Wednesday, June 24, 2015

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /



       

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী  (প্রথম পর্ব) 

“আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
একতারা তার দেয় কি সাড়া আমার গানে কে জানে..."
এই আর্তির মধ্যেই ব্যক্তি জীবনের পথ চলা! স্বপ্ন সাধ সাধনায়, ভাব ভাবনা ভালোবাসাকে বিশেষ একজনের সাথে মিলিয়ে নিতে! কারণ কালের মন্দিরায় জীবনের বোল ফোটাতে পরস্পরের সঙ্গ লাগে! তখন সেই সঙ্গতে মন বলে "সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমারই দুখানি নয়নে-" এই যে পরস্পরের মধ্যে জীবনের পথ খুঁজে পাওয়া,পরস্পরের মধ্যে বেঁচে ওঠা, পরস্পরের মধ্যে সত্য হওয়া; এখানেই প্রেমের সার্থকতা! এখানেই মানুষ চলেছে তার দোসরের খোঁজে, "কবে আমি বাহির হলেম তোমারই গান গেয়ে"! আসলে দোসর খুঁজে পাওয়ার সাধনায় দোসর হয়ে উঠতে পারার শক্তিটাই গুরুত্বপূর্ণ! সেখানেই মুক্তি!”


ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী















আমার গল্পের নায়ক এক  মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে “সুদীপ্ত”। মেধাবী ছাত্র। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নায়িকা “সুদীপ্তা” সে’ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেধাবী, বাবা মা আই.এ.এস অফিসার। অভাব কি জানে না। দুজনেই ইনফোসিস, বেঙ্গালুরুতে চাকরীতে সবে ঢুকেছে। এরপর...

সুদীপ্ত বি.টেক. (কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং) এরপর ইনফোসিস্, বেঙ্গালুরুতে সফট্ওয়ের ইঞ্জিনিয়ার এর চাকরিতে জয়েন করে। এখানে বলে রাখা ভালো সুদীপ্ত, আই.আই.টি ,মুম্বাই থেকে ফার্স্ট ক্লাস ৯০% মার্কস পেয়ে  পাস করার পর চাকরীতে জয়েন করতে বাধ্য হয়। অন্য কোম্পানিতে ভালো চাকরি পেয়েছিল কিন্তু জয়েন করেনি। ওর বাবা অনেক কম বয়েসে  হার্ট অ্যাটাকে হটাত মারা যান। ছোটভাইয়ের পড়ার দায়িত্ব  সামলানোর জন্য ও বাধ্য হয় চাকরি করতে। বাড়ীতে মা এবং ছোটভাই ছাড়া আর কেউ নেই । অনেক ইচ্ছে ছিল এম.টেক্. এর পর ডক্টরেট করবে বলে, কারণ ওর টিচিং জব পছন্দ। সে ইচ্ছেটা ওকে সর্বদা পড়াশোনার দিকে টানত। আড্ডা দিতে মোটেই ভালোবাসে না সুদীপ্ত। ওর প্রজেক্টের প্রোজেক্ট্ ম্যানেজার (পি.এম.)ওকে খুব স্নেহ করেন । ওর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সঙ্গে ও কাজও খুব নিখুঁত ভাবে করে । সুদীপ্তা ওই একি প্রোজেক্টে, ওর সঙ্গে জয়েন করে একই দিনে। মাইসুরে তিন মাসের ট্রেনিং সেরে দুজনে বেঙ্গালুরুতে জয়েন করে । তাই সুদীপ্তার সঙ্গে আলাপ প্রায় তিন  মাসের ওপর । সুদীপ্তর চেহারার আকর্ষণের সঙ্গে ওর প্রখর বুদ্ধি সহজেই নারীর মন আকর্ষণ করে। এটাই স্বাভাবিক। সুদীপ্তা এন.আই.টি., রাউরকেল্লা থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে  বি.টেক্.ফার্স্ট ক্লাস  কাজেই ও খুব ফেলনা নয়। দেখতে খুব সুন্দরী। বাবা মা দুজনেই আই.এ.এস অফিসার তাই টাকার অভাব নেই। তবে আই.আই.টি. পাস আউটদের ইনফোসিসে বেশি টাকা মাইনে দেয় । বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা সন্ধ্যে ছটার পর অফিসে  থাকা মানা ছিল। এসব আমি ২০০৫ সালের কথা  বলছি ।
সুদীপ্ত কাজের মধ্যে মসগুল থেকে এক রকমের যন্ত্রমানবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অফিস আর কাজ ছাড়া কিছুই জানত না। প্রায় দিন বেলা ১.৩০ টার সময় সুদীপ্তা ক্যান্টিনে লাঞ্চ খেত সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা করে। সুদীপ্তার ওখানে গল্প করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই কারণ সুদীপ্ত  বিশেষ পাত্তা দিত না  ওসব ব্যাপারে। সর্বদা কাজে মসগুল থাকতো  কি করে অন্ সাইটে যাবে। তারই  চিন্তায় থাকত। একদিনের কথা, সুদীপ্তা ওর নিজের  জন্মদিন সেলিব্রেট্ করার জন্য সব বন্ধু-বান্ধবদের ডেকেছিল পার্টিতে। সুদীপ্তকেও ডেকেছিল। 
কিন্তু ফর্মালিটির জন্য পার্টিতে গিয়ে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে  গিফট দিয়ে চলে যায়। এটা সুদীপ্তার  মনে লাগে । এমনিতেই  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা পার্টি, আড্ডা, শুক্রবার রাতে এবং শনিবারদিন সাধারনতঃ করে থাকে। ওদের মতে স্যাটারডে নাইট মাস্ট বি ডিলাইট। সুদীপ্তা মনে দুঃখ পেলেও প্রকাশ করেনি কারণ ও সুদীপ্তকে মনে মনে ভালবাসত কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি।
এই অপ্রকাশিত প্রেম এবং বলতে গেলে এক তরফা প্রেম যেন অসহ্য লাগে সুদীপ্তার ।
একদিন সুদীপ্তকে বলে বসে, “তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করছ কেন ? আমি লাঞ্চের সময় ডাকলে তুমি এসে খেয়ে বিল মিটিয়ে চলে যাও। কোনও কথা কি তোমার মুখে আসে না? আমি তোমার প্রজেক্টে কাজ করছি ! তোমার সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং নিলাম ।  অন্য কলিগরা ত এরকম নয় ! তুমি এরকম ডিফারেন্ট এটিচ্যুড দেখাও কেন?” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সুদীপ্তর  দিকে তাকাল উত্তরের অপেক্ষায় ।  
সুদীপ্ত বলে, “আমাকে ভুল বুঝো না । আমার মাথায় অনেক চিন্তা । আমার মা বিধবা, ভাইয়ের পড়া আমার ওপর নির্ভর করছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ওপর সংসারের সব দায়িত্ব  ও তুমি বুঝবে না !” তুমি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছ। তুমি কি করে জানবে নিম্নমধ্যবিত্তের জ্বালা যন্ত্রণা ? তোমার বাবা মা দুজনেই  আই এ এস অফিসার ! কি অভাব দেখেছ জীবনে? বাবা অসময়ে চলে গেলেন । মা আমার ওপর ভরসা  করে আছেন । আমি আমার ছোটভাইয়ের দায়িত্ব নেব বলে। আমি আমার মা'কে প্রতারণা করতে পারি না । তিনি এমনিতেই দুঃখ পেয়েছেন আর নতুন করে দুঃখ দিতে পারি না।
ক্রমশ 

