আবিষ্কারের নেশা
১৪ দশ পর্ব
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১৪ / বেলা ১১.৪৪
শালিনী সত্যি খুব দুঃখ পেয়েছে অয়নের ওই ব্যাবহারে । তার প্রাণে হয়ত সঙ্গীতের মুর্ছনা নেই কিন্তু কিছু শব্দ বেরিয়ে আসে সেগুল জুড়লে বোধ হয় একটা গান লেখা হয়ে যাবে । মনে ব্যাথা পেলে বোধ হয় আপনা হতে বেদনার গান লেখনির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । শালিনী তার ব্যতিক্রম নয় কথাগুল ভাবতে ভাবতে ওর চোখে জল আসে ।
১৪ দশ পর্ব
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১৪ / বেলা ১১.৪৪
শালিনী সত্যি খুব দুঃখ পেয়েছে অয়নের ওই ব্যাবহারে । তার প্রাণে হয়ত সঙ্গীতের মুর্ছনা নেই কিন্তু কিছু শব্দ বেরিয়ে আসে সেগুল জুড়লে বোধ হয় একটা গান লেখা হয়ে যাবে । মনে ব্যাথা পেলে বোধ হয় আপনা হতে বেদনার গান লেখনির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । শালিনী তার ব্যতিক্রম নয় কথাগুল ভাবতে ভাবতে ওর চোখে জল আসে ।
আজ শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরে
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
মুখে নেই ভাষা আছে সুধু ভালোবাসা
বুঝি আমি তোমার চোখের যে ভাষা ...... .......(১)
অশনি সঙ্কেত ওই আকাশে গুরু গম্ভীর নাদে
মেঘের পরশে আজ বাতাস যে কাঁদে
তবু ঝরে মোর আঁখি হতে অবিশ্রান্ত ধারা
কম্পিল যে আজ মৃদু তালে ধরণী ধরা ......... (২)
তোমারি ছবি দেখি মনের আঙ্গিনায়
ভুলিনিগো তোমারে ভুলিনি যে হায়
বিরহ যাতনা যে আর নাহি সয়
স্মৃতিটুকু রেখেছি মনে এই ভরসায়
ফিরিয়া আসিবে তুমি সেই ভরসায় .............( ৩ )
আজ শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরে
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
.
এই বিশাল পৃথিবীতে একলা মহিলা নিজের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে তার সমস্ত কাজ সুচারু রূপে করা এক কঠিন পরীক্ষার মত । তাতে উত্তীর্ণ হওয়া শক্ত । তার মনকে শক্ত করতে হবে । ভেঙ্গে পড়লে চলবে না । অয়ন বুঝতে পারলোনা যে এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন রকম অশালীনতা বরদাস্তর বাইরে । সামান্য কিছু ঘটলে শালিনীর ক্যারিয়ারের ওপর আঁচ পড়বে সেটা সে কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারবে না । কারুর কাছে মুখ দেখাতে পারবে না সেটা কি অয়ন বোঝেনা !!
অয়নকে বোঝানর জন্য ফোন করে কিন্তু ও কেটে দেয়। বাড়ীতে কাউকে বোঝাতে পারবেনা । মা তাকেই দুসবে বারে বারে । এটাই বোধ হয় মেয়েদের প্রধান সমস্যা । অগত্যা বাড়ী যাওয়ার কথা ভুলে নিজের কাজে মন দেয় । ডঃ ভট্টাচার্য সত্যি ভদ্র লোক । উনি কিন্তু শালিনীর অনেক খারাপ ব্যাবহার সহ্য করেছেন । কিছু কখন মুখ ফুটে বলেন নি। বেশ কিছুদিন এরকম চলে । শালিনী বেঙ্গালুরুর ট্রেনিং টা পরে যেতে চায় । ওর মন একদম ভালো-না কদিন ধরে । মেয়েদের মনে প্রথম বসন্তে কোন পুরুষের আগমন হলে সাধারণত সেই আঁচড়টা থেকেযায় । সেটা ভুলতে পারে না ওরা । ওটাই অনাবিল প্রেমের নিদর্শন । ওতে কিছু খামতি থাকে না । এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম। তাই শালিনীর জীবনের প্রথম প্রেম তার মনে দাগ রেখে গেল। ও সেটা শত চেষ্টা করেও মুছতে পারছেনা ।
এক রবিবারে মা ; জিজু , দিদি , টুকাইকে সঙ্গে করে হাজির হলেন ভুবনেশ্বর । শালিনী ওদের দেখে আশ্চর্য হয় । বলে কিগো তোমরা কিছু না বলে চলে এলে যে । আমাকে খবর দেবে ত !
