Thursday, August 1, 2013

২য় পর্ব


২য় পর্ব

সুদিপ্তর মা সল্ট লেকে মামার বাডিতে থাকেন এ জে ব্লকে । মামা র সিটি সেন্টারে দুটো দোকান । একটা গারমেন্টস্ এর আরেকটা ইলেক্ট্রনিক্স্ এর শো রুম। প্রচুর বিক্রি হয়। মামার ইছে ছিল সুদিপ্ত কে এম বি এ পডানোর । ওনার ছেলে নেই তাই সুদিপ্ত,সুশান্ত দুজন কেই ছেলের মোতন দেখেন। মার ঘর ঠাকুর ঘরে । মা পুজো আচ্ছা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটান । প্রত্যেক মঙ্গল শনি দক্ষিনেশ্বর কালি বাডি গিয়ে পূজো দেন দুই ছেলের নামে। মামা গাডি দিতে চাইলে , মাগর রাজি হন বলেন অত আডোম্বরে পুজো দিলে ঠাকুর গ্রহন করেন না।মহিলাদের মাথায় কে যে এই সব   ঢ়োকায় জানিনা  । নিজেদের কষ্ট দিতে এদের জুডি নেই।সুশান্ত কিছুদিনের জন্য খডগপুর থেকে  মায়ের কাছে এলো মাকে দেখা করতে । মা আনন্দে আটখানা ছেলেকে পেয়ে । আনন্দাশ্রু দুচোখ বেয়ে গডাতে লাগ লো । সুশান্ত ধির স্থির খুব শান্ত মেজাজের ছেলে । বাবার দেহান্তর পর আর যেন শান্ত। দাদা চলে যাওয়ার পর ওর দায়িত্ত বেডেছে ।  প্রায় দিন ফোনে মা'’র খবর নেয় ।
ঘরে ঢ়ুকে মাকে প্রনাম সেরে হাত পা ধুতে যায় ।
মা তোয়ালে দিতে দিতে বলেন, “রাস্তায় কষ্ট হয় নি ত বাবা
কষ্ট কিসের মা !  তোমাকে ছেডে থাকার কষ্ট বলছো !! না অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।
না না ট্রেন জার্নি করে এলি তো তাই বলছি ।
ও ওভ্যেস হয়ে গিয়েছে। এই টুকু ত পথ । সকলে ডেলি পেসেঞ্জারি করে কোলকাতা থেকে ।
হ্যাঁ তা করে ।  স্নান টা সেরে নে আমি খাবার বাডছি ।
এই সময় মামি এলেন এক থালা জলখাবার নিয়ে । লুচি ফুল কপির তরকারি , বেগুন ভাজা , পায়েস আর মিষ্টি ।
ধপাস করে প্রনাম মামিকে। কেমন আছো মামি ?
ভালো । তুই কেমন আছিস ? এতো রোগা হয়ে গেছিস কেনরে?
হস্টেলে কি খাস না ভালো করে?
কি যে বল । তোমরা মায়েরা শুধু আমাদের রোগা হতে দেখ । বন্ধুরা বলে মোটা হয়ে জাচ্ছিস খেয়াল রাখিস। জিম্ এ যা নয়তো ভুগবি।
কোন বন্ধু , ছেলে না মেয়ে ? মা বলেন ।
খুব অপ্রস্তুত মনে হল সুশান্ত কে। আমি দাদা নয় মা যে হুট্ করে....
থাক থাক । আর বলতে হবে না ।  উনি যাওয়ার এক বছর না হতেই  ছেলে ............ চোখের জল পুঁছতে পুঁছতে, মা .............বলেন ।  
আহ্ কান্নার কি আছে মা আমি ত আছি !
হ্যাঁ সেই আসায় বসে আছি। তোরা মানুষ হলে আমি কি তোদের বিয়ে দিতাম না । আমার কত সখ ছিল .............।
ঠিক আছে ঠিক আছে । দাদা তো আমাকে হাজার ডলার পাঠিয়েছে ।
তা কি বেশি করেছে শুনি । ছোট ভাইয়ের জন্য উনি করেন নি । সারা জন্ম ভাই বোন কে দেখলেন তারা এখন মুখ ঘুরিয়ে থাকে । আমার কপালে জত কষ্ট !
ঠাকুরঝি তুমি খেয়ে নাও । ও সব কথা থাকমামি বলেন ।  রান্না ঘরে গেলেন রান্নার ঠাকুর (জগা ননা) কে ফরমাজ করতে দুপুরের রান্না র জন্য ।
