২য় পর্ব
সুদিপ্তর মা
সল্ট লেকে মামার বাডিতে থাকেন এ জে ব্লকে । মামা র সিটি সেন্টারে দুটো দোকান ।
একটা গারমেন্টস্ এর আরেকটা ইলেক্ট্রনিক্স্ এর শো রুম। প্রচুর বিক্রি হয়। মামার
ইছে ছিল সুদিপ্ত কে এম বি এ পডানোর । ওনার ছেলে নেই তাই সুদিপ্ত,সুশান্ত দুজন কেই ছেলের মোতন দেখেন। মা’র ঘর ঠাকুর
ঘরে । মা পুজো আচ্ছা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটান । প্রত্যেক মঙ্গল শনি দক্ষিনেশ্বর
কালি বাডি গিয়ে পূজো দেন দুই ছেলের নামে। মামা গাডি দিতে চাইলে , মা’ গর রাজি হন বলেন “অত
আডোম্বরে পুজো দিলে ঠাকুর গ্রহন করেন না”।মহিলাদের মাথায় কে
যে এই সব
ঢ়োকায় জানিনা । নিজেদের কষ্ট দিতে এদের জুডি নেই।সুশান্ত কিছুদিনের জন্য খডগপুর
থেকে মায়ের কাছে এলো মাকে দেখা করতে । মা আনন্দে আটখানা ছেলেকে পেয়ে । আনন্দাশ্রু
দুচোখ বেয়ে গডাতে লাগ লো । সুশান্ত ধির স্থির খুব শান্ত মেজাজের ছেলে । বাবার
দেহান্তর পর আর যেন শান্ত। দাদা চলে যাওয়ার পর ওর দায়িত্ত বেডেছে । প্রায় দিন
ফোনে মা'’র খবর নেয় ।
ঘরে ঢ়ুকে
মাকে প্রনাম সেরে হাত পা ধুতে যায় ।
মা তোয়ালে
দিতে দিতে বলেন, “রাস্তায় কষ্ট হয় নি ত বাবা” ।
কষ্ট কিসের মা
! তোমাকে ছেডে থাকার কষ্ট বলছো !! না অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।
না না ট্রেন
জার্নি করে এলি তো তাই বলছি ।
ও ওভ্যেস হয়ে
গিয়েছে। এই টুকু ত পথ । সকলে ডেলি পেসেঞ্জারি করে কোলকাতা থেকে ।
হ্যাঁ তা করে
। স্নান টা সেরে নে আমি খাবার বাডছি ।
এই সময় মামি
এলেন এক থালা জলখাবার নিয়ে । লুচি ফুল কপির তরকারি , বেগুন ভাজা , পায়েস আর মিষ্টি ।
ধপাস করে
প্রনাম মামিকে। কেমন আছো মামি ?
ভালো । তুই
কেমন আছিস ? এতো রোগা হয়ে গেছিস কেনরে?
হস্টেলে কি
খাস না ভালো করে?
কি যে বল ।
তোমরা মায়েরা শুধু আমাদের রোগা হতে দেখ । বন্ধুরা বলে মোটা হয়ে জাচ্ছিস খেয়াল
রাখিস। জিম্ এ যা নয়তো ভুগবি।
কোন বন্ধু , ছেলে না মেয়ে ? মা বলেন ।
খুব অপ্রস্তুত
মনে হল সুশান্ত কে। আমি দাদা নয় মা যে হুট্ করে....
থাক থাক । আর
বলতে হবে না । উনি যাওয়ার এক বছর না হতেই ছেলে ............ চোখের জল পুঁছতে পুঁছতে, মা
.............বলেন ।
আহ্ কান্নার
কি আছে মা আমি ত আছি !
হ্যাঁ সেই
আসায় বসে আছি। তোরা মানুষ হলে আমি কি তোদের বিয়ে দিতাম না । আমার কত সখ ছিল
.............।
ঠিক আছে ঠিক
আছে । দাদা তো আমাকে হাজার ডলার পাঠিয়েছে ।
তা কি বেশি
করেছে শুনি । ছোট ভাইয়ের জন্য উনি করেন নি । সারা জন্ম ভাই বোন কে দেখলেন তারা
এখন মুখ ঘুরিয়ে থাকে । আমার কপালে জত কষ্ট !
