মুখাগ্নি (চতুর্থ পর্ব)
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

প্রতিভা, টি. ভি. রিপোর্টার, বুম, টি ভি. ক্যামেরা ইত্যাদি নিয়ে হাজির এ. সি. পি. চক্রবর্তীর কাছথেকে গোটা অপারেশনের একটা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে l
প্রতিভা বলেন, স্যার আপনি এইটুকু সময়ের মধ্যে আততীয়দের ডেরায় পৌঁছে যেমন ভাবে সমস্ত অপারেশনটা সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছেন তার জন্য আমি জনমত টি. ভি. র তরফ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি l
- এ. সি. পি. বিরক্তি প্রকাশ করেন l আপনি কি আমায় পরিহাস করছেন?
- না স্যার l
- তবে? চারটে ছেলেকে এনকাউন্টার করতে পুলিশ বাধ্য হয়েছে l
- ক্যামেরা অফ করতে বলে প্রতিভা l ওপরের কথাটা ডিলিট করতে বলে l
-এ. সি.পি., প্রতিভা দেবীকে কে বলেন দেখুন
প্রতিভা দেবী আপনি আমার মেয়ের বয়েসি তাই আপনাকে একটা অনুরোধ করতে পারি কি?
-এদিকে মেয়ে বলছেন এদিকে অনুরোধ বলছেন! আপনি আদেশ করুন, আদেশ করুন l
-দেখ মা এই ছেলেদের মৃত্যু আমি চাইনি l এরা আমার অপারেশনে মারা গেলি তাতে আমি খুব আঘাত পেয়েছি l পাবলিক বোঝেনা পুলিশ ও মানুষ l নানা প্রশ্ন করে.....
-আপনি আসল কথাটা বলুন কাকু l
-তিনটে ছেলের ঠিকানা পেয়েছি কিন্তু চতুর্থ ছেলেটির কোন পরিচয় পাচ্ছিনা l কে তার বাবা মা? এটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলছে l
এইসময় ল্যান্ড ফোনে একটা ফোন আসে l
- হ্যালো l
- ভগবান স্যার.... ভগবান কখনো মিথ্যে বলেনা l দেখলেনতো l সব কটাকে সাবাড় করে দিলেন... একেবারে যম পুরীতে!
কি স্যার আমার কথাটা ঠিক হলোতো? এক্ষুনি টি. ভি. তে দেখলাম আপনি একটা ভদ্র ঘরের ছেলেকে এনকাউন্টার করেছেন l
আপনার চাকরিটা থাকবেতো স্যার l
- চপ শালা l আমাকে ধমকাচ্ছিস?
-কাকুর ধমকে প্রতিভা চমকে ওঠে....
- দেখছিস মা দেখছিস?
- ওপার থেকে... আবার মা কথা থেকে এলো?
-আপনি টেনশন নেবেন না l মাতালে কি না বলে....?
- এ. সি. পি. বলেন কি মতলবে ফোন করেছিস ভগবান? তোকে এক্ষুনি উঠিয়ে আনবো l বল শিগগিরি l
- হ্যাঁ তা আপনি পারেন কিন্তু আমি যে আপনার চিন্তা লাগবের জন্য ফোন করেছি l
-আমার চিন্তা তুই লাঘব করবি? আশ্চর্য!
- স্যার এই ভগবান সব সময় সত্যি কথা বলে l মিলিয়ে নেবেন l
- বল কি বলছিস!
-স্যার ঐ যে ভদ্র ঘরের ছেলেকে আপনি এনকাউন্টার করেছেন ওর নাম রোহিত না l
- তুই কি করে জানলি?
- জানি জানি l ও আমার দোকানে মদ খেতে আসতো l সঙ্গে ড্র্যাগ ও নিত l কিন্তু আমিতো ড্র্যাগ বেচিনা l একদিন বলি এখানে ড্র্যাগ নিতে পারবেনা l ও আমাকে পিস্তল উঁচিয়ে দেখিয়ে বলে চুপ করে ভাগ এখনথেকে নাহলে খুলি উড়িয়ে দেবে l আমার ও কিছু সাক্রেদ আছে ওরা আমাকে রক্ষা করে স্যার l ওরা এসে ওকে বলে চুপ চাপ একগানে থেক্ড চলে যা l রংবাজি অন্যখানে দেখাবি l ওর গলায় একটা লকেট দেখি ওতে R লেখাছিল l আমার মনে পড়ে গেলl
ওর জন্মদিনে আমি রঞ্জিত বাবুর বাড়ি গিয়েছিলাম প্রেসেন্ট দিতে আমার মেয়েকে নিয়ে l রোহিতের তখন 5 বছর বয়েস l আমার মেয়ের 4 বছর l রোহিতের বাবা যে অফিসে চাকরি করতেন আমি সেখানে একাউন্টস এর কাজ করতাম l আমি বি. কম. পাস স্যার একদম মূর্খ নই l
সেজন্য ওদের বাড়িতে যাই l কিন্তু ওরা ভালো ব্যবহার করেন না বিশেষ করে রোহিতের মা সুনয়োনা দেবী l আমরা বাবা আর মেয়ে ফিরে আসি কিছু মুখে না দিয়ে l আসলে আমার মেয়েকে ওনার ছেলের কাছে যেতে দেন নি রোহিতের মা l আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আসার সময় রোহিতের গলায় R লেখা লকেট দেখি l ঠিক সেই লকেট টা ওর গলায় দেখে রঞ্জিত বাবুকে ফোন করি কিন্তু উনি বলেন ওনার ছেলে নাকি সিলিকন সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আছে l ও কি করে এখানে আসবে? আমার সন্দেহ হয় l আমি রোহিতকে ওর বাবার পরিচয় জিজ্ঞাসা করাতে ও ওখানথেকে দ্রুত গতিতে চলে যায় l ব্যাস আমি কনফার্ম হই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!
-যা বললে সত্যি?
- ভগবান কখনো মিথ্যে বলেনা l রঞ্জিত বাবুদের বাড়ির ঠিকানা পেয়েযাবেন l ওরা সল্ট লেক এফ. ড়ি. ব্লকে থাকেন l
-এ. সি. পি. প্রতিভা কে বলেন মা তুই এক্ষুনি টি. ভি. ক্যামেরা নিয়ে এফ. ড়ি. ব্লকে যা l গিয়ে সত্যা সত্য বুঝে আমাকে ফোন করবি l আজ শনিবার ঐ সুনয়না দেবী নিশ্চই থাকবেন বাড়িতে l
ক্রমশ
চিত্র ঋণ : গুগুল l
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



No comments:
Post a Comment