Wednesday, January 3, 2024


সীতাহার (পঞ্চম এবং শেষ পর্ব)
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️
০৫.১১.২০২৩ রবিবার।
চিন্ময়কে, লেডি অফিসার যেরকম ভাবে জেরা করলেন তাতে ও মনে দুঃখ পেল। মনে মনে ভাবে,এই কি ভগবানের বিচার ! আমি সম্পূর্ণ মন প্রাণ দিয়ে এ বাড়ির সেবা করি। একাউন্টস দেখি। আমার পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পাই। হ্যাঁ এটা ঠিক এই বাড়ির কর্তা আমাকে ছেলের মতন মানুষ করেছেন। স্কুল কলেজে পড়িয়েছেন। কিন্তু আমি সাইন্স পড়তে চেয়েছিলামন। কিন্ত বাবা আমাকে গোয়েঙ্কা কলেজে কমার্স এ ভর্তি করে দেন। আমি সফলতার সঙ্গে একাউন্টেন্সি অনার্স নিয়ে বি. কম. পাস করি। কোন চাটার্ড ফার্মে কাজ করে ইন্টারসিপ পরীক্ষা দিয়ে চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাবা আর পড়াতে পারবেন না বলেন। বলেন ব্যবসার একাউন্টস দেখতে যার জন্য তিনি বি. কম. পড়ান। উদ্দেশ্য টা কেবল ওনার ব্যাবসা দেখার জন্য পড়ানো। এটা বোঝার পর চিন্ময় নিজে WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। কিন্তু কোচিং না নিলে এই সব প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দেওয়া সাধারণ ছেলের পক্ষে একটু কষ্টকর। তুবুও মনের জোরে চিন্ময় রাত জেগে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। পূর্ব বর্ষের প্রশ্নপত্র এবং গত পাঁচ ছ বছরের প্রশ্নপত্র জোগাড় করে। ও সুম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তারপর পরীক্ষায় বসবে। এটাই ওর ইচ্ছা। এই ইনভেস্টিগেশন ওর মনবল দুর্বল করতে চেষ্টা করছে। ও না থাকার সময় কেউ ঐ সাবানে চাবির ছাপ রেখে সবনটা জানলার কাচে রেখে যায়। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? কার উদ্দেশ্য তাকে ফাঁসানোর!!!!! চিন্তা করে কিছুই সুরহা করতে পারেনা। এটা একটা পরীক্ষা। ওর সততাকে চ্যালেঞ্জ। কে তাকে বদনাম করতে চাইছে। সন্দেহ তার একজনকেই হচ্ছে তবে বলতে পারছেনা।
অফিসার লক্ষ্মীকে জেরা করাতে ও প্রায় কেঁদেই ফেললো। ওর এক কথা আমি এ ঘরের নুন খেয়েছি। আমি মূর্খ মানুষ এই সংসারে ভোর থেকে খাটি। নিজের গতর ধ্বংস হচ্ছে তবুও খেটে সংসারের সমস্ত কাজ করি। বাবা তাকে নিজের মেয়ের মতন দেখেন। বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু যাকে পাত্র বলে নির্বাচন করেন সে স্রেফ মানা করে দেয়। বাবা চাইছিলেন দুজনে এই বাড়িতে থেকে তাঁদের সংসার সামলাবে। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সে বড় অফিসার হবে। সে তার মতন মূর্খ মেয়েকে কেন বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করবে? লক্ষ্মীও তাই গর রাজি হয়।
যেদিন এ. সি. র মেকানিক এসেছিলো বাড়ির কর্তা তাকেই যেতে বলেছিলেন। তখন মা ওপরে পিসির রান্নায় ব্যস্ত। লক্ষ্মী রান্নাঘরে জগা ননাকে জোগাড় দিতে ব্যস্ত। চিন্ময়কে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে পাঠিয়েছিলেন কোন বিশেষ কাজে। চিন্ময়ের ঘর তালা দেওয়া থাকেনা। কারণ লক্ষ্মী ঘর পরিষ্কার করতে আসে। সেদিন তাই চিন্ময় তাড়া তাড়ি তালা না দিয়েই ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চলে যায়।
কর্তা এক ঢিলে দুই পাখিকে সায়েস্তা করতে চান। এক : গিন্নীর আলমারির চাবির প্রতি উদাসীনতা যে জন্য সীতাহার ব্যাঙ্কের লকারে রাখার চিন্তা করেন।
দুই : চিন্ময় যাতে WBCS পরীক্ষা না দিতে পারে কারণ তা হলে তাঁর ব্যাবসা কে দেখবে? এখন একাউন্টেন্ট রাখার অনেক খরচ। ২৫ - ৩০ হাজার মাইনে তাও অনেক ঝামেলা। বিশ্বাস করা যায়না।
এ. সি. মেকানিক যে সাবান চিন্ময়ের কাছ থেকে নিয়েছিল হাত পরিষ্কার করার জন্য তাতে আলমারির চাবির ছাপ নিয়ে চিন্ময়ের ঘরের জানালার ওপর রেখে আসেন নিজে কর্তা । কিন্তু সাবানে তার হাতের ছাপ পাওয়া যাবেনা কারণ তিনি রুমাল ব্যবহার করেন।
ভাবতে আশ্চর্য লাগছেনা !!
