Sunday, July 26, 2020

###এঞ্জেল### ##পঞ্চদশ পর্ব## ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏


##পঞ্চদশ পর্ব##
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏
15দশ পোষ্টের লিংক :-
বিপাশার বিবাহ উৎসব
আজ ১৭ ই মে জ্যৈষ্ঠ মাসের ৩ তারিখ l ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী র একমাত্র কন্যা বিপাশার শুভ পরিণয় ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী র সঙ্গে l বিরাট আয়োজন l
প্রায় ৫০০ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে l বাড়ির সামনে সুন্দর করে সাজানো l চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজানো যেন ইন্দ্রপুরী l বিয়ের সানাই এর মধুর ঝংকার এ প্লাবিত দিক দিগন্ত l লোক জনের সমাগম l আত্মীয় স্বজন সব হই হই কলরব l ঠাকুরদের কাল ঘাম ছুটছে l পঞ্চাশ পদের রান্না l মাছ ই ছয় রকমের l ইলিশ, পাবদা, পোনা , কাতলা, ভেটকি, তোপসে l তা ছাড়া মিষ্টি বাগবাজার এর বিখ্যাত নবীন চন্দ্র দাস এর রসগোল্লা, দই, রাজভোগ, এবারে বাইরের মিষ্টি আনেন নি l লোক সংখ্যা বেশি তাই l
বিবাহ লগ্ন যতই এগোয় বিপাশার মন ততই উদাস হয় l আত্মীয় স্বজন কারুর সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনা l সাজ গোজ এ কোন রুচি নেই l বিউটি পার্লার থেকে মেক আপ আর্টিস্ট এসে সকল মহিলাদের সাজ গোজ করাচ্ছে l এলাহি কাণ্ড l
ধ্রুব, ধ্রুবর মা আসেন বিবাহ লগ্নের সময় l বর এসে গিয়েছে l চারিদিকে ক্যামেরায় ফটো তোলা চলেছে l তখনকার দিনে ভিডিও হয়নি তাই ক্যামেরা ই ভরসা l
ধ্রুবর মা আসাতে মৃণালিনী দেবী এগিয়ে আসেন ওনাদের নিয়ে যেতে বিপাশার কাছে l বিপাশা ধ্রুবকে দেখে খুব খুশি হয় l দাদা তুমি এসেছে l আমি জানতাম তুমি আসবে বলে l
সুনীতি দেবী একটা হার দিয়ে বলেন এটা তোর জন্যেই রেখেছিলাম মা l এটা পরিস কেমন l চোখ দুটো সুনীতি দেবীর জলে ভরে ওঠে l উনিও তো বিপাশার মা l বিপাশা কেঁদে ফেলে l সুনীতি দেবী বলেন আজ কাঁদতে নেইরে মা l আজ তোর সারা জীবনের অপেক্ষার রাজকুমার তোর হৃদয়ে বসবে l সে এক অন্য অনুভূতি যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম॥ (তোমার হৃদয় আমার হোক/ আমার হৃদয় তোমার হোক ) এই পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণে সারা বিশ্ব সাক্ষী থাকবে l স্বর্গ থেকে পুষ্প বৃষ্টি হবে রে মা তোদের দুজনের ওপর l এইটাই হিন্দু বিবাহর মহাত্ম l দুটি অজানা নর নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার ধর্ম শুরু করে তাকেই বলে গার্হস্থ ধর্ম l সেই বৈদিক যুগ থেকে ক্রমাগত চলে আসছে এই প্রথা l রাজ কন্যাদের জন্য স্বয়ম্বর সভার অনুষ্ঠান হত l কিন্তু প্রথা এক l তোর বাবা তো তোর জন্যে রাজপুত্র ঠিক করেছেন আমার ধ্রুব তো ভিখিরির ছেলে l সেকি তোর যোগ্য পাত্র l বাবা তোর ভালোর জন্যেই মস্ত ডাক্তার জামাই ঠিক করেছেন l তুই দুঃখ করিস না l যা ঈশ্বরের ইচ্ছা তাঁকে মেনে নে l আশীর্বাদ করি সুখে শান্তিতে তোর বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত হোক l ঈশ্বর সদা সর্বদা মানুষের ভালো ই চান l তাঁর প্রতি আস্থা রাখিস মা দেখবি সব রিষ্ট খণ্ডন হয়ে যাবে l
ধ্রুব বলে একটু জামাই বাবাজির সঙ্গে দেখা করে আসি l এই বলে বরের বসার জায়গায় যায় l
কমলেশ বাবু বর কর্তা র সঙ্গে বাক্যালাপে মগ্ন l সব ই ডাক্তারি প্রফেশনের কথা l
ধ্রুব আসাতে উনি সৌজন্যে বসত বলেন কবে এলি? ধ্রুব প্রণাম করে বলে এই পাঁচ ছ দিন হোল কোম্পানির কাজে এসেছি l কাল ই চলে যাবো l
- ও তা কোম্পানি তোকে কি ট্রেনে পাঠিয়েছে? না বাসে? একটু কটাক্ষ করেই কথাটা বলেন l
- না জরুরী কাজ থাকলে কোম্পানি ফ্লাইটেই পাঠায় l
- তাই নাকি,?
- জামাই বাবুর সঙ্গে একটু পরিচয় করিয়ে দেবেন l হ্যাঁ আয় l
- হ্যালো আমি ধ্রুব, পাশের বাড়িতেই থাকি l
- হুঁ l বলে মুখ ঘুরিয়ে নেন l.
- ধ্রুব খুব অপমানিত বোধ করে l দ্রুত গতিতে ফিরে গিয়ে ওর মাকে প্রায় হিঁচড়ে টেনে হাত ধরে নিয়ে যায় ওখান থেকে l মা কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ঐ স্থান ত্যাগ করে l বিপাশা বোঝে কিছু একটা ঘটেছে না হলে ধ্রুব দার মতন শান্ত ছেলে এইরকম সকলের সামনে সিন ক্রিয়েট করতো না l বিপাশার মা ওদের খেয়ে যেতে বলেন কিন্তু তার আগেই ওরা চলে যায় ওখান থেকে l
ধ্রুব মাকে বলে এতো গর্ব l আমি নিজে গিয়ে যেচে আলাপ করতে চাইলাম আমার সঙ্গে কথাই বললো না l মুখ ঘুরিয়ে নিল l এইরকম অভদ্র লোকের সঙ্গে বিপাশার বিয়ে হোল l ছিঃ এদের এতো টাকার গর্ব l মানুষ কে মানুষ বলে মনে করেন না l এনারা কিসের ডাক্তার? আমি কোন ডাক্তার কে এইরকম গর্ব করতে দেখিনি মা l ডাক্তার রা অনেক অমায়িক ভদ্র নম্র স্বভাবের হন l এ কি যেমন বিপাশার বাবা ঠিক তার জামাই সেইরকম l
মা ওকে বাধা দিয়ে বলেন ঠিক আছে বাবা আমরা গরিব ওদের সম তুল্য নই তাই ওরা ঐ দুর্ব্যবহার করেছেন l মনে কিছু করিসনা l মেয়েটা আরও কষ্ট পাবে এই সব শুনলে l
- সে জানি মা, তাই তো আমি চলে এলাম l বিপাশার বাবা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে এলি ট্রেনে না বাসে?
- আমি যা সত্যি তাই বললাম l
- ঠিক আছে আমি রান্না করে রেখেছি আয় আমরা মা ব্যাটায় খেয়ে নিl উনি তো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন l ওনাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই l এই বলে মা ব্যাটা চিরা চরিত ঢঙে পিঁড়িতে বসে খায় l
- মা তোমার হাতের রান্না কতদিন খাইনি l আজ আমার ভাগ্য তোমার হাতের মাছের ঝোল ভাত খাবো l কিন্তু তুমি জানতো মা আমি মাছ খাই না l তোর বাবা ঐ মাছ ই আনবেন l কি করি বল l আয় আমি কাঁটা বেছে দি l না মা তুমি খেয়ে নাও সেই সকাল থেকে সংসারের সমস্ত কাজ করছ l
নারে বাবা কোন কাজ নেই l তুই এসেছিস আমার প্রাণ জুড়িয়ে গিয়েছে l কোন কষ্ট নেই আর l দেখনা হাঁটুর ব্যথা সেরে গিয়েছে l তুই না থাকলে বড় চিন্তা হয় তোর জন্য l কি খেলি কি করছিস ইত্যাদি l আজ খেয়ে নে কাল মাংস আনতে বলবো l
- আমি পরশু চলে যাব l কাল একদম প্লেন ডাল ভাত আলু পোস্ত খাবো l
- ঠিক আছে কালকের কথা কাল হবে l এখন খা তো l ছেলের পাতের মাছের কাঁটা বেছে খাইয়ে দিলেন l কতো দিন তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দি নি l
-আমি কি বাচ্চা ছেলে? আমাকে খাইয়ে দেবে !
