"আমার কাশ্মীর" দেবশ্রী চক্রবর্তী র লেখা মর্ম স্পর্শী লেখা। লেখিকার বিষয় কিছু কথাঃ দাদা মশাই বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষক শ্রী বিনয় ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত । বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীর চাকরির সূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয় । এই সময় সমাজ সেবা মূলক কাছে জড়িয়ে পড়ার সুবাদে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসা, সেই থেকে লেখা শুরু । লেখিকার লেখাতে সমাজের খেটে খাওয়া খুব সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে ।লেখিকা পথ শিশুদের নিয়ে"অঙ্কুর" নামক একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরি করেন ।
"আমার কাশ্মীর"
প্রথম পর্ব
দেবশ্রী চক্রবর্তী
আমার দেশ ভারতবর্ষ , আমার প্রাণের জন্মভূমি । দেশের প্রতি গভীর প্রেম প্রকাশের জায়গা সেই অর্থে আমার ল্যাপটপের নোট প্যাড । যেখানে নানা সময় কবিতা, প্রবন্ধ,উপ্ন্যাস , ছোট গল্পের মধ্যমে আমি আমার দেশের মানুষ এবং তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি । আমার লেখায় কাশ্মীর বারংবার
উঠে আসে । ভয়ঙ্কর এক পাষাণ ভেদী আর্তনাদ প্রতিফলিত হয় শব্দের মূর্ছনায় । আজ আবার কাশ্মীর সম্পর্কে কলম ধরলাম । এখানে যে তথ্য তুলে ধরব কোন বাংলা উপন্যাস কিংবা প্রবন্ধে তা খুঁজে পাবেন না । কাশ্মীর সম্পর্কে বেশ কিছু ইতিহাস বই, আর্টিকেল এবং ডকুমেন্ট্রির ওপর নির্ভর করে আমার ল্যাপটপের কি বোর্ডে হাত লাগালাম । শুরু করার আগে একটা কথা বলব, কাশ্মীর যতটা কাশ্মীরিদের ঠিক ততটাই আমার । কারণ আমার মায়ের শরীরের অবিচ্ছিন্ন অংশ কাশ্মীর ।
ভূস্বর্গ কাশ্মীর। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন “ পৃথিবীতে স্বর্গ থেকে থাকলে তা এখানে, তা এখানে, তা এখানে” সেই সৌন্দর্য হয়তো আজও আছে কিন্তু বোমা, বন্দুকের গুলিতে কাশ্মীর আজ অশান্ত।
পৌরানিক কাহীনি এবং নাম করন- কাশ্মীর শব্দের অর্থ হল শুকিয়ে যাওয়া ভূমি। অনেক অনেক দিন আগে চারদিকে হিমালয় আর পীর পাঞ্জল পাহাড় ঘেরা এই এলাকা ছিল বিশাল এক হ্রদ। রাজা দক্ষ তনয়া সতী’ র হ্রদ নাম অনুসারে নাম ছিল সতীসর। সেই হ্রদে বাস করত এক দৈত্য। নাম তার “জলোদ্ভব” দৈত্যের অত্যাচারে লোকজন থাকত সন্ত্রস্ত। অবশেষে কাশ্যপ ঋষি এগিয়ে এলেন তাদের সাহায্য করতে। কাশ্যপ ছিলেন ব্রহ্মাপুত্র মারিচের ছেলে। যে সাতজন মুনি বা ঋষিকে সপ্তর্ষি বলা হয়ে থাকে তাদের একজন হলেন ব্রাহ্মন ঋষি কাশ্যপ। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ অনুসরনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন কাশ্যপ। ঋষি কাশ্যপের আবেদনে তুস্ট হয়ে ভগবান বিস্নু এগিয়ে এলেন। বিশাল এক শুকর বা বরাহের রুপ নিয়ে গুতো দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন এক দিকের পাহাড়। ফলে হ্রদ গেল শুকিয়ে আর মারা গেল সেই দৈত্য । যেখানে শুকর বা বরাহরূপী বিষনু পাহাড় ভেঙ্গেছিলেন তার নাম হল বরাহমুল, যা এখন বারমুল্লা নামে পরিচিত। হ্রদ শুকিয়ে জেগে ওঠা পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকাই হল কাশ্মীর উপত্যকা। লোকজনের বসতি গড়ে উঠলো নতুন জেগে ওঠা এই উপত্যকায় । কাশ্যপ ঋষির দেশ বা “কাশ্যপ-মার” থেকে ক্রমশ নাম হল কাশ্মীর। ঋষি কাশ্যপের আমন্ত্রনে সারা ভারত থেকে লোকজন এসে বসতি গড়ে তুললো এই উপত্যকায় যারা কালক্রমে হলেন কাশ্মীরি পন্ডিত। নিলমত পূরান এবং ১২ শ শতাব্দীতে কালহান রচিত গ্রন্থ “রাজতরঙ্গীনি” কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে রচিত আদি গ্রন্থ। চীনা পর্যটক “হিউ-এন-সাং” এর বইয়ে এই এলাকার পরিচয় মেলে “ কা-শি-মি লো” রুপে আর প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসে বলা হত “কাস্পেরিয়া” মহাভারতে উল্লেখ আছে কাম্বোজ রাজাদের অধীন ছিল এই এলাকা। কাম্বোজরা ছিলেন ভারত এবং পারস্য হতে উদ্ভূত জাতি গোষ্ঠি। পাঞ্চাল রাজবংশ রাজত্য করতেন এই এলাকায় যেখান থেকে পাহাড় শ্রেনীর নাম হয় “পাঞ্জল” পরে মুসলীম শাসনামলে “পীর” শব্দ যুক্ত হয় যা থেকে নাম হল “পীর পাঞ্জল”
১৯৪৭ এ ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলো, কিন্তু কাশ্মীরের মহারাজ হরি সিং তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি ভারত না পাকিস্তান কার সাথে যোগ দেবেন । মাউন্ট ব্যাটেন যখন তাঁর কাছে জানতে চান যে তিনি কার সাথে থাকতে চান, হরি সিং জানান কাশ্মীর কারুর সাথে যোগ দেবে না, সে স্বতন্ত্র থাকবে । হরি সিং এর মতন একজন দুর্বল শাসকের পক্ষে কাশ্মীরকে শাসন করা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । কাশ্মীরের অভ্যন্তরে শুরু হয় অশান্তি । সেই সময় কাশ্মীরি মুসলিমদের এক নেতা জিন্নার কাছে যান কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ কি হবে জানতে । জিনা বলেন, “ কাশ্মীর আমার পকেটে” । ১৯৪৭ এর ২২ এ অক্টবর পাকিস্তানের আটকোবাদ আর কাশ্মীরের মুজফফরাবাদের মাঝে বয়ে চলা ভয়ঙ্কর নীলম নদী পার করে হাজার হাজার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলের ট্রাইবাল দস্যুরা ঢুকে পড়ে কাশ্মীরে । তাঁরা যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে যায় খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ চালাতে থাকেন । পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যায় হরি সিং কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যান । সংবাদপত্র, রেডিও , সারা বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যায় কাশ্মীর, কি হচ্ছে কাশ্মীরে বাইরের পৃথিবীর কাছে অজানা থেকে যায় । এমনকি কাশ্মীরের মানুষ প্রথম দিকে বুঝতে পারছিলেন না যে কাশ্মীর আক্রান্ত হয়েছে । বারামুল্লার একটি সিনেমা হলকে রেপ সেন্টার বানান হয় । সেখানে হিন্দু মুসলিম ,শিখ, সাই, নির্বিশেষে চলতে থাকে কাশ্মীরি মেয়েদের ধর্ষণ ।
২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৭ – জিন্নার অঙ্গুলিহেলনে কাশ্মীরের পশ্চিম অংশের উপজাতীয় বিদ্রোহীরা আর পাকিস্থানি সেনারা কাশ্মীর আক্রমণ করলো, মহারাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের লক্ষ্য মহারাজ কে জোর করে অপসারিত করে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা।ঐ সময় যে স্লোগানটি পাকিস্তানীদের মুখে মুখে ফিরত তা হল “ হসকে লিয়া পাকিস্তান লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান” অর্থাৎ হেসে হেসে পাকিস্তান পেয়েছি এবার লড়াই করে হিন্দুস্থান নেবো। এছাড়া জিন্নার শ্লোগান -কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান তো ছিলই। বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল এই যে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের মতলব আঁটছিলেন। বিদ্রোহীরা মোজাফফরপুর, ডোমেল দখল করে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পৌছে গেল রাজধানী শ্রীনগরের উপকন্ঠে। পুঞ্চ এ মহারাজা হরি সিং এর বাহিনী হল বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ, জয়ের সাথে সাথে সমানে চলল লুটপাট ও নৃশংস হত্যালীলা। মহারাজা হরি সিং প্রমাদ গুনলেন, বিপদ বুজে তিনি সাহায্য চাইলেন নেহেরুজীর কাছে এবং জানালেন তিনি ভারতের সাথে যুক্ত হতে চান। ২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৭, লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হল “Instrument of Accession”, জম্মু -কাশ্মীর হল এক ভারতীয় রাজ্য। আর ভারতভুক্তির শর্ত হিসাবে জম্মু-কাশ্মীর কে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়। এই বিষয়ে পরে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করছি। আগে দেখে নি সেই সময়ে কি হয়েছিলো? নেহেরুজীর আদেশ অনুসারে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতি আক্রমণ শুরু করলো হানাদার পাক বাহিনীকে হটানোর জন্নে, শুরু হল স্বাধীনতার পর ভারত এবং পাকিস্থানের প্রথম যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে যখন ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর ভ্যালির প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ পুনুরুদ্ধার করে ফেলে বাকী এক-তৃতীয়াংশ এবং গিলগিট, বালতিস্থান উদ্ধারের জন্নে আগুয়ান, জয় যখন প্রায় করায়ত্ত, তখন কোন এক রহস্যময় কারণে নেহেরুজীর আদেশে ভারতীয় বাহিনী মাঝপথে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। নেহেরুজীর এই অমার্জনীয় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ভারত আজও করে চলেছে। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সময়ে পাকিস্থান যে জায়গা দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছিলো সেটাই আজকের Pakisthan Occupied Kashmir বা POK, পাকিস্থান অবশ্য বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে এর গালভরা নাম দিয়েছে – “আজাদ কাশ্মীর”, যেখানে আজাদির ছিটেফোঁটা নেই, আছে শুদু না পাওয়ার জ্বালা আর তীব্র শোষণ। এরপর সিন্ধু নদ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, পাকিস্থান তাঁদের দখলীকৃত কাশ্মীরের একটা অংশ তাঁদের আকা চীন কে উপহার স্বরুপ দিয়েছে, যা আজ Chaina Occupied Kashmir বা COK নামে অধিক পরিচিত।
পাকিস্থান এর পরেও ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার আশায় যুদ্ধ করেছে, আর প্রতিবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে শোচনীয় হারের পর পাকিস্থান ভারতের সাথে “সিমলা চুক্তি” করে যেখানে সিদ্ধান্ত হয় কাশ্মীর নিয়ে যাবতীয় শত্রুতা দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নেবে। কিন্তু বাস্তবে কি দেখা গেলো? মোটামুটিভাবে ১৯৯০ সাল অবধি কাশ্মীর বেশ শান্তই ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ কমই ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ন্যাশানাল কনফারেন্স পার্টির শেখ আবদুল্লা, তাঁর পুত্র ফারুক আবদুল্লা, পৌত্র অমর আবদুল্লা, কংগ্রেস পার্টির গুলাম নবী আজাদ এবং পিপলস ডেমোক্রাতিক পার্টির মুফতি মোহাম্মদ সইদ প্রমুখ। তাহলে ১৯৯০ সালে কি এমন হল? কেনই বা নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল কাশ্মীর উপত্যকায়? এই বিষয়ে সঠিক অনুধাবন করতে গেলে আমাদের কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হবে এবং দেখতে হবে ১৯৭৫ – ১৯৯০ এই সময়ে পাকিস্থান আর আফগানিস্থানে কি হয়েছিলো?
