Tuesday, November 19, 2024

বিশু খুডো ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী ১৯.১১.২০২৪ মঙ্গলবার । আজ বিশু খুড়ো কে খুব মনে পড়ছে l আজ ওনার জন্মদিন । ওনার পুরো নাম শ্রী বিশ্বভূষণ ভট্টাচার্জী । আমরা প্রায় সকলে বিশু খুড়ো বলেই ডাকি । বিশু খুড়ো বিপত্নীক । বয়েস ৭৮ হল এখন চোখে ভালো দেখতে পারেন না । তাই মেজাজটা সর্বদা খিট খিটে । অবসরের পরে আরো খিট খিটে হয়ে গিয়েছেন । ঘরে মানুষ জন বলতে উনি আর ওনার এক নাতি । সে মাঝে মধ্যে দাদুর কাছে আসে কিন্তু পরক্ষনেই ফিরে যায় নিজ গৃহে । বিশু খুড়ো মানুষটা ভালো । কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি করতেন । একাউন্টস অফিসার হয়ে রিটায়ার করেন । রিটায়ারমেন্টের পর কলকাতায় একটা ছোট টু রুমের ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই থাকেন । পেনশনের টাকায় ভালোই চলে উপরন্তু অবসর সময়ে সাহিত্য চর্চা চুটিয়ে করেন । অনেক ভালো ভালো কবিতা উনি উপহার দিয়েছেন সংগে রাজনৈতিক পর্যালোচনা, নাট্য সমালোচনা,গল্প উপন্যাস ইত্যাদি অনেক লেখা পরিবেষণ করে সুনাম অর্জন করেছেন । সুদূর বাংলাদেশ থেকে ওনার ডাক পড়ে সাহিত্য সমারোহে তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওনাকে বিশেষ অতিথী করে নিমন্ত্রণ করা হয় । বিশু খুড়ো কিন্তু অত্যন্ত সাদা মাটা মানুষ এবং নিরঅহংকার ও বটে l একটা পুরোনো মোবাইল তাও রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো তার কভার । আমাদের বলেন কি হবে ঐ স্মার্ট ফোন নিয়ে ? আবাসনের অন্য লোকেদের সংগে সম্পর্ক ভালো । সবাই বিশু খুড়ো বলেই ডাকেন । পাড়ার ছেলে ছোকরারা বিশু খুড়ো কে কোনদিন মন্দিরে যেতে দেখেন নি । উনি কট্টর বাম পন্থী । মন্দিরে যাওয়াটা নাকি অশিক্ষিতের লক্ষণ । তাই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালাটা ওনার মতে হাস্যকর এবং অযুক্তিকর । ঐ আবাসনের বয় জ্যেষ্ঠ সেক্রেটারি মহাশয়, শ্রী নীলকণ্ঠ সমাদ্দার বলেন শ্রাবণ মাস মানেই শিবের আরাধনার মাস l শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালেন অনেকেই ৷ নিজের সংসার, সন্তানের মঙ্গল কামনায় শিবের পুজো চলে পুরো শ্রাবণ মাস ৷ কথায় বলে দেবাদিদেব মহাদেব ৷ অর্থাৎ সব ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ শিব ! তিনি মহা যোগী, মহেশ্বর । সেই ঈশ্বরের পুজোয় সব মনস্কামনা পূরণ হবে ৷ শান্তি প্রাপ্তি হবে জীবনে এবং সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে । পুরাণ মতে এই শ্রাবণ মাসেই বিষ পান করেছিলেন মহাদেব ৷ বিষ পানের ফলে তাঁর সারা শরীর নীল হয়ে যায় ৷ সেই কারণেই তাঁর মাথায় জল বা দুধ ঢেলে পুজো করা হয় ৷ শ্রাবণ মাসের প্রতিদিনই এই আচার পালন করা হয় ৷ তবে যে হেতু সোমবার শিবের বার বলেই পরিচিত, তাই সোমবারেই বিশেষ পুজো হয় ৷ শ্রাবণ মাসের ৪টি বা ৫টি সোমবার ধূমধাম করে পুজো করা হয় ৷ প্রচলিত বিশ্বাস শিবের পুজোয় দূর হয় জীবনের সব সমস্যা । বিশু খুড়ো এই যুক্তি শুনে হেঁসে গড়িয়ে যান বলেন মূর্খের দলকে কি বলে বোঝাবো l ওরে শিব বিষ খেয়েছিলেন বলে কোন পুরাণে আছে ? শিব পুরাণে ! ও ওগুলো কিছু ব্রাহ্মণ নিজেদের রোজগারের জন্য অন্ধ ভক্তদের মগজ ধোলাই করে মগজে বিষ ঢেলেছেন । কাজ কম্ম কিছু নেই রাস্তায় লম্বা লাইনে জল নিয়ে গাড়ি মোটর বন্ধ করে ধর্ম অর্জন । লজ্যা করেনা । চাকরি করেছেন বটে তবে প্রায় নাকি খটা খটি লাগতো উপরিস্থ হাকিমের সংগে ।কথাটা শোনা তাই বিশেষ গুরুত্ব দিই না ঐ কথার ওপর । নিন্দুকেদের কিছু একটা রটালেই হল । একদিন শীতের সকালে বিশুদার বাড়ির কাজের মাসি বেল বাজিয়েই যাচ্ছেন কিন্তু দরজা আর খোলেনা । বেলা ১০ টা বাজলো তবুও দরজা খোলে না । কাজের মাসি সিকিউরিটি কে ডাকেন । সে এসে দর্জা ধাক্কায় কিন্তু কোন শব্দ হয়না । আবাসনের লোক জন জড়ো হতে আরম্ভ করেন । আমাদের আবাসনের সোসাইটির সেক্রেটারি শ্রী নীলকণ্ঠ সমাদ্দার মহাশয় আসেন ।দরজা ভেঙে সবাই ঢোকেন । সবাই দেখে অবাক বিশু খুড়ো অচৈতনি অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন । গায়ে জ্বর । উনি মেয়ের বাড়িতে একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারেন নি বোধ হয় । তা নাহলে ওনার নাতি নিশ্চই চলে আসতো তার দাদুকে দেখতে । নীলকণ্ঠ বাবু ধার্মিক মানুষ । সংগে সংগে এম্বুলেন্স ডেকে বিশু খুড়ো কে হাঁসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং ওনার মেয়ের বাড়িতে ফোন করেন । নীলকণ্ঠ বাবু প্রত্যেকের সংগে আন্তরিক সম্পর্ক রাখেন এবং আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন । এটাই ওনার মহানতা । তাই ওনেকেই সোসাইটির সেক্রেটারি করেন সবাই । যাইহোক ভগবানের দয়ায় বিশু খুড়োর করোনা টেস্টে নেগেটিভ দেখায় পরে ডাক্তারি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন । ওনার মেয়ে নাকি বাবা তারকনাথের কাছে মানত করেছিলেন বাবার সুস্থতা কামনা করে । বাবা তারকনাথ শুনেছেন মেয়ের ডাক তাই বিশু খুড়ো সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন । এই কথা কিন্তু কিছুতেই মানতে নারাজ আমাদের বিশু খুড়ো । বলেন ওরে ঠাকুর যদি বাঁচাতেন তবে ডাক্তাররা আছেন কি করতে? মেয়ে বলে না বাবা ডাক্তাররাও মানেন এক ঐশ্বরিক শক্তি কাজ করে তাই তাঁরাও ভগবানকে ডাকেন অপারেশন করার আগে । পেসেন্টকে আশ্বাস দেন ভগবানের ওপর বিশ্বাস রাখুন আপনার রোগী নিশ্চই ভালো হয়ে যাবেন । আজ ঐ নীলকণ্ঠ জেঠু তোমার ফ্ল্যাটের দরজা না ভাঙলে তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারতামনা, সে খেয়াল আছে! উনি ঈশ্বর বিশ্বাসী তাই তোমাকে ঈশ্বর ই বাঁচিয়েছেন এটা মাথায় রেখো । তিনি সর্ব শক্তিমান তাঁর ওপরে কেউ নেই । এখন থেকে একটু ঠাকুর পুজো কর । ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে গলায় পৈতে নেই তোমার, লোকে আমাকে যা তা বলে বিশু খুড়ো মেয়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন আর তাঁর স্ত্রীর কথা মনে করেন... ঐ এক ই কথা তাঁর স্ত্রী বলতেন তাঁকে । বয়েস হয়েছে মেয়ের কথা শোনা উচিৎ মনে মনে ভাবেন কিন্তু না ঐ পৈতে ধারণ অসম্ভব । ওটা নতুন করে করা সম্ভব নয় ওনার কাছে । হ্যাঁ ঈশ্বর তিনি মানেন তবে তাঁকে আকারে সীমাবদ্ধ করতে নারাজ । তিনি নিরাকার পরম ব্রহ্ম ।এটাই তাঁর বিশ্বাস । **চিত্র ঋণ গুগুল** ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

Tuesday, March 26, 2024

©প্রতিবাদ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️ ২৬.০৩.২০২৪ মঙ্গলবার