কিন্তু ব্যবসায়ী মানুষরা তাঁদের নিজের ব্যবসার স্বার্থে অন্যকে ফাঁসাতে পেছ পা হন না। চিন্ময়কে মানা করা সত্বেও ও WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করে। সে যদি ঐ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় তবে তাঁর ব্যবসার একাউন্টস কে দেখবে? লক্ষ্মী বিয়ে করে ঘরে থাকলে বাড়ির কাজের জন্য চিরদিনের সমস্যা দূর হত। লক্ষ্মী চলেগেলে ওর মতন বিশ্বাসী কাজের লোক পাওয়া যাবে না।
এইসব চিন্তা বাড়ির কর্তার মনে উঁকি দেয়। তাই তিনি বাড়িতে পুলিশ আনতে মানা করেন। কিন্তু তন্ময়দা যখন লেডি অফিসার পাঠানোর কথা বলেন তখন তাকে প্লেন ড্রেসে পাঠাতে বলেন। লেডি অফিসার এ.সি. মেকানিকের ফোন নাম্বারে তাকে ডেকে প্রায় সমস্ত বিবরণী জানতে পারেন। সত্যি ওরা প্রফেশনাল এবং নিজের কাজ সুসম্পন্ন করে নিজের কোম্পানির জন্য। এই ধরণের ভুল ওরা কখনোই করবে না। তাই ও চুরি করেনি।
বাবা হারটা ব্যাঙ্কের লকারে রেখে এসে তার চাবি মাকে দেন। চিন্ময় ব্যাপারটা জানতে পারে। মনখুন্ন হয়।
সে পরের দিন জিনিস পত্র নিয়ে এক মেসে চলে যায় তার বন্ধুর কাছে। যাওয়ার সময় মা বাবাকে প্রণাম করে এবং বলে এই বাড়ি থেকে আমি যা পেয়েছি সে ঋন শোধ করতে পারবোনা কিন্তু এখন যা পেলাম সে দুঃখ রাখতে পারবোনা তাই চলে যাওয়াটাই শ্রেয়।
WBCS পরীক্ষার জন্য আরো বেশিকরে প্রস্তুতি করে এবং পরীক্ষায় ভালো ভাবে কৃতকার্য হয়। সে এখন গোসাবার বি. ডি. ও.। মা বাবাকে দেখা করতে আসার সময় নেই। তাই আসতে পারেনা।
******* সমাপ্ত ******-

সীতাহার চতুর্থ পর্ব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
খুকুদির বিয়ের বাসর শেষ। কন্যা বিদায়ের পর আমাদের সকলের মন খারাপ। কনকাঞ্জলি দেওয়ার সময় খুকুদি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মিনু মাসিও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আমি ভাবি এ কেমন প্রথা, মা বাবার ঋন কি এক মুঠো চাল দিয়ে শোধ করা যায়? আমার মনে এই প্রশ্ন বারে বারে উঁকি দেয়। আমি এর বিরোধ করি। এর উচ্ছেদ হওয়া উচিৎ। কোন শাস্ত্রে কি এর উল্লেখ আছে? না নেই। খুকুদির সঙ্গে আমার বোন পুতুল যায় বরের বাড়িতে।
বিয়ে বাড়ির ধুম ধামেতে আমাদের বাড়ির আসল ঘটনা চাপা পড়ে গিয়েছে। তন্ময়দা আমাদের বাড়িতে এক লেডি অফসার পাঠান প্লেন ড্রেসে। উনি আমাদের বাড়ি এসে তদন্ত আরম্ভ করলেন।
***সীতাহার চুরির তদন্ত আরম্ভ**
মা জানতেন উনি আসবেন তাই ওনাকে আদোর যত্ন করেন।
মহিলা অফিসার লক্ষ্মীকে জিজ্ঞাসা করেন, কতোদিন কাজ করছ ?
লক্ষ্মী বলে,কুড়ি বছরের ওপর।
- তুমিতো এ. সি. মেকানিককে দেখেছো?
- হ্যাঁ।
- দেখলে চিনতে পারবে?
- হ্যাঁ কেন পারবোনা।
- ও কাজ করার সময় তুমি কোথায় ছিলে?
- মায়ের শোবার ঘরে।
- কতক্ষন?
- ও কাজ করছিল। আমায় বললো জল আনতে। আমি একটা প্লাস্টিকের বড় বালতিতে জল আনতে যাই বাথরুমে।
- এই সময় জগা ননা ডাকে মাছ কুটতে। আমি বলি এখন যেতে পারবোনা। এরমধ্যে একটু সময় যায়।তারপর জলের বালতি নিয়ে মায়ের শোবার ঘরে যাই। মেকানিক, এ. সি. ঢাকাদিয়ে দেয় এক কালো পলিথিনের কাপড়ে তারপর ভ্যাকুম মেশিন দিয়ে জলের বালতি থেকে জল পাম্প করে উঠিয়ে এ. সি. পরিষ্কার করে। ঐ মেকানিক কাজে ব্যস্ত দেখে জগা ননার ডাকে আবার রান্না ঘরে যাই। ফিরে দেখি
এ. সি চলছে কিন্তু মেকানিক নেই।
- ও কাউকে বলে যায়নি?
