গল্প হলেও সত্যি

গল্প মানুষের ভাবনার প্রতিবিম্ব , কল্পনার চিত্র । এক এক রত্ন কে সুচারু রূপে গাল্পিক তার মায়াবী হাতে গল্পের সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টায় সঠিক ভাবে স্থাপন করেন যাতে পাঠক আকৃষ্ট হন তার গল্পের প্রতি ।

Wednesday, December 25, 2019

পিঞ্জরে অচিন পাখি
___________________
 অন্তরা ঘোষ ।
পর্ব - ১
আমার এই গল্পের ইমারত পুরোটাই কল্পনার ইট কাঠ পাথর দিয়ে তৈরি হয়নি। আমার এক প্রিয় মানুষের কাছে শোনা তার জীবনের একটা অধ্যায় নিয়ে এই গল্প। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারন গল্প.. তবুও যেন কোথাও অন্তর্নিহিত চাপা অনুভূতি গল্পটাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
আমার গল্পের সময়কাল ১৯৭০ /৭১ সাল হবে।
চার বন্ধু দীপ্ত অনিরুদ্ধ সায়ন আর সন্তু আশুতোষ কলেজের ছাত্র। দীপ্ত অভিজাত পরিবারের ছেলে। লম্বা ফর্সা দোহারা চেহারা.. এক মাথা চুল.. মুখের মধ্যে চোখ দুটো খুব ইম্প্রেসিভ.. যেন কারো দিকে তাকালেই তার মনের ডাইরি পড়ে নিতে পারে। চেহারার মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব আছে। কলেজের অনেক মেয়েই দীপ্ত বলতে পাগল.. কিন্তু দীপ্তর ব্যক্তিত্বকে টপকে তার কাছে পৌছাবার সাহস করে না। দীপ্তরও যেন ওসব ব্যাপারে কোন ইন্টারেস্ট নেই ।
মোটামুটি ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে দীপ্ত ।‌ বক্তৃতাটা‌ও বেশ ভালই দেয়‌ । কলেজে‌ তাই দীপ্তকে প্রায় সবাই এক ডাকে চেনে । ছাত্র-ছাত্রী থেকে প্রফেসর সবাই।
সাদামাটা চেহারার অনিরুদ্ধ খুব মিশুকে ছেলে। ইন্টার কলেজ ক্রিকেট কম্পিটিশনে অনিরুদ্ধ একেবারে অপরিহার্য খেলোয়াড় । বন্ধুমহলেও‌ খুব জনপ্রিয়। সায়ন সাংস্কৃতিক জগতের সাথে যুক্ত। খুব ভালো গান করে। বিভিন্ন গানের প্রোগ্রামে যায়। এছাড়াও কলেজ সোশ্যালেও অনিরুদ্ধের গান শোনার জন্য বন্ধুবান্ধবদের ভিড় লেগেই থাকে।‌
প্রায় ৬ ফুট হাইটের সন্তুর‌ ভালো নাম সন্তোষ আওয়াস্থি । সন্তু কিন্তু অবাঙালি। ছোট থেকেই কলকাতা মামার বাড়িতে থাকার জন্য বাংলাটা ভালোই জানে। সন্তু উত্তরপ্রদেশের গোঁড়া‌‌ ব্রাহ্মণ‌ পরিবারের ছেলে। উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সন্তু । গ্রামের নামটিও বেশ মিষ্টি -- 'আশাখেরা' ।
সন্তু কলেজে পড়াশোনা করা ছাড়াও মামার ডাবরের শোরুমে নিয়মিত বসে কলেজ থেকে ফিরে এসে। ডাবরের বিশাল শোরুমে বসার জন্য মামার কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের একটা হাত খরচও পায়।‌ দীপ্তরাও মাঝে মাঝে কলেজ ফেরত অনেক রাত অবধি সেখানে গিয়ে আড্ডা মারে ‌।
সামনে গরমের ছুটি আসছে। চার বন্ধুর মধ্যে একটা কমন ভালো লাগার বিষয় ছিল চারজনেই খুব ঘুরতে ভালোবাসে। সায়ন বলল , অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি, চল , কোথাও ঘুরে আসি কয়েকটা দিন।
অনিরুদ্ধ ও সন্তু ঘোরার নামে উৎসাহিত হয়ে দিল্লি আগ্রা সিমলা মুসৌরি উটি ইত্যাদি অনেক জায়গার নাম বলে ফেলল‌ এক নিঃশ্বাসে।
সায়ন বলল, দীপ্ত তুই কোনো একটা জায়গার সাজেশন দে না ‌গুরু যেখানে কটা দিন ঘুরে আসা যায়।
দীপ্ত বলল, আমার মাথায় একটা জায়গায় যাওয়ার নাম ঘুরছে। তবে তোরা রাজি হবি কিনা জানিনা। কেননা তোরা দিল্লী বোম্বে গোয়া এসব অনেক বড় বড় জায়গার নাম বলছিস। এটা একটা অখ্যাত জায়গা। তবে আমার ধারণা আমরা খুব আনন্দ পাব সেখানে গেলে।
তিনজনই উদগ্রীব হয়ে দীপ্তর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল , কোন জায়গায় যাওয়ার কথা বলছিস রে।
দীপ্ত বলল, সন্তুদের গ্রাম আশাখেরা।
আমি এমনিতেই গ্রাম দেখতে ভালোবাসি। তোরা না গেলে আমি হয়তো একাই চলে যেতাম কোন একদিন সন্তুর সাথে। আর সন্তুর মুখে মাঝেমাঝেই ওদের গ্রামের যা কথা শুনি তাতে আমি নিশ্চিত ওই গ্রামে গেলে খুব আনন্দে কাটাবো কয়েকটা দিন। এবার বল তোদের মতামত।
সায়ন নিরস কন্ঠে বলল ,শেষে কিনা গ্রামে.. !
সায়নকে থামিয়ে দিয়ে সন্তু আনন্দে বলে উঠল, তোরা যাবি আমাদের গ্রামে ?
খুব মজা হবে। আমি বাবুজিকে আজকেই খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করব তাহলে। দীপ্ত হচ্ছে ওদের মধ্যে একটু বেশি ম্যাচিওর্ড । বন্ধুরাও‌ তাই মাঝেমধ্যে ওকে গুরু বলে।‌ গুরুর‌ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাই কেউ আর বিশেষ কিছু কথা বলল না।বাকি দুজনও রাজি হয়ে গেল।
কয়েকদিনের মধ্যে সন্তুর বাড়িতে খবর পাঠানো ও ট্রেনের টিকিটও কাটা হয়ে গেল। মোটামুটি এক মাসের জন্য মানে পুরো গরমের ছুটিটা কাটাতে যাচ্ছে ওরা সন্তুর গ্রামের বাড়িতে।
নির্দিষ্ট দিনে সন্ধ্যেবেলায় চারজন একটা করে সাইড ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাওড়া থেকে উঠে‌ পড়ল কালকা মেলে ।
দীপ্তর ফটো তোলার শখ খুব। তাই তার আগফা ক্যামেরাটা নিতে ভোলেনি। পরের গোটা দিন রাতটাও কাটল ট্রেনে।‌ পারপরের দিন সাড়ে এগারোটা বারোটা নাগাদ ওরা পৌঁছালো কানপুরে‌‌ । কানপুরে নেমে ওরা বাস ধরল সন্তুদের গ্রামে যাবার জন্য। হাইওয়ে ধরে ‌বাস চলল বেশ কিছুক্ষণ । তা প্রায় ঘন্টা দেড়েক এর পথ ।
গ্রামের বাসস্টপগুলো থেকে যত লোক নামে তার চেয়ে বেশি লোক ওঠে। বাসের মাথায়ও তিল ধারণের জায়গা নেই ! শুধু মানুষ নয় তাদের সঙ্গে রয়েছে মুরগির ঝুড়ি , সবজির বস্তা , বান্ডিল বান্ডিল খৈনির পাতা, এমনকি ছোট ছোট ছাগলছানা নিয়েও উঠে পড়েছে কয়েকজন।
শেষ পর্যন্ত বাস এসে দাঁড়ালো আশাখেরা গ্রামের স্টপেজে‌ । এবার কিছুটা রাস্তা হেটে গ্রামে ঢুকতে হবে। ছোট্ট বাস স্টপেজ। সামনে একটা টালি দর্মা দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট চায়ের দোকান। চার বন্ধু ঠিক করল চা খাবে। সামনে খাটিয়া পাতা। চারজনে গিয়ে বসে চায়ের অর্ডার দিল। হঠাৎ সামনের খাটিয়াতে চোখ পড়তেই সন্তু ছাড়া বাকি তিনজনের চোখ গোল গোল হয়ে গেল। খাটিয়াতে একটা ইয়া মোটা বিশাল ভুঁড়িওয়ালা ধুতি ফতুয়া পরা লোক শুয়ে রীতিমত নাক ডাকছে। মুখ হাঁ করে নাক ডাকছে আবার মুখ বন্ধ করে ফুউউউস্ শব্দ করছে। লোকটার মুখে মাছি ভর্তি। নাক ডাকার সাথে সাথে ভুড়িটাও একবার চুপসে যাচ্ছে একবার ফুলে উঠছে। বেশ কিছু মাছি নিশ্বাস নেওয়ার সময় নাক মুখের ভেতরে ঢুকে‌‌ যাচ্ছে .. আবার প্রশ্বাসের সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে। লোকটার কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সন্তু এসব দেখতে অভ্যস্ত। বাকি তিনজন হা করে খানিকক্ষণ দেখে হেসে উঠল। দীপ্ত ক্যামেরা বার করে ফটো তুলতে‌ তুলতে বলল , ব্যাটা একেবারে কুম্ভকর্ণের বাচ্চা !
চা পর্ব শেষ । এবার আলপথ ধরে গ্রামে ঢোকার পালা।
আলপথ ধরে ওরা হাঁটতে লাগল। দু'ধারে ধানের ক্ষেত, কোথাও মাঠের পর মাঠ হলুদ শর্ষের ক্ষেত। কোথাও বা আখের ক্ষেত । ইট কাঠ কংক্রিটের শহরের মানুষ দীপ্তদের এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। শহরের নাগরিক সভ্যতা আজ বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে যেন ওরা।আধুনিক প্রযুক্তির সমস্ত সংযোগগুলি হঠাৎ করেই কেমন যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে !
হঠাৎ সায়ন চেঁচিয়ে উঠল, ওই দেখ ময়ূর। সকলে দেখল দূরের মাঠে বেশ কয়েকটা ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে । কী যেন খুঁটে খুঁটে ‌খাচ্ছে ক্ষেতের ধার থেকে । সন্তু বলল এখানে অনেক ময়ূর আছে। এখন প্রায়ই ওরা ময়ূর দেখতে পাবে। অনিরুদ্ধ বলল, না দীপ্ত তোর এখানে আসার আইডিয়াটা দেখছি ভালই ছিল। মনে হচ্ছে ছুটিটা জমে যাবে। কথা বলতে বলতে দশমিনিটের মধ্যেই ওরা সন্তুদের বাড়ি পৌঁছে গেল। সামনেটা মাটির বাড়ি, টালির চাল ,‌ সামনে বেশ বড় একটা উঠোন। উঠোন পেরিয়ে মাটির বাড়ি । ঠিক লাগোয়া পেছনেই কিন্তু দোতলা পাকা বাড়ি।
সন্তুর বাবা , ছোট ভাই মন্নো এসে ওদের ঘরের ভিতর নিয়ে গেল। মন্নোর বয়স বড়জোর বারো কি তেরো হবে ।সন্তুর মা এক গলা ঘোমটা দিয়ে , থালাতে বেশ কিছু বাড়িতে তৈরি ক্ষীরের মিষ্টি , নিমকি আর গজা ‌নিয়ে মন্নোর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিল। জম্পেশ খিদে পেয়েছিল দীপ্তদের। মিষ্টিগুলো সাঁটিয়ে দিতে চারজনের বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। দীপ্তরা জল খেতে চাইলে সন্তু ওদের নিয়ে উঠোনের মাঝখানে কুয়ো তলাতে এল। সন্তুর ছোট ভাই মন্নো ঝপাং করে বালতি ডুবিয়ে পাতকুয়ো থেকে জল তুলল। দীপ্তরা দেখল বালতিতে দুটো ব্যাঙ লাফাচ্ছে !
সন্তুর ভাই ব্যাঙ দুটোকে ধরে আবার পাতকুয়োতে ফেলে দিল। তারপর কাঁসার গ্লাস ওই বালতিতে ডুবিয়ে ওদের জল দিল।
ইসস্ , এই জল কি খেতে হবে নাকি! সন্তুর দিকে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে দীপ্ত বলল।‌‌ সায়নেরও গা শির শির করে উঠল। সন্তু বলল, আবে শালা এ গন্দা পানি নেহি রে‌ ! মেহডকে্র (ব্যাঙ) এর ইউরিন নাকি জলকে সাংঘাতিক পরিশুদ্ধ করে।
দীপ্তরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল।‌ শেষে অনিরুদ্ধ বলল ,নাক চোখ বুজে খেয়ে নে দীপ্ত। এক মাস আমাদের এই জল খেয়েই কাটাতে হবে ! গা ঘিন ঘিন করা সত্বেও নাক চোখ বুজে ওরা ওই জলই খেলো।
দীপ্তর হঠাৎ চোখ পড়ল দোতলার একটা জানলার দিকে। দুটো বড় বড় গভীর কাজল কালো চোখ যেন ওদেরই দেখছে। সাদা শাড়ি পরা অল্প বয়সী একটা মেয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে। দীপ্তর চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটা জানালা থেকে সড়াৎ করে সরে গেল।
দীপ্ত সন্তুকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সন্তুর বাবা এসে দীপ্তদের স্নান করার জন্য তাড়া দিলেন। পাতকুয়োর সামনেই একটা দর্মার বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গা। সন্তু জানালো কুয়ো তলাতেই স্নান করতে হবে। দীপ্তদের বাথরুমে চান করা অভ্যেস। কিন্তু এখানে ওইরকম বাথরুমের কোন ব্যবস্থাই নেই । অবশ্য মন্দ লাগছিল না ওদের এই পরিবেশে। রোজকার জীবন থেকে সবকিছুই একটু আলাদা । নাগরিক সভ্যতা থেকে যেন অনেক দূরের একটা নতুন জগৎ ! ‌এখানে সব হিসাব হয়তো মিলবে না ।
দীপ্তরা দোতলার একটা ঘরে গিয়ে নিজেদের ব্যাগপত্র রেখে গামছা নিয়ে পাতকুয়োতে এল স্নান করতে।‌‌ সায়ন যেই এক বালতি জল গায়ে ঢেলেছে অমনি লাফিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো... 'বালতির মধ্যে ব্যাঙ' !
সন্তুর ভাইয়ের বেশ মজা লাগছিল দীপ্তদের ব্যাঙকে ভয় পেতে দেখে।
ফোকলা দাঁতে ফিক ফিক করে হাসতে লাগলো মন্নো‌।
স্নান করে জামা কাপড় পরে ওরা নীচর‌ ঘরে এলো। নিকোনো মাটির মেঝের উপর আসন পাতা। প্রত্যেকের আসনের সামনে একটা করে ডেস্ক এর মত রাখা। সন্তুর বাবা আর ভাইও এক সঙ্গেই খেতে বসেছে। সন্তুর মা এক গলা ঘোমটা দিয়ে পরিবেশন করছেন। আয়োজন খুব সামান্য। আন্তরিকতা কিন্তু অনেকটাই বেশি।
সন্তুরা নিরামিষাশী। ঝকঝকে পিতলের থালায় ভাত ডাল আলু ভাজা , একটা তেতোর তরকারি, একটা আলু বেগুন ওলকপির তরকারি আর আচার । সব শেষে টক দই ‌
সন্তুর বাবা মানুষটা কিন্তু বেশ মিশুকে। ছোটখাটো হাট্টাকাট্টা চেহারা। কাঁচাপাকা কদম ছাট চুল। পরনে ধুতি ফতুয়া , মাথার শেষ প্রান্তে একটা ছোট্ট টিকি। দীপ্তদের বললেন, গরীবখানা মে থোড়াসা তকলিফ তো জরুর হোগা বেটা ‌। আচ্ছে সে খাও তুম লোগ। শরমাও নেহি‌ । ইয়ে আপনাই ঘর সামঝো বেটা ।
"আরে ইয়ে‌ সন্তু কি মা ,। মেহমান লোগো কো আচ্ছে সে খাতিদারি করো। পুছো আউর‌ কেয়া‌ লাগেগা ‌‌ --- ইয়া নেহি --
বিরাট এক ডাক ছেড়ে সন্তুর মাকে কাছে ডেকে নিল চাচাজি।
বেচারী যেন কলের পুতুল !
বলা বাহুল্য সেই অবগুণ্ঠিত নারী কলের পুতুলের মত মাথা নাড়তে নাড়তে ইশারায় আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা করছিল ।
হয়তো বা বলতে চাইছিল আমাদের আর কিছু লাগবে কিনা !
কিন্তু মুখে টু শব্দটি নেই ! সবকিছুই ইশারায় !
সুদূর উত্তরপ্রদেশের এই প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাটি জীবনে হয়তো চাক্ষুষ কোনদিন এতগুলো শহরের ছেলেকে একসাথে কোনদিন ‌দেখেইনি !
রান্নাঘর থেকে সন্তুর মা কিছু আনতে গেলেন।
হঠাৎ দীপ্তর শ্বাসনালীতে কিভাবে যেন খাবার আটকে কাশি শুরু হল। সন্তুর বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে ডাকতে লাগলেন সন্তুর মাকে। কাশির দমকে যখন দীপ্ত জেরবার হঠাৎ দেখল ওর সামনে জলের গ্লাস এগিয়ে দিচ্ছে একটা ফর্সা ধবধবে নিরাবরণ হাত। দীপ্ত মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল -- সেই সাদা শাড়ি পরা কাজল নয়না রহস্যময়ী নারী !
অন্তরা ঘোষ ।
২১.১২.১৯.
( চলবে)
পর্ব ২ এর লিঙ্ক
Posted by গল্পগচ্ছ at 12:19 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