(দ্বিতীয় পর্ব)


দ্বিতীয় পর্বসুদীপ্তা :  “এটা কিরকম কথা হল ?” আমি তো সে কথা বলিনি যে, তুমি তোমার মা'কে দুঃখ দাও ! আবার এটাও ঠিক নয়  বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে না খেয়ে গিফট দিয়ে চলে যাওয়া । এটা কিরকম ভদ্রতা ?
সুদীপ্তা :  “এটা কিরকম কথা হল ?” আমি তো সে কথা বলিনি যে, তুমি তোমার মা'কে দুঃখ দাও ! আবার এটাও ঠিক নয়  বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে না খেয়ে গিফট দিয়ে চলে যাওয়া । এটা কিরকম ভদ্রতা ?
সুদীপ্ত : আমি দুঃখিত কিন্তু নিরুপায়। আমি এখন শয়নে স্বপনে একটাই কথা ভাবি; কি করে অনসাইটে যাব? সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমার টাকার প্রয়োজন তাও সৎ উপায়ে উপার্জন করে। আমাকে ভুল বুঝ না।
সুদীপ্তা : সে তো আমিও ভাবি, তুমি একা নও। আমার কি ইচ্ছে করে না প্রোজেক্টের কাজে ইউ.এস.এ যাই! আমরা হয়তো একসঙ্গেই যেতে পারি। পি.এম. একা তোমাকে নয় আমাকেও রেকমেন্ড করেছেন। সে খেয়াল রাখো মিস্টার সুদীপ্ত রায় !
সুদীপ্ত : আমি জানি। কংগ্র্যাচুলেসন মিস সুদীপ্তা বোস। হেঁসে ফেলে দুজনে ।
সুদীপ্তা : আমি কিন্তু বাবা মাকে তোমার কথা বলেছি ।  
সুদীপ্ত : মানে !! কি কথা ?  
সুদীপ্তা : মানে আবার কি? আমি তোমাকে পছন্দ করি এর বেশি কিছু নয়। বুঝলে !  
সুদীপ্ত : কিন্তু তুমি আমার মতামত নাও নি ! আমার মা, আমার ভাই এদের ছেড়ে আমি কিছুই করতে পারি না, আমরা একই সুতোয় বাঁধা। ওদের অমতে আমি ....... অসম্ভব !!!
সুদীপ্তা : এই তো তোমার মতামত  নিলাম, আজকে,এখন ! আমি তোমাকে প্রপোস্ করছি! যেটা কিনা ছেলেরা করে সেটা আমি করছি বেহায়ার মত !!  ইয়েস্ আই এডমায়ার ইউ। কেঁদে ফেললো সুদীপ্তা। তুমি ভালো ছেলে বলে তোমার খুব গর্ব না ? কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি ...আই! আই লাভ্ ইউ !! ফর হেভেন সেক্ ডোন্ট্ লিভ মি। তুমি আমাকে অনেক অপমান করেছ! আর না !! এই বলে সুদীপ্তা  কেঁদে ফেলল ।
সুদীপ্তার মাথায় হাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে সুদীপ্ত । কুল ডাউন বেবি কুল ডাউন। এতো কনফিডেন্স ভালো না। আমার মা' কে না জিজ্ঞাসা করে আমি এ বিষয় কিছুই বলতে পারব না। আমার এখন কেরিয়ার আছে। কিছুই হতে পারলাম না। বাবার অনেক আশা ছিল আমি ডক্টরেট করি। বাবা গত হয়েছেন মোটে এক বছর, তার ধকল এখনও মা সামলে  উঠতে পারেননি। তুমি যান আমার ভাই এখন সবে ঢুকল বি.টেক্.এ। ও আই.আই.টি., খড়গপুরে অ্যাডিমশন নিল। আরও ভালো রেসাল্ট্ করতে পারতো। আমি ওকে ভালো  করে গাইড করতে পারিনি । জানি না কি করবে ভবিষ্যতে! ওর পড়াশুনোর জন্য আমাকে ফিনান্স্ করতে হবে। আমার ওপর সারা সংসারের সব দায়িত্ব। আমার এখন প্রেম করা সাজে না। আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর।
   
