Sunday, July 26, 2020

###এঞ্জেল### ##১৬ দশ পর্ব## ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



    ###এঞ্জেল###
##১৬ দশ পর্ব##
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
ধ্রুবর বাবা স্ত্রীর কড়া মেজাজ কোন দিন দেখেন নি । সর্বদা উনি মেজাজ দেখিয়ে এসেছেন কিন্তু ওই ফোনের ব্যাপারটা যে ওনার ই দিকে বুমেরাং হোয়ে আসবে ধারনাও করতে পারেননি । এখন মা ছেলে আবার সঙ্গে বৌ আর দেখে কে ওরা এখন দলে ভারি । তাই ধ্রুবর বাবা সম্পূর্ণ একলা হয়ে গিয়েছেন । এতদিন বৌয়ের সেবা শুশ্রূষায় যে নধর ভুঁড়ি খানি হয়েছে সেটা যে চুপসে যাবে সে খেয়াল আছে ? অগত্যা সারেন্ডার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ । চুলোয় যাক ধর্ম । ধর্ম কি আমায় ভাত রেঁধে দেবে না আমার সেবা শুশ্রূষা করবে ? তাই নিজেই চেক বই নিয়ে গেলেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে । ছেলের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেবেন ।
- সুনীতি দেবীকে বলেন আমি যাচ্ছি টাকা উঠিয়ে আনতে । খর্চা পাতিত আছে না কি ?
- ওরে ধ্রুব আয় আয় বাবা তোর বাবা কি বলছে শোন ।
- মুখে কুলুপ এঁটে থাকো পাড়া পড়শিকে না জানালেই নয় । ওদিকে কমলেশ ডাক্তার কান খাড়া করে আছে আমাদের এই কথা শুনলেই ঢি ঢি রব পড়ে যাবে । তাই চুপ করে থাকো । আমার বয়েস হয়েছে আমাকে একা ফেলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলে ! আমি তোমার কোনদিন কিছু করিনি ! বলে উদাস মনে বৌয়ের দিকে তাকান ।
- আমার অন্যায় হয়েছে ওইসব বলা । কিন্তু তুমি ই বা এসব করে কি পেলে ?
আঁচল দিয়ে বরের মুখ পুঁছিয়ে দেন সুনীতি দেবী । আমি কি সত্যি তোমাকে এখানে রেখে যেতাম !
- কি করতে কে যানে । ছেলে কে দেখে ত হাওয়ায় উড়ছিলে । অসম্ভব কি হয়ত আমাকে একা ফেলে চলে যেতে ।
- না না আমি এতো নির্দয়ই নই ।
- ঠিক আছে আমি আসছি চেঁচা মিচি করবেনা । দেয়ালের ও কান আছে । মনে থাকে যেন ।
- ঠিক আছে । তুমি এসো । আমি রান্না চাপাই সকলের জন্য । মেয়েটা এসেছে সেতো কিছু খাবে না কি ?
- আগে ওদের জলখাবারের ব্যবস্থা কর । স্টোভে লুচি তরকারি করে দাও । আমি মিষ্টি আনতে যাচ্ছি আর পেলে মাংস আনবো তোমার ছেলে ত আবার মাছ খায়না ।
- তাই কর । তাড়া তাড়ি এসো কিন্তু …
-
সুনীতি দেবীর আর কোন চিন্তা নেই । এখন ভালোয় ভালোয় ছেলের বিয়েটা সেরে ঘরে বৌমা কে নিয়ে আসবেন । এখন একটু বিশ্রাম করবেন । সারা জীবন ত ঘুঁটে , কয়লা আর রান্না করে জীবনটা কয়লা হয়ে গেল । এখন ঠাকুর একটু আমার কষ্ট বুঝে আমাকে এই সংসার থেকে রেহাই দেবেন ।
ধ্রুবর বাড়ি থেকে মনিকা তার মাকে ফোন করে ঃ-
ধ্রুবর বাড়িতে এতো আদর যত্ন পাবে মনিকা আশা করেনি l ধ্রুবর মা কে খুব কম সময়ের মধ্যে আপন করতে পেরে নিশ্চিন্ত l ওর মাকে একটা ফোন করা দরকার এই বিষয় জানিয়ে l এটা খুব ই অন্যায় হয়েছে ঐরকম ভাবে মাকে না জানিয়ে কলকাতা আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া l ধ্রুবকে মনিকা তার মনের ইচ্ছা পোষণ করে l এতে ধ্রুব খুব খুশি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগায় মনিকাদের বাড়িতে l
মা বাড়িতেই ছিলেন l ফোন ধরেই বুঝতে পারেন মনিকা নিশ্চয় ফোন করছে l একেই বলে মায়ের মন l ওনারা ঠিক সন্তানের কথা বুঝতে পারেন l
হ্যালো কে মনিকা? আমি তোর মা l কোথায় আছিস মা? এইরকম না বলে চলে গেলি মা আমার চিন্তা হয় না?