- ওরে আমার ছেলের কথা শোন বলে হেঁসে খাইয়ে দেন l
এ যেন মাতা যশোদা শ্রী কৃষ্ণ কে ননী খাওয়াচ্ছেন l কিন্তু সুনীতি দেবী তো দেবকী l উনি তো ধ্রুবর গর্ভ ধারিণী সুনীতি l পুরাণেও তাই লেখা আছে রাজা উত্তনপদ র দুই স্ত্রী ছিলেন সুনীতি আর সুরুচি l ধ্রুব সুনীতির পুত্র ছিলেন l
তাই জগদীশ বাবু ছেলের নাম ধ্রুব রাখেন l.
মা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন l ধ্রুব ফোনের লাইনটা চেক করার সময় জংশন বক্স চেক করে l দেখে তার খোলা l তখন রাত বারোটা l তাই ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তারটা কানেক্ট করে দিতে ফোন ঠিক হয়ে যায় l পুরো ব্যাপারটার মধ্যে এক অভিসন্ধি আছে বুঝে ফেলে l কাল মাকে বলবে l এখন ঘুমোতে যায় l খুব ক্লান্ত লাগে l কাল সকালে মনিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলবে l ওকে ক্ষমা চেয়ে নেবে l বেচারি আশা করে বসে আছে হয়তো আমার ফোনের জন্য l কি কাণ্ড বল ! এইরকম করে আমাকে আটকাতে পারবেন !
মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে মনিকা
মনিকা বারে বারে ফোন করে ধ্রুব কে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে l কি এমন হোল যে ফোন করার সময় পেলোনা l নাকি ইচ্ছে করে ফোন না করে তার ধৈর্য পরীক্ষা করছে l নাকি পরখ করে দেখছে মনিকা কতোটা ধ্রুব কে বিশ্বাস করে ! এই মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে মনিকা সত্যি বিব্রত হয়ে পড়ে l ও ওর মাকে কি জবাব দেবে? ওর মাকে বলবে ধ্রুব প্রতারক ওকে ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে? কিন্তু যদি তাই হয় তবে ও ওদের বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর দিতোনা l কিন্তু ফোন নম্বরটা ঠিক তো? মনিকা ফ্যাক্টরি থেকে খোঁজ নিয়ে জানে ধ্রুব যে ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দিয়েছে সেগুলো সব ঠিক l কোন কারচুপি নেই তাতে l তবে কি হোল? শরীর খারাপ হোল? আশ্চর্য লাগছে ছেলেটার ব্যাপার স্যাপার দেখে? বেমালুম ভুলে গেল ওকে ! নানান প্রশ্ন মনে জাগে l শেষে মনিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে কলকাতা ফ্লাইটে যাবে কারণ ট্রেনে গেলে প্রচুর সময় লাগবে l কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট কি সঙ্গে সঙ্গে পাবে? যদিও পায় অনেক টাকা লাগবে l মাকে কিছুই বলা যাবেনা l যা টাকা আছে ওর কাছে যথেষ্ট কলকাতা যাতায়াত হয়ে বাঁচবে l মাকে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞাসা করে যে ঠিকানা ধ্রুব দিয়েছে মা কি জানেন সেই জায়গাটা l অবশ্য মা কোন আমলে ঐ জায়গা ছেড়ে এসেছেন ওনার কি আর মনে থাকবে ! তা ছাড়া এখন ঐসব জায়গা অনেক বদলে গিয়েছে হয়তো l দ্রুত শহরীকরণ তো সব জায়গাতেই চলেছে ওখানেও নিশ্চই হয়েছে l কাজে পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক l ধ্রুব বলছিল ওদের বাড়ি মধ্যম গ্রাম পোষ্ট অফিসের একদম লাগাও l ওদের বাড়ি অনেক দিনের পুরনো l ওর বাবাকে এবং ওকেও ওখানে প্রায় সকলে চেনে l মধ্যমগ্রাম পৌঁছলে ওদের ঘর খুঁজে পাওয়ার কোন অসুবিধে হবেনা l ধ্রুবই বা কেন আমাকে ওদের বাড়ির সমস্ত খুঁটি নাটি দিয়ে গিয়েছে ! তবে কি ও চায় আমি ওদের বাড়ি যাই ও থাকা কালীন l এইসব নানা প্রশ্ন মনিকাকে ব্যতিব্যস্ত করে l এখন ওর কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গোপন থাক । কাউকে না জানানোই শ্রেয় ।
মনটা সত্যি খুব খারাপ হয়ে যায় । বালিশে মুখ গুঁজে পূর্ব স্মৃতগুলো মনে করে আর চোখ দিয়ে অবিশ্রান্ত অশ্রু ধারা বয়ে চলে । এ কি হল তার !