মা বলেন:- সবাই তোকে সারপ্রাইজ দেব ভাবলাম । কোই অয়নদের বাড়ীথেকে ত কেউ এলেন না ।
শালিনী:- আমি কি করে বলব মা এখানে বসে ? ওরা আসবে কি না আসবে ওদের ব্যাপার । ওরা বড়লোক ওদের খেয়াল খুশী অনুজাই চলে । খেয়াল হয়েছিল আমাকে বিয়ে করবে বলে এখন সে খেয়াল মাথা-থেকে চলে গিয়েছে । ব্যাস । আমি দিব্বি আছি । আমাকে আর কেউ আর বিরক্ত করবেনা বিয়ের ব্যাপারে । তোমরা সব একে একে ফ্রেশ হয়ে নাও । দুটো বাথ রুম আছে ।
একটা বন্দ থাকে । তোমরা এলে ভালই হল । আজ চল সকলে মিলে পুরী যাই ।
টুকাইকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
একটা টয়টা ইনো-ভা ভাড়া করে সকলে পুরী বেড়াতে গেল বেলা ১২ টা নাগাদ । ওখানে , “হলিডে রিসোর্ট হোটেলে” জিজু .. দুটো রুম বুক করেছিল । জিজু , দিদি দুজনে ব্যাঙ্কের থেকে এল টি সি পায় তাই ওরা প্রত্যেক বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায় । শালিনীকে অনেকবার বলেছে ওরা ওদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওত অন্য ধাতের মেয়ে । ওসব বেড়াতে যাওয়া ওর ভালো লাগে না । কিন্তু এবারে মা সঙ্গে তাই মানা করলনা । তাছাড়া এমনিতেই ওর কেমন দম বন্দ লাগছিল ।
পুরী বেড়ানটা ভালই লাগছিল । সমুদ্র , নুলিয়া , জগন্নাথ ঠাকুর দর্শন এর বিশেষ আকর্ষণ । মা মানত করেছেন শালুর বিয়ে হলে পূজো দেবেন। মা সত্যি উতলা হচ্ছেন ওর জন্য । তার-পরদিন শালুর ক্লাস ও সকাল সকাল মাকে নিয়ে ট্রেনে ফিরে আসে ভুবনেশ্বর । দিদিরা ওখানে আরও দুদিন থাকবে ।
অনেক দিন পর মাকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
অনেক দিন বাদে মায়ের হাতের রান্না খাবে । সত্যি মা না-থাকলে ওর খুব বাজে লাগে ।তাই নিজে বাজার থেকে সব গুছিয়ে কিনে এনেছে । বাজার থেকে ফেরার সময় মা’কে ওর কোয়ার্টারের সামনে ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে কথা বলতে দেখে আশ্চর্য হয়। কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই সারকে “গুড মর্নিং সার বলে উইশ করে” ।
আপনার মা এসেছেন বলেন-নিত মিস সান্যাল !
হ্যাঁ সার , মা আজ আমার সঙ্গে এসেছেন ।
বাঃ এত আনন্দের কথা । আমার কথা বলার লোক এসে-গিয়েছেন । আমার একটু সময় কাটবে । কোন আপত্তি নেইত আপনার !
