Monday, May 26, 2014

এই মন এই দেহ /রেজা নুর /


এই মন এই দেহ

রেজা নুর
উঠোনের কোণে গোলাপ গাছ লাগিয়েছে আসমা। শুরুতে, কদিন পর পর নতুন নতুন চারা এনে লাগাত।  দেখে, বাবা বােঁশর চটার বেড়া দিয়ে দিলেন। বালিকা বয়সে জামতলার ছায়ায় খেলার ফাঁকে ফাঁকে বেড়ার ভেতরে নিশ্চুপ, মাথায় সবুজ পাতার ঝোঁপ নিয়ে বসে থাকা গাছগুলো দেখে যেত। সাথীরা হাসতো। বলতো, ‘তোর বাগান কি এখনই ফুলে ভরে উঠবে? কেবলই তো লাগালি। বার বার যেয়ে দেখতে হয়? লজ্জায় হেসে আবার খেলায় মন দিত। আজ সেই বাগানে কত ফুলগাছ এসেছে। যখনই কারও কাছে খোঁজ পায় নতুন ফুলের, আনিয়ে নেয়। সেদিনও, ওপড়ার কেউ টাইমফুলের সন্ধান দিলে, নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে। লালচে চিকন বাঁকা বাঁকা দˆ ভেঙে মাটিতে পুঁতে দিলে কদিন পরে সরু সবুজাভ পাতার চোখে উঁকি দেয়। 

বর্ষা চারদিক ধুয়ে মুছে বিদায় নিয়েছে। পরিছন্ন আকাশে ফিনফিনে মেঘেরা বেড়াতে আসে। হঠাত হঠাত ধোঁয়াশার মতো উড়ে এসে আবার মিলিয়ে যায়। দেখে যায় গোপিকান্ত পুরের এই সময়ের আয়োজন। হাইস্ুল মাঠে টিচারষ্ রুমের সামনে শারদীয় পূজার মˆপ বানানো হয়েছে। পূজার ছুটিতে স্ুল ঘরটা বিশাল মাঠে একা দাঁড়িয়ে থাকে। বিকেলবেলা একটু কোলাহল শোনে। ফুটবল নিয়ে সদলবলে মাঠে আসে উত্তম, দবির ও অন্যান্যরা। বিকেলের সেই খেলাও স্তিমিত এখন। উত্তমরা এখন মˆপ সাজাতে ব্যস্ত। আশেপাশের দশগ্রামের ভেতর এতবড় উত্সব আর হয় না। শুধু পূজা নয়, ঈদের সময়ও এরা সমান আয়োজনে মাতিয়ে রাখে এলাকা। থানা শহর থেকে মাত্র মাইল দূয়েক দুই এই ছায়া ছায়া গ্রাম। ইটের বাড়ি থেকে শুরু করে, মাটির চাঁচের কিংবা টিনের বাড়িও রয়েছে। কোনও উত্সবই একা কারও নয়। সবার মনপ্রাণ ঘিরে থাকে প্রতিটি আনন্দ-আয়োজনে।
পাড়ার কারও কারও বাড়ি থেকে খাট চেয়ে এনে স্টেজ বানানো হয়েছে। সামিয়ানার তাবুর ঘনছায়া সেই সারিসারি খাটের ওপরে। মাত্র একদিন পরেই পূজা শুরু। কিছু ফুল বেলপাতা আর কচি কলাগাছ সংগ্রহ করতে হবে। উত্তমকে ভাবনামগ্ন দেখে হাতের কাজ রেখে দবির এগিয়ে এলো।
‘কি ভাবদিচিস  দোস্তো?
‘উমম? গাঁদা ফুল, বেলপাতা, আ...র একটা কলাগাছ কোত্থেকে আনা যায় বল তো?
এলাকার সব বাড়ির আনাচ-কানাচ চেনা দবিরের। থুতনিতে হাত রেখে মুখ নাড়িয়ে ঝম করে বলে উঠল, জানি, কার্ কাছে পাওয়া যাবে? চল্ আমার সাথে।
জোছনা রাতের মতো বিকেল। যে পূর্ণিমায় আকাশে এক ফোঁটাও জলকণা থাকেনা, সেইরকম। চাঁদ ইছেমতো আলো ছিটোয়। চালের গুঁড়োর মতো আলো এসে ঝরে পাতায়, ঘাসে, শিশিরে। বিকেলটাও তেমন আজ। আসমার বাগানের ফুলে ফুলে জোছনার মতো রোদ বসে আছে। সূর‌্যকেও আজ বুঝি চাঁদ হয়ে যাবার বাসনা হয়েছে। ওর বাগানটা ধীরে ধীরে বাবার উঠোন শুষে নিয়ে ফুল ছড়িয়েছে। দুপুরের পর ফুলের এ-গলি ও-গলি ঘুরে বেড়ায়। কোনওটার পাপড়ি ঝরে গেলে ছোট্ট ডালায় রাখে। অনেকগুলো পাপড়ি এনে গামলার পানিতে ভাসায়। সকালে গোছলের সময় ওই ঘ্রাণ-নিঃসত পানি প্রথম মাথায় ঢালে। উবু হয়ে কিছু পাপড়ি তুলতে যাবে, উঠোনে পায়ের শব্দে ফিরে তাকাল। বাঁ হাতের কনুইয়ে কঞ্চির ডালা ঝুলছে। ডানহাতে ছিন্নফুল। চোখ কিছুটা ছোট হলো আসমার। এ-সময়ে এরা? দবিরকে চেনে ভালমতো। দক্ষিণ পাড়ায় বাড়ি। পাশের ছেলেটার নাম জানে কিন আলাপ পরিচয় তেমন নেই। স্ুলের কয়েক বছরের সিনিয়র। মেয়েদের কমনরুম থেকে স্যারের পিছে পিছে কাসে যাবার সময় একজটলা ছেলেদের সাথে এই মুখটিও ভেসে থাকতো। আসমার আড়ষ্টতা বুঝতে পেরে উত্তম কথা বলল। ‘এত বড়, এত সুন্দর ফুলের বাগান আপনার আগে দেখিনি তো কোনওদিন? আসমা কী বলবে ভেবে না পেয়ে লাজুক হেসে ফুলগাছগুলোর দিকে দেখল। মুখটা ধীরে উঠিয়ে তাকাল ছেলেদুটোর দিকে।
‘আপনি আপনি কচিস ক্যান্ উত্তম। ইশকুলি ও আমাগের দুই কিলাশ নিচে পইড়তো। আমি যখন সেভেন পাশ দোবো দোবো ভাব, ও তখন কেবুলি পিরাইমারি ছাইড়ে হাই ইশকুলির দিকি তাগাচে।
‘কী যে সব বলিস না দবির। হোক জুনিয়র। আপনি বলতে দোষ কি? তাছাড়া হুট করে কাউকে ‘তুমি  বলাটাও শোভন না। বিশেষ করে মেয়েদেরকে। 
‘না, না, আপনি আমাকে ‘তুমি করে বলতে পারেন। আসমা বলল।
‘না, তা হয় না। ... অন্য কোনও দিন হয়তবা। 
‘ঠিক আছে, আপনার যেমন ইছে। তা কি কি ফুল প্রয়োজন?
‘গাঁদা ফুল আর কি কিছু বেলপাতা দরকার ছিল।
‘আপনারা বসেন, আমি নিয়ে আসছি। উঠোনের জলচৌকির দিকে দেখিয়ে দিয়ে বেছে বেছে ফুল তুলে ডালায় রাখতে লাগলো আসমা। 
‘দু:খিত, আপনার ফুলগুলো ছিঁড়তে কষ্ট হবে জানি। অপরাধির মতো শোনাল উত্তমের গলা।
‘কষ্ট তো হয়ই। কিন নষ্ট তো হছে না এগুলো। বুঝতে পেরেছি, এ দিয়ে কি করবেন।
‘তুমাগের বেলের পাতা কিন পাইড়ে নিয়ে যাবানে যাবার সুমায়। চাচা রাগ করবে না তো? আসমার দিকে একদষ্টিতে তাকিয়ে বলল দবির।
‘না, আববা কিছুই বলবে না। এত বড় বেলগাছ থেকে কিছু পাতা ছিড়লে ক্ষতি কি? তাছাড়া বাতাসও তো পাতা ছিঁড়ে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আববা বাতাসরে বকে তখন? হিহিহি।

