Tuesday, March 26, 2024
©প্রতিবাদ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️ ২৬.০৩.২০২৪ মঙ্গলবার
©প্রতিবাদ
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️
২৬.০৩.২০২৪ মঙ্গলবার
স্যার আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবেন না প্লিজ। আমি ঐ ধরণের মেয়ে নই। আমার বাবা অসুস্থ। মা ছোটবেলায় ইহাধাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমার ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব। বুঝতেই পারছেন আমার কতো টেনশন! কথাগুলো বলে সম্পূর্ণা এক গ্লাস জল খেল।
বস :- তুমি কর্পোরেট অফিসে চাকরি করার যোগ্যতা রাখোনা। বস কে খুশি করতে পারলে তোমার উন্নতি নিশ্চিৎ।
সম্পুর্না :- শুনেছি আপনার স্ত্রী আছেন এবং একটি মেয়ে আছেন তিনি মেডিক্যাল পড়ছেন। আপনার মেয়ের সঙ্গে যদি কোন প্রফেসার এইরকম অসভ্যতা করে......!!!
- মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ !!
- কেন নিজের মেয়ে বলে গায়ে লাগলো বুঝি!
- তোমার অস্পর্ধা দেখে আশ্চর্য হচ্ছি।
- সেই এক ই কথা যদি আমি বলি....!
- তাই নাকি? তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারি।
,- দেশে আইন কানুন আছে। আমিও দেখবো আপনি আমাকে কি করে বরখাস্ত করতে পারেন।
- ভয় দেখাচ্ছ!
- দেখাচ্ছি নয় আপনি ভয় পাচ্ছেন। স্পষ্ট দেখছি আপনি এই শীতে ঘামছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ঘৃণা করছে। একজন কন্যা র বয়েসি মেয়েকে আপনি মলেস্টশন করতে চাইছিলেন। তাকে বারে বারে চেম্বারে ডেকে নানা ইঙ্গিত করা কাছে ডাকা। ইচ্ছেকরে গায়ে হাত দেওয়া। এগুলো কি একজন পিতৃতুল্য লোকের কাজ? আমি সাম্বাদিকের কাছে যাচ্ছি। দেখি আপনি আমাকে বরখাস্ত করেন না নিজেই বরখাস্ত হন। নমস্কার।
- এই শোন তুমি বড্ড বড় বড় কথা বলছো। তুমি জানোনা আমি কে?
- জানি আপনি একজন লম্পট পুরুষ রুপি পাষন্ড।
- কি বললে? আমি লম্পট!! কালকেই তোমায় টারমিনেশন লেটার পাঠাচ্ছি
- হিম্মত থাকলে পাঠান। এই বলে বসের চেম্বার থেকে সম্পূর্ণা প্রস্থান করলো।
*দ্বিতীয় পর্ব*
বস একটি নামি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার। তাঁর এই ছেঁদো মহিলার কথায় বিচলিত হওয়ার কথা নয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্টেনোকে ডাকলেন।
স্টেনো চেম্বারে ঢুকে সুপ্রভাত জানালো।
বস জিজ্ঞাসা করলেন সম্পূর্ণা র বিষয়। ও কি ধরণের মহিলা ইত্যাদি.....
স্টেনো বললেন খুব জেদি মহিলা। ওর কিছু সাম্বাদিক বন্ধু আছে। তারা ওকে অনেক ক্ষেত্রে প্রটেকশন দেয়।
- হুম। তারপর.... ঐটুকুই জানি স্যার।
- ওকে আপনি আসতে পারেন।
- বস চিন্তায় পড়লেন। কিছু অঘটন ঘটাবে নাতো মহিলাটি। এরা বামপন্থী নিশ্চই। নারা বাজি আর বন্দ হরতাল এদের রক্তে। ওকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু পরক্ষনেই ওনার পৌরুষে লাগে। সুধীর বটব্যাল আপোষ সমাধান করবে একটি মহিলার সঙ্গে.....!!
একটি ফোন এলো ল্যান্ড ফোনে।
- হ্যালো বটব্যাল হিয়ার।
- আপনার ব্যাট স্টাম্পে লেগে আপনি আউট হয়ে যাবেন স্যার। সাবধানে থাকবেন । মহিলা কর্মচারীর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার। ওমেন মোলেস্টেশন ইন কর্পোরেট অফিস এই হেডিং নিউজ দেখতে চান?
- কে আপিনি? আমাকে থ্রেট করছেন!
- হ্যাঁ করছি। জথেষ্ট প্রমাণ আছে। বিনা প্রমানে আমরা কাউকে ঘাঁটাইনা। আজকে সাবধান করছি ভবিষ্যতে এই ধরণের অভিযোগ পেলে বিপদে পড়বেন। কালকে ওনার কাছে ক্ষমা না চাইলে যা ঘটবে তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। এক মেয়ের বয়েসি মহিলাকে sexual harrasment!! লজ্জা করেনা আপনার ! সাবধান। নমস্কার।
- বসের সারা গা থেকে কাল ঘাম ছুটলো। কি সাংঘাতিক মেয়েটা। পেটে পেটে এতো ছিল। এই লোয়ার মিডিল ক্লাস মেয়েদের বড্ড বাড় বেড়েছে আজকাল। মনে মনে ঠিক করলেন ওকে বুঝিয়ে বলবেন। কিন্তু ও আরো পেয়ে বসবে তাহলে।
*তৃতীয় পর্ব*
সম্পুর্না অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছে কম্পিউটার কীবোর্ডে কি সব টাইপ করতে ব্যস্ত রইলো। মনে মনে ভাবে কাল চিন্ময় দার কথাগুলোর কি প্রতিক্রিয়া হয় দেখি। চিন্ময় দা বস কে সপাটে একটা চাঁটি মেরেছে।
এখন বোধহয় সেই আঘাতটা ভুলতে পারেন নি। কালকে বস জানতেও পারেন নি আমি ওনার সমস্ত কথা রেকর্ডিং করেছি আমার মোবাইলে। সেই অডিও ক্লিপ চিন্ময় দার কাছে আছে। এখনো কোন ডাক আসেনি কিম্বা কাগজ আসেনি। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ওষুধ কাজে লেগেছে?
