পিঞ্জরে অচিন পাখি
__________________
__________________
অন্তরা ঘোষ । পর্ব - ৪
সন্তু একটা সিগারেট ধরিয়ে বলতে শুরু করল "বিন্দা আমার চচেরা ( খুড়তুতো) বোন। এখন ওকে যেমন দেখছিস -- একদম চুপচাপ , গুমসুম ... ও কিন্তু একেবারেই এইরকম ছিল না , বরং খুব হাসিখুশি ছটফটে মেয়ে ছিল। মুখে খই ফুটতো সবসময়। আমি যখন কলকাতা থেকে আসতাম ওর কত যে কথা জমে থাকতো আমার জন্য !
বিন্দা যখন দু'বছরের তখন একটা অ্যাক্সিডেন্টে আমার চাচা চাচি দুজনেরই স্বর্গবাস হয়ে যায়। আমার বাবুজি বিন্দাকে আমার মায়ের কোলে দিয়ে বলে আজ থেকে এই তোমার মেয়ে। বিন্দা সেই থেকে আমার বাবুজি আর মায়ের স্নেহ যত্নে আদরে বড় হয়.. মা বাবুজিকেই ও নিজের বাবা-মা বলে জানে। আমারও খুব আদরের বোন ও। ছোট থেকে সব কিছু আবদার ও আমার কাছেই করত।
আমাদের পাশের গ্রামে আমাদেরই পালটি ঘর ঠাকুর নরেন্দ্র প্রতাপ সিং ছিল বাবুজির দোস্ত। যখন বিন্দা চার বছরের আর চাচাজি'র ছেলে রমেশ তখন বছর দশেকের হবে । তখন দুই বাবুজি মিলে ওদের বিয়ের পাকা কথা বলে রাখে।
ছোট থেকেই বিন্দা আর রমেশ একসাথে স্কুলে গেছে , খেলা করেছে , বড় হয়েছে.. ছোটবেলা থেকেই দুজনের খুব ভাব। বড় হয়ে যখন ওরা জানল যে ওরা একে অপরের বাগদত্তা তখন ওদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হল.. প্রেমে পরিণত হল।
রমেশের বাবার অনেক ক্ষেত খামার আছে। রমেশ চাকরির চেষ্টার সাথে সাথে ক্ষেত-খামারেরও দেখাশোনা করত। বিন্দা যখন ষোলো বছরের , তখন ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল। শ্বশুরবাড়িতে খুব সুখেই কাটছিল বিন্দার জীবন। বিয়ের পর বছর খানেক বিন্দা আমাদের বাড়িতেই ছিল। পরের বছর রমেশ বি. এসে .এফে চাকরি পেয়ে যায়। বছর দুয়েকের মধ্যে ওর পোস্টিং হয় গুজরাটের কচ্ছে। এখনো মনে আছে যেদিন রমেশ চলে যাবে বিন্দার সেকি কান্না !
রমেশ যাওয়ার পর কয়েকদিন খুব মন খারাপ ছিল বিন্দার। রমেশ কিন্তু ওকে নিয়মিত চিঠি লিখত।
মাঝে শুধু দশ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল একবার।
পরের বার মাস খানেক ছুটি নিয়ে আসবে বলে কথা দিয়ে গেল।
সেই থেকে বিন্দা নতুন করে দিন গোনা শুরু করে।
মাস পাঁচ ছয় কেটে যাওয়ার পর রমেশ চিঠিতে জানায় সামনের সপ্তাহে সে আসছে।
খুশিতে বিন্দা আত্মহারা তখন।
রোজ ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখর ওপর পেন্সিল দিয়ে দাগ কেটে দেয়।
একটা একটা করে দিনও কেটে যায়।
শেষপর্যন্ত প্রতিক্ষার দিন শেষ হয়।
সকাল থেকেই বিন্দা রাস্তার মোড়ে বারবার গিয়ে দেখতে থাকত প্রতিটা বাস। এই বুঝি রমেশ এলো!
সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল!