আসমার রসিকতায় হো হো হাসল দুবন্ধু। ঝুড়ি ভর্তি হলুদ গাঁদা ফুল নিয়ে রাস্তায় নেমে এলো। 

গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় মাঠের শিয়রে আসমাদের বাড়ি। পেছনের রাস্তাটার পরই বিস্তৃত মাঠের শুরু। স্ুলের দিকে যেতে কিছুপথ হাঁটলেই ওদের জমির কোনায় রাস্তার পাশেই বড় বেলগাছটা। আশে পাশে আর কোনও গাছ নেই। দূরে কিছু খেজুর গাছ অনাহুতের মতো দাঁড়ানো। শীতকাল এলে যখন গাছিরা ওদের ডাল কেটে মাথা চেছে দেয় রসের জন্য, ওরা তখন সারাক্ষণ হাসিমুখে চেয়ে থাকে কখনও খোলা প্রান্তরের দিকে, কখনও লোকালয়ে। এইসময় ঝাঁকড়া মাথায় কাঁটাওয়ালা ডাল দোলায় শুধু। বেলতলায় বসে কান্ত পথিকেরা বাউল বাতাসে খেজুর-চূড়ার মাথা ঝাঁকানো দেখে আর বিশ্রাম নেয়। তলাটা শুকনো এঁটেল মাটির মতোই খড়খড়ে। শানের মতো মসন। এখানে এসেই মাটির ওপরে বসে পড়ে সবাই। উপরে সবুজ ঘন বেলপাতার বাজনা। পাতাগুলো যেন সবুজ সবুজ দীর্ঘ নিঃশ্াস ছুড়ে দেয় মাঠের দিকে। সেই শ্াস ঝোড়ো হাওয়া হয়ে বয়ে যায় ধান-পাট কিংবা অড়হর ক্ষেতে। এইসব এইখানে, অবসরে শুয়ে বসে দেখেন আসমার বাবা লতিফ সর্দার।