জগা ননাকে অনেক দিন থেকে দেখি মামার বাডিতে রান্না করতে । জগা ননা র গ্রাম উডিষ্যা র  ভদ্রকে । ,  মাছ মাংস দারুন করে।
সুশান্ত জলখাবার খেয়ে নেটে বোসলো । এফ বি খুলে বন্ধুদের সঙ্গে একটু চ্যাট্ করে দাদার কিছু ফটো দেখলো । দাদা সুদিপ্তা বৌদি স্ট্যাচু অফ্ লিবার্টি , নিউ ইয়র্কের আরো কিছু যায়গা , বিভিন্ন শপিং মল এর ফটো , হ্বাইট্ হাউসের কিছু ফটো র ব্যাক গ্রাউন্ডে ওদের ফটো পোষ্ট গুলো দেখলো । ভালোই হয়েছে  ফটো গুলো । পিকাসা তে আপ্লোড্ করে এ্যাল্বাম   বানাল "দাদা বৌদি এট স্টেটস্" ।
দাদাকে ফটো পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওর কিছু কলেজের তোলা ছবি আপ্লোড্ করে পাঠালো । বৌদি কে হায় জানালো ।
দুপুরের খাওয়াতে  জগা ননা  , ইলিস মাছের ঝাল , মোচার ঘন্ট , ফুল কোপির তরকারি,পাঁপোড় ভাজা , টমাটোর চাটনি , পায়েস , মিষ্টি ,দই ইত্যাদি ভালোই বানিয়েছিল । ভাতটা আমি এম্নিতেই কম খাই । এই বয়েসে মোটা হলে আর দেখতে হবে না। বন্ধুরা টিটকিরি মারবে ।
খেয়ে বিকেলে পার্কে  বেরুলাম । রাস্তায় 'শ্রাবন্তির'  সঙ্গে দেখা। ও পার্কে যাচ্ছিল ।আমাকে আগে থেকেই বলেছিল পার্কে যাওয়ার জন্য ।  আমার সঙ্গে পা মেলালো ।
শ্রাবন্তি আমার সঙ্গে স্কুল থেকে কলেজ ওব্ধি পডেছে ।  একি কলেজে  একি ক্লাসে পডেছি ১২ক্লাস ওবধি । আমার সঙ্গে  আই আই টি  এন্ট্রান্স্ ও  দিয়েছিল বেচারি পায়নি । খুব ভেঙ্গে পডেছিল। জয়েন্টের রেসাল্ট ভালো ছিল  ও এখন শিবপুরে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পোডছে । ভালই পডে তবে বড্ড পাকা । কিন্তু মেয়েটা ভালো । আমাকে খুব ভাল বাসে । আমিও ।
কিরে কবে এলি?
আজকে ।
কত দিন থাকবি ?
পরশু চোলে যাবো।
কেন ওখানে কেউ নতুন বন্ধু  হয়েছে বুঝি ?
তোদের মেয়েদের ওই এক কথা ! এতো জেলাস কেন বলতো তোরা ?
বাব্বা ! বিবেকানন্দ হলি নাকি? আমি কি জিজ্ঞ্যেস করছি তুই কি ভাবছিস ! আমি বলছি তোর নতুন কোন ছেলে বন্ধুর কথা ।
কেন তার সঙ্গে লাইন মারবি ?
দেখেছিস্ কে জেলাস্ !
ছাড । তোর সেমিষ্টার শেষ হয়েছে ?
হ্যাঁ । তোর ?
হ্যাঁ , তাই জন্যই ত আস্তে পেরেছি।
তাই বল। হ্যাঁরে মাসিমা কেমন আছেন ?
ভালো ।
তোদের বাডি নিয়ে যাবি?
রক্ষে কর আর কেল করিসনা ! মাযা রেগে আছেন দাদার ব্যাপারে !!
কেন তোর বৌদি ত তোর দাদার প্রজেক্টে আছেন, না ? কি মজা দুজনে খুব এঞ্জয় করছে বল। তোর ইচ্ছে করে না  স্টেস্ এ যেতে বি.টেক্ এর পর ?
না দাদা যে ভুল করেছে আমি তা কোরবোনা ।
তোর দাদা বৌদির ফটো দেখাবি।
কি হবে দেখে ?
ইন্সপায়ার্ড হব ! আমারাও যাবো ।
মানে ?
ওরে ভোঁদাই, বিবেকানন্দ !এই আমায় কিস্ করবি?
তুই খুব ফাজিল হয়ে গেছিস ।
