Thursday, January 1, 2015

পশ্চিম উড়িশ্যার , বরগড়ের বিখ্যাত পর্ব “ধনু যাত্রা” / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৭.১২.২০১৪ / সন্ধ্যা ৭.৪৮ /




    
      

       পশ্চিম উড়িশ্যার , বরগড়ের বিখ্যাত পর্ব “ধনু যাত্রা”
ত্রিভুবনজিৎ  মুখার্জী / ২৭.১২.২০১৪  / সন্ধ্যা  ৭.৪৮ / 
  
বরগড় , পশ্চিম উড়িষ্যার এক কৃষি প্রধান জেলা । ভুবনেশ্বর থেকে  বরগড় সহরের  দূরত্ব প্রায় ৩৩০ কিমি পশ্চিমে । পশ্চিম উড়িষ্যার এটি একটি  বিখ্যাত সহর । মহানদীর ওপর হিরা-কুদ বাঁধ নির্মাণের পর সেচের সমস্ত সুবিধা পেয়ে এই জেলা শস্যশ্যামলা হয় । এখানকার অধিবাসীরা প্রধানত: কৃষির ওপর নির্ভরশীল তাই তারা বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপন্ন করে থাকেন । বরগড় জেলার সদর মহকুমা ‘বরগড়’ সহর এছাড়া  অতাবিরা , সোহেলা , ভাটিলি এইরকম বেশ  কয়েকটি বিশেষ যায়গা আছে। 
বরগড়ের “ধনু যাত্রা” , পৌষ মাসের শুক্ল  পক্ষ পঞ্চমী  তিথি থেকে সুরু হয় “অম্বাপলিতে” (এখন এটি বরগড় মিউনিসিপালিটির একটি ওয়ার্ড)  এবং  শেষ হয় পৌষ পূর্ণিমার দিন । এই ১১ দিন বরগড় সহর উৎসব মুখরিত হয়ে ওঠে । এই যাত্রার ইতিহাস বহু প্রাচীন। হরি বংশ পুরাণ বর্ণিত দ্বাপর যুগের কথা-বস্তুর ওপর বর্ণিত বিশ্ব প্রসিধ্য ধনু-যাত্রা ভক্তি ভাবের অপূর্ব কলা সংস্কৃতির মহা মিলন ও নাট্যাভিনয় দেখতে দেশ বিদেশ থেকে বহু  লোকের সমাগম হয় । অনেক বিদেশি পর্যটক এই মুক্তাঙ্গন অপেরা দেখতে আসেন ।  
ধনু-যাত্রা , একটি বিশেষ ধরনের মুক্ত-মঞ্চ অভিনয় যেখানে কৃষ্ণ,বলরাম অত্যাচারী মথুরা নরেশ মহারাজ কংশ কে অবশেষে  বধ করে । 
এই যাত্রার এক সামাজিক দিক দেখলে এটাই বাস্তবে প্রমাণিত হয় ব্রিটিশ শাসনে অত্যাচারী ব্রিটিশ এবং পুঁজিবাদী জমিদারি শাসনের বীরুধ্যে স্বর উত্তোলন । প্রজারা জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের জন্য এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন  মুক্তাঙ্গন নাট্য কলার মাধ্যমে । সেটাই ধনুযাত্রার  শুভারম্ভ । কিন্তু ঐতিহাসিক রা বলেন এর শুভারম্ভ আর আগে ।  অত্যাচারী মহারাজ কংস এখানে জমিদারের প্রতীক এবং সেই মহারাজ কংস কে অতি ক্ষীণ এক বালক কৃষ্ণ সেজে বধ করে । এখানে কৃষ্ণ ধর্মের প্রতীক স্বরূপ সাধারণ প্রজা । নাটকের সংলাপ মুখস্থ এবং রিহার্সাল মাস মাস ধরে চলে। মথুরা নরেশ কংস স্বভাবত অত্যাচারী এবং সাধু সন্ত প্রজা সকলে তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে কৃষ্ণের শরণাপন্ন হন । কিন্তু বরগড়ের  কংস রাজা ঠিক উল্টো । তিনি দয়ালু,প্রজাবৎসল , অন্যায় অত্যাচারের বিরুধ্যে কঠোর কার্জানুষ্ঠান গ্রহণ করেন। মথুরা ভ্রমণের সময় কেউ অন্যায় করলে কিম্বা কর্তব্য সম্পাদনে অবহেলা করলে কংস রাজার দৃষ্টি গোচরে আনা হয় তখন সেই ব্যক্তি বিশেষকে ভুগতে হয় রাজার দণ্ড বিধান । জরিমানা আদায় কিম্বা সকলের সামনে কান ধরে ভুল স্বীকার করা ইত্যাদি । বেশ নাটকীয় ঢ়ঙ্গে এ সব দেখান হয়।  প্রসঙ্গে আসছি ঃ- 
এবারের ২০১৪ সালের কংস রাজার পার্ট করছেন হৃষীকেশ ভোই নামক এক সাধারণ সরকারি কর্মচারী । কংস রাজার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ তাই এর জন্য অনেক প্রার্থী থাকেন । এনাদের মধ্যে একজন কে বাছা হয় এই ভূমিকার জন্য।  অম্বা-পল্লি এখন  কাল্পনিক মথুরা নগরী এবং বরগড়ের পশ্চিমে ছোট্ট নদী নাম জিরা নদী এখন এদের “যমুনা নদী”  । এই জিরা নদী ব্যবহার হয় তিন দিন ।    ১১ দিনের বাদশা হৃষীকেশ ভোই হলেন কংস রাজা । ওনার হুকুম তলব করতে জেল্লা শাসক , পুলিস সুপার সবাই বাধ্য। এটাই এখানের অলিখিত নিয়ম যা উড়িষ্যা  সরকারের দ্বারা স্বীকৃত মনোরঞ্জনের জন্য । এই পরম্পরাকে স্থানীয় বিধায়ক , সাংসদ সকলেই মেনে নেন । লোকেদের ধর্মীয় ভাবের কাছে প্রশাসন এই কদিন উৎসব এর আনন্দে কোন বাধা সৃষ্টি করেনা এটাই এখানকার পরম্পরা । কৃষ্ণ বলরামের ভূমিকায় যে দুই বালক অভিনয় করে তাদের স্বয়ং ভগবানের অবতার রূপে মনে করে এই অঞ্চলের লোকেরা । ভাব বিহ্বল হয়ে তারা এখানকার প্রচলিত লোক সঙ্গীত , পালা গান, দাস কাঠিয়া র মতন কিছু পরম্পরাগত লোক কলা প্রদর্শন করেন । এই ১১ দিন এখানে কেউ আমিষ খায়না। সমস্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা জাতি বর্ণ নির্বিশেষে এই কদিন স্বাকাহারি ভোজন করেন ।
এই ধারাবাহিক মুক্তাঙ্গন অপেরা লোকার্পিত হয় ১১ দিন ধরে যা অত্যন্ত মনোরম , শিক্ষণীয় । ভারতবর্ষের  বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ধনু-যাত্রা দেখতে লোকে আসেন উপভোগ করেন । আমার এই যাত্রা দেখার সুযোগ হয় তাই আমি এর কিছু আভাস দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।  

  

No comments:

Post a Comment