Monday, June 9, 2014

২ য় পর্ব আবিষ্কারের নেশা ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।


২ য় পর্ব
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে । মনে মনে ভাবে বার্কের ( ভাবা এটমিক এনার্জি কমিশন) কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব । খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা । বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে । এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি ? ইউ জি সী পেতে অনেক দেরি । সেই থোড বডি খাডা ... খাডা বডি থোড !! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হাইয়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে । বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে । বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে । শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্পলায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে আই আই এস সী , বেঙ্গালুরু তে যোগা যোগ করতে চায়। আজ বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয় উৎসাহ দিতেন হাইয়ার রিসার্চের জন্য পরের দিন বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটে শালিনী চলে-গেল। ওখানে এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ওঠে । সকালে আই আই এস সী ( Indian Institute of Science) এতে যায় । Carbon Nanotube Based Sensors Funded by: DST, Project no. 563 কাজে সুযোগ পায় প্রফেসর ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর আন্ডারে । শালিনী যা চাইছিল তাই পেল এখানে ।
এরমধ্যে অয়নের সঙ্গে হঠাৎ দেখা একটা শপিং মলের কাছে । শালিনীকে দেখে অয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। দুজনে চোখা চোখই হয় । ওরা অপোসিট ফুট ধরে হাঁটছিল পরস্পরকে দেখে দুজনেই দাঁড়ালো ।
“কি ব্যাপার এখানে” ? অয়নের প্রশ্নের অপেক্ষায় যেন ছিল শালিনী
“কেন আমার কি এখানে আস্তে মানা” ! ভুরু কুঁচকে শালিনীর জবাব অয়নকে ছুঁড়ে ।
তা কেন !
তবে ?
কৌতূহল! , মানে just inquisitiveness বলতে পারো ।
মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee , am I correct !
Yes Madam !
কোথায় উঠেছ ?
কেন যাবে নাকি সেখানে ?
আবার ওই এক উত্তর just for inquisitiveness !
আমারও এক উত্তর মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee !!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে ।
কফি খাবে ?
তা হলে মন্দ হত না !! তবে পেমেন্ট আমি করবো ।
তোমায় নিয়ে পারা মুস্কিল । কেন আমি দিলে ক্ষতি কি ?
না না আমি দিলে তোমার ক্ষতি কি শুনি ?
তর্ক কোর না আজ অন্তত আমার কথা একটু রাখ শালিনী । চল কে এফ সী কাউন্টারে জাই ।

অয়নের সান্নিধ্য এই বিদেশ ভুঁইতে খারাপ লাগ-ছিলনা । সত্যি নারীর কাছে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন আছে ; নারী যতোই উচ্চ শিক্ষিতা , উচ্চ পদাধিকারী হোক না কেন !এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম ।
হঠাৎ অয়ন বলে ,“কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেল । কি ভাবছ ? ”
কিছু না ! বিব্রত বোধ করে শালিনী । কি আবার ভাববো । মা একা আছেন ওনার কথাই মনে হচ্ছিল !! কেমন আছেন কে জানে ?
কেন ফোন করনি ?
হ্যাঁ রাত্তিরে করি কিন্তু কাল করিনি । সত্যি মা’কে ফোন করেনি শালিনী ।
অয়নকে ঘুণাক্ষরেও যানতে দি লোনা ওর কথাই ভাবছিল বলে ~ ! মেয়েরা পারেও বটে !! অয়ন কিছু স্ন্যাক্সের অর্ডার দেয়। কে এফ সী চিকেন আর পিটযা ।
এতোগুলো কেন আনাচ্ছ ? আমি অত খাইনা !
জানি আজ খেতেই হবে । তুমি ত কফি খাওয়ালে আমি মানা করিনি এবার আমি যা খাওয়াবো তুমি প্লিজ মানা করনা ।
আমি ওসব খাইনা অয়ন । আমরা ভেতো বাঙ্গালী ওই সব খাবার খেলে পেটের অসুখ হবে , তখন কে দেখবে ?
কেন ! আমি , আমি দেখবো !!
আহারে ! কি আমার কলির কেষ্ট ~ আমায় করবে তুষ্ট ?
নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট !
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে ।
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে ।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ । রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে । মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে।
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা । আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে । নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি ?
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স । বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই । যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত । খাওয়ার সময় থাকেনা এদের । এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে । শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো । নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে । ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ । এর পর কি ?
হঠাৎ অয়নের ফোন । হ্যালো ! বল অয়ন ।
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি ।
কিন্তু আমার নয় ।
জানি , ছুটি নাওনা !
হুম দেখছি । “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ । এবার বাড়ী যেতে হবে । ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না । আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি” । কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী ।
কি হল ? উত্তর দিচ্ছ না কেন ?
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি । তুমি কিছু মনে করবে না বল।
ঠিক আছে বল । আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে । আমি আসছি তোমাকে নিতে ।
মানা করতে পারলো না শালিনী । কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ” ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির ।
চল ।
কোথায়?
চলইনা ।
‘আই-নক্স’ এ SANDLER BARRYMORE ‘BLENDED
’ ।
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে । আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত । নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে । কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন ।
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে । নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে ।
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে ।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা” ।
সেকি ! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে ?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল । চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল ।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে ।
অয়ন বিব্রত বোধ করে । বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি ! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে !!
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে । মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে । এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয় । এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই । রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা । এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না । তবে কি সত্যি তাই ? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে । সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল । এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন।
শালিনীর বাসা এসে-গেল । গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া” ?
৯০ রুপিস মাদাম । ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে ।
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে।
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।

No comments:

Post a Comment