মা বলেন, “ওমা সে কি কথা ! এত আনন্দের কথা । আমাদের ও সময় কাটবে”। আপনার মা বাবা কি দেশে ?
না মাসিমা ছোট বেলা থেকেই আমি পিতৃ হারা । মা স্কুলের টিচার ছিলেন । তিনি অনেক কষ্টে আমাকে মানুষ করেন। এখন উনি কলকাতায় আছেন মামার বাড়ীতে ।
মাকে নিয়ে আসেন না কেন ?
মায়ের বয়েস হয়েছে তাই উনি ওখানেই থাকতে ভাল বাসেন।
ও তাই বুঝি । তুমি বাছা একদিন আমার এখানে আমার হাতের রান্না খেও । আমি গুছিয়ে নি তারপর তোমায় খবর দেব কেমন !
শালিনী ও ঘর-থেকে সব শুনছিল । মায়ের আক্কেল দেখে অর গা রি রি করে উঠলো । একদম সেকেলে । হুট করে সকলকে আপন করে ফেলে । আগু পিছু ভাবে না কি হতে পারে !
তোমার বিয়ে হয়েছে বাবা ? সার লজ্জায় বলেন না মাসিমা হয়নি । আমি পরে আসবো একদিন । এখন জাই । কাল ক্লাসের জন্য পড়াশুনো করতে হবে ।
সার জাওয়ার পর শালু মায়ের ওপর খড়গ হস্ত । কি দরকার তোমার ওনার সঙ্গে এত কথার শুনি ? তুমি এখানেও ওই এক কান্ড করবে দেখছি । সকলকে ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করবে তার বিয়ে হয়েছে কিনা ! কি তুমি মা ! কেন বোঝ না এসব বলতে নেই। আমি পারব না তোমাকে বোঝাতে । শালু খুব আস্তে তার মা’কে বিদ্রূপের সঙ্গে বলে, “তা তোমার নতুন জামাইকে কবে খাওয়াচ্ছ শুনি ?”
মা হতবাক হয়ে-জান ওর কথা শুনে । ওই ছেলেটি খুব ভাল শালু । ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছিল তাই বললাম । তুই রাগ করছিস কেন মা ? ওত তোদের এখানেই পড়ায় । পাত্র হিসেবে-ত ভালই ।
মা .. মা .. তোমাকে নিয়ে আমার মাথা খারাপ হয়ে জাবে । গর্জে ওঠে শালু। যাকেই দেখবে ওমনি পাত্র হিসেবে তাকে গ্রহণ করবে । আমি কি এতই ফেলনা তোমার কাছে । আমার কোন মতা মত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না দেখি তোমার ! কি ভাবো মেয়েদের তোমরা ! মেয়ে হয়ে জন্মান কি এতই পাপ !
মা চুপসে জান । জানেন মেয়ের রাগের কথা ।
পরের দিন শালু যথারীতি কলেজে চলে জায় ।
ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে দেখা হয়নি কিম্বা কোন কথা হয়নি। ডাইরেক্টারের অফিস থেকে শালিনীর ডাক আসে । সেখানে গিয়ে ও বেঙ্গালুরুর ট্রেনিং এর চিঠি পায় এক মাসের ট্রেনিং আই আই এস সি
তে .ওখানে প্রফেসার অনুরাগ কুমার , ডাইরেক্টর আছেন । টিকিট সমেত জার্নি এক্সপেন্সেস এবং এক মাসের আগাম মাইনে একটা খামে ভরে অফিসে দিয়ে দেয় শালিনীর হাতে । আর তিন দিন সময় আছে রওনা হওয়ার ।
জিজু , দিদি, টুকাই আজই এসে পৌঁছয় । মাকে ওদের সঙ্গে যেতে হয় কারন এখানে মা একলা থাকা সম্ভব না । শালিনী IIST তে থাকা কালীন ওখানে চেষ্টা করবে কোন জবের জন্য । অয়নের কাছে থাকতে পারবে । অয়ন ও ওর ওপর রাগ করবে না।
