পিছুডাক অণু গল্পের শর্ট ফিল্মের জন্য চিত্রনাট্য।
পিছুডাক গল্পের চিত্রনাট্য
©ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

*প্রথম দৃশ্য*
সময় :- বিকেল ৫.৩০ টা
স্থান ( location) :- পুকুর পাড়ের এক রাস্তা। সামনে একটা অনেক দিনের পুরোনো পরিত্যাক্ত পোড় বাড়ি। আগাছা ভর্তি। বাড়িটার সামনে একটা বেল গাছ।
পাত্র (artist) :- এক ভদ্রলোক বিকেলের ভ্রমনে বেড়িয়েছেন
তাঁকে দেখে পুকুর পাড় থেকে আর একটি লোক ডাকলেন (ভূত)
অন্যমনস্ক ভাবে ভদ্রলোক ঘুরছিলেন হটাৎ থমকে দাঁড়ালেন একটা ডাক শুনে......
ভূত :- আরে চ্যাটার্জী বাবু কোথায় যাচ্ছেন সন্ধ্যে বেলায়? ওদিকটায় যাবেন না. ওই পোড় বাড়িটার সামনে একটা বেল গাছে ব্রহ্ম দৈত্য আছে.
ভদ্রলোক :-কে কে আপনি? আপনাকে ত দেখিনি এদিকে !
ভূত :-দেখবেন কি করে আমি ত এখানে বেশি দিন থাকি না.মাঝে মাঝে আসি আবার চলে যাই.
ভদ্রলোক :-আপনি কি করে জানলেন ব্রহ্ম দৈত্য আছে বলে? আর ব্রহ্ম দৈত্য কি কেউ কোন দিন দেখেছেন? না শুনেছেন?
ভূত :- জানি জানি আমার কথা শুনলে আপনিও বিশ্বাস করবেন মোসাই.চলুন ওই পুকুর পাড়টায় বসি.আপনাকে পুরো কাহিনী টা শোনাবো.
ভদ্রলোক :-আপনাকে চিনি না জানিনা কখন দেখিনি আমাকে কেন ডাকছেন কাহিনী শোনানোর জন্য? আমি ই বা যাব কেন? বলুন ত?
*দ্বিতীয় দৃশ্য*
সময় :- সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ০৬.৩০
স্থান (location)
একটা সুন্দর বাঁধানো পুকুর পাড়। ভদ্রলোক কে ডেকে ওখানে বসালো অন্য লোকটি যে ওনাকে পেছন থেকে ডেকেছিল চ্যাটার্জি বাবু বলে.....
ভূত :- আসবেন আসবেন আস্তেই হবে এই কাহিনী র টান এমন, কেউ না এসে পারে না !
ভদ্রলোক :- আপনি আমার নাম জানলেন কি করে বলুন ত?
ভূত :- জানতে হয় ওটাই আমাদের নিয়ম !
ভদ্রলোক :- তাই বুঝি?
ভূত :- হ্যাঁ তাই.
( মনে মনে ভাবলেন ভদ্রলোক )
এই ভদ্রলোকটি একটু বেশি কথা বলছেন না ! মনে মনে ভাবি.
ভূত :-ও আপনি ভাবছেন আপনাকে কেন ডাকছি? চিন্তা করবেন না. আমি চোর ডাকাত নই. আপনার মতন এক সাধারন মানুষ. আমার ও স্ত্রী পুত্র পরিবার ছিল। এখন অবশ্য আমি একা। তাই লোক দেখলেই তাকে আপন করার সূত্র খুঁজি।
ভদ্রলোক :- সূত্র খোঁজেন মানে !
*তৃতীয় দৃশ্য*
( ভূত তার জীবন কাহিনী শুরু করলো )
*ভূত একটু অন্যমনস্ক ছিল। ভাবুক হয়ে শুরু করলো*
সময় বেলা ১২ টা ( এই দৃশ্য flash back )
স্থান ( location) একটা ভালো সাজানো ঘর। ডাইনিং টেবিল। লাঞ্চ দেওয়া হয়েছে টেবিলে।
পাত্র, পাত্রী :- পাত্র :- এক ভদ্রলোক( ভূত ) বেঁচে থাকতে দিনের বেলা খেতে বসেছেন।
পাত্রী :-গিন্নী খাবার দিতে দিতে কিছু কথা বলছেন।
ভূত :- (খাবার টেবিলে বসে ) এইসব ছাই পাঁশ খাওয়া যায়!
