Comment