ঠাকুরঝি তুমি
খেয়ে নাও । “ও সব কথা থাক” মামি বলেন । রান্না ঘরে
গেলেন রান্নার ঠাকুর (জগা ননা) কে ফরমাজ করতে দুপুরের রান্না র জন্য ।
জগা ননাকে
অনেক দিন থেকে দেখি মামার বাডিতে রান্না করতে । জগা ননা র গ্রাম উডিষ্যা র ভদ্রকে । , মাছ মাংস দারুন করে।
সুশান্ত
জলখাবার খেয়ে নেটে বোসলো । এফ বি খুলে বন্ধুদের সঙ্গে একটু চ্যাট্ করে দাদার কিছু
ফটো দেখলো । দাদা সুদিপ্তা বৌদি স্ট্যাচু অফ্ লিবার্টি , নিউ ইয়র্কের আরো কিছু যায়গা , বিভিন্ন শপিং মল এর
ফটো , হ্বাইট্ হাউসের কিছু ফটো র ব্যাক গ্রাউন্ডে ওদের ফটো
পোষ্ট গুলো দেখলো । ভালোই হয়েছে ফটো গুলো । পিকাসা তে আপ্লোড্ করে এ্যাল্বাম বানাল "দাদা বৌদি
এট স্টেটস্" ।
দাদাকে ফটো
পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওর কিছু কলেজের তোলা ছবি আপ্লোড্ করে পাঠালো । বৌদি
কে হায় জানালো ।
দুপুরের
খাওয়াতে জগা ননা , ইলিস মাছের ঝাল , মোচার ঘন্ট , ফুল কোপির তরকারি,পাঁপোড় ভাজা , টমাটোর চাটনি , পায়েস , মিষ্টি
,দই ইত্যাদি ভালোই বানিয়েছিল । ভাতটা আমি এম্নিতেই কম খাই ।
এই বয়েসে মোটা হলে আর দেখতে হবে না। বন্ধুরা টিটকিরি মারবে ।
খেয়ে বিকেলে
পার্কে বেরুলাম । রাস্তায় 'শ্রাবন্তির' সঙ্গে দেখা। ও পার্কে যাচ্ছিল ।আমাকে
আগে থেকেই বলেছিল পার্কে যাওয়ার জন্য । আমার সঙ্গে পা মেলালো ।
শ্রাবন্তি
আমার সঙ্গে স্কুল থেকে কলেজ ওব্ধি পডেছে । একি কলেজে একি ক্লাসে পডেছি ১২ক্লাস ওবধি । আমার সঙ্গে আই আই টি এন্ট্রান্স্ ও দিয়েছিল
বেচারি পায়নি । খুব ভেঙ্গে পডেছিল। জয়েন্টের রেসাল্ট ভালো ছিল ও এখন শিবপুরে
ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পোডছে । ভালই পডে তবে বড্ড পাকা । কিন্তু মেয়েটা ভালো
। আমাকে খুব ভাল বাসে । আমিও ।
কিরে কবে এলি?
আজকে ।
কত দিন থাকবি ?
পরশু চোলে
যাবো।
কেন ওখানে কেউ
নতুন বন্ধু হয়েছে বুঝি ?
তোদের
মেয়েদের ওই এক কথা ! এতো জেলাস কেন বলতো তোরা ?
বাব্বা !
বিবেকানন্দ হলি নাকি? আমি কি জিজ্ঞ্যেস করছি তুই কি ভাবছিস ! আমি বলছি
তোর নতুন কোন ছেলে বন্ধুর কথা ।
কেন তার সঙ্গে
লাইন মারবি ?
দেখেছিস্ কে
জেলাস্ !
ছাড । তোর
সেমিষ্টার শেষ হয়েছে ?
হ্যাঁ । তোর ?
হ্যাঁ , তাই
জন্যই ত আস্তে পেরেছি।
তাই বল।
হ্যাঁরে মাসিমা কেমন আছেন ?
ভালো ।
তোদের বাডি
নিয়ে যাবি?
রক্ষে কর আর
কেল করিসনা ! মা’ যা রেগে আছেন দাদার ব্যাপারে !!
কেন তোর বৌদি
ত তোর দাদার প্রজেক্টে আছেন, না ? কি মজা
দুজনে খুব এঞ্জয় করছে বল। তোর ইচ্ছে করে না স্টেস্ এ যেতে বি.টেক্ এর পর ?
না দাদা যে
ভুল করেছে আমি তা কোরবোনা ।
তোর দাদা
বৌদির ফটো দেখাবি।
কি হবে দেখে ?
ইন্সপায়ার্ড
হব ! আমারাও যাবো ।
মানে ?
ওরে ভোঁদাই, বিবেকানন্দ !এই আমায় কিস্ করবি?