গিন্নী :- কেন ছাই পাঁসের কি হল? একবার স্ট্রোকের পর লোকে কি কালিয়া পোলাও খাবে? যা দিয়েছি লক্ষ্মী ছেলেটির মতন খেয়ে নাও।
ভূত :- ছেলেটা কবে আসবে কে জানে? বড় অসহায় লাগে ওর অবর্তমানে। ও এলে ভালো রান্না হবে তখন ঠিক পাতে পড়বে।
গিন্নী :- বলি তোমার কি মতিভ্রম হল না কি? ডাক্তার যা খাওয়ার জন্য বলেছেন তাই দিচ্ছি। খেয়ে নাও।
ভূত :- ডাক্তার রা মানুষ নয়। ওরা আমাদের গরু ছাগল ভাবে। ব্যাটারা মোটা টাকা নেয় আর বলে কিনা বিনা তেল মসলার রান্না খান। এইসব খেয়ে মানুষ কত দিন বাঁচবে?
গিন্নী :- তোমার কি মতলব বোলো তো ! কি খাবে তুমি? রোগ বাঁধিয়েছ। একটা স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। আমি একা হাতে সব করছি। তাও তুমি শান্তি দেবেনা বলে চোখ পুঁছলেন আঁচল দিয়ে।
ভূত :- আহা রাগ করছো কেন?
গিন্নী :- থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবেনা।
ভূত :- লক্ষ্মী ছেলেটির মতন খেয়ে নিল।
*চতুর্থ দৃশ্য*
সময় :- ভর সন্ধ্যা বেলা।
পাত্র
( ভদ্রলোকের প্রশ্ন -সূত্র খোঁজেন মানে.....শুনে ভূত উত্তর দেন )
ভূত :- এই দেখ সব কথা ওরকম টেড়া বেঁকা করে দেখলে চলে। মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়.।
ভদ্রলোক :- তাই! তা কি বিশ্বাস করবো?
ভূত :- শুনুন আমার সংসারে আমি আর আমার স্ত্রী। আমাদের এক পুত্র সন্তান। সে ত থাকে সুদুর আমেরিকায় থাকে।
ভদ্রলোক :- সেতো আজকাল অনেকেরি থাকে।
ভূত :- শুনুন না মোশাই। আমি আর আমার স্ত্রী মাত্র দুজনে থাকি। আমাদের মধ্যে দিনের মধ্যে দু একটা কথা ছাড়া কথা বলার লোকের অভাব। ওই খেতে দেওয়ার সময় আর ওষুধ খাওয়ানোর সময় ছাড়া আমার আর আমার স্ত্রীর মধ্যে বড় একটা কথা বার্তা হয়না।
(নেপথ্যে )
ভূত :- এর মধ্যে আমার একটা স্ট্রোক হয়ে গেল. মরে যেতাম তবে বেঁচে গেলাম. ডাক্তার বাবু এঞ্জিওগ্রাফি করে বাঁচালেন. এ যাত্রায় জম নিতে পারলোনা. তবে চিত্রগুপ্তর খাতা দেখে জম বলেন তোর মৃত্যু অনিবার্জ.
*শেষ দৃশ্য*
ভূত :- ঠিক তাই হল । পরের স্ট্রোকে খতম । এখন দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছি লোকের সংগে কথা বলছি । ও চ্যাটার্জী বাবু আপনার কি হল?
*নিচের কথাগুলো নেপথ্যে কেউ বলতে পারেন কিম্বা স্ক্রিনে লেখা হতে পারে* *সঙ্গে ভৌতিক আবাহ সংগীত* রঞ্জন পাত্রর লেখা গানটা নেপথ্যে হলে ভালো হয়।
আর চ্যটার্জি বাবু !!!! ভূত ভূত বলে ওইখানেই জ্ঞান হারালেন ভদ্রলোক। তাঁর আর অজানা রইলোনা যার সঙ্গে কথা বলছিলেন সে নিজেই একটা ভূত।
ভূত :- কি মুস্কিল ! আমি কি ভূত নাকি?
No comments:
Post a Comment