Monday, May 18, 2020

##এঞ্জেল ধারাবাহিক গল্প #### ##১১দশ ও দ্বাদষ পর্ব ## © ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


 






##১১দশ পর্ব##
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আজ ধ্রুব আর মনিকা দুজনে অফিস ফেরত মনিকাদের বাড়িতে গেল l মনিকার মা কোনোদিন ধ্রুবর আদর যত্নর অভাব রাখেন না l এলেই নানা রকমের আইটেম রান্না করে খাওয়ান l আজ উনি ধ্রুবর পছন্দের খাবার করেছেন l আলু পোস্ত, বিউলির ডাল, বাঁধাকপির তরকারি l ধ্রুব নিরামিষ তরকারি বেশি পছন্দ করে l তবে রাতে ভাত খাওয়াটা মনিকা একদম পছন্দ করেনা l কিন্তু বিউলির ডাল হিং দিয়ে রান্না করলে অসম্ভব সুস্বাদু হয় তা সে জানেনা l বিউলির ডাল আলু পোস্ত দিয়ে ভাত খাওয়া যায় l ওটার সঙ্গে রুটি চলেনা l এই জন্যেই বলে বাঙালিরা রকমারি ব্যঞ্জন তৈরি করে খেতে খাওয়াতে জানে l খুব সাধারণ কিন্তু সুস্বাদু l আজ মনিকার একদম বাজে লাগছিলো l
-এ কি রান্না করেছ মা? মনিকা বলে
- খেয়েই দেখো না , মা বলেন
- আমি আগে জানলে কিছু খাবার নিয়ে আসতাম l
- একদিন ছা পোষা বাঙ্গালী ঘরের রান্না খেয়ে দেখোই না
- কি বললে, ছা পোষা ! সেটা আবার কি?
- ছা মানে আমি l বলে হেঁসে ফেলে l ঠিক বলেছি না আন্টি !
- একদম l আন্টি বলেন মুচকি হেঁসে l
- ও তোমরা এখন দুজনে এক হয়ে আমাকে....
- নারে বাবা, ছা মানে ছেলে l বুঝেছ l
- ও এই কথা l আমি বাঁধা কপি আর রুটি খাবো l
- তাই খাও মা l
রাতে ভাত খাওয়া একদম পছন্দ করেনা মনিকা l
খুব সাধারণ ডিনার খেয়ে উঠলো সকলে l
ধ্রুব বাড়িতে ফোন করে
আজ ধ্রুব এখান থেকেই ওর মা বাবা কে ফোন করবে l আর দেরি করা যাবেনা l
বাড়িতে ফোন করলো l মা ধরলেন
- হ্যালো কে ধ্রুব বাবা !
- হ্যাঁ মা কেমন আছো? বাবা কেমন আছেন? অনেক দিন তোমাদের কোন খবর নেই l ওদিকের খবর সব কি বল l
- বিপাশার আশীর্বাদ হয়ে গেলো কাল l ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী র সঙ্গে ওর বিয়ে l মস্ত গাইনোকোলজিস্ট l কোলকাতার নাম করা ডাক্তার l
- তারপর ! তুমি গিয়ে কি দিলে?
- এক জোড়া দুল দিয়ে আশীর্বাদ করে এলাম l মেয়েটা মন মরা হয়ে আছে বুঝেছিস l আমি জানিত ও এই বিয়েতে মোটেই খুশি নয় l
- কেন খুশি না হওয়ার কি আছে?
-কেন আর? মেয়েটা আমাকে বড় ভালোবাসে l ওর জন্য চিন্তা হয় l
- তুমি চিন্তা করে কি করবে? ওর বাবা মা আছেন নিশ্চই ওনারা ভালো জায়গাতেই বিয়ের ঠিক করেছেন l
- তুই বুঝবিনা বাবা l তোকে বলাও যাবেনা l তুই কেমন আছিস বাবা? শরীর ঠিক আছে? খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করছিস l
- হ্যাঁ । মনিকা আমার ঘরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ঘর টাকে মন্দির বানিয়ে দিয়েছে l ঘর একদম পরিষ্কার ঝক ঝক করছে ঠিক তুমি যেমন আমাদের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখো l রান্না ওই করে l আমার ড্রেস কাচা আয়রন করা সব ও l আমাকে কিচ্ছু করতে দেয়না l আমি খুব ভালো আছি মা l আমার কোন কষ্ট নেই l
- ও ! খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন সুনীতি দেবী l
- আমাকে তুমি কিছুই বললে না l আমি আর কতো দিন হয়রান হব ? আমাকে ত এখানেই থাকতে হবে আরো ৩৬ বছর ।
- হুঁ l এখন কি করবি?
- তোমাদের আশীর্বাদ এর অপেক্ষা l তোমরা তোমাদের এক ছেলের বিয়েতে আসবে না মা ?
- তুই কি তোর বাবাকে চিনিস না l উনি কখনোই মত দেবেন না l
- তুমি আসতে পারবে না l বাবা মত দেবেন না l আমার দিকটা একটু ভেবে দেখেছো l আমি কি করবো? আমি এখানে মরে গেলেও তোমরা কিচ্ছু টের পাবেনা l তবে সেটার জন্যই অপেক্ষা কর l
- এ কি কথা শোনালি বাবা l তার আগে আমার মরণ হোক l
- কার আবার মরণ হোল? জগদীশ বাবু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন l
- ওই তাস খেলে এলেন l এবার পরিপাটি করে খেয়ে নাক ডেকে ঘুমোবেন l মা বলেন l
- কার সঙ্গে আবার হবে? ধ্রুব মনিকা বলে একটি গোয়ানিস মেয়ে কে বিয়ে করছে l তার মা বাঙ্গালী , বাবা গোয়ানিস l এখন কি হবে কি করবে বল ! আমার হয়েছে যত জ্বালা l আমার মরণ ও হয়না l বাপ ছেলের মধ্যে পিষে মরছি না ফেলতে পারছি না গিলতে পারছি l ওদিকে ছেলেটার কি হাল হল স্বয়ং ঈশ্বর ই জানেন ।
- আঃ কি হচ্ছে? আমাকে দাও l
- এই সব কি শুনছি ধ্রুব !
- ঠিক ই শুনেছেন বাবা l হ্যাঁ আমি কোনোদিন মিথ্যে বলিনা তাই আপনাকে বলতে দ্বিধা নেই l আমি অপনাদের আশীর্বাদের অপেক্ষায় আছি l মা কে সব বলেছি l
