৩য় পর্ব
.............................. .............................. .............................. ...................
সুদিপ্তর মা সল্ট লেকে মামার বাডিতে থাকেন এ জে ব্লকে । মামা র সিটি সেন্টারে দুটো দোকান । একটা গারমেন্টস্ এর আরেকটা ইলেক্ট্রনিক্স্ এর শো রুম। প্রচুর বিক্রি হয়। মামার ইছে ছিল সুদিপ্ত কে এম বি এ পডানোর । ওনার ছেলে নেই তাই সুদিপ্ত,সুশান্ত দুজন কেই ছেলের মোতন দেখেন। মা’র ঘর ঠাকুর ঘরে । মা পুজো আচ্ছা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটান । প্রত্যেক মঙ্গল শনি দক্ষিনেশ্বর কালি বাডি গিয়ে পূজো দেন দুই ছেলের নামে। মামা গাডি দিতে চাইলে , মা’ গর রাজি হন বলেন “অত আডোম্বরে পুজো দিলে ঠাকুর গ্রহন করেন না”।মহিলাদের মাথায় কে যে এই সব ঢ়োকায় যানিনা । নিজেদের কষ্ট দিতে এদের জুডি নেই।সুশান্ত কিছুদিনের জন্য খডগপুর থেকে মায়ের কাছে এলো মাকে দেখা করতে । মা আনন্দে আটখানা ছেলেকে পেয়ে । আনন্দাশ্রু দুচোখ বেয়ে গডাতে লাগ লো । সুশান্ত ধির স্থির খুব শান্ত মেজাজের ছেলে । বাবার দেহান্তর পর আর যেন শান্ত। দাদা চলে যাওয়ার পর ওর দায়িত্ত বেডেছে । প্রায় দিন ফোনে মা'’র খবর নেয় ।
ঘরে ঢ়ুকে মাকে প্রনাম সেরে হাত পা ধুতে যায় ।
মা তোয়ালে দিতে দিতে বলেন, “রাস্তায় কষ্ট হয় নি ত বাবা” ।
কষ্ট কিসের মা ! তোমাকে ছেডে থাকার কষ্ট বলছো !! না অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।
না না ট্রেন জার্নি করে এলি তো তাই বলছি ।
ও ওভ্যেস হয়ে গিয়েছে। এই টুকু ত পথ । সকলে ডেলি পেসেঞ্জারি করে কোলকাতা থেকে ।
হ্যাঁ তা করে । স্নান টা সেরে নে আমি খাবার বাডছি ।
এই সময় মামি এলেন এক থালা জলখাবার নিয়ে । লুচি ফুল কপির তরকারি , বেগুন ভাজা , পায়েস আর মিষ্টি ।
ধপাস করে প্রনাম মামিকে। কেমন আছো মামি ?
ভালো । তুই কেমন আছিস ? এতো রোগা হয়ে গেছিস কেনরে?
হস্টেলে কি খাস না ভালো করে?
কি যে বল । তোমরা মায়েরা শুধু আমাদের রোগা হতে দেখ । বন্ধুরা বলে মোটা হয়ে জাচ্ছিস খেয়াল রাখিস। জিম্ এ যা নয়তো ভুগবি।
কোন বন্ধু , ছেলে না মেয়ে ? মা বলেন ।
খুব অপ্রস্তুত মনে হল সুশান্ত কে। আমি দাদা নয় মা যে হুট্ করে....
থাক থাক । আর বলতে হবে না । উনি যাওয়ার এক বছর না হতেই ছেলে ............ চোখের জল পুঁছতে পুঁছতে মা .............
আহ্ কান্নার কি আছে মা আমি ত আছি !
হ্যাঁ সেই আসায় বসে আছি। তোরা মানুষ হলে আমি কি তোদের বিয়ে দিতাম না । আমার কত সখ ছিল .............।
ঠিক আছে ঠিক আছে । দাদা তো আমাকে হাজার ডলার পাঠিয়েছে ।
তা কি বেশি করেছে শুনি । ছোট ভাইয়ের জন্য উনি করেন নি । সারা জন্ম ভাই বোন কে দেখলেন তারা এখন মুখ ঘুরিয়ে থাকে । আমার কপালে জত কষ্ট !
