Tuesday, July 4, 2017

অণু গল্প ‘ডাক্তার’ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৩.০৭.২০১৭ / রাত ১২.০৫ / উল্টোরথ ।


          
          
          অণু গল্প  ‘ডাক্তার’  
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৩.০৭.২০১৭ / রাত ১২.০৫ / উল্টোরথ ।

 -আপনার পেশা?
-আমি একজন ডাক্তার ।
-আসল না নকল?                                        
                                                                    
 নকল ।                                                                                                                        
 কতদিন প্র্যাকটিস করছেন ?                                                                                           
 মানুষের সেবা করি আসল ডাক্তার রা ত আসেনা ।                                                                      
যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দিন।   আপনি মানুষকে ডাক্তারি না পড়েই ওষুধ দেবেন ?                                                      
 এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ।                                                                                                   
 কেন আমি হোমিওপ্যাথি পড়েছি ,  কিন্তু যে ডাক্তার সরকারের অজস্র টাকা খরচা করে ডাক্তারি পাস করলো সে রোগী সেবা না করে মাইনে নেওয়া ক্রিমিনাল অফেন্স নয়?                                                                                              
সেটা আপনি বলার কে ?
আমি সাধারণ মানুষের হয়ে প্রশ্ন করছি ।
 তার জবাব কোর্ট দেবে আপনি আমি কে বলার ?                                                                        
 চলুন গাড়িতে উঠুন  । যে মানুষের বাড়ীতে উনুন জ্বলেনা হাঁড়ী চড়েনা  তারা ওষুধের পয়সা কোথায় পাবে ?  সেটা প্রশাসন দেখবে আপনি কে বলার কোন মানুষ মারা গেলে তার দায়িত্ব আপনি নেবেন ?                 
কেন যে ডাক্তার রা মানুষ মারে তারা কি দায়িত্ব নেয় সেই রোগীর ?                                          
আপনার সাহস ত কম নয় ক্রমাগত পুলিশের সঙ্গে যুক্তি করে চলেছেন ।                                      
আমার যুক্তিগুলো ভেবে দেখুন সার ।                                                                                     
আমি ভাবার কে সে বিষয় ন্যায়ালয়  আছে । আমার কাজ ওটা নয়। চলুন।
কিছু গ্রামবাসী হটাত এক খাটিয়ায় একটি ছেলেকে নিয়ে ওইখানে পৌঁছয় ।
ডাক্তার বাবুকে দেখে ওদের মধ্যে এক ব্যক্তি , “বলে ডাক্তার বাবু বাঁচান আমার ছেলেকে । কাল রাত থেকে প্রায় ১৪ বার বড় বাইরে করে দেখুন কি অবস্থা।” আপনি এখন ওর চিকিৎসা না করলে বেঘোরে মারা যাবে আমার ছেলে । কিছু করুন ডাক্তার বাবু।

ওই ব্যক্তি ডাক্তার বাবুর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে উত্তরের অপেক্ষায় ।
গ্রামবাসীরা এক স্বরে বলে ওঠেন , “ওরে পুলিশ কি মানুষ বাঁচায় ওদের কাজ...... !” 
থামুন । গর্জে ওঠেন পুলিস অফিসার । সাহস ত কম নয় আপনাদের ?
আমাদের সাহস না আপনার সাহস ! আপনি বাঁচাতে পারবেন এখুনি এই ছেলেটিকে । যদি না  পারেন তবে আমরা গ্রাম বাসিরা কখনই আমাদের ডাক্তার বাবুকে এই গ্রাম ছেড়ে যেতে দেবনা। আর আপনাকেও নয়। ওরে কে আছিস । এই দারোগাকে ওই ঘরে নিয়ে যা তালা বন্ধ করে রেখে দে। 
ডাক্তার বাবু চেঁচিয়ে ওঠেন না আইন হাতে নেবেন না । উনি ওনার কাজ করছেন আমাকে আমার কাজ করতে দিন। এই বলে স্যালাইন এর বোতল বার করে সঙ্গে সঙ্গে ড্রিপ দিতে সুরু করেন। ছেলেটি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ওই ড্রিপেতেই ডাক্তার বাবু আরেকটা ইনজেকশন দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি চোখ খুলে চারিদিকে তাকায় ।
পুলিস দেখে ছেলেটি ভয়ে কেঁদে ফেলে ।
পুলিশ অফিসার বলেন ,“এখন কিরকম লাগছে বাবা।
ভয়ে ভয়ে বলে , “ভালো । কিন্তু পুলিশ কেন আমাদের গ্রামে কি হয়েছে ওর বাবার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলে।
তুই সুস্থ হ বাবা । ওসবে তোর কাজ নেই। এখন ভালো লাগছে 
হ্যাঁ । কিন্তু বলনা বাবা কি হয়েছে ?
ওর বাবা এবং গ্রামের লোকেরা দারোগা বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন , “উত্তর দিন সার।
দারোগা মাথা নিচু করে বলে আমাকে আমার কাজ করতেই হবে ।
গ্রাম বাসিরা রে রে করে ওঠে ... কাজ দেখাচ্ছ গরীবের সাহারা কেড়ে নিয়ে। আজ ডাক্তার বাবু না থাকলে আমার ছেলের কি হত তার জন্য আপনি দায়ী হতেননা আপনার প্রশাসন দায়ী হত । বলুন বলুন।
আমাদের ডাক্তার বাবু এখানেই থাকবেন। উনি আমাদের ভগবান । আর ভগবান কে দানবের হাতে আমরা তুলে দেব না। ফিরে যান নাহলে ভালো হবেনা। ফিরে যান ।
কিন্তু ডাক্তার বাবু বলেন আমাকে যে যেতে হবে ভাই।
এই সময় দারোগা বাবু বলেন , “ না থাক আমি কথা বলে দেখবো। পাবলিক যখন আপনাকে এই গ্রামে চায় তখন আপনি থাকুন । আমি সরকারকে এবং পুলিশ সুপারকে জানাবো এই ঘটনার বিষয়। আমিও মানুষ । আমি অমানুষ নই । পুলিশ হওয়া পাপ নয়। মনে রাখবেন তারাও মানুষ

  

No comments:

Post a Comment