রমেশের দেখা নেই।
উদাস হয়ে আশাই ছেড়ে দিল বিন্দা।মনে মনে ভাবল রমেশ নিশ্চয়ই ভুলে গেছে। ঘরে গুমসুম মেরে চুপচাপ শুয়ে থাকে বিন্দা। এরপর আরও চার দিন কেটে গেল। রমেশের কোনো খবরই নেই। বাড়ির লোকেরাও এবার চিন্তায় পড়ে গেল। কী হল ছেলেটার !
একটা খবর পর্যন্ত নেই ! পাঁচ দিনের মাথায় গ্রামের একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়তে দৌড়তে আমাদের বাড়ি এসে বিন্দাকে খবর দেয় যে রমেশের জীপ
দেখেছে সে। সঙ্গে আরো অনেক মেহমান আসছে। মুহূর্তে খুশির ঝলক বিন্দার চোখে। খুব ইচ্ছে হল ওর সেজেগুজে রমেশের সামনে আসার।
আগত সন্তানের কথা ইচ্ছে করেই চিঠিতে জানায়নি সে । একেবারেই সামনাসামনি বলে রমেশকে চমকে দিতে চায় ।
রমেশের দেওয়া চুমকি বসানোর লাল শাড়ীটা পরল। দুই হাতে ভর্তি কাচের চুড়ি, গলায় মঙ্গলসূত্র, টানা টানা চোখে কাজল,সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে বড় করে টিপ।
রমেশ চুলের বেনুনীতে ফুল লাগানো পছন্দ করত। তাই বাড়ির পিছনের বাগান থেকে সাদা কাঠচাঁপা আর গেঁদুয়া ফুল এনে মাথার চুলে আটকে নিল। আয়নায় নিজেকে দেখে একবার হেসে নিল।
হঠাৎ নিচে অনেক লোকের আওয়াজ ! রমেশ এসে গেছে ! বিন্দা এক ছুটে ওপর থেকে নেমে এসে দেখে উঠোনের মাঝখানে একটা কফিন। বেশ কয়েকজন মিলিটারি পুলিশ চারদিকে দাঁড়িয়ে। বিন্দার চোখ ওদের মধ্যে রমেশকে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ বিন্দা দেখল বাবুজি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মায়ের কান্নার আওয়াজ আসছে ঘরের ভেতর থেকে। কি হল তখনো কিছুই বুঝতে পারছে না বিন্দা। পুলিশরা এবার আস্তে আস্তে কফিনের ঢাকাটা খুলে দিল। ভারতের তেরঙ্গায় ঢাকা রমেশের শরীর ফুলে ফুলে ঢাকা! মিলিটারি পুলিশ অফিসার জানালো ইমারজেন্সি সিচুয়েশন হওয়ায়
ওর ছুটিও নামঞ্জুর হয়ে যায়। পরশু কচ্ছ সীমান্তে হারামী নালাতে নজরদারি করার সময় পাকিস্তানিদের সাথে গোলাগুলিতে একটা গুলি এসে লাগে রমেশের পাজরে। সেই অবস্থাতেও রমেশ গুলি চালিয়ে যায় শত্রুপক্ষের উপর। হঠাৎ শত্রুপক্ষের মেশিনগান থেকে একঝাঁক গুলি এসে রমেশকে ঝাঁঝরা করে দেয়। বিন্দার নাম নিতে নিতেই রমেশ মারা যায়।
শুনে বিন্দা যেন পাথর হয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।
যখনই জ্ঞান আসছিল বারবার রমেশকে খুঁজছিল। শহরের হসপিটালে নিয়ে যেতে হয় বিন্দাকে। বাচ্চাটাও মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
আমি একদম চাইনি আমার আদরের বোনটা এইভাবে সাদা শাড়ি পরে নিরাভরণ হয়ে থাকুক। কিন্তু গ্রামের সমাজ খুব নিষ্ঠুর রে দীপ্ত । ওর হাতের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে দিল, এত ভালোবাসতো বোনটা চুড়ি পরতে ..সিঁদুর মুছে দিল.. সাদা শাড়ি পরিয়ে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিল আমার বোনটাকে।
রমেশের মৃত্যুটা বিন্দা মেনে নিতে পারেনি। তারপর থেকেই ও একদম নির্বাক গুমসুম হয়ে থাকে । কতদিন যে ওর হাসি দেখিনি, ওর চবড় চবড় কথা শুনিনি, ওর আবদার
শুনিনি ! পাথর হয়ে গেছে রে আমার বোনটা।
রুমাল বের করে চোখ মুছতে লাগল সন্তু।
এসব শুনে দীপ্তর মুখটাও কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠল। সন্তুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।
সন্তু দীপ্ত'র হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।
দীপ্ত জিজ্ঞেস করে-"আচ্ছা ওর তো ওইটুকু বয়স ..তোরা ওর আরেকবার বিয়ে দিলি না কেন " ?
"আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম বিশ্বাস কর ,বাবুজিকে বুঝিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম 'রে বোনটা আবার হাসুক, কথা বলুক। বাবুজিও আমার কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গ্রামেরই পঞ্চায়েত বলল বিধবার বিয়ে দেওয়া অশাস্ত্রীয়। সেই চেষ্টা করলে আমাদের একঘরে করে দেবে "।
এখানে সবাই ভীষণ গোঁড়া রে ... "
দীপ্ত বলে উঠল, "উফফ সত্যি কি সমাজ ব্যবস্থা আমাদের।মানুষের জীবনের থেকে সমাজের নিয়ম কানুন বড় " !
রমেশের মৃত্যুটা বিন্দা মেনে নিতে পারেনি। তারপর থেকেই ও একদম নির্বাক গুমসুম হয়ে থাকে । কতদিন যে ওর হাসি দেখিনি, ওর চবড় চবড় কথা শুনিনি, ওর আবদার
শুনিনি ! পাথর হয়ে গেছে রে আমার বোনটা।
রুমাল বের করে চোখ মুছতে লাগল সন্তু।
এসব শুনে দীপ্তর মুখটাও কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠল। সন্তুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।
সন্তু দীপ্ত'র হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।
দীপ্ত জিজ্ঞেস করে-"আচ্ছা ওর তো ওইটুকু বয়স ..তোরা ওর আরেকবার বিয়ে দিলি না কেন " ?
"আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম বিশ্বাস কর ,বাবুজিকে বুঝিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম 'রে বোনটা আবার হাসুক, কথা বলুক। বাবুজিও আমার কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গ্রামেরই পঞ্চায়েত বলল বিধবার বিয়ে দেওয়া অশাস্ত্রীয়। সেই চেষ্টা করলে আমাদের একঘরে করে দেবে "।
এখানে সবাই ভীষণ গোঁড়া রে ... "
দীপ্ত বলে উঠল, "উফফ সত্যি কি সমাজ ব্যবস্থা আমাদের।মানুষের জীবনের থেকে সমাজের নিয়ম কানুন বড় " !
সন্তু বলল, " আরেকটা কথা তোকে বলা হয়নি। তোর সাথে রমেশের একটা জিনসের অনেকটা মিল -- জানিস ? তোর চোখ দু'টোর সঙ্গে রমেশের চোখের অদ্ভুত মিল " !
তোর মনে আছে দীপ্ত কলেজে তোকে আমি একবার বলেছিলাম আমার এক আত্মীয়র সাথে তোর ভীষণ মিল ?
বিন্দা তার জীবনের ওই অভিশপ্ত ঘটনার পর থেকে কখনো কারো সামনে আসে না।
কিন্তু বিন্দা যে তোকে যে দূর থেকে দেখছে সেটা আমি লক্ষ্য করেছি একদিন। সেটা ওই একটাই কারণে। ও তোর মধ্যে রমেশের চোখদুটো খুঁজতে চাইছে " ।
দীপ্ত শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল এইজন্যই এতো আকুল করা চাহনি ছিল ওই চোখে !
দীপ্ত বলল , "আমাকে রমেশের একটা ফটো দেখাস তো "--
সন্তু বলল , "খুঁজে দেখতে হবে রে , কেননা ওই ঘটনার পর থেকে বোনের সামনে রমেশের কোন স্মৃতি আমরা রাখিনি ।
ওরা কথা বলতে বলতে খেয়াল করেনি যে ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করছে।
সন্তুর বাবা কেটলি আর চায়ের কাপ নিয়ে উপরে এসে এসেছন।
" দীপ , চায়ে পিনা হ্যয় কী নেহি " ?
