Thursday, March 19, 2015

পুরীর সাহিযাত্রা উৎসব ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৭.০২.২০১৫ /


 পুরীর  সাহিযাত্রা উৎসব  
ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী / ০৭.০২.২০১৫ / 
পুরী , উড়িষ্যার এক তীর্থস্থানই শুধু নয় এই সহরের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জগন্নাথ সংস্কৃতি অঙ্গে  অঙ্গে জড়িত ।  বিভিন্ন  পর্ব পর্বানির মধ্যে পুরী সদা সর্বদা উৎসব  মুখরিত তীর্থস্থান  । তাই কথায় আছে  এখানে বারো মাসে তের পার্বণ বা যাত্রা । বসন্তর আগমনে এখানে এক অদ্ভুত যাত্রা শুরু হয় নাম সাহি যাত্রা’ বাপথ প্রান্ত যাত্রা উৎসব’  । প্রায় ১২৩০ খৃষ্টাব্দ থেকে তখনকার গজপতি রাজা  চোড়্গঙ্গদেব’  বিভিন্ন আখড়া ঘরে মল্ল যোদ্ধাদের  নিয়ে জাগাঘর (ব্যায়াম ঘর) তৈরি  করেন । তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর রাজধানী পুরী যাতে সুরক্ষিত থাকে  । কোন বাহ্যিক শত্রুদ্বারা  আক্রমণকে  প্রতিরোধ করার শক্তি থাকে এই  মল্ল যোদ্ধাদের ।  তখন জগন্নাথ মন্দিরের চতুঃপার্শ্বে সুউচ্চ  মেঘনাদ প্রাচীর ছিলনা ।  এই মল্ল যোদ্ধাদের,   রাজা জগন্নাথ মন্দির সুরক্ষ্যার দায়িত্ব দেন।  তারা মন্দিরকে বাহ্য শত্রুর হাত থেকে রক্ষ্যা করার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র চালনা যথা তরওয়াল লাঠি চালনা প্রভৃতি যুদ্ধাস্ত্র  চালনাতে রপ্ত ছিল। জাগাঘর ছিল এইসব মল্ল যোদ্ধাদের  তালিম এবং শিক্ষা কেন্দ্র। 
সাহি’  মানে পাড়া’ । জাগা ঘর” মানে ব্যাম কেন্দ্র। পুরী মন্দির চতুঃপার্শ্বে সুউচ্চ প্রস্তর নির্মিত  মেঘনাদ প্রাচীর তৈরি হয় মন্দির সুরক্ষার জন্য ।
পুরীতে ৭ টা পুরন সাহি আছে যথাঃ- ১)হরচন্ডী সাহি ২)মার্কন্ডেস্বর সাহি ,৩) দোল মণ্ডপ সাহি ৪)বাসেলি সাহি ৫)মাটিমন্ডপ সাহি ৬)বালি সাহি ও ৭)গৌড় বাট সাহি  জগন্নাথ মন্দির এর চতুঃপার্শ্বে এদের অবস্থিতি  ।  এই সাহির অধিবাসীদের প্রধান দায়িত্ব ছিল মন্দিরকে বাহ্য শত্রু থেকে রক্ষা করা এবং তার জন্য তারা প্রত্যেক দিন জাগা ঘরে ব্যাম কুস্তি মল্ল যুদ্ধ  এবং লাঠি ও তরবারি  চালনা ইত্যাদি  অভ্যাস করত । সাধারণ জনতা এইখানে তালিম-প্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছথেকে বিভিন্ন কলা কুশলী শিক্ষা প্রাপ্তি করার সুযোগ পেত ।  প্রত্যেক সাহির একটা জাগা ঘর আছে  । উধাহরনতঃ ১। সুন্দরা জাগা ২। মল্লিগড় জাগা ইত্যাদি । 
এই জাগা ঘরের যোদ্ধারাই বাহ্য শত্রু থেকে একসময় জগন্নাথ মন্দির রক্ষা করেছিলতাই পুরীর গজপতি  রাজা জাগা-ঘরের মল্ল  যোদ্ধাদের  বিশেষ তালিম এর আয়োজন করেন তাঁর রাজধানী এবং মন্দির সুরক্ষ্যার জন্য । 
রাম নবমীর দিন থেকে প্রত্যেক জাগা ঘরের মল্ল যোদ্ধারা  তাদের যুদ্ধ কলা কুশলী পুরীর পথ প্রান্তে প্রদর্শন করে । ১৫ দিন ধরে এই যাত্রা চলে এই সময় এক বিশেষ সাজে নাগা নাচ’ হয় এবং  মল্ল যুদ্ধ কুস্তি ইত্যাদি প্রদর্শিত হয় । সাহি যাত্রার সময় ছোট ছোট পথ প্রান্ত নাটক প্রদর্শিত হয় । পুরীর সাধারণ জনতা এই পথ প্রান্ত নাটকের মাধ্যমে বিভিন্ন জাগা ঘরের কলা কুশলীদের রণ কৌশল নাগা নাচের মাধ্যমে উপভোগ করেন।
ওই সময় মল্ল যুদ্ধ ছাড়াও ছোট ছোট পৌরাণিক কাহিনী প্রদর্শিত হয় । সব সাহিথেকে এই যাত্রা আরম্ভ হয়ে পুরীর বাড় দান্ড তে এক হয় । হরচন্ডী সাহি মার্কন্ডেস্বর সাহি দোল মণ্ডপ সাহি ,বাসেলি সাহি মাটিমন্ডপ সাহি বালি সাহিগৌড় বাট সাহি এই সাতটি সাহিথেকে সাহি যাত্রা বেরয় । প্রত্যেক সাহির একটি স্বতন্ত্র চিহ্ন স্বরূপ পতাকা থাকে ।  প্রত্যেক সাহির আলাদা আলাদা ছোট নাটকের বিষয় বস্তু থাকে যেমন রাম জন্মদুর্গা ঠাকুরের দ্বারা মহিষাসুর নিধন রাবণের দ্বারা  সিতা হরণ রাম রাবণের যুদ্ধপঞ্চ মুখি গণেশ ,নৃসিংহ অবতার ইত্যাদি ।
 ব্যাঘ্র চর্ম  পরি-ধারিত এক বিরল সাজে নাগা নর্তক সুসজ্জিত হয়ে দর্শক কে তার রণ নৃত্য কৌশল প্রদর্শন করে। সেটাই এই যাত্রার মুখ্য আকর্ষণ নাগা নর্তক অস্ত্র সুসজ্জিত কটিদেশ  কুঞ্চিত গুম্ফ জোড়া তীক্ষ্ণ নাসিকা অট্ট হাস্য পূর্ণ  রক্ত চক্ষু দ্বয়ের রণ হুঙ্কার দর্শকের মনোরঞ্জনের এক মাধ্যম। নাগা নাচ পুরী ছাড়া অন্য কোথাও প্রদর্শিত হয়না । উড়িষ্যার এই মার্সল আর্ট অনেক দর্শক কে আকৃষ্ট করে।   
এই সময় বিদেশি পর্যটকেরা অনেকেই  নাগা নাচ এবং সাহি যাত্রার আনন্দ নিতে পুরী আসেন।  তাই এই সময় পুরী উৎসব মুখরিত এক পর্যটন কেন্দ্রতে পরিণত হয় ।

No comments:

Post a Comment