Sunday, July 26, 2020

###এঞ্জেল### ##১৬ দশ পর্ব## ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



    ###এঞ্জেল###
##১৬ দশ পর্ব##
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
ধ্রুবর বাবা স্ত্রীর কড়া মেজাজ কোন দিন দেখেন নি । সর্বদা উনি মেজাজ দেখিয়ে এসেছেন কিন্তু ওই ফোনের ব্যাপারটা যে ওনার ই দিকে বুমেরাং হোয়ে আসবে ধারনাও করতে পারেননি । এখন মা ছেলে আবার সঙ্গে বৌ আর দেখে কে ওরা এখন দলে ভারি । তাই ধ্রুবর বাবা সম্পূর্ণ একলা হয়ে গিয়েছেন । এতদিন বৌয়ের সেবা শুশ্রূষায় যে নধর ভুঁড়ি খানি হয়েছে সেটা যে চুপসে যাবে সে খেয়াল আছে ? অগত্যা সারেন্ডার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ । চুলোয় যাক ধর্ম । ধর্ম কি আমায় ভাত রেঁধে দেবে না আমার সেবা শুশ্রূষা করবে ? তাই নিজেই চেক বই নিয়ে গেলেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে । ছেলের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেবেন ।
- সুনীতি দেবীকে বলেন আমি যাচ্ছি টাকা উঠিয়ে আনতে । খর্চা পাতিত আছে না কি ?
- ওরে ধ্রুব আয় আয় বাবা তোর বাবা কি বলছে শোন ।
- মুখে কুলুপ এঁটে থাকো পাড়া পড়শিকে না জানালেই নয় । ওদিকে কমলেশ ডাক্তার কান খাড়া করে আছে আমাদের এই কথা শুনলেই ঢি ঢি রব পড়ে যাবে । তাই চুপ করে থাকো । আমার বয়েস হয়েছে আমাকে একা ফেলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলে ! আমি তোমার কোনদিন কিছু করিনি ! বলে উদাস মনে বৌয়ের দিকে তাকান ।
- আমার অন্যায় হয়েছে ওইসব বলা । কিন্তু তুমি ই বা এসব করে কি পেলে ?
আঁচল দিয়ে বরের মুখ পুঁছিয়ে দেন সুনীতি দেবী । আমি কি সত্যি তোমাকে এখানে রেখে যেতাম !
- কি করতে কে যানে । ছেলে কে দেখে ত হাওয়ায় উড়ছিলে । অসম্ভব কি হয়ত আমাকে একা ফেলে চলে যেতে ।
- না না আমি এতো নির্দয়ই নই ।
- ঠিক আছে আমি আসছি চেঁচা মিচি করবেনা । দেয়ালের ও কান আছে । মনে থাকে যেন ।
- ঠিক আছে । তুমি এসো । আমি রান্না চাপাই সকলের জন্য । মেয়েটা এসেছে সেতো কিছু খাবে না কি ?
- আগে ওদের জলখাবারের ব্যবস্থা কর । স্টোভে লুচি তরকারি করে দাও । আমি মিষ্টি আনতে যাচ্ছি আর পেলে মাংস আনবো তোমার ছেলে ত আবার মাছ খায়না ।
- তাই কর । তাড়া তাড়ি এসো কিন্তু …
-
সুনীতি দেবীর আর কোন চিন্তা নেই । এখন ভালোয় ভালোয় ছেলের বিয়েটা সেরে ঘরে বৌমা কে নিয়ে আসবেন । এখন একটু বিশ্রাম করবেন । সারা জীবন ত ঘুঁটে , কয়লা আর রান্না করে জীবনটা কয়লা হয়ে গেল । এখন ঠাকুর একটু আমার কষ্ট বুঝে আমাকে এই সংসার থেকে রেহাই দেবেন ।
ধ্রুবর বাড়ি থেকে মনিকা তার মাকে ফোন করে ঃ-
ধ্রুবর বাড়িতে এতো আদর যত্ন পাবে মনিকা আশা করেনি l ধ্রুবর মা কে খুব কম সময়ের মধ্যে আপন করতে পেরে নিশ্চিন্ত l ওর মাকে একটা ফোন করা দরকার এই বিষয় জানিয়ে l এটা খুব ই অন্যায় হয়েছে ঐরকম ভাবে মাকে না জানিয়ে কলকাতা আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া l ধ্রুবকে মনিকা তার মনের ইচ্ছা পোষণ করে l এতে ধ্রুব খুব খুশি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগায় মনিকাদের বাড়িতে l
মা বাড়িতেই ছিলেন l ফোন ধরেই বুঝতে পারেন মনিকা নিশ্চয় ফোন করছে l একেই বলে মায়ের মন l ওনারা ঠিক সন্তানের কথা বুঝতে পারেন l
হ্যালো কে মনিকা? আমি তোর মা l কোথায় আছিস মা? এইরকম না বলে চলে গেলি মা আমার চিন্তা হয় না?
- সরি মা ভুল হয়ে গিয়েছে মাফ কর l তুমি কি করে জানলে আমি ফোন করছি বলে? মনিকা উত্তর দেয় l
- তুই মা হলে বুঝবি l সব মা তার সন্তান কে খোঁজে l কেউ কম কেউ বেশি l আজ আমি ডিউটি যাইনি তোর ফোনের অপেক্ষায় আছি l কখন তোর একটা খবর পাবো তাই l
- আই লাভ ইউ মম l আমি সব গিয়ে বলবো l নাও গেস হয়ের এম আই?