আজ আর দীপ্ত না করল না।
চায়ের কাপ হাতে নিল।
সন্তুর বাবা জিজ্ঞেস করল, মিঠ ( মিষ্টি) ঠিক হ্যায় ?
দীপ বলল, "হা চাচাজি বরাব্বর হ্যায়"
তোর মনে আছে দীপ্ত কলেজে তোকে আমি একবার বলেছিলাম আমার এক আত্মীয়র সাথে তোর ভীষণ মিল ?
বিন্দা তার জীবনের ওই অভিশপ্ত ঘটনার পর থেকে কখনো কারো সামনে আসে না।
কিন্তু বিন্দা যে তোকে যে দূর থেকে দেখছে সেটা আমি লক্ষ্য করেছি একদিন। সেটা ওই একটাই কারণে। ও তোর মধ্যে রমেশের চোখদুটো খুঁজতে চাইছে " ।
দীপ্ত শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল এইজন্যই এতো আকুল করা চাহনি ছিল ওই চোখে !
দীপ্ত বলল , "আমাকে রমেশের একটা ফটো দেখাস তো "--
সন্তু বলল , "খুঁজে দেখতে হবে রে , কেননা ওই ঘটনার পর থেকে বোনের সামনে রমেশের কোন স্মৃতি আমরা রাখিনি ।
ওরা কথা বলতে বলতে খেয়াল করেনি যে ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করছে।
সন্তুর বাবা কেটলি আর চায়ের কাপ নিয়ে উপরে এসে এসেছন।
" দীপ , চায়ে পিনা হ্যয় কী নেহি " ?
আজ আর দীপ্ত না করল না।
চায়ের কাপ হাতে নিল।
সন্তুর বাবা জিজ্ঞেস করল, মিঠ ( মিষ্টি) ঠিক হ্যায় ?
দীপ বলল, "হা চাচাজি বরাব্বর হ্যায়"
আবার একটা নতুন রোদ ঝলমলে সকালের শুরু।
গাড়ু হাতে সকলে মাঠে যেতে যেতে দেখল চারপাশে সবুজ আর সবুজ.. শয়ে শয়ে ময়ূর খেলে বেড়াচ্ছে... খেতের মধ্যে ইঁদুর ধরে খাচ্ছে.. সবুজের মধ্যে নীলকণ্ঠী রং.. মাঝে মাঝে হলুদের ছোঁয়া.. কি অপূর্ব দৃশ্য !
গাড়ু হাতে সকলে মাঠে যেতে যেতে দেখল চারপাশে সবুজ আর সবুজ.. শয়ে শয়ে ময়ূর খেলে বেড়াচ্ছে... খেতের মধ্যে ইঁদুর ধরে খাচ্ছে.. সবুজের মধ্যে নীলকণ্ঠী রং.. মাঝে মাঝে হলুদের ছোঁয়া.. কি অপূর্ব দৃশ্য !
সন্তুর মা আজ জলখাবারে পুরী আর আলু মটর বানিয়েছিল , সঙ্গে আমের আচার। সন্তুর মা পুরী ভেজে কুল পাচ্ছে না। চারজন ইয়ং ছেলে.. গ্রামে এসে যাদের খিদে শতগুণ বেড়ে গেছে.. তার সাথে আছে সন্তুর বাবা ও ভাই। বেচারী সন্তুর মা হাসিমুখে আগুনের তাতে ভেজেই চলেছে পুরী ...
আজ সায়নরা গ্রাম ঘুরতে গেল। দীপ্ত গেল না। রাতে ঘুম হয়নি । ভাবল ছোট্ট করে এক রাউন্ড ঘুম মারবে। ওদের বলল তোরা যা আমি বিকেলে বেরোবো।
ছবি আঁকা দীপ্তর একটা নেশা। সন্তুর ভাই মন্নোকে বলল কাগজ পেন্সিল আনতে। সন্তুর ভাই মহা উৎসাহে খাতা পেন্সিল এনে দিল। পেন্সিল দিয়ে রাফ স্কেচ করে দুটো ছবি আঁকল দীপ্ত। প্রথমটা একটা মেয়ে ছাদের ধারে একটু আড়াআড়ি করে দাঁড়িয়ে.. মুখে চাঁদের আলো পড়েছে..
