৩য় পর্ব
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।
এখানকার কাজ শেষ । বাড়ী ফেরার তাড়া । ইয়শোওন্তপুর হাওড়া সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে । শালিনী একাই ফিরছে ২ এসি কোচে । সঙ্গে একটা ট্রলি ব্যাগ আর কিছু ছোট খাটো জিনিষ । খুব ব্যস্ত লাগছিলো । অনেকটা পথ কোরমঙ্গালা থেকে ইয়শোওন্তপুর ষ্টেশন । হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বগিতে উঠে । জিনিষ পত্র ঠিক জায়গায় রেখে একটা টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো । যে যার বার্থ এ উঠে বসছে । সামনের বার্থের এক ভদ্রমহিলা শালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “কোলকাতা যাবে বুঝি ?”
হ্যাঁ । আপনি ?
আমিও । সঙ্গে কেউ নেই ?
‘না’ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে ওলটাতে ।
ও ! আমিও একলা যাচ্ছি মা । তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলে সময় কাটাবো ।
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় । বলুন না ।
আমি এখানে আমার ছেলে বৌ এর কাছে এসেছিলাম ।
আপনার ছেলে কি করেন ?
ছেলে বৌমা দুজনেই ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ।
ও তাই ! ভালো ।
তুমি ?
আমি ! আমি আপাতত কিছু করিনা ।
তোমার বিয়ে হয়েছে ?
কথাটা শুনেই শালিনী বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে । আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিতা ?
না মা । জিগ্যেস করলাম বলে কিছু মনে করনা ।
না না । আচ্ছা মাসিমা বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কিছু কাজ নেই ! বিয়ে না করে কি মেয়েরা সমাজের অন্য কোন ভালো কাজ করতে পারে না ! আপনার কি মনে হয় ।
কাজ তো অনেক আছে মা । কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছে , কেউ ক্রিকেট খেলছে , কেউ সাঁতার কাটছে , কেউ সিনেমা করছে .......
এগুলো সমাজের মঙ্গলের কাজ কিনা জানিনা তবে হ্যাঁ নাম যশের জন্য ঠিক আছে ।
তুমি কি কিছুই কর না মা ?
দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার ? ... উল্টো প্রশ্ন শালিনীর ।
কিছু একটা কর নিশ্চয় । কি কর মা ?
কলেজে পড়াতাম এখন পড়াইনা । বেকার বলতে পারেন।.... ইচ্ছে করেই কিছু খুলে বলল না , আবার বিয়ের কথা না পেড়ে বসেন মহিলা । ম্যাগাজিনটায় চোখ বুলতে লাগলো । প্রত্যেক বয়স্কা মহিলাদের এই এক প্রশ্ন ; বিয়ে , ছেলে মেয়ে বিরক্ত লাগে এক ঘেয়ে কথা শুনতে । অন্য কোন প্রশ্ন নেই ?
মহিলা , মনের মতন উত্তর না পেয়ে চুপসে গেলেন । উনিও একটা বোই বার করে মুখের সামনে ধরলেন ।
খুব অলস লাগছিল শালিনীর । অনেকটা পথ এক টানা অটো তে । সেই সকালে বেরুন । ট্রেনে এসির ঠাণ্ডাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা । টি টি র ডাকে উঠে পড়ে ।
টিকিট চেকিং এর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে । সামনের মহিলাও ঘুমিয়ে পড়েন ।
রাতে ট্রেনের জঘন্য খাবার খেতে রুচিতে বাধলেও উপায় নেই । ডিনারে , ভেজ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে । আসলে জেগে থাকলেই ভদ্রমহিলার প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হবে । অহেতুক কথা বাড়বে তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয় ।
৪র্থ পর্ব
হাওড়া ষ্টেশন এ গাড়ী ইন করে প্রায় আধ ঘণ্টা লেটে । নিজের লাগেজ গুছিয়ে প্ল্যাট ফর্মে হাঁটা দেয় ।
প্রি পেড ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে ।
বাড়ি পৌঁছে শান্তি । সোজা বাথ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয় ।
মা’ জল খাবার নিয়ে মুখের সামনে , সঙ্গে চা ।
চলে এলি ভালো হল । বাবা আমার চিন্তা গেল । মেয়টা কোথায় রইলো কি খেল !
প্রত্যেক দিন ত তোমায় ফোন করতাম । তবু চিন্তা !
হবেনা ?
কেন ?
ও তুই বুঝবিনা । বই ছাড়া ত কিছু জানিশনা । নে খেয়ে নে । পরে কথা হবে ।
সত্যি খিধে পাচ্ছিল । ট্রেনের যা খাবার ! গা গুলোয় খেলে । লোকে বাধ্য হয় তাই খায় ।
বিকেলে দিদি এলো ।
কিরে শালু ফিরে এলি ?
কি করতাম তাহলে ?
কেন তোর রিসার্চ !
