*কল্পতরুর সন্ধানে!*
শ্রীশুভ্র
কল্পতরু উৎসব দক্ষিণেশ্বর মন্দির ও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে! ১লা জানুয়ারী! ভক্ত
সমাগমে জনসমুদ্র! লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর লাইন! সবাই চলেছে পরমহংস
রামকৃষ্ণদেবের চরণে ভক্তিভরে প্রণাম নিবেদন করে সম্বচ্ছর ধনধান্যে সুখে থাকার
আশীর্বাদধন্য হতে! টিভি ক্যামেরায় ছয়লাপ! বছরের প্রথম দিন, মেঘলা আকাশ। কিন্তু
ভক্তবৃন্দের চোখে মুখে আনন্দের রোশনাই! মা চলেছেন পুত্র কন্যার মঙ্গল কামনায়!
ছেলেটা যেন ভালো একটা সরকারী চাকুরী পেয়ে যায় এবার! ভালো পোস্টে এপয়েন্টমেন্ট
পেতে গেলে ভালো মতোই ঘুষ দিতে হবে, তবু ঠাকুরের কৃপায় ঘুষের বহরটা যেন সাধ্যের
মধ্যেই থাকে! কন্যার জন্যে ভালো পেশাদার জামাইয়ের কামনায় চলেছেন পিতাও! বিশেষত
এনআরআই জামাই পেলে তো কথাই নেই! ঠাকুরের কৃপায় কি না সম্ভব! তিনি কল্পতরু! নতুন
চাকুরী তরুণ যুবার! দ্রুত উচ্চপদে অধিষ্ঠানের কামনায় চলেছে সেও সমান ভক্তি ভরে!
রীতিমত সাতপাকে ঘোরা বিবাহিত স্ত্রীর গর্ভে সন্তান নেই! অনেক স্থানে মানত করেও
ফল হয়নি! এবার পরমহংসের কৃপায় যদি ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে! তাই সন্তান কামনায়
বংশরক্ষার্থে বিবাহিত স্বামীও লাইনে হাঁটছেন! কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু
তর্কে বহুদূর! বারমুখো স্বামীকে ঘরে ফিরিয়ে আনার বাসনায় সতী সাধ্বী স্ত্রীও
পরমহংসের চরণে প্রণাম নিবেদনে চলেছেন সমান ভক্তিভরে! কতজনের কত বাসনা! ঠাকুর আজ
কল্পতরু! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগমে মনের মতো রূপসীদের
দেখার বাসনায় চলেছে সদ্য গোঁফ ওঠা তরুণ। দূর্গাপুজোর রাতের মতোই চেয়ে দেখার
আনন্দ! মন্ত্রীমশাইয়ের কল্যাণ কামনায় অনুচরবৃন্দও হয়ত রয়েছেন পরমহংসের কাছে
প্রার্থনা নিবেদনের লাইনে! রয়েছে চোর বদমাইশ বাটপারেরাও সিবিআইয়ের নজর থেকে
রক্ষা পাবার দূর্বার আশায়! রয়েছে সামনের নির্বাচনে প্রার্থীপদলোভী জননেতাও।
একটি নির্বাচনে জেতা মানেই কয়েক পুরুষের ধনৈশ্বর্য্যের গুপ্তধনের চাবি হাতে
পেয়ে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার! তিনি কল্পতরু পরমহংস আজ! তাঁর কাছে আজইতো
মনস্কামনা নিবেদনের দিন! বার্ধক্যের বাত যাতনা! ছেলে বৌয়ের গঞ্জনা! কল্পতরু
ঠাকুরের কাছে একটু সুখে শেষ কটা দিন কাটানোর প্রার্থনায় শারীরীক কষ্ট উপেক্ষা
করেও লাইনে সামিল দাদু দিদিমা! কত রকমের মানুষ, কত রকমের বাসনা! দীর্ঘ থেকে
দীর্ঘতর লাইন! পরম ধৈর্য্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে হাঁটছেন ভক্তবৃন্দ! আজ যে
কল্পতরু পরমহংসের কাছে প্রার্থনা নিয়ে ভক্তি নিবেদনের তিথি!