- সরি মা ভুল হয়ে গিয়েছে মাফ কর l তুমি কি করে জানলে আমি ফোন করছি বলে? মনিকা উত্তর দেয় l
- তুই মা হলে বুঝবি l সব মা তার সন্তান কে খোঁজে l কেউ কম কেউ বেশি l আজ আমি ডিউটি যাইনি তোর ফোনের অপেক্ষায় আছি l কখন তোর একটা খবর পাবো তাই l
- আই লাভ ইউ মম l আমি সব গিয়ে বলবো l নাও গেস হয়ের এম আই?
- মাস্ট বি উইথ ধ্রুব l এম আই কারেক্ট !
- 100% হাও কুড ইউ নো অল দিস !
- দ্যাটস রিয়েল টেলিপ্যাথি মাই চাইল্ড l রক্তের টান বাংলায় l যদিও আক্ষরিক অর্থে আলাদা l
- ও মম আই এম ভেরি ফাইন হিয়ার l অল আর লাভলি পার্সন l লাইক মাদার লাইক সন l ধ্রুবোস মম ইস জাস্ট লাইক হিম l সো কেয়ারিং লেডি l আই ডিডন্ট এক্সপেক্টেড l আমি খুব ভালো আছি মা l এখানেই খেয়েছি মায়ের হাতের রান্না l
- মায়ের হাতের রান্না l আমি এখানে আছি বেবি l
- ও নট ইউ মম l ধ্রুবর মা ! সো কেয়ারিং এন্ড এফেক্সনেট লেডি আই হেভ নেভার কাম এক্রসড l সো নাইস এন্ড লাভলি লেডি l সি হেস এক্সেপ্টেড মি আন হেসিটেটিংলি l সো নাইস মম l
- গড ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড l টেক কেয়ার l আমি এখানে পুরোহিতের ব্যবস্থা করছি l আমি অন্যান্য সব ব্যবস্থা করে রাখছি l তুমি আমার চিন্তা হ্রাস করলে মা l তোমরা ভালোয় ভালোয় ফিরে এসো l এখন আমার অনেক কাজ রে মা ।
ধ্রুবর বিবাহের প্রস্তুতিঃ-
ধ্রুবর মা ছেলের বৌ এর জন্য কিছু গয়না রেখেছিলেন l সব ই তাঁর বাপের বাড়ির দেওয়া l বাকি কিছু ধ্রুবর বাবা দিয়েছিলেন l সেই সব একটা ছোট ব্রিফ কেসে ভরলেন l
ধ্রুবর বাবা ব্যাঙ্ক থেকে দশ হাজার টাকা তুলে আনেন । ওই টাকা উনি ধ্রুবর বিবাহের জন্য রেখেছিলেন । মাসে মাসে ও যে টাকা পাঠাত সেই থেকে একটু একটু করে জমাতেন । ধ্রুবর বাবা আর কথা না বাড়িয়ে বলেন তাহলে আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো l এখানে আমি একা থাকতে পারবোনা l টাকাটা সুনীতি দেবীর হাতে দিয়ে বলেন এখন এটা রাখো পরে প্রয়োজন হলে আবার দেব ।
- ধ্রুবর মা বলেন এই টাকাই অনেক । পরে নকুল জ্যাঠা তাদের পুরনো কাজের বিশ্বস্ত লোকের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বলেন বাড়ি তোমার দায়িত্বে রইলো l ইলেকট্রিক বিল আর ফোনের বিলটা জমা দেবে । এই নাও হাজার টাকা । আমি ফোনে এখানকার সব খবর নেব । তুমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না ।
- তুমরা কবে আসবে গো? নকুল জ্যাঠা বলে l