©প্রতিবাদ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️ ২৬.০৩.২০২৪ মঙ্গলবার স্যার আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবেন না প্লিজ। আমি ঐ ধরণের মেয়ে নই। আমার বাবা অসুস্থ। মা ছোটবেলায় ইহাধাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমার ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব। বুঝতেই পারছেন আমার কতো টেনশন! কথাগুলো বলে সম্পূর্ণা এক গ্লাস জল খেল। বস :- তুমি কর্পোরেট অফিসে চাকরি করার যোগ্যতা রাখোনা। বস কে খুশি করতে পারলে তোমার উন্নতি নিশ্চিৎ। সম্পুর্না :- শুনেছি আপনার স্ত্রী আছেন এবং একটি মেয়ে আছেন তিনি মেডিক্যাল পড়ছেন। আপনার মেয়ের সঙ্গে যদি কোন প্রফেসার এইরকম অসভ্যতা করে......!!! - মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ !! - কেন নিজের মেয়ে বলে গায়ে লাগলো বুঝি! - তোমার অস্পর্ধা দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। - সেই এক ই কথা যদি আমি বলি....! - তাই নাকি? তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারি। ,- দেশে আইন কানুন আছে। আমিও দেখবো আপনি আমাকে কি করে বরখাস্ত করতে পারেন। - ভয় দেখাচ্ছ! - দেখাচ্ছি নয় আপনি ভয় পাচ্ছেন। স্পষ্ট দেখছি আপনি এই শীতে ঘামছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ঘৃণা করছে। একজন কন্যা র বয়েসি মেয়েকে আপনি মলেস্টশন করতে চাইছিলেন। তাকে বারে বারে চেম্বারে ডেকে নানা ইঙ্গিত করা কাছে ডাকা। ইচ্ছেকরে গায়ে হাত দেওয়া। এগুলো কি একজন পিতৃতুল্য লোকের কাজ? আমি সাম্বাদিকের কাছে যাচ্ছি। দেখি আপনি আমাকে বরখাস্ত করেন না নিজেই বরখাস্ত হন। নমস্কার। - এই শোন তুমি বড্ড বড় বড় কথা বলছো। তুমি জানোনা আমি কে? - জানি আপনি একজন লম্পট পুরুষ রুপি পাষন্ড। - কি বললে? আমি লম্পট!! কালকেই তোমায় টারমিনেশন লেটার পাঠাচ্ছি - হিম্মত থাকলে পাঠান। এই বলে বসের চেম্বার থেকে সম্পূর্ণা প্রস্থান করলো। *দ্বিতীয় পর্ব* বস একটি নামি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার। তাঁর এই ছেঁদো মহিলার কথায় বিচলিত হওয়ার কথা নয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্টেনোকে ডাকলেন। স্টেনো চেম্বারে ঢুকে সুপ্রভাত জানালো। বস জিজ্ঞাসা করলেন সম্পূর্ণা র বিষয়। ও কি ধরণের মহিলা ইত্যাদি..... স্টেনো বললেন খুব জেদি মহিলা। ওর কিছু সাম্বাদিক বন্ধু আছে। তারা ওকে অনেক ক্ষেত্রে প্রটেকশন দেয়। - হুম। তারপর.... ঐটুকুই জানি স্যার। - ওকে আপনি আসতে পারেন। - বস চিন্তায় পড়লেন। কিছু অঘটন ঘটাবে নাতো মহিলাটি। এরা বামপন্থী নিশ্চই। নারা বাজি আর বন্দ হরতাল এদের রক্তে। ওকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু পরক্ষনেই ওনার পৌরুষে লাগে। সুধীর বটব্যাল আপোষ সমাধান করবে একটি মহিলার সঙ্গে.....!! একটি ফোন এলো ল্যান্ড ফোনে। - হ্যালো বটব্যাল হিয়ার। - আপনার ব্যাট স্টাম্পে লেগে আপনি আউট হয়ে যাবেন স্যার। সাবধানে থাকবেন । মহিলা কর্মচারীর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার। ওমেন মোলেস্টেশন ইন কর্পোরেট অফিস এই হেডিং নিউজ দেখতে চান? - কে আপিনি? আমাকে থ্রেট করছেন! - হ্যাঁ করছি। জথেষ্ট প্রমাণ আছে। বিনা প্রমানে আমরা কাউকে ঘাঁটাইনা। আজকে সাবধান করছি ভবিষ্যতে এই ধরণের অভিযোগ পেলে বিপদে পড়বেন। কালকে ওনার কাছে ক্ষমা না চাইলে যা ঘটবে তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। এক মেয়ের বয়েসি মহিলাকে sexual harrasment!! লজ্জা করেনা আপনার ! সাবধান। নমস্কার। - বসের সারা গা থেকে কাল ঘাম ছুটলো। কি সাংঘাতিক মেয়েটা। পেটে পেটে এতো ছিল। এই লোয়ার মিডিল ক্লাস মেয়েদের বড্ড বাড় বেড়েছে আজকাল। মনে মনে ঠিক করলেন ওকে বুঝিয়ে বলবেন। কিন্তু ও আরো পেয়ে বসবে তাহলে। *তৃতীয় পর্ব* সম্পুর্না অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছে কম্পিউটার কীবোর্ডে কি সব টাইপ করতে ব্যস্ত রইলো। মনে মনে ভাবে কাল চিন্ময় দার কথাগুলোর কি প্রতিক্রিয়া হয় দেখি। চিন্ময় দা বস কে সপাটে একটা চাঁটি মেরেছে। এখন বোধহয় সেই আঘাতটা ভুলতে পারেন নি। কালকে বস জানতেও পারেন নি আমি ওনার সমস্ত কথা রেকর্ডিং করেছি আমার মোবাইলে। সেই অডিও ক্লিপ চিন্ময় দার কাছে আছে। এখনো কোন ডাক আসেনি কিম্বা কাগজ আসেনি। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ওষুধ কাজে লেগেছে? একটা ফাইল এলো সমুর্ণার ডেস্ক এ। দেখছি যা আছে এক্সেল ব্রড সিটে কাজ করতে হবে। সম্পূর্ণা কাজে মন দিল। ইন্টারকামে কল এলো। ফাইলটা আজ চাই। ব্রড সিটে প্রিন্ট করে বিকেলের মধ্যে আমার টেবিলে যেন পৌঁছোয়। - ওকে বস। - ইন্টারকম রেখে বস মনে মনে ভাবলেন,দেখি কি করে সব কাজ সময় মতন করতে পারে!! সাম্বাদিক লাগিয়েছে আমার পেছনে। এখন এমন কাজ দেব যে দুদিনের কাজ একদিনে করতে হবে। না হলেই একসপ্লানেশন। এরমধ্যে একটা মেল এলো। বস মেলটা পেয়ে চিন্তাগ্রস্ত মনেহল। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম পুঁছলেন। কাজে মন দিলেন। স্টেনো কে ডেকে কিছু ডিক্টটেশন দিলেন। সম্পূর্ণা বুঝতেই পারছে বস ওকে হয়রান করার জন্য বেশি বেশি কাজ দিচ্ছেন। মিসেস গোমস সম্পূর্ণা কে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে তোমার। লাঞ্চে যাবেনা? - না আজ লাঞ্চ আনিনি। বাড়ি থেকে জলখাবার খেয়ে এসেছি। বাস ট্রামের যা অবস্থা অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছোনা এক সমস্যা। আমাদের মতন নিচু তলার কর্মচারীদের সমস্যা বোঝার কেউ নেই। আমাদের টাকা নেই যে নিজের গাড়ি রাখবো। এই যানজটে স্কুটি চালানো বিপদ। সেই বাস নয়তো অটোর ওপর নির্ভর। রোজ যাতায়াতে প্রাণ ওষ্ঠাগত তারওপর রুগ্ন বাবাকে দেখা। তাঁর ওষুধ পথ্য আমি খুব চিন্তায় থাকি ম্যাডাম। নিজের দিকে আমার তাকানোর সময় নেই। - সেকি তুমি লাঞ্চ না করে অফিসের কাজ করবে। কেন? তোমারতো একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট নয় তবে তোমাকে এই কাজ কে দিয়েছেন? - কে আবার নিশ্চই বস পাঠিয়েছেন আমাকে সায়েস্তা করতে। - মানে!!! - অফিসের পরে সব বলবো ম্যাডাম। এখন না। - আমি কিছুটা আঁচ করেছি। বলতে হবেনা। - হেড অফিসে কমপ্লেন করবো আমরা মহিলা কর্মচারীরা। এইসব জুলুম বাজি চলবেনা। - পরে কথাহবে। - সম্পুর্না ফাইলটা যথা সময়ে পাঠিয়ে দিল বসের কাছে। ফাইল মুভামেন্ট রেজিস্টারে ডিটেল্স লিখে পিওনের হাতে দিয়ে উঠলো। ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ কফি আর একটা বার্গার খেল। আজ লাঞ্চ আনেনি। এই খেয়েই থাকতে হবে। *চতুর্থ পর্ব* পরের দিন অফিসে হেড অফিস থেকে অডিট পার্টি এলো। বস পারচেস কমিটি না করে বেআইনি ভাবে অনেক পারচেস করেছেন। টেন্ডার কল হয়নি। অফিস স্টেশনারি, এ. সি. এবং কম্পিউটার কেনা হয়েছে বিনা পারচেস কমিটির এপ্রুভালে। হেড অফিসথেকে শক্ত বাঁশ এলো সো কজ নোটিস হিসেবে। হয়তো চাকরি না থাকতেও পারে। অনেকে কমপ্লেন করেছেন বসের নামে। সম্পূর্ণা র অডিও টেপ কেউ পাঠিয়েছে হেড অফিসে। মহিলা কর্মচারীকে sexual harassment আরেকটা বাঁশ। বস এখন বুঝেছেন নিশ্চই যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকুরে তারাও মানুষ। তাদের প্রতি অন্যায় করলে ভগবান অসন্তুষ্ট হন। এ যাত্রায় তাঁর চাকরিটা থাকলে হয়। সম্পূর্ণা একটা প্রমোশন পেয়েছে। ও এখন জুনিয়র ম্যানেজার। এবারে বোধহয় একটা নিজের ফ্ল্যাট কিনতে পারবে ব্যাঙ্কের লোনে। তবেএকটা দুঃখ থেকেগেলো ওর বাবাকে বাঁচাতে পারলোনা। বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন। দু হাত ভরে আশীর্বাদ করতেন। বাবার জন্য চোখে জল এলো। ঈশ্বর সব দিকদিয়ে মানুষ কে সুখী রাখেন না। তাহলে ঈশ্বরকে কেউ ডাকবেনা বোধহয়। ************সমাপ্ত************