সত্তরের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্থানে হানা দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া, সেই সময়ে আমেরিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠাণ্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে। অতএব আফগানিস্থানে রাশিয়াকে আটকাতে আমেরিকার বোড়ের চাল হয়ে উঠল পাকিস্থান। সবে সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় এসেছেন জেনারেল জিয়া উল হক, আমেরিকার হাত তখন তাঁর মাথায়। ডলার আর উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের লোভে পাকিস্থান বিদ্রোহী আফগানদের সাহায্যের জন্নে শুরু করলো জিহাদি ট্রেনিং ক্যাম্প, বেশ কিছু আবার দখলীকৃত “আজাদ কাশ্মীর” অংশে। সেইসব ক্যাম্পে তৈরি হতে লাগলো হাজার হাজার ঈমানী জোশে উদ্বুদ্ধ তালিবান জিহাদি। এই জিহাদি যুবকদের হাতে অস্ত্র জোগানর ভার নিয়েছিল আমেরিকা, পরবর্তীকালে এই সর্বনাশা জোটে এলো সৌদি আরব। আরব ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তখন বিশ্ব বাজারে হু হু করে বাড়ছে পেট্রো- তেলের দাম, সৌদি রাজবংশের তখন রমরমা অবস্থা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আর কি। এই সুযোগে তাঁরা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানী করা শুরু করলো ওয়াহাবি ইসলামের বিষ, বিভিন্ন দেশে তখন সৌদি অর্থে তৈরি হচ্ছে একের পর এক মসজিদ। এগুলির মাধ্যমেই সৌদি রাজবংশ ছড়িয়ে দিতে লাগলো তাঁদের ওয়াহাবি প্রপাগান্দা। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল ধর্মের ভাইরাস আরে অর্থের সংমিশ্রনে তৈরি এক ভয়ঙ্কর টাইমবম্ব। পাকিস্থানে প্রশিক্ষিত জিহাদি/ মুজাহিদ আফগান, পাঠান ভাইরা তখন আফগানিস্থানে হাজারে হাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, এই যুদ্ধ তাঁদের কাছে তখন ধর্মযুদ্ধের সমান। চিন্তায়, মননে কি ভয়ানক ওয়াহাবি টক্সিক, আর শহিদ হওয়ার পর তাঁদের জন্নে তো আছেই জান্নাত, হুরী ইত্যাদি।
পাকিস্থান তো আনন্দে আটখানা, একদিকে আফগান যুদ্ধে সাহায্য করবার জন্নে আমেরিকা দিচ্ছে কোটি কোটি ডলার, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র (পরবর্তীকালে যা ব্যবহৃত হবে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার জন্নে), অন্যদিকে দেশের বেকার সমস্যার কি চটজলদি সমাধান? দেশের হাজার হাজার যুবক ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে জিহাদি হয়ে উঠছে, সুতরাং তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের কোন দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হচ্ছে না। পাকিস্থানি আর্মি, আইএসআই এবং ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদ দের বিদেশী ব্যাঙ্ক ভরে উঠছে ডলারে। কিন্তু