মুখাগ্নি
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
দ্বিতীয় পর্ব
এদিকে রোহিতের বাবা সমস্ত কথা স্ত্রীর মুখে শুনে ওনাকে বকা বকি করেন l থানায় ডাইরি করেন কিন্তু রোহিতের কোন পাত্তা পায়না পুলিশ l রঞ্জিত ব্যানার্জী এবং সুনয়না ব্যানার্জী যে যার পলিটিকাল চেনাশোনা দিয়ে রোহিতকে খোঁজার চেষ্টা চালালেন l কিন্তু কোন ফল হলনা l তসলিমা এই বিষয় কিছুই ফাঁশ করলোনা কারণ ওর ভয় আছে ওকে জানে মেরে ফেলবে ওর কাকা l ও জানে কাকা কতো সাংঘাতিক মানুষ l মুখে কুলুপ এঁটে তসলিমা নিজের পড়াশুনো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো l ক্রমে রোহিতের কথা ভুলে গেল l
রোহিতের বাবা রঞ্জিত বাবু আর মা সুনয়নার মধ্যে প্রায় অশান্তি হত রোহিতকে নিয়ে l রঞ্জিত বাবু স্ত্রীকে দায়ী করতেন ছেলে অধঃপতনে যাওয়া নিয়ে l সুনয়না দেবী নিজেকে বড় অসহায় মনে করতেন l একমাত্র ছেলে তাঁর , সে বিপথে গেলো ! নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন না l উনি অত্যন্ত গম্ভীর স্বভাবের তাই প্রকাশ করতেন না মনের দুঃখ কাউকে কিন্তু মনে মনে গুমরতেন l
রোহিত ও আসলামের অন্য সাথীরা রহমণ চাচাকে হত্যা করে কারণ তিনি সংবাদ মাধ্যমে আসলাম চাচার কালো ব্যবসার সমস্ত তথ্য দিয়ে পর্দা ফাঁশ করতে চাইছিলেন যেটা আসলামের চাচা জানতে পারেন l চাচা রহমণ চাচা কে থ্রেট করেন l তাতেও যখন কাজ না হয় রহমণ চাচাকে মারার ফাঁদ তৈরি করেন l রমজান মাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে ধর্ম করেন দান দক্ষিণা দেন, রোজা রাখেন l সেই পবিত্র রমজান মাসে রহমন চাচাকে গুলি করে মারে এই শার্প শুটারের দল যাতে রোহিত ও ছিল l যদিও রোহিতের গুলিতে রহমণ চাচা মরেন নি l উনি জনের গুলিতে মরেন l কারণ ওদের মধ্যে জন শার্প সুটার ছিল এবং ও কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হতোনা l আসলামের চাচা তাই ওর ওপর বেশি নির্ভর করতেন l পুলিশ খবর পাওয়ার আগে লাস গায়েব করে দেন আসলামের চাচা l
পুলিশ খুঁজে এক ডোবা থেকে উদ্ধার করে l তার আগে আসলাম, রোহিত, জন এবং খলিল গা ঢাকা দেয় এক স্করপিও নিয়ে বনগাঁ র বর্ডারের কাছে পৌছয় l বর্ডার পার করানোর জন্য সমস্ত ব্যবস্থা হয়ে আছে l রাতে ওরা চারজন মেজেতে শুয়ে পড়ে l রাতে রুটি তড়কা খেয়েছে l পরের দিন সন্ধ্যে বেলায় বর্ডার পেরিয়ে বাংলাদেশে এরা চারজন চলে যাবে l সব ব্যবস্থা আসলামের চাচা করে রেখেছেন l যে ওদের নিতে আসবে তাকে একটা একশো টাকার ছেঁড়া নোট দেখাবে যেটা আসলামের কাছে আছে l সে সেটা মিলিয়ে বর্ডার পার করাবে l বাংলাদেশে আসলামের চাচা প্রায় যাতায়াত করেন কাজেই এদের থাকা খাওয়ার কোন অসুবিধে হবেনা l সমস্ত ব্যবস্থা আছে l এরা সকলে চট্টগ্রাম চলে যাবে l চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ আসে খিদিরপুর ডকে মাল নিয়ে । যদি সেই সময় পরিস্থিতি ঠিক থাকে তবেই ওরা ফিরবে কোলকাতায় নতুবা নয় l ঐ প্ল্যান মাফিক কাজ হবে l
রোহিত নিজের পরিবার মা বাবার কথা ভাবছিল l কি থেকে কি হয়ে গেল নিজে ভেবে পাচ্ছেনা l আজ মাকে খুব মনে পড়ছে l আজকে মাদার্স ড়ে l মাকে উইশ করতো ওরা ভাই বোনে l চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ঝরে পড়ছে l ঘুমের ঘোরেই মায়ের সঙ্গে কথা বলে l আসলাম বলে কি ম্যা ম্যা করছিস? এই লাইনে মা বাবা ভাই বোন কেউ নয়! বস যা হুকুম দেবে সেটাই পালন করতে হবে l
- কিন্তু আমি তো কে বস দেখিনি এখনো!
- তোকে কি বস দেখা দেবে ভেবেছিস?
রোহিত ওপরে আকাশ পানে চায় l এ কি হল? নিজের জীবনটা ছারখার করেদিলো একটা মেয়ের জন্য l ছিঃ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে l শেষে কিনা সুপারি কিলার হল । মনে মনে ভাবে পুলিশের কাছে............
এ. সি. পি. চক্রবর্তী এক উড়ো ফোন কল পান তাঁর অফিসে l এই খুনের তদন্তর নির্দেশ ওনাকেই দেওয়া হয়েছে l এরমধ্যে নিউজ রিপোর্টার রা ঘিরে ধরেছে এ. সি. পি.চক্রবর্তী
কে l সকলের এক প্রশ্ন রমজান মাসে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের এক অত্যন্ত দায়িত্বশীল সমাজ সেবক বিরোধী দলের এক ক্যাড়ার,তাকে কে বা কারা খুন করলো? এই রহস্যর কবে উদ্ধাটন হবে? নিউজ রিপোর্টার প্রতিভা প্রশ্ন করেন এবং পুরো ঘটনার ভিডিও হয় l টি ভি তে প্রসারণের সময় এও সাম্বাদিকরা বলে পুলিশ সন্দেহ করছে এই খুনের পেছনে আসলামের চাচা খলিল চাচার হাত আছে l তবে খলিল চাচার লম্বা হাত, বিনা প্রমাণে ওনাকে ইন্টারোগেট করা পুলিশের পক্ষে অসম্ভব l
আসল কথায় আসি : এ. সি. পি. চক্রবর্তী যে ফোন টা পান সেটা ভগবান পাণ্ডের l ভগবান বলে সে খুনির ঠিকানা জানে তবে সর্ত রাখতে হবে কথাটা যেন গোপন থাকে...... এই বলে ফোন কেটে দেয় l
আচ্ছা মুশকিল! ভগবানকে খোঁজার জন্য ওর মোবাইল ট্র্যাক করে এক ধোপাকে পায় পুলিশ l সে বেচারা কিছুই জানেনা l সিম কার্ডের ডিটেলস কিন্তু ঐ ধোপার নামে l আবার রাতে আরেকটা ফোন আসে অন্য নাম্বার থেকে ঐ ভগবান পাণ্ডে l সে এবার বলে বনগাঁ গেলে খোঁজ পাবেন l এ.সি. পি বলেন ঠিক বলছ তো? হ্যাঁ স্যার ভগবান কখনো মিথ্যে বলেনা l গিয়ে দেখুন নিশ্চয়ই পাবেন l
No comments:
Post a Comment