- তোমার এতো অধঃপতন হয়েছে !
-কেন বাবা আমার কি নিজের মতন বাঁচার অধিকার নেই? আমার কথা এক দিনের জন্য চিন্তা করেছেন আপনি l
- তুমি কাকে কি বলছ? তুমি এতো বড় হয়ে গিয়েছ বাবার মুখের ওপর কথা বলছ? এতো অধঃপতন তোমার !
- ঠিক আছে আমি যা জানার জেনে নিলাম l আপনাদের মত নেই তাহলে l
মাকে একটু ডাকবেন?
- কেন মা কি করবে? মা কি তোমার বিয়ে দেবে?
-তবুও মায়ের মত টা দেখি উনি কি বলেন?
- মায়ের কণ্ঠ স্বরের চেয়ে কান্নার আওয়াজ বেশি এলো l এ কি করলি বাবা? আমি যে বেঁচে থাকতে মরে যাবো বাবা l সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা l চারিদিকে ছি ছি করবে সকলে । আত্মীয় স্বজনের কাছে কি বলে মুখ দেখাব ? কোন জন্মের পাপ আমাকে ভুগতে হবে কে জানে !
- কেন মা সমাজ কি মানুষে মানুষে প্রভেদ শিখিয়েছে l যীশু খৃষ্ট আর কৃষ্ণ তো এক l তুমি তো বল যিনি খৃষ্ট তিনি কৃষ্ণ l ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম.. রঘুপতি রাঘব রাজা রাম... এটাও তো স্কুলে মাস্টারমশাই রা শেখালেন l তবে এখন আমাকে কেন তোমরা অন্য মন্ত্রে দীক্ষিত করছ l বিভেদ আর প্রভেদ এর মন্ত্র l আমার কি এটুকু স্বাধীনতা নেই মা ?
- আমি জানিনা আমায় কিছু বলিস না l তুই দূরে থাকিস কিন্তু আমাদের ত এই সমাজ আর আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে থাকতে হবে । তাদের কি জবাব দেবো ? তারা কিছুই বুঝবে না ।
- বলবে তোমাদের ছেলে মরে গিয়েছে । ঠিক আছে । আমি রাখছি l ধ্রুবর চোখ ছল ছল করতে লাগলো l ও পাথরের মতন হয়ে গেল l এ কি ধর্ম সংকটে পড়লো সে l
- মনিকার মা এবং মনিকা দুজনেই চুপ করে বসে আছেন l কারুর মুখে কিছু কথা নেই l
এক গভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ধর্মের শৃঙ্খলে বাঁধা l তারা হতবাক এই সমাজের অদ্ভুত অলিখিত নিয়মে l মানুষের তৈরি নিয়মে তাদের চলতে হবে l তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে না l তাদের সমাজের নিয়মেই চলতে হবে নাহলে তাদের সমাজ ত্যাগ করবে l এই নিয়ম চলে আসছে আবহ মান কাল থেকে l কোথায় গেলেন রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ? কোথায় গেলেন সব সমাজ সুধারক রা ?
এখনো ওই এক ই প্রথা চলে আসছে গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারে কতো ছেলে মেয়েকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে হচ্ছে কেবল মা বাবা আর সমাজকে খুশি রাখতে l এখনো ও এই বিষয়ে ছেলে মেয়েদের ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই l এই আমাদের অলিখিত সমাজ ব্যবস্থা আর তার নিয়মাবলী ! আশ্চর্য !!
মনিকার মা কে মনিকা জিজ্ঞাসা করে , তোমার কি মতামত মা ?
- আমি কি আর বলবো মা ? তোমরা ত সব ঠিক করে রেখেছ । তোমাদের ইচ্ছা ই আমার ইচ্ছা । আমার কিছু নতুন করে বলার নেই । তবে ছেলেটা আর মা বাবার মুখ দেখতে পারবে বলে মনে হয় না । বড় কঠিন আমাদের সমাজ ব্যবস্থা । ওই বলেনা ভালো করবো না মন্দ করবো কি দিবি তাই বল । ওখানে ওইটাই সমাজ ব্যবস্থার মূল মন্ত্র ।
- ধ্রুব বলে আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করব মা । কোন আত্মীয় স্বজনের দরকার নেই কিছু বন্ধু বান্ধব আর আমরা কজন । বাবা মাকে দিন স্থির করে জানাবো । যদি আসেন সব ব্যবস্থা করব । না এলে আমার করার কিছু নেই । এই বিষয় আর দেরি করা চলবে না ।
- মনিকা ওই একই কথা বলে । তবে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি আজ আমার মা’কে মা বলে সম্বোধন করলে । এতদিন আন্টি বলছিলে । থ্যাংক ইউ । আই লাভ ইউ ।
- হুম । আমার মা এখন নিরুপায় । উনি পরাধীন এক নারী । তাঁর মনের কষ্ট আমি বুঝি । আজ তাঁকেই আমি অনেক কটু কথা বললাম নিজের স্বার্থে । আমি মায়ের কাছে অপরাধী । সে তোমরা বুঝবেনা । রেজিস্ট্রি হবে কিন্তু আমি চার্চে যেতে পারবোনা মা । আমি আমার ধর্ম কে সত্যি মন থেকে পুঁছে ফেলতে পারবো না ।
- হ্যাঁ তাই হবে বাবা , মনিকার মা বলেন । কিন্তু উনি থাকলে সেটা হতে দিতেন না ।
- মনিকা বলে , আমি কিন্তু মা আমাদের ওয়েডিং কস্টিউমে থাকব । ধ্রুব তুমি ?
- আমি ধুতি পাঞ্জাবী আর মাথায় টোপর পরব ! আমি কেন তোমাদের কস্টিউম পরব?
- ওকে এজ ইউ লাইক । কিন্তু কোথায় পাবে ওই কস্টিউম ?
- আমার কলিগ আছে ওরা আমাকে বলেছে আনিয়ে দেবে কোলকাতা থেকে ।
- ঠিক আছে । এ এক অদ্ভুত কম্বিনেশন হবে যাকে বলে কনট্রাস্ট । এরকম কোন দিন হয়নি এখানে ।