কেন আমার পেছনে লেগে আছিস? দু দিনের জন্য এসেছি তাও তুই আমাকে সিডিউস্ করছিস ? কেন ? কলেজে ফোন ত করিস । হস্টেলে ছেলেরা আমাকে বলে তোর গার্ল ফ্রেন্ড্ !!
আমি কি বলি বল ?
কেন তুই বলবি হ্যাঁ । আমার হবু বৌ । দেখবি ওরা চুপসে যাবে। ঠিক কি না।
সুশান্ত চুপ করে যায়। ওর মার কথা বলে। ওর মা কত কষ্ট পাচ্ছে দাদা ওই কান্ড করাতে।
দেখ সুআমাকে আর বোঝাস না ! তোর দাদা যা করেছেন ঠিক করেছেন । সুন্দর দেখতে বৌ আবার সেম প্রফেসেনে আছেন ওনারা । তোর বৌদির বাবা মা আই .এ.এস অফিসার । আর কি চাইতিস তোরা ?
ওইটাই তো মায়ের অসুবিধে । মা ঘরোয়া মেয়ে ...........
রাখ রাখ ওই গেঁও ..........
এটা খুব অব্জেক্সনেবিল কথা বলেছিস কিন্তু। আমি এটা পছন্দ করিনা কিম্বা আশা করিনা তোর কাছ থেকে অন্তত ।
এই ! আমি তোর মাকে মানে মাসিমাকে বলেছি নাকি ? আমি কথাটা শেষ করিনি ..........
ঝগডা করতে আমি ভালো বাসিনা।
সেত যানি বিবেকানন্দ ! মাই সুইট হার্ট । আই লাভ ইউ । কিরে কিছু বোলছিস না যে। তুই কি রিতুপর্ণ ঘোস নাকি রে ?
দেখ বাডা বাডি হচ্ছে ।
তবে চুপ করে আছিস কেন? দেখ এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে । পাসে তুই আর আমি। কি রোমান্টিক না !!
আমি যাচ্ছি ।
বোস না । আমি মেয়ে হয়ে বসেছি তুই কেন লজ্যা পাচ্ছিস ? সত্যি তোরা দুই ভাই এক কেটেগোরির !! ডিব্বা কোথাকার !! বলে হাঁসে ।
ওই ববির ডায়লগটা মনে রেখেছিস আর ওর এপ্লিকেসন্টাও তোর জানা।
তা কি করবো ? তোরা যদি চুপ করে থাকিস কিছু না বলে আমরা মেয়েরা  কথা বলতে   বাধ্য হই ।
প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করলো সুশান্ত ।  তুই কখন পডাসোনা করিস ? আমার সেমিষ্টারের পরিক্ষার জন্য প্রিপারেসন করতে হবে । চল যাই । মা চিন্তা করবেন।
ওরে মাতৃভক্ত ছেলেরে । সত্যি তোদের মত ছেলে পাওয়া মুস্কিল । গুড গুড বয় । ওরে আমার ভোলা রে । বলে একটু আলত থাপ্পড দিল পেছনে।
তুই কিন্ত আমার কোকা কোলা হতে পারবিনা।
কেন ? আই আই টি তে পেলাম না বলে বলছিস ।
না তা কেন?
তবে?
তবে আবার কি !তুই নিজেই ভেবে দেখ। আমি এবার চলি। বাই ।
বাই । আবার কবে আসবি?
দেখ । ফাজলামি না করে পডাশুনোর দিকে মন দে ।
আমাকে একটু পায়ের ধুলো দিবি ? তোর মত ভালো ছেলে আমাদের কলেজে একটাও দেখিনি ! শালা মেয়ে দেখলে জিব দিয়ে জল পডে আর মাষ্টার গুলো আরো হারামি । খালি ছুঁক ছুঁক করে।
পায়ের ধুলোর দাম আছে। দিতে পারবি ?
হ্যাঁ । দিতে পারবো ।
তবে  বি। টেক্ এ  ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়ে দেখা।
আই এক্সেপ্ট্ ইট মাই লাভ্ । কিন্তু তোকেও তাই হতে হবে ।তার পর কিন্তু আমি যা বোলবো তোকে মানতে হবে ।
চেস্টা করবো । তারপর  ঠাকুরের ইচ্ছা । মায়ের আশীর্বাদ থাকলে নিশ্চই হবে ।

দু জনে দু দিকে চলে গেল ।    

No comments:

Post a Comment