বেলগাছের গোঁড়া থেকে একটু তফাতে চটার মাচা করেছেন লতিফ। মাঠ বা বাড়ির কাজকর্ম সেরে ওখানে বসে বিশ্রাম নিছেন। দবির ও উত্তমকে দেখে তাকালেন।
ও চাচা, ভাল আছ? 
আছি ভাল, তুই কিরাম। কনে যাচিস, দবির। 
এটটা দরকারে আলাম গো চাচা।
‘তোর আবার কি দরকার পইলো। তুই তো টো টো কোমানির ম্যানেজার। কাজ কিসির?
‘দ্যাকো দিনি চাচা। কীরাম লজ্জা দিতিচাও। দূর্গো পূজো আইয়েচে না। উত্তম সব একা কইরে পারে? 
‘তা ঠিক। ছ্যামড়াডা এলাকার সবকিছুতি আগে আগে। ইরাম হাউশ কইরে ঈদ-পুজো পার্বণের কাজ উত্তম ছাড়া আর কিডা করে?
‘এলাকার ছেলে হিসেবে এটা তো আমার কর্তব্য লতিফ চাচা। এত প্রশংসা করলে তো লজ্জা লাগে।
‘না না, উত্তোম। যা সত্যি তাই কচি। অল্যায্য কতা তো কইনি।
‘বিএ পাশ করে কোনও চাকরি নিই নি চাচা। এইরকম অল্প পাসের চাকরিও নেই আজকাল।  বাবার ওষুদের দোকানে যা একটু বসি গিয়ে মাঝে মাঝে। হাতে সময়ও আছে। তাই সমাজের কাজে ব্যয় করবার চেষ্টা করি আর কি
‘আইচা বুজলাম। এইবার কও কি দরকার তুমাগের।
‘কিছু বেলপাতা নিতাম, চাচা। গাচে ওটপো? বলল দবির।
‘সাবদানে উটিস। বেলের কাটা কিনক সংঘাতিক। গাচে উইটে পাড়া ভাল। পাতা েঁছড়বে না। পূজোর জন্যি তো? সাবধানে এটটা এটটা ধইরে ধইরে পাড়িস।
‘আইচা, চাচা।
দুই
বিসর্জনের আগের দিন। প্রতিদিনের সন্ধ্যার চেয়ে আজ কিছুটা বিষণ্ণ-আনন্দ ভক্তদের ভেতর। প্রায় সারাদিন মাইকে বেজেছে ভক্তির গান,--- ‘মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে... মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে। এই গানের সকরুণ আবেদনের সাথে সাথে নতুন আনন্দে ভরে উঠেছে সবার মন, যখন সারা এলাকা আজকের রাতের গানবাজনার মাইকিংয়ে মুখর হয়ে উঠেছিল। রাতে, পূজো শেষে নাটক মঞ্চস হবে, ‘রাধাকৃষ্ণ। সংগীত ও নাট্যপরিচালনায় রয়েছেন স্ুলের শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায়। কুশীলবরা অধিকাংশই এলাকার। রাধা ও যশোদা চরিত্রের জন্যে অভিনেত্রী আনা হয়েছে যশোরের বৈকালী অপেরা থেকে। শীতে যাত্রাপালা জমে। গরমে অবসর। তাই এখন এতবড় গানের দলের লোক মিললো। 
গোপিকান্ত পুর বাজার লোকজনের আনাগোনায় গমগমে। দোকানে দোকানে চায়ের কাপের টুং টাং আওয়াজ। কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসির হল্লা উঠছে মাঝে মাঝে। আশেপাশের দুদশ গ্রামে মাইকিং করে মুখে চোঙ নিয়ে ভ্যান এসে দাঁড়ালো চা স্টলের সামনে। গান বাজছে তখনও। চোঙটা কৃষ্ণ নগরের মাঠের দিকে ফিরিয়ে চার অর্ডার দিতে গেল ভ্যানওয়ালা। কাঠের বেঞ্চ থেকে সরে বসার জায়গা ছেড়ে দিলো একজন। অল্প ভলু্যমের গানে উত্কর্ণ হয়ে আছে কেউ কেউ। ফিরোজা বেগম গাইছেন, ‘ওরে নীল যমুনার জল... বল্ রে মোরে বল... কোথায় ঘনশ্যাম, আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম...। পশ্চিমের দিগন্তে কমলা আলোর রেখা। তরকারি আর মাছের বাজারের ছোট ছোট ছাউনিগুলোয় বিজলি বাতির চোখ জ্বলজ্বল করছে অন্ধকারে ষাড়ের রাগী চোখের মতো। বাজার মসজিদের মিনার থেকে মাগরিবের আযান ভেসে আসলো হঠাত। ভ্যানওয়ালা দৌঁড়ে গিয়ে গান বন্ধ করলো। যতক্ষণ আযানের সুর তরঙ্গের মতো ভেসে ভেসে ইথারে মিলাল, সারা বাজারে কেমন এক অপার্থিব নীরবতা ছেয়ে রইল। এই ভর সন্ধ্যাবেলা যেন মফিজ মুয়াজ্জিনের সুরেলা ভরাট স্রের ভেতর দিয়ে স্রষ্টা ডাকছেন। যার হাতের তালুতে খেলছে ওই অপার নীলিমা, অজর তারাদল, আর মেঘের সামান। আযান শেষ হলে গুঞ্জন উঠলো আবার। 
‘তা, রাধারানী তো আইসতেচে, কিনক কৃষ্ণ কিডা হচে গো, তা জানা গেলো?  চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কেউ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।
‘কেন, জানো না। কৃষ্ণ হবে আমাগের উত্তোম। ওর ঝাঁকড়া চুল, মুটা মুটা চোখ আর খাড়া নাকে কৃষ্ণ যোনো জ্যান্ত হয়ে ওটপে স্টেজের পরে।
‘কিনক উত্তম তো দুদির মতন ফষ্সা। কৃষ্ণ তো শ্যামলা।
‘তা হলি কি হবে, মেক আপ কইরে সাজবে। 
‘তা ঠিক তা ঠিক।  কয়েকজন একসাথে বলে উঠল।
‘কী ঠিক। প্রশ্নটা শুনে পেছনে তাকাল সবাই। চা দোকানি মুচকি হেসে তাকাল উত্তমের দিকে। 
‘আরে, তুমি যে। সারাদিন কনে ছিলে। জানতে চাইল একজন।
‘কনে আবার? গানের জোগাড় যন্তর করা কোম কষ্ট? সবাই তো আরামে যাইয়ে চটের পরে বসপেনে। মুখ বেকিয়ে বলল দবির। 
‘তা জায়গা না পালি তোর ঘাড়ের পরে বসপো কলাম আমি, দবির। হাহাহ।
‘চুপ কর দিনি দবির। চল্, চা খাইয়ে নি। আয়। দবিরের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল উত্তম।
রাত প্রায় 11 টা। তবু মনে হছে সন্ধ্যা মাত্র নামল। অন্ধকার জমাট বাঁধেনি। বেশ ফুরফুরে বাতাস বইছে। মনে হছে সমস্ত অন্ধকার উড়িয়ে দূরে কোথাও রেখে রেখে আসছে এইসব বাতাসেরা। আর চার গ্রাম দূরের নদী থেকে স্ান করে শরীর জুড়িয়ে ফিরে আসছে মুঠো মুঠো তারার হাসি হাতে নিয়ে। 
বাবা-মাকে বলে পাশের বাড়ির বন্ধু হালিমার সাথে গান শুনতে বের হয়েছে আসমা।  বেলতলা পার হয়ে খোলা মাঠের দিকে তাকাল। কালো নদীর জলের মতো ঢেউ খেলে আছে অন্ধকার। আকাশের সবগুলো তারা ফুটে বেরিয়েছে আজ। কোনও  কোনও রাতে উজ্বল কিছু তারা সারারাত জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থেকে চলে যায় সকালে। আজ কোনও তারা-ই আড়ালে থাকতে রাজি হয়নি। মনে হছে আরেকটু জোরে বাতাস বইলে টুপটাপ তারার ফল ঝরে পড়বে পথে। 
‘এত এদিক-ওদিক কি দেখতিচিস সই? বন্ধু বলল। 
‘কিচু না রে, আইজগের রাইতটা যেন অন্যরকম রে। অনেক তারা আকাশে। অন্ধকারও তেমন না। বাতাসও ঠাˆা ঠাˆা। শরত্কাল না যেন শীতকাল। গায়ের ওড়নাটা মেলে আরও কয়েকভাঁজ করে গায়ে পেঁচাতে পেঁচাতে বলল আসমা। 
পাশাপাশি চারপাঁচজন হাঁটা যায় এমন মাটির পথ প্রাইমারি ও হাইস্ুলের মাঝখান দিয়ে মাঠে মিশেছে। দোতলা স্ুলটা থমথমে হয়ে আছে। মদু সোরগোল ভেসে আসছে। অসষ্ট গুঞ্জন ছাপিয়ে বাদ্যযন্রে আওয়াজ কথা বলে উঠছে। তবলার, টাক্ টাক্ টাক্, বাঁশির লঘু সুর তুলে চুপ হয়ে যাওয়া, জলের ওপরে চাড়া চালার মতো চিড়্ চিড়্ করে হারমোনিয়ামের রীডে আঙুল দৌঁড়াল কারও, চাকির ঝুনুত ঝুনুত স্র কয়েকবার ঝংকার তুলে ছড়াল চারদিকে। মাঠের কোণায় এক মুহূর্ত দাঁড়াল দুজন। মˆপের আলো মলান। ডীম লাইটের লালিমায় প্রতিমাগুলো মনে হছে শেষ বিকেলের পশ্চিমের আকাশে ভাসছে। দূর্গার তীরের প্রান্ত অসুরের বুকের রক্তে দেবে আছে। আবছা ছায়ায় রক্তের ধারার বদলে মনে হছে কালি ঝরছে বুক থেকে। দুর্গতি নাশিনী অসুরের বুকের সমস্ত অন্ধকার যেন বের করছেন খুঁড়ে খুঁড়ে। 
বাদ্যযন্গুলো গলা ছেড়েছে এখন। পালার বই নিয়ে মঞ্চের এককোণায় বসেছেন বিধান। মেয়েদের বসার জায়গার দিকে এগোলো ওরা। একেবারে সামনে জায়গা না মিললেও খুব দূরও নয়। অনেক আলোর আনাগোনা হলো মঞ্চের চারপাশের পর্দার ওপর। মনে হলো, আলোগুলো বেজে বেজে উঠছে বার বার। সেইসব নানারঙ মুখরিত আলপনায় বন্দাবনের ঝুলোনার পাশে রাধা-কৃষ্ণ দাঁড়ানো ত্রিভঙ্গে। সাদা কুচির ধুতি ঢেউয়ের মতো পাট পাট করে নেমেছে কৃষ্ণের পায়ের পাতায়। বাঁশির সুরের উনেখ-মুখে দশ আঙুল। আঙুলগুলো ওঠানামা করে করে সুরের খই ছিটিয়ে দিছে সারামাঠে। প্রথমে উত্তমকে চিনতেই পারেনি। কণ্ঠ শুনে চিনল। ফর্সা রঙ ফেটে বেরিয়ে আসছে মলিন মেক আপের আস্তরণ ছেড়ে। একটু বাঁকা হয়ে রাধাকে ঝুলোনায় বসাতে যাবার সময় হৃদয়ে মোচড় টের পেলো আসমা। এক মুহূর্তে রাধারূপ মেয়েটা ওর সামনে থেকে উধাও। নিজেকে এমন হালকা কখনও লাগেনি। উত্তমের পাশে ঝুলোনায় বারে মতো বসনে এক মেঘলোক রমণী যেন হয়ে আছে। এমন ভাবনায় কতক্ষণ কেটেছে কে জানে! চারদিকের এলোমেলো সোরগোল আর হালিমার হাতের খোঁচায় সম্তি এলো। বলল, কনে ছিলি এতক্ষণ, চল্ সই বাড়ি চল্। গান শেষ।
আসমা ভেবেছিল, সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। বারান্দার আলো জ্বলছে। মা-বাবা গল্প করছেন। ওদেরকে দেখে আসমার মা বললেন, এত শিগগির চইলে আসলি, গান ফুরোয় গেচে? হিহিহি
‘হু চাচী। গান শেষ। তুমি যাতি পাইরতে। কি সুন্দুর অভিনয়। যাত্রাদলের মাইয়ে আইলো বলল হালিমা। 
‘আমি আর তোর চাচা যে গান শুনিচি, যাত্রা দেকিচি, তা তুরা জীবনেও দেকতি পারবি নে। ইরা আর কি অভিনয় করবে। আমরা দেকিচি পিসি সরকারের জাদু, রঞ্জন দেবনাথের লিকা যাত্রাবইর পাট। 
‘তা ঠিক বলিচাও চাচী। দিন যতো যাচে, আনন্দ ফুর্তি সব কুইমতেচে।
‘রাধা হয়েচে শুনলাম যাত্রার এটটা মাইয়ে, তা কৃষ্ণ কিডা হইলো হালিমা। লতিফ পানের পিক ফেলে বিড়িতে একটা লম্ার দম দিয়ে জানতে চাইলেন।
‘উত্তম। ওই পাড়ার উত্তম, কৃষ্ণ সাজিলো, চাচা।
‘তালি ভাল হয়েচে। ছেইলেডা দেখতিও যিরাম, কতা-বাত্তাও খুব ভাল।
‘তুমি ওরে দেকিচাও চাচা?
‘শুদু তোর চাচা ক্যান, আমিও দেকিচি। সে-দিন আইলো আমাগের বাড়ি। ফুল আর ব্যালের পাতা নিতি। রান্নাঘরের বেড়ার ফাঁক দে দেকিলাম। একেবারে চানের মতো ফসষ্া ছেইলেডা। হড়বড়্ করে বলে গেলেন আসমার মা জাহানারা।
তিন
অভিনেত্রীরা চলে যাছে।  ভ্যানে মণিরামপুর, এরপরে বাসে যশোরে যাবে। পিচের রাস্তা বাজারের ওপর দিয়ে রাজগঞ্জে গিয়ে মিশেছে। এবার জোর বষ্টির প্রকোপে পিচের কার্পেট একটু পর পর উঠে গিয়ে ইটের সলিং ভেসে উঠেছে। লাল গুেঁড়া পাউডার উল্লাসে উড়ে বেড়ায় যানের চাকায়। উত্তম ও দবির ভাল দেখে একটা ভ্যান এনে রাধা আর যশোদাকে বসতে বলল। যশোদা হাসিমুখে বিদায় নিয়ে ভ্যান ছাড়বার অপেক্ষা করছে। ডানদিকে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে। রাধা একবার হাসবার চেষ্টা করে হাত নাড়ল উত্তমের মুখের দিকে তাকিয়ে। ভ্যান নড়ে উঠল। উত্তমের ডানহাত তখনও শূন্যে সাপের ফণার মতো ওঠানো। তাই দেখে ফিচ্ করে হেসে মুখ নিচু করলো অপসয়মান দোলায়িত রাধা। ফিরে তাকাল আবার। হাত নামিয়ে পেছন ফিরে মাঠের ঘাসে এসে বসল উত্তম। 
‘রাধা তোরে ভালবাইসে ফেইলেচে কলাম। মনে ব্যথা নিয়ে চইলে গেলো কিন। রসিয়ে রসিয়ে বলল দবির।
‘উমম, কী বলতিচিস? উত্তমের আনমনা জবাব।
‘আর  অতো আউলা হতি হবে না। নে চা খাইয়ে নে। স্টলের দিকে তাকিয়ে দবির গলা চড়াল, ‘এই দুকাপ চা পাটায় দে দিনি