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী





##দ্বাদশ তম পর্ব##
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

ধ্রুব মনিকাদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে একা l আজ আবার তার নিঃসঙ্গ জীবন মনে হচ্ছে l রাতের খাবার ওখানেই খেয়েছে l মায়ের হাতের রান্না আজ ওর খুব মনে পড়ছে l ও কিছুতেই সে দিনগুলোকে হাত দিয়ে সরাতে পাচ্ছেনা স্মৃতি থেকে l এ সে কি করলো? নিজের সুখ সুবিধের জন্য মায়ের মনে আঘাত দিলো ! এ কি হোল তার l এই পরিবর্তনের জন্য সে একা দায়ী l ছিঃ একি করলো ! মায়ের কথা মনে করে দু চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বয়ে চলে তার l স্কুল থেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরলে মা মুখের সামনে তুলে ধরতেন তার পছন্দের খাবার l তার জ্বর হলে মা রাতের পর রাত মাথায় জল পট্টি দিয়ে বসে থাকতেন l ওষুধ খাইয়ে দিতেন পরম স্নেহে l জ্বর আপনা হতে চলে যেত মায়ের সেবা শুশ্রূষায় l সেই মাকে সে কি বলল ! কেন বলল? ধিক্কার দেয় নিজের মনকে l মনে হয় সে স্বার্থপর
হয়ে গিয়েছে l মানিকের জন্য সে তার মা বাবাকে যা নয় তাই বলেছে l সত্যি সে অধঃপতনে গিয়েছে l বাবার কথাগুলো কানে বাজছে শত লাউড স্পিকারের কণ্ঠে l এ কি পরিণতি হোল তার?
বাবা তার কলেজের এডমিশিনের সময় একবার টাকা ধার করে আনেন l সেটা মা জানতেন কিন্তু তাকে বলেন নি l ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যথেষ্ট খরচা ছিল l কিন্তু উনি হাঁসি মুখে বলতেন কিছু চিন্তা করিসনা বাবা আমি আছি তো l তোর কোন অসুবিধে আমি রাখবোনা l তুই শুধু মন দিয়ে পড়ে যা l তাকেও সে যা নয় তাই মনিকাদের সামনে ই বলেছে l এই পাপের সে অবশ্যই সাজা পাবে l আত্মগ্লানিতে জর্জরিত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল জানেনা l সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খুঁজল l কিন্তু কোথায় চা ? মনিকা ওদের বাড়িতে l
অগত্যা নিজেই চা বানাতে কিচেনে গেলো l ফিরে এলো সোফাতে চায়ের কাপ নিয়ে l সঙ্গে সেই গতকালের স্মৃতি l মনে মনে গাইল :
ইচ্ছেরা সব পালিয়ে গেছে
ইচ্ছে নদীতে
ইচ্ছেরা আর নেই যে মনে
বিনা কারণে
ইচ্ছেরা সব রোজ সকালে
চায়ের কাপে বাষ্প হয়ে
ডানা মেলে নাচত
চায়ের শেষে ক্লান্ত হয়ে
মনের কোণে থাকতো।
আমায় শুধু ডাকতো
আমায় ভালোবাসতো। 2
এখন শুধু আঁধার রাতে
চোখের কোনে বাষ্প হয়ে
মনের ব্যথা কাঁদছে
ইচ্ছে গুলো আসেনা ফিরে
বালিশ শুধুই ভিজছে
ওদের মনে পড়ছে
শুধু মনে পড়ছে।।
কথা ও সুর :-
© অভিক চক্রবর্তী 
@avik chokroborty
না আর দেরি করা চলবেনা l তাড়া তাড়ি রেডি হতে হবে l নিত্য কর্ম সেরে স্নান সারে l ঠাকুরের কাছে গায়ত্রী জপ করে l এই কদিনে মনিকা ওর অভ্যাস টা বাজে করে দিয়েছে l ওর ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছে l কাল ব্রেড এনেছিল আসার সময় ওটাই টোস্টারে টোস্ট করে চিরকালের অভ্যাস মতন ব্রেড বাটার জ্যাম আর ডিম সিদ্ধ সঙ্গে এক মগ ব্ল্যাক কফি l
‌মনিকা আমার অফিসে যাওয়ার যে ড্রেসটা আয়রন করে রেখেছ ওটা দাও... দেরি হয়ে যাচ্ছে.... হঠাত মনে পড়লো মনিকা নেই বলে !! এ কি তার হচ্ছে কাল থেকে l বেশ তো ছিল একা একা ! মনিকা তার
জীবনে কেন এলো ! তাকে বড্ড নির্ভরশীল করে দিচ্ছে l এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয় l
আজ অফিস থেকে ফিরে আবার মাকে ফোন করবে l মাকে ক্ষমা চাইবে কালকের ব্যাপারে l বাবার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নেবে l কিন্তু মনিকা তার কি হবে? তাকে তো সে ফেলতে পারবে না !
.....
এদিকে মনিকা সকালে খেতে গিয়েই বমি করে ওয়াস বেসিন এ l ওর মা ব্যাপারটা লক্ষ করেন l
মনিকা ইদানীং ওর মাকে একটু এভোয়েড করে l ও বুঝতে পারে ওর শরীরে একটি প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে l কদিন খুব লুকিয়ে আচার খাচ্ছে l কিন্তু ওর মা অভিজ্ঞ matron মেট্রন l এইসব ব্যাপার ওনার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয় l
মনিকা তোমার কি হয়েছে ? কদিন তোমাকে অসুস্থ লাগছে l আমাকে কিছু লুকচ্ছ মনে হচ্ছে l