©প্রতিবাদ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️ ২৬.০৩.২০২৪ মঙ্গলবার

©প্রতিবাদ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️ স্যার আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবেন না প্লিজ। আমি ঐ ধরণের মেয়ে নই। আমার বাবা অসুস্থ। মা ছোটবেলায় ইহাধাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমার ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব। বুঝতেই পারছেন আমার কতো টেনশন! কথাগুলো বলে সম্পূর্ণা এক গ্লাস জল খেল। বস :- তুমি কর্পোরেট অফিসে চাকরি করার যোগ্যতা রাখোনা। বস কে খুশি করতে পারলে তোমার উন্নতি নিশ্চিৎ। সম্পুর্না :- শুনেছি আপনার স্ত্রী আছেন এবং একটি মেয়ে আছেন তিনি মেডিক্যাল পড়ছেন। আপনার মেয়ের সঙ্গে যদি কোন প্রফেসার এইরকম অসভ্যতা করে......!!! - মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ !! - কেন নিজের মেয়ে বলে গায়ে লাগলো বুঝি! - তোমার অস্পর্ধা দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। - সেই এক ই কথা যদি আমি বলি....! - তাই নাকি? তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারি। ,- দেশে আইন কানুন আছে। আমিও দেখবো আপনি আমাকে কি করে বরখাস্ত করতে পারেন। - ভয় দেখাচ্ছ! - দেখাচ্ছি নয় আপনি ভয় পাচ্ছেন। স্পষ্ট দেখছি আপনি এই শীতে ঘামছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ঘৃণা করছে। একজন কন্যা র বয়েসি মেয়েকে আপনি মলেস্টশন করতে চাইছিলেন। তাকে বারে বারে চেম্বারে ডেকে নানা ইঙ্গিত করা কাছে ডাকা। ইচ্ছেকরে গায়ে হাত দেওয়া। এগুলো কি একজন পিতৃতুল্য লোকের কাজ? আমি সাম্বাদিকের কাছে যাচ্ছি। দেখি আপনি আমাকে বরখাস্ত করেন না নিজেই বরখাস্ত হন। নমস্কার। - এই শোন তুমি বড্ড বড় বড় কথা বলছো। তুমি জানোনা আমি কে? - জানি আপনি একজন লম্পট পুরুষ রুপি পাষন্ড। - কি বললে? আমি লম্পট!! কালকেই তোমায় টারমিনেশন লেটার পাঠাচ্ছি - হিম্মত থাকলে পাঠান। এই বলে বসের চেম্বার থেকে সম্পূর্ণা প্রস্থান করলো। *দ্বিতীয় পর্ব* বস একটি নামি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার। তাঁর এই ছেঁদো মহিলার কথায় বিচলিত হওয়ার কথা নয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্টেনোকে ডাকলেন। স্টেনো চেম্বারে ঢুকে সুপ্রভাত জানালো। বস জিজ্ঞাসা করলেন সম্পূর্ণা র বিষয়। ও কি ধরণের মহিলা ইত্যাদি..... স্টেনো বললেন খুব জেদি মহিলা। ওর কিছু সাম্বাদিক বন্ধু আছে। তারা ওকে অনেক ক্ষেত্রে প্রটেকশন দেয়। - হুম। তারপর.... ঐটুকুই জানি স্যার। - ওকে আপনি আসতে পারেন। - বস চিন্তায় পড়লেন। কিছু অঘটন ঘটাবে নাতো মহিলাটি। এরা বামপন্থী নিশ্চই। নারা বাজি আর বন্দ হরতাল এদের রক্তে। ওকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু পরক্ষনেই ওনার পৌরুষে লাগে। সুধীর বটব্যাল আপোষ সমাধান করবে একটি মহিলার সঙ্গে.....!! একটি ফোন এলো ল্যান্ড ফোনে। - হ্যালো বটব্যাল হিয়ার। - আপনার ব্যাট স্টাম্পে লেগে আপনি আউট হয়ে যাবেন স্যার। সাবধানে থাকবেন । মহিলা কর্মচারীর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার। ওমেন মোলেস্টেশন ইন কর্পোরেট অফিস এই হেডিং নিউজ দেখতে চান? - কে আপিনি? আমাকে থ্রেট করছেন! - হ্যাঁ করছি। জথেষ্ট প্রমাণ আছে। বিনা প্রমানে আমরা কাউকে ঘাঁটাইনা। আজকে সাবধান করছি ভবিষ্যতে এই ধরণের অভিযোগ পেলে বিপদে পড়বেন। কালকে ওনার কাছে ক্ষমা না চাইলে যা ঘটবে তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। এক মেয়ের বয়েসি মহিলাকে sexual harrasment!! লজ্জা করেনা আপনার ! সাবধান। নমস্কার। - বসের সারা গা থেকে কাল ঘাম ছুটলো। কি সাংঘাতিক মেয়েটা। পেটে পেটে এতো ছিল। এই লোয়ার মিডিল ক্লাস মেয়েদের বড্ড বাড় বেড়েছে আজকাল। মনে মনে ঠিক করলেন ওকে বুঝিয়ে বলবেন। কিন্তু ও আরো পেয়ে বসবে তাহলে। *তৃতীয় পর্ব* সম্পুর্না অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছে কম্পিউটার কীবোর্ডে কি সব টাইপ করতে ব্যস্ত রইলো। মনে মনে ভাবে কাল চিন্ময় দার কথাগুলোর কি প্রতিক্রিয়া হয় দেখি। চিন্ময় দা বস কে সপাটে একটা চাঁটি মেরেছে। এখন বোধহয় সেই আঘাতটা ভুলতে পারেন নি। কালকে বস জানতেও পারেন নি আমি ওনার সমস্ত কথা রেকর্ডিং করেছি আমার মোবাইলে। সেই অডিও ক্লিপ চিন্ময় দার কাছে আছে। এখনো কোন ডাক আসেনি কিম্বা কাগজ আসেনি। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ওষুধ কাজে লেগেছে? একটা ফাইল এলো সমুর্ণার ডেস্ক এ। দেখছি যা আছে এক্সেল ব্রড সিটে কাজ করতে হবে। সম্পূর্ণা কাজে মন দিল। ইন্টারকামে কল এলো। ফাইলটা আজ চাই। ব্রড সিটে প্রিন্ট করে বিকেলের মধ্যে আমার টেবিলে যেন পৌঁছোয়। - ওকে বস। - ইন্টারকম রেখে বস মনে মনে ভাবলেন,দেখি কি করে সব কাজ সময় মতন করতে পারে!! সাম্বাদিক লাগিয়েছে আমার পেছনে। এখন এমন কাজ দেব যে দুদিনের কাজ একদিনে করতে হবে। না হলেই একসপ্লানেশন। এরমধ্যে একটা মেল এলো। বস মেলটা পেয়ে চিন্তাগ্রস্ত মনেহল। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম পুঁছলেন। কাজে মন দিলেন। স্টেনো কে ডেকে কিছু ডিক্টটেশন দিলেন। সম্পূর্ণা বুঝতেই পারছে বস ওকে হয়রান করার জন্য বেশি বেশি কাজ দিচ্ছেন। মিসেস গোমস সম্পূর্ণা কে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে তোমার। লাঞ্চে যাবেনা? - না আজ লাঞ্চ আনিনি। বাড়ি থেকে জলখাবার খেয়ে এসেছি। বাস ট্রামের যা অবস্থা অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছোনা এক সমস্যা। আমাদের মতন নিচু তলার কর্মচারীদের সমস্যা বোঝার কেউ নেই। আমাদের টাকা নেই যে নিজের গাড়ি রাখবো। এই যানজটে স্কুটি চালানো বিপদ। সেই বাস নয়তো অটোর ওপর নির্ভর। রোজ যাতায়াতে প্রাণ ওষ্ঠাগত তারওপর রুগ্ন বাবাকে দেখা। তাঁর ওষুধ পথ্য আমি খুব চিন্তায় থাকি ম্যাডাম। নিজের দিকে আমার তাকানোর সময় নেই। - সেকি তুমি লাঞ্চ না করে অফিসের কাজ করবে। কেন? তোমারতো একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট নয় তবে তোমাকে এই কাজ কে দিয়েছেন? - কে আবার নিশ্চই বস পাঠিয়েছেন আমাকে সায়েস্তা করতে। - মানে!!! - অফিসের পরে সব বলবো ম্যাডাম। এখন না। - আমি কিছুটা আঁচ করেছি। বলতে হবেনা। - হেড অফিসে কমপ্লেন করবো আমরা মহিলা কর্মচারীরা। এইসব জুলুম বাজি চলবেনা। - পরে কথাহবে। - সম্পুর্না ফাইলটা যথা সময়ে পাঠিয়ে দিল বসের কাছে। ফাইল মুভামেন্ট রেজিস্টারে ডিটেল্স লিখে পিওনের হাতে দিয়ে উঠলো। ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ কফি আর একটা বার্গার খেল। আজ লাঞ্চ আনেনি। এই খেয়েই থাকতে হবে। *চতুর্থ পর্ব* পরের দিন অফিসে হেড অফিস থেকে অডিট পার্টি এলো। বস পারচেস কমিটি না করে বেআইনি ভাবে অনেক পারচেস করেছেন। টেন্ডার কল হয়নি। অফিস স্টেশনারি, এ. সি. এবং কম্পিউটার কেনা হয়েছে বিনা পারচেস কমিটির এপ্রুভালে। হেড অফিসথেকে শক্ত বাঁশ এলো সো কজ নোটিস হিসেবে। হয়তো চাকরি না থাকতেও পারে। অনেকে কমপ্লেন করেছেন বসের নামে। সম্পূর্ণা র অডিও টেপ কেউ পাঠিয়েছে হেড অফিসে। মহিলা কর্মচারীকে sexual harassment আরেকটা বাঁশ। বস এখন বুঝেছেন নিশ্চই যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকুরে তারাও মানুষ। তাদের প্রতি অন্যায় করলে ভগবান অসন্তুষ্ট হন। এ যাত্রায় তাঁর চাকরিটা থাকলে হয়। সম্পূর্ণা একটা প্রমোশন পেয়েছে। ও এখন জুনিয়র ম্যানেজার। এবারে বোধহয় একটা নিজের ফ্ল্যাট কিনতে পারবে ব্যাঙ্কের লোনে। তবেএকটা দুঃখ থেকেগেলো ওর বাবাকে বাঁচাতে পারলোনা। বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন। দু হাত ভরে আশীর্বাদ করতেন। বাবার জন্য চোখে জল এলো। ভগবান সব দিকদিয়ে মানুষ কে সুখী রাখেন না। তাহলে ভগবানকে কেউ ডাকবেনা বোধহয়। ************সমাপ্ত************

