সীতাহার (পঞ্চম এবং শেষ পর্ব)
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

০৫.১১.২০২৩ রবিবার।
চিন্ময়কে, লেডি অফিসার যেরকম ভাবে জেরা করলেন তাতে ও মনে দুঃখ পেল। মনে মনে ভাবে,এই কি ভগবানের বিচার ! আমি সম্পূর্ণ মন প্রাণ দিয়ে এ বাড়ির সেবা করি। একাউন্টস দেখি। আমার পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পাই। হ্যাঁ এটা ঠিক এই বাড়ির কর্তা আমাকে ছেলের মতন মানুষ করেছেন। স্কুল কলেজে পড়িয়েছেন। কিন্তু আমি সাইন্স পড়তে চেয়েছিলামন। কিন্ত বাবা আমাকে গোয়েঙ্কা কলেজে কমার্স এ ভর্তি করে দেন। আমি সফলতার সঙ্গে একাউন্টেন্সি অনার্স নিয়ে বি. কম. পাস করি। কোন চাটার্ড ফার্মে কাজ করে ইন্টারসিপ পরীক্ষা দিয়ে চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাবা আর পড়াতে পারবেন না বলেন। বলেন ব্যবসার একাউন্টস দেখতে যার জন্য তিনি বি. কম. পড়ান। উদ্দেশ্য টা কেবল ওনার ব্যাবসা দেখার জন্য পড়ানো। এটা বোঝার পর চিন্ময় নিজে WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। কিন্তু কোচিং না নিলে এই সব প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দেওয়া সাধারণ ছেলের পক্ষে একটু কষ্টকর। তুবুও মনের জোরে চিন্ময় রাত জেগে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। পূর্ব বর্ষের প্রশ্নপত্র এবং গত পাঁচ ছ বছরের প্রশ্নপত্র জোগাড় করে। ও সুম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তারপর পরীক্ষায় বসবে। এটাই ওর ইচ্ছা। এই ইনভেস্টিগেশন ওর মনবল দুর্বল করতে চেষ্টা করছে। ও না থাকার সময় কেউ ঐ সাবানে চাবির ছাপ রেখে সবনটা জানলার কাচে রেখে যায়। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? কার উদ্দেশ্য তাকে ফাঁসানোর!!!!! চিন্তা করে কিছুই সুরহা করতে পারেনা। এটা একটা পরীক্ষা। ওর সততাকে চ্যালেঞ্জ। কে তাকে বদনাম করতে চাইছে। সন্দেহ তার একজনকেই হচ্ছে তবে বলতে পারছেনা।
অফিসার লক্ষ্মীকে জেরা করাতে ও প্রায় কেঁদেই ফেললো। ওর এক কথা আমি এ ঘরের নুন খেয়েছি। আমি মূর্খ মানুষ এই সংসারে ভোর থেকে খাটি। নিজের গতর ধ্বংস হচ্ছে তবুও খেটে সংসারের সমস্ত কাজ করি। বাবা তাকে নিজের মেয়ের মতন দেখেন। বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু যাকে পাত্র বলে নির্বাচন করেন সে স্রেফ মানা করে দেয়। বাবা চাইছিলেন দুজনে এই বাড়িতে থেকে তাঁদের সংসার সামলাবে। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সে বড় অফিসার হবে। সে তার মতন মূর্খ মেয়েকে কেন বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করবে? লক্ষ্মীও তাই গর রাজি হয়।
যেদিন এ. সি. র মেকানিক এসেছিলো বাড়ির কর্তা তাকেই যেতে বলেছিলেন। তখন মা ওপরে পিসির রান্নায় ব্যস্ত। লক্ষ্মী রান্নাঘরে জগা ননাকে জোগাড় দিতে ব্যস্ত। চিন্ময়কে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে পাঠিয়েছিলেন কোন বিশেষ কাজে। চিন্ময়ের ঘর তালা দেওয়া থাকেনা। কারণ লক্ষ্মী ঘর পরিষ্কার করতে আসে। সেদিন তাই চিন্ময় তাড়া তাড়ি তালা না দিয়েই ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চলে যায়।
কর্তা এক ঢিলে দুই পাখিকে সায়েস্তা করতে চান। এক : গিন্নীর আলমারির চাবির প্রতি উদাসীনতা যে জন্য সীতাহার ব্যাঙ্কের লকারে রাখার চিন্তা করেন।
দুই : চিন্ময় যাতে WBCS পরীক্ষা না দিতে পারে কারণ তা হলে তাঁর ব্যাবসা কে দেখবে? এখন একাউন্টেন্ট রাখার অনেক খরচ। ২৫ - ৩০ হাজার মাইনে তাও অনেক ঝামেলা। বিশ্বাস করা যায়না।
এ. সি. মেকানিক যে সাবান চিন্ময়ের কাছ থেকে নিয়েছিল হাত পরিষ্কার করার জন্য তাতে আলমারির চাবির ছাপ নিয়ে চিন্ময়ের ঘরের জানালার ওপর রেখে আসেন নিজে কর্তা । কিন্তু সাবানে তার হাতের ছাপ পাওয়া যাবেনা কারণ তিনি রুমাল ব্যবহার করেন।
ভাবতে আশ্চর্য লাগছেনা !!
কিন্তু ব্যবসায়ী মানুষরা তাঁদের নিজের ব্যবসার স্বার্থে অন্যকে ফাঁসাতে পেছ পা হন না। চিন্ময়কে মানা করা সত্বেও ও WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করে। সে যদি ঐ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় তবে তাঁর ব্যবসার একাউন্টস কে দেখবে? লক্ষ্মী বিয়ে করে ঘরে থাকলে বাড়ির কাজের জন্য চিরদিনের সমস্যা দূর হত। লক্ষ্মী চলেগেলে ওর মতন বিশ্বাসী কাজের লোক পাওয়া যাবে না।
এইসব চিন্তা বাড়ির কর্তার মনে উঁকি দেয়। তাই তিনি বাড়িতে পুলিশ আনতে মানা করেন। কিন্তু তন্ময়দা যখন লেডি অফিসার পাঠানোর কথা বলেন তখন তাকে প্লেন ড্রেসে পাঠাতে বলেন। লেডি অফিসার এ.সি. মেকানিকের ফোন নাম্বারে তাকে ডেকে প্রায় সমস্ত বিবরণী জানতে পারেন। সত্যি ওরা প্রফেশনাল এবং নিজের কাজ সুসম্পন্ন করে নিজের কোম্পানির জন্য। এই ধরণের ভুল ওরা কখনোই করবে না। তাই ও চুরি করেনি।
বাবা হারটা ব্যাঙ্কের লকারে রেখে এসে তার চাবি মাকে দেন। চিন্ময় ব্যাপারটা জানতে পারে। মনখুন্ন হয়।
সে পরের দিন জিনিস পত্র নিয়ে এক মেসে চলে যায় তার বন্ধুর কাছে। যাওয়ার সময় মা বাবাকে প্রণাম করে এবং বলে এই বাড়ি থেকে আমি যা পেয়েছি সে ঋন শোধ করতে পারবোনা কিন্তু এখন যা পেলাম সে দুঃখ রাখতে পারবোনা তাই চলে যাওয়াটাই শ্রেয়।
WBCS পরীক্ষার জন্য আরো বেশিকরে প্রস্তুতি করে এবং পরীক্ষায় ভালো ভাবে কৃতকার্য হয়। সে এখন গোসাবার বি. ডি. ও.। মা বাবাকে দেখা করতে আসার সময় নেই। তাই আসতে পারেনা।
******* সমাপ্ত ******-