- কি আবার হবে মা? গা বমি বমি করছিলো l কাল বাঁধা কপি খেয়ে গ্যাস হয়েছে বোধ হয় l
- আমার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া অতো সোজা নয় l কিচেনে আচারের শিশি অর্ধেক হয়ে গিয়েছে l
- হ্যাঁ আচার খেয়েছি l I am carrying a new life.
- সেটাই বল l কতো মাস?
- দু মাস হতে চলেছে l
- তুমি আমাকে বলোনি কেন? আমি ব্যবস্থা করছি MTP র জন্য l
- নো নেভার l আমি ওকে পৃথিবীতে আনবো l ধ্রুব সেই জন্য বিয়ের তাড়া দিচ্ছে আমাকে l শুনলেত ওর মা বাবাকে পর্যন্ত ত্যাগ করতে ও রাজি আমার জন্য l তোমরা সব স্বার্থপর l ছেলে মেয়ের সুখ সুবিধে বুঝতে চাওনা l তুমিও ঠিক ওই সেকেলে বাঙালিদের মতন l ওখানকার ই তো মেয়ে তুমি l তুমি কি করে আলাদা হবে বল ?
- আমি তোমার সুখ শান্তি চাই না !
- না চাওনা l তুমি স্বার্থপর l আমাকেও ভালো বাসনা আমার বাবাকেও ভালো বাসতেনা l
You are too much selfish. You have grabbed the entire property from my father. I have not seen a single drop of tears when my father died. As if it was a boon for you.
(তুমি অত্যন্ত স্বার্থপর l আমার বাবার সমস্ত সম্পত্তি অধিকার করেছ l বাবার মৃত্যুর সময় তোমার চোখে এক ফোঁটা জল দেখিনি lতুমি মনেকরেছিলে এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ! )
- মনিকা ! Just stop it. Control your tongue. Enough is enough (মনিকা তোমার জিবে লাগাম দাও। অনেক বলেছ) যেমন বাবা তেমনি মেয়ে l তোমার সাহস দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে l মায়ের সঙ্গে এইরকম ভাবে কথা বলছ তুমি ! আমি তোমাকে ছোট থেকে বড় করলাম এই কথা শোনার জন্য l আমি স্বার্থপর ! তোমার বাবার অসুখের সময় কে দেখা শোনা করতো? আমি আয়া রাখতে পারতাম কিন্তু আমি নিজে হাতে সব করেছি ওনার রোগ শয্যায় l তুমি তখন কলেজে পড়তে l তোমাকে আমি একদম কোন কষ্ট দি নি l এই তার প্রতিদান l আমার ইচ্ছে ছিল তুমি মেডিক্যাল পড় l বড় ডাক্তার হও কিন্তু তুমি নার্সিং স্কুলে নিজে নিজে ভর্তি হলে l তার জন্য আমি দায়ী? How could you accuse me my child. এই বয়েসে আমার নিজের সন্তানের মুখ থেকে এই শুনতে হোল?
- তুমি কেন MTP র কথা বললে? ধ্রুব যখন বিয়ে করতে চাইছে l ও যদি অস্বীকার করতো তবে আমি সেটা চিন্তা করতাম l কিন্তু ও তো আমাকে বিয়ে করতে চায় l
- তুমি জানোনা মা, এদের মা বাবারা কি করে এদের দিয়ে শপথ করিয়ে নিতে পারেন l আমি বাঙ্গালী আমি জানি l ধ্রুবর মা যদি ওর হাত নিজের মাথায় রেখে শপথ করিয়ে নিয়ে বলেন তুই মনিকা কে বিয়ে করলে আমার মরা মুখ দেখবি l তখন কি করবে তুমি ! ও তখন বেঁকে বসতে পারে l অসম্ভব নয় l Be practical (কাজের কথা বল ) যা ভুল করেছ তাকে মিটিয়ে ফেলাই ভালো l আমার কথা শোন l আমি তোমার মা আমি তোমার গর্ভ ধারিণী l আমি তোমার ভালোই চাই l আমাকে ভুল বুঝলে নিজে পস্তাবে l
- না ... না... no its impossible. He loves me. He is not a traitor.I can't destroy the fruit of our love. I will bring the Anjel yes Anjel to this universe. (না সেটা সম্ভব নয় । ও আমাকে ভালো বাসে । ও প্রতারক নয় । আমি আমাদের প্রেমের সম্পদ কে নষ্ট করতে পারিনা । আমি এই পৃথিবীতে স্বর্গের পরী হ্যাঁ স্বরগের পরী কে আনবো l) সে আমাদের চোখের মনি হবে l সে ধ্রুব আর আমার প্রেমের প্রতীক l আমি তাকে নষ্ট করতে পারিনা l সেটা পাপ l আমি কি জবাব দেবো ধ্রুবকে? ভেবে দেখেছো l
- Dont be emotional my child. These are the words of a true lover but it is the feeling of the sentiment of a immature girl like you. Trust me. Dont get emotional. That pays nothing. You have not seen the cruel world. You can't resist. Believe me my child.
(আবেগের বসে অধীর হয়না মা l এক সত্যিকারের প্রেমিকার কথা তুমি তুলে ধরছ কিন্তু এটা তোমার অপরিপক্বতার পরিচয় l আমাকে বিশ্বাস কর l আবেগপ্রবণ হয়ো না l ওতে কোন ফল হয়না l তুমি পৃথিবীর ক্রুর লোকেদের এখনো চেনোনি l তুমি সহ্য করতে পারবে না l আমাকে বিশ্বাস কর আমি তোমার মা l আমি তোমার ভাল চাই । )
... .......
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 