যখন তাকে মনে পড়ে:-
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী✍️🙏
যখন তাকে মনে পড়ে ,
অশ্রু ঝরে আপনা হতে ,
মনকে বোঝাই কেমন করে ,
সে যে আমায় জড়িয়ে ধরে । ……..(১)
তোমার চোখে স্বপ্ন দেখি ,
তাতেই আমি খুশি থাকি ,
আমার মুখে নেইযে ভাষা ,
চোখ দুটো তাই ভাষা ভাষা ।
অকুল পাথার ভাবছি আমি ,
তার বিনা নই কিছুই আমি ,
এ যে আমার কি হল !
আমার মনে ঝড় উঠলো ।
কেউ বলে দাও তার ঠিকানা ,
মন কে বলি আর কাঁদিসনা ,
আকাশ পানে যাই যে চেয়ে ,
পরীর দেশে থাকবো গিয়ে ।
যখন তাকে মনে পড়ে
অশ্রু ঝরে আপনা হতে
মনকে বোঝাই কেমন করে
সে যে আমায় জড়িয়ে ধরে ……. (১)
তুমি আমার হৃদয় ছুঁলে ,
ইচ্ছে গুলো যাচ্ছে চলে ,
কবে তুমি আসবে বল ,
ডোনা পাওলা যাবো চল ।
তোমার চোখে দেখি স্বপ্ন ,
তাতেই আমি আছি মগ্ন ,
আমার মুখে নেইযে ভাষা ,
চোখ দুটো তাই ভাষা ভাষা । ...... (2)
তোমার প্রেমে ছিলাম ভালো ,
আমার মনে জোয়ার এলো ,
স্মৃতি গুলো যায়না ভোলা ,
শিখিয়ে ছিলে পথ চলা ।
মনের আয়নায় দেখি তোমায় ,
কাটে না যে আর সময় ,
সত্যি করে বল ধ্রুব ,
কবে তোমার মন ছোঁব ।........ (3)
আসবে তুমি আমার কাছে ,
বলবে যত কথা আছে ,
যাচ্ছি আমি তোমার কাছে ,
ফিরিয়ে আনবো আমার কাছে ।
আমার স্বপ্ন সত্যি হবে ,
ফুলের মতন পরি আসবে ।
হাঁসি কান্নায় মাতবো আমি ,
নতুন সংসার করবো আমি l
✍️🙏🙏😪
মনিকার কলকাতা যাত্রা
মা'কে একরকম না জানিয়েই মনিকা ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়ে এয়ার পোর্টে একটা ট্যাক্সি নিয়ে l সঙ্গে একটা লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ, ওর পাসপোর্ট আর দশ হাজার টাকা l মনের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব l খুব অন্যমনস্ক লাগছিলো তাকে l
এয়ার পোর্টে নেবেই ডোমেস্টিক টার্মিনালে যায় l কোলকাতা যাওয়ার ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটের আরো দেড় ঘণ্টা বাকি l টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নেয় যে ইকোনোমিক ক্লাসের টিকিট আছে l একটা টিকিট কেটে সিকিউরিটি চেকের জন্য লাইনে দাঁড়ায় l এখনো গোয়া তে টুরিস্ট প্রায় ফ্লাইটে আসে l কাজেই ফ্লাইটে টিকিট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার l সিকিউরিটি চেক সেরেনেয় l সঙ্গে লাগেজ নেই তাই কেবিনেই ওর ছোট্ট লেডিস হ্যান্ড ব্যাগটা রেখে দেবে l নির্ধারিত সময়ে চেক ইন সেরে ফ্লাইটে ওঠে l এয়ার হোস্টেস ওয়েল কাম টু ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স ফ্লাইট বলে সকল যাত্রী কে হাতজোড় করে আমন্ত্রণ করেন l এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি তাই সেটাই ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স মেনে চলে l এখানথেকে আড়াই ঘন্টা লাগবে কারণ বোম্বে হয়ে যাবে কলকাতা যাবে l
প্রায় সকাল 11 টার মধ্যে ওদের ফ্লাইট দম দম বিমান বন্দরে পৌঁছে যায় l তখন ও দম দম নামটা পরিবর্তন হয়নি l সিকিউরিটি চেক আউট সেরে মনিকা ট্যাক্সির খোঁজ করে l একটা ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্য স্থলে l...