সমাগমে জনসমুদ্র! লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর লাইন! সবাই চলেছে পরমহংস
রামকৃষ্ণদেবের চরণে ভক্তিভরে প্রণাম নিবেদন করে সম্বচ্ছর ধনধান্যে সুখে থাকার
আশীর্বাদধন্য হতে! টিভি ক্যামেরায় ছয়লাপ! বছরের প্রথম দিন, মেঘলা আকাশ। কিন্তু
ভক্তবৃন্দের চোখে মুখে আনন্দের রোশনাই! মা চলেছেন পুত্র কন্যার মঙ্গল কামনায়!
ছেলেটা যেন ভালো একটা সরকারী চাকুরী পেয়ে যায় এবার! ভালো পোস্টে এপয়েন্টমেন্ট
পেতে গেলে ভালো মতোই ঘুষ দিতে হবে, তবু ঠাকুরের কৃপায় ঘুষের বহরটা যেন সাধ্যের
মধ্যেই থাকে! কন্যার জন্যে ভালো পেশাদার জামাইয়ের কামনায় চলেছেন পিতাও! বিশেষত
এনআরআই জামাই পেলে তো কথাই নেই! ঠাকুরের কৃপায় কি না সম্ভব! তিনি কল্পতরু! নতুন
চাকুরী তরুণ যুবার! দ্রুত উচ্চপদে অধিষ্ঠানের কামনায় চলেছে সেও সমান ভক্তি ভরে!
রীতিমত সাতপাকে ঘোরা বিবাহিত স্ত্রীর গর্ভে সন্তান নেই! অনেক স্থানে মানত করেও
ফল হয়নি! এবার পরমহংসের কৃপায় যদি ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে! তাই সন্তান কামনায়
বংশরক্ষার্থে বিবাহিত স্বামীও লাইনে হাঁটছেন! কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু
তর্কে বহুদূর! বারমুখো স্বামীকে ঘরে ফিরিয়ে আনার বাসনায় সতী সাধ্বী স্ত্রীও
পরমহংসের চরণে প্রণাম নিবেদনে চলেছেন সমান ভক্তিভরে! কতজনের কত বাসনা! ঠাকুর আজ
কল্পতরু! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগমে মনের মতো রূপসীদের
দেখার বাসনায় চলেছে সদ্য গোঁফ ওঠা তরুণ। দূর্গাপুজোর রাতের মতোই চেয়ে দেখার
আনন্দ! মন্ত্রীমশাইয়ের কল্যাণ কামনায় অনুচরবৃন্দও হয়ত রয়েছেন পরমহংসের কাছে
প্রার্থনা নিবেদনের লাইনে! রয়েছে চোর বদমাইশ বাটপারেরাও সিবিআইয়ের নজর থেকে
রক্ষা পাবার দূর্বার আশায়! রয়েছে সামনের নির্বাচনে প্রার্থীপদলোভী জননেতাও।
একটি নির্বাচনে জেতা মানেই কয়েক পুরুষের ধনৈশ্বর্য্যের গুপ্তধনের চাবি হাতে
পেয়ে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার! তিনি কল্পতরু পরমহংস আজ! তাঁর কাছে আজইতো
মনস্কামনা নিবেদনের দিন! বার্ধক্যের বাত যাতনা! ছেলে বৌয়ের গঞ্জনা! কল্পতরু
ঠাকুরের কাছে একটু সুখে শেষ কটা দিন কাটানোর প্রার্থনায় শারীরীক কষ্ট উপেক্ষা
করেও লাইনে সামিল দাদু দিদিমা! কত রকমের মানুষ, কত রকমের বাসনা! দীর্ঘ থেকে
দীর্ঘতর লাইন! পরম ধৈর্য্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে হাঁটছেন ভক্তবৃন্দ! আজ যে
কল্পতরু পরমহংসের কাছে প্রার্থনা নিয়ে ভক্তি নিবেদনের তিথি!
খুব বেশিদিনের আগের কথা নয়! তখন বৃটিশ আমল! এই দক্ষিণেশ্বরেই তরুণ যুবক নরেনকে
ঠাকুর বলেলন, মাকালীর কাছে যা চাইবি, তাই পাবি! তরুণ বিবেকানন্দ টাকাকড়ি,
চাকরিবাকড়ি, যুবতী নারী কিছুই চাইতে পারলেন না! চাইলেন শুধু জ্ঞান! আরও জ্ঞান!