পিঞ্জরে অচিন পাখি
___________________
অন্তরা ঘোষ। পর্ব- ২
দীপ্ত গ্লাসটা হাতে নিয়ে বোধহয় ধন্যবাদ দিতে গিয়েছিল ...
কিন্তু কিছু বলার আগেই সেই রহস্যময়ী নারী ত্রস্ত হরিনীর মতো উঠোন পেরিয়ে ঘরের দিকে চলে গেল। মাথায় ঘোমটা থাকায় তার মুখটাও দেখতে পেল না দীপ্ত। হঠাৎ সন্তুর বাবার দিকে চোখ পড়ায় দীপ্ত লক্ষ্য করল সহজ সরল অমায়িক মানুষটার চোখের চাউনি কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠেছে। রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে সন্তুর মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আরে এ সন্তু কি মা ...
ইধার আও তো জারা --
দেখো মেহমান লোগো কো কেয়া চাহিয়ে.. মুঝে ভি থোড়া সবজি দো‌"
সন্তুর মা সবজি নিয়ে যখন ওর বাবাকে দিচ্ছে তখন ওর বাবা ফিস ফিস গলায় বলল, বিটিয়া কো সামালকে রাখো.. মেহেমান কা সামনে না আয়ে তো আচ্ছা .."
সন্তুর মা কলের পুতুলের মত মাথা নাড়লো।
দীপ্ত'র চোখ খেতে খেতে বারবার অজান্তেই চলে যাচ্ছে উঠোন পেরিয়ে ঘর গুলোর দিকে।
খেয়ে উঠে ওরা চারজনেই ওদের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা ঘরে এল। সায়ন, অনিরুদ্ধ, সন্তু খাটিয়ায় বডি ফেলে দিল। দীপ্ত আনমনে সিগারেট খেতে খেতে ভাবতে লাগল কিছুক্ষন আগের দেখা মেয়েটির কথা।
বিকেলে চারজনে গ্রামে ঘুরতে বেরলো। গ্রামের মেঠোপথে হাঁটতে হাঁটতে দেখল , এখানেপাকা বাড়ি কদাচিৎ। বেশিরভাগই মাটির বাড়ি। টালি বা খড়ের চাল‌।প্রত্যেকের বাড়ির সামনেই গরু বাঁধা আছে। সন্তুদের ঘরেও দীপ্তরা দেখেছে চারটে হৃষ্টপুষ্ট গরু গোয়ালে রাখা।
কিছুটা যেতেই দীপ্তরা টের পেল গ্রামে সন্তুদের বেশ সম্মান আছে। উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণ বলে আলাদা কদর। কেননা গ্রামে ব্রাহ্মণ পরিবার খুব একটা বেশি নেই। রাস্তা দিয়ে ছোট-বড় যেই যাচ্ছে পিঠটাকে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে একটু ঝুঁকে সন্তুকে বলছে "পায়ে লাগু ঠাকুর"। সন্তুও গম্ভীর মুখে জবাব দিচ্ছে, "জিতে রহো"।
সন্তুর সাথে সাথে দীপ্তদেরও সকলে বলছে 'পায়ে লাগু'। কত সহজ সরল মানুষ এরা।ব্যাপারটা দীপ্তরা বেশ উপভোগ করছে। অনিরুদ্ধ বলে উঠলো, এখানে তো তোদের দারুন সম্মান 'রে সন্তু ! "
সন্তু বলল, হ্যাঁরে গ্রামের লোকেরা বাবাকে খুব সম্মান করে।
কথা বলতে বলতে ওরা গ্রামের শেষে -- মাঠের দিকে চলে এসেছিল। কত ময়ূর মাঠে ঘুরছে খেলছে , পেখম তুলে নাচছে, মাঝে মাঝে কি যেন খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। এতদিন দীপ্তরা চিড়িয়াখানায় ময়ূর দেখেছিল। দীপ্তর মনে হত খাঁচায় বন্দি প্রাণীরা কেমন যেন উদাস.. ভিতর ভিতর ছটফট করে মুক্তির জন্য। এখানে ময়ূর গুলোকে দেখে মনে হল কত অনাবিল আনন্দে আছে ওরা.. স্বাধীনতার আনন্দ , শৃংখল মুক্তির আনন্দ.. সত্যিই বন্যেরা প্রকৃতিতেই সুন্দর।
সন্ধ্যে নামতেই দীপ্তরা লক্ষ্য করল গোটা গ্রামটা যেন অন্ধকারে ডুবে গেল। সন্তুদের ঘরেও কোনো আলো জ্বলছে না। সন্তুকে জিজ্ঞেস করে ওরা জানতে পারল যে এই গ্রামে এখনও ইলেকট্রিসিটি পৌঁছয়নি। অবাক হল ওরা !
সত্যি গ্রামের লোকেরা কত দিক থেকেই বঞ্চিত !
সব ঘরে সন্তুর বাবা লন্ঠন ও বড় বড় হ্যাজাক জ্বালিয়ে দিয়েছে।
সন্ধ্যেবেলা সন্তুর মা বড় কাসার খালাতে পাঁচ কাপ গরম দুধের চা আর পিয়াজি নিয়ে এল সন্তুর বাবা ও সন্তুদের জন্য। সন্তুর বাবা মানুষটা খুব চা খেতে খুব ভালোবাসেন। আধ ঘন্টা অন্তর অন্তর চা চাই।
এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়
'চা খোর'
যেহেতু ঘরে গরু আছে তাই খাঁটি দুধের চা খায় ওরা। এতোটুকু জল থাকে না চা'তে। দশ মিনিটের মধ্যে একথালা পিয়াজি খেয়ে ফেলল ওরা। এখানে এসে থেকে দীপ্তদের সকলেরই খুব খিদে পাচ্ছে। হয়তো জলের জন্য হতে পারে। কিংবা হয়তো ব্যাঙ মুত্র যুক্ত জলের সুফল।
রাত্রে ওরা ছাদে শুতে গেল।এক একজনের জন্য এক একটা খাটিয়া পাতা। খাটিয়াতে তোষক ও চাদর বিছানো আর একটা বালিশ। গায়ে ঢাকা দেওয়ার জন্য একটা করে চাদর আছে। সন্তু ওর বাবার ট্রানজিস্টর রেডিওটা ছাদে নিয়ে এসেছে। রেডিও সিলোনে বিনাকা গীতমালা হচ্ছে। আমিন সাহানি হোস্ট। অনেকটা বাংলা অনুরোধের আসরের মতন প্রোগ্রাম।খুব ভালো ভালো হিন্দি ছায়াছবির গান শুনতে পাওয়া যায় এই প্রোগ্রামে। সায়নরা‌ টুকটাক গল্প হাসিঠাট্টা করছে নিজেদের মধ্যে।
দীপ্ত ছাদে পায়চারি করছিল। ঘুম আসছে না। বারবার অবচেতন মনে সেই সাদা শাড়ী পরিহিত মেয়েটার চোখ দুটোকে যেন সে দেখতে পাচ্ছিল। ‌সন্তুকে জিজ্ঞেস করব করব করেও করতে পারছে না। দীপ্ত জানত যে সন্তুরা দু ভাই। বোনের কথা কখনো সন্তুর মুখ থেকে শোনেনি। ছাদে ঠান্ডা হওয়া দিচ্ছে। চারিদিকে খোলামেলা জায়গা। গরম কালের রাতের হাওয়াটাও তাই এখানে একটু ঠান্ডাই। সায়নরা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত প্রায় বারোটা হবে। চারিদিকে জোনাকির আলো আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। মাঝে মাঝে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে -- 'কোয়াক' 'কোয়াক' করে। খোলা আকাশের নিচে রাতের এই অদ্ভুত সুন্দর রূপ দীপ্ত দেখেনি কোনদিনও।
সায়ন ,অনিরুদ্ধ অঘোরে ঘুমাচ্ছে।দীপ্তর চোখে শুধু ঘুম নেই। হঠাৎ যেন একটা দরজা খোলার মতো আওয়াজ হল। দীপ্ত ছাদের কার্নিশ থেকে বাড়ির নিচের উঠোনে তাকিয়ে দেখে একটা মানুষের অবয়ব ..হাতে একটা হ্যাজাক। মানুষটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না দীপ্ত। দীপ্তর মনে হল বাড়িতে বোধহয় চোর ঢুকেছে! সন্তুকে জানানোটা দরকার।
সন্তুর গায়ে ধাক্কা দিল দীপ্ত , "এই সন্তু ওঠ ওঠ.. বাড়িতে বোধহয় চোর ঢুকেছে! "
চোর কথাটা কানে ঢুকতেই সন্তু ধড়মড়িয়ে উঠে বসল,
"কোথায় ? কোথায় চোর ? "
দীপ্ত ছাদের কার্নিশের কাছে এসে আঙ্গুল দিয়ে নিচে দরজার দিকে দেখিয়ে বলল, "চোর পালিয়ে যাচ্ছে ওই দেখ। "
দুজনেই দেখল মানুষটা একহাতে হ্যাজাক আর এক হাতে কমণ্ডুল নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে। সন্তু বলে উঠল , "আবে দূর শালা ‌উয়ো তো বাবুজি হ্যায়। "
দীপ্ত অবাক হয়ে বলল , "তোর বাবা ! এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন ? "
সন্তু স্বাভাবিক গলায় বলল nature's call ইয়ার..
দীপ্ত আতকে উঠে বলল, মানে ! এই এত রাতে !
তোদের বাড়িতে টয়লেট নেই ?"
সন্তু মুচকি হেসে বলল, আমাদের বাড়ি কেন ..গোটা গ্রামেই নেই.. তোদেরকে আগের থেকে বলিনি যদি তোরা শুনে না আসতে চাস তাই.. বাবুজি দিনের বেলা যেতে লজ্জা পায়.. গ্রামের সকলে বাবুজিকে চেনে সম্মান করে.. তাই রাতের অন্ধকারে পাশের গ্রামে যায়। ওই যে দূরে টেলিগ্রাফের পোস্ট দেখছিস তার পরে আছে আর একটা গ্রাম। ওখানে যায় বাবুজি।
দীপ্ত বলে উঠল, "মাই গড.. তারমানে কাল সকালে আমাদেরও... " !
সন্তু দুষ্টু দুষ্টু হেসে বলে উঠল, " হ্যাঁ মাঠে যেতে হবে , একেবারে ধানক্ষেতে ..একসাথে..
খুব মজা হবে দেখবি ,,, "
" তেরি তো" বলে দীপ্ত বালিশ নিয়ে সন্তুর দিকে ছুড়লো।
সন্তু বালিশটা ক্যাচ করে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে বলল , "পাশের গ্রামে যেতে হবে না বাবুজির মত --
এই গ্রামেই ব্যবস্থা আছে "।
তখন প্রায় মাঝরাতই বলা চলে। দীপ্তর চোখেও তখন গভীর ঘুম।
হঠাৎ কানে কতগুলো শব্দ প্রবেশ করল --
"এ দীপ চায়ে পিয়োগে ?"
দীপ্ত চোখ কচলে উঠে দেখল সন্তুর বাবা। মাঝরাতে ডাকছে চা খাবার জন্য !
দীপ্ত হাত ঘড়িতে দেখল রাত‌ দেড়টা।
আড়মোড়া ভেঙে দীপ্ত বলল ," নেহি চাচাজি সুবহ মে পিয়েঙ্গে.. "
"আরে পিও ভাই , চায়ে খানে মে কেয়া হার্জ হ্যায় " ---
অগত্যা সন্তুর মাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেল বুড়ো নিচে --
"এ সন্তু কি মা উঠো , জারা চায়ে পিলাও‌ ভাই --
দীপ ভি পিয়েগা--
জারা বড়িয়া সে বানানা "।
দীপ্ত মনে মনে ভাবল বুড়ো নিজেও ঘুমাবেনা ,‌ বেচারী সারাদিন খাটাখাটনি করা সন্তুর মাকেও ঘুমাতে দেবে না।
অগত্যা রাত দুটোর পর অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত চা খেতেই হল দীপ্তকে।
সকালের আলো ফুটতেই সায়ন অনিরুদ্ধ আর সন্তু উঠে পড়ল। দীপ্ত আগেই উঠে পড়েছিল। দেখল ছাদে চারটে কমন্ডুল বা গাড়ু রাখা.. অনেকটা কেটলির মত দেখতে কিন্তু সাইজে বড়। পিতলের ।
সায়নকে উঠেই বাথরুমে যেতে হয় প্রাতঃকৃত্য সারতে। বেচারা নিচে ঘুরে চলে এলো। কোথাও টয়লেট দেখতে পেল না। অনিরুদ্ধ বলল ,হ্যাঁরে দীপ্ত এই কেটলিগুলো দিয়ে কি হবে?
দীপ্ত বলল ,সবাই একটা করে হাতে উঠিয়ে নে.. মাঠে যেতে হবে.
সায়ন, অনিরুদ্ধ সমস্বরে বলে উঠল ..মানে
দীপ্ত গম্ভীর গলায় বলল ..মানে গ্রামে টয়লেট নেই.. তাই বন্ধুগণ মাঠে যাবার জন্য তৈরি হয়ে যাও!
ওদের ব্যাপারটা বুঝতে একটু টাইম লাগল। তারপর দুজনেই সন্তুর পিছনে ছুটল, শালা হারামি -- "
সন্তু দীপ্তর পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসতে লাগল।
অগত্যা সবাই একটা করে গাড়ু হাতে নিয়ে যাত্রা শুরু করল।
ওরা লক্ষ্য করল এখানে কারোর এ বিষয়ে লজ্জা নেই। ছেলেরা এক দিকের রাস্তায় যাচ্ছে মেয়েরা আরেক দিকে।বেশ খোশ মেজাজে গল্প করতে করতে যাচ্ছে সবাই। যেন প্রাতঃকৃত্য নয় সব পিকনিক করতে যাচ্ছে।বেশ কিছুটা হেঁটে এসে দেখল আলপথের দুই ধারে দুটো ধানক্ষেত। দুদিকেই সাইনবোর্ড লাগানো। একটাতে লেখা "মহিলাও'কে লিয়ে "অন্যটাতে লেখা "পুরুষো'কে লিয়ে"
লজ্জা বিসর্জন দিয়ে সবাই ধান ক্ষেতে ঢুকে গেল। তবে বাঁচোয়া এটাই যে লম্বা লম্বা উলুগাছগুলো একে অপরকে বেশ আড়াল করে রেখেছে। দেখতে পাচ্ছে না কেউ কাউকে।
দীপ্ত ভাবল তার ডায়েরিতে আরেকটা নতুন অভিজ্ঞতা সংযোজন হল।
অন্তরা ঘোষ।
২২.১২.১৯.
চিত্রঋণ : ইন্টারনেট
( চলবে)
Posted by গল্পগচ্ছ at 12:17 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
পিঞ্জরে অচিন পাখি
___________________
অন্তরা ঘোষ। পর্ব -- ৩