অয়নকে ওর মেল আই ডি তে একটা মেল পাঠায় বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগের দিন। তাছাড়া ওকে এস এম এস করে স্টেশনে থাকতে বলে । শালিনী যানে , অয়ন কখনই না এসে থাকতে পারবে না । ৩২ ঘণ্টা ট্রেন জার্নির পর ওর খুব টায়ার্ড লাগছিল । স্টেশনে অয়ন আসবে কিনা জানেনা কিন্তু ওর দৃঢ় বিশ্বাস অয়ন আসবেই । সত্যি অয়ন এসেছিল । খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিল। অয়নকে দেখে শালু ধাতস্থ হল ।ওকে বোঝাতে চেষ্টা করল বিগত ঘটনার জন্য দুঃখিত কিন্তু ও নিরুপায় ছিল। অয়ন ও এক গুঁয়ে ছেলে। ও কিছুতেই ওটাকে সহজ ভাবে নিতে পারলোনা ।
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
মুখে নেই ভাষা আছে সুধু ভালোবাসা
বুঝি আমি তোমার চোখের যে ভাষা ...... .......(১)
অশনি সঙ্কেত ওই আকাশে গুরু গম্ভীর নাদে
মেঘের পরশে আজ বাতাস যে কাঁদে
তবু ঝরে মোর আঁখি হতে অবিশ্রান্ত ধারা
কম্পিল যে আজ মৃদু তালে ধরণী ধরা ......... (২)
তোমারি ছবি দেখি মনের আঙ্গিনায়
ভুলিনিগো তোমারে ভুলিনি যে হায়
বিরহ যাতনা যে আর নাহি সয়
স্মৃতিটুকু রেখেছি মনে এই ভরসায়
ফিরিয়া আসিবে তুমি সেই ভরসায় .............( ৩ )
আজ শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরে
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
.
এই বিশাল পৃথিবীতে একলা মহিলা নিজের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে তার সমস্ত কাজ সুচারু রূপে করা এক কঠিন পরীক্ষার মত । তাতে উত্তীর্ণ হওয়া শক্ত । তার মনকে শক্ত করতে হবে । ভেঙ্গে পড়লে চলবে না । অয়ন বুঝতে পারলোনা যে এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন রকম অশালীনতা বরদাস্তর বাইরে । সামান্য কিছু ঘটলে শালিনীর ক্যারিয়ারের ওপর আঁচ পড়বে সেটা সে কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারবে না । কারুর কাছে মুখ দেখাতে পারবে না সেটা কি অয়ন বোঝেনা !!
অয়নকে বোঝানর জন্য ফোন করে কিন্তু ও কেটে দেয়। বাড়ীতে কাউকে বোঝাতে পারবেনা । মা তাকেই দুসবে বারে বারে । এটাই বোধ হয় মেয়েদের প্রধান সমস্যা । অগত্যা বাড়ী যাওয়ার কথা ভুলে নিজের কাজে মন দেয় । ডঃ ভট্টাচার্য সত্যি ভদ্র লোক । উনি কিন্তু শালিনীর অনেক খারাপ ব্যাবহার সহ্য করেছেন । কিছু কখন মুখ ফুটে বলেন নি। বেশ কিছুদিন এরকম চলে । শালিনী বেঙ্গালুরুর ট্রেনিং টা পরে যেতে চায় । ওর মন একদম ভালো-না কদিন ধরে । মেয়েদের মনে প্রথম বসন্তে কোন পুরুষের আগমন হলে সাধারণত সেই আঁচড়টা থেকেযায় । সেটা ভুলতে পারে না ওরা । ওটাই অনাবিল প্রেমের নিদর্শন । ওতে কিছু খামতি থাকে না । এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম। তাই শালিনীর জীবনের প্রথম প্রেম তার মনে দাগ রেখে গেল। ও সেটা শত চেষ্টা করেও মুছতে পারছেনা ।
এক রবিবারে মা ; জিজু , দিদি , টুকাইকে সঙ্গে করে হাজির হলেন ভুবনেশ্বর । শালিনী ওদের দেখে আশ্চর্য হয় । বলে কিগো তোমরা কিছু না বলে চলে এলে যে । আমাকে খবর দেবে ত !