- না আমি একাই ছিলাম। আমিতো রান্নাঘরে গিয়েছিলাম তাই বোধহয় কাউকে না বলে চলে গিয়েছে।
- হুঁ। বুঝলাম। তুমি মাকে বললেনা মেকানিক চলে গিয়েছে বলে।
- পিসির রান্নার যায়গায় আমার যাওয়া মানা।
- কেন?
- সে মা বলবেন। বলে লক্ষ্মী রান্না ঘরে চলে যায়।
এইসময় মা বলেন, ঠাকুরঝি বড় ছুঁচিবাই মহিলা। লক্ষ্মী জাতের নয় তাই ওর ঠাকুরঝির রান্নার যায়গায় যাওয়া মানা। ও তাই ওখানে যায়না। কি করা যায় বলুন! বাল্যবিধবা। শুনতেই হয় ওনার কথা। উনি মানে আমার স্বামী আবার বোনকে ভীষণ ভালো বাসেন। তাই আমাকে সব দিক সামলে চলতে হয়। ভূলটা আমারি। আমার ঐ সময় থাকা উচিৎ ছিল।
- কি ছিল কি না সেটা ভেবে লাভ নেই। অতো দামি একটা হার চুরি গেল না হারিয়েছে সেটাই দেখতে হবে। আপনার আলমারির চাবি কোথায় ছিল ?
- বালিশের নিচে।
- কি বালিশের নিচে! আশ্চর্য কি বলছেন আপনি!
- লক্ষ্মী জানতো। হ্যাঁ ও সব জানে। ও খুব বিশ্বস্ত। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে আছে মেয়ের মতন। ওকে অবিশ্বাস কেউ করেনা।
- হুঁ। আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে একটি ছেলে কাজ করে শুনেছি। সে কোথায় থাকে?
- গেস্ট রুমের পাসের ঘরে WBCS দেখতে পারি ঘরটা।
- হ্যাঁ কেন পারবেননা। চলুন।
- চিন্ময়ের ঘরে ও একাই থাকে। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘর। ঘরের দেওয়ালে মা ভবতারিণীর বড় ফটো। ধুপ জ্বলছে ফটোর পাশে। একটা ছোট টেবিল সামনে একটা চেয়ার। টেবিলের ওপর কিছু পড়ার বই এবং একটা ল্যাপটপ। দেওয়ালে একটা ডিজিটাল ক্লক আর একটা ছোট স্মার্ট টি ভি।
- চিন্ময় এদের দেখে অবাক হয়ে যায়। বলে, মা কি হল আপনি!
- অফিসার বলেন,হ্যাঁ আমরা এসেছি কিছু কথা জিজ্ঞাসা করতে।
- বলুন।
- আপনি কি এখানে কাজ করেন?
- হ্যাঁ।
- মাস মাহিনা কতো পান?
- ঠিক নেই। বাবা যখন যেমন কাজ সেইরকম মাস মাহিনা দেন। কোন ঠিক নেই। ওটা আমার হাত খরচ বলতে পারেন। আমি একাউন্টসের কাজ দেখি।
- ও আচ্ছা। তবুও কতো?
- কখনো ১০ কখনো ১৫ হাজার আবার কখনো কিছুইনা। কোন ঠিক নেই।
- আপনার আপত্তি থাকেনা।
- আমাকে উনি ছেলের মতন দেখেন। আমাকে ছোট বেলাথেকে মানুষ করেছেন। পড়াশুনো করিয়েছেন। ওটা আমার চরম প্রাপ্তি। বাড়িতে আছি খাচ্ছি, থাকছি। বাবা নতুন জামা প্যান্ট পুজোর সময় কিনে দেন। আর কি চাই!
- আপনি সন্তুষ্ট।
- না হওয়ার কি আছে!
অফিসারের জানালার ওপর একটা চাবি মার্কা সাবানের দিকে চোখ পড়লো। ওটা দেখে সন্দেহ হয় তাই সঙ্গে নিলেন তদন্তে সহায়ক হতে পারে। এই সাবানের ওপর চাবির ছাপ সহজে নেওয়া যায়।
- অফিসার শোবার ঘরে ফিরে এলেন। মাকে বলেন আপনার আলমারির চাবিটা দেখি।
- মা বালিশের নিচ থেকে চাবির গোছা দিলেন।
- গোদরেজর আলমারির চাবিটা দেখে আশ্চর্য হন অফিসার। বলেন এই দেখুন এখনো একটু সাবান লেগে আছে। একটু মগে করে জল আনুন আমি দেখাচ্ছি। চাবি মার্কা সাবানের পেছনে আরেকটা চাবির স্পষ্ট দাগ। ওটা আলমারির চাবির ঠিক খাপে মিশে যায়।
- মা মগে জল নিয়ে আসেন। মা নিজেই অনুভব করেন একটু সাবানের জলের মতন চ্যাট চ্যাট করছে চাবিতে সামান্য জল দিয়ে ঘোষলে।
- অফিসার চিন্ময়কে ডাকেন।
- চিন্ময় এসে বলে ডেকেছিলেন ম্যাডাম।
- হ্যাঁ। আপনি আপনার জামা কাপড় কিসে কাচেন?