আরেকটা ছবি একটা মেয়ে চোখ বড় বড় করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের দিকে.. দৃষ্টিতে আছে বিস্ময় ব্যথা-বেদনা আকুলতা ..সবই।
পেন্সিল স্কেচ করে রাখল দীপ্ত। সঙ্গে করে নিয়ে যাবে ছবি দুটো। বাড়ি গিয়ে ক্যানভাসে ভালো করে অয়েল পেইন্টিং করবে।
শুয়ে পড়ল। একটু ঘুমানো দরকার। মাঝে মাঝে কাশি হচ্ছে দীপ্তর। খোলা ছাদে থাকার অভ্যাস নেই তো , হয়তো হিম পড়ে ঠান্ডা লেগেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল দীপ্ত। ---- গভীর ঘুম।
ঘুম ভাঙলো সায়নদের ডাকে।
অনিরুদ্ধ বলল, কত ঘুমাবি রে শালা। কুম্ভকর্ণের নাতি তুই। কুয়ো তলায় চলে আয় চান করব ..খিদে পেয়েছে জব্বর ... "
দীপ্ত বলল , "তোরা যা আমি আসছি। ওরা চলে গেল। দীপ্ত দেখল পাশে টুলের ওপর কাসার গ্লাসে ঢাকা দেওয়া কিছু রাখা আছে।
সন্তুকে জিজ্ঞেস করল ,এটা কি রে।
সন্তু গ্লাসের ঢাকা খুলে দেখে বলল এটা কাড়া.. গ্রামের টোটকা ওষুধ , তুলসী পাতা আদা গোলমরিচ মধু দিয়ে বানানো হয়। তুইতো কাসছিস। তাই বোধহয় বিন্দা করে রেখে গেছে।
চমকে তাকিয়ে দীপ্ত বলল, " তুই কি করে জানলি বিন্দা করেছে " !
সন্তু হেসে বলল, এটা এই বাড়িতে বিন্দাই বানায়। যখনই যার সর্দি কাশি হয় বিন্দাই বানিয়ে দেয়।
হঠাৎ উদাস গলায় সন্তু বলে উঠল ,
" বস , তুই যদি আমাদের বাড়িতে থেকে যেতিস তাহলে হয়তো আমার বোনটা আবার একটু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেত "।
দীপ্ত বলল , " ধুর কি যে বলিস না .. চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে ।আমি বাবুজির সাথে কথা বলব যাতে ওর আবার বিয়ে দেওয়া হয়।
আজ সায়নরা গ্রাম ঘুরতে গেল। দীপ্ত গেল না। রাতে ঘুম হয়নি । ভাবল ছোট্ট করে এক রাউন্ড ঘুম মারবে। ওদের বলল তোরা যা আমি বিকেলে বেরোবো।
ছবি আঁকা দীপ্তর একটা নেশা। সন্তুর ভাই মন্নোকে বলল কাগজ পেন্সিল আনতে। সন্তুর ভাই মহা উৎসাহে খাতা পেন্সিল এনে দিল। পেন্সিল দিয়ে রাফ স্কেচ করে দুটো ছবি আঁকল দীপ্ত। প্রথমটা একটা মেয়ে ছাদের ধারে একটু আড়াআড়ি করে দাঁড়িয়ে.. মুখে চাঁদের আলো পড়েছে..