পরিপূর্ণ আলো! যে আলোর সন্ধানে হাঁটতে হাঁটতে একদিন তিনিই হয়ে উঠবেন বিবেকানন্দ!
এই সেই দক্ষিণেশ্বর! সময় বদলেছে যুগ বদলেছে! মানুষ আরও বুদ্ধিমান হয়েছে! মানুষ
আজ আর তাই জ্ঞান চাইতে এখানে আসে না! তারা বুদ্ধিমান! বিচক্ষণ! বিবেকানন্দের
মতো হাঁদা গঙ্গারাম নন! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারানোর যুগ আর নেই! এখন কার ঘরে কত
অর্থ সেটাই সমাজে তার প্রতিষ্ঠার নির্ণায়ক! তাই আজ কি কালী কি পরমহংস!
প্রার্থনা একটাই! সুকুমার রায়ের সেই অন্ধ ভিক্ষুকের বর প্রার্থনার মতোই!
তেতালার ঘরে নাতি নাতনী নিয়ে স্ত্রীর হাতে যেন সোনার থালায় দুধে ভাতে প্রতিদিন
কাটে! কত বিচক্ষণ ছিল সেই হারহাভাতে অশিক্ষিত ভিখিরি!
ঠাকুর বলেলন, মাকালীর কাছে যা চাইবি, তাই পাবি! তরুণ বিবেকানন্দ টাকাকড়ি,
চাকরিবাকড়ি, যুবতী নারী কিছুই চাইতে পারলেন না! চাইলেন শুধু জ্ঞান! আরও জ্ঞান!
পরিপূর্ণ আলো! যে আলোর সন্ধানে হাঁটতে হাঁটতে একদিন তিনিই হয়ে উঠবেন বিবেকানন্দ!
এই সেই দক্ষিণেশ্বর! সময় বদলেছে যুগ বদলেছে! মানুষ আরও বুদ্ধিমান হয়েছে! মানুষ
আজ আর তাই জ্ঞান চাইতে এখানে আসে না! তারা বুদ্ধিমান! বিচক্ষণ! বিবেকানন্দের
মতো হাঁদা গঙ্গারাম নন! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারানোর যুগ আর নেই! এখন কার ঘরে কত
অর্থ সেটাই সমাজে তার প্রতিষ্ঠার নির্ণায়ক! তাই আজ কি কালী কি পরমহংস!
প্রার্থনা একটাই! সুকুমার রায়ের সেই অন্ধ ভিক্ষুকের বর প্রার্থনার মতোই!
তেতালার ঘরে নাতি নাতনী নিয়ে স্ত্রীর হাতে যেন সোনার থালায় দুধে ভাতে প্রতিদিন
কাটে! কত বিচক্ষণ ছিল সেই হারহাভাতে অশিক্ষিত ভিখিরি!
দক্ষিনেশ্বরের মন্দিরের গর্ভগৃহ! মায়ের স্বর্ণালঙ্কার শোভিত মূর্ত্তীর মাথায়
হীরে চুনী পান্না খচিত মুকুট! চারিদিকে গেরুয়া সন্ন্যাসী পরিবৃত! পূজা
উপাচারের ঘনঘটা! চুড়ান্ত আচার নিষ্ঠায় ভাব গম্ভীর পরিবেশে চলেছে পূজা! অন্যদিকে
স্বয়ং ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের ছবিতে মাল্যদান করে, একই রকম নিয়ম নিষ্ঠায়
পুজা পাঠ চলছে কাশীপুর উদ্যান বাটীতে! শাস্ত্রীয় আচার নিয়ম নিষ্ঠায় এতটুকু
ত্রুটি নেই কোথাও!
হীরে চুনী পান্না খচিত মুকুট! চারিদিকে গেরুয়া সন্ন্যাসী পরিবৃত! পূজা
উপাচারের ঘনঘটা! চুড়ান্ত আচার নিষ্ঠায় ভাব গম্ভীর পরিবেশে চলেছে পূজা! অন্যদিকে
স্বয়ং ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের ছবিতে মাল্যদান করে, একই রকম নিয়ম নিষ্ঠায়
পুজা পাঠ চলছে কাশীপুর উদ্যান বাটীতে! শাস্ত্রীয় আচার নিয়ম নিষ্ঠায় এতটুকু
ত্রুটি নেই কোথাও!