- কেন? সাবানে। আমি নিজেই কাচি। ডিটার্জেন্ট দিয়ে পরে ডুবিয়ে রাখি। কিছু দাগ ডিটার্জেন্ট এ ওঠেনা।
- যেমন?
- যেমন চায়ের দাগ, অন্যকিছু রঙের দাগ। তাই সাবান কিম্বা লেবু ব্যবহার করি। তারপর ব্রাশ করি। আমার জামা প্যান্ট ওয়াসিং মেশিনে কাচা হয়না। আমি নিজেই কাচি।
- হুঁ। বুঝলাম। তা কি সাবান ব্যবহার করেন?
সস্তার সাবান। দামি সাবান কেনার প্য়সা থাকেনা। বই খাতা কিনতেই সব টাকা খরচ হয়েযায়।
- বই খাতা! কেন?
- পড়াশুনো করি ম্যাডাম। WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। বাইরেতো কোচিং নেওয়ার টাকা নেই। তাই।
- WBCS!! বাহ্ খুব ভালো। তবে বুদ্ধিটা খুব প্রখর নিশ্চই আপনার। প্ল্যানটা কে করেছিলো?
- প্ল্যান কিসের প্ল্যান!! আমি গরিব মানুষ। আমাকে এই ভাবে অপবাদ দেবেন না। আমি যথেষ্ট খাটি এই পরিবারের জন্য। সেই আন্দাজে আমি পারিশ্রমিক পাইনা। আমার উচ্চাসা আছে কিন্তু টাকা নেই। বাবাকে বললে উনি সেরকম আমল দেন না আমার কথার।
- তা বলে চুরি !!! ছি ছি আপনি না শিক্ষিত। আশ্রিত। আপনার এতটুকু মনে হোলোনা এটা মায়ের সঙ্গে বেইমানি করা।
- আমি চুরি কিরিনি ম্যাডাম। কোন বেইমানি করিনি। আমি মায়ের ঘরেই যাইনা।
- কিন্তু সাবানে চাবির ছাপ নেওয়ার জন্য এ. সি. মেকানিককে সাবান দিয়ে কার্য সিদ্ধি করি। তাইনা!
- ওটা ও আমাকে চেয়েছিলো হাত ধোয়ার জন্য। আমি তাড়া তাড়ি ঐ সবনটা এগিয়ে দি। কিন্তু ওটাতে ও ঐ কাজ করবে বলে ঘুনেক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বিশ্বাস করুন। যদি তাই হত তবে আমি কি সবনটা রেখে দিতাম? ঐ লোকটি আমায় ফাঁসানোর জন্য ঔ কাজ করেছে। আপনি ওকে ডেকে বুঝুন।
- আপনি তাহলে করেন নি।
- আমি মায়ের শোবার ঘরে কোনোদিন যাইনা। আমার খাবার লক্ষ্মী আমার ঘরে এনেদেয়। জিজ্ঞাসা করুন।
- মা বলেন ও ঠিক বলছে। ও আমাদের কোন ঘরে যায়না। শোবার ঘর ঠাকুর ঘর কোনো ঘরে যায়না বৈঠকখানা ছাড়া।
- এ. সি. মেকানিকের ফোন নাম্বার আছে?
- বাবার কাছে নিশ্চই আছে।


##সীতাহার তৃতীয় পর্ব##
,©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
**খুকুদির বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি**
সীতাহার না পরে মা অন্য হার পরে সেদিন বিয়ে বাড়িতে গেলেন কিন্তু মায়ের মনটা সমানে খচ খচ করেই চলেছে! কোথায় গেল হারটা? হারটাকি বাড়িথেকে চুরি গেল! না অন্য কোথাউ ভুলে রেখে দিয়েছেন! মা বলেন ওঁর শাশুড়ির দেওয়া হার। সেই স্মৃতিটা কি মুছে যাবে! বাবাও খুব দুঃখ পেয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করছেন না। খুব মন খারাপ হয়েগেলো মায়ের।
এইসময় আমি বলি ও মা আমাদের বাড়িতে তোমার ঘরের এ. সি খারাপ হয়েছিলো। এ.সি সারাতে যে মেকানিক এসেছিলো মনে আছে কবে এসেছিলো সে?
- মা পরক্ষনে বলেন ঠিক বলেছিসতো। আমার মনেই ছিলোনা। দাঁড়া তোর বাবাকে বলি।
বাবা সেই সময় আমাদের মাসতুতো দাদা তন্ময় মুখার্জীর সঙ্গে কি এক বিষয় খুব মনোযোগ সহকারে কথা বলছিলেন। তন্ময়দা নর্থ কলকাতার শ্যামপুকুর থানার ও. সি. মাসির বাড়ি সাউথ সিঁথি তে। বিরাট বনেদি বাড়ি। অনেক বছরের পুরোনো। ওরা খুব বড় লোক তাই ওদের ব্যাপার স্যাপার আলাদা। বেশ জমিদারী ভাব আছে।
মা ক্রমে বাবার কাছে এসে বলেন শুনছো।
- হ্যাঁ শুনছি। আবার কি হল?