- তা মাস দুয়েক তো নিশ্চয় l ধ্রুবর মা বলেন l কোন আত্মীয় কে বলবেনা স্থির হয় l পরে অবস্থা দেখে ব্যবস্থা l
মনিকা খুব খুশি l ধ্রুব নিশ্চিন্ত l ধ্রুব বলে আমরা সকলে এক সঙ্গেই যাবো কাল l আজ চল কেনা কাটা করতে যাই । মনিকা এই প্রথম কলকাতা আসে । ভালোই লাগছিলো তার । কলকাতার রাস্তা ঘাট , গাড়ি মটর এর ভিড় অতিষ্ঠ করছিল তাকে । তবুও ওর ভালোই লাগছিলো ।
বিয়ের কেনা কাটা:-
আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জি লাল,প্ৰিয় গোপাল বিষয়ী, আরও কিছু কলকাতার বিখ্যাত দোকান ঘুরে মনিকার জন্য বিয়ের লাল বেনারসি, ধ্রুবর জন্য পাঞ্জাবী ধুতি, বিয়ের জোড় সব গুছিয়ে মা কেনেন মনিকার পছন্দ মতন l সব কেনা কাটা সেরে বিয়ের আসল দশ কর্মার বাজার, টোপর, কোনের মুকুট , হোম পুজো ইত্যাদি সামগ্রী শ্যাম বাজার, শোভা বাজার থেকে কেনা হয় l মোটা মুটি একটা সাধারণ ঘরের বাঙালি বিয়ের বেশ কিছু সামগ্রী কেনা হয় l
ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে গোয়া যাত্রাঃ-
সব ঠিক ঠাক প্যাক করে পরের দিন সকলে রওনা দেয় l ভাগ্য ভালো গোয়ার ফ্লাইটের তিনটে ইকোনোমিক ক্লাসের টিকিট পেয়ে যায় ওরা l
ধ্রুবর মা বাবা এই প্রথম ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে যাবেন ওদের সঙ্গে ।
ধ্রুব অন্য জায়গার সিটে চলে যায় l তিনটে সিটে মনিকা, মা, বাবা বসেন l পরে এয়ার হোস্টেস কে বলে ধ্রুব বাবাকে নিজের সিটে পাঠিয়ে ও মা আর মনিকার সঙ্গে বসে l বাবা মায়ের প্রথম ফ্লাইটে যাত্রা তাই সিট বেল্ট বাঁধা ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ধ্রুব l
জিনিস পত্র সব চেক ইনের সময় লাগেজ ট্রলিতে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের কাউন্টারে নিয়ে হ্যান্ড ওভার করে । মুকুট ইত্যাদি দশ কর্মার জিনিস পত্র কেবিনে নিয়ে নেয় l
এয়ার হোস্টেস জিজ্ঞেস করেন ম্যারেজ পার্টি l লাভলি কাপল l কংগ্রাচুলেশনস l
মনিকা ধ্রুব একসঙ্গে বলে থ্যাঙ্ক ইউ l
মা বাবার ফ্লাইং এক্সপিরিয়েন্স কেমন ধ্রুব মনিকা জিজ্ঞাসা করে l সিট বেল্ট খুলতে বারণ করে l মাকে জানলার ধারে ধ্রুব বসে বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য l মায়ের চোখে জল l
- একি মা কি হোল তোমার? ধ্রুব বলে l.
- নারে এটা আনন্দাশ্রু l মা বলেন l কোনদিন ত বাইরে কোথাও যাই নি । পুরী জগন্নাথ দর্শন ও করিনি কোনদিন । আজ প্লেনে চড়ে ভাবছি আমার ছেলে ভাগ্য খুব নাহলে আমি কে আর এই প্লেন কে ?