সুদীপ্তা : আমি সব জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি। এখন তো বলছি না! আর কি বললে তুমি!, “বেবি!” আমি “বেবি!!” তুমি নিজেকে কি মনে কর ? এ্যাঁ !! দেখাচ্ছি তোমার মজা। এই বলে চট করে জড়িয়ে ধরে চকাস করে চুমু খায় সুদীপ্তর ঠোঁটে। আমি তোমার কাছ থেকে এইটুকু কি আশা করি না, “আই লাভ্ ইউ টু সুদীপ্তা” শুনতে!! ছেলেদের চোখ দেখলেই মেয়েরা বুঝতে পারে মোসাই। তুমি জতোই আমাকে শুরু থেকে এভোয়েড্ কর আমি জানি তুমি আমাকেই মনে মনে পছন্দ কর। আই এম মাচ কনফিডেন্ট্ অ্যাবাউট দ্যাট্। তাই আজ সারপ্রাইজ্ দিলাম। কিরম লাগলো ?বলবে না ?

সুদীপ্ত :  এতো কনফিডেন্স ভালো না । তবে হ্যাঁ,  যদি কোন দিন বিয়ে করি তবে আই প্রমিস্ , “I Sudipto Ray do herby testify, and give public notice of the covenant of marriage which we have entered into with each other in the presence of God and witnesses: based solely on the authority of God as found in His Holy word, The Bible  in the name of GOD accept Mis Sudipta Bose as my wife" এই বলে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে জড়িয়ে ধরে  গভির ভাবে চুমু খায়। সকলের হাত তালিতে ওদের ঘোর ভাঙ্গে ।
সুদীপ্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে। অাদিত্য,সুকন্যা,প্রিয়াঙ্কা, গুলশন,আবীর,ভেঙ্কাটেশ্ সকলে খুশিতে গান গাইতে আরম্ভ করে। ৫ পএন্ট্ স্পিকার লাগিয়ে ডিজিটাল হোম থিয়েটারে গান বাজিয়ে নাচ শুরু হয় অডিটোরিয়ামে ওদের মাঝখানে রেখে। এরপর সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই নাচতে শুরু করে গানের তালে তালে। আদিত্য-সুকন্যা সালসা ড্যান্স্ আরম্ভ করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে প্রিয়ঙ্কা-গুলশন ব্রাজিলিয়ান সাম্বা ড্যান্স্ দেখায়। সকলে সারাক্ষণ এনজয় করে ।
সেদিন ছিল খৃষ্টমাস, তাই পার্টি হয় রাত ৯.০০ টা তে শেষ হয় ১২ টাতে। আজ সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনে হোষ্ট আর প্রজেক্টের সব কোলিগ্রা খোশ্ মেজাজে মুর্গা মসাল্লাম্,কোপ্তা,বাটার তন্দুর,প্রন্ পকোড়া,বাটার স্কচ্ আইস্ ক্রিম্ পরে কিছু হট্ ড্রিঙ্ক নিয়ে একটু বেসামাল হয়। ওটা আই.টি. প্রফেসেন চলে। কিছু বলার নেই।  মেনে নিতেই হয় ।
ক্রমশ