মা বলেন:- সবাই তোকে সারপ্রাইজ দেব ভাবলাম । কোই অয়নদের বাড়ীথেকে ত কেউ এলেন না ।
শালিনী:- আমি কি করে বলব মা এখানে বসে ? ওরা আসবে কি না আসবে ওদের ব্যাপার । ওরা বড়লোক ওদের খেয়াল খুশী অনুজাই চলে । খেয়াল হয়েছিল আমাকে বিয়ে করবে বলে এখন সে খেয়াল মাথা-থেকে চলে গিয়েছে । ব্যাস । আমি দিব্বি আছি । আমাকে আর কেউ আর বিরক্ত করবেনা বিয়ের ব্যাপারে । তোমরা সব একে একে ফ্রেশ হয়ে নাও । দুটো বাথ রুম আছে ।
একটা বন্দ থাকে । তোমরা এলে ভালই হল । আজ চল সকলে মিলে পুরী যাই ।
টুকাইকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
একটা টয়টা ইনো-ভা ভাড়া করে সকলে পুরী বেড়াতে গেল বেলা ১২ টা নাগাদ । ওখানে , “হলিডে রিসোর্ট হোটেলে” জিজু .. দুটো রুম বুক করেছিল । জিজু , দিদি দুজনে ব্যাঙ্কের থেকে এল টি সি পায় তাই ওরা প্রত্যেক বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায় । শালিনীকে অনেকবার বলেছে ওরা ওদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওত অন্য ধাতের মেয়ে । ওসব বেড়াতে যাওয়া ওর ভালো লাগে না । কিন্তু এবারে মা সঙ্গে তাই মানা করলনা । তাছাড়া এমনিতেই ওর কেমন দম বন্দ লাগছিল ।
পুরী বেড়ানটা ভালই লাগছিল । সমুদ্র , নুলিয়া , জগন্নাথ ঠাকুর দর্শন এর বিশেষ আকর্ষণ । মা মানত করেছেন শালুর বিয়ে হলে পূজো দেবেন। মা সত্যি উতলা হচ্ছেন ওর জন্য । তার-পরদিন শালুর ক্লাস ও সকাল সকাল মাকে নিয়ে ট্রেনে ফিরে আসে ভুবনেশ্বর । দিদিরা ওখানে আরও দুদিন থাকবে ।
অনেক দিন পর মাকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
অনেক দিন বাদে মায়ের হাতের রান্না খাবে । সত্যি মা না-থাকলে ওর খুব বাজে লাগে ।তাই নিজে বাজার থেকে সব গুছিয়ে কিনে এনেছে । বাজার থেকে ফেরার সময় মা’কে ওর কোয়ার্টারের সামনে ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে কথা বলতে দেখে আশ্চর্য হয়। কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই সারকে “গুড মর্নিং সার বলে উইশ করে” ।
আপনার মা এসেছেন বলেন-নিত মিস সান্যাল !
হ্যাঁ সার , মা আজ আমার সঙ্গে এসেছেন ।
বাঃ এত আনন্দের কথা । আমার কথা বলার লোক এসে-গিয়েছেন । আমার একটু সময় কাটবে । কোন আপত্তি নেইত আপনার !
মা বলেন, “ওমা সে কি কথা ! এত আনন্দের কথা । আমাদের ও সময় কাটবে”। আপনার মা বাবা কি দেশে ?
না মাসিমা ছোট বেলা থেকেই আমি পিতৃ হারা । মা স্কুলের টিচার ছিলেন । তিনি অনেক কষ্টে আমাকে মানুষ করেন। এখন উনি কলকাতায় আছেন মামার বাড়ীতে ।
মাকে নিয়ে আসেন না কেন ?