- মাস্ট বি উইথ ধ্রুব l এম আই কারেক্ট !
- 100% হাও কুড ইউ নো অল দিস !
- দ্যাটস রিয়েল টেলিপ্যাথি মাই চাইল্ড l রক্তের টান বাংলায় l যদিও আক্ষরিক অর্থে আলাদা l
- ও মম আই এম ভেরি ফাইন হিয়ার l অল আর লাভলি পার্সন l লাইক মাদার লাইক সন l ধ্রুবোস মম ইস জাস্ট লাইক হিম l সো কেয়ারিং লেডি l আই ডিডন্ট এক্সপেক্টেড l আমি খুব ভালো আছি মা l এখানেই খেয়েছি মায়ের হাতের রান্না l
- মায়ের হাতের রান্না l আমি এখানে আছি বেবি l
- ও নট ইউ মম l ধ্রুবর মা ! সো কেয়ারিং এন্ড এফেক্সনেট লেডি আই হেভ নেভার কাম এক্রসড l সো নাইস এন্ড লাভলি লেডি l সি হেস এক্সেপ্টেড মি আন হেসিটেটিংলি l সো নাইস মম l
- গড ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড l টেক কেয়ার l আমি এখানে পুরোহিতের ব্যবস্থা করছি l আমি অন্যান্য সব ব্যবস্থা করে রাখছি l তুমি আমার চিন্তা হ্রাস করলে মা l তোমরা ভালোয় ভালোয় ফিরে এসো l এখন আমার অনেক কাজ রে মা ।
ধ্রুবর বিবাহের প্রস্তুতিঃ-
ধ্রুবর মা ছেলের বৌ এর জন্য কিছু গয়না রেখেছিলেন l সব ই তাঁর বাপের বাড়ির দেওয়া l বাকি কিছু ধ্রুবর বাবা দিয়েছিলেন l সেই সব একটা ছোট ব্রিফ কেসে ভরলেন l
ধ্রুবর বাবা ব্যাঙ্ক থেকে দশ হাজার টাকা তুলে আনেন । ওই টাকা উনি ধ্রুবর বিবাহের জন্য রেখেছিলেন । মাসে মাসে ও যে টাকা পাঠাত সেই থেকে একটু একটু করে জমাতেন । ধ্রুবর বাবা আর কথা না বাড়িয়ে বলেন তাহলে আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো l এখানে আমি একা থাকতে পারবোনা l টাকাটা সুনীতি দেবীর হাতে দিয়ে বলেন এখন এটা রাখো পরে প্রয়োজন হলে আবার দেব ।
- ধ্রুবর মা বলেন এই টাকাই অনেক । পরে নকুল জ্যাঠা তাদের পুরনো কাজের বিশ্বস্ত লোকের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বলেন বাড়ি তোমার দায়িত্বে রইলো l ইলেকট্রিক বিল আর ফোনের বিলটা জমা দেবে । এই নাও হাজার টাকা । আমি ফোনে এখানকার সব খবর নেব । তুমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না ।
- তুমরা কবে আসবে গো? নকুল জ্যাঠা বলে l
- তা মাস দুয়েক তো নিশ্চয় l ধ্রুবর মা বলেন l কোন আত্মীয় কে বলবেনা স্থির হয় l পরে অবস্থা দেখে ব্যবস্থা l
মনিকা খুব খুশি l ধ্রুব নিশ্চিন্ত l ধ্রুব বলে আমরা সকলে এক সঙ্গেই যাবো কাল l আজ চল কেনা কাটা করতে যাই । মনিকা এই প্রথম কলকাতা আসে । ভালোই লাগছিলো তার । কলকাতার রাস্তা ঘাট , গাড়ি মটর এর ভিড় অতিষ্ঠ করছিল তাকে । তবুও ওর ভালোই লাগছিলো ।
বিয়ের কেনা কাটা:-
আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জি লাল,প্ৰিয় গোপাল বিষয়ী, আরও কিছু কলকাতার বিখ্যাত দোকান ঘুরে মনিকার জন্য বিয়ের লাল বেনারসি, ধ্রুবর জন্য পাঞ্জাবী ধুতি, বিয়ের জোড় সব গুছিয়ে মা কেনেন মনিকার পছন্দ মতন l সব কেনা কাটা সেরে বিয়ের আসল দশ কর্মার বাজার, টোপর, কোনের মুকুট , হোম পুজো ইত্যাদি সামগ্রী শ্যাম বাজার, শোভা বাজার থেকে কেনা হয় l মোটা মুটি একটা সাধারণ ঘরের বাঙালি বিয়ের বেশ কিছু সামগ্রী কেনা হয় l
ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে গোয়া যাত্রাঃ-
সব ঠিক ঠাক প্যাক করে পরের দিন সকলে রওনা দেয় l ভাগ্য ভালো গোয়ার ফ্লাইটের তিনটে ইকোনোমিক ক্লাসের টিকিট পেয়ে যায় ওরা l
ধ্রুবর মা বাবা এই প্রথম ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে যাবেন ওদের সঙ্গে ।
ধ্রুব অন্য জায়গার সিটে চলে যায় l তিনটে সিটে মনিকা, মা, বাবা বসেন l পরে এয়ার হোস্টেস কে বলে ধ্রুব বাবাকে নিজের সিটে পাঠিয়ে ও মা আর মনিকার সঙ্গে বসে l বাবা মায়ের প্রথম ফ্লাইটে যাত্রা তাই সিট বেল্ট বাঁধা ভালো করে বুঝিয়ে দেয় ধ্রুব l
জিনিস পত্র সব চেক ইনের সময় লাগেজ ট্রলিতে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের কাউন্টারে নিয়ে হ্যান্ড ওভার করে । মুকুট ইত্যাদি দশ কর্মার জিনিস পত্র কেবিনে নিয়ে নেয় l
এয়ার হোস্টেস জিজ্ঞেস করেন ম্যারেজ পার্টি l লাভলি কাপল l কংগ্রাচুলেশনস l
মনিকা ধ্রুব একসঙ্গে বলে থ্যাঙ্ক ইউ l
মা বাবার ফ্লাইং এক্সপিরিয়েন্স কেমন ধ্রুব মনিকা জিজ্ঞাসা করে l সিট বেল্ট খুলতে বারণ করে l মাকে জানলার ধারে ধ্রুব বসে বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য l মায়ের চোখে জল l
- একি মা কি হোল তোমার? ধ্রুব বলে l.