##এঞ্জেল নবম ও দশম পর্ব## লেখক ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


 

##এঞ্জেল## 


##এঞ্জেল## 

##নবম পর্ব##

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

 

##আজ ডঃঅভিষেক ব্যানার্জী র আশীর্বাদ##:-
বালিগঞ্জের গোল পার্কের কাছে ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী দের বনেদি বাড়ি l তিন পুরুষের মস্ত বড় বাড়ি l সামনে গেট তাতে দারোয়ান সারাক্ষণ পাহারায় থাকে l গাড়ি বারান্দা ফুলের বাগান l খুব সাজানো গোছানো বাড়ি l ঢুকতেই ডানদিকে ডাক্তার এর চেম্বার l আজ বন্ধ আছে l
বরের আশীর্বাদের দিন ডঃ অভিষেক ব্যানার্জীর একটা অপারেশন ছিল উনি তাই তাড়া তাড়ি চলেযান আশীর্বাদ সেরেই l কোনের বাড়ি থেকে সোনার চেন আর আংটি দিয়ে বরকে আশীর্বাদ করেন ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী এবং তাঁর সহধর্মিণী মৃণালিনী দেবী l বরের বাড়ি থেকে আগে থেকেই বলেছিল ওনারা কিছুই আয়োজন করতে পারবেন না কারণ সেদিন অভিষেক কে একটা বড় অপারেশন করতে যেতে হবে l তাই তাড়া তাড়ি চলেযান আশীর্বাদ সেরেই ।
 মৃণালিনী দেবীর খুব একটা পছন্দ হয়নি বরের বাড়ির লোকেদের l সেরকম কোন আপ্যায়ন এর ব্যবস্থা নেই l দায় সারাগ্রস্ত সামান্য চা জলখাবার এর ব্যবস্থা তাও বাড়ির কাজের লোক কে দিয়ে l অভিষেক এর বাবা মা ঠাকুমা ছিলেন l ঠাকুমা খুব ভালো মনে হল l খুব অমায়িক ব্যবহার l মৃণালিনী দেবী ওনার সঙ্গেই মেয়ের কথা বলছিলেন l কিছুক্ষণ বাদেই বিপাশা র মা বাবা ফিরে আসেন l
- বাড়ি খানা কেমন দেখলে কমলেশ বাবু জিজ্ঞাসা করেন বিপাশার মা'কে
- তুমিতো সব দেখে ঠিক করেছ l আমি আর নতুন করে কি বলবো?
-কেন তোমার বাড়ি পছন্দ হয়নি?
- বাড়ির সঙ্গে কি মেয়েকে বিয়ে দেবে? ছেলেতো তার অপারেশন নিয়েই ব্যস্ত l আমার মেয়েটার কি হবে কে জানে !
- সব সময় তুমি ঐরকম কথা বলোনাতো l এত বড় বাড়ির বৌ হবে সেটা তোমার ধারণা ছিল !
- আমার দরকার নেই বাড়ি নিয়ে l সামান্য আপ্যায়ন টুকু দেখলামনা l
- ওসব আপ্যায়ন ওদের করার সময় নেই ওনারা ব্যস্ত লোক l দেখলেনা জামাই কেমন সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো অপারেশন করতে নার্সিং হোম এ l কোলকাতার নামকরা ডাক্তারের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে l ওই হা ঘরে জগদীশ ব্যানার্জী দের কি আছে?
- সুনীতি বৌদি বিপাশা কে নিজের মেয়ের মতন দেখেন l উনি নিজে এসেছিলেন ওনার ছেলের সঙ্গে বিপাশার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে l আমি কিছুই বলতে পারিনি সেদিন l
ওদের হয়তো টাকা পয়সা নেই কিন্তু মন আছে l এখানে এনারা টাকার গর্বে গর্বিত l
- হবেনা? ওরা কি ভিখারি জগদীশ ব্যানার্জি l ছেলের পয়সা এলে তবে হাঁড়ি চড়ে ! কি আছে ওদের?
- বললাম তো মন আছে, হৃদয় আছে l
*****
###বিপাশার আশীর্বাদ###
আজ ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী র বাড়িতে বিরাট আয়োজন l মৃণালিনী দেবী, বিপাশার মা রান্নার ঠাকুরকে সব একে একে বোঝাচ্ছেন কি কি রান্না হবে l আজ বিপাশার আশীর্বাদ l কমলেশ বাবু তাঁর ই ছাত্র ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী নামকরা গাইনোকোলজিস্ট এর সঙ্গে তাঁর একমাত্র কন্যা বিপাশার বিবাহ ঠিক করেছেন l আজ পাকা দেখা এবং আশীর্বাদ l
জগা ননা, উড়িষ্যার, ভদ্রকের ব্রাহ্মণ l গলায় মোটা পৈতে l রান্নাটা, ননা ভালোই করেন l তার হেলপার দের আনাজ পাতি কিরকম করে কাটা হবে সব বুঝিয়ে দিলেন l মাছ অনেকরকমের এসেছে l পাবদা, ইলিশ, তোপসে, ভেটকি, গলদা চিংড়ি l
আঠারো পদের রান্নার ফিরিস্তি :
ইলিশের পাতুরি, তোপসে ফ্রাই, ভেটকি র বাটার ফ্রাই, পাবদা ফ্রাই, গলদা চিংড়ির মালাই কারি এছাড়া খাসির মাংস র মটন কোর্মা আর দো পিয়াজা l এবং ডিমের ডেভিল l ফ্রায়েড রাইস, রুমাল রুটি, পাঁপড় ভাজা, আনারসের প্লাস্টিক চাটনি, গোবিন্দ ভোগ চালের পায়েস, রাজভোগ, কৃষ্ণ নগরের সর পুরিয়া, নব দ্বীপের দই, বর্ধমানের সীতা ভোগ, শক্তিগড়ের ল্যাংচা ।