মায়ের বয়েস হয়েছে তাই উনি ওখানেই থাকতে ভাল বাসেন।
ও তাই বুঝি । তুমি বাছা একদিন আমার এখানে আমার হাতের রান্না খেও । আমি গুছিয়ে নি তারপর তোমায় খবর দেব কেমন !
শালিনী ও ঘর-থেকে সব শুনছিল । মায়ের আক্কেল দেখে অর গা রি রি করে উঠলো । একদম সেকেলে । হুট করে সকলকে আপন করে ফেলে । আগু পিছু ভাবে না কি হতে পারে !
তোমার বিয়ে হয়েছে বাবা ? সার লজ্জায় বলেন না মাসিমা হয়নি । আমি পরে আসবো একদিন । এখন জাই । কাল ক্লাসের জন্য পড়াশুনো করতে হবে ।
সার জাওয়ার পর শালু মায়ের ওপর খড়গ হস্ত । কি দরকার তোমার ওনার সঙ্গে এত কথার শুনি ? তুমি এখানেও ওই এক কান্ড করবে দেখছি । সকলকে ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করবে তার বিয়ে হয়েছে কিনা ! কি তুমি মা ! কেন বোঝ না এসব বলতে নেই। আমি পারব না তোমাকে বোঝাতে । শালু খুব আস্তে তার মা’কে বিদ্রূপের সঙ্গে বলে, “তা তোমার নতুন জামাইকে কবে খাওয়াচ্ছ শুনি ?”
মা হতবাক হয়ে-জান ওর কথা শুনে । ওই ছেলেটি খুব ভাল শালু । ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছিল তাই বললাম । তুই রাগ করছিস কেন মা ? ওত তোদের এখানেই পড়ায় । পাত্র হিসেবে-ত ভালই ।
মা .. মা .. তোমাকে নিয়ে আমার মাথা খারাপ হয়ে জাবে । গর্জে ওঠে শালু। যাকেই দেখবে ওমনি পাত্র হিসেবে তাকে গ্রহণ করবে । আমি কি এতই ফেলনা তোমার কাছে । আমার কোন মতা মত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না দেখি তোমার ! কি ভাবো মেয়েদের তোমরা ! মেয়ে হয়ে জন্মান কি এতই পাপ !
মা চুপসে জান । জানেন মেয়ের রাগের কথা ।
পরের দিন শালু যথারীতি কলেজে চলে জায় ।
ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে দেখা হয়নি কিম্বা কোন কথা হয়নি। ডাইরেক্টারের অফিস থেকে শালিনীর ডাক আসে । সেখানে গিয়ে ও বেঙ্গালুরুর ট্রেনিং এর চিঠি পায় এক মাসের ট্রেনিং আই আই এস সি
তে .ওখানে প্রফেসার অনুরাগ কুমার , ডাইরেক্টর আছেন । টিকিট সমেত জার্নি এক্সপেন্সেস এবং এক মাসের আগাম মাইনে একটা খামে ভরে অফিসে দিয়ে দেয় শালিনীর হাতে । আর তিন দিন সময় আছে রওনা হওয়ার ।
জিজু , দিদি, টুকাই আজই এসে পৌঁছয় । মাকে ওদের সঙ্গে যেতে হয় কারন এখানে মা একলা থাকা সম্ভব না । শালিনী IIST তে থাকা কালীন ওখানে চেষ্টা করবে কোন জবের জন্য । অয়নের কাছে থাকতে পারবে । অয়ন ও ওর ওপর রাগ করবে না।
অয়নকে ওর মেল আই ডি তে একটা মেল পাঠায় বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগের দিন। তাছাড়া ওকে এস এম এস করে স্টেশনে থাকতে বলে । শালিনী যানে , অয়ন কখনই না এসে থাকতে পারবে না । ৩২ ঘণ্টা ট্রেন জার্নির পর ওর খুব টায়ার্ড লাগছিল । স্টেশনে অয়ন আসবে কিনা জানেনা কিন্তু ওর দৃঢ় বিশ্বাস অয়ন আসবেই । সত্যি অয়ন এসেছিল । খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিল। অয়নকে দেখে শালু ধাতস্থ হল ।ওকে বোঝাতে চেষ্টা করল বিগত ঘটনার জন্য দুঃখিত কিন্তু ও নিরুপায় ছিল। অয়ন ও এক গুঁয়ে ছেলে। ও কিছুতেই ওটাকে সহজ ভাবে নিতে পারলোনা ।