আরেকটা ছবি একটা মেয়ে চোখ বড় বড় করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের দিকে.. দৃষ্টিতে আছে বিস্ময় ব্যথা-বেদনা আকুলতা ..সবই।
পেন্সিল স্কেচ করে রাখল দীপ্ত। সঙ্গে করে নিয়ে যাবে ছবি দুটো। বাড়ি গিয়ে ক্যানভাসে ভালো করে অয়েল পেইন্টিং করবে।
শুয়ে পড়ল। একটু ঘুমানো দরকার। মাঝে মাঝে কাশি হচ্ছে দীপ্তর। খোলা ছাদে থাকার অভ্যাস নেই তো , হয়তো হিম পড়ে ঠান্ডা লেগেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল দীপ্ত। ---- গভীর ঘুম।
ঘুম ভাঙলো সায়নদের ডাকে।
অনিরুদ্ধ বলল, কত ঘুমাবি রে শালা। কুম্ভকর্ণের নাতি তুই। কুয়ো তলায় চলে আয় চান করব ..খিদে পেয়েছে জব্বর ... "
দীপ্ত বলল , "তোরা যা আমি আসছি। ওরা চলে গেল। দীপ্ত দেখল পাশে টুলের ওপর কাসার গ্লাসে ঢাকা দেওয়া কিছু রাখা আছে।
সন্তুকে জিজ্ঞেস করল ,এটা কি রে।
সন্তু গ্লাসের ঢাকা খুলে দেখে বলল এটা কাড়া.. গ্রামের টোটকা ওষুধ , তুলসী পাতা আদা গোলমরিচ মধু দিয়ে বানানো হয়। তুইতো কাসছিস। তাই বোধহয় বিন্দা করে রেখে গেছে।
চমকে তাকিয়ে দীপ্ত বলল, " তুই কি করে জানলি বিন্দা করেছে " !
সন্তু হেসে বলল, এটা এই বাড়িতে বিন্দাই বানায়। যখনই যার সর্দি কাশি হয় বিন্দাই বানিয়ে দেয়।
হঠাৎ উদাস গলায় সন্তু বলে উঠল ,
" বস , তুই যদি আমাদের বাড়িতে থেকে যেতিস তাহলে হয়তো আমার বোনটা আবার একটু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেত "।
দীপ্ত বলল , " ধুর কি যে বলিস না .. চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে ।আমি বাবুজির সাথে কথা বলব যাতে ওর আবার বিয়ে দেওয়া হয়।
সন্তু বলল, " না না একদম বলবি না বাবুজি যদি জানতে পারে আমি তোকে সব বলেছি তাহলে খুব রাগ করবে " ।
চলে যেতে যেতে সন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল , তুই আজ আর চান করিস না ..ঠান্ডা লেগেছে তোর। কাড়া'টা খেয়ে নিয়ে নিচে ভাত খেতে আয়।
দীপ্ত গ্লাসটা হাতে নিয়ে খাবে কি খাবে না ভাবছে। আবার ভাবছে হয়তো বিন্দা কোথাও থেকে ওকে দেখছে। না খেলে বেচারি মেয়েটা হয়তো দুঃখ পাবে।
নাক চোখ বুজে দীপ্ত গ্লাসের পানীয়টা শেষ করল।
দীপ্ত ভালো করেই জানে মেয়েটার প্রেমে ও পড়েনি। কিন্তু একটা ফুলের মত মেয়ে যার সামনে সারাটা জীবন পড়ে আছে তার জন্য কেমন যেন অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। যদি মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারতো দীপ্ত !
চলে যেতে যেতে সন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল , তুই আজ আর চান করিস না ..ঠান্ডা লেগেছে তোর। কাড়া'টা খেয়ে নিয়ে নিচে ভাত খেতে আয়।
দীপ্ত গ্লাসটা হাতে নিয়ে খাবে কি খাবে না ভাবছে। আবার ভাবছে হয়তো বিন্দা কোথাও থেকে ওকে দেখছে। না খেলে বেচারি মেয়েটা হয়তো দুঃখ পাবে।
নাক চোখ বুজে দীপ্ত গ্লাসের পানীয়টা শেষ করল।
দীপ্ত ভালো করেই জানে মেয়েটার প্রেমে ও পড়েনি। কিন্তু একটা ফুলের মত মেয়ে যার সামনে সারাটা জীবন পড়ে আছে তার জন্য কেমন যেন অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। যদি মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারতো দীপ্ত !
অন্তরা ঘোষ ।
২৫.১২.১৯.
২৫.১২.১৯.
চিত্রঋণ : ইন্টারনেট
( আগামী পর্বে সমাপ্ত )
আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক
No comments:
Post a Comment