- আবার কিছু হয়নি। যেটা হয়েছে তার একটা সূত্র তোমার ছেলে মনে করিয়ে দিয়েছে। আমার মনে ছিলোনা।
- কি সেটা।
- আমার শোবার ঘরের এ. সি. টা খারাপ হয়েছিলো। সেটা সারাতে যে মেকানিক এসেছিলো সেদিন আমি সেই সময় ঠাকুর ঘরের পাশে ঠাকুর ঝির রান্না কিরছিলাম। ঘরে তো কেউ ছিলোনা।
- খুব ভালো করেছ। সেতো এক মাস প্রায় হবে। ঠাকুর ঘর থেকে ফিরে তুমি দেখোনি।
- না লক্ষ্মী ছিল কাছে। আমি লক্ষ্মীকে বলি, আমি যাইরে তোর পিসির রান্না করতে সে মানুষটা পুজোর পর না খেয়ে বসে থাকবে। তুই চোখ রাখিস। ফিরে দেখি এ. সি. চলছে। ঘরে কেউ নেই।
- লক্ষ্মী কোথায় ছিলো?
- জগা ননার কাছে রান্নাঘরে জোগাড় দিচ্ছিলো।
- তন্ময়দা সব শুনছিলেন। বললেন আপনাদের বাড়িতো আমার এলাকায় পড়ে না। তবে কি আমি সিঁথি র ও. সি. কে বলবো তদন্ত করতে? ও ঠিক খুঁজে বার করে দেবে কে নিয়েছে।
- বাবা বললেন না না পুলিশ ঘরে ঢোকাসনা বাবা। আমার মেয়েটাকে ( লক্ষ্মীকে ) হেনস্তা করবে। তারচেয়ে তুই কিছু কর বাবা। দ্যাখ যদি পাওয়া যায়।
- এ. সি. মেকানিকের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার দাও তাহলে।
- হ্যাঁ তা পাওয়া যাবে। তবে ঠিকানাতো জানিনা। দেখি বলে বাবা ফোনটার কল লিস্ট সার্চ করেন
****খুকুদির বিবাহ লগ্ন এবং বিবাহ ভোজ ****
এরমধ্যে বর এসেগেল। উলু ধ্বনি আর শঙ্খ বেজে উঠলো। সব্বাই ঐ বরের গাড়ির দিকে ছুটলো। মা বরণ ডালা নিয়ে গেলেন বরকে বরণ করতে। বাবা, তন্ময়দা গেলেন বরের গাড়ির কাছে বরকে ঘরে নিয়ে আসতে। দ্বারে প্রবেশ করার সময় ওপর থেকে পুষ্প বৃষ্টি হল। চারিদিকে রজনীগন্ধার সুগন্ধ। প্রবেশ দ্বার থেকে সারা ঘর নানা ফুল দিয়ে সাজানো। সত্যি খুব যাঁক যমকে খুকুদির বিয়ে হচ্ছে। হবে নাইবা কেন ! ওরা প্রচুর টাকার মালিক। মনটাও ওদের বিশাল। সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করেছে তা ছাড়া পাড়া প্রতিবেশী সকলে। তন্ময়দার অফিসের বন্ধু। ডি. সি. পি নর্থ। তিনিও এসেছেন তন্ময়দার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। খাওয়া দাওয়া এলাহী কাণ্ড।
***খুকুদির বিয়ের ভোজ***
স্টার্টার :-
অতিথিদের স্টার্টার দিয়ে স্বাগত জানানো হল । স্টার্টারে খুব বেশি বৈচিত্র্য রাখা হয়নি । তাই এই ঠান্ডায় বিয়েতে, গরম ডাম্পলিং, টিক্কা, ফিশ ফ্রাই, মিনি সামোসা, কাবাব, কাটলেট, চিলি পটেটো, স্প্রিং রোল, ডরাই মাঞ্চুরিয়ান আছে।এ ছাড়া ফুচকা, চাট কর্নার, দই-ভল্লা তো আছেই। কি নেই!
