Thursday, June 26, 2014

৬ষ্ঠ পর্বঃ- পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ- আবিষ্কারের নেশা । ত্রিভুবন জিত মুখার্জী । ২৬.০৬.২০১৪



৬ষ্ঠ পর্বঃ-
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না । ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা । এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল । আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে ?
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না ? সত্যি বল । যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি ! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই !!
উত্তর: মোটে না । ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না । ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে । আমি অপমানিত হয়েছি । তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে । তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে । সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই ।
না । আমি কোন প্রশ্রয় দি নি । ওটা ওর বোঝার ভুল । আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে । পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না । খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে । প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি । তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ ।
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী । ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে । তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে ! তোমার বলা উচিত ছিল।
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না ।
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে । তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা ?
তা তো বলিনি । হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয় । বাহ্য চাক চিক্যকে নয় । মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয় ।
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই !
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না । প্রসঙ্গ বদলাও । আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে । সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী । তারা কর্মে বিশ্বাস করে । তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয় । তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা । এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায় । কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ । শান্ত সুন্দর । ওদের কাছথেকে সাধারন মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে ।
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে ?
বলা মুস্কিল । আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব ।
কিন্তু তোমার অয়ন !
আমার 'অয়ন' কেন বলছ ? ও কেবল ই আমার বন্ধু । আর কিছু না ।
মন থেকে বলছ !
একদম ।
কিন্তু আমি মানি না । তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই ।
কেন থাকবে না ? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে , ব্যাবহারে , কাজে কর্মে , চাল চলনে ।
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন ?
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন !
নাও হতে পারে । বলে দেখ ।
সম্ভব নয় ।
আয়না টা যতো নষ্টের গোঁড়া । ওই আয়নাই মেয়েদের ভাবুক করে আর নিজের রূপ সম্বন্ধে সচেতন করে । যতো অনা-ছিষ্টির কথা ওই আয়নাই বলে । নিজেকে খুঁটিয়ে দ্যাখে আর ভাবনার দুনিয়ায় বিচরণ করে । শালিনী ও তাই করছিল । নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছিল। এইসময় ...............
পাসের বাড়ী থেকে গানের সুর ভেসে এলোঃ-
কি করে ভুলিব তোমারে
আঁখি জল ঝরে , বারে বারে
বসেছি একাকী হায়
তোমা বিনা অসহায় ।
দিবস রজনী গুনি
কবে তুমি আসিবে শুনি ? ........(১)
এ মন মানে না আর
মনে পড়ে বার বার
তোমা বিনা মন লাগে না
এ ফাগুন রাতে এসো না
কিছুতে কিছু মন লাগে না
ও প্রিয়ে তুমি কি বোঝ না !...............(২)
আমার হৃদয় জুড়ে বসে আছে ,
পাইনা কেন তারে কাছে ।
নিশুতি রাত গেল ,
তারাগুলো নিভে গেল ,
আকাশে চাঁদ ছিল ,
এ শুভ লগনে কে এলো । .................(৩)
ঠিক সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো । এই সময় কার ফোন এলো !
হ্যালো ! কে ?
কে বলত !
অয়ন ?
তবে আমার কথাই ভাবছিলে বল !
বাজে কথা রাখ , কবে আসছ কোলকাতা ?
কি মনে হচ্ছে ?
হেঁয়ালি কর না প্লিজ।
এখানেই এসেছি ৭ দিনের ছুটিতে । তোমার বাড়ীতে-ত আমার জাওয়া নিষেধ তাই তোমাকে কোথায় দেখা করব .........?
খুব বাজে লাগছে আমার । আসলে তোমার ওপর রাগটা ওনাদের ওপর ঝাড়লাম । আমি অনুতপ্ত । আজ আমাদের বাড়ী আসবে ?
