চৌকাঠ
ত্রিভুবন
জিৎ মুখার্জী
এই মেয়েকে ঘরের চৌকাঠ পেরতে
দেবনা l এই অলক্ষণা মেয়েকে নিয়ে এখুনি ওর বাপের বাড়িতে রেখে আয়... মা গর্জন করে
ওঠেন l
বরন করা ত দুরে থাক এই
অপমান সূচক কথায় ছেলে বৌ দুজনাই বিব্রত হয়ে পড়েন l বৌমা মায়ের পায়ে হাত দিয়ে
প্রণাম করতে যান কিন্তু মা পা সরিয়ে নেন l এতে বৌমার কি দোষ বলুন ত!
এ আমার স্ব চক্ষে দেখা এক
ঘটনার বিবরণী:-
আমাদের পাড়ার সিদ্ধার্থ
বাবুর গিন্নী স্নেহলতা দেবীর ভারিক্কি মেজাজ l তিনি পারলে হাতে মাথা কেটে ফেলতে
পারেন l ঝি, চাকর, কর্তা বাবু সকলে ওনাকে ভয় পান l নামেই স্নেহলতা কিন্তু কাজে
উগ্র চণ্ডী মা ছিন্নমস্তা l রাগ হলে হাতের কাছে যা পারেন ছোড়েন l সেই বাড়ির ছেলে
হয়ে কিনা পিন্টুদা সদগোপের কন্যা অর্চনা কে বিয়ে করে ঘরে তোলার সাহস করে! যার ওরকম
খাণ্ডারনি মা সে ভিন জাতে বিয়ে করতে সাহস করে কি করে? ব্রাহ্মণ সন্তানের সংগে
সদগোপের কন্যা!!
অর্চনা উচ্চ শিক্ষিতা স্কুল
টিচার l সারাদিন স্কুলে ছেলে মেয়েদের জাতি প্রথার বিরোধে শিক্ষা দেয় কিন্তু এখন
নিজে বিপাকে পড়েছে l
নাঃ হারলে চলবে না তাকে
জিততেই হবে l এখন ও পৃথিবীতে এইরকম মানুষের অভাব নেই যারা মানুষের চেয়ে জাত পাত কে
প্রাধান্য দেয় l তবুও এদের ভ্রান্ত ধারনা ভাঙতে হবে তা নাহলে তার এই পড়াশুনো বৃথা।
তাই খুব ধীর স্থির ভাবে বলে, মা, আপনি ত স্নেহময়ী করুণাময়ী আপনার সেবা করার সুযোগ
দিন কোন ভাবেই আমি সংসারের কাজে অবহেলা করব না এটা আমার প্রতিশ্রুতি l
- কি ! আমার ঘরে না ঢুকতেই
আমাকে উপদেশ l এখুনি বেরিয়ে যাও l এ ঘরে তোমার ঠাঁই নেই l
- অর্চনা মনে মনে ভাবল এ কি
অশিক্ষিত মহিলা! এই যুগে এই রকম মহিলা আছেন? খুব আশ্চর্য হল অর্চনা l
- এই সময় পিন্টুদা মা'কে
বলল, তুমি আমার পছন্দের বৌকে ঘরে ঢুকতে দিলে না মা এটা ওকে নয় আমাকে অপমান করলে l
যদি ও না থাকে তবে আমিও এই ঘরে ঢুকব না l চল অর্চনা আমরা এখুনি এখান থেকে চলে যাই
l যে মা সন্তানের সুখের চেয়ে নিজের জেদ বজায়ের জন্য ঘরের লক্ষ্মী কে বাড়ি থেকে
বেরিয়ে যেতে বলে সে মা' আমার কাছে মৃত l
- কি বললি? তুই আমার ছেলে
হয়ে এই কথা বলতে পারলি বাবা? বলে কাঁদতে শুরু করে দিলেন l
- থাক আর বাবা বলতে হবে না
l আর কাঁদতেও হবেনা l সারা জীবন কি করে ছেলেকে ছেড়ে থাক দেখব। মরে গেলেও এই ঘরে পা
দেবনা l রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে পিন্টুদা l
- একি বলছ তুমি? তুমি না
শিক্ষিত ! মা'কে কেউ এই ভাবে উত্তর দেয় ! উনি কি ভাববেন আমি তোমাকে এই সব বলতে
শিখিয়েছি l আমি এই অশান্তি জানলে কখনই এই বিয়েতে রাজি হতাম না। তুমি শান্ত হও l
মাকে ক্ষমা চাও l আমিও হাত জোড় করে বলছি মা, আপনার আমাকে অপছন্দ ঠিক আছে আমি চলে
যাচ্ছি কিন্তু আপনার ছেলেকে আপনি ফিরিয়ে দেবেন না l আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের
সংসারে অশান্তি হোক l এই বলে চোখ পুঁছল l
- থাক আর আমার মন পাওয়ার
চেষ্টা করনা তুমি l তুমি জাননা আমরা ব্রাহ্মণ l ওর কি মেয়ে জুটত না? কি করে তুমি
সব জেনে শুনে আমার ছেলের গলায় ঝুলে পড়লে?
- ছিঃ। এই অপমানের চেয়ে
এখুনি বেরিয়ে যাওয়া ভালো l ছিঃ ছিঃ এত মূর্খ এই মহিলা মনে মনে ভাবে! এই ঘরে সে
কিছুতেই মানিয়ে চলতে পারবে না l সত্যি তার ই ভুল l সেই ভুলের মাসুল দিতে হবে ।
অর্চনা পা বাড়ায় পেছন ফিরে l
ঠিক সেই সময় এক পুরুষ কণ্ঠ
ভেসে আসে ......
-দাঁড়াও মা দাঁড়াও l এই
বুড়ো বাবাকে ছেড়ে যেও না মা l আমার কন্যা সন্তান নেই.তুমি আমার মেয়ের মতন মা l আমি
বলছি তুমি ঘরে এস মা l আমি অনেক সহ্য করেছি আর পারছিনা l এর একটা বিহিত হওয়ার
প্রয়োজন l
- না বাবা তা হয় না l আমায়
ক্ষমা করবেন l আমি মায়ের অমতে এই চৌকাঠ পেরু-বনা....
পিন্টু তার মা'কে বলে যদি
আমার স্ত্রীর এই বাড়িতে যায়গা নেই তাহলে আমিও চলি l
চৌকাঠ পেরিয়ে না গিয়েই ফেরে
পেছনে l ঘরের ভেতর থেকে বাবার ডাক 'খোকা যেওনা' শুনে স্তম্ভিত হয় পিন্টুদা l
-খোকা যেওনা l দাঁড়াও আমি
বেঁচে আছি.বৌমাকে নিয়ে এস ঘরে l
অর্চনা
যেন ধড়ে প্রাণ পেল l চোখের জল পুঁছে দাঁড়িয়ে রইল l মায়ের অমতে ছেলে বৌকে ঘরে তোলা
কি চাট্টিখানি কথা? তবুও ক্ষীণ আশা l বৌমা ডাক শুনে অর্চনা যেন হাতে স্বর্গ পেল l
তার শ্বশুর মশাই একদম অন্য রকম মানুষ মনেহল l অর্চনার বাবা নেই l সে ছোট থেকেই তার
মা'র আদর্শে গড়া l তার মা তার জন্য অনেক স্বার্থ ত্যাগ করেছেন l সে মনে মনে তার মা
এবং তার স্বামীর জন্মদাত্রী র মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক দেখল l তবুও একটু ক্ষীণ আশা
!!!!! সে কি এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুতে পারবে???? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম ......
No comments:
Post a Comment