কালকে IIST তে জএন করতে হবে । তাই আজ কোথাউ রেস্ট নেবে শালু । Krishinton Suites হোটেল IIST র কাছে । তাই ওখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিল শালিনী ।
ও নিজে সব ফর্মালিটির পর নিজের নামে রুম নিলো PAN কার্ড দেখিয়ে। অয়ন বারুণ করলনা কারন ও যানে শালিনী কারুর অনুগ্রহ পছন্দ করে না । দুজনের মধ্যে সেরকম কোন কথা হলনা ।
শালিনী রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয় পরে কিছু জলখাবার খায় । এখানে ইডলীর চল বেশি । তাই খেল দুজনে । তারপর সব ঘটনা অয়নকে একে একে বলল । অয়ন শুনে সেরকম খুশি হলনা । কিন্তু অখুশিও হলনা কারন ও সত্যি শালুকে ভালবাসে । শালু কিন্তু বিশাল বিয়ের আয়োজনের পক্ষে নয়। খুব কম লোকের আয়োজনের মধ্যে বিয়ে সারতে চায়। মায়ের ইচ্ছে দিদির বিয়ের মতন ওর বিয়ের ও আয়োজন করবেন এক ই ভাবে কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয় । এসব খর্চা বিলাসিতা মনে করে শালিনী তাই ও অয়নের মতা মত নিলো।
অয়ন হ্যাঁ না কিছুই বললনা । শুধু বললো , আমি বাবা মায়ের একটাই ছেলে , তাঁদের ইচ্ছার বিরুধ্যে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
শালুর নিজের কেরিয়ার আছে । ও এখন এই সব টাকা নয় ছয় করতে পারবে না সেটাও অয়নকে জানিয়ে দিল।
দুজনের মধ্যে কেউ ই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলোনা । যে যার যুক্তিতে অনড় ।
শালু খুব ক্লান্ত ছিল । ও হোটেলে গিয়ে রেষ্ট নিল। অয়ন চলেগেল ওর অফিসে । রাতে মার ফোন এল শালুর কাছে । অয়নের মা এসেছিলে শালুদের বাড়ী বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । ছেলের কথায় ৫০ জন বর যাত্রীতে ওনারা রাজি হলেন কারন ছেলে বলেছে শালুকে ছাড়া আর কাউকে ও বিয়ে করবে না । বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছে ১৫ ই বৈশাখ । ভাল দিন আছে । প্রায় এক মাসের ওপর বাকি। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি।
শালু সব শুনল । কিছুই মন্তব্য করলনা । হুঁ হাঁ তে কথা সারল মায়ের সঙ্গে ।
এর মধ্যে শালুর ট্রেনিং শেষ হতে চলেছে ।
অয়নের সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হয় । ওর কাজের চাপ বেড়েছে । রাতে ফোন করে । শালু এখানে প্রচুর ব্যস্ত থাকে । বাইরে যাওয়ার সময় পায়না । আজকাল অয়ন খুব চুপ চাপ হয়ে গিয়েছে আগের চেয়ে অনেক পাল্টে গিয়েছে এই কদিনে । রবিবার আসে শালুকে নিতে । কেনা কাটা করে । বেঙ্গালুরুর ইস্কনের মন্দীরে যায় দুজনে । যায়গাটা ওদের দুজনের ই ভাল লাগে । শালু মায়ের জন্য চন্দন কাঠ নিয়েছে । দিদির জন্য স্যান্ডেল উড সেন্ট ইত্যাদি।