চার পাঁচ দিন হয়ে গেল দীপ্তদের এখানে আসা। এই চার পাঁচ দিনে সেই মেয়েটিকে দীপ্ত আর দেখেনি। হয়তো বাড়ির কাজে ব্যস্ত আছে। কিন্তু সব সময় তার ওই গভীর বেদনাবিধুর চোখদুটো দীপ্ত'র মনে পড়ে।‌ মনে হয় কোথায় যেন একটা ব্যথা লুকিয়ে আছে ওই দুটো চোখের মধ্যে।
দীপ্তরা যখন ঘর অগোছালো করে গ্রামে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে , ফিরে এসে দেখেছে পরিপাটি করে তাদের ঘর , বিছানা গোছানো। সায়নরা বলাবলি করছে যে চাচীজি অর্থাৎ সন্তুর মা ওদের কত খেয়াল রাখছে ..ঘরটাও গুছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দীপ্ত অনুভব করতে পারে প্রতিটি জিনিসেই যেন অন্য কোন একজনের একটা পরম যত্নের হাতের ছোঁয়া রয়েছে।
দীপ্ত ভাবে আর এক আশ্চর্য মহিলার কথা -- হ্যাঁ , সন্তুর মা। মুখে খুব কম কথা বলেন।
হয়তো ভাষার সমস্যা , এমনও হতে পারে।
ঘোমটা টেনে ভদ্রমহিলা সারাদিন রান্না ঘরের মাটিতে পাতা উনুনে কাঠে ,‌ নলের মধ্যে ফুঁ দিয়ে একরাশ ধোঁয়ার মধ্যে ওদের জন্য রান্না করে চলেছে। তারপর আবার আছে সন্তুর বাবার আধঘন্টা অন্তর চায়ের ফরমাশ ! এতোটুকু বিরক্তি নেই ভদ্রমহিলার ! হাসিমুখে আপ্যায়ন করে চলেছেন সবার !
আজ সন্তু দীপ্তদের নিয়ে ক্ষেত দেখাতে নিয়ে বের হল। গ্রামে প্রচুর জমিজমা সন্তুদের। কোনো জমিতে শুধুই আখ লাগানো , কোনটায় শুধুই মকাই অথবা ধান কিংবা সরষে , আবার কোনো কোনোটায় মুলো , আলু‌ ওলকপি , শালগম , কোনটায় সবুজ টমেটো কোনটায় বেগুন অথবা কপি । সন্তুর মা এই ক্ষেতের সবজিগুলো দিয়ে অতি সাধারন ভাবে যা রান্না করেন তাই যেন অমৃত মনে হয় ! কাঁচা টমেটো মেথির শাক আর শালগম দিয়ে একটা সবজি রান্না করেন চাচীজি যেটা দীপ্তদের দারুণ লেগেছে।
ধানের ক্ষেত আর সরষে‌‌ ক্ষেত‌ ছড়িয়ে রয়েছে বিঘার পর বিঘা ! যতদূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ, কোথাও কোথাও সবুজের মাঝে হলুদ চাদর বিছানো সরষে ক্ষেত। দীপ্ত ভাবে ক্ষেতে এত মানুষ কাজ করছে সন্তুর বাবার তদারকিতে..অথচ ঘরে সন্তুর মা সারাদিন পরিশ্রম করছেন, ওনাকে সাহায্যের জন্য কিন্তু কোন কাজের লোক রাখেনি সন্তুর বাবা ! কি আশ্চর্য রে বাবা !
ওরা চার বন্ধু আনমনে ক্ষেত দেখতে দেখতে চলছিল। হঠাৎ একটা ইয়া লম্বা চওড়া মুসকো মতন গোঁফওলা লোক -- গা দিয়ে তার যেন তেল গড়াচ্ছে, কানের লতি বেয়েও তেল পড়ছে, তেল চুকচুকে ন্যাড়া মাথা, পিছনে ইয়া বড় টিকি.. সন্তুর সামনে এসে বলল ,
"পায়ে লাগু ঠাকুর"
সন্তু হাসতে হাসতে দীপ্তদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল.. "এ হচ্ছে তান্তীয়া .. পেশায় ডাকাত..
দূর-দূরান্তের শহরে গিয়ে মাঝে মাঝে ডাকাতি করে গ্রামে ফিরে আসে। একটা ছোটখাটো ডাকাতের দলও আছে ওর।
বাংলাটা একেবারেই বোঝেনা তান্তীয়া। শুধু দাঁত বের করে হাসতে লাগলো।
দীপ্তরা এই প্রথম চাক্ষুষ কোনো ডাকাত দেখল। সকলেই বেশ উত্তেজিত। সন্তু বলল, কিরে যাবি নাকি তান্তীয়ার ঘরে ?এইতো‌ কাছেই -
সকলেই এক পায়ে যেতে রাজি।
সন্তু বলল , " তানতীয়া মেরা দোস্ত লোক তুমহারা ঘর দেখনা চাহতে হ্যায়।"
তান্তীয়া বলল , ক্যয়া দেখোগে ঠাকুর.. গরিবখানা'মে হ্যায় হি ক্যায়া ?
"আচ্ছা চলো ফির"।
তান্তীয়া এগিয়ে চলল‌।
দীপ্তরা পাঁচমিনিটে তান্তীয়ার ঘরে পৌঁছে গেল। মাটির বাড়ি। একেবারেই সাদাসিধে। ‌ কিন্তু ঘরের দেওয়ালে চারটে ছোট বড় বন্দুক ঝুলছে।
দীপ্ত জিজ্ঞেস করল, ইয়ে সব বন্দুক সে লোগো কো মারতে হো ক্যায়া?
তান্তীয়া বলল ,হা হুজুর মারনা তো পড়তাই হ্যায় কভি ক‌ভি ।
অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল, মানুষ খুন করেছো ?
তান্তীয়ার অকপট স্বীকারোক্তি ,
."হা হুজুর ওতো থোড়া বহুত কিয়াহি হ্যায়..
দীপ্ত জিজ্ঞেস করল, কব সে ডাকাইতি করতে হো.. ? "
তান্তীয়ার বেশ গর্বের সাথে ঝটপট উত্তর, ":বহত ছোটা সে ঠাকুর ..ইয়ে তো হামারা খানদানি বিজনেস হ্যায়.. মেরা দাদা পরদাদা ভি এইহি কাম করতে থে।"
দীপ্ত ক্যামেরা বার করে তান্তীয়ার কয়েকটা ছবি তুলতে চাইল । তান্তীয়া হৈ হৈ করে ক্যামেরা চেপে ধরল --
" নেহি হুজুর , তসবির না উঠাইয়ে "
তান্তীয়ার গলায় করুন মিনতি‌।
সন্তুও চোখের ইশারায় দীপ্তকে মানা করল‌।
এটা বোধহয় ডাকাতদের একটা সিক্রেসীর ব্যাপার। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দীপ্ত ক্যামেরা নামিয়ে রাখলো।
এরপর আর কদিন ওরা তান্তীয়াকে দেখতে পায়নি।
সন্তু বলল, বোধ হয় ওর দলের সাথে অন্য কোন জায়গায় ডাকাতি করতে গেছে। কারণ নিজের গ্রামে কখনো ডাকাতি করে না তান্তীয়া ।
নিজের গ্রামের কারো কোন ক্ষতি করা তো দূরের কথা ‌-- বরং দরকারে অদরকারে ‌তান্তীয়া গ্রামের প্রচুর মানুষের উপকার করে থাকে। বিয়ে থা করেনি -- একা মানুষ এই তান্তীয়া।
ডাকাত হলেও ওর ভেতরে যেন আর একটা সহজ সরল মানুষ লুকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আলাপ হওয়ার পরই এটা বেশ বুঝতে পারল দীপ্তরা।
দীপ্তরা কলকাতায় ফিরে যাবার কিছুদিন পর সন্তুর কাছে শুনেছিল যে তান্তীয়াকে নাকি ওর বিরুদ্ধ পার্টির ডাকাতরা খুন করে ধড় মুন্ডু আলাদা করে কেটে‌ গ্রামের ঝিলের জলে ভাসিয়ে দিয়ে‌ গিয়েছিল।
সেদিন রাতে দীপ্তরা গোবি আলুর তরকারি, গরম গরম উনুনে সেঁকা মকাইয়ের রুটি আর ঘন‌ অড়হ‌র ডাল পরম তৃপ্তির সাথে খাচ্ছিল ডিনারে। দীপ্তর খাওয়া হয়ে গেছিল। সিগারেট ধরিয়ে ছাদে সুখটান দিতে গেল দীপ্ত। সেদিন ছিল জ্যোৎস্না রাত। ছাদে এসেই কার্নিশের এক কোনায় দীপ্তর চোখ আটকে গেল। সেই সাদা শাড়ি পরা রহস্যময়ী নারী ! মাথায় ঘোমটা নেই। জোছনার আলো স্নান করিয়ে দিচ্ছি মেয়েটার সর্বাঙ্গে। নিশ্চল চিত্রাপিতের মত দাঁড়িয়ে মেয়েটা দূরে অন্ধকার ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দীপ্ত একটু দূরে অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে‌ , তাই মেয়েটা ওকে দেখতে পায়নি। ভালো করে মেয়েটাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল দীপ্তর মত ছেলেও। গমের মতো গায়ের রং, ছিপছিপে তন্বী,এত চিকন ত্বক যে মাছিও বসতে গেলে বোধহয় পিছলে পড়ে যাবে‌! বছর কুড়ি বাইশ বছর বয়স হবে বোধহয় মেয়েটার। এক ঢাল কালো মিশমিশে মেঘের মতো চুল পিঠের উপর, বাঁশির মতো টিকালো নাক, ছোট্ট কপাল, টানা টানা ভুরু যেন তুলি দিয়ে আঁকা, বড় বড় গভীর কালো চোখ, গোলাপি অধরের কোনে যেন এক চিলতে অভিমান আর বিষাদ লুকিয়ে আছে। এত সুন্দর মুখ অথচ কি করুন। দীপ্ত ভাবল, সত্যি ভগবান কি যত্ন করে সময় নিয়ে মেয়েটাকে বানিয়েছে।
এমন সময় অনেকগুলো পায়ের আওয়াজে মেয়েটা হতচকিত হয়ে উঠল। ঘুরে দাঁড়াতেই দীপ্তর চোখে চোখ পড়ল। কয়েকটা মুহূর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল দীপ্তর দিকে। তারপর হঠাৎ মাথায় ঘোমটা টেনে ছুটে চলে গেল ছাদের অন্য দিকের দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরে।
সায়ন অনিরুদ্ধ সন্তু ততক্ষণে ছাদে এসে গেছে। সায়ন এসেই ট্রানজিস্টারে রেডিও লক্ষ্নৌ ধরল।
বিনাকা গীতমালা শুধুই বুধবার হয় তাই আজ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অন্য গান ধরার চেষ্টা করতে লাগল সায়ন।
দীপ্তর খুব প্রিয় একটা গান রেডিওতে বাজছে "ইয়ে দিল তুম বিন কাহি লাগতা নেহি হয় হম কেয়া করে"
দীপ্ত তখনো অন্যমনস্কভাবে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ঠিক যেখানে মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল। সায়ন অনিরুদ্ধ ডাকছে , কিন্তু দীপ্তর ভ্রুক্ষেপ নেই।
সন্তু এসে দীপ্তর পিঠ চাপড়ে বলল,
"কা হুয়া রে , ইতনা খোয়ি খোয়ি কিঁউ হো " ?
দীপ্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে সন্তুর চোখে চোখ রেখে বলল, ওই সাদা শাড়ি পরা মেয়েটা 'কে 'রে সন্তু " ?
সন্তু গম্ভীর হয়ে গেল। সায়নদের দিকে তাকিয়ে দেখল ওরা রেডিওতে গান শুনতে ব্যস্ত ছদের অন্য কোণে।
একটা সিগারেট ধরিয়ে সন্তু বলল,
"শুনতে চাস ? বেশ তাহলে শোন.. তবে না শুনলেই ভালো করতিস.. কষ্ট পাবি শুনলে "
দীপ্ত অবিচল দৃষ্টিতে সন্তুর দিকে তাকিয়ে বললো, তুই বল .. কষ্ট হলেও আমি শুনতে চাই..!
অন্তরা ঘোষ।
২৩.১২.১১
চিত্রঋণ : ইন্টারনেট
( চলবে)
আগের পর্বগুলির লিংক
Posted by গল্পগচ্ছ at 12:13 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