দীক্ষিত..সন্ন্যাসীদের..নিঁখুত..পরিচালনায়..স্বার্থক..কল্পতরু..উৎসব!
কিন্তু কি চেয়েছিলেন গদাধর? দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের কালীভক্ত পুজারী
ব্রাহ্মণ! অবতার রূপে ভাবীকালের হাতে ফুলবেলপাতা উপাচারে নিত্য পূজা পেতই
চেয়েছিলেন তো তিনি? তাঁর আরাধ্য দেবী মাকালীর মতোই ঠাকুরের মূর্ত্তী হয়ে ওঠাই
কি তাঁর স্বপ্ন ছিল! না কি, অন্ধকার তমসাচ্ছন্ন অশিক্ষিত চেতনাকে পূর্ণ জ্ঞানের
আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন! জ্ঞানালোকের শক্তিতে বলীয়ান করতে চেয়েছিলেন আপামর
মনুষ্য জাতিকে? ঠিক যে কাজে উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বসভায় উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর
শ্রেষ্ঠ শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দকে! যিনি পূজা পাঠ মানতের তমসাচ্ছন্ন মোহ থেকে
জাতিকে ও বিশ্বমানবকে আলোর পথে নিজের মেরুদণ্ডের উপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওঠার
মন্ত্র দিয়ে গেলেন!
ব্রাহ্মণ! অবতার রূপে ভাবীকালের হাতে ফুলবেলপাতা উপাচারে নিত্য পূজা পেতই
চেয়েছিলেন তো তিনি? তাঁর আরাধ্য দেবী মাকালীর মতোই ঠাকুরের মূর্ত্তী হয়ে ওঠাই
কি তাঁর স্বপ্ন ছিল! না কি, অন্ধকার তমসাচ্ছন্ন অশিক্ষিত চেতনাকে পূর্ণ জ্ঞানের
আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন! জ্ঞানালোকের শক্তিতে বলীয়ান করতে চেয়েছিলেন আপামর
মনুষ্য জাতিকে? ঠিক যে কাজে উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বসভায় উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর
শ্রেষ্ঠ শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দকে! যিনি পূজা পাঠ মানতের তমসাচ্ছন্ন মোহ থেকে
জাতিকে ও বিশ্বমানবকে আলোর পথে নিজের মেরুদণ্ডের উপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওঠার
মন্ত্র দিয়ে গেলেন!
হায় বিবেকানন্দ! হায় রামকৃষ্ণ! কি ছিল তাঁদের সাধনা! আর কি ফল ফললো! কোন জাতির
গর্ভে তাঁদের জন্ম! কোন অন্ধকার থেকে মুক্তির সাধনে তপস্যা করে গেলেন তাঁরা,
আর কোন অন্ধকারে আজ তাঁদের কর্ম সাধনা বাণী সব ধুলিস্যাৎ হয়ে তার উপরেই
প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল তাঁদেরই মর্ম্মর মূর্ত্তী, ধূপ ধুনো পুজা অর্চনা মন্ত্র
তন্ত্র কামনা বাসনা মানতের পরিবেষ্টনে! আর এটাই বাংলাদেশ! এটাই বঙ্গসংস্কৃতির
পরিচয়! এইটিই বাঙালিত্ব! কল্পতরুর সন্ধানে চলেছে একটা গোটা জাতি!
গর্ভে তাঁদের জন্ম! কোন অন্ধকার থেকে মুক্তির সাধনে তপস্যা করে গেলেন তাঁরা,
আর কোন অন্ধকারে আজ তাঁদের কর্ম সাধনা বাণী সব ধুলিস্যাৎ হয়ে তার উপরেই
প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল তাঁদেরই মর্ম্মর মূর্ত্তী, ধূপ ধুনো পুজা অর্চনা মন্ত্র
তন্ত্র কামনা বাসনা মানতের পরিবেষ্টনে! আর এটাই বাংলাদেশ! এটাই বঙ্গসংস্কৃতির
পরিচয়! এইটিই বাঙালিত্ব! কল্পতরুর সন্ধানে চলেছে একটা গোটা জাতি!
No comments:
Post a Comment