শেষ করেই ত এলাম । ছোট প্রোজেক্ট । এবার দেখি কি করি । নাইজারে (NISER) সাইন্টিস্ট চায় দেখি পাই কিনা । ওটা ভালো ইন্সটিটিউট , মাইনে ভালো । পেলে চলে যাবো । আমাকে আমার রিসার্চ চালিয়ে যেতে হবে , আমার টার্গেটে না পৌঁছন পর্যন্ত ।
সারা জীবন টা কি এই করেই কাটাবি ?
এ ছাড়া আর কি করবো বল ? আমি ত তোদের মত গুছিয়ে ঘর সংসার করতে পারবো না ।
কেন পারবি না ! আমারা কি পারতাম ? পারতে হবে সংসারের সেই নিয়ম ।
এই খানেই তোর আমার মধ্যে মত ভেদ ! “ওই সংসারের সেই নিয়ম” কথাটা আমি মানতে রাজি নই ।
অফিস থেকে জিজু এসে হাজির । টুকাই আগে থেকেই এসে গিয়েছে । মাসির কাছে বেঙ্গালুরুর গল্প শুনছে ।
হঠাৎ বাইরে রাস্তায় একটা প্রাইভেট কার আমাদের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো ।
কার থেকে সু-টেড বুটেড এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক এবং সঙ্গে এক ভদ্রমহিলা । হাতে মিষ্টি ।
শালিনী কিছুই বুঝলোনা । ও নিজের ঘরে চলে গেল। এনাকে ত কোন দিন আমাদের বাড়ী দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না । ইনি কে ? হঠাৎ মাথায় কারেন্ট লাগার মত একটা শক পেল । অজ্ঞান হয়ে গেল শালিনী । ভাগ্যিস বিছানায় পড়ে গিয়েছিল নাহলে কি হত কে জানে ।
টুকাই ঘরে ঢুকে মাসিকে বিছানায় ও ভাবে পড়ে যেতে দেখে তার মাকে ডাকে । টুকাইয়ের ডাকে দিদি গিয়ে দ্যাখে শালিনী বিছানায় অস্বাভাবিক ভাবে পডে গিয়েছে । অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার আসেন । অর্ক নিয়ে আসে সঙ্গে করে ।
যারা এসেছিলেন তারা হতভম্ব । বাড়ী সুধু সকলের হৈ চৈ । কি হল কি হল ?
ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বৈঠক খানায় বসে আছেন । কেউ কাছে নেই অথচ যেতেও পারছেন না ওনারা ।
শেষে ভদ্রমহিলা ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলেন শালিনী বিছানায় শুয়ে । ডাক্তার , প্রেশার পালস দেখে জ্ঞান ফেরানোর জন্য চিকিৎসা সুরু করেন ।
শালিনীর মা কপালে হাত জোড় করে ঠাকুর কে ডাকতে শুরু করেন ।
কিছুক্ষণ পরে শালিনীর জ্ঞান ফেরে । ডাক্তার বাবু অর্ক কে কিছু প্রেসক্রিপশন দিয়ে চলে যান । অর্ক সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ নিয়ে আসে ।
শালিনীর মা’র এতক্ষণ খেয়াল ই ছিল না ঘরের অতিথিদের কথা । কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলেন মেয়েটা বেঙ্গালুর থেকে এসে খুব দুর্বল লাগছিল । আজ কি যে হল আপনারা আসার সঙ্গে সঙ্গে এরকম অজ্ঞান হয়ে জাওয়া এই প্রথম বার ....
না না আপনি কিছু চিন্তা করবেন না । এটা তো অপ্রত্যাশিত । কেউ কি জানতো এরকম হবে বলে । আমরা বরং আরেক দিন আসবো কেমন !
শালিনীর দিদি ও ঘর থেকে আসে চা জলখাবার নিয়ে ।
মা বলেন বসুন না এসেছেন এতো কষ্ট করে । আমাদের ভাগ্য আপনারা নিজে এসেছেন । আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে । একটু মিষ্টি মুখ করে জান ।
আপনি ব্যস্ত হবেন না । ও কি আস্তে পারবে ? আমরা অন্য কোন দিন আসবো । আজ চলি । আমাদের টেলিফোন নাম্বার দিয়ে যাচ্ছি । সুস্থ হলে খবর দেবেন । কেমন ! আজ আসি তাহলে !!
আচ্ছা ! আপনারা যা ভালো বোঝেন । ঠাকুরের যা ইচ্ছা । কিছুই খেলেন না ।
খাওয়া কি পালাচ্ছে বোন । আবার আসবো আপনি চিন্তা করছেন কেন ? ভদ্রমহিলার মুখে ‘বোন’ শব্দ টা শুনে ‘মা’ ধাতস্থ হলেন ।
শালিনীকে দেখতে এসেছিলেন ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা । তবে কে ওনারা ? ব্যাপার টা কিছুই জানা গেলো না । ........
চলবে .....
No comments:
Post a Comment