এবার ফেরার প্রস্তুতি । ওদের বিয়ের কার্ড ছাপান হয়ে গিয়েছে । আর মাত্র ৭ দিন বাকি ।
*** শেষ পর্ব পরের সপ্তাহে ***
ও নিজে সব ফর্মালিটির পর নিজের নামে রুম নিলো PAN কার্ড দেখিয়ে। অয়ন বারুণ করলনা কারন ও যানে শালিনী কারুর অনুগ্রহ পছন্দ করে না । দুজনের মধ্যে সেরকম কোন কথা হলনা ।
শালিনী রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয় পরে কিছু জলখাবার খায় । এখানে ইডলীর চল বেশি । তাই খেল দুজনে । তারপর সব ঘটনা অয়নকে একে একে বলল । অয়ন শুনে সেরকম খুশি হলনা । কিন্তু অখুশিও হলনা কারন ও সত্যি শালুকে ভালবাসে । শালু কিন্তু বিশাল বিয়ের আয়োজনের পক্ষে নয়। খুব কম লোকের আয়োজনের মধ্যে বিয়ে সারতে চায়। মায়ের ইচ্ছে দিদির বিয়ের মতন ওর বিয়ের ও আয়োজন করবেন এক ই ভাবে কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয় । এসব খর্চা বিলাসিতা মনে করে শালিনী তাই ও অয়নের মতা মত নিলো।
অয়ন হ্যাঁ না কিছুই বললনা । শুধু বললো , আমি বাবা মায়ের একটাই ছেলে , তাঁদের ইচ্ছার বিরুধ্যে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
শালুর নিজের কেরিয়ার আছে । ও এখন এই সব টাকা নয় ছয় করতে পারবে না সেটাও অয়নকে জানিয়ে দিল।
দুজনের মধ্যে কেউ ই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলোনা । যে যার যুক্তিতে অনড় ।
শালু খুব ক্লান্ত ছিল । ও হোটেলে গিয়ে রেষ্ট নিল। অয়ন চলেগেল ওর অফিসে । রাতে মার ফোন এল শালুর কাছে । অয়নের মা এসেছিলে শালুদের বাড়ী বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । ছেলের কথায় ৫০ জন বর যাত্রীতে ওনারা রাজি হলেন কারন ছেলে বলেছে শালুকে ছাড়া আর কাউকে ও বিয়ে করবে না । বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছে ১৫ ই বৈশাখ । ভাল দিন আছে । প্রায় এক মাসের ওপর বাকি। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি।
শালু সব শুনল । কিছুই মন্তব্য করলনা । হুঁ হাঁ তে কথা সারল মায়ের সঙ্গে ।
এর মধ্যে শালুর ট্রেনিং শেষ হতে চলেছে ।
অয়নের সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হয় । ওর কাজের চাপ বেড়েছে । রাতে ফোন করে । শালু এখানে প্রচুর ব্যস্ত থাকে । বাইরে যাওয়ার সময় পায়না । আজকাল অয়ন খুব চুপ চাপ হয়ে গিয়েছে আগের চেয়ে অনেক পাল্টে গিয়েছে এই কদিনে । রবিবার আসে শালুকে নিতে । কেনা কাটা করে । বেঙ্গালুরুর ইস্কনের মন্দীরে যায় দুজনে । যায়গাটা ওদের দুজনের ই ভাল লাগে । শালু মায়ের জন্য চন্দন কাঠ নিয়েছে । দিদির জন্য স্যান্ডেল উড সেন্ট ইত্যাদি।
এবার ফেরার প্রস্তুতি । ওদের বিয়ের কার্ড ছাপান হয়ে গিয়েছে । আর মাত্র ৭ দিন বাকি ।
*** শেষ পর্ব পরের সপ্তাহে ***
No comments:
Post a Comment