- নারে এটা আনন্দাশ্রু l মা বলেন l কোনদিন ত বাইরে কোথাও যাই নি । পুরী জগন্নাথ দর্শন ও করিনি কোনদিন । আজ প্লেনে চড়ে ভাবছি আমার ছেলে ভাগ্য খুব নাহলে আমি কে আর এই প্লেন কে ?
- ওরকম করে বলছেন কেন মা , মনিকা বলে । আমি আর ধ্রুব , আপনার ছেলে দুজনেই চাকরি করি আপনাদের দুজনাকে আমরা অতি অবশ্যই মাথায় করিয়া রাখিব । কোন অভাব রাখবোনা ।
- দেখো মেয়ের কাণ্ড ! ওরে তোরাই ত আমাদের সব । তোদের ভালো থাকা মানেই আমাদের ভালো থাকা । দেখলিনা তোদের বাবা পর্যন্ত এই সম্বন্ধ মেনে নিলেন । সুধু তোদের মুখ চেয়ে । মুখে কিচ্ছুটি বলেন নি । নিজেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে আনেন । মানুষটা খুব ভালো রে । ওনাকে এই বয়েসে খুব বাজে কথা বলেছি । আমি ক্ষমা চেয়ে নেব । পতি পরমেশ্বর আমরা তাই শিখে এসেছি বাড়ি থেকে ।
- পরমেশ্বর ! মানে মনিকা জিজ্ঞাসা করে মাকে ।
- পরমেশ্বর মানে পরম ঈশ্বর । মানে ঠাকুর ।
- তাই তবে ধ্রুব কি আমার তাই !
- নিশ্চই ।
- ইন্টারেস্টিং । পরমেশ্বর ! বলে হাঁসে মনিকা। হিন্দু নারীরা বড্ড পতি ভক্ত । আমার মাকে সেরকম ত দেখিনি ।
- ওদিকে বাবাকে সব বুঝিয়ে এলো ধ্রুব যদিও এয়ার হোস্টেসরা সব ডেমোন্সট্রেট করেন.. কেমন বসবে বেল্ট লাগাবেন, আপাত কালীন স্থিতিতে বাইরে যাওয়ার দরজা, লাইভ জ্যাকেট, শ্বাস কষ্ট হলে অক্সিজেন মাস্ক ইত্যাদি ইত্যাদি…. l
গোয়া এয়ারপোর্টঃ-
ওরা সবাই ১২ টা নাগাদ গোয়া পৌঁছয় । কনভয়ের বেল্ট থেকে জিনিষ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক্সিট পয়েন্টে ট্রলিতে ।
মনিকার মা গোয়া এয়ার পোর্টে সকলকে রিসিভ করেন ফুলের তোড়া দিয়ে l সুস্বাগতম গোয়া আপনাদের স্বাগত করছে l আমি মনিকার মা সুকন্যা চক্রবর্তী (এলিনা গোমস) ।
-ধ্রুব মনিকা বলে ধন্যবাদ মা l তুমি কেন কষ্ট করে এলে ।
- ধ্রুবর বাবা বলেন ধন্যবাদ । সত্যি আপনি কেন কষ্ট করে এলেন এয়ারপোর্টে !
- আপনাদের রিসিভ করা আমার কর্তব্য । আজ মনিকার বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন আপনাদের দেখে । রাস্তায় কোন অসুবিধে হয়নিতো আপনাদের ধ্রুবর মা বাবার উদ্দেশ্যে বলেন মনিকা র মা l
- না না কিছু অসুবিধে হয়নি ধ্রুবর মা বলেন l ঐতো ডানা মেলে উঠলো আর নামলো lওঠার সময় একটু ভয় ভয় করছিল তবে পাসে ছেলে ছিল তাই সাহস পেয়েছি । কি সুন্দর মেঘ প্লেনের নিচে l গোয়া ঢোকার সময় নিচে সমুদ্র আর ছোট ছোট ঘর বাড়ি বেশ লাগছিল । খুব ভালো ভাবে এসেছি l আপনি কষ্ট করে এলেন কেন? ধ্রুবর মা বললেন ।
- কষ্ট কি ! এতো আমার আনন্দের দিন । ..........
