**খুকুদির বিয়ে**
খুকুদি, আমাদের মাসতুতো দিদি। খুকুদির কিন্তু নিজের চাটার্ড ফার্ম আছে। চাটার্ড একাউন্টেন্সি পাস করে কোন চাকরি না করে শহরের বিখ্যাত চাটার্ড ফার্ম "মুখার্জী এন্ড ফিনান্সশিয়াল কনসাল্টেন্সি" তে কয়েক বছর কাজ করেন তারপর নিজেই চাটার্ড ফার্ম খুলে বসেন। খুকুদির অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী ক্লায়েন্ট আছেন। খুব কমদিনে খুকুদি নাম করে ফেলেন। কিন্তু বিয়ের বয়েস ক্রমশ গড়িয়ে যায়। মিনু মাসি খুকুদির বিয়ের জন্য ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে খুকুদির প্রোফাইল খোলেন। আনন্দবাজার পাত্র পাত্রী কলমে বিজ্ঞাপণ দেন। এইসব দেখে কিন্তু খুকুদি খুব বিরক্ত হন। শেষে খুকুদি নিজেই তার মা কে খুকুদির বিজনেস পার্টনার এবং ক্লাসমেট অরিন্দম চৌধুরী কে যোগাযোগ করতে বলেন।
মিনু মাসি খুকুদির কাছথেকে ফোন নাম্বার পেয়ে অরিন্দমদের বাড়িতে ল্যান্ড লাইনে ফোন করে। ল্যান্ড লাইনে ওপাশ থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
-হ্যালো...কে বলছেন? ওপার থেকে মহিলা প্রশ্ন করেন।
- হ্যালো .. এটাকি অরিন্দম ব্যানার্জী র বাড়ি?
- হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
- আমি মিনতি মুখার্জী। আমার মেয়ে তনিমা মুখার্জী আপনার ছেলে অরিন্দম চৌধুরীর সঙ্গে চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়তো এবং ওরা একসঙ্গে সি. এ. পাসকরেছে । ওরা বিজনেস পার্টনার। আবার খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে চাটার্ড ফার্ম চালায়। এই বন্ধুত্ব সুদৃঢ করতে ওদের দুজনকে....
- কেন বলুনতো?বন্ধু ঠিক আছে কিন্তু... আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করি তারপর আসবেন।
- আমার মেয়ে....
- হ্যাঁ জানি আপনার মেয়ে আমার ছেলের বন্ধু, বিজনেস পার্টনার কিন্তু আমার ছেলের সঙ্গে এবং ওর বাবার সঙ্গে কথা না বলে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন। রাখি।
- মিনু মাসি খুব অপমানিত বোধ করলেন। ব্যাপারটা খুকু জানলে রক্ষে নেই। আমার বলার ধরণটা বোধহয় ভুল হল। শুরুতেই বিবাহ প্রস্তাব এক অজানা মহিলাকে....!! না ঠিক হোলোনা!!!
পরের দিন অরিন্দম ফোনকরে খুকুকে বলে তোমার মা বাবাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এস।
- খুকু বলে কেন?
- আহা এসইনা। এলে সব জানবে। তোমার কি আমাদের বাড়িতে আসতে আপত্তি আছে?
- না তা নেই তবে কারণটা কি শুনি!
- এলেই শুনবে অতো উতলা হচ্ছ কেন? তুমি আমার বিজনেস পার্টনার, ক্লাস মেট, বন্ধু...
- আর! আর কি?
- ওটা এলে শুনবে।
- মা বাবা যাবেন আমি যাবোনা।
- কেন?
- সে উত্তর কেন দেব?
-ঠিক আছে। জো আজ্ঞা ম্যাডাম।
- তথাস্তু বৎস।
- খুকুমাসি ফিক করে হেঁসে ফেলে ফোন ছেড়ে।
- কিরে হাঁসছিস কেন? মা বলেন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে।
- কি কাণ্ড করেছ তুমি?
- কেন আবার কি হল?
- অরিন্দমদের বাড়ি ফোন করেছিলে?
- হ্যাঁ তুইতো ফোন নাম্বার দিয়েছিলিস। মনে নেই। তবে এখন কান্ডর কি হল?
- ঠিকআছে আমি ড্রাইভারকে ওদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেব। ও তোমাদের রবিবার নিয়েযাবে।
- ওকে আমার লক্ষ্মী মেয়ে। দেখি কি হয়!
**অরিন্দমদের বাড়ি খুকু মাসির বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে**
রবিবারদিন মিনতি মুখার্জী, মনোজ মুখার্জী ওনাদের গাড়ি নিয়ে সল্ট লেকের এফ. ডি ব্লকে অরিন্দমদের বাড়ি যান। আগেথেকে ফোনে যোগাযোগ করে তারপর ওনারা যান। অরিন্দম ভালোভাবেই জানেন খুকুদিকে তাই সে বিষয়ে কোন বিশেষ কথা হোলোনা। অরিন্দমের মা বাবা বলেন আমাদের ছেলের যখন আপনাদের মেয়েকে পছন্দ তখন আমাদের কিছু বলার নেই। এখন দিন ক্ষণ স্থির করুন।
মেসো বলেন,আগামী ১২ই মাঘ, শুক্রবার:- সন্ধ্যা ০৬:৩৩ থেকে রাত্তির ১০.৫০ পর্যন্ত কর্কট লগ্নে সুতোহিবুক যোগে শুভ বিবাহর লগ্ন আছে। সেই দিনটাই স্থির হোক।
- তবে তাই হোক।
সেই খুকুদির বিবাহর শুভ লগ্ন আজ। আমাদের বাড়ির সকলে ঐ বিয়েবাড়িতে এসেছি। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে আমার মা সেই সীতাহার পরে আজ বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু আলমারির লকারে সীতাহার না পেয়ে মা আশ্চর্য হয়ে বাবাকে বলেন। বাবা বলেন আগেই তোমায় বলেছি ঐ হার ব্যাঙ্কের লকারে রাখতে। তুমি শুনলেনা। এখন বোঝ ঠ্যালা।
মা বলেন আলমারিথেকে কি হারের ডানা গজালো? কি আশ্চর্য কোথায় গেল হার?
-তুমি আলমারির চাবি কোথায় রেখেছিলে?
- কেন যেখানে থাকার সেখানেই ছিল।
- যেখানে মানে ?
- বালিশের নিচে।
- ঐ দেখ। সব মহিলার ঐ এক দোষ। বালিশের নিচে!! আরে বাবা ঐ জায়গাতো সকলে জানে।
- তবে কোথায় রাখবো?
- কেন আঁচলে রাখবে। ওটাতো সবচেয়ে সেফ যায়গা। তোমার সঙ্গেই থাকে।
- অতো বড় চাবির গোছা নিয়ে সব সময় বাড়িময় ঘুরতে কি ভালো লাগে?
- বাড়িতে তো বাইরের লোক কেউ আসেনা শোবার ঘরে। আসে কি?
- আমায় জিজ্ঞাসা করার মানে কি?
- এখন থানা পুলিশ ও করতে পারিনা। ঘরে আসে শুধু লক্ষ্মী ঘর ঝাঁট দিতে আর ঘর পুঁছতে। সে কি নিল?
- লক্ষ্মী আজ ২০ বছর এই বাড়িতে কাজ করছে। সেই ওর মা ওকে ১৫ বছর বয়েসে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। লক্ষ্মী বিশ্বাসী ও কেন চুরি করবে? ওর বিয়ে দিতে পারিনি। মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হয়। আমার মেয়ে নেই.... ভাবুক হয়ে পড়েন বাবা।
No comments:
Post a Comment