শীত কালে বিয়ের মরসুমের স্যুপ :-
বিয়ের মেনুতে গরম স্যুপ রাখতেই হয় । মটর-পুদিনা স্যুপ, টমেটো স্যুপ, ভেজ স্যুপ, কর্ন স্যুপ, ইতালিয়ান স্যুপ, চিকেন স্যুপ, পনির স্যুপ এছাড়াও, হট চকলেট, জাফরানি চা এবং কফির বিকল্প তো আছেই। কাশ্মীরি কাবা।
ভেজ আইটেম-
ভেজের জন্য অনেক অপশন রাখতে হয়েছে কারণ খুকুদির অনেক মারোয়াড়ি অতিথি কাস্টমার আছেন। তাদের জন্য আলু ভাজি, জিরা আলু, মেথি আলু, মাশরুম, মেথি মালাই, বাঁধাকপি মুসাল্লাম এবং মিক্সড ভেজ রাখা আছে। । অন্যদিকে তরকারিতে পনির মেথি মালাই, শাহি পনির, পনির কোরমা, পনির আচারি, কড়াই পনির, পনির লাবদার, মালাই কোফতা, ছোলে এবং ছানা রাওয়াল পিন্ডি। চলে বটুরে। ঢোকলা গুজুদের জন্য।
ননভেজ আইটেম- নন-ভেজ আইটেম যেমন বাটার চিকেন, চিকেন রেজালা, বিরিয়ানি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। এছাড়াও, তাওয়া চিকেন, মটন দো পেঁয়াজ ফিশ কারি, মটন বিরিয়ানি এবং চিকেন বিরিয়ানি তো আছেই। ভেটকির বাটার ফ্রাই, চিংডির মালাইকারি,ইলিশ মাছের পাতুরি, সর্ষে ইলিশ, তোপসে ফ্রাই, পাবদা মাছের ঝাল। কি নেই?
মিষ্টি :- গোলাপ জামুন, রসগোল্লা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মনোহরা, শাঁখ সন্দেশ, দরবেশ, মিহিদানা, সীতাভোগ,মিষ্টি দই,
চাটনি পাঁপড়,
পান :- বেনারসী পান, মিষ্টি পান, জর্দা পান।
চিত্র ঋন :- ইন্টারনেট।
All reactions:
Madhabi Chakraborty and Narmada Choudhury
2
Like
Comment
Send

দ্বিতীয় পর্ব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
**খুকুদির বিয়ে**
খুকুদি, আমাদের মাসতুতো দিদি। খুকুদির কিন্তু নিজের চাটার্ড ফার্ম আছে। চাটার্ড একাউন্টেন্সি পাস করে কোন চাকরি না করে শহরের বিখ্যাত চাটার্ড ফার্ম "মুখার্জী এন্ড ফিনান্সশিয়াল কনসাল্টেন্সি" তে কয়েক বছর কাজ করেন তারপর নিজেই চাটার্ড ফার্ম খুলে বসেন। খুকুদির অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী ক্লায়েন্ট আছেন। খুব কমদিনে খুকুদি নাম করে ফেলেন। কিন্তু বিয়ের বয়েস ক্রমশ গড়িয়ে যায়। মিনু মাসি খুকুদির বিয়ের জন্য ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে খুকুদির প্রোফাইল খোলেন। আনন্দবাজার পাত্র পাত্রী কলমে বিজ্ঞাপণ দেন। এইসব দেখে কিন্তু খুকুদি খুব বিরক্ত হন। শেষে খুকুদি নিজেই তার মা কে খুকুদির বিজনেস পার্টনার এবং ক্লাসমেট অরিন্দম চৌধুরী কে যোগাযোগ করতে বলেন।
মিনু মাসি খুকুদির কাছথেকে ফোন নাম্বার পেয়ে অরিন্দমদের বাড়িতে ল্যান্ড লাইনে ফোন করে। ল্যান্ড লাইনে ওপাশ থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
-হ্যালো...কে বলছেন? ওপার থেকে মহিলা প্রশ্ন করেন।
- হ্যালো .. এটাকি অরিন্দম ব্যানার্জী র বাড়ি?
- হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
- আমি মিনতি মুখার্জী। আমার মেয়ে তনিমা মুখার্জী আপনার ছেলে অরিন্দম চৌধুরীর সঙ্গে চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়তো এবং ওরা একসঙ্গে সি. এ. পাসকরেছে । ওরা বিজনেস পার্টনার। আবার খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে চাটার্ড ফার্ম চালায়। এই বন্ধুত্ব সুদৃঢ করতে ওদের দুজনকে....
- কেন বলুনতো?বন্ধু ঠিক আছে কিন্তু... আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করি তারপর আসবেন।
- আমার মেয়ে....
- হ্যাঁ জানি আপনার মেয়ে আমার ছেলের বন্ধু, বিজনেস পার্টনার কিন্তু আমার ছেলের সঙ্গে এবং ওর বাবার সঙ্গে কথা না বলে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন। রাখি।
- মিনু মাসি খুব অপমানিত বোধ করলেন। ব্যাপারটা খুকু জানলে রক্ষে নেই। আমার বলার ধরণটা বোধহয় ভুল হল। শুরুতেই বিবাহ প্রস্তাব এক অজানা মহিলাকে....!! না ঠিক হোলোনা!!!
পরের দিন অরিন্দম ফোনকরে খুকুকে বলে তোমার মা বাবাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এস।
- খুকু বলে কেন?
- আহা এসইনা। এলে সব জানবে। তোমার কি আমাদের বাড়িতে আসতে আপত্তি আছে?
- না তা নেই তবে কারণটা কি শুনি!
- এলেই শুনবে অতো উতলা হচ্ছ কেন? তুমি আমার বিজনেস পার্টনার, ক্লাস মেট, বন্ধু...