এদিকে ধ্রুবদের বাড়িতে তুমুল অশান্তি চলেছে l ধ্রুব টেলিফোনের জাঙ্কশন বক্স চেক করে দেখে কেউ তারটা খুলে আবার বন্ধ করে দিয়েছে l ধ্রুব সকলের উদ্দেশ্যে বলে, যদি ফ্যাক্টরি থেকে আমার বস ফোন করে আমায় এই নম্বরে না পান তবে আমার চাকরি নিয়ে টানা টানি হবে l আমাকে নানান কৈফিয়ত দিতে হবে মা l
ধ্রুবর মা বলেন এ কাজ আর কে করবে বাবা? তোমার বাবাই তো নাটের গুরু গোবর্ধন উনি ছাড়া আর কে করবেন বল ? উদ্দেশ্য টা পরিষ্কার.. তুমি যাতে মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না পারো এবং তোমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝা বুঝি শুরু হোক !
মুখ সামলে কথা বল চিৎকার করে ওঠেন জগদীশ বাবু l ছেলেকে দেখে সাপের পাঁচ পা দেখেছো না l তুমি দেখেছো আমায় ঐ সব করতে?
- দেখার কি আছে?আমি জানি যাতে মনিকা ধ্রুবকে ফোনে না পায় তার ব্যবস্থা তুমি ছাড়া আর কে করবে? ধ্রুব আসার আগেই ঐ কম্ম টি করে রেখেছ l বাপ না শত্তুর তুমি ! ছেলেটাকে একটুও শান্তি দেবেনা l ও পাগলের মতন ফোনের কাছে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে l এখানে পি. সি. ও. নেই যে ওখান থেকে ফোন করবে l
- আমি টেলিফোনের লাইন কোন দুঃখে কাটবো l ওটা খুলে গিয়েছে আপনা হতে l
ঠিক সেই সময় মনিকার ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায় বাড়ির সামনে l বাড়ির নাম্বার মিলিয়ে কলিং বেল টেপে দরজার পাসে থাকা কলিং বেল এ l
এক ধুতি ফতুয়া পরা টিপিকাল বাঙালি ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন l তিনি ধ্রুবর বাবা l
মনিকা জিজ্ঞাসা করে এটা কি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর বাড়ি?
- হ্যাঁ আমি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী l
- মনিকা ধুস করে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যায়...
- একি আপনি কে? আমায় প্রণাম করছেন কেন?
- আমি মনিকা আপনার পুত্র বধূ মানে ধ্রুব জ্যোতি ব্যানার্জীর স্ত্রী l
কে? ভেতর থেকে ধ্রুবর মা আর ধ্রুব চলে আসে l ধ্রুব মনিকা কে দেখেই আশ্চর্য হয়ে বলে, তুমি চলে এলে যে ! আমি তো কাল ই ফিরবো l
মনিকা বলে এখানে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে না ভেতরে আসতে বলবে,?