পিঞ্জরে অচিন পাখি
__________________
 অন্তরা ঘোষ । পর্ব - ৪

সন্তু একটা সিগারেট ধরিয়ে বলতে শুরু করল "বিন্দা আমার চচেরা ( খুড়তুতো) বোন। এখন ওকে যেমন দেখছিস -- একদম চুপচাপ , গুমসুম ... ও কিন্তু একেবারেই এইরকম ছিল না , বরং খুব হাসিখুশি ছটফটে মেয়ে ছিল। মুখে খই ফুটতো সবসময়। আমি যখন কলকাতা থেকে আসতাম ওর কত যে কথা জমে থাকতো আমার জন্য !
বিন্দা যখন দু'বছরের তখন একটা অ্যাক্সিডেন্টে আমার চাচা চাচি দুজনেরই স্বর্গবাস হয়ে যায়। আমার বাবুজি বিন্দাকে আমার মায়ের কোলে দিয়ে বলে আজ থেকে এই তোমার মেয়ে। বিন্দা সেই থেকে আমার বাবুজি আর মায়ের স্নেহ যত্নে আদরে বড় হয়.. মা বাবুজিকেই ও নিজের বাবা-মা বলে জানে। আমারও খুব আদরের বোন ও। ছোট থেকে সব কিছু আবদার ও আমার কাছেই করত।
আমাদের পাশের গ্রামে আমাদেরই পালটি ঘর ঠাকুর নরেন্দ্র প্রতাপ সিং ছিল বাবুজির দোস্ত। যখন বিন্দা চার বছরের আর চাচাজি'র ছেলে রমেশ তখন বছর দশেকের হবে । তখন দুই বাবুজি মিলে ওদের বিয়ের পাকা কথা বলে রাখে।
ছোট থেকেই বিন্দা আর রমেশ একসাথে স্কুলে গেছে , খেলা করেছে , বড় হয়েছে.. ছোটবেলা থেকেই দুজনের খুব ভাব। বড় হয়ে যখন ওরা জানল যে ওরা একে অপরের বাগদত্তা তখন ওদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হল.. প্রেমে পরিণত হল।
রমেশের বাবার অনেক ক্ষেত খামার আছে। রমেশ চাকরির চেষ্টার‌ সাথে সাথে ক্ষেত-খামারেরও দেখাশোনা করত। বিন্দা যখন ষোলো বছরের , তখন ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল। শ্বশুরবাড়িতে খুব সুখেই কাটছিল বিন্দার জীবন। বিয়ের পর বছর খানেক বিন্দা আমাদের বাড়িতেই ছিল। পরের বছর রমেশ বি. এসে .এফে চাকরি পেয়ে যায়। বছর দুয়েকের মধ্যে ওর পোস্টিং হয় গুজরাটের কচ্ছে। এখনো মনে আছে যেদিন রমেশ চলে যাবে বিন্দার সেকি কান্না !
রমেশ যাওয়ার পর কয়েকদিন খুব মন খারাপ ছিল বিন্দার। রমেশ কিন্তু ওকে নিয়মিত চিঠি লিখত।
মাঝে শুধু দশ‌ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল একবার।
পরের বার মাস খানেক ছুটি নিয়ে আসবে বলে কথা দিয়ে গেল।
সেই থেকে বিন্দা নতুন করে দিন গোনা শুরু করে।
মাস পাঁচ ছয় কেটে যাওয়ার পর রমেশ চিঠিতে জানায় সামনের সপ্তাহে সে আসছে।
খুশিতে বিন্দা আত্মহারা তখন।
রোজ ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখর ওপর পেন্সিল দিয়ে দাগ কেটে দেয়।
একটা একটা করে দিনও কেটে যায়।
শেষপর্যন্ত প্রতিক্ষার দিন শেষ হয়।
সকাল থেকেই বিন্দা রাস্তার মোড়ে বারবার গিয়ে দেখতে থাকত প্রতিটা বাস। এই বুঝি রমেশ‌ এলো‌!
সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল!
রমেশের দেখা নেই।
উদাস হয়ে‌ আশাই ছেড়ে দিল বিন্দা।মনে মনে ভাবল রমেশ নিশ্চয়ই ভুলে গেছে। ঘরে গুমসুম মেরে চুপচাপ শুয়ে থাকে বিন্দা। এরপর আরও চার দিন কেটে গেল। রমেশের কোনো খবরই নেই। বাড়ির লোকেরাও এবার চিন্তায় পড়ে গেল। কী হল ছেলেটার !
একটা খবর পর্যন্ত নেই ! পাঁচ দিনের মাথায় গ্রামের একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়তে দৌড়তে আমাদের বাড়ি এসে বিন্দাকে খবর দেয় যে রমেশের‌ জীপ
দেখেছে সে। সঙ্গে আরো অনেক মেহমান আসছে। মুহূর্তে খুশির ঝলক বিন্দার চোখে। খুব ইচ্ছে হল ওর সেজেগুজে রমেশের সামনে আসার।
আগত সন্তানের কথা ইচ্ছে করেই চিঠিতে জানায়নি সে ‌। একেবারেই সামনাসামনি বলে রমেশকে চমকে দিতে চায় ।
রমেশের দেওয়া চুমকি বসানোর লাল শাড়ীটা পরল। দুই হাতে ভর্তি কাচের চুড়ি, গলায় মঙ্গলসূত্র, টানা টানা চোখে কাজল,সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে বড় করে টিপ।
রমেশ চুলের বেনুনীতে ফুল লাগানো পছন্দ করত। তাই বাড়ির পিছনের বাগান থেকে সাদা কাঠচাঁপা আর গেঁদুয়া ফুল এনে মাথার চুলে আটকে নিল। আয়নায় নিজেকে দেখে একবার হেসে নিল।
হঠাৎ নিচে অনেক লোকের আওয়াজ ! রমেশ এসে গেছে ! বিন্দা এক ছুটে ওপর থেকে নেমে এসে দেখে উঠোনের মাঝখানে একটা কফিন। বেশ কয়েকজন মিলিটারি পুলিশ চারদিকে দাঁড়িয়ে। বিন্দার চোখ ওদের মধ্যে রমেশকে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ বিন্দা দেখল বাবুজি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মায়ের কান্নার আওয়াজ আসছে ঘরের ভেতর থেকে। কি হল তখনো কিছুই বুঝতে পারছে না বিন্দা। পুলিশরা এবার আস্তে আস্তে কফিনের ঢাকাটা খুলে দিল। ভারতের তেরঙ্গায় ঢাকা রমেশের শরীর ফুলে ফুলে ঢাকা‌! মিলিটারি পুলিশ অফিসার জানালো ইমারজেন্সি সিচুয়েশন হওয়ায়
ওর ছুটিও নামঞ্জুর হয়ে যায়। পরশু কচ্ছ সীমান্তে হারামী নালাতে নজরদারি করার সময় পাকিস্তানিদের সাথে গোলাগুলিতে একটা গুলি এসে লাগে রমেশের পাজরে। সেই অবস্থাতেও রমেশ গুলি চালিয়ে যায় শত্রুপক্ষের উপর। হঠাৎ শত্রুপক্ষের মেশিনগান থেকে একঝাঁক গুলি এসে রমেশকে ঝাঁঝরা করে দেয়। বিন্দার নাম নিতে নিতেই রমেশ মারা যায়।
শুনে বিন্দা যেন পাথর হয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।
যখনই জ্ঞান আসছিল বারবার রমেশকে খুঁজছিল। শহরের হসপিটালে নিয়ে যেতে হয় বিন্দাকে। বাচ্চাটাও মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
আমি একদম চাইনি আমার আদরের বোনটা এইভাবে সাদা শাড়ি পরে নিরাভরণ হয়ে থাকুক। কিন্তু গ্রামের সমাজ খুব নিষ্ঠুর রে দীপ্ত । ওর হাতের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে দিল, এত ভালোবাসতো বোনটা চুড়ি পরতে ..সিঁদুর মুছে দিল.. সাদা শাড়ি পরিয়ে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিল আমার বোনটাকে।
রমেশের মৃত্যুটা বিন্দা মেনে নিতে পারেনি। তারপর থেকেই ও একদম নির্বাক গুমসুম হয়ে থাকে । কতদিন যে ওর হাসি দেখিনি, ওর চবড় চবড় কথা শুনিনি, ওর আবদার
শুনিনি ! পাথর হয়ে গেছে রে আমার বোনটা।
রুমাল বের করে চোখ মুছতে লাগল সন্তু।
এসব শুনে দীপ্তর মুখটাও কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠল। সন্তুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।
সন্তু দীপ্ত'র হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।
দীপ্ত জিজ্ঞেস করে-"আচ্ছা ওর তো ওইটুকু বয়স ..তোরা ওর আরেকবার বিয়ে দিলি না কেন " ?
"আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম‌ বিশ্বাস কর ,বাবুজিকে বুঝিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম 'রে বোনটা আবার হাসুক, কথা বলুক। বাবুজিও আমার কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গ্রামেরই পঞ্চায়েত বলল বিধবার বিয়ে দেওয়া অশাস্ত্রীয়। সেই চেষ্টা করলে আমাদের একঘরে করে দেবে "।
এখানে সবাই ভীষণ গোঁড়া রে ... "
দীপ্ত বলে উঠল, "উফফ সত্যি কি সমাজ ব্যবস্থা আমাদের।মানুষের জীবনের থেকে সমাজের নিয়ম কানুন বড় " !
সন্তু বলল, " আরেকটা কথা তোকে বলা হয়নি। তোর সাথে রমেশের একটা জিনসের অনেকটা মিল -- জানিস ? তোর চোখ দু'টোর সঙ্গে রমেশের চোখের অদ্ভুত মিল " !
তোর মনে আছে দীপ্ত কলেজে তোকে আমি একবার বলেছিলাম আমার এক আত্মীয়র সাথে তোর ভীষণ মিল ?
বিন্দা তার জীবনের ওই ‌অভিশপ্ত ঘটনার পর থেকে কখনো কারো সামনে আসে না।
কিন্তু বিন্দা যে তোকে যে দূর থেকে দেখছে সেটা আমি লক্ষ্য করেছি একদিন। সেটা ওই একটাই কারণে। ও তোর মধ্যে রমেশের চোখদুটো খুঁজতে চাইছে " ।
দীপ্ত শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল এইজন্যই এতো আকুল করা চাহনি ছিল ওই চোখে !
দীপ্ত বলল , "আমাকে রমেশের একটা ফটো দেখাস তো "--
সন্তু বলল , "খুঁজে দেখতে হবে রে , কেননা ওই ঘটনার পর থেকে বোনের সামনে রমেশের কোন স্মৃতি আমরা রাখিনি ।
ওরা কথা বলতে বলতে খেয়াল করেনি যে ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করছে।
সন্তুর বাবা কেটলি আর চায়ের কাপ নিয়ে উপরে এসে এসেছন‌।
" দীপ , চায়ে পিনা হ্যয় কী নেহি " ?
আজ আর দীপ্ত না করল না।
চায়ের কাপ হাতে নিল।
সন্তুর বাবা জিজ্ঞেস করল, মিঠ ( মিষ্টি) ঠিক হ্যায় ?
দীপ বলল, "হা চাচাজি বরাব্বর হ্যায়"
আবার একটা নতুন রোদ ঝলমলে সকালের শুরু।
গাড়ু হাতে সকলে মাঠে যেতে যেতে দেখল চারপাশে সবুজ আর সবুজ.. শয়ে শয়ে ময়ূর খেলে বেড়াচ্ছে... খেতের মধ্যে ইঁদুর ধরে খাচ্ছে.. সবুজের মধ্যে নীলকণ্ঠী রং.. মাঝে মাঝে হলুদের ছোঁয়া.. কি অপূর্ব দৃশ্য !
সন্তুর মা আজ জলখাবারে পুরী আর আলু মটর বানিয়েছিল , সঙ্গে আমের আচার। সন্তুর মা পুরী ভেজে কুল পাচ্ছে না। চারজন ইয়ং ছেলে.. গ্রামে এসে যাদের খিদে শতগুণ বেড়ে গেছে.. তার সাথে আছে সন্তুর বাবা ও ভাই। বেচারী সন্তুর মা হাসিমুখে আগুনের তাতে ভেজেই চলেছে পুরী ...
আজ সায়নরা গ্রাম ঘুরতে গেল। দীপ্ত গেল না। রাতে ঘুম হয়নি । ভাবল ছোট্ট করে এক রাউন্ড ঘুম মারবে। ওদের বলল তোরা যা আমি বিকেলে বেরোবো।
ছবি আঁকা দীপ্তর একটা নেশা। সন্তুর ভাই মন্নোকে বলল কাগজ পেন্সিল আনতে। সন্তুর ভাই মহা উৎসাহে খাতা পেন্সিল এনে দিল। পেন্সিল দিয়ে রাফ স্কেচ করে দুটো ছবি আঁকল দীপ্ত। প্রথমটা একটা মেয়ে ছাদের ধারে একটু আড়াআড়ি করে দাঁড়িয়ে.. মুখে চাঁদের আলো পড়েছে..
আরেকটা ছবি একটা মেয়ে চোখ বড় বড় করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের দিকে.. দৃষ্টিতে আছে বিস্ময় ব্যথা-বেদনা আকুলতা ..সবই।
পেন্সিল স্কেচ করে রাখল দীপ্ত। সঙ্গে করে নিয়ে যাবে ছবি দুটো। বাড়ি গিয়ে ক্যানভাসে ভালো করে অয়েল পেইন্টিং করবে।
শুয়ে পড়ল। একটু ঘুমানো দরকার। মাঝে মাঝে কাশি হচ্ছে দীপ্তর। খোলা ছাদে থাকার অভ্যাস নেই তো‌ , হয়তো হিম পড়ে ঠান্ডা লেগেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল দীপ্ত। ---- গভীর ঘুম।
ঘুম ভাঙলো সায়নদের ডাকে।
অনিরুদ্ধ বলল, কত ঘুমাবি রে শালা। কুম্ভকর্ণের নাতি তুই। কুয়ো তলায় চলে আয় চান করব ..খিদে পেয়েছে জব্বর ... "
দীপ্ত বলল , "তোরা যা আমি আসছি। ওরা চলে গেল। দীপ্ত দেখল পাশে টুলের ওপর কাসার গ্লাসে ঢাকা দেওয়া কিছু রাখা আছে।
সন্তুকে জিজ্ঞেস করল ,এটা কি রে।
সন্তু গ্লাসের ঢাকা খুলে দেখে বলল এটা কাড়া.. গ্রামের টোটকা ওষুধ , তুলসী পাতা আদা গোলমরিচ মধু দিয়ে বানানো হয়। তুইতো কাসছিস। তাই বোধহয় বিন্দা করে রেখে গেছে।
চমকে তাকিয়ে দীপ্ত বলল, " তুই কি করে জানলি বিন্দা করেছে " !
সন্তু হেসে বলল, এটা এই বাড়িতে বিন্দাই বানায়। যখনই যার সর্দি কাশি হয় বিন্দাই বানিয়ে দেয়।
হঠাৎ উদাস গলায় সন্তু বলে উঠল ,
" বস , তুই যদি আমাদের বাড়িতে থেকে যেতিস তাহলে হয়তো আমার বোনটা আবার একটু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেত "।
দীপ্ত বলল , " ধুর কি যে বলিস না .. চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে ।আমি বাবুজির সাথে কথা বলব যাতে ওর আবার বিয়ে দেওয়া হয়।
সন্তু বলল, " না না একদম বলবি না বাবুজি যদি জানতে পারে আমি তোকে সব বলেছি তাহলে খুব রাগ করবে " ।
চলে যেতে যেতে সন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল , তুই আজ আর চান করিস না ..ঠান্ডা লেগেছে তোর। কাড়া'টা খেয়ে নিয়ে নিচে ভাত খেতে আয়।
দীপ্ত গ্লাসটা হাতে নিয়ে খাবে কি খাবে না ভাবছে। আবার ভাবছে হয়তো বিন্দা কোথাও থেকে ওকে দেখছে। না খেলে বেচারি মেয়েটা হয়তো দুঃখ পাবে।
নাক চোখ বুজে দীপ্ত গ্লাসের পানীয়টা শেষ করল।
দীপ্ত ভালো করেই জানে মেয়েটার প্রেমে ও পড়েনি। কিন্তু একটা ফুলের মত মেয়ে যার সামনে সারাটা জীবন পড়ে আছে তার জন্য কেমন যেন অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। যদি মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারতো দীপ্ত !
অন্তরা ঘোষ ।
২৫.১২.১৯.
চিত্রঋণ : ইন্টারনেট
( আগামী পর্বে সমাপ্ত )
আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক

Posted by গল্পগচ্ছ at 12:10 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Friday, February 15, 2019

অণু গল্প অধ্যবসায় ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী । গল্প গুচ্ছ



  
অণু গল্প অধ্যবসায়

 ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী । গল্প গুচ্ছ 

৮ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ।। ৩রা ফাল্গুন ১৪২৫

এই সংখ্যায় ১০টি গল্প । লিখেছেন তাপসকিরণ রায়, সুবীরকুমার রায়, সোনালি ভট্টাচার্য মুখার্জী, নীহার চক্রবর্তী সুদীপ ঘোষাল, তাপস দাস, শুভাশিস দাস, সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী, ্ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ও সুতপা সরকার ।

বিপ্লব বাবু হাতিবাগানের একটা শাড়ির দোকানে সেলস ম্যানের চাকরি করেন। আজ প্রায় ২৫ বছর ধরে এই দোকানে চাকরি করেই তাঁর সংসার চালান। এক মেয়ে সুমিত্রা । এবারে মাধ্যমিক দেবে বাগবাজারের নিবেদিতা স্কুল থেকে। স্বল্প আয়ের সংসারে মেয়ের জন্য টিউশনি দিতে পারেন না কিন্তু মেয়ে মেধাবী তাই স্কুলে প্রথম তিন জনের মধ্যে প্রায় থাকে। তিন জনার অভাবের সংসারে আজকের বাজারে চাল আনতে তেল ফুরায় আবার তেল আনতে নুন ফুরায়। স্ত্রী সুলক্ষণা সত্যি লক্ষ্মী বৌ । সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে আচার পাঁপড় তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলি বিক্রি করে বেশ দু পয়সা রোজগার করেন। বিপ্লব বাবুর সংসারে অর্থ হয়ত নেই কিন্তু ভর পুর শান্তি ।
সুমিত্রার এক বান্ধবী আছে নাম মিলি । মিলির বাবা কোলকাতা কর্পোরেশনে কাজ করেন । মাইনের চেয়ে উপরি বেশি তাই মিলির কোন কিছু জিনিষের অভাব থাকে না। দুর্গা পুজোর সময় তার ১০ টা ১৫ টা ড্রেস হয়। সরস্বতী পুজোয় তার জামা কাপড় শাড়ী পরার বহর দেখে স্কুলের দিদিমণিরা গার্জেন কে স্কুলে ডেকে পাঠান । মিলির বাবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থের দম্ভে দিদিমণিদের বেখাতির ভাব দেখান। ব্যাস স্কুল থেকে মিলি কে বার করে দেওয়া হয়। এমনিতেই নিবেদিতা স্কুলের মেয়েরা খুব শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে। তাই অসভ্যতা কিম্বা অবাধ্যতা একদম বরদাস্ত নয় ।
সুমিত্রা একটা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ী পেয়েই খুশি । মা সরস্বতীর কৃপায় সুমিত্রা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল পেল। কিন্তু ওই সীমিত আয়ে ১২ ক্লাসে ভালো কলেজে পড়ার টাকা ওর বাবাকে যোগাড় করতে হিমসিম হতে হল। শেষে ওর মা এক সহৃদয় ব্যক্তির বাড়ি থেকে ১০,০০০ টাকা ধার স্বরূপ আনে। সুমিত্রার বাবা আরো কিছু টাকা মনিবের কাছথেকে এনে মেয়েকে স্কটিশে ভর্তি করে। সুমিত্রা বিজ্ঞান নিয়ে ১২ ক্লাস পাস করে । এরপর টিউশনি সুরু করে এবং নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালায়।
জয়েন্টে বসে মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়। সুমিত্রা নিজের অধ্যবসায়ে এবং সীমিত আয়ের মধ্যে আজ ডাক্তারি পাস করে মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।
মিলি কোনমতেই মাধ্যমিক পাস করতে পারলোনা।দোষ ওর নয়। ওর বাবা মার। কারণ ওনারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জামা কাপড়, প্রসাধন, মোবাইল ইত্যাদি দিয়ে মেয়ের মাথা খেয়েছেন।  শেষে মিলির বাবা তাকে এক ব্যবসায়ীর সংগে বিয়ে দেন। কিন্তু মিলির সেই এক স্বভাব শপিং মলে গিয়ে দামি প্রসাধনের সামগ্রী কেনা,ক্রেডিট কার্ডে শপিং করা। স্বামী না দিলে বাবা দিতেন। ক্রমশ তার স্বামী তিতি বিরক্ত হয়ে তাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।  সেখানেই তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে ।
মিলির বাবা যত বোঝালেও জামাই বাবাজীবন মিলিকে ঘরে নিতে গর রাজি হয়। অগত্যা মিলির বাবা কোর্টের নোটিস পাঠান ডিভোর্সের জন্য।  মিলির এবং তার কন্যার খোর পোশাকির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয় কোর্ট থেকে। এই নিয়ে জামাই বাবাজি উচ্চ আদালতে মিলির চরিত্র সংহার করে পিটিশন ফাইল করেন। কেস চলে কিন্তু সমাধান হয়না।
মিলির বাবা চাকুরী থেকে অবসরের পর নানা বেআইনি কাজের জন্য তাকে কোর্টের চক্কর খেতে হয়। কোর্ট কাচারি এবং উকিলের খরচে মিলির বাবার আর্থিক অবস্থার চরম দুর্দশা সুরু হয়।
ওর বাবা পেনসন না পেয়ে নিজের সমস্ত সম্বল হারিয়ে বসেন।  শেষে হার্ট এটাকে মারা জান। মিলি হসপিটালে ডাক্তার দের মধ্যে ডক্টর সুমিত্রা মুখার্জী কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। এটা তার খুব চেনা মুখ । হ্যাঁ এই ত সেই তার স্কুলের বান্ধবী  সুমিত্রা  যাকে সে কৃপার দৃষ্টিতে দেখত।
আজ দর্প হারি মধুসূদন মুখ টিপে হাসছেন মিলি কে দেখে.
মিলি কঠিন বাস্তবের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজেকে সে কত মূর্খ বলে।  সাময়িক অর্থের সাচ্ছল্যতায় মানুষ ভুলে যায় তার এই দিন গুলি সীমিত বলে।   মা  লক্ষ্মী কৃপা করে পরখ করেন মানুষের দম্ভ কে অহংকারকে। মা লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা। তিনি কখনই অহংকার পছন্দ করেন না আর ভগবান বিষ্ণু তিনি তো দর্প হারি মধুসূদন।