দুজন ঠাকুর বড় বড় কড়ায় কয়লার উনোনে রান্না আরম্ভ করলেন l দুটো কয়লার জাল দিয়ে উনুন আবার একটা কাঠের উনুন প্রায় একশো জন খাবেন l একমাত্র মেয়ের আশীর্বাদ বলে কথা l
আত্মীয় স্বজনে ঘর ভর্তি l বিপাশার মামার বাড়ির সবাই, মামা মামী, দুই কাকা কাকিমা l একজন বোম্বে থেকে আরেকজন বেনারস থেকে l ওদের কথায় বিশেষ করে বাচ্চাদের একটু প্রবাসী টান এসে গিয়েছে l প্রায় হিন্দি মেশানো বাংলা l
যেমন দিদি জামাই বাবুকে দেখে ফিদা হয়েযাবে l কথাটার আক্ষরিক অর্থ বিপাশার বোধগম্য নয় l জানার ও ইচ্ছে নেই l ও খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল l ওকে সাজানোর জন্য বোম্বের কাকিমা আর তার মেয়ে বান্টি লেগে পড়ছে l
আমার এইসব সাজ গোজ ভালো লাগেনা l আমি এইসব আধুনিক সাজে অভ্যস্ত নই l
বান্টি বলে একদিন ই তো সাজবে দিদি l দেখো জামাই বাবু প্রথম দেখাতেই বেহোশ হয়ে যাবে l
ক্রমে আশীর্বাদের মুহূর্ত র বেশ কিছুক্ষণ আগেই বরের বাড়ির লোক জন দুটো কারে এসে পৌঁছলেন l দুটোই ইমপোর্টেড কার l একটা ইম্পালা আরেকটা ক্যাডিলাক l তখনকার দিনে ইম্পর্টেড কার একটা আভিজাত্যের লক্ষণ ছিল । মধ্যম গ্রামে বোধ হয় এই প্রথম এতো বড় গাড়ি এলো l
নিমন্ত্রিত দের মধ্যে অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন আর পাড়ার কিছু পরিবার যারা ডাক্তার বাবুদের পরিচিত l তা ছাড়া বর পক্ষের দশ বারো জন l
কমলেশ বাবু, বরের বাড়ির সকলকে বৈঠক খানায় বসালেন l দফায় দফায় শরবত, কোল্ড ড্রিঙ্কস, চা কফি, পান, সিগারেট সব রকম ব্যবস্থা করেছেন যাতে কোন ত্রুটি না থাকে l পাড়ার কিছু গণ্য মান্য ব্যক্তি একটু পরে পৌঁছলেন l তাদের জন্য বাড়ির সামনে মাঠে প্যান্ডেল করে বসার ব্যবস্থা হয়েছে l
বর পক্ষ আশীর্বাদ করার পর ডাইনিং হলে আগে থেকে ব্যবস্থা হয়ে ছিল খাওয়ার জন্য ।
আশীর্বাদ এ বর এর বাড়ি থেকে তিন ভরির সুন্দর একটা হার, হাতে বাউটি , কানের দুল আর বেনারসি শাড়ি l আত্মীয় স্বজন রা যে যার সোনা দানা দিয়ে আশীর্বাদ করেন l বিপাশা র হাতে গলায় কানে সোনা ভর্তি কিন্তু তবুও ও এতো উদাস দেখাচ্ছিল কেন l বেশ অন্যমনস্ক লাগছিলো যেন কাকে খুঁজছে মনে মনে l
মা নিজে গিয়েছিলেন ধ্রুব দাদার বাড়ি নিমন্ত্রণ করতে কিন্তু কোই ওদের বাড়ির কেউ তো এলোনা....
হঠাৎ ওদের ঘরে সুনীতি দেবী, ধ্রুবর মা হাতে একটা কৌটো নিয়ে ঢোকেনা l একেই বলে বোধ হয় টেলিপ্যাথি !
বিপাশা বলে এত দের করলে মাসি !
আমি কখন থেকে তুমি আসবে বলে বসে আছি l
- ওরে আমার মেয়ের কথা শোন l আমার কি কাজ নেই l ওনাকে খেতে দিয়ে তবে এলাম l আজ আবার আমার উপোষ l আমি কিছুই খাবো না l তোকে দেখে চোলে যাবো রে মা l আর কদিন ই বা থাকবি ! এই হোল মেয়েদের জীবন , জন্ম থেকে প্রথম যৌবন বাপের বাড়ি তারপর স্বামীর বাড়ি l একটা মেয়ের ওপর দিয়ে কি যায় সে তারাই বোঝে রে মা l তবে তোর বাবা তো একেবারে রাজ পুত্র র সঙ্গে তোর সম্বন্ধ করেছেন ! তুই এতো উদাস কেন মা ?
- হ্যাঁ রাজপুত্র ই বটে l বিরাট অট্টালিকা, গাড়ি, চাকর, ফুলের বাগান.... মৃণালিনী দেবী বলতে বলতে ঘরে ঢোকেন l ওদের ব্যাপার ই আলাদা - ও !
- তা জামাইকে আশীর্বাদ কবে করলেন?
- গত সোমবার l ব্যস্ত মানুষ l সে তার অপারেশন এর জন্য তাড়া তাড়ি চলে গেল l আমরা আশীর্বাদ সেরে ফিরে এলাম ।
- তুমি বসনা মাসি , বিপাশা বলে l
- এই নে যার জন্য আসা l কিছুই সেরকম আনতে পারিনি রে l একটা জোড়া দুল l এই নে মা l এটাই আমার তরফ থেকে তোর জন্য আশীর্বাদ এর উপহার l
- বিপাশা প্রণাম সারে সুনীতি দেবীকে l
- আশীর্বাদ কর মাসি যেন...
- সুখী হও মা l স্বামীর মন জয় কর l শশুর শাশুড়ি র যত্ন কর l সকলের মন জয় করে সুখে শান্তিতে থেকো l এবার যাই রে l
- যা বললে কে যেতে দিচ্ছে l মৃণালিনী দেবী বলেন l কিছু তো মুখে দিয়ে যান l
- না বোন আজ নয় l আজ আমার উপোষ l ছেলেটা বাইরে আছে l আজ উঠি বলে চলে আসেন l
- বিপাশা দুলটা নিজেই পরে নেয় কানে l এটা ওর কাছে অনেক বড় উপহার l
মাসির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে মাসির কথা গুলো ভাবছিল ll
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
 চলবে....