‘আউলা টাউলা কিচু নারে, কাইলকের নাটকটার কথা ভাবদিচি।
‘নাটকের কতা আবার ভাবার কী হইলো? তোর যা অভিনয় হইয়েচে। সাংঘাতিক। বিশেষ কইরে ঝুলোনায় রাধার মান ভাঙাইনের সীনটা দারোণ। সখিরা সব কত অনুনয় বিনয় কইল্লো, আর রাধা তোর দিকি মুকই তোল্লে না, কিন তুই কী সুন্দর আদরে আদরে হাসির ফুল ফোটালি রাধার চোকি-মুকি, আহা। পেরেমের দিশ্শোই তোর তুলনা নেই রে।
‘ মঞ্চের রাধা না দেখলিও, আমি ফাঁকে ফাঁকে আরেক রাধারে দেকিছি, দবির।
‘সে কী? সে আবার কিডা?
‘বলবো?
‘বলবি নে মানে? একুনি ক।
‘বন্দাবনে চারিদিকে তাকাবার ভান করবার সময় যখন দর্শকদের দিকে হাত বিছিয়ে চোখ বুলালাম, দেখলাম একজোড়া চোখের নজর ঝাঁঝরা করে দিছে আমাকে। খুবই পরিচিত সেই ডাগরচোখজোড়া। বড় বিঁধে যাওয়া সেই মুখের হাসি। হৃদয়ে পড়ে থাকা প্রেম-বুভুক্ষু-বক্ষের শুকনো পাতার ওপরে যার চপল হরিণী-চঞ্চল চলা মর্মর ধবনি তোলে, সেই রে।
‘দ্যাখ, দোস্তো, আমি অত ভাষা বুজি নে। তুই কিনক আবার শুদ্ধ ভাষায় ডায়লগ মারতিচিস। খুসা কেলাইয়ে ক কিডা। তোর ভাল লাগলি ব্যবস্তা আমি করবো।
‘সেদিন যাদের বাড়িত্তে ফুল আনিলাম, সে-ই হরিণী রে বন্ধু।
‘ও হো হো। আ-স-মা।  বলে একটু উদাস হলো দবির। মাথা ঝাঁকাল। ‘চল্, আবার অন্য কোনও কাজের নাম কইরে দেকা কইরে আসি। 
‘নারে, বার বার যাওয়া বেমানান। তাছাড়া আমার মন কেমন কইরতেচে। সাহসে কুলোয় না। মেয়েদের সামনে আমার অস্স্তি হয়। অভিনয়ের সময় ভিন্ন কথা। ও তো আর সত্যি না। তোর কিচু করা লাগবে। বাদ দে। 
কয়দিনের অবিরাম খাটুনি, রাত জেগে অভিনয়, আর নির্ঘুম ভাবনায় এই ভর সন্ধেয় চোখ ভেঙে আসছে উত্তমের। খেলার মাঠটাকে মনে হছে বিশাল বেডরুম। টলতে টলতে উঠে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। দবির উঠে সাথে বাড়ি পর‌্যন্ত যাবার কথা বললে ইশারায় মানা করে আবছা আঁধারে মিলিয়ে গেল স্ুল ঘরের পেছনের রাস্তায়। 
চার 
বেশ বেলায় হালিমার ডাকে ঘুম ভাঙল আসমার। পুবের জানালা দিয়ে রোদ এসে বিছানা ভরে আছে। কুয়াশা-চোখে উঠে ঘরের হাক সরাল। টলোমলো পায়ে আবার বিছানায় ফেলে দিলো নিজেকে। হালিমা হাসিমুখে উপুড় হয়ে থাকা বন্ধুর পিঠের ওপরে বুক দাবিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ঘুমভরা আলস্য-লাস্য দেহ অন্যদেহের ভার পেয়ে আরও আবেশী হয়ে উঠল। আদর-উছল বিড়ালির মতো উমম্ উমম্ শব্দে বুঁদ হয়ে পড়ে রইল আসমা।
‘ও সই, আইজ আর ঘুম ভাঙবে না ? কী এমন স্প্নে মইজে আচিস,তাই ক দিনি। কৃষ্ণ বিহনে রাধার একি দশা ...। পর জনমে রাধা বানাইস তারে রে...। হিহিহি।
কথায় মদির হয়ে রইল আসমা। ওঠার নাম নেই। আরও নিবিড় করে জড়িয়ে আছে হালিমা। কানের কাছের নিঃশ্াস ঝড়ের মতো লাগছে। চিবুকের চুল সরে সরে গিয়ে সুড়সুড়ি বুলিয়ে দিছে। একবার হালকা করে কানে ফুঁ দিলো হলিমা। মোচড় দিয়ে পাশ ফিরে খিলখিল করে ঘুমচোখে হাসতে লাগলো আসমা। একসাথে কলেজে যাবার সময় কতরকম হাসে, কিন এই হাসির ছটায় অন্য রঙ ছড়ানো। 
‘পুজোর ছুটি শেষ হতি চইল্লো। কিলাশ শুরু হইয়ে যাবেনে। চল্ কিছু খাইয়ে আমাগের পুকুর পাড়ের মেহগনি বাগান থেইকে বেড়ায় আসি। আসমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে কানে কানে বলল হালিমা। 
হালিমাদের বাড়ির চারপাশের গাছপালা বনভূমির মতো দাঁড়ানো। চওড়া উঠোনের শেষে ঢেঁকিঘর। তার পাশ দিয়ে সরু পায়েচলা ঘাসেভরা পথ গিয়ে পড়েছে পুকুরঘাটে। সবুজ পাতার ছায়ায় এই ছোট্ট জলাশয় সবুজ হয়ে থাকে। মাঠের জমির একাংশ নিয়ে হালিমার বাবা মেহগনি বাগান করেছেন। কিনারে কয়েকটি শিশুগাছও আছে। গাছগুলো শিশুকাল পেরিয়ে এখন যৌবনে। প্রবল গরমের সময় হাওয়ারা যেন এইবনে এসে গা জুড়োয়। দড়ি জালের মতো পেঁচিয়ে দুই গাছে বেঁধে দোলনা টানানো। কলেজ খোলা থাকলে ব্যাগভর্তি বই এনে এইখানে বসে বসে পড়ে হালিমা। সমস্ত দষ্টির দূরে, আলো-আঁধারির আড়ালে।   শান্ত বাতাস আর পাতার মর্মরে মন অবারিত সুখে কেঁদে কেঁদে উঠতে চায়। পুজো শেষে আরও বেশি নীরবতায় ছেয়ে গেলো। সব বাজনার ঝংকার নিয়ে বিদায় নিয়েছেন আনন্দময়ী। মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনেও কেমন ক্ষণিক অবসাদ। 
দোলনায় চুপচাপ বসে আছে আসমা। দড়ির দুপাশে ধরা, দষ্টি নামানো। ঝুঁকে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। একটা চপ্পল হঠাত খুলে ছিটকে গেলো। মাটির হিম ছড়াল পা বেয়ে শরীরে।  গাছে হেলান দিয়ে বন্ধুকে দেখছে হালিমা। ওর মার মতো ফর্সা ও। একেবারে লাল। ভর দুপুরে, বনের আবছায়ায় মনে হয় সূর‌্য এই উঠল। 
‘দোল্ দিয়ে দেবো সই?
‘না। শুদু বইসে থাকতি ভাল লাইগদেচে। তুই দোল খা, আমি বাগানডা ঘুইরে দেইকে আসি। অনেক দিন তো আসা হয় নি।
অন্যপায়ের চপ্পল খুলে রেখে উঠে দাঁড়াল আসমা। খুব সাদা খড়খড়ে বনের জমিন। একটু পর পর হলুদ মেহগনি পাতা পড়ে আছে। পায়ের ধুলো পাতায় মুছে মুছে পিছে ফেলে যাছে বক্ষের পর বক্ষ। দূরে একমনে দাঁড়িয়ে বন্ধুর পত্র-নুপূর শুনছে হালিমা। 
বনের কিনার ঠেকেছে মাঠের দিকে বয়ে চলা পথে। সবুজ চিত্রল চরের মতো লাগছে দেখতে। কোথাও যাবার তাড়া নেই পথটার। মাঠের ফসল দেখে, হাওয়ার বয়ে চলা দেখে, নির্জনতা দেখে--- হঠাত হঠাত কেউ এলে পৌঁছে দেয় প্রান্তর পেরিয়ে দূরের গন্তব্যে। আসমার গন্তব্যহীন চলা থমকে গেলো। আকাশী নীলের শার্ট পরা শুভ্র-তনু কেউ পথ ফেলে বনের নির্জনে আসছে। একটা বড় গাছের আড়ালে লুকালো আসমা। লাল ওড়নার ঘোমটার প্রান্তে একটি চোখ শুধু আলোকরশ্মি হয়ে রইল। চেনা চেনা লাগছে। কে এই সময়ে এইখানে! অন্তহীন সময়ও বুঝি প্রান্ত খুঁজে পায়। লোকালয়ের সমস্ত কোলাহল থেকে দুরে, নিঃসীমে দাঁড়ানো যেন সে। রোদ-সফেদ রাজকুমার এগিয়ে আসছে। অপার অবসন্নতায় টলে পড়তে চাইছে আসমার শরীর।
‘যে সূর‌্যোদয় দেখবো বলে এলাম, সে কেন এমন স্ছো-অস্তে সঁপে দেয় নিজেকে? টেনে টেনে সংলাপের মতো কথাগুলো বলতে বলতে কাছে এসে দাঁড়াল উত্তম। অবগুণ্ঠন নিয়ে ধীরে গাছের আড়াল থেকে সরে এলো আসমা।
‘আ-পি-নি ! এই সময়ে, এইখানে?
‘এই কথা জানবার ইছে আমারও
এরপর দুজনই নীরব। সরব শুধু দুইজোড়া চোখ। ভোরের আলো আর দিনের অভ্রফুল একাকার এই নির্জনে। নিজেকে সামলে নিতে কিছু বলবার চেষ্টা করে আসমা।
‘এটা আমার বন্ধুদের বন। বেড়াতে আসি মাঝে মাঝে। তা আপনি জানলেন কি করে?
‘ভনিতা না করে বলি, জানি না আপনি কীভাবে নেবেন। আমি নিজেও জানি না, পথ আমাকে কেমন করে আপনার সামনে এনে দাঁড় করালো !
‘সত্যি বলতে কি, আমারও তো পথ কোন্ পথে তা খুঁজতে এই অবেলায় বের হওয়া 
‘দুঃখিত এত শিগগির এই কথা বলছি, আমাদের পথ মিলতে পারে কি?
‘আমার মনে হয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘শিগগির বলতে কিছু নেই। বহুদিনের পরিচয়ে যা হয় না, মুহূর্তের দেখাশোনায় অনড় সমর্কের ইমারত গড়ে উঠতে পারে।
‘বাহ, এত সুন্দর কাব্যিকতা। চমত্কার বলেন তো আপনি।
‘আপনিও তো কম নন। শুধু নাটকের ডায়ালগ নয়, বাস্তবেও কেমন বিনম্র-মধুর আপনার কথা।
‘তোমার ভাল লাগে? দুষ্টু হেসে চোখ ছোট করে তাকাল উত্তম।
‘হুম, লাগে, সারাদিনরাত শুনতে ইছে করে তোমার কণ্ঠস্র। চমকে তাকিয়ে হিহিহি করে হাসল আসমা।
হঠাত দেখল উত্তমের  উত্সুক চোখ। মুখের আলো নেভা। শান্ত কিন উদ্বিগ্ন চোখে সামনে তাকিয়ে আছে। সেই দষ্টি ধরে পেছনে তাকাল আসমা। হালিমা দাঁড়ানো। দুজনকে সির চোখে দেখছে। ওরা দেখে ফেলার পরও হালিমার ভাবান্তর হলো না। উত্তম আর দেরি করলো না। শুকনো ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে হাত উঠিয়ে ইশারা করলো আসমার দিকে।
‘আসি এখন, আপনি চাইলে পরা কথা হবে আবার।
‘ইছে করলে আরও কথা বলতে পারেন। 
‘না না, এখন যাই। বলে সামনের দিকে আরেকবার তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াল উত্তম। লম্া লমা্ পা ফেলে রাস্তায় উঠে এলো।
উত্তমের যাবার পথের দিকে এক নিমেষে চেয়ে আছে আসমা। পেছনে প্রান্তর ফেলে বাজারের দিকে হাঁটছে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে হঠাত হঠাত ভেসে উঠছে। পিঠে কারও হাতের ছোঁয়ায় দষ্টির সুতো কাটলো। পায়ের শব্দ ও কায়াটা মিলিয়ে গেল।
‘কৃষ্ণর পাট করিলো, এই সেই উত্তম না?
‘হুম। 
‘তোর সাতে জানা-পরিচয় আচে, জানতাম নাতো?
‘ধুর। আমিও কি জানতাম? পুজোর আগে ফুল নিতি আইলো, সেইদিন দেখলাম ভাল কইরে।
‘শুদুই দেখলি? দেখলি আর চিত পটাং হলি? হিহিহি
‘চিতও হইনি, উপুড়ও হইনি,সই। আমি সোজা-ই আচি।
‘মনে তো হচে না। সই, মন তোর, দেহ তোর। তবু এটটা কতা বলি, ভাইবে চিন্তে করিস, যা করার। সমাজ বইলে এটটা কতা আচে।
‘ভাললাগা ভাবনার সুমায় দেয় না রে সই। ফুল নিতি যেদিন আইসলো, ওরে দেখেই মোমের মতো গইলে যাতি লাইগলো আমার ভিতরের আমি। অতি কষ্টে অবসন্ন হাতে ফুলগুলো ছিঁড়লাম আর এটা-ওটা জিসে করার ছলে দেখতিছিলাম। কয়েকটা অতিরিক্ত ফুল তুইলে দিবার সুমায় সর্শ লাগিছিল হাতে। বিদু্যত যেন ছড়ায়ে গেল আমার গায়।
‘তুই মরিচিস সই।
‘রাধারা কি মরে আর? কৃষ্ণর প্রেমের আগুনে জীবিত হয় বার বার।
পাঁচ
হেমন্তের শেষাশেষি। শীত আসি আসি। সকাল থেকে প্রায় শীতার্ত হাওয়া বয়। হিম হাওয়া গায়ে মেখে হালিমাদের পুকুরে স্ান করতে আসে উত্তম। ধীরে ধীরে হালিমার মার সাথেও সখ্য হয়েছে। মধুর ব্যবহারে মু হয়েছেন মহিলা। একসময় হালিমার মা সার্কাসে নাচতেন। তাই গানের দল বা অভিনয়ের আলাপে সময় বয়ে যায়। প্রায়ই বন্ধুর হাত ধরে পুকুরপাড়ে বনটাতে আসমা-ও আসে। কলেজ থেকে ফিরে বই নিয়েই হালিমাদের বাড়িতে পা ফেলে। সারাবিকেল কাটে বনের ঝুলোনায়। মাঝে মাঝে বনের গভীরে চলে যায় আসমা আর উত্তম। ঝালমুড়ি দিতে গিয়ে হালিমা উত্কর্ণ হয়ে শোনে ওদের কথা। কিছু বোঝে, কিছু বুঝতে পারে না। আলতো পায়ে অজান্তেও গিয়ে দেখেছে, সামনা-সামনি বসে আছে পাতার পরে। নির্বাক। শুধুই দেখে দুজন দুজনকে, মাঝে মাঝে ঠোঁট নড়ে সির হয়ে যায়। মুচকি হেসে কেশে কাছে যায়। আসমা হাত ধরে বসায়। তিনজনে মিলে গল্পে গল্পে বিকেলটা সন্ধ্যা বানিয়ে দেয়। 