একটা ফাইল এলো সমুর্ণার ডেস্ক এ। দেখছি যা আছে এক্সেল ব্রড সিটে কাজ করতে হবে। সম্পূর্ণা কাজে মন দিল।
ইন্টারকামে কল এলো। ফাইলটা আজ চাই। ব্রড সিটে প্রিন্ট করে বিকেলের মধ্যে আমার টেবিলে যেন পৌঁছোয়।
- ওকে বস।
- ইন্টারকম রেখে বস মনে মনে ভাবলেন,দেখি কি করে সব কাজ সময় মতন করতে পারে!! সাম্বাদিক লাগিয়েছে আমার পেছনে। এখন এমন কাজ দেব যে দুদিনের কাজ একদিনে করতে হবে। না হলেই একসপ্লানেশন।
এরমধ্যে একটা মেল এলো। বস মেলটা পেয়ে চিন্তাগ্রস্ত মনেহল। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম পুঁছলেন। কাজে মন দিলেন। স্টেনো কে ডেকে কিছু ডিক্টটেশন দিলেন।
সম্পূর্ণা বুঝতেই পারছে বস ওকে হয়রান করার জন্য বেশি বেশি কাজ দিচ্ছেন। মিসেস গোমস সম্পূর্ণা কে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে তোমার। লাঞ্চে যাবেনা?
- না আজ লাঞ্চ আনিনি। বাড়ি থেকে জলখাবার খেয়ে এসেছি। বাস ট্রামের যা অবস্থা অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছোনা এক সমস্যা। আমাদের মতন নিচু তলার কর্মচারীদের সমস্যা বোঝার কেউ নেই। আমাদের টাকা নেই যে নিজের গাড়ি রাখবো। এই যানজটে স্কুটি চালানো বিপদ। সেই বাস নয়তো অটোর ওপর নির্ভর। রোজ যাতায়াতে প্রাণ ওষ্ঠাগত তারওপর রুগ্ন বাবাকে দেখা। তাঁর ওষুধ পথ্য আমি খুব চিন্তায় থাকি ম্যাডাম। নিজের দিকে আমার তাকানোর সময় নেই।
- সেকি তুমি লাঞ্চ না করে অফিসের কাজ করবে। কেন? তোমারতো একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট নয় তবে তোমাকে এই কাজ কে দিয়েছেন?
- কে আবার নিশ্চই বস পাঠিয়েছেন আমাকে সায়েস্তা করতে।
- মানে!!!
- অফিসের পরে সব বলবো ম্যাডাম। এখন না।
- আমি কিছুটা আঁচ করেছি। বলতে হবেনা।
- হেড অফিসে কমপ্লেন করবো আমরা মহিলা কর্মচারীরা। এইসব জুলুম বাজি চলবেনা।
- পরে কথাহবে।
- সম্পুর্না ফাইলটা যথা সময়ে পাঠিয়ে দিল বসের কাছে। ফাইল মুভামেন্ট রেজিস্টারে ডিটেল্স লিখে পিওনের হাতে দিয়ে উঠলো। ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ কফি আর একটা বার্গার খেল। আজ লাঞ্চ আনেনি। এই খেয়েই থাকতে হবে।
*চতুর্থ পর্ব*
পরের দিন অফিসে হেড অফিস থেকে অডিট পার্টি এলো। বস পারচেস কমিটি না করে বেআইনি ভাবে অনেক পারচেস করেছেন। টেন্ডার কল হয়নি। অফিস স্টেশনারি, এ. সি. এবং কম্পিউটার কেনা হয়েছে বিনা পারচেস কমিটির এপ্রুভালে।
হেড অফিসথেকে শক্ত বাঁশ এলো সো কজ নোটিস হিসেবে। হয়তো চাকরি না থাকতেও পারে। অনেকে কমপ্লেন করেছেন বসের নামে। সম্পূর্ণা র অডিও টেপ কেউ পাঠিয়েছে হেড অফিসে। মহিলা কর্মচারীকে sexual harassment আরেকটা বাঁশ।
বস এখন বুঝেছেন নিশ্চই যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকুরে তারাও মানুষ। তাদের প্রতি অন্যায় করলে ভগবান অসন্তুষ্ট হন। এ যাত্রায় তাঁর চাকরিটা থাকলে হয়।
সম্পূর্ণা একটা প্রমোশন পেয়েছে। ও এখন জুনিয়র ম্যানেজার। এবারে বোধহয় একটা নিজের ফ্ল্যাট কিনতে পারবে ব্যাঙ্কের লোনে। তবেএকটা দুঃখ থেকেগেলো ওর বাবাকে বাঁচাতে পারলোনা। বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন। দু হাত ভরে আশীর্বাদ করতেন। বাবার জন্য চোখে জল এলো। ঈশ্বর সব দিকদিয়ে মানুষ কে সুখী রাখেন না। তাহলে ঈশ্বরকে কেউ ডাকবেনা বোধহয়।
************সমাপ্ত************
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment