মা কালিজাই
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /
৩১.`১২.`২০১৪ / বেলা ১.`০৫
উড়িষ্যাতে ফি বছর হয় বন্যা , বাত্যা(সাইক্লোন) নয় অনাবৃষ্টি তে সাধারণ মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কালিজাইএর গল্প সেই সামুদ্রিক ঝড়ের এক মর্মস্পর্শী সত্যি ঘটনা
অবলম্বনে । “কলিজাই”
এর লোককথা উড়িষ্যার এক বরেণ্য সাহিত্যিক তথা পঞ্চ সখার এক মনিষী , পণ্ডিত গোদাবরিশ মিশ্র এক কবিতার
মাধ্যমে লেখেন । খুব প্রসিধ্য কবিতা ‘কলিজাই’। এই লোক কথাকে নাটকের মাধ্যমে অনেকেই উপস্থাপন করেছেন । আজকাল কিছু
ভিডিও ফিল্ম হয়েছে । তবে মুল কাহিনী অতি প্রাচীন ।
কলিজাই এর লোক কথা কাহিনীটি এরকম ঃ- চিলকা থেকে অনতিদূরে “বানপুরের” এক অনাম ধন্য গরিব ঘরের মেয়ে ‘জাই’ । যে সময়ের ঘটনা তখন বাল্য বিবাহর
রিতি ছিল প্রায় ১৭১৭ খৃষ্টাব্দের আগে । সেই সময় চিলকা হ্রদের মধ্যে অবস্থিত
পারিকুদ গ্রামের কোন এক যুবকের সঙ্গে ওই জাই এর বিবাহ হয় । জাই , বিবাহর পর বাপের বাড়ী আসে এবং পরে তার বাবা জাইকে নিয়ে পতিগৃহে যাত্রা
শুরু করে । জাই খুবই ছোট মেয়ে ছিল কিছুই বুঝত না । বেচারি নৌকোয় কখন চাপেনি । বাবা
সঙ্গে ছিল তাই সাহস করে বাবাকে আঁকড়ে ধরে নব বধূর সাজে । চোখে ভয় , আবার নতুন পতি গৃহে যাত্রার অন্য
অভিজ্ঞতার অজানা উৎকণ্ঠা র সমষ্টিতে এক অদম্য অনুভূতির পরি-প্রকাশ চোখে মুখে ।
নৌকা চলা কালীন সামুদ্রিক ঝড় ওঠে । চিলকা বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন হ্রদ । তাই ঝড়ের মাত্রা ক্রমে বাড়ে । জাই এর বাবা
মাঝিকে বলে, “ভল করি নাআ বা রে নাউরি ঝিওকু মাড়ুছি ডর” এর বাংলা মানেঃ- ভালো করে নৌকা চালারে মাঝি ... আমার মেয়ের ভয়
করে । ঠিক সেই সময় ঘূর্ণি ঝড়ের প্রকোপে নৌকো উলটে যায় এবং জাই চিলকাতে ডুবে যায় ।
ঘটনা চক্রে মাঝি এবং জাই এর বাবা কোন মতে নৌকো ধরে ফেলে কিন্তু জাইকে খুঁজে পাওয়া
যায়না । ওরা দুজনে ঘরে ফেরে ।
এরপর ঘটনা সাংঘাতিক রূপ ধারণ করে
। ওই জায়গা দিয়ে নৌকো চালাতে মাঝিরা ভয়
পায় কারন প্রায় সময় ওখানে নৌকো উলটে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে । ওখানে একটি ছোট্ট
পাহাড় আছে সেখানে জাই এর অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় । কোন লোক গেলে জীবন্ত ফেরে না
সেখান থেকে । ১৯৩০ এ ডঃ রাধা চরণ
পাণ্ডা লিখিত “পারি-কুদের ইতিহাস” এ বর্ণিত আছে ; পারি-কুদের তখনকার রাজা জগন্নাথ মানসিং ওই পাহাড়ে র
ওপর ১৭১৭ সালে জাইয়ের স্মৃতির
উদ্দেশ্যে এক মন্দির নির্মাণ করেন যার নাম