ধ্রুবর মা সঙ্গে সঙ্গে ওকে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসতে বলেন l
মনিকা ধ্রুবর মাকে প্রণাম সারে, বলে আশীর্বাদ করুন মা আমরা যেন সুখী হই l
দেখো মেয়ের কাণ্ড l আগে বস হাত মুখ ধোও l কিচ্ছুটি তো মুখে দাওনি l মুখ শুকিয়ে গিয়েছে l আহারে এতো দুর থেকে আমার ছেলেটার জন্য ছুটে এসেছে l তুমি বস মা আমি তোমার জন্য জল মিষ্টি আনি l
ধ্রুবর বাবা এই অপ্রত্যাশিত অতিথি কে কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না ! সুনীতি যেমন ভাব দেখলো যেন কতো দিনের পরিচিত l আদিখ্যেতা ধরে না l খ্রিস্টান দের কেউ ঘরে ঢোকায়? লোকে জানতে পারলে আমায় পাঁচ কথা শোনাবে l ঐ কমলেশ ডাক্তার তো বসে আছে আমার কিছু খুঁত পেলেই কথা শোনাবে l
ধ্রুব, মনিকাকে বলে তুমি হঠাৎ চলে এলে যে?
কি করে না আসি বল? এখানে আসা অবধি একটা ফোন পর্যন্ত করো নি l কোন খবর পাচ্ছিনা l চিন্তা হবেনা !
- ফোন তো খারাপ ছিল শুনলে l
- ওটা ইচ্ছাকৃত l আমি সব জানি l
- না না ইচ্ছাকৃত নয় l ফোন তো খারাপ হতেই পারে l
- ঠিক আছে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে চাইনা l শোন সঙ্গে টোপর, কোনের মুকুট, ফুলের মালা , বেনারসি সব নিয়ে যাবে l আমি সঙ্গে টাকা এনেছি । এই নাও বলে ৫০০০ টাকা দেয় ।
- সেকি তুমি আমাকে কেন টাকা দিচ্ছ ! আমার কাছে আছে । তুমি কি আমায় পণ দিচ্ছ ?
-কি পণ ! সেটা আবার কি ? আমি অতো বাংলা জানিনা । ঠিক আছে আমি মাকে নিয়ে এখুনি ফিরে যাবো l তোমার কোয়ার্টারের চাবি দাও । আমি মাকে নিয়ে ওখানেই উঠবো। আমি এখানে থাকতে আসিনি l আমার কাজ হয়ে গিয়েছে l
এই সময় ধ্রুবর মা হাতে সন্দেশ আর জল নিয়ে ঘরে ঢুকলেন l আমি খাওয়ার ব্যবস্থা করছি মা তুমি বাথরুমে স্নান সেরে নাও l ভালো করে মনিকাকে দেখে বলেন... ওমা কি সুন্দর দেখতে আমার বৌমা কে l তুমি আমার ছেলেকে এতো ভালো বাসো যে গোয়া থেকে দৌড়ে এসেছে !
- ধ্রুব বলে আমার মা স্নেহময়ী l তুমি আমার মায়ের মতন মা পাবেনা l কাল আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছেন l আমি আমার সব দুঃখ গ্লানি ভুলেযাই মায়ের হাঁসি তে l
- তাই আমাকেও ভুলে গিয়েছ ! বলে চোখ পাকিয়ে তাকায় ধ্রুবর দিকে l
- আরে না না, তা কখনো হয় l তোমার জায়গা আলাদা মায়ের জায়গা আলাদা l ধ্রুব বিনয়ের সঙ্গে বলে l
- আজ কেন যাবে? আজ রেস্ট নাও আমার বাড়ি l কাল একসঙ্গে যাবো সকলে l
- রক্ষে কর l আমি রিস্ক নিতে পারবোনা l
- কেন?
- কখন কি ডিসিশন বদলাবে বলা যায়না l তার আগে নিজের জায়গায় চলে যাবো l
- কেন এটা কি তোমার নিজের জায়গা নয় l
- না, সেটা তুমিও জানো কেন আমিও জানি কেন l মিছি মিছি বিপদ ডেকে আনা l
- ধ্রুবর বাবা ভেতরের ঘরে থেকে সব শুনছিলেন l ধ্রুবর মাকে বলেন এইসব কি হচ্ছে আমার ঘরে?
যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে l ভেতরের ঘরে চুপটি করে বস l আর কেউ তোমার চোখ রাঙানোকে ভয় পায়না l অনেক ভয় পেয়েছি আর না.........
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏
চলবে.....
Like
Comment

Comments

No comments:

Post a Comment