ঠাকুরঝি তুমি খেয়ে নাও । “ও সব কথা থাক” মামি বলেন । রান্না ঘরে গেলেন রান্নার ঠাকুর (জগা ননা) কে ফরমাজ করতে দুপুরের রান্না র জন্য ।
জগা ননাকে অনেক দিন থেকে দেখি মামার বাডিতে রান্না করতে । জগা ননা র গ্রাম উডিষ্যা র ভদ্রকে । , মাছ মাংস দারুন করে।
সুশান্ত জলখাবার খেয়ে নেটে বোসলো । এফ বি খুলে বন্ধুদের সঙ্গে একটু চ্যাট্ করে দাদার কিছু ফটো দেখলো । দাদা সুদিপ্তা বৌদি স্ট্যাচু অফ্ লিবার্টি , নিউ ইয়র্কের আরো কিছু যায়গা , বিভিন্ন শপিং মল এর ফটো , হ্বাইট্ হাউসের কিছু ফটো র ব্যাক গ্রাউন্ডে ওদের ফটো পোষ্ট গুলো দেখলো । ভালোই হয়েছে ফটো গুলো । পিকাসা তে আপ্লোড্ করে এ্যাল্বাম বানাল "দাদা বৌদি এট স্টেটস্" ।
দাদাকে ফটো পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওর কিছু কলেজের তোলা ছবি আপ্লোড্ করে পাঠালো । বৌদি কে হায় জানালো ।
দুপুরের খাওয়াতে জগা ননা , ইলিস মাছের ঝাল , মোচার ঘন্ট , ফুল কোপির তরকারি,পাঁপোড় ভাজা ,টমাটোর চাটনি , পায়েস , মিষ্টি ,দই ইত্যাদি ভালোই বানিয়েছিল । ভাতটা আমি এম্নিতেই কম খাই । এই বয়েসে মোটা হলে আর দেখতে হবে না। বন্ধুরা টিটকিরি মারবে ।
খেয়ে বিকেলে পার্কে বেরুলাম । রাস্তায় 'শ্রাবন্তির' সঙ্গে দেখা। ও পার্কে যাচ্ছিল ।আমাকে আগে থেকেই বলেছিল পার্কে যাওয়ার জন্য । আমার সঙ্গে পা মেলালো ।
শ্রাবন্তি আমার সঙ্গে স্কুল থেকে কলেজ ওব্ধি পডেছে । একি কলেজে একি ক্লাসে পডেছি ১২ক্লাস ওবধি । আমার সঙ্গে আই আই টি এন্ট্রান্স্ ও দিয়েছিল বেচারি পায়নি । খুব ভেঙ্গে পডেছিল। জয়েন্টের রেসাল্ট ভালো ছিল ও এখন শিবপুরে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পোডছে । ভালই পডে তবে বড্ড পাকা । কিন্তু মেয়েটা ভালো । আমাকে খুব ভাল বাসে । আমিও ।
কিরে কবে এলি?
আজকে ।
কত দিন থাকবি ?
পরশু চোলে যাবো।
কেন ওখানে কেউ নতুন বন্ধু হয়েছে বুঝি ?
তোদের মেয়েদের ওই এক কথা ! এতো জেলাস কেন বলতো তোরা ?
বাব্বা ! বিবেকানন্দ হলি নাকি? আমি কি জিজ্ঞ্যেস করছি তুই কি ভাবছিস ! আমি বলছি তোর নতুন কোন ছেলে বন্ধুর কথা ।
কেন তার সঙ্গে লাইন মারবি ?
দেখেছিস্ কে জেলাস্ !
ছাড । তোর সেমিষ্টার শেষ হয়েছে ?
হ্যাঁ । তোর ?
তাই জন্যই ত আস্তে পেরেছি।
তাই বল। হ্যাঁরে মাসিমা কেমন আছেন ?
ভালো ।
তোদের বাডি নিয়ে যাবি?
রক্ষে কর আর কেল করিসনা ! মা’ যা রেগে আছেন দাদার ব্যাপারে !!
কেন তোর বৌদি ত তোর দাদার প্রজেক্টে আছেন, না ? কি মজা দুজনে খুব এঞ্জয় করছে বল। তোর ইচ্ছে করে না স্টেস্ এ যেতে বি.টেক্ এর পর ?
না দাদা যে ভুল করেছে আমি তা কোরবোনা ।
তোর দাদা বৌদির ফটো দেখাবি।
কি হবে দেখে ?
ইন্সপায়ার্ড হব ! আমারাও যাবো ।
মানে ?
ওরে ভোঁদাই, বিবেকানন্দ !এই আমায় কিস্ করবি?
