Monday, September 8, 2014

আবিষ্কারের নেশা / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১২শ পর্ব / ০৮.০৯.২০১৪ ।



আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
১২শ পর্ব
ডঃ ভট্টাচার্য কেন শালিনীর প্রতি ঘনিষ্ঠ হতে চাইছিলেন সেটা ওর জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তবুও কেন যেন মনে হল ওনার থেকে আপাতত দূরে  থাকা শ্রেয়। কিন্তু শালিনী যা ভাবছে সেটা নাও হতে পারে। উনি হয়ত নেহাত বন্ধুত্বের খাতিরেই ওর কাছে বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়েছিলেন। শালিনীর কি ওইরকম ব্যাবহার করা কি উচিৎ হল! বোধ হয় না। 
ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। কি সব আজে বাজে চিন্তা তার মাথায় আসছে!
যথারীতি ক্লাসে গিয়ে ক্লাস আরম্ভ করল। সকলকে বারে বারে জিজ্ঞাসা ,“আর ইউ ক্লিয়ার। শ্যাল আই রিপিট এগেন। ডোন্ট হেজিটেট টু টেল মি ইফ ইউ  কান্ট আন্ডারস্তেন্ড। ওকে ” এটা বলা ওর স্কটিশে পড়ানো থেকেই অভ্যাস।   
ক্লাসের পর কমন রুমে যায় লাইব্রেরী থেকে এক গাদা বই নিয়ে। কমন রুমে ঢ়ুকতেই একটা বই পড়েযায় হাত থেকে। খুব অপ্রস্তুত বোধ করে , কারন ডঃ ভট্টাচার্য বইটা নিঃশব্দে তুলে দেন শালুর হাতে।  
 ডঃ ভট্টাচার্য:- আপনি এত রেফারেন্স বই পড়ার সময় পান?
শালিনী:- হ্যাঁ সার। সময় করে নিতে হবেই। আপনারা সিনিয়ার, আপনাদের কথা আলাদা , তাছাড়া আপনি কত ছেলে মেয়েকে তাদের রিসার্চে গাইড করেছেন তারা আপনার আন্ডারে ডক্টরেট করেছে। আমিত নতুন সার। আমি  না পড়লে নিজে বিষয়টার প্রতি ক্লিয়ার কনসেপ্ট না থাকলে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াব কি করে? আমার পড়াশুনো বিশেষ প্রয়োজন। তাই ক্লাসের পর কমন রুমে এসে রেফারেন্স বইগুলো পড়েনি। নিজের নোট নিজে তৈরি করি।  
ঠিক বলেছেন। এটা অনেকেই করে না। ছাত্র ছাত্রীকে লাইব্রেরী-থেকে বই  নিয়ে পড়তে বলেন। কিছু রেফারেন্স ও দিয়ে দেন। তবে আমাদের এখানে  সকলে সম্পূর্ণ প্রস্তুতির পর ক্লাসে যান। এটা এখানকার সিস্টেম। আমার দেখে ভাল লাগল আপনি এখানকার সিস্টেম ফলো করছেন। ডার্টস গুড।  কিপ ইট আপ। ইফ  ইউ নিড এনি রেফারেন্স প্লিজ টেল মি। ওকে। আসি তাহলে। 
হ্যাঁ সার। শালুর ঘাম ছুটছিল কথা বলতে বলতে।  তা ছাড়া  সকালের ব্যবহারে ও খুব লজ্জিত কিন্তু সার কিছু মনে করেন নি মনে হচ্ছে। এখানে ও ছাড়া মৌসুমি মিশ্র নামে আরেকজন মহিলা আছেন উনিও নতুন। কিন্তু উনি এখানকার বাসিন্দা তাই ওঁর সঙ্গে প্রায় দেখা হয়না। ওনার ফ্যাকাল্টি আলাদা। 
সারাদিনের ক্লাস সেরে সন্ধ্যাতে ফেরে।  সন্ধ্যার সময় খুব টায়ার্ড থাকে। মা থাকলে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতেন মুখের সামনে। এই সময় চায়ের বিশেষ প্রয়োজন। মাকে খুব মিস করছে শালু। কিন্তু কিছু করার নেই নিজেকে কষ্ট করতে হবে মা ত চিরদিন থাকবেন না ওর মুখে মুখে জোগাতে। 
মায়ের কথ ভাবতেই মায়ের ফোন। এটা কি টেলিপ্যাথি না কি?  
হ্যালো! হ্যালো!! শালু মা। কেমন আছিস? তোর কোন খবর না পেয়ে ফোন করছি। 
আমি ভাল আছি মা। এখুনি তোমার কথা মনে করছিলাম। তোমাকে আরেকটু পরেই ফোন করতাম। তোমরা কেমন আছ মা? টুকাই , দিদি , জিজু সব কেমন আছে? তোমাদের কথা সব সময় মনে করি মা।  একটা কথা তোমাকে বলি। অয়নের বাবা মা তোমার ওখানে যাবেন। ওরা গেলে সব যানতে পারবে। আমি এখন স্নান সেরে একটু পড়াশুনো করব। এখন রাখি।  
আমার কথা না শুনে , “অমনি রাখি”। তুই কি রে? তোর হৃদয় বলে কি কিছু নেই! আমার কথা কি মনে পড়ে না!!   ওনারা কেন আসবেন বল ত মা?  
হৃদয় আছে মা। তোমার কথা ভাবি। সকলের কথা ভাবি।  আমি কি করে বলব বল ওনারা কেন আসছেন? 
তুই সব জানিস। কি হয়েছে শালু বলনা?
আমার বলতে লজ্জা করে। তুমি সব জানবে। বললাম ত ওনারা আসবেন। আমি রাখি এবার।  
আচ্ছা বাবা আচ্ছা। মেয়ে আমার এতদিন পর কথা বলবে ...তাও  সব পেটে রেখে কথা বলে। কিছু খুলে বলতে পারে না। কি হয়েছে তোর?  
কি আবার হবে? ভালই আছি। আমার ঘুম পাচ্ছে মা।
এই বললি পড়বি আবার এখন ঘুম পাচ্ছে। কি হয়েছে তোর বলত? 
বললাম ত অয়নের মা বলবেন বলে।
কেন তোমার মুখ থেকে শুন-বোনা কেন? 
আমি জানিনা। তুমি বিরক্ত করো নাতো?
ও বুঝেছি! তা ভাল। ঠিক আছে কবে আসবে তারা? 
আমি কি করে বলব এসবের উত্তর। ওই জন্য আমি কিছু বলতে চাইনা তোমাদের। আমি রাখছি মা। ভাল থেকো। নিজের দিকে নজর দিও। আমার কথা ভেবনা। 
না তোমার কথা ভাববোনা! ঠিক আছে খেয়ে ঘুমিয়ে  পড়। ও হ্যাঁ ভাল কথা , অয়ন ফোন করে তোকে? 
হ্যাঁ অয়ন ফোন করে , বারে বারে করে। ফোন ধরলে তোমার মত ছাড়তে চায়না। সব সমান তোমরা। কথাগুলো একটু জোরেই বলল। তারপর ভাবল পাশের ঘরে  লোক শুনলে কি ভাববে? রাখছি মা। ভাল থেক।
চলবে
গল্প বিভাগটি কেমন লাগছে, অনলাইনে মতামত লিখে জানান

No comments:

Post a Comment