“কলিজাই মন্দির” । এখানে “জাইকে” মা কালির প্রতীক হিসেবে পূজো করা
হয় । চিলকার প্রত্যেক মৎস্য জীবীরা কলিজাই এর পূজো করেন । তিনি তাদের অধিষ্ঠাত্রী
দেবী । প্রত্যেক বছর মকর সংক্রান্তিতে (প্রায় ১৫ জানুয়ারিতে পড়ে এই মকর
সঙ্ক্রান্তি) কালি-জাইতে যাত্রা হয় । অনেক লোকের সমাগমে কলিজাই ঠাকুর পূজো পান । কথায় আছে এখানে পূজো দিলে
স্ত্রী,পুত্রের সংসারে কোন রোগ স্পর্শ করেনা। এটা লোকেদের
বিশ্বাস তাই এখন লোকে জায় মায়ের পূজো দিতে ।
কলিজাই মন্দিরের অবস্থিতি ঃ-
কলিজাই মন্দির চিলকা হ্রদের থেকে ১৮ কি।মি দূরে বালুগাঁ থেকে দক্ষিণে অবস্থিত ।
বালুগাঁ র বদলে বরকুল থেকে মাত্র ৮ কিমি মটর লাঞ্চে । ভুবনেশ্বর থেকে ৯০ কিলোমিটার
দূরে বালুগাঁ । বরকুল আর ৩ কিলোমিটার । চিলকার শোভা বর্ননা করে উড়িশ্যার বরেন্য কবি রাধানাথ রায় তাঁর
‘চিলকা’ কাব্যে লেখেনঃ-
“উৎকল কমলা বিলাস দির্ঘিকা
মরাল মালিনী নিলাম্ভু চিলিকা
উৎকলর তুহি চারু অলঙ্কার
উৎকল ভুবনে শোভার ভান্ডার”
বিরাট কবিতা র একটি বই ‘চিলিকা’ ।
এখানকার কলেজে পড়ান হয়।
মন্দিরের অবস্থিতি হ্রদের মধ্যে এক প্রাচীন পাহাড়ের ওপর । এখন পর্যটকের
ভিড়ে মন্দির প্রাঙ্গণ সুসজ্জিত । প্রায় মটর বোট যায় বরকুল এবং বালুগাঁ থেকে । তবে
বরকুল থেকে কাছে । বরকুলে সুন্দর পান্থনিবাস , হোটেল এবং টুরিস্ট রিসোর্ট আছে । রাত্রি যাপনের
সুবিধে আছে বরকুলে , বালুগাঁও দু জায়গাতেই। কিন্তু বরকুল
বেশি ভালো । বরকুল থেকে সরকারি মটর লঞ্চে যাওয়া বেশি ভালো কারন প্রাইভেট ছোট
বোটগুলি প্রায় খারাপ এবং অস্বকৃতিপ্রাপ্ত মালিক । এখানে বলে রাখি মেরি টাইম
চিলকা ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি , সরকারি সংস্থা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দ্বারা পরিচালিত । অফিসে টাকা জমা
দিয়ে বোট নিতে হয় । বালুগাঁ র মাছের বাজার প্রসিধ্য । এখান থেকে দেশ বিদেশে , চিলকার কাঁকড়া(৭৫০- ১০০০ গ্রাম
ওজনের) , ভাঙ্গর মাছ
(২.৫ – ৪ কিলো ওজনের) , তাছাড়া
এখানকার চিংড়ি( ২০০-৪০০গ্রাম ওজনের)দেশে
বিদেশে রপ্তানি হয় । চিলকা দেখার সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি । মাইগ্রেটরই বার্ড
বিরল প্রজাতির আশে । এ বছর চোখে পড়লনা খুব একটা । বাই কারে এলে হাই ওয়ের ওপর
বালুগাঁর কাছে “চিলকা ঢ়াবা” বিখ্যাত । নামেই ঢ়াবা আসলে
সুন্দর হোটেল । সপরিবারে রকমারি মাছ , কাঁকড়া খেতে পারেন।
রান্না সুস্বাদু ।
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.`১২.`২০১৪ / বেলা ১.`০৫
No comments:
Post a Comment