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

তৃতীয় পর্ব

সুদীপ্তকে আজ যেন খুব চার্মিং লাগছিল ঠিক সুদীপ্তাকে ও তাই । ওরা নিজেদের মধ্যে কিছু বলছিল যার দিকে কারুর নজর ছিলনা । সকলে মসগুল নিজেদের পার্টনার কে নিয়ে।
এরমধ্যে সুদীপ্তর  হটাত কি হল কে যানে  ,  সুদীপ্তার উদ্দেশ্যে বলে ঃ
 আমি এটা ঠিক করলাম না !  আমার মা জানলে খুব  দুঃখ পাবেন। ঝোঁকের মাথায়  তোমাকে কিস্ কোরতে গিয়ে সব গণ্ডগোল হয়ে গেল । আমি কি জবাব দেব মা’কে, ভাইকে? ওরা আমাকে খুব ভরসা  করে । এটা মোটেই ঠিক হলনা   অনুশোচনায় ভেঙ্গে পডে সুদীপ্ত । আই মাস্ট লিভ দিস প্লেস । দিস ইজ নট ফর মি !!!
সুদীপ্তাঃ- তুমি একা নও সুদীপ্ত । তোমার ভাই , আমার ও ভাই । তুমি কি করে ভুলে গেলে আমি কিছু না বুঝে আমার ডিসিশন নিয়েছি বলে ? আমি সব জানি ম্যান । কিছু ভেবনা  । আমি বাবা মাকে ডিটেল সব কথা বলেছি। বাবা আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন । মা বাবা নিজেরাই মুসুরিতে আই.এ.এস ট্রেনিং ইন্সটিট্যুটে গলা জড়া জড়ি করে প্রেম করেন ।  তার পর বিয়ে সেরে ফেলেন । ওনাদের  বাবা মা’কে না জানিয়ে ।  পরে অবশ্য দু পক্ষ রাজি হয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। তুমি জানো , আমার মা বাবা জাত ফাত মানেন না ,এমনকি ধর্ম ফর্ম ও মানেন না। ওঁরা একটাই জাত জানেন ‘মানুষ’ !  ওনারা আই এ এস অফিসার  ! ওটাই ওঁদের গীতা,বাইবেল,গুরু-গ্রন্থ আর কোরান সব এক  !!  দুজনে দু জায়গায় সাব কালেক্টার ছিলেন । দেখা করার জন্য  শনিবার রাতে পালাতেন হেড কোয়ার্টার ছেডে । অবশ্য ওনাদের কালেক্টার জানতেন সে কথা। বাবা আমাকে সব বলেছেন। খুব মজার দিন সব ওনাদের কেটেছে । ঠিক আছে তুমি তোমার মা’কে জিজ্ঞাসা কর।  আমার কোন আপত্তি নেই। আমি কনফিডেন্ট্ উনি মত দেবেন। আমিত কিছু ভুল করিনি । পারলে না হয় পা জডিয়ে বলবো, “মা, মাগো আপনার কচি ছেলেটাকে নুন লঙ্কা মাখিয়ে খাবো” বলে হেঁসে ফেললো  ।
সুদিপ্ত ঃ- কি বলছো যা’ তা !  তোমার কি মাথা খারাপ হল?  মা কে আমি চিনি । মা রাজি হবেন না । আমার ভাই কি ভাববে বলত ? এতো তাড়া কিসের ? একটু সবুর কর । আমি তো পালাচ্ছিনা !
সুদীপ্তা ঃ- পালাতে কে দিচ্ছে মসাই । তবে আমার তাড়া আছে । আমার পেছনে শকুনের চোখ আছে । তুমি বুঝবেনা সে কথা । বলার ও প্রয়োজন মনে করি না ।
সুদিপ্ত ঃ- সে আবার কি কথা ?  যদি বলতে না চাও বোলনা । আই ডোন্ট মাইন্ড্ ।  
সুদীপ্তা ঃ- তুমি আমাদের পি .এম্.কে দেখেছো ! উনি কিরকম ছুঁক ছুঁক করেন  আমাকে দেখে ! যেন গিলে খাবেন !! বিচ্ছিরি !!! ইরেসিসস্টিবিল ।
সুদিপ্ত ঃ- ওটা তোমার ভুল ধারনা । নাও হতে পারে । 
ঊনি তোমাকে তাড়া  হুড়ো  করে ইউ.এস .এ যাওয়ার রেকমেন্ড করেছেন আমার থেকে তোমাকে দুরে সরানোর জন্য । তুমি জান কিছু ! মাথায় ঢ়ুকলো  কিছু !!
সুদিপ্ত ঃ- মোটেই নয় । ওটা তোমার ভুল ধারনা । আমি প্রজেক্ট্ এর জন্য বেশি সময় দি । সকলে যানে  পি.এম. , এস. পি.এম. এবং অন্য সকলে । সেই কারনে আমাকে পাঠাচ্ছেন ওনারা । এতে আশ্চর্য  হওয়ার কি আছে ?
সুদীপ্তাঃ- আমি অস্বিকার করছিনা তবে আমার কথাটা সত্যি কিনা,  প্রিয়ঙ্কা বলবে তোমাকে । ওই আমাকে বলে সে সব কথা ।
সুদীপ্তঃ- দেখ এ সব বাজে মেয়েলি কথাতে আমি মোটেই  ইন্তারেস্টেড নই । বকবাস্ । জাস্ট্ গসিপ্ ।
সুদীপ্তাঃ- ও কে । কাল ভিসার জন্য রেডি হও । আমাদের দুজনকে নিউ জার্শি তে পাঠাচ্ছে ইনফি । ইন ফেক্ট্ আমি বাপিকে আসতে  বলেছি সঙ্গে মা থাকছেন । তোমাকে ওনারা দেখতে আসছেন কাল। মানা কোরনা কিন্তু !!
মন্ত্র মুগ্ধের মতন সুদীপ্ত বলে ফেললো আচ্ছা।
প্রমিস্
প্রমিস্