##এঞ্জেল  ১০ ম. পর্ব##
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি

বিপাশার আশীর্বাদ সেরে সুনীতি দেবী ঘরে ফেরেন । ঘরে ফিরেই জগদীশ বাবুর প্রশ্নের মুখে পড়েন ।
- কেমন খাওয়া দাওয়া হল ?
- আমিতো ওখানে খেতে যাইনি । মেয়েটাকে জন্মথেকে দেখলাম । আমার চোখের সামনে বড় হল । সে ত আমার সন্তানের ই মতন । তা ছাড়া আমাকে যথেষ্ট ভালো বাসে মেয়েটা । মাসি মাসি বলে সব সময় আমায় কত সাহায্য করে । আজ তার আশীর্বাদ আমি না গিয়ে কি করে থাকি । আমি মেয়েটার মনের ভাষা বুঝি । ও ধ্রুবকেই পছন্দ করত কিন্তু বাবার জন্য ওকে বলিদান দিতে হল নিজের সমস্ত ইচ্ছা । ওর মা’র ও ধ্রুবকে মন থেকে পছন্দ ছিল । ভেবেছিলেন কাছেই তাঁর মেয়ে থাকত । কিন্তু সব ভেস্তে গেল ওর বাবার জন্য । উনি মেয়েকে সেই বলির পাঁঠার মতন পাঠাবেন তাঁর ছাত্রের অর্ধাঙ্গিনী করে । এই সমাজে মেয়েদের কিছু বলার জো আছে না তাদের কথার কেউ পাত্তা দেয় । তোমার কথার ওপর আমার কোন কথা খাটে না কোন দিন আমার কথা শুনেছ ? ছেলেটা পড়ে আছে অতো দূরে । একবার খোঁজ নিয়েছ সে কেমন আছে ? সে টেলিফোনের টাকা দিল তাই আমি দু বছর পর তার সঙ্গে দুটো কথা বলি । তাও সপ্তাহে একবার ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে । ওখানে যাওয়ার বন্দবস্ত করতে হবে । ওর বিয়ের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকাতে পাত্র পাত্রী কলমে একটা বিজ্ঞাপন দেব । দেখি কেমন পাত্রীর সন্ধান আসে । তারপর না হয় একেবারে সম্বন্ধ নিয়েই যাবো ওখানে । কি বল ?
- সে গুড়ে বালি । তোমার ছেলে পাত্রী নিজেই পছন্দ করে রেখেছে । আমাকে বলেছে কিন্তু আমি তোমায় বলিনি ।
- সে কি আমায় বলনি কেন ?
- বলার মতন হলে ত বলব । তুমি ত শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে । ওর মনের দিক কিম্বা ওর সুবিধে অসুবিধে কিছুই বুঝবে না ।
- কি হল একটু খুলে বল ।
- এখন আমার ঘরের কাজ অনেক আছে ।পরে বলব ।
- যা বাবা তবে বললে কেন ?
- ঘাট হয়েছে আমায় মাফ কর । এখন পুজো হয়নি । আমি জাই ঠাকুর ঘরে ।
………
এই বলে সুনীতি দেবী ঠাকুর ঘরে চলে জান ।
হটাত বৈঠক খানার ঘরে ফোনটা বেজে ওঠে । জগদীশ বাবু প্রায় দৌড়ে জান ফোন রিসিভ করতে ।
- হ্যালো কে বলছেন ?
- কে বলছেন কিগো দাদা ..আমি সন্ধ্যা । বরানগর থেকে বলছি ।
- ও সন্ধ্যা ! কি খবর তোদের ? সুধীর কেমন আছে ? কাকিমা কেমন আছে রে । অনেক দিন তোদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি । সব ভালো ত !
- হ্যাঁ সবাই ভাল আছেন । মায়ের ত ৮৮ বছর বয়েস হল । ওই আছেন এক রকম আরকি । আসল কথা তোমায় বলি । জানো ধ্রুবর বিষয় কিছু ?
- কেন কি হয়েছে ? ধ্রুব ত ভালোই আছে । আমাদের সঙ্গে ত সপ্তাহে একবার কথা হয় । প্রতি রবিবার সে ফোন করে আমাদের । কি এমন হল ?
- ধ্রুব এক মহিলার প্রেমে পড়েছে । তাকে বিয়েও করবে । সে ওখানকার মেয়ে । দেখতে নাকি অপরূপ সুন্দরী কিন্তু খ্রিষ্টান ।
- তোকে এই সব কথা কে বলল ? আমি জানিনা তুই এই সব উটকো কথা আমার ছেলের নামে বলে আমায় বিব্রত করছিস কেন ? আমি রাখছি । বলে ফোন রেখে দিলেন বিরক্ত হয়ে ।
এদের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই খালি পরের সংসারে ঢুকে তাদের হাঁড়ির খবর রাখা আর মানুষকে বিব্রত করা । তবুও মনে খটকা লাগল । এখুনি ধ্রুবর মা কি জেন বলছিল । দূর যাই এক হাত তাস খেলতে সুমন বাবুর বাড়িতে । ওখানেই হয়ত আজ আড্ডা জমেছে সকলের । ওইসব বাজে কথায় কান দিয়ে কাজ নেই । বলে চলে গেলেন ।
##ধ্রুবর কোয়ার্টার , মণিকার হাতে নব কলেবর##
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ধ্রুব দেখল সামনে টি পয়ে বেড টি রাখা আছে । সুন্দর দার্জিলিং চায়ের সুবাসে ধ্রুবর ঘুম ভেঙ্গে যায় । এক লাফে উঠে দ্যাখে সকাল ৬.১৫ । এলার্ম টা বাজেনি বোধ হয় । ব্রাশ সেরে চায়ের কাপে মুখ দেওয়ার সময় চা জুড়িয়ে গিয়েছে । মনিকা কে ডাকে চা গরম করার জন্য ।