কে ? আমি ! রক্ষে কর আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেই করে দেবে তুমি।
যাহ্‌ । তা কখন হয় ! রাগ করেছিলাম ঠিক ই তবে তুমিও ত কিছু বলনি আমায় । তোমার উচিৎ ছিলনা আমাকে বোঝানোর !
তা ছিল । আসলে আমি নিজেও কি করতে কি করে বসে ছিলাম সে জন্য অনুতপ্ত । কোন মুখে তোমায় কিছু বলতাম ।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা । ঠিক আছে তুমি আজ এসো আমাদের বাড়ী । আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু।
ডন ।
ডন ।। Bye . Sincerely I will wait for you .
শালিনী সাধারণত সাজ গোছ করে না । আজ সামান্য প্রসাধন করাতে সুন্দর লাগছিল তাকে ।
মা দেখে বলেন কিরে শালু কি হল বলতো ?
কেন কি আবার হবে ? তোমার সবেতেই আমাকে ছুঁড়ে প্রশ্ন !
না মা , আমি ত জানি তোকে । মা আমার কি সুন্দর দেখতে লাগছে আজ । অনেক দিন দেখিনি তোকে রে । শুধু বকেছি । চোখ পুঁছে ফেলেন মা !
ওই ! ওমনি কান্না কাটি !! কেন তুমি আমার জন্য এতো ভাবো বলত !
তুই কি করে বুঝবি মা ? মা হলে বুঝবি।
ওই এক কথা ‘মা’ হলে বুঝবি !
বিকেলে একজন আসবে মা , বলে লজ্জায় শালু মাকে জড়িয়ে ধরে ।
কে সে শুনি ? আমি কি সত্যি শুনছি । হে ঠাকুর , আমার ডাক শোন তুমি ।
মা তুমি না সবেতে উতলা হও ।
অয়ন কে ডেকেছি । ও আসবে । ভালো কিছু খাবার কর ত ।
কি বলিস শালু সত্যি ! দাঁড়া তোর দিদি জামাই বাবুকে ডাকি তবে ।
না ওদের এখন ডাকতে হবে না । পরে । আমার কিছু কথা আছে ওর সঙ্গে তারপর ।
ঠিক আছে তাই হবে । মা রান্না ঘরে চলে জান হাঁসি হাঁসি মুখে ।
এতদিন পর মাকে খুশি দেখে শালিনী নিজে বেশ খুশি । মাকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ হয়নি । রিসার্চ করার সুযোগ দিলে অয়নকে তার বিয়ে করতে আপত্তি নেই । সত্যি ত সে সন্ন্যাসিনী হবে না । সংসার জখন করতেই হবে তবে দেরি করে লাভ নেই । তবে অয়নের মতা মত জানতে হবে । আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা চলবে না। আমাকে আমার মত থাকতে দিতে হবে ।
বিকেলে অয়ন সত্যি এলো শালিনী র বাড়ী । বাড়ীর সামনেটাতে একটা সরু রাস্তা আছে তাই অয়নের নতুন পোলো গাড়ীটা পার্ক করতে অসুবিধে হচ্ছিল ।
শালিনী , আজ ফুলদানিতে সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ।ঘরটা খুব অগোছালো লাগছিল । অনেকটা নিজেই গুছিয়েছে । দরজায় নতুন পর্দা লাগিয়েছে । মা উঁকি মেরে মেয়ের সব কান্ড কারখানা দেখে মুখটিপে হাসছিলেন । যাগ ঠাকুর শুনলেন । বাবা লোকনাথ তোমার পূজো দেব দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর পূজো দেব .... আমার শালুর বিয়ে হয়ে জাগ সব ঠাকুরের মানত অনুযায়ী পূজো দেব ।
ঘরে নক করাতে শালিনী আসে ঘরের দোর খুলতে ।
অয়ন , শালিনীকে দেখে অবাক হয় । সত্যি আজ শালিনী কে সুন্দর দেখাচ্ছিল। খুব স্মার্ট মেয়ে শালিনী । তাই সামান্য প্রসাধনে ওর ব্যক্তিত্য ফুটে ওঠে চোখে মুখে ।
‘এসো’শালিনী অয়নের উদ্যেশ্যে বলে ।
ঘরে ঢুকে অয়ন , নতুন সাজে ঘর দেখে মনে মনে খুসি হয় । এজে তার শালিনীর হাতের ছোঁয়া দেখেই বুঝতে পারে ।
কি দেখছ হাঁ করে !