- আর! আর কি?
- ওটা এলে শুনবে।
- মা বাবা যাবেন আমি যাবোনা।
- কেন?
- সে উত্তর কেন দেব?
-ঠিক আছে। জো আজ্ঞা ম্যাডাম।
- তথাস্তু বৎস।
- খুকুমাসি ফিক করে হেঁসে ফেলে ফোন ছেড়ে।
- কিরে হাঁসছিস কেন? মা বলেন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে।
- কি কাণ্ড করেছ তুমি?
- কেন আবার কি হল?
- অরিন্দমদের বাড়ি ফোন করেছিলে?
- হ্যাঁ তুইতো ফোন নাম্বার দিয়েছিলিস। মনে নেই। তবে এখন কান্ডর কি হল?
- ঠিকআছে আমি ড্রাইভারকে ওদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেব। ও তোমাদের রবিবার নিয়েযাবে।
- ওকে আমার লক্ষ্মী মেয়ে। দেখি কি হয়!
**অরিন্দমদের বাড়ি খুকু মাসির বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে**
রবিবারদিন মিনতি মুখার্জী, মনোজ মুখার্জী ওনাদের গাড়ি নিয়ে সল্ট লেকের এফ. ডি ব্লকে অরিন্দমদের বাড়ি যান। আগেথেকে ফোনে যোগাযোগ করে তারপর ওনারা যান। অরিন্দম ভালোভাবেই জানেন খুকুদিকে তাই সে বিষয়ে কোন বিশেষ কথা হোলোনা। অরিন্দমের মা বাবা বলেন আমাদের ছেলের যখন আপনাদের মেয়েকে পছন্দ তখন আমাদের কিছু বলার নেই। এখন দিন ক্ষণ স্থির করুন।
মেসো বলেন,আগামী ১২ই মাঘ, শুক্রবার:- সন্ধ্যা ০৬:৩৩ থেকে রাত্তির ১০.৫০ পর্যন্ত কর্কট লগ্নে সুতোহিবুক যোগে শুভ বিবাহর লগ্ন আছে। সেই দিনটাই স্থির হোক।
- তবে তাই হোক।
সেই খুকুদির বিবাহর শুভ লগ্ন আজ। আমাদের বাড়ির সকলে ঐ বিয়েবাড়িতে এসেছি। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে আমার মা সেই সীতাহার পরে আজ বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু আলমারির লকারে সীতাহার না পেয়ে মা আশ্চর্য হয়ে বাবাকে বলেন। বাবা বলেন আগেই তোমায় বলেছি ঐ হার ব্যাঙ্কের লকারে রাখতে। তুমি শুনলেনা। এখন বোঝ ঠ্যালা।
মা বলেন আলমারিথেকে কি হারের ডানা গজালো? কি আশ্চর্য কোথায় গেল হার?
-তুমি আলমারির চাবি কোথায় রেখেছিলে?
- কেন যেখানে থাকার সেখানেই ছিল।
- যেখানে মানে ?
- বালিশের নিচে।
- ঐ দেখ। সব মহিলার ঐ এক দোষ। বালিশের নিচে!! আরে বাবা ঐ জায়গাতো সকলে জানে।
- তবে কোথায় রাখবো?
- কেন আঁচলে রাখবে। ওটাতো সবচেয়ে সেফ যায়গা। তোমার সঙ্গেই থাকে।
- অতো বড় চাবির গোছা নিয়ে সব সময় বাড়িময় ঘুরতে কি ভালো লাগে?
- বাড়িতে তো বাইরের লোক কেউ আসেনা শোবার ঘরে। আসে কি?
- আমায় জিজ্ঞাসা করার মানে কি?
- এখন থানা পুলিশ ও করতে পারিনা। ঘরে আসে শুধু লক্ষ্মী ঘর ঝাঁট দিতে আর ঘর পুঁছতে। সে কি নিল?