Posted by গল্পগচ্ছ at 11:11 PM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Tuesday, February 5, 2019

চৌকাঠ ত্রিভুবন জিত মুখার্জী


চৌকাঠ
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

এই মেয়েকে ঘরের চৌকাঠ পেরতে দেবনা l এই অলক্ষণা মেয়েকে নিয়ে এখুনি ওর বাপের বাড়িতে রেখে আয়... মা গর্জন করে ওঠেন l
বরন করা ত দুরে থাক এই অপমান সূচক কথায় ছেলে বৌ দুজনাই বিব্রত হয়ে পড়েন l বৌমা মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যান কিন্তু মা পা সরিয়ে নেন l এতে বৌমার কি দোষ বলুন ত!
এ আমার স্ব চক্ষে দেখা এক ঘটনার বিবরণী:-
আমাদের পাড়ার সিদ্ধার্থ বাবুর গিন্নী স্নেহলতা দেবীর ভারিক্কি মেজাজ l তিনি পারলে হাতে মাথা কেটে ফেলতে পারেন l ঝি, চাকর, কর্তা বাবু সকলে ওনাকে ভয় পান l নামেই স্নেহলতা কিন্তু কাজে উগ্র চণ্ডী মা ছিন্নমস্তা l রাগ হলে হাতের কাছে যা পারেন ছোড়েন l সেই বাড়ির ছেলে হয়ে কিনা পিন্টুদা সদগোপের কন্যা অর্চনা কে বিয়ে করে ঘরে তোলার সাহস করে! যার ওরকম খাণ্ডারনি মা সে ভিন জাতে বিয়ে করতে সাহস করে কি করে? ব্রাহ্মণ সন্তানের সংগে সদগোপের কন্যা!!
অর্চনা উচ্চ শিক্ষিতা স্কুল টিচার l সারাদিন স্কুলে ছেলে মেয়েদের জাতি প্রথার বিরোধে শিক্ষা দেয় কিন্তু এখন নিজে বিপাকে পড়েছে l
নাঃ হারলে চলবে না তাকে জিততেই হবে l এখন ও পৃথিবীতে এইরকম মানুষের অভাব নেই যারা মানুষের চেয়ে জাত পাত কে প্রাধান্য দেয় l তবুও এদের ভ্রান্ত ধারনা ভাঙতে হবে তা নাহলে তার এই পড়াশুনো বৃথা। তাই খুব ধীর স্থির ভাবে বলে, মা, আপনি ত স্নেহময়ী করুণাময়ী আপনার সেবা করার সুযোগ দিন কোন ভাবেই আমি সংসারের কাজে অবহেলা করব না এটা আমার প্রতিশ্রুতি l
- কি ! আমার ঘরে না ঢুকতেই আমাকে উপদেশ l এখুনি বেরিয়ে যাও l এ ঘরে তোমার ঠাঁই নেই l
- অর্চনা মনে মনে ভাবল এ কি অশিক্ষিত মহিলা! এই যুগে এই রকম মহিলা আছেন? খুব আশ্চর্য হল অর্চনা l
- এই সময় পিন্টুদা মা'কে বলল, তুমি আমার পছন্দের বৌকে ঘরে ঢুকতে দিলে না মা এটা ওকে নয় আমাকে অপমান করলে l যদি ও না থাকে তবে আমিও এই ঘরে ঢুকব না l চল অর্চনা আমরা এখুনি এখান থেকে চলে যাই l যে মা সন্তানের সুখের চেয়ে নিজের জেদ বজায়ের জন্য ঘরের লক্ষ্মী কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে সে মা' আমার কাছে মৃত l
- কি বললি? তুই আমার ছেলে হয়ে এই কথা বলতে পারলি বাবা? বলে কাঁদতে শুরু করে দিলেন l
- থাক আর বাবা বলতে হবে না l আর কাঁদতেও হবেনা l সারা জীবন কি করে ছেলেকে ছেড়ে থাক দেখব। মরে গেলেও এই ঘরে পা দেবনা l রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে পিন্টুদা l
- একি বলছ তুমি? তুমি না শিক্ষিত ! মা'কে কেউ এই ভাবে উত্তর দেয় ! উনি কি ভাববেন আমি তোমাকে এই সব বলতে শিখিয়েছি l আমি এই অশান্তি জানলে কখনই এই বিয়েতে রাজি হতাম না। তুমি শান্ত হও l মাকে ক্ষমা চাও l আমিও হাত জোড় করে বলছি মা, আপনার আমাকে অপছন্দ ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনার ছেলেকে আপনি ফিরিয়ে দেবেন না l আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের সংসারে অশান্তি হোক l এই বলে চোখ পুঁছল l
- থাক আর আমার মন পাওয়ার চেষ্টা করনা তুমি l তুমি জাননা আমরা ব্রাহ্মণ l ওর কি মেয়ে জুটত না? কি করে তুমি সব জেনে শুনে আমার ছেলের গলায় ঝুলে পড়লে?
- ছিঃ। এই অপমানের চেয়ে এখুনি বেরিয়ে যাওয়া ভালো l ছিঃ ছিঃ এত মূর্খ এই মহিলা মনে মনে ভাবে! এই ঘরে সে কিছুতেই মানিয়ে চলতে পারবে না l সত্যি তার ই ভুল l সেই ভুলের মাসুল দিতে হবে । অর্চনা পা বাড়ায় পেছন ফিরে l
ঠিক সেই সময় এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে ......
-দাঁড়াও মা দাঁড়াও l এই বুড়ো বাবাকে ছেড়ে যেও না মা l আমার কন্যা সন্তান নেই.তুমি আমার মেয়ের মতন মা l আমি বলছি তুমি ঘরে এস মা l আমি অনেক সহ্য করেছি আর পারছিনা l এর একটা বিহিত হওয়ার প্রয়োজন l
- না বাবা তা হয় না l আমায় ক্ষমা করবেন l আমি মায়ের অমতে এই চৌকাঠ পেরু-বনা....
পিন্টু তার মা'কে বলে যদি আমার স্ত্রীর এই বাড়িতে যায়গা নেই তাহলে আমিও চলি l
চৌকাঠ পেরিয়ে না গিয়েই ফেরে পেছনে l ঘরের ভেতর থেকে বাবার ডাক 'খোকা যেওনা' শুনে স্তম্ভিত হয় পিন্টুদা l
-খোকা যেওনা l দাঁড়াও আমি বেঁচে আছি.বৌমাকে নিয়ে এস ঘরে l
অর্চনা যেন ধড়ে প্রাণ পেল l চোখের জল পুঁছে দাঁড়িয়ে রইল l মায়ের অমতে ছেলে বৌকে ঘরে তোলা কি চাট্টিখানি কথা? তবুও ক্ষীণ আশা l বৌমা ডাক শুনে অর্চনা যেন হাতে স্বর্গ পেল l তার শ্বশুর মশাই একদম অন্য রকম মানুষ মনেহল l অর্চনার বাবা নেই l সে ছোট থেকেই তার মা'র আদর্শে গড়া l তার মা তার জন্য অনেক স্বার্থ ত্যাগ করেছেন l সে মনে মনে তার মা এবং তার স্বামীর জন্মদাত্রী র মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক দেখল l তবুও একটু ক্ষীণ আশা !!!!! সে কি এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুতে পারবে???? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম ......
Top of Form



Posted by গল্পগচ্ছ at 11:52 PM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Wednesday, January 9, 2019

গতানুগতিক কর্ম ব্যাস্ততার মধ্যে যারা জীবন অতিবাহিত করেন তাঁদের মধ্যে স্থূল চিন্তাধারা পরিলক্ষিত হয়.তাঁদের মেটিরিয়ালিষ্টিক বলা যেতে পারে.
অবশ্য এটা সব ক্ষেত্রে প্রযুজ্য নয়. অনেকে কর্ম ব্যাস্ততাতেও অবসর সময়ে সুন্দর কবিতা গল্প লিখে পাঠকের মন জয় করেন.
জীবনের ছক্কা পাঁজার ভেতরে কেউ কেউ অসাধরন লেখা লিখে ফেলেন কিন্তু সেগুলো ছাপানর প্রকাশক পান না.এদিকে সেই লেখকরা ক্রমশ হারিয়ে যান অর্থের অভাবে.
কিছু আহাম্মক অর্থ পিপাষু প্রকাশক কুচক্রি বুদ্ধিতে নিরিহ সরল সোজা লেখক এর বই প্রকাশের জন্য তাকে রিতিমত হয়রান হরকত করে জঘন্য প্রচ্ছদ এর মোড়কে তার সমস্ত কষ্টার্জিত লেখা জলাঞ্জলি দেওয়ার সুপরিকল্পিত ছক কসে লেখকের পরিশ্রম কে উপহাস করে বইটি হয়ত প্রকাশ করলেন কিন্তু বইটির গ্রাহক সং্খ্যা  হ্রাস পেল হয়ত কিম্বা কিছু বই ই বিক্রি হলনা.কিন্তু সেই ধরনের লেখক কে অন্য প্রকাশকের দ্বারস্থ হতে হবে.
লেখক হওয়া বড়ই বিড়ম্বনা.তাঁর পরিচিতি এবং সম্মান কষ্ট করে অর্জন করতে হয়.

Posted by গল্পগচ্ছ at 12:28 AM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Tuesday, January 1, 2019

বড় গল্প ' আমার হিয়ার মাঝে ' ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী



   
আমার হিয়ার মাঝে
  ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

কদিন ধরেই বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে ঘন মেঘ। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি ঝম ঝমিয়ে পড়ছে।  আজ ঈপ্সিতা কমলেশ এর এক বিশেষ দিন। আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী। কমলেশ অফিস থেকে ফেরার পথে একটা ফুলের তোড়া আর তার প্রাণের অধিক ঈপ্সিতার জন্য বিষ্ণুপুর সিল্কের শাড়ি নিয়ে কোনমতে নৈহাটি লোকালে উঠে পড়ে। বেলঘরিয়া ষ্টেশন আসতেই নেমে পড়ে। গাড়ি প্ল্যাটফর্মে নামতেই এক রাশ লোক ঝড়ের বেগে নেমে পড়ে। 
কমলেশ হাতের ব্যাগটা শক্ত হাতে চেপে ধরে কারণ তাতে ঈপ্সিতার জন্য শাড়িটা যত্ন করে রাখা। ফুলের তোড়াটা কি করবে ভাবতে যাচ্ছিল হটাত পেছন থেকে কে ঠ্যালা দেয়।
কমলেশ চিৎকার করে ওঠে। কি অসভ্য লোক রে বাবা। মানুষকে এরকম ভাবে কেউ ঠ্যালা দেয় !
- লোকাল ট্রেনে কি প্রথম উঠছেন দাদা? পেছন থেকে বিদ্রূপের কণ্ঠস্বর শুনে ওর মাথা গরম হয়ে যায়.
- না আমি রোজকার যাত্রী। তবে এত বাজে অসভ্য লোক দেখতে অভ্যস্ত নই।
- কাকে অসভ্য বলছেন ? ভিড় ঠেলে মানুষ কোন মতে এগুচ্ছে তার মধ্যে আপনি ফুলের তোড়া নিয়ে ঢুকে মানুষকে অসভ্য বলছেন ! আপনি নিজেকে কি ভাবেন বলুন ত ! অতো ফুলের সখ থাকলে ট্যাক্সিতে চড়ে ফুলের তোড়া নিয়ে আসলেই পারতেন ।
- আমি কিসে যাবো কিসে না যাবো সেটা কি আপনি ঠিক করবেন ? এই বলে কমলেশ নেমে পড়ে। না সে হাতিবাগান থেকে ফুলের তোড়াটা না কিনলেই পারত। বেলঘরিয়া স্টেশন এর কাছে কোন ফ্লোরিষ্টের দোকান থেকে  কিনে নিয়ে গেলে কি হত না ! ভুলটা  তার ই হয়েছে। কথাগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি এসে গিয়েছে খেয়াল করেনি।
ঘরে ঢুকেই ঈপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে বিবাহ বার্ষিকীর অনেক অনেক ভালোবাসা।    আমি সত্যি তোমাকে পেয়ে ধন্য।
- ঈপ্সিতা নিজেকে কমলেশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , তাড়া তাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও । আমি তোমার খাবার বাড়ছি। চল হাত মুখ ধুয়ে এক কাপ চা খাও। আমিও তোমার জন্য বসে আছি কখন আসবে বলে !  
- ট্রেনের ঘটনাটা বলল না কমলেশ। ফুল ঈপ্সিতা খুব ভালো বাসে তাই বাছাই করা কাট ফ্লাওয়ার এর তোড়াটা কিনেছিল। সেটা যে ট্রেনের যাত্রীদের পদপিষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেটা বলা হয়নি। তাছাড়া সত্যি বলতে পকেটে আর টাকা ছিলনা নতুন ফুলের তোড়া কেনার। তাই শুধু বিষ্ণুপুর সিল্কের শাড়িটাই ঈপ্সিতাকে বিবাহ বার্ষিকীর উপহার হিসেবে প্রদান করে কিছুটা ধাতস্থ হল।  কেমন হয়েছে শাড়িটা পরে দেখত !
- এখন নয়। তুমি এত দাম দিয়ে শাড়ি কিনলে কেন গো?
 - আহা আমার সোহাগি ! কি করে না কিনি। বছরে এই দিনটার জন্য বসে থাকো। কি  উপহার আমি দিলাম তা নিয়ে একটু কটু মন্তব্য করবে । তবে এবারে তোমার জন্য ফুল আনা হলনা। মনটা খারাপ ।
- তাতে কি হয়েছে , এত দামি শাড়িত এনেছ। এই যথেষ্ট ।
- বলছ ! তবে আমার পাওনাটা দাও।
- যাহ !
এখানে বলে রাখি কমলেশ ঈপ্সিতার পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে কিন্তু ঈপ্সিতা সন্তান দিতে পারেনি কমলেশ কে । এই নিয়ে কমলেশের মনে কোন কষ্ট নেই কিন্তু  ঈপ্সিতার মনে কষ্ট আছে। সে নিজেকে অপরাধী মনে করে । অনেক ডাক্তার দেখান হয়েছে কারুর কোন দোষ ত্রুটি নেই বিভিন্ন টেস্ট এর ফলাফল যা বলছে। কমলেশ  এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না । এইতো বেশ আছি । কোন বন্ধন নেই। এই ভাবেই কেটে যাক না দিন গুলো।
ঈপ্সিতার মা মাসি নানা টোটকা করেন ফল কিছুই হয় না। ঈপ্সিতার একটি সন্তান থাকলে তার সময় কেটে যেত। সারাদিন টুক টাক কাজ নিয়ে থাকে। গান করে, ছবি আঁকে , সেলাই করে। ঘরের সমস্ত কাজ গুছিয়ে করে। সারা ঘর ঝক ঝক করে। রান্নাও ভালো করে।
আজ কমলেশের জন্য ইলিশ পাতুরী, কসা মাংস, ফ্রাএড রাইস, পনির টিক্কা, চাটনি, পায়েস, সংগে কমলেশ কাল যে মিষ্টি এনে রেখেছিল ফ্রিজে সেগুলো আছে। সব সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে দেয় ইপ্সিতা।  কমলেশ হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে।  ট্রেনের কোন কথাই বলেনা,তবে ফুলের  তোড়াটা ট্রেনে পড়ে যাত্রীদের পদপিষ্ট হয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে  সেই কথা বলে হাঁফ ছাড়ে। 
ঈপ্সিতা কথাটা শুনে বিব্রত হয়।
- তোমার কিছু হয়নি ত !
- না আমার আবার কি হবে?
ঈপ্সিতা কমলেশকে খুব যত্ন করে খেতে দেয়।  কমলেশ পরিতৃপ্ত নয়নে ঈপ্সিতাকে দেখে ভাবে সত্যি তার বৌ ভাগ্যটা ভালো। আসলে পুরুষ মানুষের মন জয় করতে হলে ভালো  রান্না র প্রয়োজন। ঈপ্সিতা সে বিষয় পটু।  
সারাদিনের খাটুনিতে কমলেশ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। 
ঈপ্সিতা তার মাথায় বিলি কেটে বলে এতই ঘুম!
- হ্যাঁ। খুব ঘুম পাচ্ছে। 
কিছুক্ষণের মধ্যেই নাসিকা গর্জন।
বেল্কনিতে ঈপ্সিতা বসে একটা রবীন্দ্র সংগীত গাইল.