তোমাকে আর তোমার টেষ্ট কে দেখে । অপুর্ব ।
Thanks a lot . কি খাবে বল ।
তুমি দেবে ?
আবার অসভ্যতামি !
যা বাব্বা ! তুমি কি এই রকম ভাবে আমাকে শাসন করবে ?
হ্যাঁ দরকার হলে তাই করবো । না করার কি আছে ? তোমাদের মতন পুরুষদের আমি চিনি । সুধু খাই খাই ভাব ।
মা ঘরে ঢোকেন চা জলখাবার নিয়ে । মাথায় ঘোমটা দেখে শালিনী হেঁসে ফেলে । তোমার ভাসুর নাকি গো মা ? ও আমার বয়সি ! আমরা এক ক্লাসে পোড়তাম । আমার বন্ধু অয়ন ।
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অয়ন ।
থাক থাক বাবা । তুমি কত দিনের জন্য এসেছ ?
এক সপ্তাহ থেকে চলে যাবো ।
ও মাত্র এক সপ্তাহ ।
তোমার বাবা মা কেমন আছেন ?
ভালো ।
তোমরা গল্প কর আমি আসি , কেমন ! আজ এখানে খেয়ে জাবে বাবা ।
মায়ের , এই ‘বাবা’ , ‘মা’ ডাকগুলো খুব সেকেলে লাগে শালিনীর ।
তোমার মা খুব স্নেহ ময়ি ।
হ্যাঁ সত্যি তাই । আমার মা খুব স্নেহ ময়ি । এখন থেকে হাত করে রাখ পরে কাজে লাগবে ।
কেন ?
কেন আবার । আমার নামে নালিশ করবে । মা তোমার পক্ষ নেবেন সর্বদা ।
তা তুমি জদি আমার কথা না শোন তবে ........ বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ হল ।
কে এল ? শালিনী বাইরে গিয়ে অবাক জিজু , দিদি,টুকাই সব এসে হাজির ।
আমরা আর থাকতে পারলামনারে , দিদি বলে উঠলো ।
বেশ করেছিস । আয়না । কি জিজু তোমার খবর ?
আমার খবর ভালো না ।
কেন?
আমার ওই গানটার কথা মনে পড়ছে , “মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রাম জি” বলে হেঁসে ওঠেন ।
যাঃ। সব সময় আমার পেছনে লাগা । কোন কাজ নেই তোমার না ! টুকাইকে কে কোলে নিয়ে ঘরে ঢোকে শালু । আলাপ করিয়ে দি ....
‘অয়ন’ আমার বন্ধু সেই কলেজ থেকে । ইনি আমার দিদি জামাইবাবু .....
নমস্কার । বুঝতেই পাচ্ছি । শালি না থাকলে , “ঘর লাগে শুনা শুনা , জামাইবাবু না থাকলে, দিল হুম হুম করে ঘবরায়ে...”
হা হা করে হেঁসে ওঠে সবাই ।
মা সকলের জন্য চা জলখাবার নিয়ে আসেন । দিদি , জিজু ; সেন মহাশয়ের সন্দেশ মিষ্টি আর গরম ক্লাব কচুড়ি এনেছেন।
আজ মা, দিদি ,জিজু সকলে খুশি । টুকাই শালুর কানে কানে বলে নতুন মেসোর ওটা কি গাড়িগো ? খুব সুন্দর গাড়ীটা ।
তুই মায়ের কাছে জা । এখানে বড়দের কাছে থাকতে নেই । পরে আসিস আমার কাছে ।
আচ্ছা বলে চলে যায় টুকাই।
চলবে:-

No comments:

Post a Comment