- ওরকম করে বলছেন কেন মা , মনিকা বলে । আমি আর ধ্রুব , আপনার ছেলে দুজনেই চাকরি করি আপনাদের দুজনাকে আমরা অতি অবশ্যই মাথায় করিয়া রাখিব । কোন অভাব রাখবোনা ।
- দেখো মেয়ের কাণ্ড ! ওরে তোরাই ত আমাদের সব । তোদের ভালো থাকা মানেই আমাদের ভালো থাকা । দেখলিনা তোদের বাবা পর্যন্ত এই সম্বন্ধ মেনে নিলেন । সুধু তোদের মুখ চেয়ে । মুখে কিচ্ছুটি বলেন নি । নিজেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে আনেন । মানুষটা খুব ভালো রে । ওনাকে এই বয়েসে খুব বাজে কথা বলেছি । আমি ক্ষমা চেয়ে নেব । পতি পরমেশ্বর আমরা তাই শিখে এসেছি বাড়ি থেকে ।
- পরমেশ্বর ! মানে মনিকা জিজ্ঞাসা করে মাকে ।
- পরমেশ্বর মানে পরম ঈশ্বর । মানে ঠাকুর ।
- তাই তবে ধ্রুব কি আমার তাই !
- নিশ্চই ।
- ইন্টারেস্টিং । পরমেশ্বর ! বলে হাঁসে মনিকা। হিন্দু নারীরা বড্ড পতি ভক্ত । আমার মাকে সেরকম ত দেখিনি ।
- ওদিকে বাবাকে সব বুঝিয়ে এলো ধ্রুব যদিও এয়ার হোস্টেসরা সব ডেমোন্সট্রেট করেন.. কেমন বসবে বেল্ট লাগাবেন, আপাত কালীন স্থিতিতে বাইরে যাওয়ার দরজা, লাইভ জ্যাকেট, শ্বাস কষ্ট হলে অক্সিজেন মাস্ক ইত্যাদি ইত্যাদি…. l
গোয়া এয়ারপোর্টঃ-
ওরা সবাই ১২ টা নাগাদ গোয়া পৌঁছয় । কনভয়ের বেল্ট থেকে জিনিষ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক্সিট পয়েন্টে ট্রলিতে ।
মনিকার মা গোয়া এয়ার পোর্টে সকলকে রিসিভ করেন ফুলের তোড়া দিয়ে l সুস্বাগতম গোয়া আপনাদের স্বাগত করছে l আমি মনিকার মা সুকন্যা চক্রবর্তী (এলিনা গোমস) ।
-ধ্রুব মনিকা বলে ধন্যবাদ মা l তুমি কেন কষ্ট করে এলে ।
- ধ্রুবর বাবা বলেন ধন্যবাদ । সত্যি আপনি কেন কষ্ট করে এলেন এয়ারপোর্টে !
- আপনাদের রিসিভ করা আমার কর্তব্য । আজ মনিকার বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন আপনাদের দেখে । রাস্তায় কোন অসুবিধে হয়নিতো আপনাদের ধ্রুবর মা বাবার উদ্দেশ্যে বলেন মনিকা র মা l
- না না কিছু অসুবিধে হয়নি ধ্রুবর মা বলেন l ঐতো ডানা মেলে উঠলো আর নামলো lওঠার সময় একটু ভয় ভয় করছিল তবে পাসে ছেলে ছিল তাই সাহস পেয়েছি । কি সুন্দর মেঘ প্লেনের নিচে l গোয়া ঢোকার সময় নিচে সমুদ্র আর ছোট ছোট ঘর বাড়ি বেশ লাগছিল । খুব ভালো ভাবে এসেছি l আপনি কষ্ট করে এলেন কেন? ধ্রুবর মা বললেন ।
- কষ্ট কি ! এতো আমার আনন্দের দিন । ..........
11দশ পর্বের লিংক :-
দ্বাদশ পর্বের লিংক :-
14দশ পর্বের লিংক
m/groups/2086558441649349/permalink/2303163783322146/
15দশ পোষ্টের লিংক +-
16 দশ পর্বের লিংক লাল পলাশের পথে

No comments:

Post a Comment