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।…….

হটাত ওর পিঠে কার হাতের স্পর্শ পেল।
পেছন ফিরে তাকাতেই ‘কমলেশ’  দেখে বলে.... ও তুমি !   
কমলেশ ঈপ্সিতার গানে মুগ্ধ। হাত তালি দিয়ে ইপ্সিতাকে সুন্দর গান পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ জানায় ।
-কোই আগে ত কখন আমার গানের সুখ্যাতি করনি ।
-আগে ত কখন লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার গান শুনিনি।
-তাই বুঝি ! কপট রাগে ইপ্সিতাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছিল আজ।
কমলেশ দু চোখ ভরে তার প্রিয়া কে দেখছিল মুগ্ধ হয়ে । মেঘলা আকাশে চাঁদ স্পষ্ট ছিলনা তাও তার বারান্দার চাঁদ তার কাছে সবচেয়ে সুন্দর । কমলেশ একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ।

                                       ---২---

কমলেশ ঈপ্সিতার দিনগুলো ভালোই কাটছিল । এরমধ্যে ঈপ্সিতার পীড়াপীড়িতে কমলেশ এক কন্যা সন্তানকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । ঘটনাটা এইরকম । ঈপ্সিতার বাড়ির পরিচারিকা (লক্ষ্মী)র তৃতীয় কন্যা সন্তান হওয়াতে তার মাতাল স্বামী নাকি সেই শিশু কন্যা  সন্তানটিকে বাড়ির দোতালার ছাদ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় লক্ষ্মী তার মাতাল স্বামীর হাত থেকে তার কন্যাটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঈপ্সিতার বাড়ি দৌড়ে চলে আসে।  ঈপ্সিতার পায়ে পড়ে সকল ঘটনার বৃত্তান্ত দেয়। ঈপ্সিতা সব শুনে তৎক্ষণাৎ থানাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু লক্ষ্মীর অনুরোধে ব্যাপারটা ধামা চাপা পড়ে যায়। সেইসময় ঈপ্সিতা লক্ষ্মীকে  দিয়ে সর্ত করিয়ে নেয় যে, সে কন্যা সন্তানটিকে লালন পালন করবে কিন্তু লক্ষ্মী যেন তার এই মেয়েটিকে পরে দাবি না করে। আইনত দত্তক নিলে সেই ব্যবস্থাই থাকে যাতে পালিত পিতা মাতার কোন আইনগত সমস্যা পরে না হয়। যেমন বলা সেইরকম কাজ । লক্ষ্মীর স্বামী , লক্ষ্মী এবং ঈপ্সিতা , কমলেশ সকলে কোর্টে কন্যা সন্তানটিকে দত্তক নেয় । কোর্ট কমলেশ ঈপ্সিতার হাতে কন্যাটিকে প্রদান করে নানা আইনি কাগজ পত্র সই সবুদের পর । এখন আর কোন সমস্যা নেই । ঈপ্সিতা কন্যাটি পেয়ে খুব খুশি । তার মা হওয়ার সাধ লক্ষ্মীর মেয়ে পূর্ণ করে । সে এখন মা । তাকে আর কারুর কথা শুনতে হবে না। 
লক্ষ্মী ওই বাড়িতেই সারা দিন কাজ করে। তার মেয়েটির মাতৃ স্নেহের অভাব হয়না ।  যেন দেবকী , যশোদা  দুই মাতার সান্নিধ্যে মেয়েটি ক্রমে বড় হতে লাগে। খুব আহ্লাদী তাই তার নাম ‘আহ্লাদী’ দেয় ঈপ্সিতা। লক্ষ্মীও খুশি ওই নামে । আহ্লাদীর ছয় মাসে অন্নপ্রাশন হয় ঘটা করে। সত্য নারায়ণ পুজো হোম ইত্যাদি হয়। আত্মীয় স্বজন সকলেই আসে । কিন্তু ঈপ্সিতার মা এই পরের মেয়ের তাও পরিচারিকার মেয়ের ঘটা করে অন্নপ্রাশন একদম ই পছন্দ করেন না। ঈপ্সিতা ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেয়। 
কমলেশ , ঈপ্সিতার খুশীতেই খুশী তাই সে এসব বিষয় মাথা ঘামায় না। 
আহ্লাদীর তিন বছর বয়েসে স্কুলে ভর্তি হয় । স্কুলের ড্রেসে তাকে বেশ ফুট ফুটে দেখায়। লক্ষ্মীর চক্ষে আনন্দাশ্রু । সে পরিতৃপ্ত নয়নে আহ্লাদীকে দেখে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করে। আহ্লাদী, লক্ষ্মীর চেয়ে ঈপ্সিতাকে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু লক্মী যে মা, সে তার জননী তার  স্নেহ উপচে পড়ে আহ্লাদীর ওপর। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা সব লক্ষ্মী করে। তার টিফিন বাক্স গোছান , জামা কাপড় কাচা , ইস্ত্রী করা ইত্যাদি সব কাজ । সে জানে এখানে তার কন্যাটি সযত্নে আছে এবং থাকবে । 
আহ্লাদীর চার বছর পূর্ণ হয়ে গেল এর মধ্যে। পাঁচে পা দেওয়াতে তার ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হল। লক্ষ্মী সব দেখে শান্তির নিঃশ্বাস নেয় । মনে মনে ভাবে সে নিশ্চিন্ত তার মেয়ের ব্যাপারে । ভালো ঘরে মেয়েটি মানুষ হচ্ছে পড়াশুনো করছে এর চেয়ে আর কি বেশি চায় । ভগবান ওকে সুস্থ সবল রাখুক সেটাই তার এক মাত্র ভগবানের কাছে প্রার্থনা ।এদিকে ইপ্সিতা আহ্লাদীকে এত বেশি ভালবেসে ফেলে যে আহ্লাদীর কাছে লক্ষ্মীর উপস্থিতি বেশি সহ্য করতে পারেনা। যতই হোক পালিতা মাতা আপন মাতা ত নয় !  লক্ষ্মী জেনেও না জানার ভান করে । ও ভালো করে জানে ওর সামান্য ভুলের জন্য হয়ত ভবিষ্যতে ওকেই তার মাশুল দিতে হবে। ও তাই সর্বদা সতর্ক থাকে ইপ্সিতা কে তোয়াজ করে ওর মন রেখে কথা বলে,ঘরের সমস্ত কাজ কর্ম করে, আহ্লাদীর স্কুল ড্রেস ঝক ঝকে পরিষ্কার করে কাচে যদিও ওয়াশিং মেশিন আছে তবুও লক্ষ্মী নিজের হাতেই সমস্ত কাচে আয়রন করে , আহ্লাদীকে স্কুলের বাস স্টপে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে।
ইপ্সিতাই আহ্লাদীকে স্কুলের সমস্ত পড়া পড়ায় । কেমন সুন্দর টক টক করে রাইমস বলতে শিখেছে আহ্লাদী । স্কুলের পড়া খুব মনোযোগ দিয়ে করে আর ছবি আঁকে । আহ্লাদীর ছবি আঁকা তার মা ইপ্সিতা শিখিয়েছে । আহ্লাদী এখন ভালোই ছবি আঁকে । এইতো স্বাধীনতা দিবসে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় আহ্লাদী প্রথম পুরষ্কার পায় জাতীয় পতাকা আঁকার জন্য। সকলে খুব প্রশংসা করে আহ্লাদীকে আর লক্ষ্মীর গর্বে আর আনন্দে দুচোখ থেকে আনন্দাশ্রু বয়ে যায়। সেই ত তার জন্মদাত্রী মা কিন্তু নেপথ্যে আছে তার মেয়ে কিছুই জানেনা জানার উপায় ও নেই । লক্ষ্মী তার মনের দুঃখ মনেই রাখে আবার এই বলে মনকে সান্ত্বনা দেয় , “কাঁদিস কেন ! আহ্লাদীকে   কে তুই এই ভাবে মানুষ করতে পারতিস ? পারতিস না ত !  তবে তোর দুঃখ কিসের ? কিন্তু মন মানতে চায়না। ”
লক্ষ্মীর কিছু কিছু আচরণ ইপ্সিতার চোখে পড়ে । ও বোঝে লক্ষ্মী ক্রমশ তার মেয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে । সে ভয় পায় যদি মেয়েটাকে চুরি করে নিয়ে পালায় ! হায়রে পোড়া কপাল এই দ্বন্দ্বে ছেড়ে-দিয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বর তাদের দুই মা’কে  আর মুখ টিপে হাসছেন । ইপ্সিতা নিজের সন্দেহে নিজেই লজ্জা পায়। ছিঃ ! একি ভাবছে সে ! সে না শিক্ষিতা । একজন অশিক্ষিতার মতন সন্দেহ করতে তার লজ্জা করেনা। 
এই টানা পড়া দুজনের মনেই চলতে থাকে।

                                         --৩—

  বেশ কিছুদিন এইভাবে চলতে থাকে । এরমধ্যে আহ্লাদী বড় হচ্ছে। ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কমলেশ ইপ্সিতা দুজনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে এসেছে তাকে। এখন তার স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান । সারাদিন লক্ষ্মীর কেটে যায় মেয়ের কাজ করে এবং ইপ্সিতার ঘরের কাজ করে। লক্ষ্মী মনের আনন্দে সব কাজ করে। তার মেয়ে বড় ঘরে মানুষ হচ্ছে এটা তার কাছে এক স্বপ্ন। তাকে ত তার মা বাবা ঘাড় ধরে এক জল্লাদের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন । অবশ্য মা বাবার দোষ নেই সব তার অদৃষ্টের দোষ।
এরমধ্যে লক্ষ্মীর স্বামীর কিছু ধার দেনার জন্য টাকার প্রয়োজন হয় । বারে বারে লক্ষ্মীকে বলে ইপ্সিতার কাছ থেকে টাকাটা আনতে কিন্তু লক্ষ্মী কিছুতেই রাজি হয়না। বলে তোমার মেয়েকে ওরা ভালো ভাবে মানুষ করছে আবার তোমার মদ গাঁজা খাওয়ার টাকা দেবে কখনই নয়। কিসের জন্য  তোমার অত টাকার প্রয়োজন শুনি !

এ কথা শোনার পর মণ্টা (লক্ষ্মীর স্বামী) তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। বলে কি বললি আমার মুখের ওপর চোপা । লক্ষ্মীকে মার ধর করে । বলে টাকা না আনলে আমার ঘরে ঢ়ুকবিনা । ওখানেই থাক।

-      লক্ষ্মী বলে তবে তাই হবে কে তোমাকে গায়ে গতরে খেটে পুষবে ? সারা জীবন শুষে খেয়েছ। আমার কথা কোনোদিন ভেবে দেখেছ আমি কি খাই কেমন ভাবে তোমার সংসার   চালাই?

       পরে নানান ধমক চমকে লক্ষ্মী ভয় পায় এবং ইপ্সিতাকে ১০,০০০ টাকা চেয়ে বসে ।
ইপ্সিতা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে এত টাকা তার কিসের জন্য প্রয়োজন ।
লক্ষ্মী বলে তার বর ধার করেছে কোথায় কি ব্যবসার জন্য তাই জন্য চাইছে ।

-      কিসের ব্যবসা ?

-      জানিনা-গো দিদি আমি মুখু সুক্ষু মানুষ ওই ব্যবসার কথা কি করে জানবো বল ! তা ছাড়া আমি ত তোমার কাছেই সারা দিন থাকি না কি বল । থাকি ত !

-      তা ঠিক তবুও তোর জানা উচিৎ । এতোগুলো টাকা নিয়ে ও হয় মদ গিলবে নয় বাজে যায়গায় যাবে ।

-      বরের গুণকীর্তনের  কথা আর কি বলবে ? বলে ঠিক আছে  আমি বলে দেব ওকে অন্য জায়গায় চাইবে।

-      না না তা নয় তবে একটা সন্দেহ ত হয় বল।

-      কি করি বল দিদি সব ই আমার অদৃষ্ট । তোমরা আমার মেয়েকে দত্তক নিয়ে ভালো ভাবে মানুষ করছ তা কি ওই জল্লাদ টা জানে ? সে তার নিজের সুখ আর ফুর্তি তে ব্যস্ত । আমি গতর খাটিয়ে নিজে খাবো আবার ওকে খাওয়াবো । একটা যায়গায় কি কাজ করত সেখানেও কি গণ্ডগোল করেছে। ইউনিয়নের লিডার হয়েছে । ব্যাস কাজটা গেল চলে। এখন বলে ব্যবসা করবো । আমি কি করি বলতে পারো দিদি বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। না দিদি তুমি টাকা দিও না। একবার দিলে ও পেয়ে বসবে । এমনিতেই ত আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার মেয়েটা এখানে ভালো ভাবে মানুষ হচ্ছে ওর কু নজর লেগেছে এবার আমার মেয়েটার ওপর ।

-      ঠিক আছে ঠিক আছে তুই যা আহ্লাদীর স্কুল থেকে আসার সময় হয়ে গেল যা গিয়ে নিয়ে আয়।

-      যাই গো দিদি  বলে চোখ পুঁছতে পুঁছতে লক্ষ্মী চলে যায়।




                                   --- ৪ ---

মণটা তার বন্ধুদের সাথে সুরা পানে মসগুল। বন্ধুদের বলে বুঝলি , বৌটা আমার এ.টি.এম  মেশিন। পড়াশুনো করেনি কিন্তু বেশ রোজগার করছে। আমার ছোট মেয়েটাকে বড়লোকের ঘরে মানুষ করাচ্ছে। সে এখন ইংরেজি শিখেছে। টক টক করে অনেক ইংরেজিতে কবিতা আওড়াচ্ছে । আমার বৌ ত ওর আয়া রে। মেয়ের ‘আয়া মা’ । শুনেছিস কোনদিন নিজের মেয়ের আয়া হয় কোন মা। বলে হেঁসে কুটিপাটি খায়। বৌকে বলেছি ১০,০০০ টাকা আনতে নাহলে ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।

পিন্টু , মনটা র সাগরেদ বলে সেকিরে বৌদি চলেগেলে খাবি কি? তোর ত রোজগার পাতি কিছু নেই । 

-      সেই জন্যই ত বলেছি টাকা আন তবেই ঘরে থাকবি ।

-      কিন্তু বৌদি যদি সত্যি চলে গিয়ে ওদের বাড়িতে থাকে তখন তুই কি করবি ?