Thursday, March 21, 2024


  পিছুডাক অণু গল্পের শর্ট ফিল্মের জন্য চিত্রনাট্য।

পিছুডাক গল্পের চিত্রনাট্য  
©ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী✍️
 *প্রথম দৃশ্য*
সময় :- বিকেল ৫.৩০ টা
স্থান ( location) :- পুকুর পাড়ের এক রাস্তা। সামনে একটা অনেক দিনের পুরোনো পরিত্যাক্ত পোড় বাড়ি। আগাছা ভর্তি। বাড়িটার সামনে একটা বেল গাছ। 
পাত্র (artist) :- এক ভদ্রলোক বিকেলের ভ্রমনে বেড়িয়েছেন
  তাঁকে দেখে পুকুর পাড় থেকে আর একটি লোক ডাকলেন (ভূত) 
 অন্যমনস্ক ভাবে ভদ্রলোক ঘুরছিলেন হটাৎ থমকে দাঁড়ালেন একটা ডাক শুনে......
 ভূত :- আরে চ্যাটার্জী বাবু কোথায় যাচ্ছেন সন্ধ্যে বেলায়? ওদিকটায় যাবেন না. ওই পোড় বাড়িটার সামনে একটা বেল গাছে ব্রহ্ম দৈত্য আছে.
 ভদ্রলোক :-কে কে আপনি? আপনাকে ত দেখিনি এদিকে ! 
 ভূত :-দেখবেন কি করে আমি ত এখানে বেশি দিন থাকি না.মাঝে মাঝে আসি আবার চলে যাই.
 ভদ্রলোক :-আপনি কি করে জানলেন ব্রহ্ম দৈত্য আছে বলে? আর ব্রহ্ম দৈত্য কি কেউ কোন দিন দেখেছেন? না শুনেছেন?  
 ভূত :- জানি জানি আমার কথা শুনলে আপনিও বিশ্বাস করবেন মোসাই.চলুন ওই পুকুর পাড়টায় বসি.আপনাকে পুরো কাহিনী টা শোনাবো.
ভদ্রলোক :-আপনাকে চিনি না জানিনা কখন দেখিনি আমাকে কেন ডাকছেন কাহিনী শোনানোর জন্য? আমি ই বা যাব কেন? বলুন ত? 
 *দ্বিতীয় দৃশ্য*
 সময় :- সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ০৬.৩০
 স্থান (location)
একটা সুন্দর বাঁধানো পুকুর পাড়। ভদ্রলোক কে ডেকে ওখানে বসালো অন্য লোকটি যে ওনাকে পেছন থেকে ডেকেছিল চ্যাটার্জি বাবু বলে.....
ভূত :- আসবেন আসবেন আস্তেই হবে এই কাহিনী র টান এমন, কেউ না এসে পারে না ! 
 ভদ্রলোক :- আপনি আমার নাম জানলেন কি করে বলুন ত?  
 ভূত :- জানতে হয় ওটাই আমাদের নিয়ম ! 
 ভদ্রলোক :- তাই বুঝি? 
 ভূত :- হ্যাঁ তাই.
( মনে মনে ভাবলেন ভদ্রলোক ) 
এই ভদ্রলোকটি একটু বেশি কথা বলছেন না ! মনে মনে ভাবি. 
 ভূত :-ও আপনি ভাবছেন আপনাকে কেন ডাকছি? চিন্তা করবেন না. আমি চোর ডাকাত নই. আপনার মতন এক সাধারন মানুষ. আমার ও স্ত্রী পুত্র পরিবার ছিল। এখন অবশ্য আমি একা। তাই লোক দেখলেই তাকে আপন করার সূত্র খুঁজি।
 ভদ্রলোক :- সূত্র খোঁজেন মানে !
 *তৃতীয় দৃশ্য*
 ( ভূত তার জীবন কাহিনী শুরু করলো )
 *ভূত একটু অন্যমনস্ক ছিল। ভাবুক হয়ে শুরু করলো*
 সময় বেলা ১২ টা ( এই দৃশ্য flash back ) 
  স্থান ( location) একটা ভালো সাজানো ঘর। ডাইনিং টেবিল। লাঞ্চ দেওয়া হয়েছে টেবিলে। 
  পাত্র, পাত্রী :- পাত্র :- এক ভদ্রলোক( ভূত ) বেঁচে থাকতে দিনের বেলা খেতে বসেছেন।
পাত্রী :-গিন্নী খাবার দিতে দিতে কিছু কথা বলছেন।
 ভূত :- (খাবার টেবিলে বসে ) এইসব ছাই পাঁশ খাওয়া যায়!
 গিন্নী :- কেন ছাই পাঁসের কি হল? একবার স্ট্রোকের পর লোকে কি কালিয়া পোলাও খাবে? যা দিয়েছি লক্ষ্মী ছেলেটির মতন খেয়ে নাও।
ভূত :- ছেলেটা কবে আসবে কে জানে? বড় অসহায় লাগে ওর অবর্তমানে। ও এলে ভালো রান্না হবে তখন ঠিক পাতে পড়বে।
গিন্নী :- বলি তোমার কি মতিভ্রম হল না কি? ডাক্তার যা খাওয়ার জন্য বলেছেন তাই দিচ্ছি। খেয়ে নাও।
ভূত :- ডাক্তার রা মানুষ নয়। ওরা আমাদের গরু ছাগল ভাবে। ব্যাটারা মোটা টাকা নেয় আর বলে কিনা বিনা তেল মসলার রান্না খান। এইসব খেয়ে মানুষ কত দিন বাঁচবে?
 গিন্নী :- তোমার কি মতলব বোলো তো ! কি খাবে তুমি? রোগ বাঁধিয়েছ। একটা স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। আমি একা হাতে সব করছি। তাও তুমি শান্তি দেবেনা বলে চোখ পুঁছলেন আঁচল দিয়ে।
 ভূত :- আহা রাগ করছো কেন?
 গিন্নী :- থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবেনা।
 ভূত :- লক্ষ্মী ছেলেটির মতন খেয়ে নিল।
 *চতুর্থ দৃশ্য*
 সময় :- ভর সন্ধ্যা বেলা।
পাত্র 
 ( ভদ্রলোকের প্রশ্ন -সূত্র খোঁজেন মানে.....শুনে ভূত উত্তর দেন ) 
ভূত :- এই দেখ সব কথা ওরকম টেড়া বেঁকা করে দেখলে চলে। মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়.।
 ভদ্রলোক :- তাই! তা কি বিশ্বাস করবো? 
ভূত :- শুনুন আমার সংসারে আমি আর আমার স্ত্রী। আমাদের এক পুত্র সন্তান। সে ত থাকে সুদুর আমেরিকায় থাকে।
ভদ্রলোক :- সেতো আজকাল অনেকেরি থাকে।
ভূত :- শুনুন না মোশাই। আমি আর আমার স্ত্রী মাত্র দুজনে থাকি। আমাদের মধ্যে দিনের মধ্যে দু একটা কথা ছাড়া কথা বলার লোকের অভাব। ওই খেতে দেওয়ার সময় আর ওষুধ খাওয়ানোর সময় ছাড়া আমার আর আমার স্ত্রীর মধ্যে বড় একটা কথা বার্তা হয়না।
 (নেপথ্যে )
ভূত :- এর মধ্যে আমার একটা স্ট্রোক হয়ে গেল. মরে যেতাম তবে বেঁচে গেলাম. ডাক্তার বাবু এঞ্জিওগ্রাফি করে বাঁচালেন. এ যাত্রায় জম নিতে পারলোনা. তবে চিত্রগুপ্তর খাতা দেখে জম বলেন তোর মৃত্যু অনিবার্জ.
*শেষ দৃশ্য* 
 ভূত :- ঠিক তাই হল । পরের স্ট্রোকে খতম । এখন দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছি লোকের সংগে কথা বলছি । ও চ্যাটার্জী বাবু আপনার কি হল? 
 *নিচের কথাগুলো নেপথ্যে কেউ বলতে পারেন কিম্বা স্ক্রিনে লেখা হতে পারে* *সঙ্গে ভৌতিক আবাহ সংগীত* রঞ্জন পাত্রর লেখা গানটা নেপথ্যে হলে ভালো হয়। 
আর চ্যটার্জি বাবু !!!! ভূত ভূত বলে ওইখানেই জ্ঞান হারালেন ভদ্রলোক। তাঁর আর অজানা রইলোনা যার সঙ্গে কথা বলছিলেন সে নিজেই একটা ভূত। 
 ভূত :- কি মুস্কিল ! আমি কি ভূত নাকি?

