Wednesday, January 3, 2024


সীতাহার
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️
প্রথম পর্ব

এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সঙ্গে কোন পাত্র পাত্রীর সম্পর্ক নেই এবং এই গল্পটি আমার নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে লেখা। সম্পূর্ণ মৌলিক। এক্ষুনি এই গল্পের প্লট মাথায় এলো তাই সঙ্গে সঙ্গে লিখতে বসলাম।
চিন্ময় অনেকদিন আমাদের বাড়িতে থেকে বাবার ব্যবসার সমস্ত হিসেব পত্র দেখাশুনো করে। ও
বি. কম পাস। হিসেব পত্র ভালোই রাখে। একাউন্টেসের কাজ মোটা মুটি বোঝে। চিন্ময়কে বাবাই পড়িয়েছেন। ওর আপন জন বলতে কেউ নেই।
বাবা ওর ওপর নির্ভরশীল। ওকে অগাধ বিশ্বাস করেন। আমাদের বাড়ির গেস্ট রুমের পাসে একটা ছোট ঘর আছে। ও ওখানেই থাকে। বেশি বয়েস নয়। তা ২৫ -২৬ বছর হবে মনেহয়। আমাদের বাড়িতেই থাকে খায়। বাবা কিছু মাস মাহিনাও দেন। ওর হাত খরচ দিয়ে বাবা ওকে বড্ড বেশি লায় দেন। তাই অনেকেরি দৃষ্টি কটু। এরমধ্যে এক কাণ্ড ঘটলো।
মায়ের প্ৰিয় সীতাহার পাওয়া যাচ্ছেনা। মাকে ঠাকুমা বরণ করে ঐ সীতাহার দিয়েছিলেন। সে হার বাবা ব্যাংকের লকারে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু মা বলতেন.... না ও হার আমার কাছেই থাকবে..... আমার শাশুড়ির স্মৃতি। অগত্যা বাবা আর সে বিষয় নাক গলান নি!
সকলে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ঐ হারের ব্যাপারটা। সুম্প্রতি খুকু দির বিয়েতে আমরা বাড়ির সকলে নিমন্ত্রিত তাই সকলে যাই এক চিন্ময় ছাড়া। সে আর পারুল পিসি বাড়িতে থাকে। পারুল পিসি বাল্য বিধবা। উনি ওনার শিব ঠাকুরকে নিয়েই সারাদিন ঠাকুর ঘরে থাকেন। শিব লিঙ্গ স্নান করানো তাকে বেলপাতা চন্দন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পুজো করা। এ পারুল পিসির নিত্য দিনের কাজ। উনি অর্ধেক দিন উপবাস করেন। বাবা বিরক্তি প্রকাশ করেন কিন্তু উনি শোনেন না। মা যত্ন করে পারুল পিসির জন্য পঞ্চ ব্যঞ্জন রান্না করেন আলাদা করে এবং ঠাকুমার সেই শ্বেত পাথরের থালা বাটিতে ওনাকে মা নিজে হাতে পরিবেশন করেন। পারুল পিসির রান্না, কাঠ কয়লার আঁচে ঠাকুর ঘরের পাশেই হয়। একমাত্র মা ছাড়া কারুর হাতে পিসি খান না। এখনো আমাদের বাড়িতে এই রীতি চলে আসছে। বঙ্কা কাঠ কয়লা কিনে আনে... উনুন ধরিয়ে দেয়। মা বেলা একটা দুটোর মধ্যে রান্না শেষ করে পারুল পিসিকে খেতে ডাকেন। পিসি পুজো সেরে বেলা দুটোর সময় ভোজনে বসেন।
সকাল বেলায় লক্ষ্মী , দালান ঘর , শোবার ঘর, বারান্দা, উঠোন, বৈঠক খানা সমস্ত ঝাঁট দেওয়া, মোছা,পরিষ্কার করা তারপর এক কাঁড়ি বাসুন মেজে যেতে যেতে সেই বেলা একটা। ও অবশ্য আমাদের বাড়িতেই খায়। মাছ এলে মাছ কেটে বেছে জগা ননা কে গুছিয়ে দেয়। হ্যাঁ জগা ননা উদিষ্যl র যাজপুরের। ওর মেয়ে নাকি হেড মিস্ট্রের্স। আমরা ঠাট্টা করে বলি কোন স্কুলের?
ননা বলে...কাঁহিকি বিশ্বাস হাউনি?
নানা তা কেন?
তবে? আমি রান্না করে বাড়িতে টাকা পাঠাই সেই টাকায় আমার মেয়ে বি. এ. , এম. এ পাস করল । বেচারি টিউশনি করে বাকি পড়াশুনো করে আমাদের গ্রামের স্কুলের টিচার হোল। এখন একটা ভালো ছেলে দেখে ওর বিয়ে দেব ঠিক করেছি। কিন্তু আমার মেয়ে বিয়ে করতে নারাজ। ও ওর মাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা। বিয়ের কথা বললে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। মহা মুশকিল। কি করবো? মেয়ে বড় হলে তার বিয়ে না দিলে গ্রামের লোকেরা এক ঘরে করেদেবে। কুৎসা রটাবে।
এইবছর মাঘ মাসে বিয়ের দিন আছে। ভাবছি মেয়েটাকে সৎ পাত্রস্থ করবো।
জগা ননা ভাবুক হয়ে পড়ে.... বোধহয় বাড়ির কথা মনে করে উদাস মনে ঠাকুরকে প্রণাম করে.... বলে জগাই আমার ভরসা। মা বিরজা ঠাকুরানী যাজপুরের জাগ্রত দেবী। ওনার কাছে মানত করেছি মেয়ের বিয়ে হলে পুজো দেব।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে জগা ননা বলে যায়।
চলবে.....
May be an image of jewelry
All reactions:
Madhabi Chakraborty, Narmada Choudhury and 1 other

No comments:

Post a Comment