-      দূর আমার আরও দুটো মেয়ে আছে না । তারা ত স্কুলে পড়ে । তাদের ছেড়ে ও যাবে না । আমি জানি । ও ঠিক টাকা আনবে । দেখিস এই বলে গ্লাসের বাকিটুকু গলাধঃকরণ করে। 

-      বলছিস গুরু। একটু চরণামৃত দে মাইরি । গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। বৌদি তাহলে  বড়ই ফাঁদে পড়েছে বল।

-      হ্যাঁ । আমার বুদ্ধির কাছে ও পাত্তা পাবে ? কিসসু করতে পারবেনা দেখে নিস।  আনবে না ওর ঘাড় আনবে। আজ বাড়িতে আশুগ দাঁড়া । ওর এক দিন কি আমার এক দিন।
-      চল গুরু রাত অনেক হল চল যাই।
-      দূর মোটে সোয়া আটটা বাজে। তুই দেখছি এই টুকুতেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছিস। তবে হ্যাঁ ওর আসার সময় হয়ে গেল।
  

স্কুল থেকে আসার পর আহ্লাদী ইপ্সিতার কাছেই থাকে। ঘরেই ওর বেশি সময় কাটে। বাইরে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ছাড়ে না ইপ্সিতা । সকলের নানা প্রশ্নে মেয়েটার মনে যদি কিছু তার কু প্রভাব পড়ে তাই ইপ্সিতা ওকে বাড়িতে ডল হাউস , বার্বি ডল ইত্যাদি কিনে দিয়েছে যাতে ও বাড়িতে থাকতে চায়।
লক্ষ্মী, বাড়ির সমস্ত রান্না বানা সেরে আহ্লাদীকে নিয়ে ঘরে এনে ওকে খাইয়ে দাইয়ে ইপ্সিতার  ঘরে ছেড়ে আসে।  ইপ্সিতা দিদি কিছু খাবার দিয়ে ছিল লক্ষ্মীর দুই মেয়ের জন্য। সবসময় ইপ্সিতা বলে ওই মেয়ে দুটোর কি হবে কে জানে ?
লক্ষ্মীর প্রায় দিন ই  বাড়ি ফিরতে সাড়ে আটটা নটা হয়ে যায়। 

-      লক্ষ্মী বলে যা অদৃষ্টে আছে তাই হবে দিদি। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করছি যাতে ওরা মানুষ হয়। ওরা যতদূর পড়ছে পড়ুক । তুমি ত আছো দিদি। আমাকে একটু সাহায্য করবেনা ওদের পড়া শুনোর জন্য । কি গো করবে ত ! বলে ইপ্সিতার মুখের দিকে তাকায় । 

-      নিশ্চয়ই করব । কেন করবোনা। আমি চাই ওরা পড়ে মানুষ হোক । দিদি নাম্বার ওয়ানে  দেখছিসনা কত তোদের মতন মেয়ে স্বরোজগারক্ষম হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসার চালাচ্ছে আবার রোজগার ও করছে। সরকার তোদের জন্য রোজগারের পথ অনেক খুলে রেখেছেন। তুই এক কাজ করবি তোর দুই মেয়েকে কিছু হাতের কাজ শেখা। দাঁড়া আমাদের ওয়ার্ডের কর্পোরেটারের সঙ্গে কথা বলে দেখব আমি।  

-      কোথা থেকে টাকা পাবো দিদি ? ওরা সকলে টাকা নাহলে কিছু করেনা গো দিদি । গরিবের দুঃখ কেউ শোনেনা। 

-      কে বলল কেউ শোনেনা। তুই গিয়েছিস ওদের কাছে?

-      তবে আমার একটা কিছু বেশি রোজগারের ব্যবস্থা করনা গো দিদি । আমি রাত জেগে কাজ করতে রাজি । তোমার সব কাজ সেরে আমি যাবো । আমার মেয়ে দুটোকে মানুষ করতে হবে গো দিদি। ওরা বড় দুঃখী । এরকম বাপের মেয়ে হওয়া পূর্ব জন্মের পাপ ।

-      যত বাজে কথা বলিস । পূর্ব জন্ম কি রে ? তুই দেখেছিস পূর্ব জন্ম ! ও সব বাজে কথা । দাঁড়া ভগবান সহায় হলে সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। ভালোকথা তুই সেলাই জানিস ?

-      না তবে শিখে নেব । তুমি দেখ আমার জন্য কোন শিক্ষানুষ্ঠান আমি ঠিক সেখানে গিয়ে শিখে নেব। 

-      ঠিক আছে আমি কথা বলে দেখব ।

ইপ্সিতার সঙ্গে ওদের কাউন্সিলার আর কর্পোরেটের ভালোই চেনা শোনা আছে । ওনারা এই বিষয় কিছু সুরাহা করতে পারবেন বলে মনে হয়। কর্পোরেটারের কাছথেকে ‘কণ্যাশ্রী ’   যোজনায়  সম্পৃক্ত  অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে লক্ষ্মীর দুই মেয়ের পড়ার জন্য কিছু আর্থিক সুরাহা করতে পারলে ওর অনেকটা উপকার হয় । কর্পোরেটারের অনুমোদনে ওরা  দুজনেই কন্যা-শ্রীর সরকারী সাহায্য আবেদন করে । রাজ্যে গরিব জনসাধারণের জন্য সরকার অনেক যোজনা করছেন । তার মধ্যে কণ্যাশ্রী  একটা।  
এমনিতেই লক্ষ্মীর মেয়ে দুটোই ভালো পড়াশুনো করে। আসলে গরিবের ঘরের মেয়েরা  আজকাল ভালো পড়ে কারণ ওরা ছোট বেলা থেকেই আর্থিক অনাটনে ভোগে দুবেলা দুমুঠো খাবার পায়না সেটাই ওদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
লক্ষ্মী ঘরে ফেরার পর তুমুল কাণ্ড বাঁধে । মণ্টা  বারে বারে এক কথা জিজ্ঞাসা করে লক্ষ্মী টাকা চাইলো না চাইলো না। লক্ষ্মী কোন কথার জবাব না দিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে । ও জানে মন্টা এই সময় নেশা করে এসেছে কিছু বললে তুমুল কাণ্ড লাগাবে।
এইসময় মণটা ক্ষুব্ধ হোয়ে বলে টাকা না আনলে ঘর-থেকে বেরিয়ে যা । লক্ষ্মী মেয়ে দুটোর হাত ধরে বেরুতে যাচ্ছিল মণ্টা বাধা দিয়ে বলে তুই একা যা ওদের কেন নিচ্ছিস?
কিন্তু মেয়ে দুটো মায়ের সংগে যেতে চাইলো । তারা সাফ তাদের বাবাকে জানিয়ে দেয় তাদের মা যেখানে যাবে তারা তার সংগে সেখানেই থাকবে।   লক্ষ্মী  জানে ওর সঙ্গে বচসা করে লাভনেই । তারচেয়ে আজকের দিনটা দিদির কাছে থেকে ওর মায়ের কাছে চলে-যাবে। চৌকাঠ পেরুনোর সময় লক্ষ্মীকে মণ্টা জোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে লক্ষ্মী উঠনে পড়ে যায় এবং কপাল ফেটে রক্ত ঝরে। লক্ষ্মী জোরে চিৎকার করে বলে মেরে ফেলল  তোমরা কেউ বাঁচাও এই জল্লাদের হাত থেকে আমাকে।
এরমধ্যে  পাড়ার লোকজন এসে পৌঁছোয় । মণ্টাকে সকলে গালি গালাজ করে। মণ্টা চুপসে যাওয়ার বস্তু নয় । সে ফুঁসে ওঠে আমার বাড়িতে তোরা কে রে ?
মেয়েগুলো তার স্বরে চিৎকার করে এর প্রতিবাদ করে । তারা যথেষ্ট নির্যাতন চোখের সামনে দেখছে । পাড়ার ছেলেদের বলে বাবা প্রায় ই মাকে মারধোর করে ঘরে অশান্তি করে । আমরা আর এখানে থাকব না। মামার বাড়ি চলে যাব।
মণ্টা চেঁচিয়ে উঠে বলে , কি বললি ? কি বললি ? মামার বাড়ি ! হা হা হা ওরে তোদের মামার বাড়ি থাকলে ত যাবি । 
- তাহলে অন্য কোথাও চলে যাবো কিন্তু তোমার মতন বাবার কাছে থাকবনা । আমরা জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছি তুমি মাকে অকারণে মার। মা মুখ বুঝে সহ্য করে আমাদের মুখ দেখে।
- ওরে তোদের ত খুব মুখের চোপা হয়েছে দেখছি। দাঁড়া .....
- না না মেয়েদের গায়ে হাত দেবে না মণ্টা দা । ভালো হবেনা। পাড়ার ছেলেরা এক সংগে চিৎকার করে ওঠে।
- কি করবি তোরা ?
- দেখতে চাও কি করব । 
- পেছনে এক কনস্টেবল সাদা পোশাকে ছিল । সে বলে চলুন আপনি থানায় । ওখানেই এর সমাধান হবে।
- থানায় ! .. থানায় কেন যাবো ? আমি কি চোর না ডাকাত ?
- তারচেয়ে বেশি সাংঘাতিক আপনি । চলুন।
- কিন্তু আপনি কে?
- আমি কে সেটা থানায় গেলেই জানতে পারবেন । বাড়ির স্ত্রী কে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন  সেটাই কি যথেষ্ট নয় আপনাকে থানায় নেওয়ার জন্য। আবার মুখে মুখে তর্ক করছেন  !
- ওরে সব্বাই মিলে ধরত । পালায় না যেন । কনস্টেবল চেঁচিয়ে ওঠে।
- লক্ষ্মী সঙ্গে সঙ্গে চলে এসে বাধা দেয় । দারোগা বাবু এবারের মতন মাফ করুন ওকে। ও রাগের চোটে এমনটি করে ফেলেছে। আর করবেনা ভবিষ্যতে ।
- আপনি কি করে বলছেন ও আর করবেনা বলে ? যে বাবা নিজের পরিবারকে হেনস্তা করে তাদের ভরণ পোষণ এর দায়িত্ব না নিয়ে স্ত্রীকে টাকা আনতে বলে তার মনিবের কাছ থেকে এবং না আনতে পারলে মার ধর করে , সে যে ভবিষ্যতে এমনটি করবে না সেটা হলফ করে কি করে বলতে পারছেন। না ওনাকে থানায় যেতেই হবে। এই বলে মণ্টা কে কনস্টেবল ধরে নিয়ে জান। 
লক্ষ্মী মহা ফ্যাসাদে পড়লো । স্বামীকে কি করে বাঁচাবে কিছু কূল কিনারা পেলনা। 
এই হচ্ছে ভারতীয় নারী। অত্যাচার সহ্য করেও স্বামীর হয়ে তাকে রক্ষ্যা করে তার বিপদে ।
মন্টাকে পুলিস নিয়ে গেল থানায়।
থানায় ওসি মন্টাকে জিজ্ঞাসা বাদের পর চার্জ শিট তৈরি করার বাহানা করেন। বলেন তুই তোর বৌকে প্রায়  মারধোর করিস। আইনত ওটা জামিন অযোগ্য ধারা ৪৯৮-এ  এ কোর্ট চালান করলে কি হবে জানিস? শ্রী ঘরে কমসে কম ৪-৫ বছর কাটাতে হবে। 
লক্ষ্মী থানার ওসি কে বলল সার ওকে এইবারের মতন ছেড়ে দেন । ও আর করবেনা ।
-      ওটা তুই বলছিস। ও কি বলেছে? না না ওকে শ্রী ঘরেই পাঠাব। 

মন্টা সটান ওসির পায়ের তলায় পড়ে বলে চাকরি যাওয়াতে মণটা ভালো নেই দারোগা বাবু । কাঁহাতক বৌয়ের গজ গজানি শুনবো । মনমেজাজ ভালো ছিলনা। ভুল করে ফেলেছি আর হবেনা।
-      না না তোদের মতন ষাঁড় দের আমি চিনিরে । বয়েস ত কম হলনা । তোদের পেটে একটু পড়লেই স্বর্গ দেখিস নিজেকে ইন্দ্র ভাবিস। তোর বৌ না লিখলে হবেনা।
লক্ষ্মী বলে বাবু ওকে ছেড়ে দিন। ভুল করে ফেলেছে।
-      তবে তোরা দুজনে কাগজে সই করে দে। পাড়ার একটা মাতব্বর ছেলে ওসির কানে কানে কি বলে।
      ওসি মাথা নাড়িয় বলেন না না।  
    -  তাহলে ঠিক আছে সার । (ছেলেটি বোঝে ও সব ভয় দেখানোর জন্য ওসি বলছেন)
মন্টা সই করার সময় বলে সার সাদা কাগজে ..... !
-      চুপ যা বলছি তাই কর । বেশি কথা বললে .....!
-      হ্যাঁ সার করছি এই বলে লক্ষ্মী আর মন্টা দুজনেই কাগজে সই করে দেয়।  
দুজনে ফিরে আসে ঘরে।
মন্টা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে মুখ দেখেই লক্ষ্মী টের পেয়েছে। মনে মনে ভাবে ঠিক হয়েছে। এইরকম ওষুধের প্রয়োজন ছিল। তারপর ভাবে আহারে আমার জন্য লোকটার  এত অসম্মান হল।

                               -----৫------

পরেরদিন লক্ষ্মী ইপ্সিতার কাছে বলে দিদি আমার স্বামী কিছু সরকারি সাহায্য পেতে পারে ? ও একটা মটর সাইকেল সারানোর গ্যারেজ করতে চায়।
-      জানিনা । আমাকে ওর বিষয় কিছু বলিস না । তুই যা এখন এখান থেকে।
লক্ষ্মী আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় নিজের কাজে। ১০,০০০ টাকা তে ত গ্যারেজ হবে না। আরও  টাকা লাগবে। তবে ওর কানের দুটো সোনার দুল কি বিক্রি করে দেবে !
পরর দিন লক্ষ্মীকে ওর কানের দুল না থাকা অবস্থায় দেখে  ইপ্সিতা চমকে ওঠে ।
-      কিরে  তোর কানের দুল দুটো কোথায় গেল?
-      ও কিছুনা ঘরে রেখে এসেছি।
-      ঘরে রেখে এসেছিস মানে ! তোর বর ত ওগুলো বেচে দেবে ।
-      না দিদি কালকের পর থেকে ওর মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। আমায় বারে বারে বলছে আমায় মাফ কর লক্ষ্মী আমি তোর ওপর খুব অনাচার অত্যাচার করেছি।
-      ওরে ওরা কুমীরের জাত বুঝলি । মটকা মেরে পড়ে থাকবে সময় বুঝে ঠ্যাং ধরে জলে নামিয়ে গিলে খাবে। ওদের বিশ্বাস করিস না । আর তুই ই বা কি করবি ? তোদের মতন হাজার হাজার মহিলা এই দেশে এই রকম অত্যাচারিতা হয়ে ঘরের এক কোনে পড়ে থাকে । গায়ে গতরে খেটে ঘরের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েও তাদের নিস্তার নেই । ভারতবর্ষে হিন্দু নারীদের এটাই মহানতা । কিন্তু একে আমি প্রশ্রয় ছাড়া কি বলব বল।
-      না দিদি এখন আর ওরকম করবেনা । পুলিশের ভয় ধরে গিয়েছে। তা ছাড়া ওই কাগজে সই করিয়ে রেখেছেন না দারোগা বাবু।
-      বলিস কিরে ? কি লেখা ? শুনি।
-      আমি কি করে বলব বল আমি কি লেখা পড়া জানি।
-      তা বটে । তবে চিন্তার বিষয়।
-      দিদি ওকে একটা কাজে লাগিয়ে দাওনা । ও গাড়ি চালাতেও পারে ওর লাইসেন্স ও আছে । 
-      দাঁড়া কমলেশ আসুক ওকে বলে দেখি কি করা যেতে পারে।
-      দেখনা দিদি তোমার উপকারে ও যদি কিছু কাজ পায় ।
-      আমি কিছু নির্ভর প্রতিশ্রুতি দিতে পারছিনা।   