তুই খুব ফাজিল হয়ে গেছিস ।
কেন আমার পেছনে লেগে আছিস? দু দিনের জন্য এসেছি তাও তুই আমাকে সিডিউস্ করছিস ? কেন ?কলেজে ফোন ত করিস । হস্টেলে ছেলেরা আমাকে বলে তোর গার্ল ফ্রেন্ড্ !!
আমি কি বলি বল ?
কেন তুই বলবি হ্যাঁ । আমার হবু বৌ । দেখবি ওরা চুপসে যাবে। ঠিক কি না।
সুশান্ত চুপ করে যায়। ওর মা’র কথা বলে। ওর মা কত কষ্ট পাচ্ছে দাদা ওই কান্ড করাতে।
দেখ ‘সু’ আমাকে আর বোঝাস না ! তোর দাদা যা করেছেন ঠিক করেছেন । সুন্দর দেখতে বৌ আবার সেম প্রফেসেনে আছেন ওনারা । তোর বৌদির বাবা মা আই .এ.এস অফিসার । আর কি চাইতিস তোরা ?
ওইটাই তো মায়ের অসুবিধে । মা ঘরোয়া মেয়ে ...........
রাখ রাখ ওই গেঁও ..........
এটা খুব অব্জেক্সনেবিল কথা বলেছিস কিন্তু। আমি এটা পছন্দ করিনা কিম্বা আশা করিনা তোর কাছ থেকে অন্তত ।
এই ! আমি তোর মাকে মানে মাসিমাকে বলেছি নাকি ? আমি কথাটা শেষ করিনি ..........
ঝগডা করতে আমি ভালো বাসিনা।
সেত যানি বিবেকানন্দ ! মাই সুইট হার্ট । আই লাভ ইউ ।কিরে কিছু বোলছিস না যে। তুই কি রিতুপর্ণ ঘোস নাকি রে ?
দেখ বাডা বাডি হচ্ছে ।
তবে চুপ করে আছিস কেন? দেখ এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে । পাসে তুই আর আমি। কি রোমান্টিক না !!
আমি যাচ্ছি ।
বোস না । আমি মেয়ে হয়ে বসেছি তুই কেন লজ্যা পাচ্ছিস ? সত্যি তোরা দুই ভাই এক কেটেগোরির !! ডিব্বা কোথাকার !! বলে হাঁসে ।
ওই ববির ডায়লগটা মনে রেখেছিস আর ওর এপ্লিকেসন্টাও তোর জানা।
তা কি করবো ? তোরা যদি চুপ করে থাকিস কিছু না বলে আমরা মেয়েরা কথা বলতে বাধ্য হই ।
প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করলো সুশান্ত । তুই কখন পডাসোনা করিস ? আমার সেমিষ্টারের পরিক্ষার জন্য প্রিপারেসন করতে হবে । চল যাই । মা চিন্তা করবেন।
ওরে মাতৃভক্ত ছেলেরে । সত্যি তোদের মত ছেলে পাওয়া মুস্কিল । গুড গুড বয় । ওরে আমার ভোলা রে । বলে একটু আলত থাপ্পড দিল পেছনে।
তুই কিন্ত আমার কোকা কোলা হতে পারবিনা।
কেন ? আই আই টি তে পেলাম না বলে বলছিস ।
না তা কেন?
তবে?
তবে আবার কি !তুই নিজেই ভেবে দেখ। আমি এবার চলি। বাই ।
বাই । আবার কবে আসবি?
দেখি । ফাজলামি না করে পডাশুনোর দিকে মন দে ।
আমাকে একটু পায়ের ধুলো দিবি ? তোর মত ভালো ছেলে আমাদের কলেজে একটাও দেখিনি ! শালা মেয়ে দেখলে জিব দিয়ে জল পডে আর মাষ্টার গুলো আরো হারামি । খালি ছুঁক ছুঁক করে।
পায়ের ধুলোর দাম আছে। দিতে পারবি ?
হ্যাঁ । দিতে পারবো ।
তবে বি। টেক্ এ ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়ে দেখা।
আই এক্সেপ্ট্ ইট মাই লাভ্ । কিন্তু তোকেও তাই হতে হবে ।তার পর কিন্তু আমি যা বোলবো তোকে মানতে হবে ।
চেস্টা করবো । তারপর ঠাকুরের ইচ্ছা । মায়ের আশীর্বাদ থাকলে নিশ্চই হবে ।
দু জনে দু দিকে চলে গেল ।
৪র্থ পর্ব
সুদীপ্ত , সুদীপ্তা দুজনেই প্রজেক্টের কাজে খুব ব্যাস্ত থাকে । নতুন প্রজেক্ট আর ক্লায়েন্ট নিয়ে ওরা নিজেদের কাজে এতো মসগুল থাকে যে ভালকরে কথা বলার সময় পায় না। এদিকে সুদীপ্তর মা অন্য কথা ভাবেন। ছেলের ফোনের জন্যে বসে থাকেন ভোরে । অনেকদিন ফোন না পেয়ে সুশান্ত কে দাদার খোঁজ নিতে বলেন। সুশান্ত পরের সেমিষ্টারের জন্য প্রস্তুতি চালায়। টপ র্যাঙ্কের জন্য রাত দিন পড়াশুন করতে থাকে। ওদিকে শ্রাবন্তি আর ফোন করেনা । ও নিশ্চই ভালো করে প্রিপারেসন করছে ।
একদিন মা , দুই ছেলের খোঁজের জন্য মামাকে বলেন, “দাদা একটু ফোন করবি ছেলে দুটোকে । অনেক দিন কোন খবর পাই না । কি করছে দু জনে কে জানে ?”
নাম্বার আছে?
মা, সুশান্তর নাম্বারটা রেখেছিলেন , বললেন এই নে ।
মামা সুশান্ত কে ফোন করাতে ফোন সুইচ অফ দেখাল ।
মামা বিব্রত হলেন পরে বুঝলেন নিশ্চই ক্লাসে অথবা পড়াতে ব্যাস্ত । বোনকে বললেন ব্যাস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই ওরা দুজনে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। তুই যা আমি পরে খবর নিয়ে বলব তোকে ।
আচ্ছা । বলে মা চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে ।
নিউয়র্ক সহরঃ-
আলো ঝলমলে রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা । গাডী নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ঘুরতে। আজ শনিবার ওদের ছুটি । বলা বাহুল্য সুদীপ্ত এখানকার ড্রাইভিং ট্রেনিং পাস করে লাইসেন্স পেয়েছে। সুদীপ্তাও জানে তবে এস।উ।ভি চালাতেই ও ভালোবাসে। এখানকার রাস্তাতে গাডী চালানোর মেজাজই আলাদা । লং ড্রাইভে যেতে মজা লাগে। সারা শহরের শপিং মল ওদের মুখস্ত। কোথায় ইন্ডিয়ান ডিশ পাওয়া জায় সেখানথেকে কিনে আনে। স্রিম্প প্যাক আনে , ব্রকলি আর কেপ্সিকাম দিয়ে সুদীপ্তা ইন্টারনেট দেখে রান্না শেখে । ওরা ওই খায় । দুধ টা ভালো আর ফোর সিরিয়ালের আটা দিয়ে রুটি বানায়। তবে রুটিও কিনতে পাওয়া যায়। কাল পার্টি আছে। সুদীপ্ত এখানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হল তাই। এতো তাড়াতাড়ি পি.এম. হওয়া আর নতুন প্রজক্টে এর দায়িত্ব নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওর প্রজেক্টের কাজের জন্য একজন সিনিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার (SPM ) ওকে গাইড করবেন।
আজ শনিবার ওহিও তে পার্টি দিচ্ছে সুদীপ্ত এবং সুদীপ্তা দুজনে। প্রায় জনা ১৬ র মত নিমন্ত্রিত ছিলেন। সুদীপ্তার মা বাবা ইন্ডিয়া থেকে ফোনে উইস করলেন ওদের দুজনকে। সুদীপ্ত অনেক দিন পর মা’কে প্রনাম জানালো । নতুন প্রমোশনের কথা জানালো । মা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলেন, মামা, মামি সকলেই খুব খুশি হলেন এই সম্বাদে । সুশান্ত কে ফোনে পেল না সুদীপ্ত । মনটা একটু খারাপ হল। পার্টি রাত প্রায় ১০ টা অবধি চলল । এখন সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই ওহিও তে থাকবে।
সুদীপ্ত কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো যে মাঝে মাঝে সুদীপ্তা ওকে কাছে পেত না। এমনকি রাতে সুদীপ্ত অফিসে থাকতে আরম্ভ করে। রাতের পর রাত সুদীপ্তা র অশহ্য লাগে ।সুদীপ্তা ওর মা’কে ফোন করে বলে সব কথা । মা বলেন কাজের মানুষ দের একটু সহ্য করতে হয় মা । আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু ও ত কঞ্জারভেটিভ ছেলে হয়তো ওর মা কিছু বারুন করেছেন। তুমি একটু মানিয়ে নাও না ।
না মা সেরকম নয়। ওর মা’র সঙ্গে ও অনেকদিন কথা বলে নি ফোনে। এমন কি আমার সঙ্গে দু একটা কথা তাও অফিসের ছাডা অন্য কথা নয়। এরা কিরকম পুরুষ মানুষ ? এদের কি ইচ্ছে বলে কিছু নেই মা ?
মাই চাইল্ড্ । ইউ হ্যাভ গ্রোন আপ্ । টেক ইওর ওন ডিসিসন্ । আই উইল টক টু ইওর ডেড্ ওকে । কুল বেবি কুল।
এর মধ্যে সুদীপ্তার , “অর্ণবের” সঙ্গে পরিচয় হয়। অর্ণব, প্লেন্টো টেক্সাসে , ভাইস চেয়ারম্যান অফ দি বোর্ড ক্লাউড সিকিউরিটি তে কাজ করে। ও এখানকার গ্রীন কার্ড হোল্ডার । অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সুদীপ্তা ওর সঙ্গে বেশি মেলা মেসা করতে থাকে । শপিং মলে উইক্ ডেয়েসে শপিং করে । সুদীপ্ত কাজে ব্যাস্ত। ও কম্পানি চেঞ্জ করবে শুনছি।
সুদীপ্তা , অর্ণবের কথা মা’কে বলেছে । মা সেরকম সায় দেন নি। বলেছেন, “তোমার জীবন সঙ্গি তুমি নিজে বেছে নাও যেরকম আমরা করেছি । তবে আমি এক জনকেই ভালো বেসেছিলাম তিনি তোমার বাবা।” নাও ইট ইস আপ্ টু ইঊ ! উই হ্যাভ গিভেন ইউ ফ্রিডম বাট ইউ মাস্ট নট টেক দ্যা এডভান্টেজ অফ ইট ।
মামা আই লাভ সুদীপ্ত বাট হি নেগ্লেক্টস মি...মামা ! কাঁদতে কাঁদতে বলে।
মে বি হি ইস ওভার এম্বিসিয়াস । ওয়েট এন্ড সি । ডোন্ট ট্রাস্ট নেটিভ এমেরিকান মাই বেবি ।
ওকে মামা । বাই।
বাই।
সুদীপ্ত রাত করে ফিরেছে । ওর মুখে ক্লান্তির ভাব । এসেই সুয়ে পড়লো । সুদীপ্তা বিছানায় কাছে টেনে কিস করতে চাইলো কিন্তু সুদীপ্ত বললো কালকে ললিপপ খাবো আজ শুয়ে পড প্লিজ। আমি খুব টায়ার্ড ।
কি ভাব তুমি আমাকে সু ? আমার কোন ইচ্ছে নেই ! কেন আমাকে তুমি এভোয়েড করছো ?
না না আমাকে ভূল বুঝো না। আমি সত্যি টায়ার্ড । আমাকেও বুঝতে চেষ্টা কর।
আমি ..আমি.. না থাক !
সুদীপ্ত শুয়ে পডেছে । একটা বাচ্চা ছেলের মত লাগছে ওকে।
সুদীপ্তা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো ।
সকালে ঘুম থেকে সুদীপ্ত এমনিতেই তাড়া তাড়ি উঠে পডে কিন্তু আজ ওর আগে সুদীপ্তাকে শুয়ে থাকতে না দেখে আশ্চর্য লাগলো । একটা ভাঁজ করা চিঠি ড্রেসিং টেবিলের ওপোর দেখে সুদীপ্তর ছ্যাঁক করে উঠলো ।
দীর্ঘদিন রইলাম তোমার হয়ে সুদি প্ত , তোমায় ভালবেসে, অভ্যাসে অনভ্যাসে, সুখে দুঃখে । অথচ দেখ, তোমায় ছেড়ে যেতে একটুও ক ষ্ট হচ্ছেনা আমার । এত ভালবাসলে আমায়, আমি কি একটুও বাসিনি তো মাকে?খুব বেসেছি। কিন্তু আমার ও পর তোমার অধিকার বোধ, তোমার মা লিকানা,তোমার নিজস্ব পছন্দ অপছন ্দগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দেওয় া, আমার আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ ত্রাটাই মানতে না চাওয়াটা মনে মনে হাঁপিয়ে তুলত আমায়, হাঁপি য়ে তুলছিল । আমি মুক্তি চাইছি লাম। চাইছিলাম একমুঠো আকাশ। একট ু বাতাসের দমকা স্পর্শ। একটুকরো স্বাধীনতা । আর আজ যে তোমায় শুধু সেই কারণেই সেভাবে ভালোবাসিনা। ভা লোবাসতে পারছিনা। কারন ভালোবাসার নাটকে আমি অভ্যস্ত নই। একথা তোমাকে জানাতে খুব খারাপ ল াগছে ! হয়ত হ্যাঁ, আবার, হয়ত না । ভাবছো তো তোমাকে বহুদিন ধরে প্রতারনা করেছি । কি ন্তু মনের দিক দিয়ে ‘না’ । সেজন্য সত্যিবড় কষ্ট হয়েছে বু কের ভিতর ! বার বার বলতে চেয়ে ছি তোমাকে। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসহী নতার চোরাবালির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারছিনা! অথচ যতবার এসব বলতে গিয়ে তোমার মুখের দি কে তাকিয়েছি, ভেসে গেছি তোমার ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, মাদকতায়, সমর্পনে। আমার মনের মানুষটিকে ত োমার চেনার কথা নয় । তোমার চো খের আড়ালে ওর সাথে আমার সম্পর্ ক গড়ে উঠেছে, সেও তো কম দিন হল না। আমেরিকা তে আসার পর থেকে তুমি শুধু কাজ নিয়ে মাতলে। আমাকে অবঙ্গা করেছ । হয়তো না জেনে কিন্তু তুমি তোমার ব্যক্তি স্বাধিনতা কে প্রাধান্য দিয়েছ । আমি অন্ধকারে হাত বাডিয়ে তমাকে অন্ধের মত খুঞ্জেছি । পাইনি আমি সেই সুদিপ্ত কে যে আমায় অকুন্ঠ ভালোবাস্তো। আজ আর এসব কথার ক োন অর্থ নেই । দুই পরিবারের সম্ মতিতেই আমরা বিয়ে করে নিয়েছি সুদিপ্ত। আমি তোমা কে ঠকাই নি। আমি যা চাই তা পেলাম না তোমার কাছ থেকে তাই চা ইছিলাম মুক্তি । তোমার অহমিকার কাছে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলাম না । আমার দ্বিতীয় স্বামি অর্ণব খুব ভালো ছেলে ও আমার সব কথা শুনেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হল।আমিও স্বাধি ন। ও খুব নরম মনের ভালো মানুষ । বিশ্বাস কর, খুবসুখে থাকব আমি ওর সাথে । আমায় নিয়ে আর না ভে বে নিজের খেয়াল রেখো । ওটাই বা স্তব । একা থেক না আর । পারলে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর দেখে মেয়ে বিয়ে করে নিও । সে যেন আমার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালো বাসে । তোমার মা আমাকে কখন পছন্দ করতে ন না তাই তুমি মুক্ত।আমি যানি তুমি তোমার মায়ের বাধ্য সন্তান , তাই আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম । তু মি আবার বিয়ে কর আমার চেয়ে বেশি দেখতে সুন্দর দেখতে এমন একটা মেয়ে ! হ্যাঁ আমি জানি তুমি হয়তো আমার জন্য দুঃখকরবে তবে সে টা সাময়িক । পরে কাজের চাপে সব ভুলে যাবে । ভাল থেক । এটা লি খতে লিখতে আমার চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে । কাল সারা রাত আমি শুতে পারিনি আমিও ত মানুষ কিন্তু তোমার মত যন্ত্রমানুষ নই। বাই বাই । ভালো থেক আমাকে ভূলতে চেষ্টা কর ।
সুদীপ্ত চিঠিটা ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো । ভূল তার, কিন্তু জীবনে একটাই মেয়ের সংস্পর্শে এসেছিল সে এরকম প্রতারনা করবে বুঝে উঠতে পারেনি। বাবা মা’ য়ের কথা মনে পড়লো । হয়তো মা চাইছিলেন না। তাই এরকম হল তার জীবনে । সে ফিরে যাবে ইন্ডিয়া তে। নতুন করে জীবন শুরু করবে আবার । যন্ত্র মানুষ নয় সুধু মানুষ হয়ে । মাকে নিয়ে যাবে বেঙ্গালুরুতে । তিরুপতী দর্শন করাবে । ভাইকে আরো পডাবে । সে যেন তার মত দুঃখ না পায়।
****এটা শেষ নয় এটাই আরম্ভ**** ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৫.১২.২০১৪ / বৃহস্পতিবার / ।
No comments:
Post a Comment