11দশ পর্বের লিংক :-
দ্বাদশ পর্বের লিংক :-
14দশ পর্বের লিংক
m/groups/2086558441649349/permalink/2303163783322146/
15দশ পোষ্টের লিংক +-
16 দশ পর্বের লিংক লাল পলাশের পথে

###এঞ্জেল### ##পঞ্চদশ পর্ব## ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏


##পঞ্চদশ পর্ব##
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏
15দশ পোষ্টের লিংক :-
বিপাশার বিবাহ উৎসব
আজ ১৭ ই মে জ্যৈষ্ঠ মাসের ৩ তারিখ l ডঃ কমলেশ চক্রবর্তী র একমাত্র কন্যা বিপাশার শুভ পরিণয় ডঃ অভিষেক ব্যানার্জী র সঙ্গে l বিরাট আয়োজন l
প্রায় ৫০০ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে l বাড়ির সামনে সুন্দর করে সাজানো l চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজানো যেন ইন্দ্রপুরী l বিয়ের সানাই এর মধুর ঝংকার এ প্লাবিত দিক দিগন্ত l লোক জনের সমাগম l আত্মীয় স্বজন সব হই হই কলরব l ঠাকুরদের কাল ঘাম ছুটছে l পঞ্চাশ পদের রান্না l মাছ ই ছয় রকমের l ইলিশ, পাবদা, পোনা , কাতলা, ভেটকি, তোপসে l তা ছাড়া মিষ্টি বাগবাজার এর বিখ্যাত নবীন চন্দ্র দাস এর রসগোল্লা, দই, রাজভোগ, এবারে বাইরের মিষ্টি আনেন নি l লোক সংখ্যা বেশি তাই l
বিবাহ লগ্ন যতই এগোয় বিপাশার মন ততই উদাস হয় l আত্মীয় স্বজন কারুর সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনা l সাজ গোজ এ কোন রুচি নেই l বিউটি পার্লার থেকে মেক আপ আর্টিস্ট এসে সকল মহিলাদের সাজ গোজ করাচ্ছে l এলাহি কাণ্ড l
ধ্রুব, ধ্রুবর মা আসেন বিবাহ লগ্নের সময় l বর এসে গিয়েছে l চারিদিকে ক্যামেরায় ফটো তোলা চলেছে l তখনকার দিনে ভিডিও হয়নি তাই ক্যামেরা ই ভরসা l
ধ্রুবর মা আসাতে মৃণালিনী দেবী এগিয়ে আসেন ওনাদের নিয়ে যেতে বিপাশার কাছে l বিপাশা ধ্রুবকে দেখে খুব খুশি হয় l দাদা তুমি এসেছে l আমি জানতাম তুমি আসবে বলে l
সুনীতি দেবী একটা হার দিয়ে বলেন এটা তোর জন্যেই রেখেছিলাম মা l এটা পরিস কেমন l চোখ দুটো সুনীতি দেবীর জলে ভরে ওঠে l উনিও তো বিপাশার মা l বিপাশা কেঁদে ফেলে l সুনীতি দেবী বলেন আজ কাঁদতে নেইরে মা l আজ তোর সারা জীবনের অপেক্ষার রাজকুমার তোর হৃদয়ে বসবে l সে এক অন্য অনুভূতি যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম॥ (তোমার হৃদয় আমার হোক/ আমার হৃদয় তোমার হোক ) এই পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণে সারা বিশ্ব সাক্ষী থাকবে l স্বর্গ থেকে পুষ্প বৃষ্টি হবে রে মা তোদের দুজনের ওপর l এইটাই হিন্দু বিবাহর মহাত্ম l দুটি অজানা নর নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার ধর্ম শুরু করে তাকেই বলে গার্হস্থ ধর্ম l সেই বৈদিক যুগ থেকে ক্রমাগত চলে আসছে এই প্রথা l রাজ কন্যাদের জন্য স্বয়ম্বর সভার অনুষ্ঠান হত l কিন্তু প্রথা এক l তোর বাবা তো তোর জন্যে রাজপুত্র ঠিক করেছেন আমার ধ্রুব তো ভিখিরির ছেলে l সেকি তোর যোগ্য পাত্র l বাবা তোর ভালোর জন্যেই মস্ত ডাক্তার জামাই ঠিক করেছেন l তুই দুঃখ করিস না l যা ঈশ্বরের ইচ্ছা তাঁকে মেনে নে l আশীর্বাদ করি সুখে শান্তিতে তোর বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত হোক l ঈশ্বর সদা সর্বদা মানুষের ভালো ই চান l তাঁর প্রতি আস্থা রাখিস মা দেখবি সব রিষ্ট খণ্ডন হয়ে যাবে l
ধ্রুব বলে একটু জামাই বাবাজির সঙ্গে দেখা করে আসি l এই বলে বরের বসার জায়গায় যায় l
কমলেশ বাবু বর কর্তা র সঙ্গে বাক্যালাপে মগ্ন l সব ই ডাক্তারি প্রফেশনের কথা l
ধ্রুব আসাতে উনি সৌজন্যে বসত বলেন কবে এলি? ধ্রুব প্রণাম করে বলে এই পাঁচ ছ দিন হোল কোম্পানির কাজে এসেছি l কাল ই চলে যাবো l
- ও তা কোম্পানি তোকে কি ট্রেনে পাঠিয়েছে? না বাসে? একটু কটাক্ষ করেই কথাটা বলেন l
- না জরুরী কাজ থাকলে কোম্পানি ফ্লাইটেই পাঠায় l
- তাই নাকি,?
- জামাই বাবুর সঙ্গে একটু পরিচয় করিয়ে দেবেন l হ্যাঁ আয় l
- হ্যালো আমি ধ্রুব, পাশের বাড়িতেই থাকি l
- হুঁ l বলে মুখ ঘুরিয়ে নেন l.
- ধ্রুব খুব অপমানিত বোধ করে l দ্রুত গতিতে ফিরে গিয়ে ওর মাকে প্রায় হিঁচড়ে টেনে হাত ধরে নিয়ে যায় ওখান থেকে l মা কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ঐ স্থান ত্যাগ করে l বিপাশা বোঝে কিছু একটা ঘটেছে না হলে ধ্রুব দার মতন শান্ত ছেলে এইরকম সকলের সামনে সিন ক্রিয়েট করতো না l বিপাশার মা ওদের খেয়ে যেতে বলেন কিন্তু তার আগেই ওরা চলে যায় ওখান থেকে l
ধ্রুব মাকে বলে এতো গর্ব l আমি নিজে গিয়ে যেচে আলাপ করতে চাইলাম আমার সঙ্গে কথাই বললো না l মুখ ঘুরিয়ে নিল l এইরকম অভদ্র লোকের সঙ্গে বিপাশার বিয়ে হোল l ছিঃ এদের এতো টাকার গর্ব l মানুষ কে মানুষ বলে মনে করেন না l এনারা কিসের ডাক্তার? আমি কোন ডাক্তার কে এইরকম গর্ব করতে দেখিনি মা l ডাক্তার রা অনেক অমায়িক ভদ্র নম্র স্বভাবের হন l এ কি যেমন বিপাশার বাবা ঠিক তার জামাই সেইরকম l
মা ওকে বাধা দিয়ে বলেন ঠিক আছে বাবা আমরা গরিব ওদের সম তুল্য নই তাই ওরা ঐ দুর্ব্যবহার করেছেন l মনে কিছু করিসনা l মেয়েটা আরও কষ্ট পাবে এই সব শুনলে l
- সে জানি মা, তাই তো আমি চলে এলাম l বিপাশার বাবা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে এলি ট্রেনে না বাসে?
- আমি যা সত্যি তাই বললাম l
- ঠিক আছে আমি রান্না করে রেখেছি আয় আমরা মা ব্যাটায় খেয়ে নিl উনি তো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন l ওনাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই l এই বলে মা ব্যাটা চিরা চরিত ঢঙে পিঁড়িতে বসে খায় l
- মা তোমার হাতের রান্না কতদিন খাইনি l আজ আমার ভাগ্য তোমার হাতের মাছের ঝোল ভাত খাবো l কিন্তু তুমি জানতো মা আমি মাছ খাই না l তোর বাবা ঐ মাছ ই আনবেন l কি করি বল l আয় আমি কাঁটা বেছে দি l না মা তুমি খেয়ে নাও সেই সকাল থেকে সংসারের সমস্ত কাজ করছ l
নারে বাবা কোন কাজ নেই l তুই এসেছিস আমার প্রাণ জুড়িয়ে গিয়েছে l কোন কষ্ট নেই আর l দেখনা হাঁটুর ব্যথা সেরে গিয়েছে l তুই না থাকলে বড় চিন্তা হয় তোর জন্য l কি খেলি কি করছিস ইত্যাদি l আজ খেয়ে নে কাল মাংস আনতে বলবো l
- আমি পরশু চলে যাব l কাল একদম প্লেন ডাল ভাত আলু পোস্ত খাবো l
- ঠিক আছে কালকের কথা কাল হবে l এখন খা তো l ছেলের পাতের মাছের কাঁটা বেছে খাইয়ে দিলেন l কতো দিন তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দি নি l
-আমি কি বাচ্চা ছেলে? আমাকে খাইয়ে দেবে !
- ওরে আমার ছেলের কথা শোন বলে হেঁসে খাইয়ে দেন l
এ যেন মাতা যশোদা শ্রী কৃষ্ণ কে ননী খাওয়াচ্ছেন l কিন্তু সুনীতি দেবী তো দেবকী l উনি তো ধ্রুবর গর্ভ ধারিণী সুনীতি l পুরাণেও তাই লেখা আছে রাজা উত্তনপদ র দুই স্ত্রী ছিলেন সুনীতি আর সুরুচি l ধ্রুব সুনীতির পুত্র ছিলেন l
তাই জগদীশ বাবু ছেলের নাম ধ্রুব রাখেন l.
মা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন l ধ্রুব ফোনের লাইনটা চেক করার সময় জংশন বক্স চেক করে l দেখে তার খোলা l তখন রাত বারোটা l তাই ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তারটা কানেক্ট করে দিতে ফোন ঠিক হয়ে যায় l পুরো ব্যাপারটার মধ্যে এক অভিসন্ধি আছে বুঝে ফেলে l কাল মাকে বলবে l এখন ঘুমোতে যায় l খুব ক্লান্ত লাগে l কাল সকালে মনিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলবে l ওকে ক্ষমা চেয়ে নেবে l বেচারি আশা করে বসে আছে হয়তো আমার ফোনের জন্য l কি কাণ্ড বল ! এইরকম করে আমাকে আটকাতে পারবেন !
মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে মনিকা
মনিকা বারে বারে ফোন করে ধ্রুব কে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে l কি এমন হোল যে ফোন করার সময় পেলোনা l নাকি ইচ্ছে করে ফোন না করে তার ধৈর্য পরীক্ষা করছে l নাকি পরখ করে দেখছে মনিকা কতোটা ধ্রুব কে বিশ্বাস করে ! এই মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে মনিকা সত্যি বিব্রত হয়ে পড়ে l ও ওর মাকে কি জবাব দেবে? ওর মাকে বলবে ধ্রুব প্রতারক ওকে ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে? কিন্তু যদি তাই হয় তবে ও ওদের বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর দিতোনা l কিন্তু ফোন নম্বরটা ঠিক তো? মনিকা ফ্যাক্টরি থেকে খোঁজ নিয়ে জানে ধ্রুব যে ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দিয়েছে সেগুলো সব ঠিক l কোন কারচুপি নেই তাতে l তবে কি হোল? শরীর খারাপ হোল? আশ্চর্য লাগছে ছেলেটার ব্যাপার স্যাপার দেখে? বেমালুম ভুলে গেল ওকে ! নানান প্রশ্ন মনে জাগে l শেষে মনিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে কলকাতা ফ্লাইটে যাবে কারণ ট্রেনে গেলে প্রচুর সময় লাগবে l কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট কি সঙ্গে সঙ্গে পাবে? যদিও পায় অনেক টাকা লাগবে l মাকে কিছুই বলা যাবেনা l যা টাকা আছে ওর কাছে যথেষ্ট কলকাতা যাতায়াত হয়ে বাঁচবে l মাকে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞাসা করে যে ঠিকানা ধ্রুব দিয়েছে মা কি জানেন সেই জায়গাটা l অবশ্য মা কোন আমলে ঐ জায়গা ছেড়ে এসেছেন ওনার কি আর মনে থাকবে ! তা ছাড়া এখন ঐসব জায়গা অনেক বদলে গিয়েছে হয়তো l দ্রুত শহরীকরণ তো সব জায়গাতেই চলেছে ওখানেও নিশ্চই হয়েছে l কাজে পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক l ধ্রুব বলছিল ওদের বাড়ি মধ্যম গ্রাম পোষ্ট অফিসের একদম লাগাও l ওদের বাড়ি অনেক দিনের পুরনো l ওর বাবাকে এবং ওকেও ওখানে প্রায় সকলে চেনে l মধ্যমগ্রাম পৌঁছলে ওদের ঘর খুঁজে পাওয়ার কোন অসুবিধে হবেনা l ধ্রুবই বা কেন আমাকে ওদের বাড়ির সমস্ত খুঁটি নাটি দিয়ে গিয়েছে ! তবে কি ও চায় আমি ওদের বাড়ি যাই ও থাকা কালীন l এইসব নানা প্রশ্ন মনিকাকে ব্যতিব্যস্ত করে l এখন ওর কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গোপন থাক । কাউকে না জানানোই শ্রেয় ।
মনটা সত্যি খুব খারাপ হয়ে যায় । বালিশে মুখ গুঁজে পূর্ব স্মৃতগুলো মনে করে আর চোখ দিয়ে অবিশ্রান্ত অশ্রু ধারা বয়ে চলে । এ কি হল তার !
যখন তাকে মনে পড়ে:-
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী✍️🙏
যখন তাকে মনে পড়ে ,
অশ্রু ঝরে আপনা হতে ,
মনকে বোঝাই কেমন করে ,
সে যে আমায় জড়িয়ে ধরে । ……..(১)
তোমার চোখে স্বপ্ন দেখি ,
তাতেই আমি খুশি থাকি ,
আমার মুখে নেইযে ভাষা ,
চোখ দুটো তাই ভাষা ভাষা ।
অকুল পাথার ভাবছি আমি ,
তার বিনা নই কিছুই আমি ,
এ যে আমার কি হল !
আমার মনে ঝড় উঠলো ।
কেউ বলে দাও তার ঠিকানা ,
মন কে বলি আর কাঁদিসনা ,
আকাশ পানে যাই যে চেয়ে ,
পরীর দেশে থাকবো গিয়ে ।
যখন তাকে মনে পড়ে
অশ্রু ঝরে আপনা হতে
মনকে বোঝাই কেমন করে
সে যে আমায় জড়িয়ে ধরে ……. (১)
তুমি আমার হৃদয় ছুঁলে ,
ইচ্ছে গুলো যাচ্ছে চলে ,
কবে তুমি আসবে বল ,
ডোনা পাওলা যাবো চল ।
তোমার চোখে দেখি স্বপ্ন ,
তাতেই আমি আছি মগ্ন ,
আমার মুখে নেইযে ভাষা ,
চোখ দুটো তাই ভাষা ভাষা । ...... (2)
তোমার প্রেমে ছিলাম ভালো ,
আমার মনে জোয়ার এলো ,
স্মৃতি গুলো যায়না ভোলা ,
শিখিয়ে ছিলে পথ চলা ।
মনের আয়নায় দেখি তোমায় ,
কাটে না যে আর সময় ,
সত্যি করে বল ধ্রুব ,
কবে তোমার মন ছোঁব ।........ (3)
আসবে তুমি আমার কাছে ,
বলবে যত কথা আছে ,
যাচ্ছি আমি তোমার কাছে ,
ফিরিয়ে আনবো আমার কাছে ।
আমার স্বপ্ন সত্যি হবে ,
ফুলের মতন পরি আসবে ।
হাঁসি কান্নায় মাতবো আমি ,
নতুন সংসার করবো আমি l
✍️🙏🙏😪
মনিকার কলকাতা যাত্রা
মা'কে একরকম না জানিয়েই মনিকা ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়ে এয়ার পোর্টে একটা ট্যাক্সি নিয়ে l সঙ্গে একটা লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ, ওর পাসপোর্ট আর দশ হাজার টাকা l মনের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব l খুব অন্যমনস্ক লাগছিলো তাকে l
এয়ার পোর্টে নেবেই ডোমেস্টিক টার্মিনালে যায় l কোলকাতা যাওয়ার ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটের আরো দেড় ঘণ্টা বাকি l টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নেয় যে ইকোনোমিক ক্লাসের টিকিট আছে l একটা টিকিট কেটে সিকিউরিটি চেকের জন্য লাইনে দাঁড়ায় l এখনো গোয়া তে টুরিস্ট প্রায় ফ্লাইটে আসে l কাজেই ফ্লাইটে টিকিট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার l সিকিউরিটি চেক সেরেনেয় l সঙ্গে লাগেজ নেই তাই কেবিনেই ওর ছোট্ট লেডিস হ্যান্ড ব্যাগটা রেখে দেবে l নির্ধারিত সময়ে চেক ইন সেরে ফ্লাইটে ওঠে l এয়ার হোস্টেস ওয়েল কাম টু ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স ফ্লাইট বলে সকল যাত্রী কে হাতজোড় করে আমন্ত্রণ করেন l এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি তাই সেটাই ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স মেনে চলে l এখানথেকে আড়াই ঘন্টা লাগবে কারণ বোম্বে হয়ে যাবে কলকাতা যাবে l
প্রায় সকাল 11 টার মধ্যে ওদের ফ্লাইট দম দম বিমান বন্দরে পৌঁছে যায় l তখন ও দম দম নামটা পরিবর্তন হয়নি l সিকিউরিটি চেক আউট সেরে মনিকা ট্যাক্সির খোঁজ করে l একটা ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্য স্থলে l...
এদিকে ধ্রুবদের বাড়িতে তুমুল অশান্তি চলেছে l ধ্রুব টেলিফোনের জাঙ্কশন বক্স চেক করে দেখে কেউ তারটা খুলে আবার বন্ধ করে দিয়েছে l ধ্রুব সকলের উদ্দেশ্যে বলে, যদি ফ্যাক্টরি থেকে আমার বস ফোন করে আমায় এই নম্বরে না পান তবে আমার চাকরি নিয়ে টানা টানি হবে l আমাকে নানান কৈফিয়ত দিতে হবে মা l
ধ্রুবর মা বলেন এ কাজ আর কে করবে বাবা? তোমার বাবাই তো নাটের গুরু গোবর্ধন উনি ছাড়া আর কে করবেন বল ? উদ্দেশ্য টা পরিষ্কার.. তুমি যাতে মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না পারো এবং তোমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝা বুঝি শুরু হোক !
মুখ সামলে কথা বল চিৎকার করে ওঠেন জগদীশ বাবু l ছেলেকে দেখে সাপের পাঁচ পা দেখেছো না l তুমি দেখেছো আমায় ঐ সব করতে?
- দেখার কি আছে?আমি জানি যাতে মনিকা ধ্রুবকে ফোনে না পায় তার ব্যবস্থা তুমি ছাড়া আর কে করবে? ধ্রুব আসার আগেই ঐ কম্ম টি করে রেখেছ l বাপ না শত্তুর তুমি ! ছেলেটাকে একটুও শান্তি দেবেনা l ও পাগলের মতন ফোনের কাছে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে l এখানে পি. সি. ও. নেই যে ওখান থেকে ফোন করবে l
- আমি টেলিফোনের লাইন কোন দুঃখে কাটবো l ওটা খুলে গিয়েছে আপনা হতে l
ঠিক সেই সময় মনিকার ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায় বাড়ির সামনে l বাড়ির নাম্বার মিলিয়ে কলিং বেল টেপে দরজার পাসে থাকা কলিং বেল এ l
এক ধুতি ফতুয়া পরা টিপিকাল বাঙালি ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন l তিনি ধ্রুবর বাবা l
মনিকা জিজ্ঞাসা করে এটা কি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর বাড়ি?