রাতে কমলেশকে গত কালের সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণী দিয়ে ইপ্সিতা বলে ওই লক্ষ্মীর স্বামী মন্টার কিছু কাজের সুবিধে হতে পারে কিনা । ও নাকি ড্রাইভিং জানে। লাইসেন্স ও  আছে।
-      আগে বলনিত। দেখি আমাদের অফিসের গাড়ির ড্রাইভারের প্রয়োজন। আমি ত ড্রাইভার নেই বলে ট্র্যাভেলস থেকে গাড়ি নিয়ে টুরে যাই। অনেক সময় ডিউটির অসুবিধে হয়।  তবে হেড অফিস থেকে পারমিশন না পেলে হবে না।  ওই টেম্পোরারি ড্রাইভার । 
-      তাই দাওনা । কিছু সুরহা হবে।
-      হ্যাঁ তা হবে ।
-      কাল ওকে ডেকে পাঠাও । সকাল বেলায় আসে যেন। আমি বেরুবার আগে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
-      ঠিক আছে লক্ষ্মী আসুক ওই নিয়ে আসবে। কিছু যদি কাজের সুরাহা হয় ও আর লক্ষ্মীকে হয়রান করবেনা।
-     ওই শ্রেণীর লোকেরা কাজ যেনেও কিছু না করে পায়ের ওপর পা দিয়ে বৌ কে খাটিয়ে খেতে ভালোবাসে। যখন বিপাকে পড়ে তখন বাবাজীবন রা কাজে মন দেয়। এদের মানসিকতা বড় বিচিত্র বুঝলে ইপ্সিতা ।
-    তা হবে আমার ওই বিষয় জ্ঞান কম।
-
সকালে লক্ষ্মী এলে ইপ্সিতা বলে ওর স্বামী মন্টাকে ডেকে আনতে । লক্ষ্মী বলে ও সকাল সকাল কোথায় কাজের সন্ধান পেয়ে চলে গিয়েছে। জানিনা কখন আসবে।
-    শোন কথা ! এই বললি ওর কাজের প্রয়োজন বলে। 
-    আমি কি করে জানব বল ?
-    হুম ম । কমলেশ চলে যায় টিফিন নিয়ে ।
লক্ষ্মী বিকেলে ইপ্সিতাকে খবর দেয় মন্টা এক মালিকের  ট্যাক্সি চালাচ্ছে ‘গতিধারা’ না কি নাম বলল ?
-      বাঃ সেত ভালো হল রে । কোলকাতাতে গতিধারা ট্যাক্সি অনেক চলে। তবে ত ঠিক আছে। তুই চিন্তা করছিস কেন?
-      আমি কি ওসবের কিছু বুঝি দিদি।
-      হ্যাঁ তা যা বলেছিস। এবার বোধ হয় তোর সুদিন এলো লক্ষ্মী ।
-      তাই যেন হয় গো।

ইপ্সিতা নিজের ঘরে চলে গিয়ে আহ্লাদীর পড়াশুনো দেখতে যায়। আহ্লাদী মায়ের কাছে তার স্কুলের সমস্ত পড়াশুনো হোম ওয়ার্ক করে খেলতে বসে।
লক্ষ্মী যথাযথ ঘরের সমস্ত কাজ কর্ম করে। রাতের রান্না সেরে ঘরে যায় । যাওয়ার আগে আহ্লাদীকে একটু আদর করে যায় । ওকে দেখে চোখ ভরে যায় জলে। দুহাত ভরে আশীর্বাদ করে চোখ পুঁছে ।
-      আহ্লাদী লক্ষ্মীর হাবভাব দেখে আশ্চর্য হয় । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি আমায় দেখে ওরকম কাঁদো কেন গো লক্ষ্মী পিসী ।
-      না না ওই রান্না করতে গিয়ে একটু লংকা লেগেছিল ওই হাত চোখে দিয়েছি    ব্যাস চোখ জ্বালা করছে আর জল বেরুচ্ছে।
-      ও তাই বল। আমি ভাবলাম আবার বুঝি কিছু হল ?
-      ইপ্সিতা আহ্লাদীকে নিজের কাছে ডাকে।
-      যাচ্ছি গো যাচ্ছি , লক্ষ্মী পিসীর সংগে একটু কথা বলছি । বাবা আমাকে না দেখলে মায়ের এক দণ্ড চলেনা । বুঝেছ লক্ষ্মী পিসী ! বলে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
-      লক্ষ্মী  আর ইপ্সিতা দুজনেই ওর পাকা পাকা কথা শুনে হেঁসে কুটিপাটি খায়।
-      যাইগো দিদি অনেক বেলা হল ।



                         ------ ৬ -----


ঘরে পৌঁছে শান্তির নিঃশ্বাস নেয়। আহ্লাদীর কথা মনেকরে হেঁসেই চলে লক্ষ্মী  । আজ অনেক দিন পর লক্ষ্মী প্রাণ খুলে হাঁসে । 
এর মধ্যে মন্টা এসে পৌঁছয় গাড়ি নিয়ে । বলে চল সবাই মিলে ঘুরে আসি । 
লক্ষ্মী অনেকদিন কলকাতা যায়নি । নিজের কাজ নিয়ে এতই ব্যস্ত ঘোরার সময় হয়না। মনটার পরিবর্তন দেখে আশ্চর্য হয়। বলে সত্যি বেড়াতে নিয়ে যাবে। এই রাতে কোথায় যাবে ?
-      না যাওয়ার কি আছে চল যাই । লক্ষ্মীকে জড়িয়ে ধরে বলে আজ ওই বিয়ের শাড়িটা বার কর দেখি । ওটা পরলে কেমন লাগে তোমাকে।
-      বাবা । কোথায় যাবো আমি ! আদিখ্যেতা দেখে হাঁসি পায় আমার । কি হয়েছে বলত ?
-      বেশ কিছু টাকা রোজগার হয়েছে আজ। তোমাকে নিয়ে তাই ফুর্তি করতে যাবো   চল। মেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে দাও।
-      না মেয়েদের না নিয়ে যাবো না। ও বেচারার কোথাও যায়না। ওদের ও ত ইচ্ছে হয়।
-      আজ আমার আর তোমার ইচ্ছেই সব । জানোনা   আজ কি ?
       আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ।
-      ও মা তাই । দেখ আমি ভুলেই গিয়েছি । তুমি মনে রেখেছ। আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে ?
-      মনটা লক্ষ্মীকে আজ নতুন ভাবে পেতে চায় । যাতে কোন খাদ থাকবেন তাদের ভালোবাসার । দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে যেন কত দিন তারা বিরহের দিন কাটিয়েছে ।
 অভাবের সংসারে একটার  পর একটা মেয়ে জন্ম তার মনকে বিষিয়ে তুলেছিল কিন্তু সে ত জানেনা মেয়ে জন্মর জন্য নারীর কোন ভূমিকা নেই। মেয়ে জন্মর জন্য পুরুষ ই দায়ী । এটা খুব ই সহজ কথা কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ এই সামান্য কথাটা জানেনে বলে অনেক সংসারে অশান্তির ঝড় বয়ে যায়।
লক্ষ্মী  মনটাকে বলে ও ঘরে মেয়েরা আছে ছাড় আমাকে। ওরা বড় হচ্ছে কি শিখবে আমাদের কাছথেকে ?
লক্ষ্মী  পরিতৃপ্ত নয়নে তার স্বামীকে নতুন ভাবে পেয়ে ভগবানকে জোড় হস্তে প্রণাম করে বলে হে ঠাকুর আমার সংসারে এই রকম শান্তি বজায় রাখ ঠাকুর। আমি এবার খুব খুশি ঠাকুর ।
মনটা  লক্ষ্মীকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগোয় । পেছনে তার দুই মেয়ে । বাবার পরিবর্তনে তারাও খুশি। ইপ্সিতা মাসি শুনলে নিশ্চয় খুশী হবে।  
( ৪২৮৬ শব্দ )
Posted by গল্পগচ্ছ at 11:42 PM No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Newer Posts Older Posts Home
Subscribe to: Posts (Atom)

Feedjit

Flag Counterikko trader mobile

Feedjit

Total Pageviews

Pages

  • Home

Blog Archive

  • ►  2024 (11)
    • ►  November (1)
    • ►  March (4)
    • ►  January (6)
  • ►  2021 (10)
    • ►  July (2)
    • ►  May (6)
    • ►  March (1)
    • ►  February (1)
  • ►  2020 (31)
    • ►  December (1)
    • ►  November (1)
    • ►  October (4)
    • ►  September (2)
    • ►  August (5)
    • ►  July (4)
    • ►  May (6)
    • ►  April (7)
    • ►  February (1)
  • ▼  2019 (8)
    • ▼  December (4)
      • পিঞ্জরে অচিন পাখি___________________ অন্তরা ঘোষ ...
      • পিঞ্জরে অচিন পাখি___________________ অন্তরা ঘো...
      • পিঞ্জরে অচিন পাখি ___________________ অন্তরা ...
      • পিঞ্জরে অচিন পাখি__________________  অন্তরা ...
    • ►  February (2)
      • অণু গল্প অধ্যবসায় ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী । গল্প...
      • চৌকাঠ ত্রিভুবন জিত মুখার্জী
    • ►  January (2)
      • গতানুগতিক কর্ম ব্যাস্ততার মধ্যে যারা জীবন অতিবাহি...
      • বড় গল্প ' আমার হিয়ার মাঝে ' ত্রিভুবন জিৎ মুখা...
  • ►  2018 (27)
    • ►  December (1)
    • ►  November (5)
    • ►  October (3)
    • ►  September (1)
    • ►  August (1)
    • ►  July (2)
    • ►  June (9)
    • ►  March (3)
    • ►  February (2)
  • ►  2017 (22)
    • ►  December (1)
    • ►  November (1)
    • ►  September (1)
    • ►  August (1)
    • ►  July (7)
    • ►  June (6)
    • ►  May (2)
    • ►  April (1)
    • ►  March (2)
  • ►  2016 (9)
    • ►  July (3)
    • ►  June (1)
    • ►  January (5)
  • ►  2015 (77)
    • ►  December (3)
    • ►  November (1)
    • ►  October (2)
    • ►  September (5)
    • ►  August (9)
    • ►  July (5)
    • ►  June (13)
    • ►  May (14)
    • ►  April (7)
    • ►  March (7)
    • ►  February (3)
    • ►  January (8)
  • ►  2014 (56)
    • ►  December (9)
    • ►  November (2)
    • ►  October (2)
    • ►  September (8)
    • ►  August (6)
    • ►  July (2)
    • ►  June (7)
    • ►  May (4)
    • ►  April (6)
    • ►  March (5)
    • ►  February (5)
  • ►  2013 (49)
    • ►  December (2)
    • ►  November (5)
    • ►  October (4)
    • ►  September (4)
    • ►  August (10)
    • ►  July (5)
    • ►  June (6)
    • ►  May (4)
    • ►  March (2)
    • ►  February (3)
    • ►  January (4)
  • ►  2012 (26)
    • ►  December (3)
    • ►  November (7)
    • ►  September (2)
    • ►  August (6)
    • ►  July (5)
    • ►  June (1)
    • ►  May (1)
    • ►  March (1)

Followers

Popular Posts

  • কেয়া চক্রবর্তী মৃত্যু - হত্যা ? দুর্ঘটনা ? আত্মহত্যা ?
       কেয়া চক্রবর্তী মৃত্যু - হত্যা ? দুর্ঘটনা ? আত্মহত্যা ?      অঞ্জন দত্ত  ১৩ মার্চ রবিবার সকাল দশটায় পোর্ট পুলিশের লঞ্চ সাঁ...
  • যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ ও ৯ ম (শেষপর্ব )
    যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম   ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী শেষ পর্ব সুদীপ্...
  • তথ্য সূত্র – কলিকাতা দর্পণ / রাধারমণ মিত্র
             কথা কলকাতাঃগোরুর গাড়ি থেকে জেটযুগ কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা   : গোরুর গাড়ি থেকে জেট যুগ আমাদের স্কুল-কলেজে...
  • প্রেমের গল্প যন্ত্রমানব@ভালোবাসা.কম। ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০১.০৭.২০১৭ /
          শব্দের মিছিল   |   জুন ৩০, ২০১৭   |   গল্প Views: 28 “আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে একতারা তার দেয় কি সাড...
  • সানির প্রেম কাহিনী ::. Soncita L Nova
    :: সানির প্রেম কাহিনী ::. সানির প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে খুব সকালে , যদিও ঘুম ভেঙ্গে দেখে সকাল ১১ টা বেজে গেছে   । ফ্রেশ হবার পর এক গ্লাস আ...
  • =অপরাধীর পেছনে= (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) -বিভূতি চক্রবর্তী
    = অপরাধীর পেছনে= ( অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) - বিভূতি চক্রবর্তী ( ১) শুধুমাত্র তৎপরতা ,' পুলিশ-কুকুরের ' কেরামতি নয় , নয় কোন...
  • নেতজী সুভাষ চনদ্র বসু মৄত্যু রহস্য সুশানত কর।
    সুভাষ চন্দ্রঃ মৃত্যু নিয়ে এক ধ্রুপদি শিল্পের স্রষ্টা ( লেখাটি বেরিয়েছিল আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে গোপাল বসু সম্পাদিত তিনসুকিয়ার...
  • শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ ।
        শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ । ...
  • “ছোট গল্প” যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার
        “ছোট গল্প” যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম  ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার / “আমার দোসর যে জন ওগো তার...
  • রমলা বৌদি ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /২৭.০২.২০১৪
    রমলা বৌদি   ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /২৭.০২.২০১৪ রমলা বৌদি আমাদের পাসের বাড়িতেই থাকেন। সংসার বলতে শ্বশুর  , শ্বাশুডী এক ননদ , রম...

mtribhuban.blogspot.com.com

Use Avro Software to post in Bengali font and download the same from http://www.omicronlab.com. অভ্র সফট্ওয়ার ব্যবহার করুন বাংলা ফন্ট এ লিখতে। ডাউনলোড করুন এই ওয়েব সাইট্ থেকে http://www.omicronlab.com.

গল্প হলেও সত্যি

  • কেয়া চক্রবর্তী মৃত্যু - হত্যা ? দুর্ঘটনা ? আত্মহত্যা ?
       কেয়া চক্রবর্তী মৃত্যু - হত্যা ? দুর্ঘটনা ? আত্মহত্যা ?      অঞ্জন দত্ত  ১৩ মার্চ রবিবার সকাল দশটায় পোর্ট পুলিশের লঞ্চ সাঁ...
  • যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ ও ৯ ম (শেষপর্ব )
    যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম   ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী শেষ পর্ব সুদীপ্...
  • তথ্য সূত্র – কলিকাতা দর্পণ / রাধারমণ মিত্র
             কথা কলকাতাঃগোরুর গাড়ি থেকে জেটযুগ কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা   : গোরুর গাড়ি থেকে জেট যুগ আমাদের স্কুল-কলেজে...
  • প্রেমের গল্প যন্ত্রমানব@ভালোবাসা.কম। ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০১.০৭.২০১৭ /
          শব্দের মিছিল   |   জুন ৩০, ২০১৭   |   গল্প Views: 28 “আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে একতারা তার দেয় কি সাড...
  • সানির প্রেম কাহিনী ::. Soncita L Nova
    :: সানির প্রেম কাহিনী ::. সানির প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে খুব সকালে , যদিও ঘুম ভেঙ্গে দেখে সকাল ১১ টা বেজে গেছে   । ফ্রেশ হবার পর এক গ্লাস আ...
  • =অপরাধীর পেছনে= (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) -বিভূতি চক্রবর্তী
    = অপরাধীর পেছনে= ( অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) - বিভূতি চক্রবর্তী ( ১) শুধুমাত্র তৎপরতা ,' পুলিশ-কুকুরের ' কেরামতি নয় , নয় কোন...
  • নেতজী সুভাষ চনদ্র বসু মৄত্যু রহস্য সুশানত কর।
    সুভাষ চন্দ্রঃ মৃত্যু নিয়ে এক ধ্রুপদি শিল্পের স্রষ্টা ( লেখাটি বেরিয়েছিল আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে গোপাল বসু সম্পাদিত তিনসুকিয়ার...
  • শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ ।
        শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ । ...
  • “ছোট গল্প” যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার
        “ছোট গল্প” যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম  ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / ১১.৪৮ / খৃষ্ট মাস / বৃহস্পতিবার / “আমার দোসর যে জন ওগো তার...
  • রমলা বৌদি ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /২৭.০২.২০১৪
    রমলা বৌদি   ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /২৭.০২.২০১৪ রমলা বৌদি আমাদের পাসের বাড়িতেই থাকেন। সংসার বলতে শ্বশুর  , শ্বাশুডী এক ননদ , রম...

About Me

গল্পগচ্ছ
View my complete profile
Awesome Inc. theme. Theme images by molotovcoketail. Powered by Blogger.