রাজগঞ্জ বাজারে বাবার ঔষধের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছে উত্তম। রাত তেমন হয়নি। অন্ধকারও ততটা ঘন নয়। পিচের পরে সাইকেলের চাকার গতি বুঝতে পারা যায়। গোপিকান্তপুর বাজারের কাছাকাছি এলে চা স্টলগুলোর সামনের বিজলির আলোর ঝলক চোখে পড়ল। সাইকেলের গতি কমিয়ে থামতে যাবে। হঠাত পেছনের কেরিয়ারে কারও উঠে পড়ার ভারে প্রায় পড়ো পড়ো হলো। দুপাশে পা নামিয়ে থামলো। তাকিয়ে দেখে দবির। ‘আইজ তোরে পাইছি  ধরনের হাসি ওর মুখে। 
‘আজকাইল কনে থাকিস, দোস্তো? কমাসে তোর চিহারা কয়বার দেকিচি গুইনে কতি পারবো। হইন্যে হইয়ে খুঁজদিচি। ব্যাপারডা কি বল দিনি?
‘কাজে কর্মে ব্যস্ত আছি রে। চল্ চা খাতি খাতি গল্প করি। 

চুমুক দিয়ে কাপের ভেতরে চায়ের রঙ দেখছে উত্তম। কাচের কাপ আঙুলের গোলে বাঁকা হয়ে মুখে এসে এসে ঠেকছে। আর ছুপ ছুপ করে আওয়াজ হছে। দোকানির মাথার উপরে ঝুলানো বিসকুটের ঠোঙা আর কলার ছড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কাপটা প্রায় মুখের কাছে ধরে রাখলো। 
‘চার সাতে কডা বিশকুট দোবো দাদা? কলা খাও কয়ডা। সাগর কলা। কি মোলাম ঘিরাণ দেকিচাও?  পানরাঙা দাঁতে হেসে বলল দোকানি। 
‘দ্যাও চাচা। দবিরির বেশি কইরে দ্যাও। বান্দরডা কলা না খাইয়ে শুকোয় যাচে। গম্ীরমুখে রসিকতা করল উত্তম। আশেপাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। দবির না হেসে উত্তমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ থেকে। রাত নেমে এসেছে। ছোট ছোট ঝুপড়ির মতো দোকানগুলোয় আলো নিভে যেতে লাগল। উত্তম উঠে রাস্তার পাশে গাছে ঠেস দেয়া সাইকেলে হাত রেখে ইশারা করল দবিরের দিকে। দবির তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। 