সুদীপ্তাঃ- দ্যাটস্ লাইক এ গুড বয় , মাই ডার্লিং বলে  হাগ্ করে সুদীপ্তর গলা জডিয়ে কিস্ করে।
সুদীপ্ত চোখ বন্দ করে নারীর সান্নিধ্য উপভোগ করছিল । স্বয়ং ভগবান ও বোধহয় এর থেকে নিস্তার পান নি। সুদীপ্ত তো ছেলে মানুষ । কিন্তু আবার মাথাতে চাড়া  দেয় মা এবং ভাইয়ের প্রতি দায়িত্ববোধ , নিজের কেরিয়ার , ইত্যাদি ভেবে সুদীপ্তার কাছথেকে ছাড়াপেতে চায়। ক্ষনিকের আবেগে নিজেকে এরকম ভাবে বিলিয়ে দিতে পারেনা। বিবেক দংশনে নিজেকে সামলানোর চেস্টা করে।  পরক্ষনে বলে আজ আমাকে যেতে হবে , বাই ...।
সুদীপ্তা কিছু বোঝার আগেই সুদীপ্ত হাঁটা দেয় ইনফোসিটির হেরিটেজ্ বিল্ডিং এ ।  ওখানে ইনফীর  চেয়ারম্যান নারায়ানাস্বামী, নন্দন নীল্কার্নী ,পাই  ইত্যাদী টপ্ বস্ রা বসেন । তবে এঁদেরকাছ থেকে  একটা বড় জিনিস সেখার আছে এঁনারা কেউ নিজেদের বস্ বলে  বলেন না বরং কলিগ্ বলেন। সুদীপ্ত ওখান হয়ে  বিল্ডিং নাম্বার ৪২ তে নিজের অফিসে চলে যায়।                                                    ক্রমশঃ- 

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
চতুর্থ পর্ব

সুদীপ্তা একটা সুইমিং পুলের ধারে বসে জলে নানা রঙের  মাছ দেখছিল। নানা রঙের মাছ মনকে শান্ত করে। বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের ভেতরটা এতো সুন্দর পরিবেশ আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হয় না ওটা ভারতবর্ষের মধ্যে অবস্থিত বলে। মনে হয় যেন আমেরিকাতে আছি। একটা কাগজের টুকর কোথাও কেউ খুঁজে পাবে না। ক্যাম্পাসের ভেতর গাড়ি চালানো নিষেধ। সাইকেলে যেতে হয় এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায়।  ধূমপান নিষেধ। “স্মোকিং স্ট্রিকলি প্রোহিবিটেড” বলে চারিদিকে লেখা। মাঝে মধ্যে ছোট ছোট গার্ডেন, লন, সুন্দর ডেকোরেটিভ অর্কিডস। একটা পরিচ্ছন্ন ইকো-ফ্রেন্ডলি মন মুগ্ধকর পরিবেশ। না দেখলে বোঝা যায় না।
যাওয়ার আগে ওরা দুজনে তীরুপতি তীরুমালা ভেঙ্কেটেশ্বরম্ মন্দির দর্শনে যায়। বেঙ্গালুরু থেকে রাত ৯ টার সময় অন্ধ্রপ্রদেশ ট্যুরিস্টের লাক্সারী ভল্ভো এ.সি. বাস ছাড়ে, পৌঁছোয় রাত ৩ টের সময় তীরুপতিতে। ওখানেই গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা থাকে গরম জলে স্নানের জন্য। স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে  তীরুমালা পাহাড়ের ওপর যাত্রা । তীরুপতি থেকে তীরুমালা ২২ কিলোমিটার অন্য বাসে যেতে হয়। ভোরবেলার দর্শন ভি.আই.পিদের জন্য খুব কম সময় লাগে এবং লাইনও ছোট থাকে।  বেশ ঠাণ্ডা লাগে ওই সময় তীরুমালা পাহাড়ের ওপরটা। প্রায় এক ঘণ্টা লাগে লাইনে আস্তে আস্তে আঁকা বাঁকা পথে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। তারপর বালাজীর দর্শন অপূর্ব। চাপ চাপ সোনা । কষ্টি পাথরের মূর্তি । সোনার মুকুট, সোনার হার ইত্যাদি। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দর্শন সারতে হয় নাহলে, “গোবিন্দা গোবিন্দা” বলে ঠ্যালা মারবে পেছন থেকে টেম্পল পুলিশ। এরপর তীরুপতির  বিখ্যাত আসল ঘিয়ের লাড্ডু জনা পিছু দুটো মন্দির প্রশাসন দেয়। কেউ ইচ্ছে করলে আরও লাড্ডু কিনতে পারেন কাউন্টার থেকে । এরপর পদ্মাবতীর দর্শন । পদ্মাবতী স্বয়ং মা লক্ষ্মী ঠাকুর। অপূর্ব লাগে ওখানে দর্শনের সময় । তীরুপতি বালাজীর  সারা মন্দির সোনাতে মোড়া। মন্দিরের চূড়া, গাত্র, থাম ইত্যাদি । দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের ভাস্কর্য সুন্দর।চূড়াতে তিনটে সোনার কলস থাকে এবং ওপরটা ফ্লাট একটা ট্রেপিজিয়ামের মত।
দর্শন সেরে  সুদীপ্তা ফিরে আসে বেঙ্গালুরুতে। সুদীপ্ত যায় মা আর ছোট ভাইকে দেখতে মামার বাড়ি । বাবার দেহান্তের পর মা’কে মামার বাড়িতে থাকতে হয় । মা, যা টাকা পেয়েছিলেন তার ফিক্সড  ডিপোজিটের শুধেতেই মা চলেন । সুদীপ্ত ভাইয়ের সমস্ত পড়ার খরচ দেয় হস্টেলে থাকার জন্য । যাওয়ার আগে মামা মামির আশীর্বাদ তা ছাড়া দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর দর্শন, বেলুড়ে  রামকৃষ্ণ  পরমহংস ,স্বামীজীর দর্শন সেরে সারদা আশ্রমে মায়ের সঙ্গে যায় সারদা মায়ের আশীর্বাদের জন্য । সব দুদিনের মধ্যে সেরে মায়ের আশীর্বাদ  নিয়ে ফিরে আসে বেঙ্গালুরু। ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল না  সুদীপ্তর।  বড় আফসোস থেকে গেল।  ভাই ফোনে উইশ করল। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময়  মায়ের চোখ ছল ছল করে। মাকে সুদীপ্তার কথা বলে, কিন্তু মা কিছুই বলেন না। সেটাই সুদীপ্তর মনে ধাক্কা লাগে। বোঝে মা খুশি হন নি এতে। সুদীপ্ত ভারাক্রান্ত মনে শুধু বাবাকে মনে করে। আজ বাবা থাকলে হয়ত খুশি হতেন তার ছেলে আমেরিকা যাচ্ছে কোম্পানির প্রজেক্টের কাজে। তিন বছরের জন্য ভিসা পায় সুদীপ্ত-সুদীপ্তা। সুদীপ্তা এর আগে মা বাবার সঙ্গে পাটেয়া গিয়েছে। ওর কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু সুদীপ্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ওর জন্য সব নতুন। মনটাও ভালো নেই দেশ ছেড়ে যেতে।
ফিরে কাজে জয়েন করে প্রজেক্টের সব কাজ বুঝে নেয় পি.এম. এর কাছ থেকে। ওখানে গিয়ে কারা রিসিভ করবে কোথায় থাকবে ইত্যাদি... সুদীপ্তার এক্সাইডমেন্টের সীমা নেই। ফোনে বাবা মাকে তীরুপতি বালাজীর দর্শনের গল্প, ভিসা ইন্টারভিউয়ের গল্প...ইত্যাদি...ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে ।