Sunday, March 17, 2024



 

গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক :-

*** চন্ডিতলা *** 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি

 প্রায় সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হতে চললো । মফঃস্বল অঞ্চলে সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসে । রাস্তায় তো স্ট্রিট লাইট নেই ।

ঘড়িতে রাত সাড়ে আটটা বাজে । দূর থেকে বাস স্ট্যান্ড টা খাঁ খাঁ করছে । কেউ নেই ।

 কিন্তু কাছে আসতেই দেখি এক মহিলা কংক্রিটের বেঞ্চে একা একা বসে আছেন ।

 পরনে একটা সুতির শাড়ি । খুব ই গরিব ঘরের বৌ মনে হচ্ছে । মুখটা ঘোমটায় ঢাকা ।....

 

আমার এই মফঃস্বল শহরে কিছু কাজ ছিলো । সেই সূত্রে এখানে আসা । বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস নেই ।

 ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে । অনেকটা পথ বাসে যেতে হবে ।

 

মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি কোথাও যাবেন?

- হ্যাঁ ।

- কোথায়?

-  চন্ডিতলা।

- সেকি এই রাতে অতো দূরে যাবেন?

- হ্যাঁ যেতেই হবে ।

- কিছু মনে করবেন না, এতো রাতে বাসে যাবেন? আপনার সঙ্গে ত কেউ নেই দেখছি ।

- না নেই । আমার কেউ নেই বলে কাঁদতে লাগলেন ।

মহিলাটি খুব অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিলো...

 

(নেপথ্যে )

 

 বৌমা তোর রান্না হোল?

- হ্যাঁ মা হয়ে গিয়েছে।

- তবে আমায় খেতে দিতে দেরি করছিস কেন?

 

- দিচ্ছি মা.. এখুনি দিচ্ছি এই বলে হাঁড়ি থেকে ভাত একটা কাঁসায় ঢেলে তাতে কিছু জল ঢেলে দিল

 এবং সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা আর একটা গোটা পিঁয়াজ।পাশে কুমড়ো শাক ভাজা।

 

- আজ গরম ভাত করিসনি?

- গরম ভাত কি দিয়ে খাবেন মা, ঘরে ত কিছু নেই ডাল কিম্বা তরকারি করার মতন।

- কি করে থাকবে মা । একটা ছেলের ওপর পুরো সংসার সে ত সকাল থেকে রাত অবধি খেটে মরছে....

 তুই তোর বাড়ি থেকে তো কিছুই আনিসনি.. ছেলেটা কতো রোজগার করে তোকে আমাকে পুষবে বল।

 

- আমিও কাজ করতে চাই মা । কিন্তু আপনি,আপনার ব্যাটা তো বারুন করেন । মেয়েছেলে বাইরে কাজে যাবেনা ।

 -আমার কি দোষ মা ! বলুন !!

- না সব দোষ আমাদের মা.. তোর কেন হবে.. তোর বাপের বাড়ি থেকে তো কিছুই দেয়নি!

 

- প্রতিদিন এই বাপের বাড়ির খোঁটা খেয়ে দুটো ভাত আর রাত্তিরে স্বামীর অকথ্য শারীরিক অত্যাচারের কথা ভেবে

 ঠিক করলাম ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।তাই একলাই আজ বেরিয়ে পড়লাম ।

 উনি আসতে সেই রাত ১০ টা তার আগে আমি পৌঁছে যাবো ।  

 

- আপনি কাউকে কিছু না বলে এইরকম রাত দুপুরে ঘর ছেড়ে চলে গেলে আপনাকে আপনার স্বামী খোঁজা খুঁজি করবেনা?

 আমার কথায় মহিলাটি যেন কি ভাবছিলেন সেই ভাবনায় পূর্ণচ্ছেদ পড়লো ! একটু যেন চমকে উঠলেন.....

 

 ( মনেহল ভদ্রলোকের প্রশ্ন শুনে অন্যমনস্ক ছিলেন মহিলাটি ) 

 

- হ্যাঁ হ্যাঁ.. না না.. কেউ খুঁজবেনা বরং ওদের হাড় জুড়বে । ওরা চায় আমি ওদের ঘর থেকে চলে যাই ।

  তাহলে উনি আবার বিয়ে করবেন ।

 

- সেকি !

 

-হ্যাঁ ওরা আমার বাপের বাড়ির থেকে অনেক টাকা আশা করে যাতে আমার স্বামী নিজে একটা ব্যবসা করতে পারেন ।

 কিন্তু আমার ছোট ভাই সে মাকে দেখছে তার ওপর কতো টাকা রোজগার করবে যে আমাকে পুষবে আবার আমার মাকে

 তার বুড়ো বয়েসে দেখবে ।  আমার বাবা তো কিছুই রেখে যাননি । তবুও আমার ছোট ভাই অনেক দেখা সোনা করে আমার ।

 আর পারছেনা সে ।  এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁফ ছাড়লো মহিলাটি ।

 

- আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনি কি আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি অবধি যাবেন?

 

- কেন বলুন তো?

 

- আমার স্ত্রী শয্যাশায়ী । তাঁকে দেখা সোনা করার কেউ নেই । আমার টুরিং সার্ভিস ।

 আমাকে প্রায় বাইরে থাকতে হয় । স্ত্রী কে দেখার জন্য দুজোন আয়া এবং একজন নার্স আছেন ।

 তাঁরা সকাল বিকেল এবং রাতে থাকেন কিন্তু ২৪ ঘণ্টার লোক নেই ।

পাওয়া যাচ্ছেনা তাই আমিও বলি আপনি যদি সম্মতি জানান তবে আমার বাড়িতে আমার স্ত্রীর দেখা

শোনা করার জন্য থাকতে পারেন কিন্তু তার জন্য আমিও মাসহারা দেব এবং আপনার বাড়ির লোকের অনুমতি নেব ।

 

- কে আপনাকে অনুমতি দেবে? আমার স্বামী জানলে পুলিশে খবর দিয়ে আপনাকে হেনস্তা করবে ।  

- হ্যাঁ তা ঠিক । তবে থাক ।

- শুনুন আপনি কি সত্যি বলছেন না অবলা মহিলা দেখে টোপ ফেলছেন ।

- আমায় দেখে কি মনে হয় আপনার? আমিও কি খুব বাজে লোক?

- কি করে জানবো বলুন ! অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না ।

- ক্ষমা করবেন আমার বলাটাই ভুল বলে পিছন ফিরে সিগারেট ধরাতে চেষ্টা করলাম ।

  অন্ধকারে দেশলাইয়ের আগুনে পেছন ঘুরতেই দেখি মহিলাটা গায়েব ।

 কি হল? কোথায় গেলেন উনি? আমার কথায় কি ভয় পেয়ে চলে গেলেন !

 খটকা লাগলো মনে !! অনেক ক্ষণ একটা সিগারেটে খাওয়া হয়নি ।

ঠিক সিগারেট টা টানছি সেই সময় একটা বাস এলো । আমি হাত দেখাতে থামল।

 

- কন্ডাক্টর বললেন এখানে কেন দাঁড়িয়ে ছিলেন?

- কেন বলুন তো !

- না এখানে কেউ দাঁড়ায় না. আপনি নিশ্চই বাইরে থেকে এসেছেন !

- হ্যাঁ ।

- এক মহিলা আপনার সঙ্গে কথা বলছিলেন ।

- হ্যাঁ ।

- কোথায় যাবেন?

-  ঘাটাল ।

- টাকাটা দিন।  

 -হ্যা এই নিন টাকা এবার টিকিট টা দিন। 

 -এই নিন টিকিট।

- আপনার কিছু মনে হয়নি?

- নাতো, কি আবার মনে হবে?

 

- ওই মহিলাটি এক বছর আগে আত্মহত্যা করেছিলেন ।

 ওই যে একটা  শ্যাওড়া গাছ আছে বাস স্টপের পেছনে ওই গাছে !

 উনি সন্ধ্যা হলেই বেঞ্চে বসেন আর কাঁদেন । কেউ ওই সময় ওখানে থাকেনা ।

 ভাগ্য ভালো আপনার কিছু হয়নি ।  

 

- কিন্তু উনি তো আমার সঙ্গে দিব্বি কত কথা বলছিলেন ।

- হ্যাঁ আপনি ভালো লোক তাই কিছু হয়নি । একটু বেগতিক দেখলে টুঁটি টিপে দিতেন !

- কি বলেন দাদা, আমি স্পষ্ট দেখলাম জ্যান্ত মানুষ ।

- ওনার মুখ দেখেছেন?

- না

- এ যাত্রায় খুব বেঁচে গিয়েছেন । আমি দুর থেকেই বাসের হেড লাইটে আপনাকে দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়েছি । আর কখনো ওখানে দাঁড়াবেন না ।

- আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা কারণ আমি ভূতে বিশ্বাস করিনা ।

- দেখুন আমার বলার কথা আমি বলে দিলাম । এবার আপনি কি করবেন সেটা আপনার কথা ।

- একটা সিট ফাঁকা হওয়াতে সিটে গিয়ে বসলাম । খুব ক্লান্ত লাগছিলো । চোখ বুজিয়ে ঘটনাটা ভাবতে লাগলাম ।

  বাড়িতে গিন্নিকে বলবো । এখন একটু ঘুমোই । সারাদিন খাটা খাটুনিতে খুব ক্লন্ত লাগছে ।

 

  তবে কি সত্যি ভূত কি সত্যি আছে.......? আপনারা কি বলেন ! প্রস্ন রাখলাম আপনাদের কাছে ।

 

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি

 

 

Wednesday, January 3, 2024


সীতাহার (পঞ্চম এবং শেষ পর্ব)
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️
০৫.১১.২০২৩ রবিবার।
চিন্ময়কে, লেডি অফিসার যেরকম ভাবে জেরা করলেন তাতে ও মনে দুঃখ পেল। মনে মনে ভাবে,এই কি ভগবানের বিচার ! আমি সম্পূর্ণ মন প্রাণ দিয়ে এ বাড়ির সেবা করি। একাউন্টস দেখি। আমার পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পাই। হ্যাঁ এটা ঠিক এই বাড়ির কর্তা আমাকে ছেলের মতন মানুষ করেছেন। স্কুল কলেজে পড়িয়েছেন। কিন্তু আমি সাইন্স পড়তে চেয়েছিলামন। কিন্ত বাবা আমাকে গোয়েঙ্কা কলেজে কমার্স এ ভর্তি করে দেন। আমি সফলতার সঙ্গে একাউন্টেন্সি অনার্স নিয়ে বি. কম. পাস করি। কোন চাটার্ড ফার্মে কাজ করে ইন্টারসিপ পরীক্ষা দিয়ে চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাবা আর পড়াতে পারবেন না বলেন। বলেন ব্যবসার একাউন্টস দেখতে যার জন্য তিনি বি. কম. পড়ান। উদ্দেশ্য টা কেবল ওনার ব্যাবসা দেখার জন্য পড়ানো। এটা বোঝার পর চিন্ময় নিজে WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। কিন্তু কোচিং না নিলে এই সব প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দেওয়া সাধারণ ছেলের পক্ষে একটু কষ্টকর। তুবুও মনের জোরে চিন্ময় রাত জেগে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালায়। পূর্ব বর্ষের প্রশ্নপত্র এবং গত পাঁচ ছ বছরের প্রশ্নপত্র জোগাড় করে। ও সুম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তারপর পরীক্ষায় বসবে। এটাই ওর ইচ্ছা। এই ইনভেস্টিগেশন ওর মনবল দুর্বল করতে চেষ্টা করছে। ও না থাকার সময় কেউ ঐ সাবানে চাবির ছাপ রেখে সবনটা জানলার কাচে রেখে যায়। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? কার উদ্দেশ্য তাকে ফাঁসানোর!!!!! চিন্তা করে কিছুই সুরহা করতে পারেনা। এটা একটা পরীক্ষা। ওর সততাকে চ্যালেঞ্জ। কে তাকে বদনাম করতে চাইছে। সন্দেহ তার একজনকেই হচ্ছে তবে বলতে পারছেনা।
অফিসার লক্ষ্মীকে জেরা করাতে ও প্রায় কেঁদেই ফেললো। ওর এক কথা আমি এ ঘরের নুন খেয়েছি। আমি মূর্খ মানুষ এই সংসারে ভোর থেকে খাটি। নিজের গতর ধ্বংস হচ্ছে তবুও খেটে সংসারের সমস্ত কাজ করি। বাবা তাকে নিজের মেয়ের মতন দেখেন। বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু যাকে পাত্র বলে নির্বাচন করেন সে স্রেফ মানা করে দেয়। বাবা চাইছিলেন দুজনে এই বাড়িতে থেকে তাঁদের সংসার সামলাবে। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সে বড় অফিসার হবে। সে তার মতন মূর্খ মেয়েকে কেন বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করবে? লক্ষ্মীও তাই গর রাজি হয়।
যেদিন এ. সি. র মেকানিক এসেছিলো বাড়ির কর্তা তাকেই যেতে বলেছিলেন। তখন মা ওপরে পিসির রান্নায় ব্যস্ত। লক্ষ্মী রান্নাঘরে জগা ননাকে জোগাড় দিতে ব্যস্ত। চিন্ময়কে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে পাঠিয়েছিলেন কোন বিশেষ কাজে। চিন্ময়ের ঘর তালা দেওয়া থাকেনা। কারণ লক্ষ্মী ঘর পরিষ্কার করতে আসে। সেদিন তাই চিন্ময় তাড়া তাড়ি তালা না দিয়েই ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চলে যায়।
কর্তা এক ঢিলে দুই পাখিকে সায়েস্তা করতে চান। এক : গিন্নীর আলমারির চাবির প্রতি উদাসীনতা যে জন্য সীতাহার ব্যাঙ্কের লকারে রাখার চিন্তা করেন।
দুই : চিন্ময় যাতে WBCS পরীক্ষা না দিতে পারে কারণ তা হলে তাঁর ব্যাবসা কে দেখবে? এখন একাউন্টেন্ট রাখার অনেক খরচ। ২৫ - ৩০ হাজার মাইনে তাও অনেক ঝামেলা। বিশ্বাস করা যায়না।
এ. সি. মেকানিক যে সাবান চিন্ময়ের কাছ থেকে নিয়েছিল হাত পরিষ্কার করার জন্য তাতে আলমারির চাবির ছাপ নিয়ে চিন্ময়ের ঘরের জানালার ওপর রেখে আসেন নিজে কর্তা । কিন্তু সাবানে তার হাতের ছাপ পাওয়া যাবেনা কারণ তিনি রুমাল ব্যবহার করেন।
ভাবতে আশ্চর্য লাগছেনা !!
কিন্তু ব্যবসায়ী মানুষরা তাঁদের নিজের ব্যবসার স্বার্থে অন্যকে ফাঁসাতে পেছ পা হন না। চিন্ময়কে মানা করা সত্বেও ও WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করে। সে যদি ঐ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় তবে তাঁর ব্যবসার একাউন্টস কে দেখবে? লক্ষ্মী বিয়ে করে ঘরে থাকলে বাড়ির কাজের জন্য চিরদিনের সমস্যা দূর হত। লক্ষ্মী চলেগেলে ওর মতন বিশ্বাসী কাজের লোক পাওয়া যাবে না।
এইসব চিন্তা বাড়ির কর্তার মনে উঁকি দেয়। তাই তিনি বাড়িতে পুলিশ আনতে মানা করেন। কিন্তু তন্ময়দা যখন লেডি অফিসার পাঠানোর কথা বলেন তখন তাকে প্লেন ড্রেসে পাঠাতে বলেন। লেডি অফিসার এ.সি. মেকানিকের ফোন নাম্বারে তাকে ডেকে প্রায় সমস্ত বিবরণী জানতে পারেন। সত্যি ওরা প্রফেশনাল এবং নিজের কাজ সুসম্পন্ন করে নিজের কোম্পানির জন্য। এই ধরণের ভুল ওরা কখনোই করবে না। তাই ও চুরি করেনি।
বাবা হারটা ব্যাঙ্কের লকারে রেখে এসে তার চাবি মাকে দেন। চিন্ময় ব্যাপারটা জানতে পারে। মনখুন্ন হয়।
সে পরের দিন জিনিস পত্র নিয়ে এক মেসে চলে যায় তার বন্ধুর কাছে। যাওয়ার সময় মা বাবাকে প্রণাম করে এবং বলে এই বাড়ি থেকে আমি যা পেয়েছি সে ঋন শোধ করতে পারবোনা কিন্তু এখন যা পেলাম সে দুঃখ রাখতে পারবোনা তাই চলে যাওয়াটাই শ্রেয়।
WBCS পরীক্ষার জন্য আরো বেশিকরে প্রস্তুতি করে এবং পরীক্ষায় ভালো ভাবে কৃতকার্য হয়। সে এখন গোসাবার বি. ডি. ও.। মা বাবাকে দেখা করতে আসার সময় নেই। তাই আসতে পারেনা।
******* সমাপ্ত ******-

সীতাহার চতুর্থ পর্ব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
খুকুদির বিয়ের বাসর শেষ। কন্যা বিদায়ের পর আমাদের সকলের মন খারাপ। কনকাঞ্জলি দেওয়ার সময় খুকুদি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মিনু মাসিও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আমি ভাবি এ কেমন প্রথা, মা বাবার ঋন কি এক মুঠো চাল দিয়ে শোধ করা যায়? আমার মনে এই প্রশ্ন বারে বারে উঁকি দেয়। আমি এর বিরোধ করি। এর উচ্ছেদ হওয়া উচিৎ। কোন শাস্ত্রে কি এর উল্লেখ আছে? না নেই। খুকুদির সঙ্গে আমার বোন পুতুল যায় বরের বাড়িতে।
বিয়ে বাড়ির ধুম ধামেতে আমাদের বাড়ির আসল ঘটনা চাপা পড়ে গিয়েছে। তন্ময়দা আমাদের বাড়িতে এক লেডি অফসার পাঠান প্লেন ড্রেসে। উনি আমাদের বাড়ি এসে তদন্ত আরম্ভ করলেন।
***সীতাহার চুরির তদন্ত আরম্ভ**
মা জানতেন উনি আসবেন তাই ওনাকে আদোর যত্ন করেন।
মহিলা অফিসার লক্ষ্মীকে জিজ্ঞাসা করেন, কতোদিন কাজ করছ ?
লক্ষ্মী বলে,কুড়ি বছরের ওপর।
- তুমিতো এ. সি. মেকানিককে দেখেছো?
- হ্যাঁ।
- দেখলে চিনতে পারবে?
- হ্যাঁ কেন পারবোনা।
- ও কাজ করার সময় তুমি কোথায় ছিলে?
- মায়ের শোবার ঘরে।
- কতক্ষন?
- ও কাজ করছিল। আমায় বললো জল আনতে। আমি একটা প্লাস্টিকের বড় বালতিতে জল আনতে যাই বাথরুমে।
- এই সময় জগা ননা ডাকে মাছ কুটতে। আমি বলি এখন যেতে পারবোনা। এরমধ্যে একটু সময় যায়।তারপর জলের বালতি নিয়ে মায়ের শোবার ঘরে যাই। মেকানিক, এ. সি. ঢাকাদিয়ে দেয় এক কালো পলিথিনের কাপড়ে তারপর ভ্যাকুম মেশিন দিয়ে জলের বালতি থেকে জল পাম্প করে উঠিয়ে এ. সি. পরিষ্কার করে। ঐ মেকানিক কাজে ব্যস্ত দেখে জগা ননার ডাকে আবার রান্না ঘরে যাই। ফিরে দেখি
এ. সি চলছে কিন্তু মেকানিক নেই।
- ও কাউকে বলে যায়নি?
- না আমি একাই ছিলাম। আমিতো রান্নাঘরে গিয়েছিলাম তাই বোধহয় কাউকে না বলে চলে গিয়েছে।
- হুঁ। বুঝলাম। তুমি মাকে বললেনা মেকানিক চলে গিয়েছে বলে।
- পিসির রান্নার যায়গায় আমার যাওয়া মানা।
- কেন?
- সে মা বলবেন। বলে লক্ষ্মী রান্না ঘরে চলে যায়।
এইসময় মা বলেন, ঠাকুরঝি বড় ছুঁচিবাই মহিলা। লক্ষ্মী জাতের নয় তাই ওর ঠাকুরঝির রান্নার যায়গায় যাওয়া মানা। ও তাই ওখানে যায়না। কি করা যায় বলুন! বাল্যবিধবা। শুনতেই হয় ওনার কথা। উনি মানে আমার স্বামী আবার বোনকে ভীষণ ভালো বাসেন। তাই আমাকে সব দিক সামলে চলতে হয়। ভূলটা আমারি। আমার ঐ সময় থাকা উচিৎ ছিল।
- কি ছিল কি না সেটা ভেবে লাভ নেই। অতো দামি একটা হার চুরি গেল না হারিয়েছে সেটাই দেখতে হবে। আপনার আলমারির চাবি কোথায় ছিল ?
- বালিশের নিচে।
- কি বালিশের নিচে! আশ্চর্য কি বলছেন আপনি!
- লক্ষ্মী জানতো। হ্যাঁ ও সব জানে। ও খুব বিশ্বস্ত। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে আছে মেয়ের মতন। ওকে অবিশ্বাস কেউ করেনা।
- হুঁ। আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে একটি ছেলে কাজ করে শুনেছি। সে কোথায় থাকে?
- গেস্ট রুমের পাসের ঘরে WBCS দেখতে পারি ঘরটা।
- হ্যাঁ কেন পারবেননা। চলুন।
- চিন্ময়ের ঘরে ও একাই থাকে। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘর। ঘরের দেওয়ালে মা ভবতারিণীর বড় ফটো। ধুপ জ্বলছে ফটোর পাশে। একটা ছোট টেবিল সামনে একটা চেয়ার। টেবিলের ওপর কিছু পড়ার বই এবং একটা ল্যাপটপ। দেওয়ালে একটা ডিজিটাল ক্লক আর একটা ছোট স্মার্ট টি ভি।
- চিন্ময় এদের দেখে অবাক হয়ে যায়। বলে, মা কি হল আপনি!
- অফিসার বলেন,হ্যাঁ আমরা এসেছি কিছু কথা জিজ্ঞাসা করতে।
- বলুন।
- আপনি কি এখানে কাজ করেন?
- হ্যাঁ।
- মাস মাহিনা কতো পান?
- ঠিক নেই। বাবা যখন যেমন কাজ সেইরকম মাস মাহিনা দেন। কোন ঠিক নেই। ওটা আমার হাত খরচ বলতে পারেন। আমি একাউন্টসের কাজ দেখি।
- ও আচ্ছা। তবুও কতো?
- কখনো ১০ কখনো ১৫ হাজার আবার কখনো কিছুইনা। কোন ঠিক নেই।
- আপনার আপত্তি থাকেনা।
- আমাকে উনি ছেলের মতন দেখেন। আমাকে ছোট বেলাথেকে মানুষ করেছেন। পড়াশুনো করিয়েছেন। ওটা আমার চরম প্রাপ্তি। বাড়িতে আছি খাচ্ছি, থাকছি। বাবা নতুন জামা প্যান্ট পুজোর সময় কিনে দেন। আর কি চাই!
- আপনি সন্তুষ্ট।
- না হওয়ার কি আছে!
অফিসারের জানালার ওপর একটা চাবি মার্কা সাবানের দিকে চোখ পড়লো। ওটা দেখে সন্দেহ হয় তাই সঙ্গে নিলেন তদন্তে সহায়ক হতে পারে। এই সাবানের ওপর চাবির ছাপ সহজে নেওয়া যায়।
- অফিসার শোবার ঘরে ফিরে এলেন। মাকে বলেন আপনার আলমারির চাবিটা দেখি।
- মা বালিশের নিচ থেকে চাবির গোছা দিলেন।
- গোদরেজর আলমারির চাবিটা দেখে আশ্চর্য হন অফিসার। বলেন এই দেখুন এখনো একটু সাবান লেগে আছে। একটু মগে করে জল আনুন আমি দেখাচ্ছি। চাবি মার্কা সাবানের পেছনে আরেকটা চাবির স্পষ্ট দাগ। ওটা আলমারির চাবির ঠিক খাপে মিশে যায়।
- মা মগে জল নিয়ে আসেন। মা নিজেই অনুভব করেন একটু সাবানের জলের মতন চ্যাট চ্যাট করছে চাবিতে সামান্য জল দিয়ে ঘোষলে।
- অফিসার চিন্ময়কে ডাকেন।
- চিন্ময় এসে বলে ডেকেছিলেন ম্যাডাম।
- হ্যাঁ। আপনি আপনার জামা কাপড় কিসে কাচেন?
- কেন? সাবানে। আমি নিজেই কাচি। ডিটার্জেন্ট দিয়ে পরে ডুবিয়ে রাখি। কিছু দাগ ডিটার্জেন্ট এ ওঠেনা।
- যেমন?
- যেমন চায়ের দাগ, অন্যকিছু রঙের দাগ। তাই সাবান কিম্বা লেবু ব্যবহার করি। তারপর ব্রাশ করি। আমার জামা প্যান্ট ওয়াসিং মেশিনে কাচা হয়না। আমি নিজেই কাচি।
- হুঁ। বুঝলাম। তা কি সাবান ব্যবহার করেন?
সস্তার সাবান। দামি সাবান কেনার প্য়সা থাকেনা। বই খাতা কিনতেই সব টাকা খরচ হয়েযায়।
- বই খাতা! কেন?
- পড়াশুনো করি ম্যাডাম। WBCS পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। বাইরেতো কোচিং নেওয়ার টাকা নেই। তাই।
- WBCS!! বাহ্ খুব ভালো। তবে বুদ্ধিটা খুব প্রখর নিশ্চই আপনার। প্ল্যানটা কে করেছিলো?
- প্ল্যান কিসের প্ল্যান!! আমি গরিব মানুষ। আমাকে এই ভাবে অপবাদ দেবেন না। আমি যথেষ্ট খাটি এই পরিবারের জন্য। সেই আন্দাজে আমি পারিশ্রমিক পাইনা। আমার উচ্চাসা আছে কিন্তু টাকা নেই। বাবাকে বললে উনি সেরকম আমল দেন না আমার কথার।
- তা বলে চুরি !!! ছি ছি আপনি না শিক্ষিত। আশ্রিত। আপনার এতটুকু মনে হোলোনা এটা মায়ের সঙ্গে বেইমানি করা।
- আমি চুরি কিরিনি ম্যাডাম। কোন বেইমানি করিনি। আমি মায়ের ঘরেই যাইনা।
- কিন্তু সাবানে চাবির ছাপ নেওয়ার জন্য এ. সি. মেকানিককে সাবান দিয়ে কার্য সিদ্ধি করি। তাইনা!
- ওটা ও আমাকে চেয়েছিলো হাত ধোয়ার জন্য। আমি তাড়া তাড়ি ঐ সবনটা এগিয়ে দি। কিন্তু ওটাতে ও ঐ কাজ করবে বলে ঘুনেক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বিশ্বাস করুন। যদি তাই হত তবে আমি কি সবনটা রেখে দিতাম? ঐ লোকটি আমায় ফাঁসানোর জন্য ঔ কাজ করেছে। আপনি ওকে ডেকে বুঝুন।
- আপনি তাহলে করেন নি।
- আমি মায়ের শোবার ঘরে কোনোদিন যাইনা। আমার খাবার লক্ষ্মী আমার ঘরে এনেদেয়। জিজ্ঞাসা করুন।
- মা বলেন ও ঠিক বলছে। ও আমাদের কোন ঘরে যায়না। শোবার ঘর ঠাকুর ঘর কোনো ঘরে যায়না বৈঠকখানা ছাড়া।
- এ. সি. মেকানিকের ফোন নাম্বার আছে?
- বাবার কাছে নিশ্চই আছে।