ডানহাতে হ্যান্ডেল ধরে সাইকেল হাঁটিয়ে নিছে উত্তম। দুই চাকার মদু গতির বিপরীতে মাঝে মাঝে ইটের খোয়া এসে ছিটকে যাছে। দবিরের পায়ের স্যান্ডেল ফুটছে পট পট করে। সাইকেলের চেনের কির্ কির্ শব্দ থেমে গেলো উত্তমদের বাড়ির পাশের কদম গাছের তলায়। ঘন পাতা অন্ধকার ঘন করে ছায়া ফেলেছে নিচে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দুজন। কিছু একটা শুনবার প্রতীক্ষায় দবির। 
‘মন দিয়ে শোন্ দবির।
‘কিচু না কলি শোনবো কী কইরে? হাহা। তোর মাতা খারাপ হইয়ে গেলো?
‘মাথা ঠিক আছে। শোন্, ঘোরপ্যাঁচ না কইরে আসল কতায় আসি। আমি একজনরে ভালবাসি।
‘ভালবাসিস? তোর তো কোনওদিন মাইয়েগের পাল্লায় পড়তি দেকিনি। আমি আলাপ করতি চালি থামায় দিতিস। কতিস, মেয়েরা সবচাইতে সর্বনেশে মোহ, হুট কইরে পেরেমে পইড়ে যাতি নেই। একন তোর বেলায় একি হইলো?
‘এই জিনিসে না পড়বার নিশ্চয়তা কেউ দিতি পারে না। অন্ধকারে কাদা-পথে চলবার মতো। কখন পা পিছলাবে কওয়া শক্ত। শোন্, ওকে নিয়ে অন্য জায়গায় যাবো আমি। তুই সাতে আচিস কিনা ক।
‘তোর কোন্ কাজে আমি সাতে ছিলাম না তাই ক দিনি। তা মাইয়েডা কিডা?
‘আসমা।
‘অ্যা...। আ-স-মা? ওই পরীর মতোন মাইয়েডা? ওরে খুদা। তা জানাজানি হলি কেলেংকারি হইয়ে যাবেনে।
‘সেই জন্যি তো মামাদের গ্রামে নিয়ে বিয়ে করবো। সব ঠিক কইরে ফেলিচি। আগামী শনিবার রাত্তিরি তুই হালিমাদের বাড়ির পাশের রাস্তার কোণায় থাকবি। আসমা আসবে। নিয়ে মাঠের মদ্যি দিয়ে আড়াআড়ি কৃষ্ণ নগরে যাবি। আমি শুক্রবারে মামাদের ওখানে যাচি।
‘ঠিক আচে। দবিরের চোখে ভয় বিসয় ও কৌতুহল ।
ছয়
পূর্ণিমার পর কিছুটা ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ আকাশে। মলান জোছনা। তারার আলোর ঢেউ। খোলামাঠে আগে আগে আসমা। পেছনে দবির। শেষ হেমন্তের প্রায় ফসলশূন্য মাঠ। মাঠভরা ঢেলা।  জোছনায় ঢেউয়ের মতো লাগছে ঢেলাগুলোকে। শীতের সবজির প্রসতি কোনও কোনও ক্ষেতে। আল ধরে চলছে ওরা। মাঝে মাঝে জমিখˆ বড় হওয়ায় ক্ষেতের ওপর দিয়ে আড়াআড়ি পথ করে নিছে পা। 