- লক্ষ্মী আজ ২০ বছর এই বাড়িতে কাজ করছে। সেই ওর মা ওকে ১৫ বছর বয়েসে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। লক্ষ্মী বিশ্বাসী ও কেন চুরি করবে? ওর বিয়ে দিতে পারিনি। মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হয়। আমার মেয়ে নেই.... ভাবুক হয়ে পড়েন বাবা।

সীতাহার
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️
প্রথম পর্ব

এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সঙ্গে কোন পাত্র পাত্রীর সম্পর্ক নেই এবং এই গল্পটি আমার নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে লেখা। সম্পূর্ণ মৌলিক। এক্ষুনি এই গল্পের প্লট মাথায় এলো তাই সঙ্গে সঙ্গে লিখতে বসলাম।
চিন্ময় অনেকদিন আমাদের বাড়িতে থেকে বাবার ব্যবসার সমস্ত হিসেব পত্র দেখাশুনো করে। ও
বি. কম পাস। হিসেব পত্র ভালোই রাখে। একাউন্টেসের কাজ মোটা মুটি বোঝে। চিন্ময়কে বাবাই পড়িয়েছেন। ওর আপন জন বলতে কেউ নেই।
বাবা ওর ওপর নির্ভরশীল। ওকে অগাধ বিশ্বাস করেন। আমাদের বাড়ির গেস্ট রুমের পাসে একটা ছোট ঘর আছে। ও ওখানেই থাকে। বেশি বয়েস নয়। তা ২৫ -২৬ বছর হবে মনেহয়। আমাদের বাড়িতেই থাকে খায়। বাবা কিছু মাস মাহিনাও দেন। ওর হাত খরচ দিয়ে বাবা ওকে বড্ড বেশি লায় দেন। তাই অনেকেরি দৃষ্টি কটু। এরমধ্যে এক কাণ্ড ঘটলো।
মায়ের প্ৰিয় সীতাহার পাওয়া যাচ্ছেনা। মাকে ঠাকুমা বরণ করে ঐ সীতাহার দিয়েছিলেন। সে হার বাবা ব্যাংকের লকারে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু মা বলতেন.... না ও হার আমার কাছেই থাকবে..... আমার শাশুড়ির স্মৃতি। অগত্যা বাবা আর সে বিষয় নাক গলান নি!
সকলে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ঐ হারের ব্যাপারটা। সুম্প্রতি খুকু দির বিয়েতে আমরা বাড়ির সকলে নিমন্ত্রিত তাই সকলে যাই এক চিন্ময় ছাড়া। সে আর পারুল পিসি বাড়িতে থাকে। পারুল পিসি বাল্য বিধবা। উনি ওনার শিব ঠাকুরকে নিয়েই সারাদিন ঠাকুর ঘরে থাকেন। শিব লিঙ্গ স্নান করানো তাকে বেলপাতা চন্দন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পুজো করা। এ পারুল পিসির নিত্য দিনের কাজ। উনি অর্ধেক দিন উপবাস করেন। বাবা বিরক্তি প্রকাশ করেন কিন্তু উনি শোনেন না। মা যত্ন করে পারুল পিসির জন্য পঞ্চ ব্যঞ্জন রান্না করেন আলাদা করে এবং ঠাকুমার সেই শ্বেত পাথরের থালা বাটিতে ওনাকে মা নিজে হাতে পরিবেশন করেন। পারুল পিসির রান্না, কাঠ কয়লার আঁচে ঠাকুর ঘরের পাশেই হয়। একমাত্র মা ছাড়া কারুর হাতে পিসি খান না। এখনো আমাদের বাড়িতে এই রীতি চলে আসছে। বঙ্কা কাঠ কয়লা কিনে আনে... উনুন ধরিয়ে দেয়। মা বেলা একটা দুটোর মধ্যে রান্না শেষ করে পারুল পিসিকে খেতে ডাকেন। পিসি পুজো সেরে বেলা দুটোর সময় ভোজনে বসেন।
সকাল বেলায় লক্ষ্মী , দালান ঘর , শোবার ঘর, বারান্দা, উঠোন, বৈঠক খানা সমস্ত ঝাঁট দেওয়া, মোছা,পরিষ্কার করা তারপর এক কাঁড়ি বাসুন মেজে যেতে যেতে সেই বেলা একটা। ও অবশ্য আমাদের বাড়িতেই খায়। মাছ এলে মাছ কেটে বেছে জগা ননা কে গুছিয়ে দেয়। হ্যাঁ জগা ননা উদিষ্যl র যাজপুরের। ওর মেয়ে নাকি হেড মিস্ট্রের্স। আমরা ঠাট্টা করে বলি কোন স্কুলের?
ননা বলে...কাঁহিকি বিশ্বাস হাউনি?
নানা তা কেন?
তবে? আমি রান্না করে বাড়িতে টাকা পাঠাই সেই টাকায় আমার মেয়ে বি. এ. , এম. এ পাস করল । বেচারি টিউশনি করে বাকি পড়াশুনো করে আমাদের গ্রামের স্কুলের টিচার হোল। এখন একটা ভালো ছেলে দেখে ওর বিয়ে দেব ঠিক করেছি। কিন্তু আমার মেয়ে বিয়ে করতে নারাজ। ও ওর মাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা। বিয়ের কথা বললে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। মহা মুশকিল। কি করবো? মেয়ে বড় হলে তার বিয়ে না দিলে গ্রামের লোকেরা এক ঘরে করেদেবে। কুৎসা রটাবে।
এইবছর মাঘ মাসে বিয়ের দিন আছে। ভাবছি মেয়েটাকে সৎ পাত্রস্থ করবো।
জগা ননা ভাবুক হয়ে পড়ে.... বোধহয় বাড়ির কথা মনে করে উদাস মনে ঠাকুরকে প্রণাম করে.... বলে জগাই আমার ভরসা। মা বিরজা ঠাকুরানী যাজপুরের জাগ্রত দেবী। ওনার কাছে মানত করেছি মেয়ের বিয়ে হলে পুজো দেব।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে জগা ননা বলে যায়।
চলবে.....
May be an image of jewelry
All reactions:
Madhabi Chakraborty, Narmada Choudhury and 1 other