Saturday, June 20, 2015

হেরিটেজ ভিলেজ “রঘুরাজপুর” ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ২১.০৬.২০১৫ সকাল ১০.১১



হেরিটেজ ভিলেজ “রঘুরাজপুর”
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২১.০৬.২০১৫ / সকাল ১০.১১ 
ভারতের সাংস্কৃতিক পটে ‘রঘুরাজপুর’ গ্রাম একটি মাস্টার স্ট্রোক বললে অত্যুক্তি হবে না। অতুলনীয় শৈল্পিক ঐতিহ্য এবং সবুজ নারকেল গাছের ছায়ায় শিল্পীদের নিরাঢ়ম্বর বাসস্থান অথচ তাদের হাত থেকে নির্গত শিল্পকলার নৈপুন্যতা সত্যি না দেখলে বোঝান যায়না । নারকেল, তাল, আম, কাঁঠাল...পানের বরজের সঙ্গে সবুজ ধান ক্ষেতের এক বৈচিত্র্যপূর্ণ শোভা বর্ধক চিত্রপট শিল্পীর ক্যাপশনে তুলীর টান, যেন লীলাময় জগন্নাথ মহাপ্রভুর অস্তিত্ব প্রত্যেক শিল্পে বিদ্যমান। এই সরল শান্ত মনোরম পরিবেশ প্রতিটি পরিবারের পূর্বপুরুষদের শিল্পের উত্তরাধিকার পৃষ্ঠপোষকতার এক নিদর্শন । শুকনো তাল পাতার ওপর বহু পুরাতন শিল্পকলা, প্রস্তরের ওপর শিলালিপির ভাস্কর্য এবং সুন্দর প্রস্তর মূর্তি, কাষ্ঠ শিল্প এবং ভাস্কর্য, এপ্লিকের কাজ ইত্যাদি এই গ্রাম থেকে বিভিন্ন দেশ বিদেশে হস্তশিল্প সামগ্রী হিসেবে রপ্তানি হয় ।
পাশাপাশি গোটিপুও এবং গুরুকুল একাডেমী নাট্য গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রর সৃষ্টি ওড়িশি নাচের ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে এক সাধনা স্থল । গ্রামের ঘরগুলি সারি সারি গায়ে লাগান একে অপরের মুখোমুখি জগন্নাথ সংস্কৃতির একটি ধর্মীয় বাতাবরণের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয় । এদের প্রত্যেক কলাকৃতি জগন্নাথ সংস্কৃতি সম্পন্ন বার্তার এক মাধ্যম ।
উড়িষ্যার, পুরী জেলার ‘রঘুরাজপুর’ গ্রাম কলা ভাস্কর্যের এক পীঠস্থান। ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যাওয়ার পথে NH 203 এ পুরীর প্রায় ৮ কিলোমিটার আগে চন্দনপুর নামে একটি ছোট্ট জায়গা পড়ে । চন্দনপুর থেকে ভার্গবী নদীর ধারে চন্দনপুর বাজার এর পাশ দিয়ে বাঁ দিকে ঘুরলেই দেখবেন লেখা আছে “Way to Heritage village Raghurajpur 1.5 K.M. ->” ওই ছোট্ট রাস্তা রঘুরাজপুর গ্রাম অবধি চলে গিয়েছে। এখন ওই রাস্তা পাকা হয়ে গিয়েছে তাই পর্যটকদের স্রোত ছোটে ওখানে যাওয়ার জন্য, বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের। ভুবনেশ্বর থেকে রঘুরাজপুর, NH 203 ধরে গেলে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এখন ছয় লেনের রাস্তা হওয়াতে কারে কিম্বা ট্যাক্সিতে মাত্র ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগবে। যারা ট্রেনে যেতে চান তাদের জানকাদেইপুর (চন্দনপুর) ষ্টেশন নামতে হবে । ভুবনেশ্বর থেকে ট্রেনে গেলে একটি ছোট্ট প্যাসেঞ্জার হল্ট ষ্টেশন, নাম - জানকাদেইপুর(চন্দনপুর) এ নেমে ওখান থেকে হাঁটা পথে যাওয়া যায় । নারকেল গাছের ছায়ায় ঘেরা এই ছোট্ট গ্রামটি কলা ভাস্কর্যের এক পীঠস্থান বললে অত্যুক্তি হবে না। এখানকার কলা কুশলীরা তাদের কলা এবং ভাস্কর্যের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই গ্রামে নাট্যগুরু পদ্মবিভূষণ ঈশ্বর কেলুচরণ মহাপাত্র মহাশয়ের জন্ম, যিনি ওড়িশি নৃত্যকে সারা বিশ্বে পরিচিত করান তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং একাগ্রতা দিয়ে। ঈশ্বর মাগুণী চরণ দাস, গোটিপুও নাচের গুরু। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওড়িশি নাচ শিখতে ছাত্র ছাত্রী আসেন রঘুরাজপুরে এবং সেখানে থেকে নাট্য শিক্ষা করেন। নাট্য গুরু কেলু চরণ মহাপাত্রর দেহ অবসানের পর এখন সেরকম ছাত্র ছাত্রী আসেন না।