চষে মই দেবার পর একটি জমির মাটি বেশ ঝুরঝুরে। চলতে আরাম লাগছে। আসমার কান্ত পা  গোড়ালি পর‌্যন্ত ডুবে যাছে কোমল মাটিতে। সাথের ব্যাগ দবিরের ঘাড়ে। ব্যাগটা ছোট হলেও ভারি। কোমর বেঁকিয়ে সামনের দিকে মুখ ঝুঁকে হাঁটছে দবির। মাঝে মাঝে দেখে নিছে মুখ তুলে। মাটিতে পা হড়কে পেছন দিকে হেলে হঠাত বসে পড়ল আসমা। একহাতে ভর দিয়ে অন্যহাত শূন্যে তুলে উঠতে চাইছে। হাতটা বরাবর চাঁদ। পাতলা মাড়ের মতো আলো ঝরছে। তারাদের পশ্চিমে যাবার প্রসতি। উপরের হাতটা ধরে ওঠাতে গেল দবির। আসমা ইশারায় মানা করে নিজেই উঠতে গিয়ে আবার পড়ে যাছিল। দবির হুমড়ি খেয়ে পড়লো আসমার বুকের ওপর। একহাতে ব্যাগের ফিতে টেনে সরিয়ে দিতে লাগলো। চাঁদটা কেমন ঝাঁপসা হয়ে যাছে। পলক ফেলে ফেলে দষ্টি  ফর্সা করতে চাইছে আসমা। দুহাত একসাথে করে দবিরের গলা ঠেলে উঠিয়ে দিতে চাইল। সরানো গেল না। ভাবলো, পুরুষ মানুষ এমন পাষাণের মতো ভার! দবিরের মুখ নেমে এলো কানের কাছে, ‘আমি কাউরে কিচু কবো না। কেউ জানবে না। দেখো, এই রাত্তিরির মাঠে কাকপক্ষিও নেই। না, কইরে না। কানের কাছের কথার বিষে জর্জরিত আসমা দবিরের চুল খামচে ধরল। এক ঝটকায় উঠতে গেল। দবির দমবার পাত্র নয়। দাঁত খিচিয়ে চুল ছাড়িয়ে কপাল ঠেসে ধরলো আসমার কপালে। বিশাল পেরেক যেন বিঁধে গেল আসমার মাথায়। ব্যথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে চোখ বুঁজল। অবসন্ন  দুহাত দুপাশে ফেলে অনেক কষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেঘে মুখ ঢেকে আছে চাঁদ। তারাগুলো পালিয়ে যাছে হুড় হুড় করে। দবির আর ভারি মনে হছে না। কেমন ঢেউয়ের ওপরের শোলার মতো দুলছে। 