- কি হল চা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে ত । আমি ইচ্ছে করে ডাকিনি তোমায় । দেখছিলাম চায়ের সুবাস তোমায় ওঠাতে পারে কিনা !
- এটা কি ধরনের রসিকতা । আমায় ডাকবে ত ! আমার ফ্যাক্টরির বাস এসে যাবে এখুনি । ওই ঠাণ্ডা চা খেতে যাচ্ছিল ।
- উঁহু আমি আবার চা বানিয়েছি তোমার জন্য । এই নাও ।
- কিন্তু ওটা ?
- আমি আবার গরম করে খেয়ে নেব । তোমায় চিন্তা করতে হবে না ।
- এখন কথা বলার সময় নেই । চা খেয়ে দৌড়য় টয়লেটে ।
মনিকার মুখ দিয়ে বেরোয়… পাগল ছেলেটা । বড্ড ভাল । একটু মুখে হাঁসি ফোটে ।
আজই ওরা মায়ের কাছে যাবে মায়ের ফাইনাল ডিসিশন শুনতে । ধ্রুবর মা ত কিছুই বললেন না । ব্যাপারটা আর চেপে রাখা যাবেনা ।
ধ্রুবর ঘর একদম সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো । ঘর পরিষ্কার , ঘর মোছা , আসবাব পত্র গুছিয়ে রাখা , বিছানা , বিছানার চাদর পরিপাটি করে সাজানো । টেবিলে ফুল দানি তাতে ধ্রুবর  পছন্দর রজনীগন্ধা , গোলাপ । রান্না ঘর একদম পরিষ্কার । কোথাও কোন খুঁত নেই । এমনকি বাথ রুম , টয়লেট সব পরিষ্কার করে মনিকা নিজে হাতে । ঘরের শ্রী ফিরেছে । ধ্রুবকে কিচ্ছুটি করতে দেয়না । নিজে বাজার আনে । রেশন আনে । রান্না বান্না করা । সত্যি এত যত্ন ধ্রুবর কপালে ছিল ও নিজেও কোন দিন আশা করেনি এই বিদেশ ভুঁই তে । সব মনিকা আসার পর হয়েছে । ধ্রুব তাই ওর কাছে কৃতজ্ঞ । বলে তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী ।
স্নান সেরে ধ্রুব আসার সময় ব্রেক ফাস্ট রেডি । ওর পছন্দর পরটা আলু চচ্চড়ি আর সঙ্গে ডিমের অমলেট । এরপর এক কাপ কফি । ব্যাস আর কিচ্ছু চাইনা ।
শার্ট প্যান্ট সব মনিকা কেচে আয়রন করে রাখে । ফ্যাক্টরি যাওয়ার সময় হাতে হাতে সব গুছিয়ে দেওয়া । টাইটার নাট পর্যন্ত এঁটে দেওয়া । ধ্রুব প্রমোশন পেয়ে ম্যানেজার প্রডাকশন হয়েছে । এখন ও পার্টি দেয়নি কলিগ দের । মনিকা বলেছে আগে বিয়েটা হোক এক সঙ্গে পার্টি দেবে সকলকে ।
ধ্রুব তাড়া তাড়ি ব্রেকফাস্ট খেয়ে মুখ ধুয়ে এলো বেসিন থেকে । মনিকা সব একে একে এগিয়ে দেয় । টাই বাঁধতে শেখায় ধ্রুবকে । বলে এক্সিকুটিভ র্যাঙ্কে গেলে এখানে টাইটা পরা নেহাত প্রয়োজন । ওটাই স্ট্যাটাস সিম্বল । এখন আর তুমি লেবারারদের নিয়ে কাজ করনা । তোমার চেম্বার তোমার স্বতন্ত্র ফোন সব কোম্পানি দিয়েছে । তাকে কাজে লাগাও । নিজেকে প্রতিষ্ঠা কর । পরে আরও প্রমোশন পাবে । ধাপে ধাপে যখন ফ্যাক্টরির টপ এক্সিক্যুটিভ হবে তখন আরো স্ট্যাটাস বাড়বে ।
এরমধ্যে বাস এসে গেলো । বাই করে চলে গেল ।
মনিকাকে হসপিটালে যেতে হবে । ও ফ্রেশ হয়ে নেয় । স্নান সেরে ব্রেক ফাস্ট করে । নার্সিং এর ড্রেস পরে বেরিয়ে পড়ে ডিউটিতে হাতে এপ্রন ।
এদিকে মনিকার মা , মেয়ের কাণ্ড কারখানা দেখে খুব অশান্তিতে আছেন । রিটায়ারমেন্ট এর এক মাস বাকি । এই সময় মেয়েটা বাঁধন ছাড়া হয়ে গেলো । কি যে হবে চিন্তায় থাকেন । আজ ওরা আসবে বলেছে। ধ্রুবর বাড়ি থেকেও ত কোন খবর এলো না । এখন যা পরিস্থিতি ওরা বিয়ে করবেই কারুর সম্মতির অপেক্ষা না নিয়ে । ধ্রুব পড়বে ফাঁপরে । রক্ষণশীল বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ পরিবারে কিছুতেই এই যুগে খৃস্টান মেয়ে কে বৌ করে ঘরে তুলবে না । ওনার যেমন পরিবারে সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ হয়ে গেল ধ্রুবর কপালেও তাই হবে । এটা নিশ্চিত । কিন্তু ওদের বোঝাবে কে ? আর আমার মেয়েটা হয়েছে ঠিক বাপের মতন ।
© ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী