তথ্য সংগ্রহ ও রচনা - অনীক ত্রিবেদী / কবির শরীর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।
তথ্য সংগ্রহ ও রচনা - অনীক ত্রিবেদী
কবির শরীর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।মুখে মুখে কবিতা বলার পর খানিক্ষন অন্য কিছু চিন্তা করছিলেন হয়তো, হঠাৎ ডঃ লোলিতমোহন ব্যানার্জী ঘরে এসে বললেন
‘আজ দিনটা ভালো আছে। আজই সেরে ফেলি... কি বলেন?’
এরকম হঠাৎ অপারেশনের কথা শুনে তিনি স্তম্ভিত। বললেন
‘আজ?’
আগে থেকে কেউ জানায়নি আজ অপারেশন হবে।
‘তা একরকম ভালই, এরকম হঠাৎ হয়ে যাওয়া মন্দ নয়’।
জোড়াসাঁকোতে হুলুস্থুলু পড়েগেলো। আয়োজন হাঁসপাতালের চেয়ে কিছু কম নয়। পূব দিকের বারান্দা সাজানো হয়েছে অপারেশনের উপযুক্ত করে। পাতা হয়েছে বিছানা। ছুড়ি , কাঁচি, স্যালাইন এবং অস্ত্রোপচারে লাগতে পারে এমন জিনিসপত্র ।
রানী কে কবি বললেন খানিক্ষন আগের লেখাটা পড়ে শোনাতে।
চোখ বন্ধ করে শুনছেন কবি। রানী পাশথেকে স্পষ্ট উচ্চারণে বেশ জোরে জোরে পাঠ করছে
“বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,
এই নিয়ে তাহার গৌরব।
লোকে তা'রে বলে বিড়ম্বিত।
সত্যেরে সে পায়
আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে’’।
পড়া শেষ হবার পর খানিক্ষন চুপ করে রইলেন তিনি। তারপর বললেন একটু সংশোধন করা দরকার। এখন তাড়াহুড়োর মধ্যে হবে না। অপারেশনের পর মাথাটাও নাকি পরিষ্কার হয়ে যাবে... তখন একটু মাজা ঘষা করে দেবো।
চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করছেন। বেলা প্রায় ১০:৪৫।
গুরুদেব কে নিয়ে আসা হল একটা স্ট্রেচারে করে। অপারেশন শুরু হয়ে গেলো।
ছোটো অপারেশন তাই বেশি সময় লাগলো না। পণে বারোটা নাগাদ বেশ হাঁসি মুখে বেড়িয়ে এলেন ডঃ লোলিতমোহন ব্যনার্জী। বললেন কবি ভালো আছেন।
আস্তে আস্তে একটু কথাও বলছেন । সন্ধ্যে বেলায় মেডিকেল বুলেটিনে লেখা হল কবি ভালো আছেন।
৩১ জুলাই
আগের দিন রাতে ভালোভাবে ঘুমোতে পারেন নি। অবসন্ন দুটো চোখ , তাকালে মায়া হয়। এই ভালো তো এই খারাপ। দারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটল গোটা দিন টা।
১লা আগস্ট
অবস্থা বেশ ভালই ছিল কিন্ত হঠাৎ করে দেখাদিলো শরীর জুড়ে অস্বস্তি । ক্রমাগত হেঁচকি উঠছে । ওষুধ দেওয়া হল। তাও অবস্থার পরিবর্তন হল না। ঠাকুর বাড়িতে তখন অনেক লোক। এক এক জন এক একটা টোটকা বললেন। কেউ বললেন এলাচ –মিছরি মধু দিতে। কেউ ময়ূরের পালক পুড়িয়ে সেই ছাই দিয়ে টোটকা বানাতে বললেন। যে যেরকম ভাবে পারলেন সমস্তরকম চেষ্টা করা হল।
২রা আগস্ট
রাত টা ভালোয় ভালোয় কাটল। ঘুম হয়েছে। কিন্তু আবার শুরু হল কিডনিতে গোলমাল। ক্রমশ দুর্বল হচ্ছেন কবি। ক্রমশ ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে।
৩রা আগস্ট
সকালের মেডিকেল বুলেটিনে লেখা হল উদ্বেগের কারণ যথেষ্ট রয়েছে। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।
৪ ঠা আগস্ট
আগের রাতে প্রচণ্ড অস্বস্তি ঘিরেছিল সারা শরীরে। সকাল থেকেই গা গরম। বিকেলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়তে লাগলো।
৫ ই আগস্ট
মেডিকেল বুলেটিনে বলা হল কবির শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
৬ই আগস্ট
অবস্থা আশঙ্কাজনক
No comments:
Post a Comment