চোখে আঠা নিয়ে তাকাল আসমা। টলোমলো পায়ে চলছে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো দবির। বলল, আর বেশি দূর নেই। ওই যে আন্ধার দেকা যাচে, ওইডে উত্তমের মামার আমবাগান। ওকেনে থাকবে ও। আমাগের আগোয় নিতি আসপেনে। 
দবিরের দিকে রক্তচোখে তাকিয়ে থাবা দিয়ে বোতল মাটিতে ফেলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগোল। 

কৃষ্ণ নগর গোপিকান্তপুর থেকে খুব দূরে নয়। মাঠ পেরোলেই গ্রামের শুরু। উত্তমের মামার বাড়ির পেছনের পাঁচিলের পর এই বিশাল আমবাগান। সামনের রাস্তা দিয়ে আসলে লোকে টের পেয়ে যেতে পারে। তাই এই ব্যবসা। অন্ধকারের খুব ভয় আসমার। জমাট কালোর ভেতর দিয়ে কী করে যাবে ভাবছে। বড় জোনাকির আলো যেন জ্বলে উঠল বনের ভেতর। আঁকাবাঁকা হয়ে জ্বলে থির হলো আলোটা। ফিসফিসানির শব্দে সচকিত হলো ওরা। 
‘এই দবির, এই দিকি পথ। আয়। 
আসমা থমকে দাঁড়াল। পিঠে মদু হাত রেখে এগিয়ে যেতে বলে একটা গাছের আড়ালে মিলিয়ে গেল দবির। 

টর্চের  ক্ষীণ আলোটা পায়ের পাতা হয়ে মুখে লাগল। সরে গেল পরক্ষণেই। উত্তম এগিয়ে এসে ডান হাত ধরলো আসমার। বাঁ হাতে কাঁধ জড়িয়ে শরীরের সাথে মিশিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে লাগল। চার পায়ে দুই পায়ের কদম। দুটো শরীরে একই চলার দুলুনি। 
‘আমি একটু বসবো।
‘আছা, দাঁড়াও। খালি জায়গা আছে কিনা, দেখে নি। 

প্রাচীন এক আমগাছের ডাল চারদিকে কালো ছাতার মতো খোলা। তার নিচে দাঁড়াল ওরা। উত্তমের হাতের আলো বত্তাকার ঘাসবিছানো জায়গাটায় ঞ্চল হলো। টুপ করে বসে পড়লো আসমা। উত্তমও। মাঠের ভেতর নিঃশেষ হবার নিশানা পেলেও এইখানে ওদের মতো চলে যাবার আগে জিরিয়ে নিছে রাতটা। একটু দুরে সর্ সর্ আওয়াজে কী যেন দৌঁড়ে গেল। ভয় পেয়ে নিবিড় করে উত্তমের গলা জড়িয়ে ধরলো আসমা। ডালপালা নড়েচড়ে উঠছে। ভোরের বাতাস পাখিদের ঘুম মুছে দিয়ে চলে যাছে মাঠের দূরে। সীমাহীন শঙ্কায় উপরের দিকে তাকাল। 
‘কোনও ভয় নেই। আমি আছি না
‘হুম।

এতপথ হাঁটার কান্তিতে শীত মনে হয়নি। ভোরের বাতাস ঘাম জমিয়ে দিছে ত্বকে। কাঁপছে আসমা। বুঝতে পেরে আরও ঘন করে আঁকড়ে রাখলো বুকের ভেতর। মুখের কাছে নিঃশ্াস ফেলে বলল, তোমাকে এমন করে পাবো, ভাবিনি। সব ব্যবসা হয়েছে। কালই বিয়ে করছি আমরা। তুমি কি বলো?
‘আমার কিছু বলার থাকলে কি আর সব ফেলে সব পাবার পথে পা বাড়াতাম উত্তম?

ভেজাচোখে তাকিয়ে দেখে অন্ধকারেও উত্তমের চোখে অথৈ জলের ছায়া। ছায়াটা বিন্দু হয়ে গড়িয়ে পড়লো। এক অবিছেদ্য আলিঙ্গনে জড়ালো দুজন। কাত হয়ে শুয়ে বাহু বিছিয়ে আসমার মাথাটা আলতো করে রাখলো উত্তম। বন বন ঘ্রাণের ভেতরও পাপড়ি মেলেছে ফুলেরা। দুজনের নিঃশ্াসের সুবাস মিলে একাকার। মিহি করে কথা বলছে দুটো স্র। অবিরাম চুম্নের পর আবারও আধো আধো কথা। বুঝবার জো নেই, কোনটা চুমু আর কোনটা কথার সম্ার। 

উত্তমের ডানহাত কামিজের গলা গলিয়ে আসমার বুকে নেমে এলো। পাঁচ আঙুল খেলা করছে পালাক্রমে দুটো ঢেউয়ে। নিজের শ্াসের তাপে পুড়ে যাছে আসমা। উত্তমের হাত উঠে এসে আসমার নাভিমূল হয়ে নিচে দেবে গেল। কুঁকড়ে উঠে কোনওরকমে আসমা বলল, এখন থাক।
‘আমিই তো। বিয়ে তো হছেই। মানা কেন করছো, লাভ? হাঁসফাঁস করে বলল উত্তম। হাত আরও চঞ্চল হলো। কিছু আগে, ঢেউয়ে শোলার দোলা আবারও অনুভব করতে লাগলো আসমা। বুঁজে এলো চোখ।  

চোখ মেলে দেখে, জানালা গলে রোদের ফালি এসেছে বিছানায়। উত্তম বসে আছে। মুখের দিকে তাকিয়ে পিঠে হাত রেখেছে। সেই মুখ রোদের মতোই উজ্জ্বল। রাতের কথাটা ভাবছে আসমা। স্প্ন নাকি সত্যি বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবনামগ্ন দেখে কথা বলল উত্তম।
‘রাতের বেলা আসার সময় বনের ভেতরে সংাহীন হয়ে গিয়েছিলে। কোলে করে এনে শুইয়ে দিয়েছিলাম। কেমন বাচা মেয়ের মতো ঘুমোলে। এখন কেমন লাগছে?

তলপেটে বেশ ব্যথা অনুভব করলো। উঠতে উঠতে ঢোক গিলে হাসি আনতে গিয়ে ঠোঁট বেঁকে গেলো আসমার।
এর পর পরের সপ্তাহে
গল্প বিভাগটি কেমন লাগছে, অনলাইনে মতামত লিখে জানান

No comments:

Post a Comment