##সীতাহার তৃতীয় পর্ব##
,©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
**খুকুদির বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি**
সীতাহার না পরে মা অন্য হার পরে সেদিন বিয়ে বাড়িতে গেলেন কিন্তু মায়ের মনটা সমানে খচ খচ করেই চলেছে! কোথায় গেল হারটা? হারটাকি বাড়িথেকে চুরি গেল! না অন্য কোথাউ ভুলে রেখে দিয়েছেন! মা বলেন ওঁর শাশুড়ির দেওয়া হার। সেই স্মৃতিটা কি মুছে যাবে! বাবাও খুব দুঃখ পেয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করছেন না। খুব মন খারাপ হয়েগেলো মায়ের।
এইসময় আমি বলি ও মা আমাদের বাড়িতে তোমার ঘরের এ. সি খারাপ হয়েছিলো। এ.সি সারাতে যে মেকানিক এসেছিলো মনে আছে কবে এসেছিলো সে?
- মা পরক্ষনে বলেন ঠিক বলেছিসতো। আমার মনেই ছিলোনা। দাঁড়া তোর বাবাকে বলি।
বাবা সেই সময় আমাদের মাসতুতো দাদা তন্ময় মুখার্জীর সঙ্গে কি এক বিষয় খুব মনোযোগ সহকারে কথা বলছিলেন। তন্ময়দা নর্থ কলকাতার শ্যামপুকুর থানার ও. সি. মাসির বাড়ি সাউথ সিঁথি তে। বিরাট বনেদি বাড়ি। অনেক বছরের পুরোনো। ওরা খুব বড় লোক তাই ওদের ব্যাপার স্যাপার আলাদা। বেশ জমিদারী ভাব আছে।
মা ক্রমে বাবার কাছে এসে বলেন শুনছো।
- হ্যাঁ শুনছি। আবার কি হল?
- আবার কিছু হয়নি। যেটা হয়েছে তার একটা সূত্র তোমার ছেলে মনে করিয়ে দিয়েছে। আমার মনে ছিলোনা।
- কি সেটা।
- আমার শোবার ঘরের এ. সি. টা খারাপ হয়েছিলো। সেটা সারাতে যে মেকানিক এসেছিলো সেদিন আমি সেই সময় ঠাকুর ঘরের পাশে ঠাকুর ঝির রান্না কিরছিলাম। ঘরে তো কেউ ছিলোনা।
- খুব ভালো করেছ। সেতো এক মাস প্রায় হবে। ঠাকুর ঘর থেকে ফিরে তুমি দেখোনি।
- না লক্ষ্মী ছিল কাছে। আমি লক্ষ্মীকে বলি, আমি যাইরে তোর পিসির রান্না করতে সে মানুষটা পুজোর পর না খেয়ে বসে থাকবে। তুই চোখ রাখিস। ফিরে দেখি এ. সি. চলছে। ঘরে কেউ নেই।
- লক্ষ্মী কোথায় ছিলো?
- জগা ননার কাছে রান্নাঘরে জোগাড় দিচ্ছিলো।
- তন্ময়দা সব শুনছিলেন। বললেন আপনাদের বাড়িতো আমার এলাকায় পড়ে না। তবে কি আমি সিঁথি র ও. সি. কে বলবো তদন্ত করতে? ও ঠিক খুঁজে বার করে দেবে কে নিয়েছে।
- বাবা বললেন না না পুলিশ ঘরে ঢোকাসনা বাবা। আমার মেয়েটাকে ( লক্ষ্মীকে ) হেনস্তা করবে। তারচেয়ে তুই কিছু কর বাবা। দ্যাখ যদি পাওয়া যায়।
- এ. সি. মেকানিকের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার দাও তাহলে।
- হ্যাঁ তা পাওয়া যাবে। তবে ঠিকানাতো জানিনা। দেখি বলে বাবা ফোনটার কল লিস্ট সার্চ করেন
****খুকুদির বিবাহ লগ্ন এবং বিবাহ ভোজ ****
এরমধ্যে বর এসেগেল। উলু ধ্বনি আর শঙ্খ বেজে উঠলো। সব্বাই ঐ বরের গাড়ির দিকে ছুটলো। মা বরণ ডালা নিয়ে গেলেন বরকে বরণ করতে। বাবা, তন্ময়দা গেলেন বরের গাড়ির কাছে বরকে ঘরে নিয়ে আসতে। দ্বারে প্রবেশ করার সময় ওপর থেকে পুষ্প বৃষ্টি হল। চারিদিকে রজনীগন্ধার সুগন্ধ। প্রবেশ দ্বার থেকে সারা ঘর নানা ফুল দিয়ে সাজানো। সত্যি খুব যাঁক যমকে খুকুদির বিয়ে হচ্ছে। হবে নাইবা কেন ! ওরা প্রচুর টাকার মালিক। মনটাও ওদের বিশাল। সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করেছে তা ছাড়া পাড়া প্রতিবেশী সকলে। তন্ময়দার অফিসের বন্ধু। ডি. সি. পি নর্থ। তিনিও এসেছেন তন্ময়দার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। খাওয়া দাওয়া এলাহী কাণ্ড।
***খুকুদির বিয়ের ভোজ***
স্টার্টার :-
অতিথিদের স্টার্টার দিয়ে স্বাগত জানানো হল । স্টার্টারে খুব বেশি বৈচিত্র্য রাখা হয়নি । তাই এই ঠান্ডায় বিয়েতে, গরম ডাম্পলিং, টিক্কা, ফিশ ফ্রাই, মিনি সামোসা, কাবাব, কাটলেট, চিলি পটেটো, স্প্রিং রোল, ডরাই মাঞ্চুরিয়ান আছে।এ ছাড়া ফুচকা, চাট কর্নার, দই-ভল্লা তো আছেই। কি নেই!
শীত কালে বিয়ের মরসুমের স্যুপ :-
বিয়ের মেনুতে গরম স্যুপ রাখতেই হয় । মটর-পুদিনা স্যুপ, টমেটো স্যুপ, ভেজ স্যুপ, কর্ন স্যুপ, ইতালিয়ান স্যুপ, চিকেন স্যুপ, পনির স্যুপ এছাড়াও, হট চকলেট, জাফরানি চা এবং কফির বিকল্প তো আছেই। কাশ্মীরি কাবা।
ভেজ আইটেম-
ভেজের জন্য অনেক অপশন রাখতে হয়েছে কারণ খুকুদির অনেক মারোয়াড়ি অতিথি কাস্টমার আছেন। তাদের জন্য আলু ভাজি, জিরা আলু, মেথি আলু, মাশরুম, মেথি মালাই, বাঁধাকপি মুসাল্লাম এবং মিক্সড ভেজ রাখা আছে। । অন্যদিকে তরকারিতে পনির মেথি মালাই, শাহি পনির, পনির কোরমা, পনির আচারি, কড়াই পনির, পনির লাবদার, মালাই কোফতা, ছোলে এবং ছানা রাওয়াল পিন্ডি। চলে বটুরে। ঢোকলা গুজুদের জন্য।
ননভেজ আইটেম- নন-ভেজ আইটেম যেমন বাটার চিকেন, চিকেন রেজালা, বিরিয়ানি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। এছাড়াও, তাওয়া চিকেন, মটন দো পেঁয়াজ ফিশ কারি, মটন বিরিয়ানি এবং চিকেন বিরিয়ানি তো আছেই। ভেটকির বাটার ফ্রাই, চিংডির মালাইকারি,ইলিশ মাছের পাতুরি, সর্ষে ইলিশ, তোপসে ফ্রাই, পাবদা মাছের ঝাল। কি নেই?
মিষ্টি :- গোলাপ জামুন, রসগোল্লা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মনোহরা, শাঁখ সন্দেশ, দরবেশ, মিহিদানা, সীতাভোগ,মিষ্টি দই,
চাটনি পাঁপড়,
পান :- বেনারসী পান, মিষ্টি পান, জর্দা পান।
চিত্র ঋন :- ইন্টারনেট।
All reactions:
Madhabi Chakraborty and Narmada Choudhury
2
Like
Comment
Send