তুই খুব ফাজিল
হয়ে গেছিস ।
কেন আমার
পেছনে লেগে আছিস? দু দিনের জন্য এসেছি তাও তুই আমাকে সিডিউস্ করছিস ?
কেন ? কলেজে ফোন ত করিস । হস্টেলে ছেলেরা
আমাকে বলে তোর গার্ল ফ্রেন্ড্ !!
আমি কি বলি বল
?
কেন তুই বলবি হ্যাঁ
। আমার হবু বৌ । দেখবি ওরা চুপসে যাবে। ঠিক কি না।
সুশান্ত চুপ
করে যায়। ওর মা’র কথা বলে। ওর মা কত কষ্ট পাচ্ছে দাদা ওই কান্ড
করাতে।
দেখ ‘সু’ আমাকে আর বোঝাস না ! তোর দাদা যা করেছেন ঠিক
করেছেন । সুন্দর দেখতে বৌ আবার সেম প্রফেসেনে আছেন ওনারা । তোর বৌদির বাবা মা আই
.এ.এস অফিসার । আর কি চাইতিস তোরা ?
ওইটাই তো
মায়ের অসুবিধে । মা ঘরোয়া মেয়ে ...........
রাখ রাখ ওই
গেঁও ..........
এটা খুব
অব্জেক্সনেবিল কথা বলেছিস কিন্তু। আমি এটা পছন্দ করিনা কিম্বা আশা করিনা তোর কাছ
থেকে অন্তত ।
এই ! আমি তোর
মাকে মানে মাসিমাকে বলেছি নাকি ? আমি কথাটা শেষ করিনি ..........
ঝগডা করতে আমি
ভালো বাসিনা।
সেত যানি
বিবেকানন্দ ! মাই সুইট হার্ট । আই লাভ ইউ । কিরে কিছু বোলছিস না যে। তুই কি
রিতুপর্ণ ঘোস নাকি রে ?
দেখ বাডা বাডি
হচ্ছে ।
তবে চুপ করে
আছিস কেন? দেখ এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে । পাসে তুই আর আমি।
কি রোমান্টিক না !!
আমি যাচ্ছি ।
বোস না । আমি
মেয়ে হয়ে বসেছি তুই কেন লজ্যা পাচ্ছিস ? সত্যি তোরা দুই ভাই এক
কেটেগোরির !! ডিব্বা কোথাকার !! বলে হাঁসে ।
ওই ববির
ডায়লগটা মনে রেখেছিস আর ওর এপ্লিকেসন্টাও তোর জানা।
তা কি করবো ? তোরা যদি চুপ করে থাকিস কিছু না বলে আমরা মেয়েরা কথা বলতে বাধ্য হই ।
প্রসঙ্গ
বদলাতে চেষ্টা করলো সুশান্ত । তুই কখন পডাসোনা করিস ? আমার সেমিষ্টারের পরিক্ষার
জন্য প্রিপারেসন করতে হবে । চল যাই । মা চিন্তা করবেন।
ওরে মাতৃভক্ত
ছেলেরে । সত্যি তোদের মত ছেলে পাওয়া মুস্কিল । গুড গুড বয় । ওরে আমার ভোলা রে ।
বলে একটু আলত থাপ্পড দিল পেছনে।
তুই কিন্ত
আমার কোকা কোলা হতে পারবিনা।
কেন ? আই আই টি তে পেলাম না বলে বলছিস ।
না তা কেন?
তবে?
তবে আবার কি
!তুই নিজেই ভেবে দেখ। আমি এবার চলি। বাই ।
বাই । আবার
কবে আসবি?
দেখ । ফাজলামি
না করে পডাশুনোর দিকে মন দে ।
আমাকে একটু
পায়ের ধুলো দিবি ? তোর মত ভালো ছেলে আমাদের কলেজে একটাও দেখিনি !
শালা মেয়ে দেখলে জিব দিয়ে জল পডে আর মাষ্টার গুলো আরো হারামি । খালি ছুঁক ছুঁক
করে।
পায়ের ধুলোর
দাম আছে। দিতে পারবি ?
হ্যাঁ । দিতে
পারবো ।
তবে বি। টেক্ এ ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট
হয়ে দেখা।
আই এক্সেপ্ট্
ইট মাই লাভ্ । কিন্তু তোকেও তাই হতে হবে ।তার পর কিন্তু আমি যা বোলবো তোকে মানতে
হবে ।
চেস্টা করবো ।
তারপর ঠাকুরের ইচ্ছা
। মায়ের আশীর্বাদ থাকলে নিশ্চই হবে ।
দু জনে দু
দিকে চলে গেল ।
No comments:
Post a Comment