কেন্দ্র সরকারের পর্যটন বিভাগ রঘুরাজপুর গ্রামকে “হেরিটেজ ভিলেজ” আখ্যা দিয়েছেন এই গ্রামের কলা এবং ভাস্কর্যের শিল্পীদের বিভিন্ন কলা কীর্তি দেখে। ইন্টাক INTACH, ( Indian National Trust for Art and Cultural Heritage) ১৯৯৮ সাল থেকে এই রঘুরাজপুরের ওপর তথ্য চিত্র প্রদর্শন করে । ২০০০ সালে এই গ্রামটি কেন্দ্র সরকারের পর্যটন বিভাগ রঘুরাজপুর গ্রামকে “হেরিটেজ ভিলেজ” আখ্যা দিয়েছেন এই গ্রামের কলা এবং ভাস্কর্যের শিল্পীদের বিভিন্ন কলা কীর্তি দেখে। এই গ্রামের বিভিন্ন কলাকারদের জন্য ঘর এবং পর্যটকদের জন্য বিশ্রাম স্থল তৈরি হচ্ছে । নব-কলেবরের ২০১৫ আগে এটি পূর্ণ হেরিটেজ ভিলেজে রূপায়িত হবে ।
ওই একই গ্রামে পৃথিবী প্রসিদ্ধ পট্ট চিত্র শিল্পীরা পট্ট চিত্র তৈরি করে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও হেন্ডিক্রাফটসের স্টলের মাধ্যমে পট্ট চিত্র বিক্রয় করে থাকেন। এ ছাড়া প্রস্তর মূর্তি, তালপাতার ওপর নানা চিত্র, কাগজের তৈরি মুখোশ, টসর পেইন্টিং ইত্যাদি নানান হস্তকলা সামগ্রী প্রস্তুত করেন। শিল্পীদের গ্রাম হিসেবে এটি পৃথিবী প্রসিদ্ধ। প্রত্যেক দিন বিদেশি পর্যটক রঘুরাজপুরে গিয়ে নানান সামগ্রী ক্রয় তথা শিল্পীদের ভিডিও চিত্র তুলে নিয়ে-যান তাঁদের দেশে।
পট্ট চিত্র -
তসরের কাপড়ের ওপর কিম্বা শুকনো তালপাতায় পট-চিত্র তৈরি হয় । প্রথমে খড়ি এবং গাছের আঠা দিয়ে একটি প্রলেপ দেওয়া হয়। এর রং সাদা । ওই সাদা রঙের পৃষ্ঠ-পটের ওপর হার্বাল রং তৈরি করে জগন্নাথের মন্দিরের ভেতর আঁকা ছবি, যেমন দশাবতার, মৎস্য অবতার, কূর্ম অবতার, বরাহ অবতার, নৃসিংহ অবতার, বামন অবতার, পরশুরাম অবতার, রাম অবতার, কৃষ্ণ অবতার, বুদ্ধ অবতার, কল্কী অবতার । এ ছাড়া মথুরা বিজয়, অযোধ্যা বিজয়, শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলা, বিভিন্ন দেব দেবীর চিত্র, যথা - রাধা মোহন, গোপীনাথ, রঘুনাথ, লক্ষ্মীনারায়ণ এবং গৌরাঙ্গর চিত্র অঙ্কন হয়।
সাধারণত ৪৪ ইঞ্চ চওড়া ৫৫ ইঞ্চ লম্বা পটচিত্রের মূল্য ২৫৮৫ টাকা । এই চিত্র পাকা রঙ্গে তৈরি হয় তাই অনেক বছর অক্ষুণ্ণ থাকে।
তেঁতুল বীজ. এটি পেন্ট গ্রহণ করতে সক্ষম হয়, তসরের কাপড় একটি মসৃণ ক্যানভাস, শিল্পী প্রাথমিক আঁকার জন্য একটি পেন্সিল বা কাঠকয়লা ব্যবহার করেন । এটা প্রথম চিত্রকলার সীমানা সম্পন্ন করার জন্য একটি পদ্ধতি । চিত্রশিল্পী তারপর হালকা লাল এবং হলুদ রং ব্যবহার বুরুশ এর সঙ্গে সরাসরি একটি অবয়ব তৈরির শুরু করেন । প্রধান সমতল রং পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়; ব্যবহৃত রং সাধারণত, লাল, সাদা, হলুদ, এবং কালো। চিত্রশিল্পী তারপর কলমের কাজ এর প্রভাব ফেলেন, কালো বুরুশ লাইনের সূক্ষ্ম স্ট্রোক এর সঙ্গে পেন্টিং