হায়রে অদৃষ্ট, সময়ের চাকা যে এক জায়গায় থেমে থাকে না এই সত্যটা অনুধাবন করতে পাকিস্থানের নেতৃ বর্গের বোধহয় কষ্ট হয়েছিলো। কারণ ৮০র দশকের শেষদিকে আফগানিস্থান থেকে পিছু হটতে থাকে রাশিয়া, পরবর্তীকালে আমেরিকাও হাত ধুয়ে ফেলে আফগানিস্থান থেকে। পাকিস্থান সমস্যায় পরে তাঁদের নিজেদের সৃষ্ট ফ্রাঙ্কেনস্তাইন মানে এই জিহাদি দের নিয়ে – যারা ধর্মের নামে মারা আর মরা ছাড়া কিছুই শেখেনি। আসলে বাঘের পিঠে চাপলে অত সহজে তো নামা যাবে না, তাই পাকিস্থান এই জিহাদিদের কিছু অংশকে ভিড়িয়ে দিলো ভারতের কাশ্মীর অংশে, সেই সাথে স্থানীয় কাশ্মীরি যুবকদের মগজধোলাই করে তাঁদের হাতে তুলে দিলো অস্ত্র আর মগজে ওয়াহাবি টক্সিকের বিষ। কাশ্মীরি যুবকেরা জিহাদি হয়ে উঠল, শান্ত কাশ্মীরে প্রবেশ করলো টক্সিক ওয়াহাবি মতবাদ। যেখানে কাশ্মীরি মুসলমানেরা এতকাল অনুসরণ করে এসেছে সুফি ইসলাম, শত শত বছর ধরে তাঁরা পাশাপাশি বাস করেছে কাশ্মীরি পণ্ডিত দের সাথে, যা মিলে মিশে সৃষ্টি করেছে এক অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, যাকে বলা হতো – “কাশ্মিরিয়াত”। হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতের বাড়ীর অনুষ্ঠানে পাত পেড়ে খেত কাশ্মীরি মুসলমান, আবার ইদের দিনে কাশ্মীরি মুসলমান ভাইয়ের বাড়ী নিমন্ত্রন থাকত ওই কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারটির। কিন্তু পরবর্তীকালে ধর্মের বিষ মেরে ফেলল এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভালোবাসাকে। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হল কাশ্মীরি পণ্ডিত খেদাও অভিযান, মিছিল জমায়েত থেকে আওয়াজ উঠতে লাগলো – “নারায়ে তকদির, আল্লা হো আকবর। পণ্ডিত মহল্লায় হামলার সময় মসজিদের মাইকে আজানের আওয়াজ বহু গুন বাড়িয়ে দেওয়া হল যাতে আর্তনাদ, চিৎকার বাইরে শোনা না যায়। স্লোগান দেওয়া হতে লাগলো – “ হাম ক্যা চাহতে আজাদি কিংবা অ্যায় জালিমো, অ্যায় কাফিরোঁ, কাশ্মীর হমারা ছোড় দো”। হত্যা, অপহরন, লুটপাট, মহিলাদের রেপ কোন কিছুই বাদ গেলো না, ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পণ্ডিত পরিবার হল কাশ্মীর ছাড়া। বেশির ভাগ আশ্রয় পেল জম্মুতে তৈরি হওয়া আশ্রয় শিবিরে আর বাকিরা ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্যান্য শহরে। জম্মুর হাঁসফাঁস করা গরমে নোংরা বস্তির এক চিলতে তাঁবুতে কোনমতে সংসার, সরকারের দেওয়া রেশনের চাল-দালের ডোল নিয়ে কোনরকমে ক্ষুন্নিবৃত্তি। এক সময়ে যাঁদের আপেলের বাগান ছিল, দেওদার কাঠের বহুমুল্য আসবাব ছিল তারাই জম্মুতে চরম অসন্মানের জীবন যাপন করে চলেছেন। কই তাঁদের জন্নে তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করতে দেখি না?
No comments:
Post a Comment