- হ্যাঁ আমি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী l
- মনিকা ধুস করে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যায়...
- একি আপনি কে? আমায় প্রণাম করছেন কেন?
- আমি মনিকা আপনার পুত্র বধূ মানে ধ্রুব জ্যোতি ব্যানার্জীর স্ত্রী l
কে? ভেতর থেকে ধ্রুবর মা আর ধ্রুব চলে আসে l ধ্রুব মনিকা কে দেখেই আশ্চর্য হয়ে বলে, তুমি চলে এলে যে ! আমি তো কাল ই ফিরবো l
মনিকা বলে এখানে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে না ভেতরে আসতে বলবে,?
ধ্রুবর মা সঙ্গে সঙ্গে ওকে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসতে বলেন l
মনিকা ধ্রুবর মাকে প্রণাম সারে, বলে আশীর্বাদ করুন মা আমরা যেন সুখী হই l
দেখো মেয়ের কাণ্ড l আগে বস হাত মুখ ধোও l কিচ্ছুটি তো মুখে দাওনি l মুখ শুকিয়ে গিয়েছে l আহারে এতো দুর থেকে আমার ছেলেটার জন্য ছুটে এসেছে l তুমি বস মা আমি তোমার জন্য জল মিষ্টি আনি l
ধ্রুবর বাবা এই অপ্রত্যাশিত অতিথি কে কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না ! সুনীতি যেমন ভাব দেখলো যেন কতো দিনের পরিচিত l আদিখ্যেতা ধরে না l খ্রিস্টান দের কেউ ঘরে ঢোকায়? লোকে জানতে পারলে আমায় পাঁচ কথা শোনাবে l ঐ কমলেশ ডাক্তার তো বসে আছে আমার কিছু খুঁত পেলেই কথা শোনাবে l
ধ্রুব, মনিকাকে বলে তুমি হঠাৎ চলে এলে যে?
কি করে না আসি বল? এখানে আসা অবধি একটা ফোন পর্যন্ত করো নি l কোন খবর পাচ্ছিনা l চিন্তা হবেনা !
- ফোন তো খারাপ ছিল শুনলে l
- ওটা ইচ্ছাকৃত l আমি সব জানি l
- না না ইচ্ছাকৃত নয় l ফোন তো খারাপ হতেই পারে l
- ঠিক আছে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে চাইনা l শোন সঙ্গে টোপর, কোনের মুকুট, ফুলের মালা , বেনারসি সব নিয়ে যাবে l আমি সঙ্গে টাকা এনেছি । এই নাও বলে ৫০০০ টাকা দেয় ।
- সেকি তুমি আমাকে কেন টাকা দিচ্ছ ! আমার কাছে আছে । তুমি কি আমায় পণ দিচ্ছ ?
-কি পণ ! সেটা আবার কি ? আমি অতো বাংলা জানিনা । ঠিক আছে আমি মাকে নিয়ে এখুনি ফিরে যাবো l তোমার কোয়ার্টারের চাবি দাও । আমি মাকে নিয়ে ওখানেই উঠবো। আমি এখানে থাকতে আসিনি l আমার কাজ হয়ে গিয়েছে l
এই সময় ধ্রুবর মা হাতে সন্দেশ আর জল নিয়ে ঘরে ঢুকলেন l আমি খাওয়ার ব্যবস্থা করছি মা তুমি বাথরুমে স্নান সেরে নাও l ভালো করে মনিকাকে দেখে বলেন... ওমা কি সুন্দর দেখতে আমার বৌমা কে l তুমি আমার ছেলেকে এতো ভালো বাসো যে গোয়া থেকে দৌড়ে এসেছে !
- ধ্রুব বলে আমার মা স্নেহময়ী l তুমি আমার মায়ের মতন মা পাবেনা l কাল আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছেন l আমি আমার সব দুঃখ গ্লানি ভুলেযাই মায়ের হাঁসি তে l
- তাই আমাকেও ভুলে গিয়েছ ! বলে চোখ পাকিয়ে তাকায় ধ্রুবর দিকে l
- আরে না না, তা কখনো হয় l তোমার জায়গা আলাদা মায়ের জায়গা আলাদা l ধ্রুব বিনয়ের সঙ্গে বলে l
- আজ কেন যাবে? আজ রেস্ট নাও আমার বাড়ি l কাল একসঙ্গে যাবো সকলে l
- রক্ষে কর l আমি রিস্ক নিতে পারবোনা l
- কেন?
- কখন কি ডিসিশন বদলাবে বলা যায়না l তার আগে নিজের জায়গায় চলে যাবো l
- কেন এটা কি তোমার নিজের জায়গা নয় l
- না, সেটা তুমিও জানো কেন আমিও জানি কেন l মিছি মিছি বিপদ ডেকে আনা l
- ধ্রুবর বাবা ভেতরের ঘরে থেকে সব শুনছিলেন l ধ্রুবর মাকে বলেন এইসব কি হচ্ছে আমার ঘরে?
যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে l ভেতরের ঘরে চুপটি করে বস l আর কেউ তোমার চোখ রাঙানোকে ভয় পায়না l অনেক ভয় পেয়েছি আর না.........
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏
চলবে.....
Like
Comment

Comments