শেষ করেন। পেন্টিং সম্পন্ন হওয়ার পর সেটা একটি কাঠকয়লার আগুনের ওপরে টেম্পারিং করা হয় এবং পরে বার্ণিশ পৃষ্ঠ প্রলেপ প্রয়োগ করা হয় । এটি একটি জ্বলজ্বলে ফিনিশ প্রদান করা ছাড়াও, পেন্টিং টি জল প্রতিরোধী শক্তি এবং টেকসই করে তোলে । পেন্ট ব্যবহৃত উপকরণ প্রধানত উদ্ভিজ্জ, এবং খনিজ উৎস থেকে। কালো হিঙ্গল পাথর থেকে, হরিতালী পাথর থেকে হলুদ, লাল রং এবং কজ্জল, বাইরে তৈরি করা হয়. হোয়াইট, গুঁড়ো সেদ্ধ, এবং ফিল্টার শাঁস থেকে প্রস্তুত করা হয় পট্টচিত্র । এর বিষয় বস্তু সাধারণত ধর্মীয়, পৌরাণিক, এবং লোক কথা সম্পর্কিত । কৃষ্ণ লীলা এবং প্রভু জগন্নাথ মহাপ্রভুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বস্তু এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় ।
এছাড়াও নারকেলের বাইরের ছোবড়া, টসর সিল্কের উপর, বাটির উপর, কাঠের বাক্সে তাদের থিম আঁকেন, এবং কাঠের দরজাতেও এগুলি আঁকা হয়। প্রাণী এবং চিত্রকলার অঙ্কিত পাখির উপর ভিত্তি করে আঁকা কাঠের খেলনা উৎপাদনেও এটা ব্যাবহার হয়।
পট্টচিত্র শিল্পী এছাড়াও নারকেলের বাইরের শাঁস, টসর সিল্কের উপর, বাটির উপর, কাঠের বাক্সে তাদের থিম আঁকা হয় , এবং কাঠের দরজা। প্রাণী এবং চিত্রকলার অঙ্কিত পাখির উপর ভিত্তি করে আঁকা কাঠের খেলনা উৎপাদন কাজ করেন।
গোটীপুও নাচ -
রঘু-রাজপুরের আরেকটি দিক হল এখানে ওড়িশি নাচের একটি বিশেষ শৈলী “গোটীপুও নাচ” শেখান হয়। এই নাচ ঈশ্বর মাগুণী দাস এর গুরুকুলে শেখান হত । এখন তাঁর ছাত্ররা ওই নাচ শেখান । এটি খুব কষ্টকর নাচ এবং সারা শরীর প্লাস্টিকের মতন বাঁকাতে হয় যার দারুণ ছোট বাচ্চা ছেলেদের দিয়ে এই নাচ সেখান হয়। দশাবতার, ঘোড়ার গাড়ী ইত্যাদি বিভিন্ন নৃত্য শৈলী এই নাচের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় ।
বসন্ত উৎসব -
‘পরম্পরা’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেন । ফেব্রুয়ারি ৪ এবং ৫ রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগের দ্বারা রঘুরাজপুরে ওই উৎসব সরকারি সাহায্যে কুশলী এবং গ্রাম্য কলাকারদের জন্য আয়োজিত হয় । কলাকারদের উৎসাহ বৃদ্ধি এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ।
ভারতের অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেমন জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যগত মত প্রকাশের ফর্ম, মৌখিক সাহিত্য,সঙ্গীত, নৃত্য, ক্রীড়া, পুরাণ, ধর্মানুষ্ঠান, পোশাক এবং ভাস্কর্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে. এই ঐতিহ্য জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ঘনীভূত পদ্ধতিতে সঞ্চালিত যেখানে সাংস্কৃতিকে , অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবিকা এবং আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সাথে সংযুক্ত করা হয় । এরই এক প্রয়াশ পরম্পরা স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা । তাই রঘুরাজপুরের কলা কুশলিরা আজ পরিত্যক্ত নন বরং তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার পথে উভয় কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারের উদ্যম প্রশংসনীয় ।